তার_শহরে পর্ব ৪+৫+৬

0
689

পাট ৪-৬
#তার_শহরে

পার্ট: ৪

লেখা : ইসরাত সিনহা


আমি হঠাৎ অনুভব করলাম আমার পেটে কেউ নখের আচঁর দিল…

ভয়ে আমি তাকালাম কে এমন কাজ করছে দেখার জন্য.!চেয়ে দেখি আদিল ভাইয়া!
আমার তাকানো যেন উনার রাগকে আরো দ্বিগুণ বারিয়ে দিল।উনার চোখ যেন আরো সবুজ রং ধারন করল। আবার জোরে আমার পেটে নখের আচঁর দিলেন, আমি ব্যাথায় উনার হাত চেপে ধরলাম। ব্যাথায় আর ভয়ে চোখ থেকে অঝর ধারায় পানি পরছে।
চোখ খুলে উনার দিকে জিজ্ঞেসা দৃষ্টিতে তাকালাম,
উনি চাপা চিৎকার দিয়ে বলতে লাগলেন,তোমার মেদহীন পেট কি সবাই কে দেখানোর জন্য এমন শাড়ি পরেছ?চেয়ে দেখও সবাই কি ভাবে তোমার দিকে লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।


শাড়ি যখন সামলাতে জানো না তাহলে এমন শাড়ি পরো কেন?

আমি ভয়ে ভয়ে বললাম,ভাইয়া শাড়িটা মামিমা আমাকে পরতে দিয়েছেন।
আদিল ভাইয়া বললেন,তোমার চোখ কোথায় ছিল তখন,তুমি দেখতে পাওনি?
আর কিছু না বলে আমি মাথা নিচু করে রইলাম।
উনি আমাকে বললেন,এক জায়গায় বসে থাকো।কোথাও যেও না,পার্টি শেষ হলে আমি এসে নিয়ে যাব।


আমি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলাম।
উনি চলে গেলেন আর আমি ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রইলাম।
উনি চাইছে টা কি?আমার সাথে এমন করেন কেন?
এসব ভাবছি আর কাঁদছি।
হঠাৎ কারো কন্ঠ শুনে পিছনে তাকালাম,
একজন অল্প বয়সী ছেলে।আমার দিকে এগিয়ে আসছে।
এসেই আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিল হ্যান্ডশেক করার জন্য। ছেলেটি বলল হেই, আমি জন।
আমি কিছু বলছি না দেখে, ছেলেটি আবার বলল তুমি বোবা নাকি?
আমি বললাম, না।তখন জন ছেলেটি জিজ্ঞেস করল
আমার নাম কি?
বললাম, আনিতা। জন যেন বুঝলো না,জিজ্ঞেসা চোখে তাকাল, আমি আবার বললাম, আনিতা।
জন বলল ওহ আনিটা,আমি মনে মনে ভাবলাম
এখানকার মানুষেরা আমায় কখনো আনিতা বলে ডাকতে পারবে না বোধহয়.!
আমি বলি আনিতা আর তারা বলে আনিটা.!
দুর ডাকোক গে আমার কি?তার পর ও কেমন যেন
একটা খারাপ লাগে,হাজার হোক নিজের নাম তো(কিছু টা মন খারাপ করে)


এরই মাঝে জন বলে উঠল, আমি তোমার মামির বন্ধুর ছেলে জন।
সো,আমার সাথে কথা বলতে নিশ্চয়ই তোমার কোনো প্রবলেম নেই?
জনের দিকে তাকালাম,ছেলেটার গায়ের রং ধবধবে সাদা। চোখ গুলো ছোট ছোট, অনেকটাই লম্বা।আমার হঠাৎ মনে হলো জন জানলো কিভাবে আমি ওর মায়ের বন্ধুর মেয়ে? এসব ভাবনার মাঝে
আমার হাতে কারো স্পর্শ পেলাম, চেয়ে দেখি জন
হাসি হাসি মুখ করে আমার দিকে তাকিয়ে বলছে,
চলো আনিটা আজ তুমি আমার ডান্স পার্টনার হবে?
জনের কথায় আমি ভেবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম.!
আমি কেন ওর সাথে ডান্স করব?আর আমি ডান্স
পারলে তো ডান্স করব?
জনের হাত আমার হাত থেকে সরিয়ে দিয়ে বললাম,সরি মি.জন আমি ডান্স পারি না।
আমার কথায় যেন ও একটু অবাক হলো.!তারপর জন বলল,কোনো প্রবলেম নেই আমি শিখিয়ে দিবনে।আমি পরলাম মহা ঝামেলায়,এই জনের উপর আমার প্রচন্ড রাগ লাগছে।মনে হচ্ছে চিবিয়ে খাই।এমনিতেই মন মেজাজ ভালো নেই, তার উপর ওর এমন ন্যাকা আবদার।না আসাটাই ভালো ছিল তাহলে আমার কোনো ঝামেলাই পোহাতে হতো না।



মনে পরল বজ্জাত টার কথা উনি কোথায় আছেন?
যদি আমাকে জনের সাথে কথা বলতে দেখেন তাহলে কি হবে আমার কল্পনার বাহিরে হয়তো?
ভাবতেই আমার ভয়ে শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠল।
জনকে না করে দিলাম, আমি ডান্স করব না।
জন যেন মূর্হতেই তার রূপ বদলে ফেলল, আমার দিকে চেয়ে হালকা হেসে উঠল সে,আর বলল তা তো হবে না আনিটা আমার যা ইচ্ছে হয় আমি তা যে কোনো মূল্যে পূরণ করেই ছাড়ি।বলেই একটা শয়তানি হাসি দিল।


তা দেখে ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে গেল,আশেপাশে তাকালাম কেউ আছে কি না দেখার জন্য।
এদিক টায় তেমন কেউ নেই, যারা আছে তারা তাদের ডান্স নিয়ে ব্যস্ত।
জন আবার বলে উঠল দেখ আনিটা আমি তোমার সাথে কোনো খারাপ বিহেভ করতে চাই না।
কারণ, তুমি আমাদের অতিথি। ভালোই ভালোই বলছি আমার পার্টনার হয়ে যাও নয়তো খুব খারাপ হবে।
জনের কথায় ভয়ের বদলে আমার প্রচন্ড রাগ লাগছে। আমি অন্যদেশি বলে আমাকে দুর্বল ভাবছে জন। না তো হতে দেয়া যাবে না,

আমি বলে উঠলাম,
আমাকে হুমকি দিচ্ছেন না কি মি.জন?
জন বলল, যদি মনে করো হুমকি দিচ্ছি তবে সেটাই। আমি পাল্টা জবাব দিলাম, ডান্স করব না আপনার সাথে দেখি কি করেন আমার?
আমার কথা টা যেন আগুনে ঘি ঢালার সমান,জন আমার দিকে হিংস্র ভাবে এগিয়ে আসছে।
তা দেখে আমার এখন সত্যিই বিষণ ভয় করছে।কি করব ভেবে পাচ্ছি না।নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছি। যাতে জন বুঝতে না পারে আমি ভয় পাচ্ছি।


জন কাছে চলে আসছে আমার,এসেই আমার হাতটা শক্ত করে চেপে ধরল আর বলতে লাগল,
শুনলে না তো আমার কথা এখন দেখো কি কি হয় তোমার সাথে।
বলেই টেনে নিয়ে যেতে লাগল আমাকে।আমি ছুটার চেষ্টা করছি কিন্তু পারছি না।
হঠাৎ মাথায় এলো ওর হাতে কাঁমড় দেওয়ার কথা।
যেই ভাবা সেই কাজ, জনের হাতে কাঁমড় দিতেই ও আমার হাত ছেড়ে দিল। ছাড়া পেয়ে ছুটে আসছি, আর পেছনে তাকিয়ে দেখলাম জন ও আসছে।
ভাবলাম এর হাত কে আজকে বাঁচার উপায় নেই।
আচমকাই আমি কারো সাথে ধাক্কা খেলাম,চেয়ে দেখি আদিল ভাইয়া। উনাকে দেখে আর নিজে কে
আটকে রাখতে পারলাম না, আদিল ভাইয়া কে জরিয়ে ধরে জোরে জোরে কাঁদতে লাগলাম।
উনি আমার এমন আচরণে অবাক হলেন,উনি আমার কান্নার কারণ জানতে চাইলেন।
ভয়ে আমার শরীর ঈষৎ কাঁপছে, আমি কিছুই বলতে
পারছি না,উনাকে আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরলাম।
বুঝতে পারলাম উনিও আমাকে জরিয়ে ধরছেন।


জন এর মাঝে এসে গেছে, জন বলছে হেই আদিল
এটা আমার শিকার আমার কাছে দাও।
জনের আওয়াজ পেয়ে উনাকে আমি আরে আঁকরে
ধরলাম।
আদিল ভাইয়া আমার ভয়ের কারণ বুঝতে পারলেন,
বুঝতে পেরে আমাকে বললেন,শান্ত হও আনি ভয়ের
কিছু নেই। আমি থাকতে কার এতো বড় সাহস তোমাকে টাচ করার?বলেই উনি জনের দিকে তাকালেন।উনার তাকানো দেখে আমি বুঝতে পারলাম আজ জনের কি হতে চলছে।
জন বলল,ওহ রিয়েলি আদিল কারো সাহস নেই?
উনি গম্ভীর কণ্ঠে বললেন, না।
জন আবার বলে উঠল, আমার আছে আদিল।
উনি বললেন সাহস থাকলে ওকে ছুঁয়ে দেখাও আমার সামনে?
বাই দা ওয়ে আদিল,তুমি ওই মেয়েটার প্রতি এতো পসেসিভ কেন?
আদিল ভাইয়া আমাকে আস্তে আস্তে উনার বুক থেকে সরালেন, খুব শান্ত কন্ঠে বললেন আনি ভয় পেওনা তোমার আদিল ভাইয়া আছে তো তোমার সাথে সব সময়, আর থাকবে ও।


আমি কিছু টা লজ্জা পেলাম আমার এমন এহেন কান্ডে। তারপর সরে আসলাম উনার কাছ থেকে।
আদিল ভাইয়া জনের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন
এই মেয়ে আমার অনেক কিছু হয় জন..!
অবাক হলাম আমি,উনার দেওয়া জবাবে।কি বলেন উনি?
জন বলল,আমি অতোশতো বুঝি না আদিল আমার এই মেয়েটিকে চাই। এট এনি হাউ,এট এনি কস্ট।

জনের এমন জবাবে যেন আদিল ভাইয়ার রাগ আরো বহুগুণ বেড়ে গেল।উনি জোরে চিৎকার দিয়ে বলে উঠলেন,তর এই মেয়ে কে চাই না?বলেই উনি রাগে জনের দিকে এগিয়ে গেলেন,তারপর ঘটল এক অঘটন যা দেখে আমি মাথা ঘুরেপরে গেলাম…(চলবে)
#তার_শহরে

পার্ট: ৫

লেখা: ইসরাত সিনহা


জনের এমন জবাবে যেন আদিল ভাইয়ার রাগ আরো বহুগুণ বেড়ে গেল।উনি জোরে চিৎকার দিয়ে বলে উঠলেন,তর এই মেয়ে কে চাই না?বলেই উনি রাগে জনের দিকে এগিয়ে গেলেন,তারপর ঘটল এক অঘটন যা দেখে আমি মাথা ঘুরপরে গেলাম..


আদিল ভাইয়া জনের দিকে হিংস্র বাঘের ন্যায় তেড়ে
গেলেন।আর এলোপাতাড়ি কিল, ঘুষি মারতে লাগলেন জন কে।
আজ যেন আমি উনার অন্য রূপ দেখলাম,উনি কতটা হিংস্র হতে পারেন।ইতিমধ্যে আদিল ভাইয়া উনার প্যান্টের বেল্ট খুলে বেধারাম পেটাচ্ছেন জন কে।
কেউ আসছে না উনাকে থামাতে,সবাই তাকিয়ে দেখছে।সাহিল ভাইয়া,নেহাল,মামা আর মামিমা
চলে এসেছেন তার মধ্যে। জনের শরীর রক্তে ভিজে
একা কার।রক্ত দেখে আর আমি ঠিক থাকতে পারলাম না,মাথা ঘুরছে,চোখে ঝাপসা দেখছি তারপর কিছু মনে নেই।



আদিল ইচ্ছে মতো জন কে মারছে।আর বলছে,
জন তুই নিজেও জানিস না তুই আমার কোথায় হাত বারিয়েছিস?
আদিলের বলা কথা গুলো সবাই শুনছে কিন্তু ওর প্রত্যেক কথায় অবাক হচ্ছে ওর ফ্যামিলি.!
সাহিল মনে মনে ভাবছে ভাইয়া কি সব বলছে?
আনিতা ওর অনেক কিছু হতে যাবে কেন?এদিকে আদিল এর বাবা-মা কিছুই বুঝছেন না।জন কি এমন করছে যে, যার জন্য আদিল এরকম ভয়ানক রেগে গেল?
আদিলের বাবা সব চিন্তা বাদ দিয়ে আদিল কে থামাতে গেলেন। যদি এখনি না থামান তাহলে ভয়ানক কিছু ঘটবে, আদিল এর রাগ সম্পর্কে সবাই
অবগত।
আদিলের বাবা জনাব আলী মেহবুব থামানোর জন্য
ওর হাত ধরে নিয়ে যেতে লাগলেন,কিন্তু আদিল বলছে আমাকে ছাড়ো পাপা আমি ওকে মেরেই ফেলব। ও আমার কলিজায় হাত দিতে চাইছে এর শাস্তি ওকে পেতেই হবে।
জনাব আলী মেহবুব শান্ত সুরে বললেন,থামো আদিল
আইন নিজের হাতে কেন নেবে?ওর অন্যায়ের জন্য আইন জন কে শাস্তি দিবে। আদিল কিছু টা শান্ত হলো,তবে পুরোপুরি নয়।



অন্যদিকে আনিতা মাথা ঘুরে পরে গেছে দেখে ওর মামিমা ওকে একটা রুমে নিয়ে গেলেন কিছু মানুষের সাহায্যে। এর মধ্যে জনের মা এসে অনেক কথা শুনাতে লাগলেন আদিলের মা মিসেস এনজেলা মেহবুব কে।তা দেখে আদিলের মা ও চুপ থাকতে
পারলেন না উনি ও পাল্টা উত্তর দিলেন।
আনিতার জ্ঞান ফিরছে না দেখে মিসেস এনজেলা কে বিষণ চিন্তিত দেখাচ্ছে। উনি কিছু বুঝতে পারছেন না কি করবেন,এর মাঝে আদিল এসে
পাগলের মতো বলতে লাগল মম আনির জ্ঞান ফিরছে না কেন মম?আমার বিষণ চিন্তা হচ্ছে মম।
আনি কথা বলছে না কেন?আদিল আনিতার বেডের পাশে বসে পরল আর আনিতার মাথায় হাত
বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,আনি উঠো না আমি আর
তোমা খারাপ ব্যবহার করব না।কখন যে আদিলের সবুজ রংয়ের চোখের কোণে জল জমা হয়েছে খেয়াল নেই ওর।
সেটা আদিলের মায়ের চোখ এড়ালো না।
মিসেস এনজেলা ভাবছেন আদিল মামনির জন্য কাঁদছে? তবে কেন?
নাকি আদিল মামনি কে ভালোবাসে?হুম, ভালোইবাসে না হলে এমন পাগলের মতো আচরণ করছে কেন ও?মিসেস এনজেলা খুশি হলেন কারণ,
আদিল আজ পর্যন্ত কোনো মেয়ের সাথে ঠিক করে
দুটো কথা বলেছে বলে মনে পরছে না উনার।
আদিল দেখতে সুদর্শন স্মার্ট শিক্ষিত,কত মেয়ে আদিলের সাথে রিলেশন করতে চেয়েছে, কিন্তু আদিল তার বদলে ওদের কঠো কথা শুনিয়ে দিয়েছে।
আর আজ সেই আদিল কাঁদছে, তা ও আবার একটা মেয়ের জন্য?



মিসেস এনজেলা আর ভাবতে পারলেন না,জনাব আলী মেহবুব হতদন্ত হয়ে রুমে এসে উদ্বিগ্ন কন্ঠে বললেন,আনিতা কে নিয়ে ডা.এর কাছে চলো।
মেয়েটা ছোট বেলা থেকেই এরকম ভয় পেলে অজ্ঞান হয়ে যায়।
আদিল তাৎক্ষণিক ভাবেই দাঁড়িয়ে পরল,আর আনিতা কে পাঁজা কোলে করে রুমের বাহিরে নিয়ে এলো।


জন কে নিয়ে জনের মা হসপিটালে চলে গেছেন খানিক আগে।জনের অবস্থা খুব জটিল।


আনিতা কে আদিল তার গাড়িতে করে নিয়ে গেল।
সাথে মিসেস এনজেলা ও গেলেন।
আদিল আনিতা কে বাড়িতে নিয়ে এসে ওর রুমে শুয়ে দিল আর ডা.কে কল করল ইমেডিয়েটলি আসার জন্য।

রুমে সবাই বসে আছে ডা.চেকাপ করছেন আনিতা কে।ডা.বললেন, ভয়ের কোনো কারণ নেই প্রচন্ড ভয় পাওয়ার কারণে এমটা হয়েছে।
কিছুক্ষণ বাদেই আনিতার জ্ঞান ফিরবে।আদিল যেন তার জান ফিরে পেল এতক্ষণে।
সে একটা সস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।


একটু পর আনিতা চোখ খুললো। আনিতার মামিমা
ওর পাশে বসা ছিলেন। জ্ঞান ফিরছে দেখে উনিও যেন চিন্তা থেকে রেহাই পেলেন।
মিসেস এনজেলা আনিতা কে জিজ্ঞেস করলেন, এখন কেমন লাগছে মামনি?আনিতা ক্ষীণ আওয়াজে বললো, কিছুটা ভালো লাগছে ।
আনিতা বুঝতে পারলো সে এখন বাসায় আছে। আর কিছু না বলে আবার চোখ বন্ধ করে রইল।
ও ভাবছে জন কি বেঁচে আছে না কি মরে গেছে?
কারণ আদিল ভাইয়া যে পরিমাণ রেগে গিয়ে ছিলেন। যদি এমন কি কিছু হয় জন মারা গেছে তবে? নাহ আমি আর ভাবতে পারছি না আমার জন্য আদিল ভাইয়া জেল কাটবেন.!যদি উনার ফাঁসি হয়ে যায়?এ সব ভাবতেই আনিতার শরীর দিয়ে এক হিম শীতল স্রোত বয়ে গেল।
হঠাৎ আনিতার কানে আদিল এর আওয়াজ এলো,
মম আনি কে কিছু খাইয়ি দাও,ওর মেডেসিন খেতে হবে।
আনিতা চোখ খুলে তাকাল,দেখল আদিল তার বেডের ডান পাশে দাঁড়িয়ে আছে, আর আদিলের সবুজ চোখ গুলো কেমন ফোলে গেছে।
এতে যেন আদিল কে আরো সুন্দর লাগছে।আনিতা
আর চেয়ে থাকতে পারলো না তার হৃদ কম্পন বাড়ছে ঘোর লেগে যাচ্ছে, আদিল কে দেখার নেশা পেয়ে বসছে।সব মিলেয়ে খুব বাজে ব্যাপার লাগছে আনিতার কাছে।



মিসেস এনজেলা একটা বাটিতে করে সামান্য স্যুপ
আনলেন আনিতা কে খাওয়ানোর জন্য।
আনিতার মুখের কাছে খাবার নিতেই মুখ উল্টো দিকে ঘুরে নিল, সে খাবে না।
মিসেস এনজেলা বললেন, একটু খেয়ে নাও মামনি।মেডেসিন খাবে তো প্লিজ মামনি খেয়ে নাও।
আনিতা কে তার মামিমা খাইয়ে দিচ্ছেন।
সবাই একে একে রুম ত্যাগ করলেন।আনিতা চারিদিকে চোখ বুলালো কেউ নেই।
এখন মামিমা কে জিজ্ঞেস করি জনের কথা ও বেঁচে আছে কি না?আবার ভাবছে যদি মামিমা রেগে যান?
মিসেস এনজেলা লক্ষ্য করছেন আনিতা কিছু নিয়ে চিন্তা করছে।তাই তিনি জিজ্ঞেস করলেন,কি নিয়ে এতো ভাবছো মামনি?
আনিতা তার সম্মতি ফিরে পেয়ে বলল,মামিমা একটা কথা বলি?
উনি বললেন,হে মামনি বলো এতো সংকোচ বোধ করছো কেন?
আনিতা যেন কথা টা জিজ্ঞেস করতে ভরসা পেল।
সে বলল,মামিমা জন কি বেঁচে আছে? উনি একটু
হাসলেন আনিতার প্রশ্নে।তারপর বললেন,হুম মামনি
জন বেঁচে আছে তবে অবস্থা খুব ক্রিটিক্যাল।
একথা শুনা মাএ আনিতা তার মামিমা কে জরিয়ে ধরে কেঁদে দিল।উনি যেন আনিতার এমন কান্ডের
মানে বুঝতে পারলেন না।



মিসেস এনজেলা আনিতা কে জিজ্ঞেস করলেন,তুমি কাদঁছো কেন মামনি?আনিতা ফুফিয়ে কেঁদে উঠে বলতে লাগল,মামিমা যদি জন মরে যায়
তাহলে তো পুলিশ আদিল ভাইয়া কে গ্রেফতার করে নিয়ে যাবে।ভাইয়ার যদি ফাঁশি হয়ে যায়?


উনি শান্ত কন্ঠে জবাব দিলেন, এমন কিছুই হবে না মামনি তুমি খামোকাই এসব চিন্তা করছো।
আমার ছেলে কে একদিন ও কেউ জেলে রাখতে পারবে না।এই কানাডার মতো দেশে আমার ছেলে কে সবাই এক নামে চিনে আদিল মেহবুব।
সে একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী।


মামিমার কথায় যেন আনিতা কিছুটা স্বস্তি পেল।

এরপর আনিতা খাবার খেয়ে মেডিসিন নিয়ে শুয়ে
পরল। কাল আবার ভার্সিটি যেতে হবে।

আনিতা ঘুমানোর খানিক বাদে কেউ একজন খুব
সাবধান পায়ে আনিতার রুমে প্রবেশ করল।
সে আনিতার মাথার পাশে বসে আনিতার মুখের দিকে অনেক্ষণ তাকিয়ে রইল।
তারপরই তার চোয়াল শক্ত করে দাঁড়িয়ে পরল।

আর রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে বলতে লাগল, আমাদের দু জনের মাঝে যে আসতে চাইবে তার পরিণতি খুব ভয়ানক হবে খুব ভয়ানক.!


আনিতার কপালে তার ঠোঁট জোরা দিয়ে খুব গভীর ভাবে চুমু এঁকে দিল।যেই না লোকটি তার রুম থেকে বের হতে যাবে অমনি আনিতা লোকটার হাত ধরে ফেললো। সে ভয় পেয়ে গেল যদি আনিতা জেগে যায়,তাহলে কি জবাব দেবে? এসব ভাবনার মাঝে আবার হাতে টান পরল….(চলবে)
#তার_শহরে

পার্ট: ৬

লেখা: ইসরাত সিনহা


এসব ভাবনার মাঝে আবার হাতে টান পরল..


আনিতা ঘুমের ঘরেই আদিলের হাত চেপে ধরেছে। খুব শক্ত ভাবেই ধরেছে।আদিল আনিতার হঠাৎ হাত ধরায় ভয় পেয়ে গিয়েছিল। আনিতা সজাগ আছে কি না দেখার জন্য আদিল তাকাল আনিতার দিকে।
নাহ,তার মায়াকুমারী জেগে নেই। সে ঘুমের ঘোরে তার হাত ধরেছে।আদিল যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো যাক তাহলে আমার কথা আনি শুনতে পায়নি।আদিল আবার বসে পরল আনিতার বেডের পাশে।
আবার তাকাল তার মায়াকুমারীর দিকে,আর বলতে লাগলো আনি আমি তোমাকে সেই ছোট বেলা থেকেই ভালোবাসি। কিন্তু আমি প্রকাশ করিনি যদি তুমি রেগে যাও বা আমায় না করে দাও যে, তুমি আমাকে ভালোবাস না এই ভয়ে। জানতো মায়াকুমারী আমি অন্যদের মতো আবেগ,ভালবাসা এই সব প্রকাশ করতে জানি না, তাইতো তোমায় মনের সুপ্ত অনুভূতি গুলো গুছিয়ে বলতে পারছি না।



মায়াকুমারী তোমাকে প্রথম যেদিন বাংলাদেশে দেখে ছিলাম সে দিনই তোমাকে ভালবেসে ফেলি। তুমি কারো সাথে কথা বললে আমি নিজে কে কন্ট্রোল করতে পারি না মনে হয় তোমায় এই বুঝি হারিয়ে ফেলছি।তাইতো সেদিন বাংলাদেশে তোমার সাথে রুড বিহেভ করে চলে আসি।

বাংলাদেশ থেকে কানাডা যখন চলে আসলাম তখন মনে হয়ে ছিল আর আমার মায়াকুমারী কে দেখতে পারব না।কিন্তু প্রতি রাত তোমার কথা ভেবে পার করে দিতাম।
তোমায় বিষণ মিস করতাম।মন চাইতো ছুটে যাই #তার_শহরে ।আমাকে তো একদিন যেতেই হতো তোমার কাছে।তোমাকে ছাড়া যে আমি নি:স্ব আনি।বড্ড বেশি ভালবেসে ফেলেছি তোমায়।দেখো ভাগ্যের কি খেলা ভাগ্য আবার তোমাকে আমার কাছে নিয়ে আসলো।
তুমি চলে আসলে তোমার বাবা-মার সপ্ন পূরণ করতে আমার পৃথিবীতে।


এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ভোর হয়ে গেল বুঝতে পারলাম না।আমি বের হয়ে আসলাম আনির রুম থেকে।আসার আগে আবারও ওর কপালে গভীর ভাবে চুমু একেঁ দিলাম।আমার রুমে এসে আকাশ পাতাল চিন্তা করতে করতে হঠাৎ ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে গেলাম।


আমি সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছি এমন সময় দরজায় কেউ নক করল। আমি বললাম ভেতরে আসতে পারেন এই বলে আবার আমার কাজে মনোযোগ দিলাম।
হঠাৎ আয়নায় আদিল ভাইয়া কে দেখতে পেলাম।
আমি চমকে উঠে পিছনে ঘুরে তাকালাম হে সত্যিই আদিল ভাইয়া..!
উনি আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন দেখে আমি ভয়ে ভয়ে বললাম, আপনার কি কিছু দরকার? উনি কোনো জবাব না দিয়ে আমার দিকে পর্যায়ক্রমে এগিয়ে আসতে লাগলেন।
উনার এভাবে আসা দেখে আমি বললাম, আদিল ভাইয়া আমি কি আবার কোনো ভুল করেছি? আমার কথায় উনি একটু বাঁকা হাসলেন তারপর বললেন হে করেছ।
উনার এমন জবাবে ভয়ে আমি একটা শুকনো ঢুক গিললাম, আর মনে মনে ভাবতে লাগলাম আমি আবার কি করলাম?বুঝতে পারলাম ভয়ে আমার শরীর কাঁপছে।
আদিল ভাইয়া আমার একদম কাছে এসে বললেন,কাল যে ক্ষতটা হয়েছিল সে জায়গায় এই মলম টা লাগিয়ে নিয়ও।
বলেই আমার হাতে একটা মলম দিয়ে চলে গেলেন।
আমি ভাবছি আদিল ভাইয়া এমন কেন নিজে ব্যাথা দিবে আবার নিজেই মলম লাগিয়ে দিবে।আর ভাবলাম না,উনার কথা যত ভাবতে যাব ততো আমার মাথা খারাফ হবে । আদিল ভাইয়া কে বুঝা বড় দায়.!
আমি নিচে আসলাম নাস্তা করতে । মামিমা আমাকে দেখে একটা মিষ্টি হাসি দিলেন,সাথে গুড মর্নিং ও জানালেন ।আমি ও গুড মর্নিং জানালাম সবাইকে ।
নাস্তার টেবিলে বসে আছি এমন সময় দেখলাম আদিল ভাইয়া সিঁড়ি দিয়ে নামছেন,উনাকে দেখা মাএ আমার হৃৎপিন্ড টা অস্বাভাবিক ভাবে লাফাচ্ছে । উনি এত কিউট কেন?দেখলেই ইচ্ছে করে গাল টেনে দিতে । উনাকে দেখলে মনেই হবে না যে,উনি এত রাগি..!
মামার কথায় আমার ভাবনায় ছেদ পরল ।
আনিতা খাওয়া শুরো করো তোমার লেট হয়ে যাবে মামা বললেন ।
এর মধ্যে আদিল ভাইয়া আমার অপোজিট চেয়ারে বসে পরলেন ।উনার বসা দেখে ভয়ে আমার গলা দিয়ে খাবার নামছে না ,বজ্জাতটা আবার কি করে বসে ?
এই ভাবনার মধ্যে হঠাৎ আমি খেয়াল করলাম , আদিল ভাইয়া আমার দিকে বার বার তাকাচ্ছেন । উনার এমন চাহনির কারণ টা আমি ঠিক বুঝলাম না । নিজের দিকে তাকালাম আমার সব ঠিক আছে কি না ,আমার তো সব ঠিক আছে । আজ আমি ব্লু শার্ট পরেছি,আর হোয়াইট জিন্স সাথে হোয়াইট স্কার্ফ গলায় ঝুলিয়ে রেখেছি ,পায়ে ব্লু সু পরেছি।আয়নায় তো দেখলাম আমায় মন্দ লাগছে না .!
সাজগোজ তো করিনি একদম জল্লাদটার ভয়ে।
তাহলে উনি অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছেন কেন আমার দিকে?
নেহাল হয়তো ফলো করছে এসব, নেহাল আমার পাশের চেয়ারে বসা ছিল। নেহাল আমার কানের কাছে তার মুখ এগিয়ে বলতে লাগল,আপু আমার ভাইয়া তোমার দিকে তাকানোর কারণ টা কি বুঝতে পারো নি ?
আমি প্রশ্ন বোধক চোখে তাকালাম নেহাল এর দিকে ,আর কিছুটা অবাক হয়ে..!
নেহাল আমার তাকানোর মানে বুঝতে পেরে বলল,আপু তুমি বড় হয়েছ ঠিকি কিন্তু তুমি অনেক কিছু এখন ও বোঝনা ।
আমি আরো অবাক হয়ে তাকালাম ওর দিকে । আর মনে মনে বললাম বলে কি এই ছেলে আমি নাকি অনেক কিছু বুঝিনা?
ফিসফিসিয়ে ওকে বললাম,তা কি বুঝিনা আমার বুড়ো দাদা একটু বুঝিয়ে বলোতো তোমার এই অবুঝ নাতনি টা কে?
নেহাল আমার কথায় চাপা হাসলো।তার পর একটু ভাব নিয়ে বলল,ভাইয়া আর তুমি
সেম কালার শার্ট পরেছ ।
নেহাল এর কথায় আমি তাকালাম আদিল ভাইয়ার দিকে। ঠিকি তো আমার আর উনার শার্ট এর কালার প্রায় একি।
আদিল ভাইয়া জানলেন কি করে আমি এই কালার শার্ট পরবো.!
এটা কি কোনো কো-ইনসিডেন্স নাকি অন্যকিছু?এই সব ভাবছি আর খাচ্ছি ।
তার মাঝে মামা বলে উঠলেন ,আজ তো আদিল এর জরুরি মিটিং আছে ওকে মাস্ট এটেন্ড করতে হবে কথা টা বলে মামা থামলেন ।মামা আবার বললেন,তাই আনিতা কে আজ ভার্সিটিতে নেহাল ড্রপ করে দিবে।নেহাল কিছু বলার আগে সাহিল ভাইয়া বলে উঠলেন,আজ তো নেহালের কলেজ আছে পাপা.!
আমি তাকালাম আদিল ভাইয়ার দিকে,চেয়ে দেখি উনি চোখ গরম করে তাকিয়ে আছেন সাহিল ভাইয়ার দিকে।
উনার চাহনি দেখে বললাম,আমি একা যেতে পারবো মামা ।
সাহিল ভাইয়া মাঝে বলে উঠলেন,একা কেন যাবে আনিতা?আজকে আমার ভার্সিটিতে অফ ডে,আমি তোমায় ড্রপ করে দিবনে।মামা ও সায় দিলেন সাহিল ভাইয়ার কথায়।


আদিল ভাইয়ার দিকে তাকানোর সাহস পেলাম না।নেহাল ও আর কিছু বললো না।
সাহিল ভাইয়া অনুমতি পেয়ে যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছে এমন ভাব করছে।


হঠাৎ বিকট আওয়াজ পেয়ে আমার সামনে তাকালাম,চেয়ে দেখি আদিল ভাইয়া তার চেয়ার ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।আমার বুঝতে বাঁকি রইলো না উনার এমন কান্ডের কারণ।
মামিমা কে বায় বলে চলে গেলেন উনি ।
কিছুক্ষণ পর আমি আর সাহিল ভাইয়া ও ভার্সিটির উদ্দেশ্য বেরিয়ে পরলাম।
সাহিল ভাইয়া ড্রাইভ করছেন আর বক বক করছেন।

আমার মন এসবে নেই,আমি ভাবছি আদিল ভাইয়ার কথা।লোকটা কেমন অদ্ভুত টাইপের আমার পাশে কাউকে সহ্য করতে পারেন না এমন কি নিজের আপন ভাইকে ও না।তবে কেন?আমি যা ভাবছি তবে কি তাই?
সাহিল ভাইয়ার ডাকে আমার ধ্যান ভাঙ্গল,এসে গেছি মেম আপনার ভার্সিটিতে নামুন।আমি হেসে বললাম,হে ভাইয়া নামছি।উনি বললেন,তোমার হাসিটা খুব সুন্দর আনিতা।মুচকি হাসি দিয়ে আমি উনাকে বায় বলে চলে আসলাম।
একটু তাড়াহুড়া করে ক্লাস এর দিকে যাচ্ছি।
হঠাৎ কারো সাথে জোড়ে ধাক্ষা লাগল ঠাল সামলাতে না পেরে ওই ব্যক্তি সহ নিচে পরে গেলাম।আমি অনুমান করলাম আমি কারো বুকের উপর আছি।ভয়ে ভয়ে চোখ খুলে তাকালাম,কে সে দেখার জন্য।
আমি তো ওই ব্যক্তি কে দেখে পুরাই অবাক..!(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here