তার_শহরে পর্ব ৯

0
547

#তার_শহরে

পার্ট : ৯

লেখা : ইসরাত সিনহা


উনার রুমে গিয়ে আমি যা দেখলাম তার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না…


রুমের ভেতরের অবস্থা একদম সিরিয়াস।কোনো জিনিসের ঠিক নেই।মনে হচ্ছে এই রুমের উপর দিয়ে বড় কোনো ঘূর্ণিঝড় বয়ে গেছে।রুমের ভেতরকার সব জিনিসপত্র ভাঙ্গা,ফ্লোরে সব কিছু ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরে আছে।আমি যখন এসব দেখায় ব্যস্ত তখনি আদিল ভাইয়া হ্যাচকা টানে আমাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলেন।বুঝতে পারছি উনার এসব কিছুর কারণ কি।আদিল ভাইয়ার দিকে এই মূর্হতে তাকানোর বিন্দুমাত্র সাহসটুকু নেই আমার।ভয়ে চোখ দুটো বন্ধ করে আছি।আদিল ভাইয়া মৃদু গর্জে উঠে বললেন,চোখ খুলো আনি তাকাও আমার দিকে।কি করে তাকাবো আমি?তাকালেই তো উনার ভয়ংকর চেহারা দেখব।তারপর সাহস করে পিটপিট চোখে তাকালাম উনার দিকে ।তাকিয়ে দেখি উনার চোখ দুটো রাগে অগ্নি হয়ে আছে।চোখ মুখ শক্ত করে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন যেন আমাকে গিলে খাবেন।আরেকটা জিনিস লক্ষ্য করলাম,উনি যখন খুব বেশি রেগে যান তখন উনার নাকের ডগা লাল বর্ণ ধারণ করে।আজকেও তার ব্যতিক্রম হয়নি।নাকের ডগা লালচে হওয়ার কারণে ফর্সা চেহারাটা আরো আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।উনি আবার দাঁতেদাঁত চেপে বলে উঠলেন,আনি ভালো করে তাকাও আমার দিকে নয়তো খারাপ হবে।এ কথা বলেই উনি আরো শক্ত করে আমার হাত চেপে ধরলেন।চোখ খুলে উনার দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম,আদিল ভাইয়া প্লিজ আমার লাগছে ছাড়ুন।উনি আমার কথা কে উপেক্ষা করে বললেন,নিজের ব্যাথাটা ভালো ভাবে বুঝতে পারো আনি,কিন্তু অন্যের ব্যাথাটা বুঝতে পারনা?আদিল ভাইয়ার এমন কথার মানে আমি ঠিক বুঝলাম না।উনার দিকে জিজ্ঞাসা চোখে তাকালাম।উনি কোনো জবাব না দিয়ে বলতে শুরু করলেন,
-তুমি সাহিলের সাথে কেন বাহিরে গিয়েছ?তোমাকে আর কত বার বুঝাব তুমি কারো সাথে মিশলে আমার সেটা সহ্য হয় না।বলেই উনি চিৎকার দিয়ে উঠলেন।
-ভয়ে আমি আমার এক হাত দিয়ে অন্য হাত শক্ত করে ধরে দাঁড়িয়ে আছি।উনার এমন চিৎকার যেন ঘরময় ফেটে পড়ল বোমার শব্দের মতো।আদিল ভাইয়া আবার হুংকার ছেড়ে বললেন,স্পিক আউট আনি?
আমি ভয়ে তুতলাতে তুতলাতে বললাম,আমি তো একা যাইনি সাহিল ভাইয়ার সাথে।নেহালও ছিল,
আর মামিমার অনুরোধ আমি ফেলতে পারিনি তাই চলে গিয়েছিলাম।

-আদিল বুঝতে পারছে আনিতা তাকে এখন বিষণ ভয় পাচ্ছে।এসির মধ্যেও আনিতা ধরধর করে ঘামছে।তাই আদিল তার রাগকে কন্ট্রোল করার জন্য চোখ বন্ধ করে লম্বা একটা শ্বাস নিল।তারপর শীতল গলায় আনিতা কে বলল,আনি তুমি আর কখনো সাহিলের সাথে কোথাও যাবে না।
এটা আমার পছন্দ না।আর আমার যা পছন্দ না সে টা যদি করো বা করার চেষ্টা করো তার শাস্তি কি হবে তা তোমার কল্পনার বাহিরে।মাইন্ড ইট…
-আমি দু দিকে জোড়ে জোড়ো মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালাম,আমি যাব না।আদিল ভাইয়া আমার হাত ছেড়ে দিয়ে একটু দূরে দাঁড়িয়ে বললেন,গুড গার্ল ।

হঠাৎ আমার চোখ পড়ল উনার ডান হাতের দিকে।আমি চমকে গেলাম উনার হাতে রক্ত কেন?
-একটু ভয়ার্ত কন্ঠে বললাম,আদিল ভাইয়া আপনার হাতে রক্ত কেন?কি হয়েছে?
উনি তাচ্ছিলের হাসি দিয়ে বললেন,হাতের রক্তটাই দেখলে আনি,ভেতরের রক্তটা কি করে দেখাব?
-মনে মনে ভাবছি আজ আদিল ভাইয়ার কি হলো,উনি এমন আচরণ করছেন কেন?আর কি সব জানি বলছেন ?আমি আবারও অনুরোধের গলায় বললাম,আদিল ভাইয়া প্লিজ আপনার হাত টা ধুয়ে আসুন আর বেন্ডেজ করুন।আমার মাথা জিম জিম করছে,রক্তে আমার হিমো ফোবিয়া আছে।উনি তাৎক্ষণিক ভাবে আমার কাছে এসে বললেন,আই এম সরি আনি।
-তুমি এসো বলেই উনি আমার হাত ধরে উনার বেডে বসালেন।তারপর উনি ওয়াশরুমে যেয়ে হাত পরিষ্কার করে আসলেন।উনি আমার থেকে একটু দূরে বসে আছেন।মাথাটা নিচের দিকে ঝুকে রেখেছেন।
ভয়ে ভয়ে বললাম,আদিল ভাইয়া আপনার হাতে ব্যান্ডেজ করে নিন।নয়তো আবার ব্লিডিং হতে পারে।
-আমি এ কথা বলার সাথে সাথে উনি আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালেন,তারপর বললেন,
-এই মেয়ে তোমার মুখে কি আদিল ভাইয়া ছাড়া আর কোনো শব্দ বের হয় না?
-কিছুটা অবাক হলাম উনার কথায়।ভয়ার্তকন্ঠে আস্তে করে জবাব দিলাম,আপনি আমার ভাইয়া হন তো আপনাকে তো ভাইয়া’ই ডাকব..!!
-উনি চাপা গলায় বললেন,আদিল ভাইয়া,আদিল ভাইয়া শুনতে শুনতে আমি ফেড আপ।ভাইয়া মাই ফুট…
-ভাবছি উনাকে তো দেকি কিছুই বলা যায় না,তাহলে বলব টা কি??
ভাবখানা এমন যেন,যে কোনো সময় উনার অগ্নিকুন্ড দ্বারা ভষ্ম করে দিবেন আমায়।’
আমি একটু নম্র আওয়াজে উনাকে ডাক দিলাম,এই যে শুনছেন?
-উনি জবাব দিলেন,হুম বলো..।
-আপনার ঘরে ফাস্ট এইড বক্সটা কোন জায়গায়?আমার দিকে না তাকিয়েই আদিল ভাইয়া ইশারা করে উনার কাবার্ড দেখিয়ে দিলেন।
-আমি ধীর পায়ে গিয়ে কাবার্ড খুলে বক্সটা নিয়ে আসলাম।তারপর উনার ক্ষত হওয়া স্থানে ব্যান্ডেজ করে দিলাম।আর উনি মায়া ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।
-আদিল মনে মনে ভাবছে,আমি তো এটাই চেয়ে ছিলাম আনি।তুমি তোমার হাত দিয়ে আমার হাত ব্যান্ডেজ করে দাও।আমি জানি আনি তুমি আমার প্রতি দূর্বল হয়ে যাচ্ছো।তাইতো আমার সামান্য ব্যাথা পাওয়াতে তোমাকে এতো বিচলিত আর উদ্বিগ্ন দেখাচ্ছে।

তুমি আমাকে ভালবাসো আর নাই বাসো আমার কিছু যায় আসে না।তুমি তো আমার হবেই আনি ।এট এনি কস্ট..
-তুমিই হবে আমার মিসেস আদিল মেহবুব।
আদিল মেহবুব তার সব কিছু সবাইকে দিতে পারে কিন্তু তার ভালবাসা কে নয়।

আনিতার ডাকে আদিলের ভাবনায় ছেদ পড়ল।
-আপনি ডিনার করেননি কেন?
-আমার ইচ্ছা তাই,আদিল বলল।
-ইতিমধ্যে আমার ব্যান্ডেজ করা শেষ।উনাকে ডিনার করার জন্য বললাম,কিন্তু উনি না করলেন।উনার শরীরে যে জ্বর এসেছে তা বেশ ভালো ভাবেই বুঝছি।
আদিল ভাইয়া আমাকে বলছেন,
-আনি তুমি রুমে চলে যাও।অনেক রাত হয়েছে কাল তোমার ভার্সিটি আছে।
-আমি উনাকে জ্বর এর মেডিসিন খাওয়ার জন্য বলছি।কিন্তু উনি খাবেন না।উনি নাকি ঠিক আছেন।অনেক কষ্টে উনাকে মেডিসিন খাওয়াতে সক্ষম হলাম।
যখনই রুম থেকে চলে আসতে যাব তখন উনি আমার হাত ধরে বললেন,
-আনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেবে প্লিজ?আমি ঘুমিয়ে গেলে চলে যেয়।
-না করতে পারলাম না উনার আবদারটা।উনার কোনো কিছুতেই আমি না করতে পারি না ,কেন জানি না..!উনার পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম ।খানিক বাদেই বুঝতে পারলাম উনি ঘুমে তলিয়ে গেছেন।রুমে আসতে যাব হঠাৎ উনার কপালে আর চোখে গভীর ভাবে চুমু এঁকে দিলাম জানিনা এমনটা করতে কেন মন চাইল..!

-ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নিচে আসলাম।নাস্তার টেবিলে আদিল ভাইয়াও আছেন।উনি নি:শব্দে খাচ্ছেন আমার দিকে একটা বারের জন্যও আজ তাকালেন না।উনার এমন ব্যবহারে আমার খুব কষ্ট লাগছে।উনার এমন পরিবর্তন এর কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছিনা।
হঠাৎ করেই বাসার কলিং বেল বেজেঁ উঠল,মামিমা দরজা খুলে দিলেন।

আর সাথে সাথে ভেতরে একজন অতি রূপসী,অতি সুন্দরী মেয়ে প্রবেশ করল।যার কারণে আমার মুখ হা হয়ে আছে……(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here