তার_শহরে শেষপর্ব

0
795

#তার_শহরে

পার্ট : ৩০

লেখা : ইসরাত সিনহা

হঠাৎ করে সাহিলের চোখ পড়ল এক ব্যক্তির উপর সে এদিক দিয়ে ভেতরের দিকে আসছে , সাহিল ছোট করে একটা ঢুক গিলল ।

সে ব্যক্তটি আর কেউ নয় জন , জন তার মা কে নিয়ে ভেতরের দিকে এগিয়ে এলো ।
সাহিল মনে মনে বলে উঠল ,
-আজ যদি জন কোনো খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে এখানে এসে থাকে , তাহলে ভাইয়া তো এ কে জ্যান্ত কবর দিবে । না জানি ভাইয়া এখন জন কে দেখলে কেমন রিয়েক্ট করবে ?
সাহিল একমনে এসব ভেবে যাচ্ছিলো জনের ডাকে তার ধ্যান ভাঙ্গে ।
জন হেসে সাহিলের দিকে হ্যান্ডশেকের জন্য হাত বারিয়ে বলল ,
-হাই , সাহিল ।
সাহিলও আন্তরিকতার খাতিরে হাত বারিয়ে হ্যান্ডশেক করে বলল ,
-হ্যালো, ব্রো । সাহিল জনের মায়ের দিকে তাকিয়ে হাল্কা হেসে বলল , আন্টি ভেতরে যান আপনারা ।
জন এবং তার মা ভেতরে চলে গেলেন ।
মিসেস এনজেলা জনের মাকে দেখে খুশি হলেন ঠিকি কিন্তু পেছনে জন কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে খানিক ভয় পেলেন আদিলের কথা ভেবে । মিসেস এনজেলা জনের মা’র সাথে মিসেস আলেয়ার আলাপ করিয়ে দিলেন । জন তার মা কে নিয়ে একটা সোফায় বসে পড়ল । জন চারপাশে চোখ বুলিয়ে সব কিছু দেখছে , বাড়ি টাকে বেশ ঝাঁকঝমক ভাবে সাজানো হয়েছে । চারিদিকে শুধু লাইটিং আর লাইটিং । মেহবুব হাউজ কে যেন আজ অন্যরকম সুন্দর লাগছে । আশেপাশে মানুষ জনদের আনাগোনা , একেঅন্যের সাথে আলাপে ব্যস্ত । জনাব আলী মেহবুব সোফায় জন কে দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকালেন । তিনি চিন্তিত হলেন আদিলের কথা চিন্তা করে । জনাব আলী মেহবুব দ্রুত পায়ে হেঁটে মিসেস এনজেলা কে আড়ালে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন ,
-এনজেলা শুনো তুমি কি জনের মায়ের সাথে জন কেও আসতে বলেছিলে ?
মিসেস এনজেলা আস্তে করে বললেন ,
-না , আমি তো শুধু ওর মাকে ইনভাইট করেছিলাম। জন কি কোনো ঝামেলা বাঁধানোর জন্য এলো ?
জনাব আলী মেহবুব চিন্তিত ভাবে উত্তর দিলেন ,
-আমিও তো সেটাই ভাবছি এনজেলা । আচ্ছা এতো চিন্তা করো না দেখি কি করে ? যদি কোনো ঝামেলা করতে চায় তবে আমি ডিরেক্ট পুলিশে ইনফর্ম করব । জনাব আলী মেহবুব তাড়া দেওয়া গলায় মিসেস এনজেলা কে বললেন ,
-যাও তো এনজেলা তুমি আর আলেয়া আনিতা কে নিচে নিয়ে এসো বিয়ে পড়ানোর সময় হয়ে গেছে ।
মিসেস এনজেলা আর কোনো কথা না বলে চলে গেলেন ।
কিছুক্ষণ পরে আদিল বর বেশে সিঁড়ি দিয়ে নামল তার বন্ধুদের সাথে । আদিলের দিকে বিয়েতে আসা সব মেয়েরাই তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে । আদিল কে রেড কালার শেরওয়ানিতে অসম্ভব রকম হ্যান্ডসাম আর ডেশিং দেখাচ্ছে । তার অফিসে কাজ করা মেয়ে স্টাফরাও হা করে তাকিয়ে আছে , এ যেন এক অন্য আদিল মেহবুব । তাদের চোখে এমনিতেও আদিল মেহবুব অনেক সুন্দর কিন্তু এতটা সুন্দর তাদের কাছে আগে লাগেনি । ফর্সা মুখের মধ্যে কোঁচা কোঁচা চাপ দাঁড়ি , মাথার কালো চুল গুলো স্পাইক করে রাখা । রেড কালার শেরওয়ানিতে গোল্ডেন স্টোন এর কাজ করা । আদিল তার বন্ধুদের সাথে কথা বলছে আর মাঝে মাঝে হাসছে, যা আদিল কে আরো বেশি সুন্দর লাগছে । সব মিলিয়ে আদিল কে অনেক কিউট আর হ্যান্ডসাম দেখাচ্ছে । আদিল গেস্টদের সাথে কথা বলছে এমন সময় তার চোখ গেল জনের দিকে । জনও সাথে সাথে আদিলের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বসা থেকে উঠে আদিলের কাছে গেল । আদিল জন কে দেখে রাগে ফুঁসছে , জনের উপর পুরাতন রাগ আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে আদিলের ।
জন হেসে আদিলের দিকে হাত বারিয়ে দিল হ্যান্ডশেক করার জন্য , আদিল হ্যান্ডশেক না করে ইশারায় জন কে বলল আড়ালে আসার জন্য ।
জন আদিলের ইশারা বুঝতে পেরে আদিলের পিছনে হাঁটতে লাগল । আদিল হেঁটে হেঁটে বাগানের কাছে এসে থামল , জনও থেমে গেল ।
সাহিল আড়ালে দাঁড়িয়ে পুরো ব্যাপার নোটিশ করছিল , সাহিলও বাগানে এসে আড়ালে দাঁড়িয়ে রইল । আদিল গম্ভীর কন্ঠে জন কে বলল ,
-জন তুমি আবার কোন কুমতলবে আমার বিয়েতে এসেছো ? জন ম্লান সুরে বলল ,
-দেখো আদিল এখানে আমি কোনো ঝামেলা করতে বা কোনো কুমতলবে আসিনি ।
আদিল গলার স্বর আরো গম্ভীর করে বলে উঠল ,
-তাহলে কেন এসেছো জন ?
জন মাথা নিচু করে মৃদুস্বরে বলল ,
-আদিল আমি আসলে সেদিনের ব্যাপারটার জন্য লজ্জিত , আমার উচিত হয়নি এভাবে একটা মেয়ের সাথে মিস বিহেভ করা । আমাকে তুমি আর আনিটা ক্ষমা করে দিও প্লিজ ।
আদিল রাগে গর্জে উঠে বলল ,
-এটা আবার তোমার কোন ড্রামা জন ? তোমার এই মিথ্যা ড্রামাও আমায় বিশ্বাস করতে বলছো ? তা জন কোনো নতুন প্লানিং করছো নাকি ?
জন অসহায় কন্ঠে আদিলের দিকে তাকিয়ে বলল ,
-জানি আদিল তুমি আমাকে এতো সহজে ট্রাস্ট করতে পারছো না । বাট ট্রাস্ট মি আদিল আই এম নট লাইং টু ইউ , আই সয়ার টু গড ।
আদিল খানিক নিরব থেকে জনের মুখের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল ,
-জনের মুখ দেখে তো মনে হচ্ছে না ও মিথ্যা বলছে , একবার কি বিশ্বাস করে দেখবো ? হুম একবার সুযোগ দেওয়া উচিত , হয়তো তার আগের ক্যারেক্টার পাল্টে ফেলেছে ?
আদিল অন্যদিকে চেয়ে গুরুগম্ভীর ভাবে বলে উঠল ,
-জন আমি তোমার কথা বিশ্বাস করলাম । বাট রিমেম্বার ইট, তুমি যদি আমার বা আনির অথবা আমার ফ্যামেলির কোনো ক্ষতি করার চেষ্টা করো তাহলে, আদিল মেহবুব থেকে ভয়ংকর আর কেউ হবে না । জন হেসে বলল ,
-না আদিল আমি এরকম কিছুই করব না , নিঃসন্দেহে বিশ্বাস করতে পারো ।
আদিল আর কোনো কথা না বারিয়ে বলল ,
-লেট’স গো জন , লেট হয়ে যাচ্ছে ।
আদিল এবং জন তারা দুজনে বাড়ির ভেতর চলে গেল । সাহিল আড়াল থেকে বের হয়ে এসে নিজ মনে বলল ,
-ভয় পাচ্ছিলাম এটা ভেবে জন কে কি ভাইয়া মারার জন্য এখানে নিয়ে এলো ? যাক জন বেঁচে গেছে, এই জন কি সত্যি ভালো হয়ে গেল ? যদি সত্যি ভালো হয়ে যায় তাহলে তো ভালোই । আর জন যদি মনে মনে কোনো ফন্দি আঁটে থাকে ভাইয়ার ক্ষতি করবে বলে , তাহলে জনকে ভয়ংকর মৃত্যুর হাত থেকে কেউ বাঁচাতে পারবে না । জন যেভাবে কথা বলল তাতে তো মনে হয় ভালো হয়ে গেছে ।
নাহ, আর ভেবে লাভ নেই ভেতরে যাওয়া যাক ।
আদিল তার বন্ধুদের সাথে কথা বলছে এমন সময় তার চোখ আঁটকে গেল আনিতার উপর । আনিতা সিঁড়ি দিয়ে নামছে , সাথে আনিশা তার মা এবং মামিমা । আদিল কে এক ধ্যানে তাকিয়ে থাকতে দেখে তার বন্ধুরাও তাকালো সে দিকে , সবাই হা করে তাকিয়ে আছে আনিতার দিকে । আদিলের হার্টবিট দ্রুত উঠানামা করছে , আদিল তার বুকের বা পাশে হাত দিয়ে আপন মনে বলল ,
-এই মেয়ে কি আমাকে আজ মেরে ফেলতে চায় ? আজ আনি কে এতো আর্কষণীয় লাগছে কেন ?
আনিতা লাজুক লাজুক মুখ করে আছে , আনিশা লক্ষ্য করল আদিল এক নজরে তাকিয়ে আছে ।
আনিশা শয়তানি হাসি দিয়ে আদিলের কাছে গিয়ে বলল ,
-এহেম এহেম , ভাইয়া ঐদিক দিয়ে কি দেখছো আপু তো নিচে চলে এসেছে ।
আদিল লজ্জা পেয়ে চোখ নামিয়ে নিল , আদিল আড়চোখে দেখলো তার বন্ধু রাদিফ সহ সবাই আনিতার দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে ।
আদিল চাপা রাগ নিয়ে তার বন্ধুদের উদ্দেশ্য বলে উঠল ,
-এই লুইচ্চার দল তোমরা আমার বিয়ে করা বউয়ের দিকে হা করে তাকিয়ে কি দেখছো ?
আদিলের চাপা রাগ কারো বুঝতে বাকি রইল না সবাই নিচের দিকে দৃষ্টি দিল ।
আনিতা লজ্জা পেল আদিলের কথায় ।
দূর থেকে দাঁড়িয়ে আনিশার দিকে তাকিয়ে আছে নেহাল , আনিশা কে আজ নেহালের চোখে এক অনিন্দ্য সুন্দরি লাগছে ।
আনিশা ব্লাক কালার জর্জ জেটের শাড়ি পড়েছে , সাথে অল্প মেকাপ , চোখে ঘনকরে কাজল, ঠোঁটে রেড লিপস্টিক । চুল গুলো খুলাই রেখেছে , গলায় সেম্পল এক সেট ডায়মন্ডের নেকলেস যা আনিশা কে আরো সুন্দর লাগছে ।
আনিতা আর আদিল কে একত্রে বসানো হলো , আনিতা লজ্জায় কারো দিকে চোখ তুলে তাকতে পারছে না। আনিতা রেড কালার লেহেঙ্গা পড়েছে আদিলের সাথে মেচ করে । আনিতার ফর্সা গায়ে রেড কালার লেহেঙ্গা টা বেশ মানিয়েছে । লেহেঙ্গার মধ্যে গোল্ডেন স্টোন এর কাজ থাকায় লাইটের আলোয় আরো বেশি ঝিলিক দিচ্ছে যা আনিতার সুন্দরর্য বারিয়ে দিয়েছে । আদিল তাকালো আনিতার দিকে তার কাছে আনিতা কে এইমূর্হতে কোনো অপ্সরী থেকে কম লাগছে না । সত্যিই তার মায়াকুমারী কে আজ অন্য রকম লাগছে।
জন তাকিয়ে আছে আনিতার দিকে । কিন্তু আনিতা সেটা দেখতে পেল না । আদিল খেয়াল করছে জন বার বার তাকাচ্ছে আনিতার দিকে । আদিল বুঝতে পারছে না জন কেন বার বার আনিতার দিকে তাকাচ্ছে ?
খানিকক্ষণ বাদে কাজি এসে তাদের আবার নতুন করে বিয়ে পড়িয়ে দিলেন । বিয়ে পড়ানো শেষে জন এগিয়ে এলো আদিল আনিতার দিকে । আনিতা জন কে দেখামাত্র ভয়ে চোখ বড় বড় করে জনের দিকে তাকিয়ে আদিলের হাত চেপে ধরল।
জন আন্দাজ করতে পারছে আনিতা থাকে ভয় পাচ্ছে , তাই জন নম্র কন্ঠে বলল ,
-আনিটা আই এম সরি , সেদিনের বিহেভ এর জন্য আমাকে ক্ষমা করে দিও। তোমাদের দুজনকে কংগ্রেস ম্যারিড লাইফে । আনিতা মাথা নিচু করে রইল কিছু বলল না। জন আবার বলল ,
-আনিটা তোমাদের দুজন কে বেশ মানিয়েছে ।
আনিতা হাল্কা হাসল , হেসে চাপা রাগ নিয়ে বলল ,
-মি. জন লিসেন, পৃথিবীতে আমার জন্ম হয়েছে আদিল মেহবুবের জন্য আর আদিল মেহবুবের জন্ম হয়েছে আমার জন্য ।
আদিল একটা তৃপ্তির হাসি দিল, যে হাসি অনেক কিছু প্রকাশ করল । জন মৃদু হেসে আস্তে করে বলল ,
-রাইট আনিটা , তোমরা পারফেক্ট কাঁপল ।
আদিল বা আনিতা আর কোনো কথা বলল না।
আনিশা মনে মনে নেহাল কে খুঁজছে কিন্তু কোথাও দেখতে পাচ্ছেনা ।
জনাব এনাম আহমেদ আদিলের পাশে বসে আদিলের এক হাত ধরে কান্নার স্বরে বললেন ,
-বাবা আদিল আমার আদরের মেয়েটাকে আজ থেকে তোমার হাতে তুলে দিলাম । উনি কান্নার জন্য কথা বলতে পারছেন না , তারপর আবার বললেন, আমার মেয়েটাকে কোনো কষ্ট দিয় না বাবা, যদি কখনও মনে হয় আনিতা তোমার যোগ্য নয় তবে আমার মেয়েকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিয় । আদিল হতভম্ব হয়ে এনাম আহমেদর দিকে তাকিয়ে বলে উঠল ,
-আংকেল আপনি এসব কি বলছেন , আমি কেন আনি কে আমার অযোগ্য মনে করব? আংকেল আপনি প্লিজ কাঁদবেন না , আই প্রমিজ আংকেল কোনো দিনও আনি কে কষ্ট দেবনা । আনিতা তার বাবার কান্না দেখে সেও কেঁদে যাচ্ছে , মিসেস আলেয়া ও কাঁদছেন । মিসেস এনজেলা এসে আদিলের উদ্দেশ্য বললেন ,
-কি ব্যাপার আদিল এখনো আংকেল, ফুফি বলবে?
আদিল লাজুক হেসে মাথা নিচু করে নিল।
জনাব আলী মেহবুব আদিল কে বললেন ,
-এখন থেকে আলেয়া কে আর এনাম কে বাবা-মা বলে ডাকবে । মিসেস আলেয়া চোখের পানি মুছে আদিলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন ,
-আজ থেকে আদিল আমার ছেলে , আমি আনিতা কে ভাবিকে দিয়ে দিয়েছে আর আদিল কে আমি নিয়ে নিয়েছে । সবাই হেসে দিল মিসেস আলেয়ার কথায় , আদিল বসা থেকে উঠে তার ফুফিকে জড়িয়ে ধরে বলল ,
-হ্যাঁ মা আজ থেকে আমিও তোমার ছেলে । জনাব এনাম আহমেদ বিড়বিড় করে বলে উঠলেন ,
-আমি তো কেউ না ? আদিল এনাম আহমেদর দিকে তাকিয়ে হেসে বলল ,
-তুমিও তো আমার বাবা , তোমরা দু’জনেই আমার মা এন্ড বাবা । আদিল এনাম আহমেদর হাত ধরে বলল , বাবা তুমি আনির জন্য কোনো চিন্তা করবে না, আমার সবটা দিয়ে আমি আনি কে আগলে রাখব । জনাব এনাম আহমেদ আর মিসেস আলেয়া আদিলের কথায় খুশি হলেন ।

রাত ১২টা বেজে ১৫ মিনিট । আমি বধু বেশে বসে আছি বেডে । গেস্টরা সবাই চলে গেছে, আজ আমাদের রুম কে ফুল দিয়ে অনেক সুন্দর করে সাজানো হয়েছে । সারা রুম জুড়ে শুধু গোলাপের সুভাস , আনিতা আদিলের কথা ভেবে বার বার লজ্জায় লাল হয়ে উঠছে ।
হঠাৎ দরজা খুলার শব্দে আমি কেঁপে উঠলাম । তাকিয়ে দেখি উনি বাঁকা হেসে দরজা বন্ধ করে আমার দিকে এগিয়ে আসছেন । উনাকে দেখে আমি লজ্জায় নতজানু হয়ে বসে রইলাম। উনি আমার লজ্জা পাওয়া বুঝতে পেরে বলে উঠলেন,
-তো মিসেস মেহবুব আজ এতো লজ্জা পাওয়ার কারণ কি, জানতে পারি?
আমি বেড থেকে নেমে ধীর পায়ে উনার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম । জানি না এখন কেন উনাকে এতো লজ্জা পাচ্ছি । উনাকে যখন সালাম করতে যাবো তখন উনি আমার দু বাহু ধরে বললেন ,
-তোমাকে না, না করেছি পায়ে ধরে সালাম না করতে , তোমার স্থান আমার বুকে । উনি আমাকে উনার বুকের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন । তারপর গভীর ভাবে কয়েকটা চুমু এঁকে দিলেন আমার কপালে । উনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন, যাও ফ্রেশ হয়ে আসো এই বারি লেহেঙ্গা গহনায় তোমার অনেক কষ্ট হচ্ছে । আমি আর কোনো কথা না বলে একটি শাড়ি নিয়ে চেঞ্জ করার জন্য ওয়াশরুমে ঢুকে পরলাম । আজ যদি আবার এই থ্রি -কোয়াটার আর টি-শার্ট পড়ি তাহলে নিশ্চয়ই আমাকে নিয়ে খুব হাসবেন ? যে রকম পারি অরকমই শাড়ি পরে নিবো । আমি প্রায় ২০মিনিট পর কোনো রকম শরীরে শাড়ি পেঁচিয়ে বেরিয়ে এলাম । ওয়াশরুম থেকে বের হতেই উনি আমার দিকে তাকালেন , আমি লজ্জায় কুঁকড়ে যাচ্ছি । উনি আমার দিকে ঘোর লাগানো চোখে তাকিয়ে আছেন । যা আমাকে আরো অস্বস্থির মধ্যে ফেলে দিল , এমনতেই বার বার শাড়ি কুঁচি গুলো খুলে যাচ্ছে । উনার দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বললাম ,
-কি হলো অমন করে কি দেখছেন ?
উনি আমার দিকে এক পা দু পা করে এগিয়ে আসতে আসতে বললেন ,
-তোমাকে দেখছি মিসেস মেহবুব , আজ তোমায় অনেক আর্কষণীয় লাগছে ।
আমিও এক পা এক পা করে পিছনে পিছাতে লাগলাম , এক সময় আমার পিট দেওয়ালে ধাক্কা খেল বুঝতে পারলাম এখানেই দাঁড়িয়ে থাকতে হবে।
উনি আমার সামনে দাঁড়িয়ে উনার দু হাত আমার দু পাশে রাখলেন । আমি মূহুর্তেই চোখ বন্ধ করে নিলাম , উনি একদম আমার কাছে চলে এসেছেন। উনার নিঃশ্বাস আমার চোখে মুখে আঁচড়ে পড়ছে।
উনি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে মাদক মিশানো গলায় বললেন ,
-তোমাকে এরকম এলোমেলো শাড়িতে আরো বেশি সুন্দর দেখাচ্ছে । উনি আমাকে আস্তে করে বললেন, চোখ খুলো আনি, এতো লজ্জা পাও কেন?তোমাকে লজ্জা পেলে কেমন লাগে তুমি জানো ? আমার তো খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে। উনার এমন কথায় আমি আরো বেশি লজ্জা পেলাম। আমি পিটপিট করে চোখ খুলে উনার দিকে তাকালাম।
উনার সবুজ রংয়ের চোখ গুলো কেমন যেন নেশা ধরিয়ে দেয়, আমার চোখ জোরা সরিয়ে নিলাম লজ্জা লাগছে। উনি কেমন নেশা নেশা চোখে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। উনি আস্তে করে উনার এক হাত আমার পেটে রাখলেন , উনার স্পর্শ পেয়ে আমি কেঁপে উঠলাম। উনি এক দৃষ্টিতে ঘোর লাগা চোখে আমার ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে আছেন, তারপর ধীরে ধীরে আমার ঠোঁটের দিকে এগিয়ে আসতে লাগলেন , আমার ঘন ঘন নিঃশ্বাস পড়ছে , আমি চোখ বন্ধ করে নিলাম। আচমকাই উনি আমাকে কোলে তুলে নিয়ে বেডে শুয়ে দিলেন , আমি লজ্জায় আবারো চোখ বন্ধ করে নিলাম। উনি আমার ঠোঁটে আলতো কর চুমু খেলেন। আমার সারা শরীর কেঁপে উঠল। উনি আমার দিকে তাকিয়ে নেশা গলায় বলে উঠলেন ,
-আনি আজ এই রাত শুধু তোমার আমার ।লজ্জায় আনিতার মুখ লাল বর্ণ ধারণ করল। আনিতাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আনিতার মাঝে ডুব দেয় আদিল।
ভোর ৫ টার দিকে আনিতার ঘুম ভেঙে নিজেকে আবিষ্কার করলো আদিলের বুকে। আদিল শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে আনিতা কে। আনিতা গতকাল রাতের কথা ভেবে লজ্জায় আদিলের বুকে মুখ লুকালো। আনিতা আদিলের বুকে মাথা রেখে মনে মনে বলল,
-#তার_শহরে আজ আমার ভালবাসা পূর্ণতা পেল, এখন শুধু মা-বাবার সপ্ন পূরণ বাকি। তবেই না #তার_শহরে আমার সব সপ্ন আর ভালবাসা পূর্ণতা পাবে।
আনিশার আজ খুব সকাল ঘুম গেছে বলে সে বাগানে হাঁটতে বেরিয়েছে । নেহাল সারা রাত ঘুমায় নি সে এসে ছাদে দাঁড়াল , ছাদ থেকে আনিশা কে বাগানে দেখে অবাক হলো , নেহাল দ্রুত পায়ে বাগানে ছুটে গেল। আনিশা অনুভব করছে তার পিছনে কারো উপস্থিতি। আনিশা কিছু বলার আগে নেহাল বলে উঠল ,
-আনিশা তুমি এই সকাল ভেলা এখানে কি করো ?
আনিশা আস্তে করে উত্তর দিল,
-ঘুম ভেঙে গেছে তাই আর শুয়ে তাকতে মন চাইলো না, বাগানে হাঁটতে চলে এলাম।
নেহাল ছোট করে ওহ্ বলল। নেহাল চারিদিকে চোখ বুলিয়ে তারপর আনিশার উদ্দেশ্য বলল ,
-আনিশা আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই।
আনিশা আনমনা হয়ে বলল,
-হুম বলো ,
নেহাল অপ্রস্তুত ভাবে বলল ,
-আনিশা আমি তোমাকে ভালবাসি কি না জানি না তবে তোমাকে আমার জীবনে চাই । তোমাকে ছাড়া আমি আর কিছু কল্পনা করতে পারি না। আনিশা প্লিজ আমাকে ফিরিয়ে দিওনা। আনিশা স্বাভাবিক গলায় নেহালের দিকে তাকিয়ে বলল,
-নেহাল যেদিন তুমি ভালো ভাবে তোমার ফিলিনিংস রিয়েলাইজ করতে পারবে যে তুমি আমাকে ভালবাস সেদিন আসবে।বলেই আনিশা ভেতরের দিকে চলে গেল। আনিশার যাওয়ার দিকে নেহাল ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে তাকিয়ে আছে । নেহালও হয়তো আনিশাকে ভালবাসে কিন্তু গুছিয়ে বলতে পারছে না। আনিশার চোখ থেকে দু দন্ড জল গড়িয়ে পরল , আনিশা মনে মনে বলল,
-নেহাল আমিও যে তোমাকে আমার মনে জায়গা দিয়ে ফেলেছি। কিন্তু নেহাল আমি চাই তুমি তোমার ভেতরের ফিলিনিংস টা আগে বুঝো।যেদিন নেহাল বুঝতে পারবে সে আমাকে ভালবাসে সেদিন #তার_শহরে আমার ভালবাসার আরেক নতুন গল্প শুরু হবে । আমি ফিরে আসব আবার #তার_শহরে তার ভালবাসার টানে।
,
…..সমাপ্ত……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here