তার_শহরে পর্ব ৭+৮

0
550

পাট ৭-৮
#তার_শহরে

পার্ট : ৭

লেখা : ইসরাত সিনহা

আমি তো ওই ব্যক্তি কে দেখে পুরাই অবাক..!


আমি যার সাথে ধাক্ষা লেগে পরে গেছি তাকিয়ে দেখি লোকটা দেখতে একদম চার্লির ফটো কপি । আরো ভাবছি একটা মানুষের সাথে আরেকটা মানুষের চেহারার এত মিল হয় কি করে?আমার অবাক হয়ে তাকানো দেখে ছেলেটা মুচকি হাসি দিয়ে আমাকে তার বুক থেকে উঠার জন্য বলল।
আমি লজ্জায় নতোজানু হয়ে ছেলেটার বুক থেকে সরে আসলাম । তার মধ্যে শুনতে পেলাম চার্লির কন্ঠ,সে আমাকে বলছে হোয়াট’স আপ আনিটা?এই মূহর্তে আমার মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না।যেন পৃথিবীর সব লজ্জা আমায় আকঁড়ে ধরছে তিব্র ভাবে। এতো তাড়াহুড়া করে না আসলে এমন বাজে কান্ডের সম্মুখীন হওয়া লাগতো না। আমার ভাবনার মাঝেই ছেলেটা বলল,আই এম সরি ফর এভরি থিং।
আমি মাথা তুলে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বললাম,সরি আমার বলা উচিত তোমার না।কারণ দোষ টা আমার আমি খেয়াল করিনি।আই এম সরি..!
আমাদের কথা বার্তা চার্লি কিছুই বুঝল না ,তাই আমাকে জিজ্ঞেস করল ওর সাথে কি হয়েছে?আমি আমতা আমতা করে ওঁকে পুরো ঘটনা টা বললাম।চার্লি কিছু সময় নিরব থেকে তারপর হু হু করে হাসতে লাগল ।ওর এমন হাসির কারণ বুঝতে না পেরে ওর দিকে জিজ্ঞেসা দৃষ্টিতে তাকালাম ।
চার্লি তার হাসি থামিয়ে বলল,ও আমার আপন ভাই চার্লস।আর আমরা জমজ তাই দেখতে একি রকম।আমি বলার মতো আর কিছু খুঁজে পেলাম না।
চার্লি তার ভাইকে বলল,চার্লস তকে কাল ওর কথাই বলে ছিলাম আমার নিউ ফ্রেন্ড ।
ভাবছিলাম আজ তদের পরিচয় করিয়ে দিব আগামীকাল তো তুই ভার্সিটিতে আসিসনি।কিন্তু তার আগেই তোমরা পরিচিত হয়ে গেলে বলেই চার্লি দুষ্ট হাসি দিল।
চার্লস আমার দিকে তার হাত বারিয়ে দিল হ্যান্ডশেক করার জন্য।আমিও আমার হাত বারিয়ে হ্যান্ডশেক করলাম।ও আবার আমার নাম জিজ্ঞেস করল,মৃদু হেসে বললাম আনিতা।চার্লস ও হালকা হাসি দিয়ে বলল,ওহ আনিটা নাইচ নেইম।
মনে মনে বললাম এই জাতি ঠিক হবে না,আর আমার নাম টা আনিটাই থেকে যাবে.!এরমধ্যে চার্লি তাড়া দিল ক্লাসে যাওয়ার জন্য।আমরা তিন জন চললাম ক্লাসের দিকে।আমি হাঁটছি আর ভাবছি,চার্লস ছেলেটা খুব মিশুক মনের।কি সুন্দর তার চোখ জোরা,চার্লির চোখ থেকেও আরেকটু সুন্দর।গাড়ো ব্রাউন কালার চোখের মনি,চুল গুলোও ব্রাউন কালার।র্ফসা চেহারা আর ব্রাউন কালার চোখ,চুল দুটোই যেন পার্ফেক্ট ।এসব ভাবতে ভাবতে ক্লাস রুমে এসে গেলাম ।আমরা তিন জন এক জায়গায় বসলাম।আমি ওদের দুজনের মধ্যেকানে বসলাম।ওরা ভাই,বোন বিরতিহীন ভাবে কথা বলেই যাচ্ছে।আমি নিরব শ্রোতার ভূমিকা পালন করছি।লক্ষ্য করলাম চার্লস কিছু সময় বাদে বাদে আমার দিকে তাকাচ্ছে যার কারণে আমি অপ্রস্তুতবোধ করছি।হঠাৎ চার্লস বলে উঠল,আনিটা তুমি কথা বলছ না কেন?ওর করা প্রশ্নে আমি কিছুটা মৃদু হেসে বললাম,তোমরা কথা বলো আমি শুনছি । আমার শুনতেই ভাল লাগে ।চার্লস যেন আমার জবাবে সন্তুষ্ট হলো না।মনে মনে ভাবছি আমি যেভাবে চার্লস এর পাশে বসেছি.!আদিল ভাইয়া যদি এখন এমন দৃশ্য দেখেন তাহলে নিশ্চিত কিয়ামত ঘটাবেন?
ভেবেই যেন আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে।আমি উনাকে এতো ভয় পাই কেন এর কারণ আমার অজানা.!
মনকে শান্তনা দিলাম এই বলে,উনি এখানে আসবেন কোথা থেকে?আমি অযতাই চিন্তিত হচ্ছি।
চার্লির ধাক্ষায় আমার ভাবনার জগত থেকে ফিরে আসলাম।তুমি মাঝে মাঝে কোথায় হারিয়ে যাও আনিটা?চার্লি বলল ।
আমি হেসে বললাম কই না তো.!কি বলবে বলো চার্লি শুনছি।
চার্লি একটু কেশে বলল,তোমার কি কোনো বয়ফ্রেন্ড আছে?দেখলাম চার্লস ও আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
আমি একটু পর বললাম,নাহ আমার কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই।চার্লস আর চার্লি যেন অবিশ্বাসি চোখে তাকাল ।আমাদের আর কোনো কথা হলো না ইতিমধ্যেই স্যার চলে আসছেন ক্লাসে ।


আমার সব ক্লাস শেষ করে ভার্সিটি থেকে বের হচ্ছি বাসার উদ্দেশ্য ।আমাকে একাই ফিরতে হবে কোনো ক্যাব নিয়ে।ভার্সিটির বাহিরে এসে আমি থ হয়ে গেলাম ।চেয়ে দেখি আদিল ভাইয়া উনার গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দুই হাত আড়াআড়ি ভাবে ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে আছেন।
একটা ফাঁকা ঢুক গিললাম ।ভাবছি আদিল ভাইয়া এখানে কি করছেন?
আমাকে দেখে উনি ইশারা করলেন উনার কাছে যাওয়ার জন্য ।ভয়ে জড়সড় হয়ে এগিয়ে যেতে লাগলাম উনার দিকে।
নিশ্চয়ই আমি আবার কোনো বড় মাপের ভুল করেছি তাইতো উনি আমার ভার্সিটি চলে আসছেন ,শাস্তি দিতে।মনে মনে ভাবছি।উনার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম,আদিল ভাইয়া আমাকে ধমকে বলে উঠলেন এই মেয়ে তুমি আমায় এতো ভয় পাও কেন?আমি বাঘ না সিংহ যে তোমায় খেয়ে ফেলব?
আমি কিছু বলছি না আমার অন্তর আত্মা কাঁপছে উনার ধমকে।ভয়ে কোনো শব্দ বের হচ্ছে না আমার মুখ থেকে।
আদিল ভাইয়া আমার একটু কাছে এসে বললেন,তোমার কাঁপাকাঁপি বন্ধ কর।আর গাড়িতে গিয়ে বস।এদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম দেখলাম তোমার ভার্সিটি ছুটি তাই ভাবলাম তোমাকে সাথে করে নিয়ে যাই।কোনো শাস্তি দেওয়ার জন্য না।আদিল ইচ্ছে করেই এসেছে আনিতা কে নিতে ।এখন মিথ্যা বলছে যদি আনিতা মাইন্ড করে তাই।


আনিতা গাড়িতে বসে ভাবছে,বজ্জাতটা আমার মনের কথা জানল কি ভাবে?
আদিল গাড়ি ড্রাইব করছে আর বলছে এতো ভেবোনা আনি ।মুখ দেখে আমি অনেক কিছু বুঝে ফেলি।

আমি মনে মনে বললাম উনার দেখি অনেক গুন।আর কিছু না ভেবে সামনের দিকে একমনে তাকিয়ে রইলাম।কানাডা দেশটা সত্যিই সুন্দর।মানুষরা যে যার নিজ গতিতে হাঁটছে।
আমার এসব ভাবনার মাঝে আদিল ভাইয়া জোরে গাড়ি ব্রেক করলেন,আমি উনার এমন জোরে ব্রেক করায় তাকালাম উনার দিকে।তাকিয়ে দেখি উনি আমার দিকে কিছুটা রাগি দৃষ্টিতে চেয়ে আছেন।
ভয় পেলাম উনার রাগি চোখে তাকানো দেখে।আদিল ভাইয়া কিছু না বলে আমার দিকে এগিয়ে আসছেন,আমি চোখ বন্ধ করে নিলাম ভয়ে আমার হৃৎপিন্ডটা ট্রেনের গতিতে ছুটছে।অনুভব করলাম উনার গরম নি:শ্বাস আমার চোখে মুখে আঁচরে পরছে।
কিছুক্ষণ বাদে দেখি গরম নি:শ্বাসটা আর আমার মুখে পরছে না।আমি চোখ খুলে তাকালাম তাকিয়ে দেখি উনি মুখে শয়তানি হাসি ঝুলিয়ে রয়েছেন।বুঝলাম না উনার এমন কাজের মানে কি?
আদিল ভাইয়া মুখে শয়তানি হাসি রেখেই বললেন,তোমার সিট বেল্ট বাঁধনি ।তাই সিট বেল্ট বেঁধে দিলাম।
এখন লজ্জায় ইচ্ছে করছে আদিল ভাইয়ার সামনে থেকে ছুটে পালাই।আমি কি থেকে কি ভাবছি ইসস এই লজ্জা এখন রাখি কোথায়?
আদিল আনিতার লজ্জা রাঙ্গা মুখ দেখছে আর মিটিমিটি হাসছে।

তারা এর মধ্যেই বাসায় চলে এসেছে।আনিতা যেন হাফ ছেড়ে বাঁচল।কিছু না বলে আনিতা গাড়ি থেকে ছুটে পালাল।
আদিল আনিতার যাওয়ার দিকে চেয়ে বাঁকা হেসে বলল,লজ্জা পেলে কাউকে এতো মারাত্মক সুন্দর দেখায় আনি কে না দেখলে জানতেই পারতাম না.!

আনিতা তার রুমে এসে কয়েকটা বড় বড় নি:শ্বাস নিল।উনি এমন কেন?আমার নি:শ্বাস টা প্রায় আটকে যাচ্ছিল উনার এমন করে কাছে আসায়.!
আর কিছু ভাবার টাইম নাই প্রচন্ড ক্ষিধায় পেটে আমার ইঁদুর দৌড়ঁচ্ছে।ফ্রেস হয়ে নিচে গেলাম খাওয়ার জন্য।মামিমা আমায় দেখে হাসলেন আর বললেন আসো মামনি খেয়ে নাও।আমি ও খেতে বসে গেলাম।
সবাই খাচ্ছে সাথে বজ্জাতটা ও আছে। আজও আদিল ভাইয়া আমার পায়ে উনার পা দিয়ে স্লাইড করছেন।আর আমি কেঁপে কেঁপে উঠছি উনার স্পর্শে।তাকিয়ে দেখলাম উনি খাচ্ছেন আর হাসছেন।একটু খেয়ে আমি আমার রুমে চলে আসলাম।উনার এসবের মানে কি উনার কি সব সময় রোমান্টিক মুড অন থাকে নাকি?যত্তসব ফালতু পাবলিক খাওয়ার মুড টাই নষ্ট করে দিল।
বাবা-মার কাছে ফোন দিয়ে উনাদের সাথে কথা বলে নিলাম।
আমি আমার বই নিয়ে পড়তে বসলাম ।এখনও আমার বই গুলো ভালো ভাবে দেখা হয়নি।বেডের মাঝে বসে বসে বই গুলো একের পর এক দেখছি।
হঠাৎ ই আদিল ভাইয়া আমার রুমে এসে আমার কোলে মাথা রাখলেন।তারপর আদেশের সুরে বললেন,আনি আমার চুলটা একটু টেনে দাঁওতো ।খুব মাথা ধরেছে আজ।আমি কি বলব খুঁজে পাচ্ছিনা,এক রাশ বিস্ময় নিয়ে বসে রইলাম.!
উনি আমার হাত উনার মাথায় রাখলেন,আর বললেন দাওনা আনি?
উনার আবদারটা একদম বাচ্ছা বাচ্ছা লাগছিল।আমি হেসে দিলাম,উনার এমন আবদার আর উপেক্ষা করতে পারলাম না।উনার চুল টেনে দিতে লাগলাম।আদিল ভাইয়া আচমকাই উনার দু হাত দিয়ে আমার কোমর জড়িয়ে ধরলেন।উনার এমন কান্ডে আমার নি:শ্বাস বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম।আদিল ভাইয়া খানিক বাদে আমার পেটে মুখগুজলেন আমি একদম ফ্রিজড হয়ে গেছি।জড় পর্দাথের ন্যায় বসে আছি আমার হাত পা অবশ হয়ে আসছে।
আর উনি উনার কাজে ব্যস্ত।
কিন্তু দরজার দিকে চেয়ে আমার পায়ের তলার মাঠি সরে গেল,আকাশ যেন মাথায় ভেঙ্গে পরেছে।ভয়ে আমার মুখ রক্তশূন্য হয়ে গেল..(চলবে)
#তার_শহরে

পার্ট: ৮

লেখা: ইসরাত সিনহা


কিন্তু দরজার দিকে চেয়ে আমার পায়ের তলার মাঠি সরে গেল,আকাশ যেন মাথায় ভেঙ্গে পরেছে।ভয়ে আমার মুখ রক্তশূন্য হয়ে গেল…

দরজার ওপাশের ব্যক্তিটি আর কেউ নয় উনি সাহিল ভাইয়া,সাথে নেহাল ও আছে।সাহিল ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলাম উনি আমার দিকে রক্তচুক্ষ নিয়ে চেয়ে আছেন।যেন এখনি সব কিছু ধংস করে দিবেন।এদিকে আদিল ভাইয়া আমার পেটে মুখগুজে রয়েছেন।আর উনার কোঁচা কোঁচা দাঁড়ি আমার পেটে লেগে সুড়সুড়ি লাগছে।যেন এক অদ্ভুত ফিলিংস হচ্ছে।উনি আরো গভীর ভাবে পেটে মুখগুজে বলছেন,চুল টেনে দিতে।আমি তো ভয়ে আর লজ্জায় একাকার হয়ে যাচ্ছি।সাহিল ভাইয়ার এমন ভয়ংকর রিয়্যাকশ দেখে আমার ভিষণ ভয় করছে।কারণ এর আগে আমি কখনও সাহিল ভাইয়ার এমন ভয়ংকর রূপ দেখিনি।হঠাৎ করেই নেহাল হাল্কা কাশি দিল,আর উনি ধরফরিয়ে আমার কোল থেকে মাথা তুললেন।তাৎক্ষণিক ভাবে ওরা রুমে প্রবেশ করল।রুমে ঢুকেই সাহিল ভাইয়া,আদিল ভাইয়ার উদ্দেশ্য বললেন সরি ভাইয়া তোমাদের রোমান্টিক মূর্হতে ডিস্টার্ব দিলাম।উনার কথায় আমি লজ্জায় নিচের দিকে চেয়ে রইলাম।চাপা রাগ নিয়ে কথাটা বলেছেন সাহিল ভাইয়া।লক্ষ্য করলাম আদিল ভাইয়ার চোয়াল শক্ত হয়ে গেছে,উনি হাত মুষ্ঠিবদ্ধ করে বসা থেকে দাঁড়িয়ে পরলেন।আমি বুঝতে পারছি এখন কি হতে চলছে।তাই আমিই আগ বারিয়ে সাহিল ভাইয়াকে বললাম,ভাইয়া আপনি ভুল ভাবছেন।আসলে আমি বা উনি এখানে এমন কিছুই করছিলাম না যার জন্য আপনি এতো হাইপার হচ্ছেন।উনার নাকি প্রচন্ড মাথা ধরেছে তাই চুলটা টেনে দিচ্ছিলাম।দ্যাট’স ইট..!
আমার কথায় সাহিল ভাইয়া কিছুটা ধমে গেলেন।তারপর বললেন ওহ ওকে আনিতা।
বাই দ্যা ওয়ে,আমি আর নেহাল তোমাকে জিজ্ঞেস করতে এসেছি তুমি কি ঘুরতে যাবে?
আমরা বাহিরে যাচ্ছি তাই ভাবলাম তোমাকে ও সাথে নিয়ে যাই।নেহাল বলল,আপু অনেক দিন হলো তুমি কানাডা এসেছ।কোথাও ঘুরতে যাওনি তাই তোমাকে নিয়ে আজ ঘুরতে যাব।ভয়ে ভয়ে চোখ তুলে তাকালাম আদিল ভাইয়ার দিকে উনি আগের মতোই দাঁড়িয়ে আছেন।আমি আতংকে উঠলাম।রাগে উনার সবুজ রংয়ের চোখ দুটো চিকচিক করছে।আমি কি ওদের না করে দিব?এরমধ্যেই মামিমা আমার রুমে এসে বললেন,যাও মামনি বাহির থেকে ঘুরে এসো ভাল লাগবে।আদিল ভাইয়,সাহিল ভাইয়ার দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রাগে গজগজ করতে করতে রুম থেকে হনহনিয়ে চলে গেলেন।ভয়ে আমার চেহারা বির্বণ হয়ে গেল।আদিল ভাইয়ার এমন নিরবতা যেন ঝড় আসার আগের পূর্বাভাস।

মামিমার কোনো কথা আমি ফেলতে পারিনা।কারণ উনি আমাকে নিজের মেয়ের মতো ভালবাসেন।আর কোনো কথা না বলে আমি রেডি হতে গেলাম বাহিরে যাওয়ার জন্য।রেডি হয়ে নিচে নেমে গাড়িতে গিয়ে বসলাম।ওরা দুজন আগেই বসে আছে।আমি পেছনের সিটে বসে ছিলাম।কিন্তু সাহিল ভাইয়ার জোড়াজোড়িতে বাধ্য হয়ে সামনের সিটে বসতে হলো।আর নেহাল গিয়ে বসল পেছনের সিটে।সাহিল ভাইয়া ড্রাইভ করছেন আর আড়চোখে আমার দিকে তাকাচ্ছেন।উনার এমন ভাবে তাকানোয় অস্বস্তি লাগছে খুব।সহ্য করতে না পেরে জিজ্ঞেস করেই ফেললাম,ভাইয়া কিছু বলবেন?আমার করা প্রশ্নে সাহিল ভাইয়া একটু হাসলেন তারপর বললেন,আনিতা তোমাকে আজ দারুণ লাগছে।তোমাকে শার্ট আর জিন্স এ একদম বিদেশি মেয়েদের মতো লাগে।দেখলে বুঝাই যায় না তুমি বাংলাদেশি,পুরো কানাডিয়ান লুক।

সাহিল ভাইয়ার কথায় আমি তেমন কিছু বললাম না।উনার বলা কথায় আমি কোনো আগ্রহবোধ করি না।আগের করা ঘটনার জন্য সাহিল ভাইয়াকে মনে মনে কয়েকটা ভয়ংকর গালি দিলাম।উনি খুব ন্যারর মাইন্ডের মানুষ।এই সাহিল কে এখন আমার কাছে প্রচন্ড রকমের বিরক্তি লাগছে।
জানালার দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছি।কেন জানিনা আদিল ভাইয়ার জন্য মন খারাফ লাগছে।আমার পেটে উনার মুখগুজে থাকার কথা মনে পরতেই আনমনেই আমার পিটের শির দ্বারা দিয়ে এক শীতল শ্রোত বয়ে গেল।অজানা এক অনুভূতিতে আমি শিহরিত হতে লাগলাম।
নেহাল এর ডাকে আমি ফিরে তাকালাম ওর দিকে।আপু আমরা পৌঁছে গেছি,নেহাল বলল।চারদিকে চেয়ে দেকি এটা একটা শপিংমল।ওর দিকে জিজ্ঞেসা চোখে তাকালাম,আমরা এখানে কেন নেহাল?ইতিমধ্যে সাহিল ভাইয়া গাড়ি পার্ক করে এসেছেন।উনি আমার দিকে চেয়ে বললেন,নেহাল এর কিছু দরকার আছে তাই শপিংমলে এলাম।আমি বললাম,আমার তো কোনো দরকার নেই আমি গাড়িতে বসছি তোমরা যাও।সাহিল ভাইয়া বললেন চলো তো আনিতা ঘুরে আসবে।আর একা একা গাড়িতে বসে বরিং হবে তারচেয়ে ভাল চলো।ভেতরের দিকে চললাম।

নেহাল আর সাহিল ভাইয়া অনেক কিছু কিনল।আমি কিছু কিনব না বলেও কাজ হলো না।সাহিল ভাইয়া আমাকে একটা টি-শার্ট আর একটা জিন্স গিফট হিসেবে দিলেন।আমরা শপিংমল থেকে বের হয়ে একটা রেষ্টুরেন্ট এ গেলাম খাওয়ার জন্য ।

সেখানে গিয়ে আমার চোখ চরকগাছ..!কারণ অনেক গুলো মেয়ে এসে সাহিল ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরছে।মেয়ে গুলোকে দেখে আমার অস্বস্তি হচ্ছে।তাদের পরনের ড্রেস গুলো অতি মাত্রায় ছোট।মেয়ে গুলো আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,আমি কে?
সাহিল ভাইয়া ফিসফিসিয়ে কি বললেন আমি ঠিক বুঝলাম না।তারপর একে একে আমাকে হায়,হেলো বলে ওরা চলে গেল।
আমরা খেয়ে দেয়ে আরো কিছুক্ষন ঘুরে বাসায় ফিরলাম সন্ধ্যা সাত টায়।রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম।শরীর টা ক্লান্ত লাগছিল তাই শুয়ে পরলাম ।

হঠাৎ কারো ধাক্কায় আমার ঘুম ভাঙ্গল,চেয়ে দেখি মামিমা।আমার তাকানো দেখে মামিমা বললেন,উঠে যাও মামনি ডিনার করতে হবে।ঘড়ির দিকে চেয়ে দেখলাম রাত প্রায় বারো টার কাছাকাছি ।কিছুটা অবাক হলাম আজ এতো ঘুমিয়েছি.!মামিমা আমাকে ফ্রেশ হয়ে নিচে যাওয়ার জন্য বলে গেলেন।
একটু পরে নিচে গেলাম গিয়ে চেয়ারে বসলাম। মামিমা খাবার সার্ভ করছেন সবাইকে।দেখলাম আদিল ভাইয়ার চেয়ারটা খালি।কিছু সময় পরও যখন উনি আসলেন না,অনেকটা সংকোচবোধ নিয়েই মামিমা কে আদিল ভাইয়ার কথা জিজ্ঞেস করলাম।মামিমা বললেন উনি নাকি বিকেল থেকে দরজা খুলছেন না।একথা শুনে অজানা ভয়ে আমার মন ধক করে উঠল।

আমার আর খাওয়া হলো না,গলা দিয়ে খাবার নামছে না।হাত ধুয়ে উপরে চলে আসলাম।রুমে এসে মনে শান্তি পাচ্ছিনা ইচ্ছে করছে আদিল ভাইয়া কে এক নজর দেখে আসি।আমি যে উনার প্রতি দূর্বল হয়ে পরছি তা বেশ ভালো ভাবেই বুঝতে পারছি।
নিজের ইচ্ছাটাকে আর ধমিয়ে রাখতে না পেরে উনার রুমের দিকে চললাম।যত এগোচ্ছি ততো হৃৎপিন্ড টা ক্রমান্বয়ে দ্রত গতিতে দৌড়াঁচ্ছে ভয়ে আর জড়তায়।
উনার রুমের সামনে এসে আমার হাত পা কাঁপছে রীতিমতো।সাহস করে নক করলাম দরজায়।কিছু সময় অপেক্ষা করে চলে আসার জন্য যখন উদ্বেত হলাম,তখনি আদিল ভাইয়া আমাকে হ্যাচকা টান দিয়ে উনার রুমের ভিতর নিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলেন।
উনার রুমে গিয়ে আমি যা দেখলাম তার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না…..(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here