তার_শহরে পর্ব ১০

0
550

#তার_শহরে

পার্ট : ১০

লেখা : ইসরাত সিনহা


আর সাথে সাথে ভেতরে একজন অতি রূপসী,অতি সুন্দরী মেয়ে প্রবেশ করল।যার কারণে আমার মুখ হা হয়ে আছে..!!



-আমি হা করে আছি দেখে সাহিল ভাইয়া ডহং এর সুরে বললেন,
-আনি তোমার হা করা মুখটা বন্ধ করো,নয়তো মাছি ঢুকে যাবে ।
-সাহিল ভাইয়ার এমন কথায়,আমি খানিকটা লজ্জা বোধ করলাম ।তাই মাথাটা নিচের দিকে করে খাওয়াতে মনোযোগ দিলাম । এরমধ্যে মেয়েটি মামিমা কে জড়িয়ে ধরে বলল,কেমন আছো আন্টি ?
-বুঝলাম মেয়েটি মামিমা’র বোনের মেয়ে।মামিমা বলে ছিলেন উনার এক বোন আছে।একে একে মেয়েটি সবাই কে কুশালাদি জিজ্ঞেস করল । কিন্তু আদিল ভাইয়া কে ঝাপটে ধরে কুশালাদি জিজ্ঞেস করছে । মনে হচ্ছে আদিল ভাইয়ার প্রান বায়ু বার করে দিবে ,এমন ভাবে ধরে আছে । আমার কষ্টটা যেন আরো দ্বিগুণ আকাঁরে বাড়ল। বুকটা ভারি ভারি লাগছে নি:শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে খুব । আমার এমন লাগছে কেন জানি না,তবে এই মেয়ে কে আমার সহ্য হচ্ছে না। ইচ্ছে করছে গলা টিপে ধরি মেয়েটার । ছলছল চোখে আমি তাকিয়ে আছি আদিল ভাইয়ার দিকে । আমার তাকানো উনি দেখতে পাননি । খানিক বাদে উনি মেয়েটি কে বলে উঠলেন,
-জেনি আমায় ছাড়,এমন ভাবে ধরে আছো আমার ধম আটকে আসছে । তোমার স্বভাবটা আর যাবে না ।বলেই উনি বিরক্তি ভাব নিয়ে মেয়েটি কে সরিয়ে দিলেন ।

মেয়েটি এবার আমার দিকে তাকিয়ে মামিমা
কে জিজ্ঞেস করল,আন্টি ও কে ?
-মামিমা বললেন,ও আনিতা । আমার ননদের মেয়ে । আনিতা বাংলাদেশ থেকে এখানে এসেছে লেখা পড়া করার জন্য ।
মেয়েটি আমার দিকে চেয়ে বলল, হাই আনিটা..!
আমি জেনিফার.!তুমি আমায় সর্ট’স করে জেনি বলে ডাকতে পারো ।মেয়েটি আমাকে বলল,
-আমি মৃদু হেসে বললাম,হ্যালো..!
মনে মনে বলছি এই জেনিও দেখি আনিটা বলে..?এর মধ্যে আমার ভার্সিটির টাইম হয়ে গেছে । মামিমা আর মামা কে বললাম,আমি একাই চলে যাব আজ । আমার কোনো প্রবলেম হবে না । উনারা রাজি হচ্ছেন না,তারপরও আমি জোড় করে যেতে চাচ্ছি।
এরমাঝে আদিল ভাইয়া গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলেন,
-একা যেতে হবে না,আমি তোমাকে ড্রপ করে তারপর আমার অফিসে যাব ,চলো ।
মামা-মামিমাও সায় দিলেন এতে ।কি আর করবো উনার এমন গম্ভীর কন্ঠ শুনে আর কোনো কথা বলতে সাহস পাইনি ।
আবার কি করে বসেন তার ঠিক নেই,কাল যা করলেন ভাবলেই শরীর এর লোম দাঁড়িয়ে যায় ।
সাহিল ভাইয়া,আদিল ভাইয়ার উদ্দেশ্য বললেন,
-ভাইয়া তুমি অফিসে চলে যাও,তোমার লেট হয়ে যাবে ।আমি আনিতা কে ড্রপ করে দিবনে ।
আদিল ভাইয়া যেন মূর্হতেই রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে উঠলেন,আর সাহিল ভাইয়াকে বললেন,
-তুই আবার কখন থেকে আমাকে নিয়ে ভাবতে শুরু করলে সাহিল ? আমি আমার টাইম বুঝে নিব । তকে এত ভাবতে হবে না বলেই উনি হনহন করে গাড়ির দিকে চললেন । আমি যাওয়ার আগে একবার সাহিল ভাইয়ার দিকে তাকালাম,দেখলাম উনি রাগে সাপের মতো ফুসফুস করছেন । আর সবাই উনাদের দু জনের দিকে তাকিয়ে আছেন । লক্ষ্য করলাম জেনি আমার দিকে তীব্র রাগ নিয়ে চেয়ে আছে । জেনির হঠাৎ আমার উপরে রাগের কারণ টা বুঝলাম না ।
আর কোনো কিছু না ভেবে সবাই কে বাই জানিয়ে গাড়ির দিকে চললাম । লেট হলে আবার কি শাস্তি দিয়ে বসেন মহাশয় কে জানে ..?
গাড়ির কাছে যেয়ে দেকি উনি রাগি মুখ করে বসে আছেন । উনার রাগি রাগি চেহারা দেখে ভয়ে একটা শুকনো ঢুক গিললাম । সাহিল ভাইয়া কে নিয়ে উনার এতো প্রবলেম কেন বুঝিনা আমি ..!আস্তে আস্তে গাড়িতে গিয়ে বসলাম । আমি বসতেই উনি গম্ভীর সুরে বলে উঠলেন,
-আনি সিট বেল্ট বাঁধবে নাকি আমি বেঁধে দিবো ?
উনার এমন কথায় আমি অপ্রস্তুত গলায় বললাম,
-না,না ভাইয়া আমি বাঁধছি ।আসলে খেয়াল করিনি ।উনি আমার দিকে চেয়ে বাঁকা হাসলেন ।



গাড়ি চলছে লক্ষ্য করলাম এটা আমার ভার্সিটির রাস্তা নয় । তাই একটু জোড়ে আদিল ভাইয়া কে বললাম ,
-আদিল ভাইয়া আপনি ভুল পথে যাচ্ছেন,এই রাস্তা আমার ভার্সিটি যাওয়ার রাস্তা না । আমার কথায় উনি আবার বাঁকা হাসি দিয়ে বললেন,
-আমি চিনি আনি তোমার ভার্সিটির রাস্তা ।
উনার কথায় উনার দিকে জিজ্ঞাসা দৃষ্টিতে তাকালাম,
উনি বললেন গেলেই দেখতে পাবে কোথায় যাচ্ছি । আর এতো প্রশ্ন করোনা তো,নয়তো গাড়ি থেকে ফেলে দিবো ।
-চুপটি করে গাড়িতে বসে রইলাম । উনার সাথে বসে থাকতে আমার বিষণ ভালো লাগছে ।আর উনার বাঁকা হাসিতে উনাকে আরো কিউট লাগে । ইচ্ছে করে তাকিয়ে তাকি । আবার নিজে নিজেই বলছি দূর কি সব ভাবছি আমি ?



আমার এই সব ভাবনার মাঝে আদিল ভাইয়া বলছেন,
-আনি গাড়ি থেকে নামো , আমরা এসে গেছি ।
উনার কথায় আমি গাড়ি থেকে নামলাম । চেয়ে দেখি একটা বড় বিল্ডিং,আর সামনে বড় বড় করে লিখা(আলী মেহবুব গ্রুপ অফ ইন্ডাস্টিজ)।
বুঝতে পারলাম এটা উনার অফিস । কিন্তু আমাকে হঠাৎ উনার অফিসে নিয়ে আসার কারণ কি ?
ইতিমধ্যে উনি গাড়ি পার্ক করে চলে আসছেন । উনি আমার কাছে এসে বলছেন,
-চলো আনি ভেতরে চলো ।
ভয়ে ভয়ে উনাকে জিজ্ঞেস করলাম ,
-আদিল ভাইয়া আমাকে এখানে নিয়ে এলেন কেন?উনি আবারও উনার বিখ্যাত বাঁকা হাসি দিয়ে বললেন ,
-তোমাকে এখানে আনার কারণ,তোমার আদিল ভাইয়া এখানে কি কাজ করে দেখানোর জন্য ।
বলেই উনি আমার দিকে চেয়ে চোখ মারলেন।
উনার চোখ মারা দেখে আমার বিষণ লজ্জা করছে ।
আদিল ভাইয়া আমার লজ্জা মাখা মুখ দেখে বললেন ,
-এতো লজ্জা পেতে হবে না,এখনো তো কিছুই করলাম না । সাধারণ চোখ মারায় এতো লজ্জা..!আনি তুমি এতো লজ্জা রাখো কোথায় ? বলেই শয়তানি হাসি দিলেন ।
উনার কথার মাথা মুন্ডু কিছুই বুঝলাম না ।আদিল ভাইয়ার সাথে ভেতরে গেলাম ।


ভেতরে প্রবেশ করতেই অফিসের সব স্টাফ’রা হা করে আমার আর আদিল ভাইয়ার দিকে তাকাচ্ছে । উনাদের তাকানো দেখে মনে হচ্ছে অফিসে কোনো এলিয়েন ঢুকেছে..!
উনাদের এমন এক্সপ্রেশন দেখে আদিল ভাইয়া বলে উঠলেন,
-আপনারা কাজে মনোযোগ দিন । আদিল ভাইয়ার কথায় সবাই যে যার কাজে আবার মনোনিবেশ করলো । আর আমি আদিল ভাইয়ার পিছনে হাঁটছি ।


অফিসে আসতেই উনার মধ্যে একটা বস বস ভাব চলে আসছে । আর মেয়ে স্টাফ গুলো উনার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে ।মনে মনে মেয়ে গুলো কে লুইচ্ছা বলে গালি দিলাম । এভাবে কেউ তাকায়,তাও আবার অফিসের বসের দিকে ? বিদেশি মেয়ে গুলো বোধ হয় একটু লজ্জা,শরম কম থাকে।আদিল ভাইয়াকে ও বলিহারি এতো হ্যান্ডসাম হয়ে আসার দরকার কি অফিসে ?মেয়ে গুলো কিভাবে গিলে খাচ্ছিলো উনাকে ..!
দুর আমি এতো জেলাস হচ্ছি কেন ? উনাকে যার ইচ্ছা গিলে খাক বা চিবিয়ে খাক আমার কি ?


আদিল ভাইয়ার ডাকে আমার ভাবনায় ছেদ পড়ল ।উনি বলছেন,
-কি এতো ভাবছো আনি ?কখন থেকে দেখছি অন্য মনস্ক হয়ে হাঁটছ ।
আমি আমতা আমতা করে বললাম,
-না আদিল ভাইয়া আপনার অফিসটা দেখছি,খুব পরিপাটি আপনার অফিস ।
উনি আমার দিকে হাল্কা ঝুকে বললেন,
-তোমার সত্যিই আমার অফিস পছন্দ হয়েছে ?
আমি মাথা নাড়িয়ে,হে বললাম ।উনি আবার আমার দিকে ফিরে বললেন,
-তাহলে আনি তোমার জন্য আমার অফিসে একটা রুম বানিয়ে ফেলি ?এখানে থেকে যাবে ।
চোখ বড় বড় করে উনার দিকে তাকালাম।তাকিয়ে বললাম,
-আমি একা ভয়ে মরে যাব আদিল ভাইয়া অতো বড় অফিসে..!উনি বাঁকা হাসি দিয়ে বললেন,
-একা থাকবে কেন,আমার সাথে থাকবে ?বলেই চোখ মারলেন ।
আমি বললাম,
-আপনার সাথে কেন থাকতে যাব আদিল ভাইয়া ?উনি মৃদু হেসে বললেন,
-সময় হলে দেখবে কেন থাকতে যাবে..!ভাবছি উনি কি বুঝাতে চাইছেন ?

উনার তো দেকি মুখে কিছুই আটকায় না,আমাকে লজ্জা দিতে সর্বদা প্রস্তুত থাকেন । আমি আর কোনো উত্তর দিলাম না ।তারমধ্যেই উনার বিশাল বড় কেবিনে এসে পৌঁছালাম । আদিল ভাইয়ার কেবিন টা খুব গোছালো । অত্যন্ত সুন্দর করে সাঁজিয়ে রেখেছেন,দামি দামি জিনিসপত্র দ্বারা ।


উনি আদেশের সুরে বললেন,
-আনি তুমি আমার সামনের চেয়ারে বসে থাকো । আমার কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত এক পা ও নড়বে না ।
আমিও চুপচাপ ঘুটিশুটি মেরে উনার সামনের চেয়ারে বসে পড়লাম ।
আর মহাশয় কাজ করছেন এক মনে ।মাঝে মাঝে আমার দিকে তাকাচ্ছেন ।আদিল ভাইয়ার তাকনোতে ভালোও লাগছে,অস্বস্তি ও কাজ করছে।উনার একেবারে সামনে বসে আছি তাই অস্থিত্ব বোধ করছি ।
উনার কাজ শেষ হলে নাকি কোথায় নিয়ে যাবেন বললেন ।

এরই মাঝে ঝড়ের বেগে কোথা থেকে যেন জেনি আসলো,এসেই সুইট হার্ট বলে আদিল ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরল । আমি অবাক চোখে তাকিয়ে আছি….!!.(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here