শেষ পাতায় সামাপ্তি পর্ব ৩

0
365

#শেষ_পাতায়_সমাপ্তি
#পর্ব_০৩
#লেখিকাঃজিন্নাত_চৌধুরী_হাবিবা

সামনে খুলে রাখা বইটিতে কিছুতেই মনযোগ দিতে পারছেনা চৈতালি। বারংবার মানসপটে ভেসে উঠছে গতকালের সেই দৃশ্য।

রাস্তার মোড়ে কা’টা লাশের দিকে তাকিয়ে স্তব্ধতার শেষ প্রান্তে গিয়ে থামলো চৈতালি। ঢলঢল র’ক্তের শ্রোত কয়েক মুহূর্তের জন্য হৃৎস্পন্দন থামিয়ে দিয়েছিলো। অতিরিক্ত রঞ্জিত রক্তের নহর দেখে শরীরের ভার ধরে রাখতে পারেনি চৈতালি। ক্রমশ অসাড় হয়ে যাওয়া দেহ ক্ষণিকেই লুটিয়ে পড়ে। এমন বীভৎস ভাবেও মানুষ খু’ন করতে পারে? দৃশ্যপট মস্তিস্কে খেলে যেতেই গা গুলিয়ে ওঠে। মৃ’ত মানুষটি চৈতালির পরিচিত মুখ। নুরুলহকের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ভোটে দাঁড়ানো আজগর খানের ছোট ছেলে রনি।
মেয়েদের উত্যক্ত করা যার কাজ। সাথে বাবার ইলেকশনের প্রচারণায় হাত লাগিয়েছে।
গত পরশু কলেজ থেকে ফেরার পথে চৈতালিকে বা’জে ইঙ্গিতে কাছে টানতে চেয়েছিলো। চৈতালির ঘোরতর বিরোধীতায় অত্যন্ত বি’শ্রীভাবে গা’লি দিয়ে বা’জে স্পর্শে উত্যক্ত করেছিলো।

উপস্থিত পরিস্থিতিতে রনির গালে সপাটে চ’ড় বসিয়ে চৈতালি স্থান ত্যাগ করে। কাল সকালেই ছেলেটার এমন নিদারুণ,বিভ’ৎস মৃ’ত্যু দেখলো। অস্থিরতায় মলিন হওয়া মন কিছুতেই স্থির হতে চাইছেনা। কে এমন মৃত্যু দিলো?
মাথা কে’টে শরীর থেকে আলাদা করা। চোখদুটো কোটর হতে উ’পড়ে ফেলে হয়েছে। হাত দুটো কে’টে অবিন্যস্ত ভাবে ছুঁড়ে ফেলে রেখেছে। জিহ্বা কে’টে পাশেই ফে’লে রেখেছে। বুকে অসংখ্য ছু’রিকা’ঘাত। চারিপাশে র’ক্তের উৎকট, বোটকা গন্ধ। অসংখ্য মাছির গুনগান। চৈতালির অস্থিরতা ক্ষণে ক্ষণে বেড়েই চলেছে। ইলেকশনের কাজ চলছে। রনির সাথে সাদমানের রে’ষা’রে’ষি ও অনেকদিনের। কোনোভাবে যদি আজগর খান তার কনিষ্ঠ পুত্রের খু’নের দায়ে সাদমানের নামে মা’ম’লা করে? সমুদ্র ও বা কিভাবে এমন শান্ত রইলো। তার মধ্যে বিন্দুমাত্র ভ’য়ের আভাস নেই। ভাইকে হারানোর ভ’য় হয়তো তার হৃদয়কে ছুঁতে পারেনি।

শিউরে ওঠা শরীর ঝাড়া মেরে দাদার ঘরে চলল চৈতালি। এই একটা মানুষ তার ভীষণ প্রিয়। বাবার মৃ’ত্যু’র পর এই মানুষটাই তাদের মা মেয়েকে সামলে নিয়েছেন।

দাদাকে ঘরে না পেয়ে চৈতালি ছুটলো দাদার একমাত্র সঙ্গী লাইব্রেরিতে। উনি প্রচুর বই পড়েন। বই পড়া নে’শার মতো কাজ করে। উনি একজন অবসরপ্রাপ্ত মানসিক চিকিৎসক। লাইব্রেরিতে পা ফেলতেই কালো মলাটে আবৃত মোটা বইয়ে মুখ গুঁজে বসে থাকতে দেখা গেলো হুমায়ুন কবিরকে।
নিজ ঘরে ফিরে যাওয়ার উদেশ্য পা ফেলতেই কবির কোমল, আদুরে কন্ঠে শুধালেন,

“এত অস্থিরতা কেনো আমার সুন্দরীর মনে? ঝটপট কথার ঝুলি খালি করে ফেলোতো! সুন্দরী রমনীদের কখনো মন খারাপে শোভা পায়না। আমার সামনে এমন সুন্দরী রমনী মুখ ভার করে রাখবে আর আমি তার মন ভালো করার চেষ্টায় পিছপা হবো? উহু! এ অ’ন্যায়, ভারী অ’ন্যায়।”

এতক্ষণের মন খারাপ যেনো উবে গেলো। দাদার কথায় প্রাণখোলা হাসিতে মত্ত হলো চৈতালি। দাদার পাশে চেয়ার টেনে বসে পড়তেই কবির হাতে থাকা মোটা বইটা বন্ধ করে ফিরলেন নাতনির দিকে। চমৎকার এক হাসি উপহার দিলেন। গল্পের আসর জমে উঠেছে বেশ রমরমা ভাবে।

বাবার জরুরি তলবে বাড়ি ফিরলো সাদমান।
সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসেছেন নুরুল হক। একদফা ফাহমিদার উপর রা’গ ঝেড়ে ফেলেছেন। রোষ পূর্ন দৃষ্টি ফ্লোরে নিবদ্ধ। খুবই বা’জে ভাবে চ’টে আছেন দেখেই বোঝা যাচ্ছে। সাদমান গটগট পদধ্বনি তুলে বাবার সামনে উপস্থিত হতেই মাথা তুলে চাইলেন নুরুল হক। অত্যন্ত ক্ষ্যাপাটে স্বরে গর্জে উঠলেন।

“আমার ইলেকশনের কাজে তোদের মা ছেলের বা’হাত না দিলে ভালোলাগেনা, তাইনা? রনিকে মে’রেছিস কেনো? যে আজগর খান আমার পায়ের নিচে থাকার কথা সে আমার সাথে উচ্চবাক্যে কথা বলে। তোর নামে রনিকে ক্ষু’নের দায়ে মা’ম’লা দায়ের করা হয়েছে। যা হয়েছে এখন চুপ থাকতি। ইলেকশনের পরেই নাহয় শা’লা’র বাচ্চাকে সরিয়ে দিতি।”

সাদমান আশ্চর্য ভঙ্গিতে নুরুল হক কে দেখছে। রনির ক্ষু’ন হওয়ার ব্যাপারটা তার কানে গতকাল সকাল সকালই পৌঁছে গেছে। তবে তাকে কোন ইঙ্গিতে রনির ক্ষু’নি বলে মা’ম’লা ঠু’কে দিয়েছে? রে’ষা’রে’ষি সবার মধ্যেই থাকে, তারমানে এই নয় যে কোনো প্রমাণের ভিত্তি ছাড়াই মা’ম’লা করে দেবে। আজকালের পুলিশ ও হয়েছে তেমনই। তাদেরকে তৃপ্তি ভরে উপঢৌকন দিন। তারা বিনা জিজ্ঞাসাতেই আপনার সেবায় নিয়োজিত হয়ে যাবে। শক্ত চোয়াল ঝুলিয়ে সাদমান সরল স্বীকারোক্তি দিলো,

“আমি রনির ব্যাপারে কিছুই জানিনা। ক্ষু’ন তো আরও আগেই না। তাই আমার পালানোর প্রশ্নই উঠে না।”

নুরুল হক তেঁতেঁ উঠলেন। সাদমানকে অকথ্য ভাষায় গা’লি’গা’লাজ করে থামলেন।

সাদমানের মাঝে কোনো হেলদোল দেখা গেলোনা। তার মুখোশ্রী দেখে বোঝার উপায় নেই সে আদতে রে’গে আছে কিনা। তার এমন নির্বিকার ভঙ্গি দেখে নুরুল হক আরও কয়েকটা গা’লি ছুঁড়ে মারলেন।

“বে’জ’ন্মার ঘরের বে’জ’ন্মা। তুই আমার দৃষ্টি সীমানার বাইরে থাকবি।”

বে’জ’ন্মা বলে গালি দেওয়ায় তাচ্ছিল্য করে হাসলো সাদমান। সে তো ভালো মানুষ নয়। নিজেই জানে সে কেমন ধাঁচের মানুষ। তবে কেনো নুরুল হক বারবার গা’লি’গা’লাজ করে তাকে মনে করিয়ে দেয় তার সত্তা। নিজস্ব ভঙ্গিমায় হেসে উঠে মাথা খানিক ঝুঁকিয়ে নিলো সাদমান। হাতে থাকা মোটা চুড়িতে দৃষ্টি বুলিয়ে বলল,

“আপাতত আপনার ইলেকশনের দায়ভার আপনার। আমি মোটেও মাথা ঘামাতে রাজি নই। এটাই মোক্ষম সময় নিজের চরকায় তেল দেওয়ার। চার আঙ্গুল কপালে ঠেকিয়ে স্যালুট জানানোর ভঙ্গি করলো সাদমান। “আসি মিস্টার নুরুল হক” বলেই দরজার দিকে পা বাড়ালো।”

চমকে উঠলেন নুরুল হক। সাদমান যদি এখন সকল দায়িত্ব ছেড়ে দেয় তবে বরাবরের মতো এবারেও নুরুল হকের জয়যুক্ত হওয়া হবেনা। নমিনেশন পেপার হাতে পেয়েই এবার ইলেকশনের সকল দায়িত্ব সাদমানকে দিয়ে দিলেন। বলা বাহুল্য সাদমানের সাথে উনার সম্পর্ক একেবারেই ভালো ছিলোনা। উনার মতে সাদমান বি’গ’ড়ে যাওয়া দুর্বৃত্ত ছেলে। নয়তো কেউ কাজের বিনিময়ে বাবার কাছ থেকে টাকা আদায় করে? ইলেকশনের দায়িত্ব হাতে নেওয়ার পেছনে রয়েছে মোটা অঙ্কের টাকা। যা নুরুল হকের কাছ থেকে খসিয়ে নিচ্ছে সাদমান। বিনে পয়সায় খাটার মতো ছেলে সাদমান নয়। এই দুনিয়ায় সবাই স্বার্থলো’ভী।
নুরুল হক যেখানে তাকে দুচোখের বি’ষ মনে করতেন সেখানে নিজ স্বার্থে ইলেকশনের সব দায়িত্ব তার উপর ছেড়ে দিলেন। তবে সাদমান কেনো স্বার্থ খুঁজবে না?

বারান্দায় দাড়িয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যক্তির আগমনে হুট করেই ময়ুর পঙ্খির মতো নেচে উঠলো মন। এই সময়ে সাদমানকে দেখা দুষ্কর। চাইলেও তার দেখা পাওয়া যায় না। আজ এমন আগমনে চৈতালির মন ঝুমঝুম করে উঠলো। কালো শার্টে আবৃত কৃষ্ণকায়া মানবের বুক ফুলিয়ে সটান ভঙ্গিমায় হেঁটে আসা মন কাড়লো চৈতালির। হাঁটার সময় ভ্রু উঁচিয়ে এদিক ওদিক দৃষ্টি ফেলা, ক্ষণে ক্ষণে উপর ঠোঁট দিয়ে নিচের ঠোঁট চেপে ধরা। এ যেনো এক অদ্ভুত মাদকতায় নে’শা ধরিয়ে দেয় চৈতালির মনে। লোকটাকে দেখলেই তার বড্ড প্রেম প্রেম পায়। অজানা ব্যথায় হৃদযন্ত্রটা তড়িৎ লাফিয়ে ওঠে। কিছু মুহূর্তের মাঝেই দৃষ্টি সীমানার বাইরে চলে গেলো সাদমান।
মন খারাপের পসরা বসলো রমনীর মনে।

————————
তাপসিকে অঙ্ক কষতে দিয়ে অস্থির চোখজোড়া জানালার দ্বারপ্রান্তে রেখে উসখুস করছে চৈতালি। অঙ্ক করার মাঝে মাঝেই তাপসি তার ম্যামকে আড়চোখে পর্যবেক্ষণ করছে।
হুট করেই তার কৌতুহল মন ম্যামকে প্রশ্ন করে বসলো।

“ম্যাম! আপনি কি কারো জন্য অপেক্ষা করছেন?”

তাপসির কথায় চমকে ওঠে চৈতালি। দ্রুত জানালা থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে খানিকটা কড়া দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাপসির দিকে। ধমকের সুরে বলে ওঠে,

“অঙ্ক না কষে তুমি অন্যদিকে মনযোগ দাও? পরীক্ষায় গোল্লা পেলে থাপড়ে তোমার গাল লাল করে দেবো।”

তাপসি মাথা নিচু করে অঙ্কে মনযোগ দেয়। তার ম্যাম শান্ত স্বভাবের হলেও হুটহাট এমনভাবে রেগে যায় তখন ম্যামকে হিং’স্র প্রাণী মনে হয়।

চৈতালি হাত ঘড়িতে চোখ বুলিয়ে আবারও জানালার বাইরে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। তাপসিকে পড়ানো শেষ করে বাসার উদ্দেশ্যে বের হয় চৈতালি। নাহ কোথাও সাদমান নেই। আজ কি তবে আর আসবেনা?

মেঘের গুড়ুম গুড়ুম শব্দে সৎবিৎ ফেরে চৈতালির। বিষন্ন মুখে আকাশ পানে তাকিয়ে দেখে কালো মেঘে অন্ধকারাচ্ছন্ন আকাশ। কালো মেঘের আড়ালে লুকিয়ে পড়েছে শুভ্ররাঙা আবর। বিষন্ন তার চাহনি। একটু পরই টুপ করে অন্তরিক্ষে কপোল বেয়ে গড়িয়ে পড়বে একটুখানি অশ্রুজল।
আচ্ছা আকাশের ও কি মন খারাপ? সে ও কি তার প্রিয়জনের অনুপস্থিতিতে হাঁসফাঁস করে? অস্থির হয়? ব্যাকুল হয়ে ওঠে? সে ও কি দুফোঁটা অশ্রু বিসর্জন দেয়?

ঝুম বৃষ্টির ধারায় আর বাড়ি পৌঁছানো হলোনা চৈতালির। একহাতে ব্যাগ মুঠো করে জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো তাপসিদের বাড়ির গেইটে। সাথে করে ছাতা নিয়ে আসা হয়নি। সন্ধ্যা নেমেছে ধরনীর বুকে। কৃষ্ণমেঘে চারপাশ গুমোট অন্ধকারে ভাটা পড়েছে। ক্ষণে ক্ষণে বাজ পড়ার শব্দে কেঁপে কেঁপে উঠছে ছোট্ট শরীর। অজানা ভয়ে গা চমচম করে উঠছে। আজ যদি বৃষ্টি না থামে? তবে বাসায় ফিরবে কিভাবে? যদি কোনো বি’পদ হয়? তটস্থ দৃষ্টিতে আকাশ থেকে পড়ন্ত জলধারার পাণে চেয়ে রইলো চৈতালি।

হঠাৎ এক ভরাট পুরুষালি কন্ঠস্বর কানে আসতেই ভয়ে সিটিয়ে যায় চৈতালি।

“এভাবে দাঁড়িয়ে না থেকে আমার সাথে আসুন ভাবি। বিপ’দের কোনো ঠিক ঠিকানা নেই। অন্তত ছাতাটা মনে করে নিয়ে আসতেন।”

কাঙ্খিত পুরুষের কন্ঠস্বরে প্রসন্ন হাসিতে মেতে উঠলেও তার ভাবি ডাকে মনঃক্ষুণ্ন হলো চৈতালি। ভাবি কেনো ডাকলো লোকটি? ধপধপ করে রা’গ চিঁড়বিঁড় করে উঠলো। তিরিক্ষি মেজাজে বলে উঠলো,

“আপনি যেতে পারেন। আমি একাই যেতে পারবো।”

সাদমান নিশ্চিত হতে প্রশ্ন করলো,

“আপনি শিওর? যেতে পারবেন? এমনটা জানলে আমি আসতাম না। ভাইয়া আমাকে পাঠিয়েছে আপনার বাসায় ফিরতে কোনো সমস্যা হলো কিনা দেখতে। নয়তো আমার প্রচুর কাজ পড়েছিলো।”

চৈতালি বিষন্ন, অতি করুণ, ব্যথাতুর দৃষ্টি ফেলে ঢিমে স্বরে বলল,

” আপনি নিজ থেকে আসেননি?”

সাদমান ক্ষীণ হাসলো। গালের কা’টা দাগ আরেকটু এলিয়ে যেতেই কা’টা’কা’টা চেহারার মাধুর্যতা আরেকটু খানি বাড়লো। যা একমাত্র চৈতালির চোখেই ধরা পড়ে। ধড়ফড়িয়ে ওঠা হৃৎস্পন্দন হুট করেই থেমে গেলো চৈতালির। নির্নিমেষ চেয়ে রইলো মুক্তোঝরানো হাসিমুখে।

সাদমান বুড়ো আঙ্গুলে গাল ঘষে মাথা ঝুকিয়ে মন্থর কন্ঠে জবাব দিলো,

“আমার আসার কথা ছিলো নাকি?”

চৈতালির ঘোর কাটেনি। কাঁপা কাঁপা হাতে সাদমানের গালে দৃশ্যমান কা’টা স্থানে হাত রেখে ব্যথাতুর কন্ঠে সুধালো,

“আমার হৃদয় যে শুকিয়ে কাঠ!
এ হৃদয়ে ব্যথা ভরা তীব্র প্রেমের আর্তনাদ!
উষ্ণ ছোঁয়ার ভিজিয়ে দেবেন কি,
ঢেউ খেলানো এই ললাট?”

সাদমান দুর্বোধ্য হাসলো। মুহুর্তেই চেহারার রং বদলে গিয়ে গাল থেকে চৈতালির হাতখানা ঝাড়া মেরে সরিয়ে দিলো। নেহাত বড় ভাইয়ের “হৃদয়হরণী”, নয়তো এক্ষুণি চ’ড়িয়ে মেয়েটার দাঁত সব কটা ফে’লে দিতো। পিছু ঘুরে সটান হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো সাদমান। গমগমে স্বরে বলে উঠলো,

” বাসায় পৌঁছানোর ইচ্ছে থাকলে আমার সাথে আসুন। নয়তো এখানেই দাঁড়িয়ে থাকুন।”

সাদমান সামনে অগ্রসরের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো। একটাবার ও পিছু ফিরে চাইলোনা।

তার এমন আচরণে বেহা’য়া চোখজোড়া বেয়ে দু’ফোঁটা অশ্রুকণার পতন ঘটলো। অথচ সে ব্যক্তি টেরই পেলোনা।

রিং হওয়া ফোন কানে ধরতেই ওপাশ থেকে কেউ বলে উঠলো,

“ভাই কাল যে মেয়েটাকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন সে হাসপাতাল থেকে উধাও। হাসপাতালের নার্স, ডক্টর কেউই বলতে পারছেনা মেয়েটি কোথায়? এই অবস্থায় মেয়েটির পক্ষে হাসপাতাল ছেড়ে বের হওয়া একেবারে অবিশ্বাস্য। নিশ্চয়ই এতে কারো হাত আছে।”

“কী? এক্ষুনি আসছি আমি।”

সাদমানের উচ্চকন্ঠে চমকে উঠলো চৈতালি। পায়ে পা মিলিয়ে হাঁটা ধরলো সাদমানের পাশাপাশি। সামনেই রিকশা দাঁড় করানো।
—————
হুমায়ুন কবির চৈতালির শূন্য ঘরে বসে আছেন। হাতে একটা খালি ইনজেকশনের শিশি। যেটা ব্যবহার করা হয়ে গিয়েছে। তর্জনী আঙ্গুল দিয়ে নাকের ডগায় চশমা আরেকটু ঠেলে দিয়ে দুর্জ্ঞেয় হাসলেন। পরপরই চৈতালির ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন।

#চলবে………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here