শেষ পাতায় সামাপ্তি শেষ পর্ব

0
685

#শেষ_পাতায়_সমাপ্তি
#লেখিকাঃজিন্নাত_চৌধুরী_হাবিবা
#অন্তিম_পর্ব

ভীত স্বতন্ত্র মানুষগুলো প্রিয়জন হারানোর ভয়ে তিতাসনগর ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে। পাড়ি জমাচ্ছে শহুরে এলাকায়। এই রাক্ষসপুরীতে প্রিয়জন হারিয়ে ছটফট যন্ত্রণায় ম’রতে চায়না। ইদানীং তিতাসনগর’কে মৃ’ত্যুপুরী মনে হচ্ছে। কেউ নিখোঁজ হচ্ছে, কেউ বা চিরতরে বিদায় নিচ্ছে।

সাদমানের মৃ’ত্যুর তিনটা দিনও পেরুলো না। আদরের বে’য়া’ড়া ছেলেটার থেতলে যাওয়া মাথা দেখেই শান্ত হয়ে গিয়েছেন ফাহমিদা। শরীরটা ও আগের চেয়ে ক্রমশ ভারী হয়ে উঠেছে। কিশোরী অনু মা, ভাবি দুজনকে সামলাতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে। ইসলাম ধর্মে স্বামী মা’রা যাওয়ার চারমাস দশদিন পর্যন্ত পরপুরুষের সাথে দেখা দেওয়া জায়েজ নেই। যদিও নারীদের সবসময়ই পর পুরুষের দৃষ্টি সীমানার বাইরে থাকা উচিত, কিন্তু মানুষ প্রয়োজন অপ্রয়োজনে সেসব নিয়ম গুলো ভঙ্গ করছে। সাধারণত স্বামী ম’রা’র পরবর্তী চারমাস দশদিনের নিয়মটিই পালন করে থাকে। পরনে সাদা শাড়ী, উসকোখুসকো এলোমেলো চুলে ফ্লোরে বসে আছে চৈতালি। হাতে সাদমানের একটি কালো রং এর শার্ট। মলিন চোখজোড়া খাদে নেমে পড়েছে। চোখের নিচে কালিতে পরিপূর্ণ। গোলগাল মুখের দুপাশ ভঙ্গুর হয়ে লম্বাটে দেখাচ্ছে। নাকে, কানে কোনো অলংকার নেই। এতে করে মুখটা আরেকটু ফ্যাকাশে দেখাচ্ছে। বিধ্বস্ত রমণী। মাথায় হাতেগোনা অল্পকিছু চুল অবশিষ্ট আছে।
মা’য়ের খু’নিকে মা’রার কঠিন ব্রত করেছে। সাদমানের জন্যই সেই মনোবাসনা এখন পর্যন্ত পূরণ হয়নি। সাদমান বলেছিলো,

-“শুধু সমুদ্রকে শাস্তি দিলে তো চলবেনা। এই পা’পের সাম্রাজ্য টা ও ধ্বংস করতে হবে। সমুদ্রের সমাপ্তি ঘটলেও তিতাসনগরে পাপাচার,খু’ন, কুসংস্কারের সমাপ্তি ঘটবেনা।”

সমুদ্রের ধ্বংসের অপেক্ষায় ছিলো চৈতালি। তার অপেক্ষার অবসান এভাবে ঘটবে ঘুনাক্ষরে ও টের পায়নি সে। সাদমান তাকে এভাবে ফাঁকি দিলো? মানুষটা তার কথা ঠিকই রেখেছে। শেষ পাতায় তার নামটা রেখে গিয়েছে। তাকে পূর্ণ অধিকার দিয়ে গেছে। কিন্তু আফসোস! অধিকার পেয়েও কাজে লাগানোর সময়টা পায়নি চৈতালি। সাদমানের শার্ট বুকে জড়িয়ে গুনগুন করে কাঁদছে চৈতালি।

-“ভাবিনি আপনার উপন্যাসের শেষ পাতা এত জলদি এগিয়ে আসবে। আগে জানলে আমি আরও কয়েকটা পাতায় নিজেকে চাইতাম।”

দরজার ক্যাটক্যাট শব্দে সম্বিত ফেরে চৈতালির। মস্তিষ্ক সজাগ হয়ে ওঠে। তার মস্তিস্কের প্রতিটি কোষ জানান দিচ্ছে এ পদধ্বনি সমুদ্রের। হৃৎপিণ্ড তড়াক করে লাফিয়ে ওঠে। সফেদ রাঙা শাড়ির আঁচল টেনে লম্বা ঘোমটায় আড়াল করে নিজেকে। চৈতালির পাশে এসে পা জোড়া থেমে যায় সমুদ্রের।
রা’গে, ঘৃ’ণায় রি রি করে ওঠে চৈতালির শরীর। দাঁতে দাঁত চেপে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে।

সমুদ্র চৈতালির দিকে নজর বুলিয়ে বিদ্রুপের হাসি হাসলো। আফসোসের সুরে বলল,

-“আহারে! অকালে স্বামী হারিয়ে চেহারার কি বেহাল দশা হয়েছে গো তোমার? কি সুখ পাচ্ছো? তারচেয়ে বরং আমাকে বিয়ে করতে সুখ তোমার পায়ের কাছে এসে ঠেকতো। আমার প্রতিটি ছোঁয়ায় উন্মাদ হয়ে প্রতিটি প্রার্থনায় আমাকেই চাইতে। কিন্তু বোকানারী বোকামি করেই বসে আছে। দেখলে তো সমুদ্রের সাথে পাঙ্গা নিতে গিয়ে কি হলো তোমার প্রাণনাথের। আহ্! বেচারা।”

চৈতালি নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। সমুদ্রের কাছ থেকে নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে অনবরত।

চৈতালির শাড়ির আঁচলে টান দিয়ে সমুদ্র বলল,

-“বেচারা বিয়ে করে বাসরটা ও করতে পারলোনা। আফসোস হচ্ছে, যে শাড়িটা সাদমানের খোলার কথা ছিলো সেই শাড়ি আমাকেই খুলতে হচ্ছে।”

সমুদ্র বি’শ্রী হাসছে। সমুদ্রের লোলুপ দৃষ্টি থেকে নিজেকে রক্ষা করতে শাড়ির আঁচল টেনে চোখ খিঁচিয়ে আল্লাহকে ডাকছে চৈতালি। সমুদ্র এক টানে চৈতালির শাড়ি খুলে হাতে নিয়ে নিলো। লা’ল’সার দৃষ্টিতে একবার চৈতালিকে আপাদমস্তক দেখে ঠোঁট কামড়ে ধরলো।

দুহাতে নিজেকে ঢাকার বৃথা চেষ্টা করে দৌড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো চৈতালি। গিয়ে ফাহমিদার সামনে পড়লো। চৈতালিকে অর্ধ’নগ্ন অবস্থায় দেখে ফাহমিদা চমকে উঠলেন। কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই চৈতালির শাড়ি হাতে নিয়ে সমুদ্র বেরিয়ে আসলো। ফাহমিদা চৈতালিকে নিজের ঘরে ঢুকিয়ে দরজা আটকে দাঁড়ালো। এর মধ্যে অনু ও বেরিয়ে এসেছে। সাদমান আয়েশি ভঙ্গিতে হেঁটে এসে মাকে সরে যেতে বলল।

ফাহমিদা দুহাত প্রসারিত করে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে পড়লেন। তার দুচোখ দিয়ে আগুন ঝরছে।

-“আমার প্রাণ থাকতে আমি কিছুতেই বাড়ির বউকে ইজ্জত হারাতে দেবোনা।”

স্বভাব সুলভ বাঁকা হাসলো সমুদ্র। সোজা কথায় কাজ হবেনা। মাকে টে’নে’হিঁ’চড়ে পাশের একটা ঘরে ঢুকিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো। অনু দৌঁড়ে এসে মা মা বলে চিৎকার করতেই অনুকেও মায়ের সাথে আটকে দিলো। জানালার পাশে দাঁড়িয়ে ফাহমিদা কেঁদে আহাজারি করে যাচ্ছেন।

-“দোহাই লাগে তোর। তুই আমাকে মে’রে ফেল। তবুও মেয়েটার ইজ্জত নিয়ে খেলিস না।”

সমুদ্র কোনো কথায় কর্ণপাত করলোনা। দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে কুটিল হেসে বলল,

-“এবার কোথায় পালাবে?”

চৈতালি ফাহমিদার একটা শাড়ি গায়ে জড়িয়ে বসেছিলো। আর পালানোর পথ খোলা রইলোনা। নিজের সম্মান বাঁচাতে র’ক্ত খেলায় নামতে হবে। নেত্রজোড়া জ্বল জ্বল করে জ্বলে উঠলো চৈতালির। আগুনের ফুলকি যেনো ভস্ম করে দেবে সমুদ্রকে।

সমুদ্র ভ’য় পাওয়ার ভান করে বলল,

-“ভ’য় পাচ্ছি তো আমি।”
পরপরই দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

-“এত তেজ? তোকে বি’বস্ত্রা করে পে’টা’তে পারলে আমার মনের ক্ষো’ভ মিটতো।”

চৈতালির পরনের দ্বিতীয় বস্ত্র টুকু হরণ করে নিলো সমুদ্র। চৈতালি সমুদ্রের গলার নিচে থুতনি বরাবর ডানহাতে সজোরে আ’ঘা’ত করলো। সমুদ্র কিছুটা ব্যলেন্স হারাতেই তার দু’পায়ের মাঝ বরারর আ’ঘা’ত করলো চৈতালি। ব্যথায় কুঁকড়ে উঠে কিছু সময়ের জন্য শরীরের ভর ছেড়ে দিলো সমুদ্র। সেই সুযোগটাকেই কাজে লাগালো চৈতালি। হাতে শাড়ি দুটো নিয়ে বেরিয়ে বসার ঘরে চলে গেলো। কিছু সময় পেরোতেই সমুদ্র উঠে আসলো। তার বুকের পাঁজরে আ’ঘা’ত করতেই আরেকটু লুটিয়ে পড়লো সমুদ্র। অকথ্য ভাষায় চৈতালিকে গা’লি’গা’লাজ করে যাচ্ছে। ফাহমিদার শাড়ি দিয়েই সোফার সাথে সমুদ্রের হাত পা বেঁধে ফেললো চৈতালি। নিজের সাদা শাড়ী গায়ে জড়িয়ে ঘরে গিয়ে বাবার বাক্স থেকে রাম’দা টা বের করে আনলো।

রণচণ্ডী রূপ ধারণ করলো চৈতালি। কোনো আহত বাঘিনীর চেয়ে কম লাগছেনা তাকে। রক্তজবার মতো টসটসে লাল চোখজোড়া ভ’য়’ঙ্কর লাগছে। চৈতালির এই নতুন রূপ দেখে চমকে উঠলো সমুদ্র। শুকনো ঢোক গিলে গলা ভিজিয়ে নিলো। সমুদ্র হাসার চেষ্টা করে বলল,

-“ভ’য় দেখাচ্ছো আমাকে? আমি জানি তুমি পারবেনা এটা।”

চৈতালি বীভৎস সুরে হু হা করে হেসে উঠলো। ভয়’ঙ্কর শোনালো সেই হাসি।

-“এই হাত দিয়ে বাবা,খালা,দাদা,এনামুল হক,রকি এদের প্রাণ নিয়েছি। আর নিজের ইজ্জত বাঁচাতে, মা, স্বামীর খু’নিকে মা’র’তে আমার হাত কাঁপবে?”

আৎকে উঠলো সমুদ্র। অবিশ্বাস্য চাহনিতে তাকালো। ফাহমিদা আর অনু জানালার পাশেই দাঁড়ানো ছিলো। তারা ও চমকে ওঠে।

সমুদ্রের কান বরাবর আ’ঘা’ত করে দু’কান কে’টে ফেলে দিলো। সমুদ্রের গগনবিদারী চিৎকারে ভারী হলো আকাশ। অনু চোখ বন্ধ করে বসে পড়লো। ফাহমিদা ও দেখতে পারলেন না ছেলের এমন পরিণতি।
র’ক্ত সিটকে এসে পড়লো চৈতালির মুখে, সাদা শাড়িতে। লিপি মেয়েটা দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য ডেকে ও যখন চৈতালিকে খাওয়াতে পারেনি তখন তার খাবার টেবিলে বেড়ে রেখেই চলে গেছে। চৈতালি হাত না ধুয়েই খাবারের প্লেটে হাত ডুবিয়ে দিলো। অভুক্তদের মতো মুঠো ভর্তি খাবার নিয়ে র’ক্তমাখা চোয়াল নিয়েই গোগ্রাসে খাবার গিলছে।

সমুদ্র ভীত নজরে তাকিয়ে রইলো। বারবার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। চৈতালির এই বীভৎস রূপ সে নিতে পারছেনা। খাওয়া থামিয়ে চৈতালি একবার তাকালো সমুদ্রের দিকে। সবকটা দাঁত বের করে হেসে দিলো। দাঁতে এখনো খাবার লেগে আছে। হিসহিসিয়ে বলল,

-“খুব তেষ্টা পাচ্ছে?”
উঠে দাঁড়ালো চৈতালি।সমুদ্রের হাতে কো’প মার্তেই গলগলিয়ে র’ক্ত পড়া শুরু হলো। চৈতালি গ্লাসে সেই র’ক্ত টুকু নিয়ে সমুদ্রের কান দুটো তুলে নিলো। রান্নাঘর থেকে ব্লান্ডার মেশিনে র’ক্ত আর কান জোড়া ব্লান্ডার করে সমুদ্রকে দিলো তৃষ্ণা মেটাতে।

-“এতদিন তো নারী দিয়েই তৃষ্ণা মিটিয়েছিস। এবার নিজের র’ক্ত দিয়ে তৃষ্ণা মেটা।”

সমুদ্রের বুকের ভেতর ভ’য়েরা বাসা বেঁধেছে। একের পর এক চমক দেখে সে চমকে উঠছে। চৈতালি এতটা ভ’য়’ঙ্ক’র হতেই পারেনা। গ্লাসের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতেই চৈতালি সমুদ্রের চিবুক চেপে মুখে র’ক্তের গ্লাস ঠেসে দিলো। গলগলিয়ে বমি করে দিলো সমুদ্র।

চৈতালি আবার ও বীভৎস ভাবে হাসলো। কলিজা কেঁপে উঠলো সমুদ্রের।

-“চরিত্র হলো সবচেয়ে দামী পোশাক। সেই পোশাককে কলঙ্কিত করেছিস তোরা নর’পশুরা।”

বসার ঘরের সাথেই রান্নাঘর হওয়ায় ঝামেলা হলোনা। রাম’দা এর মাথার অংশ আগুনে পুড়িয়ে সমুদ্রের সামনে দাঁড়ালো চৈতালি। চোখের দিকে ইশারা করে বলল,

-“এই চোখ দিয়েই তো কত নারীকে ধ’র্ষণ করেছিস। এই চোখজোড়ার শাস্তি প্রাপ্য।”

উত্তপ্ত গরম লোহার রাম’দা এর মাথা ঢুকিয়ে দিলো সমুদ্রের চোখে। চোখের ভেতরের অংশ গলে গলে পড়ছে। সমুদ্রের চিৎকারে পৈ’শা’চিক আনন্দ পাচ্ছে চৈতালি। সমুদ্র নিশ্চিত মেয়েটা সা’ই’কো। একজন সুস্থ মানুষ কখনোই এরকম মৃ’ত্যু দিতে পারে না।

-“তোমার দুইটা পায়ে পড়ি চৈতালি। আমাকে এরকম বীভৎস মৃ’ত্যু না দিয়ে একেবারে মে’রে ফেলো। আমি আর সহ্য করতে পারছিনা। আমার কলিজা ছিঁড়ে আসছে। মৃ’ত্যু চাই আমি।”

সমুদ্রের আহাজারিতে চৈতালির মন নেচে উঠছে। নিজেকেই নিজের পি’শা’চ মনে হচ্ছে। সমুদ্রের দু’পায়ের মাঝ বরাবর কো’প মারলে। কপালের মাঝ থেকে লম্বা টানে বুক ছিঁ’ড়ে ফেললো। বুকের বা পাশ থেকে হৃদপিণ্ডটা টেনে বের করে বাম হাতে টিপে ধরলো। যেনো অতীব ক্ষো’ভে কাউকে গলা টি’পে হ’ত্যা করা হচ্ছে। হৃৎপিণ্ডে কয়েকবার রাম’দা এর সূচালো অংশ দিয়ে আ’ঘা’ত করে বলল,

-“এই নোংরা হৃদয়ে আমার নাম ছিলো? কালো কুচকুচে কলিজায় চৈতালির নাম মানায় না। আমার শেষ পাতায় তোর সমাপ্তি চেয়ছিলিনা? আমার হাতেই তোর সমাপ্তি টানলাম।”

সমুদ্রের নিথর দেহ সোফার সাথেই পড়ে রইলো। র’ক্তে মাখোমাখো শরীর নিয়ে চৈতালি ফাহমিদা আর অনুকে বের করলো রুম থেকে। ফাহমিদা সেখানেই জ্ঞান হারালেন। অনুর ও গা গুলিয়ে শরীর অসাড় হয়ে আসছে। সে ও মায়ের পাশে ধপ করে বসে পড়লো।

চৈতালি সমুদ্রের পায়ে শাড়ি বেঁধে টানতে টানতে রাস্তায় নামলো। বিকেল সময়ে অনেকেই রাস্তায় থাকে। তারা চৈতালিকে দেখে চমকে উঠলো। চরম বিষ্ময়ে দল বেঁধে চললো চৈতালির পিছু পিছু। একজন দুজন করে বহুজন ছড়িয়ে পড়লো। চন্দ্রা দীঘির পাড়ে গিয়ে সমুদ্রের লা’শ ফেলে দিলো চৈতালি। অতঃপর নিজেও নেমে পড়লো। ধীরে ধীরে মাঝের দিকে চলে যাচ্ছে চৈতালি।

সবাই চিৎকার করে চৈতালিকে উঠতে বলছে। না জানি চন্দ্রাবতীর মতো চৈতালি ও না ফিরে আসে। চৈতালি কারো বারণ শুনলোনা। ডুব দিলো চন্দ্রা দীঘিতে। মিনিট পেরুতেই উঠে পড়লো। সবাই হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো। দীঘিতে দাড়িয়েই চৈতালি বলল,

-“আজ থেকে তিতাসনগর মুক্ত। যেই দীঘি থেকে মৃ’ত্যু খেলার সূচনা ঘটেছে, সেই দীঘিতেই এর সমাপ্তি ঘটলো। চন্দ্রা দীঘিতে মানুষ তলিয়ে যাওয়ার কুসংস্কার আর থাকবেনা। নারী খেকো রা’ক্ষসের বিনাশ ঘটেছে।”

সবাই অবুঝের মতো চেয়ে রইলো। চৈতালি পাড়ে উঠে আসলো। এর মধ্যে পুলিশ ও উপস্থিত হলো। তাচ্ছিল্য হাসলো চৈতালি। আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল,

“আমি আজ বড্ড ক্লান্ত। ওরা আমার বেঁচে থাকার কারণ টুকু রাখেনি। শেষ করে দিয়েছে আমাকে, হাজার ও চৈতালিকে। আমার বেঁচে থাকার কারণ গুলো নেই। এ পৃথিবী আমার জন্য না। এ পৃথিবী নি’ষ্ঠুর মানুষগুলোর জন্য। আমি ভালোবেসেছি তোমায় পৃথিবী। তুমি আমায় আগলে রাখতে পারোনি।”

চৈতালিকে থানায় নিয়ে যাওয়া হলো। নিজ থেকেই আত্মসমর্পণ করলো সে। একে একে তিতাসনগরে ঘটে যাওয়া ঘটনার বিবৃতি করলো। নিজের হাতে করা সমস্ত খু’নের স্বীকারোক্তি দিলো। পুলিশ চৈতালির কথা অনুযায়ী জমিদার বাড়ি থেকে উদ্ধার করলো সমস্ত রহস্য। আলতাফ খান সহ আরও কয়েকজনকে গ্রেফতার করে জমিদার বাড়ি আরও কড়া পাহারায় রাখা হলো। গ্রামবাসীর মস্তিষ্ক থেকে কুসংস্কারের দেয়াল সরে গেলো।

চৈতালিকে আদালতে উঠানো হলো। খু’নের অভিযোগ মাথা পেতে নেওয়ায় চৈতালিকে ফাঁ’সির আদেশ দেওয়া হলো। স্ব আনন্দে শাস্তি মাথা পেতে নিলো চৈতালি। এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে তার নেই।
ফাঁ’সির দড়িতে যখন ঝুলানো হলো তখন চোখ বুজে একবার মা আর সাদমানের মুখ দর্শন করে নিলো। মুচকি হেসে বিদায় জানালো পৃথিবীকে।

কয়েকমাস পর

হাসপাতালে শিশুর কান্নার আওয়াজে ঝাঁ ঝাঁ করে উঠলো কান। সদ্য জন্ম দেওয়া ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে হু হু করে কেঁদে দিলেন ফাহমিদা। সাদমানের সেই গায়ের রং, চোখ, নাক সবকিছুই সাদমানের। ফাহমিদা চিৎকার করে কেঁদে উঠে বললেন,

-“হে আল্লাহ, আমার স্বামী-সন্তানের শোক কাটিয়ে উঠতেই বুঝি তুমি আমায় এই হীরের খনি উপহার দিলে?”

ফাহমিদা বাচ্চাটার লটাটে গভীর চুমু খেয়ে নাম উচ্চারণ করলেন,
-“সৌহার্দ্য। আজ থেকে শুরু হবে নতুন কিছুর সূচনা। তুমি নারী বক্ষক নয়, নারী রক্ষক হবে।”

#সমাপ্ত

(আমি পূর্বে কখনো থ্রিলার লিখিনি। এবারই প্রথম চেষ্টা করলাম। হয়তো অনেকটা প্যাঁচিয়ে ফেলেছি আমি। আদৌ এটাকে থ্রিলার বলা যায় কিনা আমার জানা নেই। অনেক ভুল ত্রুটি হয়েছে। সেগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
চৈতালির মতো এত অভাগী হয় বুঝি? হয়। আমি নিজ চোখে দেখেছি। মেয়েটা না পেয়েছে বাবার ভালোবাসা, না দাদা-দাদির। যখন বড় হলো, বিয়ে হলো তখন স্বামীর অন্য জায়গায় সম্পর্ক ছিলো। সেখানেও ঠ’কেছে মেয়েটা। দ্বিতীয়বার যখন বিয়ে হলো মানুষটা ভীষণই ভালো ছিলো। কিন্তু বেশিদিন বাঁচেনি। মেয়েটা আজও অভাগী হয়ে বেঁচে রইলো। আবার ও বলছি ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। হ্যাপি রিডিং।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here