তার_শহরে পর্ব ২৬

0
502

#তার_শহরে
পার্ট : ২৬
লেখা : ইসরাত সিনহা

আজ আনির কাছ থেকে সত্যি টা আমাকে জানতে হবে । আমি যা সন্দেহ করছি যদি তাই হয়, তাহলে ভয়ানক কিছু ঘটবে ।

আদিল আস্তে আস্তে আনিতার সামনে যেয়ে দাঁড়াল । আনিতা যখনই পানির গ্লাস নিয়ে পিছন ঘুরলো তখন দেখলো আদিল তার সামনে গম্ভীর মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে ।
আদিল কে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আনিতা থতমত কন্ঠে বলল ,
-আপনি গিয়ে বসুন না , এখানে কেন ?
আদিল গুরু গম্ভীর গলায় বলে উঠল ,
-আনি তুমি পানি টা রেখে আমার সাথে এসো , কথা আছে ।
আদিলের এমন গুরু গম্ভীর গলা শুনে আনিতা ভয় পেয়ে মনে মনে বলল ,
-দেখে তো মনে হচ্ছে উনি রেগে আছেন , তবে কেন ? আমি কি উল্টা -পাল্টা কিছু করলাম ? উনার গলাটাও কেমন শুনাচ্ছে ।
আনিতা কে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আদিল জোরে ডাক দিয়ে বলল ,
-মিসেস মেহবুব তোমাকে এতো চিন্তা করতে হবে না , আমার সাথে আসলেই জানতে পারবে কেন ডেকেছি ।
আনিতা অবাক হলো আদিল কিভাবে বুঝতে পারলো সে কি নিয়ে ভাবছে ?
আনিতা বিড়বিড় করে বলে উঠল ,
-মনে মনে কোনো কথা ভেবেও শান্তি পাইনি উনি কিভাবে যে বুঝে ফেলেন আল্লাহ ভাল জানেন ।
আদিল আনিতা কে ইশারা করে বেডে বসতে বলল ।
আনিতা চুপচাপ বেডে বসে পড়ল । আদিল আনিতার কাছে এসে ওর হাতটা তার হাতে নিলো ।
তারপর আনিতার দিকে তাকিয়ে নরম কন্ঠে বলে উঠল ,
-আচ্ছা আনি তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করি ?
আনিতা ভাবছে উনি কি এমন জিজ্ঞেস করতে চাইছেন , যার জন্য পারমিশন নিচ্ছেন ?
আনিতা ভেতরে ভেতরে বেশ ভয় পাচ্ছে , একটা শুকনো ঢুক গিলে মলিন স্বরে বলল ,
-হুম , জিজ্ঞেস করতে পারেন , তার জন্য পারমিশন নেওয়ার কি আছে ?
আদিল হাল্কা হেসে বলল ,
-না এমনিতেই নিলাম । যা জিজ্ঞেস করতে চাইছিলাম সেটা হলো , তুমি সিঁড়ি থেকে পড়লে কিভাবে ?
আনিতা নিচের দিকে তাকিয়ে ভাবছে আদিল কে কি সত্যি কথা টা বলে দিবে , না কি দিবে না ?
আদিল আনিতার নিরবতা দেখে গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠল ,
-কি হলো আনি আনসার মি ।
আনিতা বুঝতে পারছে না কি করবে , আদিল যা রাগি এই কথা শুনার পর কি রিয়েক্ট করবে তা ভেবেই আনিতা ভয় পাচ্ছে ।
আনিতার নিরবতা দেখে আদিল রেগে গেল , রাগে চিৎকার দিয়ে দাঁড়িয়ে বলল ,
-আনি তোমাকে আমি কিছু একটা জিজ্ঞেস করছি , তুমি কথা বলছো না কেন ?
আদিলের রাগ দেখে আনিতা ভয়ে ভয়ে বলে উঠল ,
-আপনি এতো রেগে যাচ্ছেন কেন ? আমি বলছি কি ভাবে পড়ে গেলাম ।
আদিলের রাগ খানিক ধমে গেছে আনিতার ভয় পাওয়া দেখে , আদিল আবার আনিতার পাশে বসল ।
আনিতা বলতে লাগল ,
-ওইদিন সকালে আমি আপনাকে ঘুম থেকে না জাগিয়ে কিচেনে যাচ্ছিলাম , আপনাকে আমার হাতের বানানো কফি খাওয়াবো বলে । আমি যখন রুম থেকে বাহির হলাম দেখলাম জেনি ওর রুম থেকে বাহির হলো । আবার আমাকে দেখে ভেতরে ঢুকে গেল । এই বিষয়ে আমি অতোটা না ভেবে সিঁড়ি বেয়ে নিচের দিকে নামতে লাগলাম । আর কয়েক সিঁড়ি নামতেই হঠাৎ কেউ আমাকে পিছন দিয়ে ধাক্কা দেয় , আমি ঠাল সামলাতে না পেরে পরে যাই ।
আদিল চিৎকার দিয়ে বলল ,
-কি তোমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলা হয়েছে ? তুমি কি থাকে দেখেছো আনি ?
আনিতা নিচু সুরে বলল ,
– না , আমি কাউকে দেখতে পাইনি ।
আদিল প্রচন্ড রকম রেগে গেছে , তার সবুজ চোখ গুলো রাগে ঝলঝল করছে । আদিল রাগে হাত মুষ্টি বদ্ধ করে রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে ।
আনিতা বুঝতে পারছে আদিল এখন ভয়ানক রেগে আছে । তাই আনিতা আদিলের হাত ধরে ভয়ার্ত গলায় বলল ,
-আপনি এতো রাগবেন না প্লিজ , যে এই কাজ টা করেছে আমি তো তাকে দেখিনি ।
আদিল রাগানিত্ব স্বরে বলে উঠল ,
-আমি জানি আনি এই নোংরা কাজ কার হতে পারে , কে তোমাকে আমার জীবন থেকে সরাতে চায় । তবে যে তোমাকে আমার জীবন থেকে চিরকালের জন্য সরাতে চায় সে হয়তো জানে না , আদিল মেহবুবের মনে তার মিসেস মেহবুব ছাড়া আর দ্বিতীয় কারো স্থান নেই ।
আদিলের কথা শুনে আনিতা আদিল কে পিছন দিক দিয়ে জড়িয়ে ধরে কান্না করা গলায় বলল ,
-আপনি আমাকে এতো ভালোবাসেন কেন ?
আনিতা জড়িয়ে ধরতেই আদিল মুচকি হেসে বলল ,
-তোমাকে ভালো না বেসে থাকতে পারিনা তাই এতো ভালবাসি মিসেস মেহবুব ।
আনিতা কান্না করতে করতে বলল ,
-জানেন যখন আমি পড়ে গিয়ে জ্ঞান হারাই , জ্ঞান হারানোর আগমূর্হতে আপনার মুখ , মা-বাবা আর আনিশার মুখ চোখের সামনে বার বার ভেসে উঠছিল । মনে মনে বলছিলাম হয়তো আমার আপনজনদের মুখ আমি আর চিরকালের জন্য দেখতে পারব না । মনে হয়ে ছিল আমি আর বাঁচব না ।
আনিতার এমন কথা শুনে আনিতা কে পিছন থেকে টান দিয়ে সামনে এনে আদিল তার বুকের সাথে শক্ত করে চেপে ধরে ।
আনিতা হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করল আদিলের বুকে মাথা রেখে ।
আদিল শান্ত কন্ঠে বলল ,
-কেঁদো না আনি তুমি কাঁদলে আমার কষ্ট হয় , বুকের বা পাশটায় চিনচিন ব্যাথা অনুভব করি ।
আনিতা আদিল কে ধরে কেঁদেই চলছে ।
আদিল উপায় না পেয়ে ধমকের সুরে বলে উঠল ,
-আনি তুমি কান্না করা বন্ধ করো , তোমার মাথার ক্ষত এখনি শুকায়নি । পরে মাথা ব্যাথা করবে ।
আনিতা আদিলের ধমকে কান্না বন্ধ করে দিলো কিন্তু হেঁচকি থামছে না ।
আদিল ধীর গলায় আনিতা কে বলল ,
-তোমার কিছু হবে না আনি আমি আছি তো ,আদিল রাগে চোখ লাল করে বলল , তোমাকে যে কষ্ট দিয়েছে তাকে আমি ছাড়ব না ।
আমি নিশ্চিত আনি তোমার এ অবস্থার জন্য জেনি দায়ী , জেনি তোমাকে ধাক্কা দিয়েছে ।
আনিতা আদিল কে ছেড়ে দিয়ে চোখ মুছে বলল ,
-আমি তো দেখিনি কে ধাক্কা দিয়েছে ৷, না জেনে কাউকে সন্দেহ করা ঠিক না ।
আদিল রাগি গলায় বলে উঠল ,
-আনি তুমি সবাই কে নিজের মতো ভালো ভেবোনা , জেনি কে তুমি কতটুকু চিনো বা জানো ? জেনিফার কে আমি ছোট থেকেই জানি ও কি করতে পারে আর পারে না ।
আনিতা চিন্তিত ভাবে বলল ,
-জেনি যে এটা করেছে তার তো কোনো প্রুভ নাই আমাদের কাছে । কি ভাবে প্রুভ করবেন ও এটা করেছে ?
আদিল বাঁকা হেসে বলল ,
-তুমি এতো ভেবোনা তো মিসেস মেহবুব , তুমি তোমার বর কে এখনো চিনোনা । চলো শুতে যাবে রাত অনেক হয়েছে ।
আনিতা শুয়ে আছে আদিলের বুকে , আদিল পরম যত্নে আনিতার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে ।
আনিতা ঘুমিয়ে গেছে কিন্তু আদিলের দুচোখের পাতায় আজ ঘুম নেই ।
আদিল আনিতার ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে মায়া ভরা গলায় বলল ,
-মায়াকুমারী তোমার সাথে যে এ অন্যায় করেছে তাকে শাস্তি তো আমি দেবো । আদিল আনিতার কপালে গভীর ভাবে ভালবাসার পরশ এঁকে দিল ।

সকালে সবাই নাস্তার টেবিলে বসে আছে আদিল , আনিতার অপেক্ষায় ।
আদিল ফ্রেশ হয়ে এসে আনিতা কে পাজো কোলে তুলে নিল । আনিতা লজ্জা পেয়ে বলল ,
-আর কোলে নিচ্ছেন কেন ?
আদিল মুচকি হেসে বলল ,
-নিচে যাবো তাই কোলে নিয়েছি ।
আনিতা বিস্ময় নিয়ে বলে উঠল ,
-নিচে যাবেন ভালো কথা , আমাকে কোলে নিয়ে যাবেন কেন ?
আদিল গম্ভীর গলায় বলল ,
-এতো কথা বলো না তো । চুপচাপ বসে থাকো আর কোনাে লাফালাফি করবে না ।
আনিতা চুপচাপ আদিলের গলা জড়িয়ে বসে রইল ।
আদিল নিচে নামলো আনিতা কে নিয়ে , আনিতা কে আদিলের কোলে দেখে জেনি অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো ।
আনিতা লজ্জা পাচ্ছে সবাই তাকে এভাবে কোলে দেখছে ভেবে । আদিলের কোনো হেলদুল নেই আনিতা কে এভাবে নিয়ে নামছে বলে ।
আদিল আনিতাকে একটা চেয়ারে বসিয়ে সে নিজেও পাশের চেয়ারে বসল ।
মিসেস এনজেলা আনিতার দিকে তাকিয়ে বললেন ,
-মামনি তোমার শরীর ঠিক আছে ?
আনিতা হাল্কা হেসে বলল ,
-হ্যাঁ , মম শরীর ঠিক আছে ।
সবাই যে যার মতো নাস্তা করছে , হঠাৎ আদিল গম্ভীর সুরে বলে উঠল ,
-নাস্তা করে সবাই একটু সময় বসবে আমার কিছু কথা আছে ।
আনিতা ভয় পেয়ে গেল আদিলের কথা শুনে ।
আনিতা মনে মনে বলল ,
-উনি আবার কি কথা বলবেন ?
জনাব আলী মেহবুব আনিতা কে বললেন ,
-আনিতা তুমি খাচ্ছ না কেন ? এরকম হাত গুটিয়ে বসে আছো যে ?
আনিতা কিছু বলার আগে মিসেস এনজেলা বলে উঠলেন ,
-মামনির বোধহয় হাত দিয়ে খেতে ইচ্ছে করছে না , আমি খাইয়ে দেই ?
আনিতা খুশি হয়ে বলল ,
-ওকে মম , তুমি আমাকে খাইয়ে দাও ।
মিসেস এনজেলাও নিজ হাতে আনিতা কে খাইয়ে দিলেন ।
সবার নাস্তা শেষ হলে জনাব আলী মেহবুব বললেন ,
-আদিল তুমি কি বলতে চাও বলো ?
আদিল আগের থেকে আরো বেশি গম্ভীর হয়ে বলে উঠল ,
-পাপা আমরা সবাই জানি আনি পা পিছলে সিঁড়ি থেকে পড়ে গেছিলো । কিন্তু না পাপা আনি কে কেউ ইচ্ছে করে ধাক্কা দিয়ে ফেলেছিল ।
মিসেস এনজেলা আর জনাব আলী মেহবুব দুজনেই বিস্মিত গলায় বলে উঠলেন ,
-কি আনিতা পা পিছলে পড়েনি , তাকে ফেলে দেওয়া হয়েছে ?
জেনি ভয়ে কাঁপছে তাহলে কি সত্যি টা সবার সামনে বের হয়ে আসবে ? জেনি ভাবছে ,
-আনিতা কি আমায় দেখতে পেয়েছিল সে দিন ?
জেনি ভয়ে খালি গলায় কয়েকটা ফাঁকা ঢুক গিলল । নিজেকে স্বাভিক রেখে দাঁড়িয়ে রইল জেনি ।
সাহিল জেনির দিকে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করল জেনির অবস্থা ।
আদিল চিৎকার দিয়ে বলল ,
-ইয়েস পাপা আনি কে প্লান মাফিক ধাক্কা দিয়ে ফেলা হয়েছে ।
জনাব আলী মেহবুব গম্ভীর কণ্ঠে বললেন ,
-আদিল কে এই কাজ করেছে তুমি জানো ?
আদিল রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে বলল ,
-হ্যাঁ , পাপা । যে এই কাজ টা করেছে আনি কে ধাক্কা দেওয়ার সময় তার হাতের আংগুল থেকে একটা রিং আনির চুলে আটকে গিয়েছিল ।
ডক্টর সেটা আনির চুলে পেয়ে আমাকে দিয়েছেন ।
রিং এর কথা শুনতেই জেনি তার আংগুলের দিকে তাকায় , তাকিয়ে বলে, নাহ আমার তো সব রিং ঠিক আছে। জেনির এভাবে তাকানো কারো চোখ এড়ায়নি ।
আনিতা , নেহাল , সাহিল তারা নিরব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ।
মিসেস এনজেলা রাগি গলায় জেনি কে বললেন ,
-কি ব্যাপার জেনি তুমি তোমার রিং দেখছো কেন ?
জেনি ভয়ে আমতা আমতা করে বলল ,
-না আন্টি আমি কই আমার রিং দেখছি , এমনিতেই তাকালাম রিং এর দিকে ।
জনাব আলী মেহবুব বলে উঠলেন ,
-আদিলের কথার সাথে সাথে তুমি তোমার রিং এর দিকে তাকিয়েছো সেটা আমরা সবাই লক্ষ্য করেছি জেনি । কই এখানে তো আর কেউ তাদের আংগুলের দিকে তাকালো না ? তাহলে কি প্রমাণ হয় জেনি ?
জেনি ধরা খাওয়ার ভয়ে বলে উঠল ,
-আমি কেন আনিতা ধাক্কা দিতে যাবো শুধু শুধু ?
আনিতা হয়তো মিথ্যা বলছে আমাকে ফাঁসানোর জন্য ।
জেনির মুখে আনিতা মিথ্যা বলছে এ কথা শুনে আদিল ভয়ংকর চিৎকার দিয়ে জেনির গলা টিপে ধরে বলল ,
-কি বললি তুই আনি মিথ্যা বলছে ? মিথ্যা তো বলছিস তুই । সত্যিটা কি বল জেনিফার সবার সামনে ।
আদিলের এমন ভয়ংকর রাগ দেখে জেনি অনবরত কাঁপছে , সে আদিলের এই রূপের সাথে পরিচিত না । জেনি বার বার তার হাত দিয়ে আদিলের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে , কিন্তু আদিলের এমন হিংস্র শক্তির সাথে পেরে উঠছে না ।
আদিলের সবুজ রংয়ের চোখ দিয়ে যেন আগুন বেরোচ্ছে ।
আদিল গর্জন করে বলে উঠল ,
-জেনিফার সত্যি টা কি বল , নয়তো আজ আমার হাত থেকে তকে কেউ বাঁচাতে পারবে না ।
জেনির শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে আদিল গলা চেপে ধরায় । জেনি চোখে অন্ধকার দেখছে , আস্তে করে বলল ,
-আদিল আমার গলা থেকে হাত সরাও আমি সব বলছি ।
আদিল জেনির গলা ছেড়ে দিয়ে রাগে চিৎকার করে বলল ,
-বল জেনি বল কেন তুই আমার আনি কে এতো কষ্ট দিলি ও তর কি ক্ষতি করেছিল , যার জন্য তুই আনি কে আমার জীবন থেকে সরিয়ে দিতে চাইছিলি ?
জেনি কাশতে কাশতে চাপা রাগ নিয়ে বলল ,
-তোমার পাশে ওই মেয়ে কে আমার সহ্য হয় না আদিল ।
মেরে তো ফেলতে চেয়েছিলাম ওই বাঙ্গালি মেয়ে কে , কিন্তু মরতে মরতে আবার বেঁচে ফিরেছে ।
মিসেস এনজেলা জেনির দিকে দু কদম এগিয়ে এসে কষে জেনির দু গালে দুটো থাপ্পড় দিয়ে রাগে লাল হয়ে বললেন ,
-তুমি এতো নিচু মনের মানুষ জেনি ছি! আমার ভাবতে ঘৃণা করছে তুমি আমার আপন বোনের মেয়ে ? তুমি আনিতা কে মেরে ফেলতে চাও তোমার সার্থ সিদ্ধির জন্য ?
জেনি চিৎকার দিয়ে বলল ,
-হ্যাঁ আমি আমার সার্থের জন্য সব করতে পারি , আনিতার মতো মেয়েকে মারতে আমার হাত কাঁপবে না ।
আদিল রাগে কটমট করে চিৎকার দিয়ে বলল ,
-জেনি তুই নিজেও জানিস না তুই কতো বড় ভুল করতে গিয়েছিলি , তুই আদিল মেহবুবের কলিজায় আঘাত করতে চাইছিলি ?
জনাব আলী মেহবুব আদিলে কে বললেন ,
-আদিল তুমি শান্ত হও , আমি দেখছি ।
আদিল জেনির কাছে এসে জেনির গালে একটা জোরে চড় মেরে বলল ,
-তুই আমার ভাইকে ও আমার কাছে দোষী বানাতে চাইছিলি না ? নিজে সবটা করে পড়ে সাহিলের গাড়ে সব দোষ চাপাতে চাইছিলে ?
জেনি আদিলের দেওয়া চড়ে নিজের ব্যালেন্স ঠিক রাখতে না পেড়ে ফ্লোরে পড়ে যায় ।
আনিতা ভয়ে জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে নেহালের পাশে । আনিতা জানতো আদিলের রাগ বেশি কিন্তু এমন ভয়ংকর রাগের কথা জানতো না ।
আদিল যেন হিংস্র হয়ে উঠেছে ।
আদিল জনাব আলী মেহবুবের দিকে তাকিয়ে বলল ,
-পাপা পুলিশে ফোন দাও , ও যা করেছে তার জন্য ওর শাস্তি হওয়া দরকার ।
পুলিশের কথা শুনে জেনি ভয়ে ঢুক গিলল ।
মিসেস এনজেলা আদিলের সামনে এসে ধীর গলায় বললেন ,
-আদিল জেনি কে পুলিশে দেওয়ার দরকার নেই , আমি ওর মা কে ফোন করে বলছি জেনি কে যেন এসে নিয়ে যায় । আর এ কথাও বলব জেনি যেন আমাদের বাসায় আর কখনো না আসে ।
জনাব আলী মেহবুব ও মিসেস এনজেলার কথায় সায় দিয়ে বললেন ,
-হ্যাঁ , আদিল আমিও তোমার মমের সাথে একমত , পুলিশে দেওয়ার দরকার নাই । হাজার হোক জেনি আমাদের আত্মীয় , আমি ওর বাবা মার কথা ভেবে বলছি । জেনি কে পুলিশে দিলে সেটা জেনির বাবা মার সম্মানে আঘাত হানবে ।
আদিল রক্তচুক্ষু নিয়ে জেনির দিকে তাকিয়ে বলল ,
-ঠিক আছে পাপা , কিন্তু ও যেন আর এক মূর্হত আমাদের বাসায় না থাকে ।
জেনি একটা কথা কান খুলে শুনে রাখো , ভুলেও যদি কোনো দিন আনির কোনো ক্ষতি করতে চাইবে তাহলে তার পরিণাম কি হবে কিছুটা হলেও আজ আন্দাজ করতে পারছো নিশ্চয়ই ?
মম-পাপার কথায় তুমি আজ রেহাই ফেলে , নয়তো তোমাকে জেলের ভাত খাইয়ে ছাড়তাম । মাইন্ড ইট !
তখন বুঝতে আদিল মেহবুবের কলিজায় হাত দেওয়াটা তোমার কত বড় ভুল ছিল ।
সাহিল তার রুমে চলে গেল তার এখন জেনি ঘৃণা করছে, মনে হচ্ছে বিষাক্ত কোনো সাপ ।
আদিল আনিতার দিকে তাকিয়ে মনে মনে হেসে উঠল ,
আনিতা একদম নেহালের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে , মুখ দেখেই আদিল বুঝতে পারছে আনিতা বিষণ ভয় পাচ্ছে ।
আদিল গম্ভীর গলায় আনিতা কে বলল ,
-আনি রুমে চলো ।
জেনি ফনা তুলা সাপের মতো রাগে ফুঁসছে আদিল তাকে এতো অপমান করলো , ওই বাঙ্গালি মেয়ের জন্য ?
মিসেস এনজেলা ফোন করে জেনির মাকে আসতে বললেন , সাথে এ-ও জানিয়ে দিলেন জেনি কি কি করেছে ।
জেনির মা লজ্জিত হলেন জেনির এহেন কান্ডে , মিসেস এনজেলার কাছে ক্ষমা ও চাইলেন ।
আদিল রুমে বসে আছে আনিতা ভয়ে ভয়ে রুমে প্রবেশ করলো , তার এখন আদিল কে খুব ভয় করছে । আদিল আনিতার ভয় পাওয়ার কারণ বুঝতে পেরে আনিতা কে শান্ত গলায় বলল ,
-আমাকে এতো ভয় পাওয়ার কি আছে মিসেস মেহবুব ? আমি সবার প্রতি কঠোর না শুধু যারা অন্যায় করে তাদের প্রতি কঠোর ।
আনিতার ভয় কিছুটা কমে গেল আদিলের নরম কন্ঠ শুনে । আনিতা আদিলের পাশে বসে সাহস নিয়ে জিজ্ঞেস করল ,
-আচ্ছা আপনি ওখানে মিথ্যা বললেন কেন ? নাকি সত্যি আমার চুলে জেনির রিং আঁটকে ছিল ?
আদিল বাঁকা হেসে আনিতার কাছে এসে বলল ,
-এটা একটা টেকনিক ছিল মিসেস মেহবুব জাস্ট আর কিছু না। যদি এই কাজটা না করতাম তাহলে জেনি অতো সহজে ধরা দিত না। জেনি যদি বুনো ওল হয় তাহলে আদিল মেহবুব হবে বাঘা তেঁতুল। আনিতা বিস্মিত গলায় বলে উঠল ,
-আপনার তো খুব বুদ্ধি মি.আদিল মেহবুব । আপনি ভালো লয়ার হতে পারবেন। আদিল হেসে দিল আনিতার কথায়।

আজ একমাস হলো আদিল আনিতার বিয়ের ।
আদিল অফিস যাওয়ার আগে মিসেস এনজেলা কে বলে গেল ,
-মম আমি অফিসে চলে যাচ্ছি , আজ আমাদের বিয়ের একমাস পূর্ণ হলো তুমি ফুফি আর আংকেল কে জানিয়ে দাও আমাদের বিয়ের ব্যাপারে।
মিসেস এনজেলা আদিলের কথায় সম্মতি জানালেন।
মিসেস এনজেলা আনিতার মায়ের কাছে ফোন দিলেন , মিসেস আলেয়া কিছু সময় পর কল রিসিভ করলেন । মিসেস এনজেলা আনিতার মা কে কুশলাদি জিজ্ঞেস করে বললেন ,
-আলেয়া আমি তোমাকে একটা কথা বলার জন্য কল করে ছিলাম । মিসেস আলেয়া হাল্কা হেসে বললেন ,
-হ্যাঁ , ভাবি বলো ।
মিসেস এনজেলা খানিক ইতস্তত গলায় বলে উঠলেন ,
-আদিল আর আনিতা বিয়ে করে নিয়েছে আলেয়া।
মিসেস আলেয়া বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেলেন , তারপর চাপা চিৎকার দিয়ে বললেন,
-কি বলছো ভাবি তুমি এসব , আনিতা কখন বিয়ে করে নিল ? (চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here