তার_শহরে পর্ব ২৪

0
484

#তার_শহরে

পার্ট :২৪

লেখা : ইসরাত সিনহা


মিসেস এনজেলা কান্না শুরু করলেন , জনাব আলী মেহবুব মাথায় হাত দিয়ে অপর পাশের চেয়ারে বসে পড়লেন ।



আদিলের ভেতর বুকফাটা যন্ত্রণা হচ্ছে , আদিলের নিরবে চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পরছে । তার ফর্সা মুখকানা লাল হয়ে আছে , কান্না করার ফলে ।
দূরে দাঁড়িয়ে সেই দৃশ্য দেখছে সাহিল , নেহাল ।
নেহালের চোখে জল টলমল করছে হয়তো এখনই বেরিয়ে যাবে । নেহাল কখনো আদিল কে কাঁদতে দেখেনি , তার ভাইয়া কাঁদছে এটা নেহালের মনে বিষণ ভাবে পিড়া দিচ্ছে । নেহাল দ্রুত চলে গেলো সেখান থেকে ।
সাহিল হসপিটালের বারান্দার দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে আড়াআড়ি ভাবে হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে আছে ।
সাহিল উদাস মনে ভাবছে ,
-সিস আমাকে হঠাৎ ফাঁসাতে চাইছে কেনো ? আমি তো সিসের কোনো ক্ষতি করিনি ? নিজের বোনের মতো ভাবতাম , আর সেই কি না আজ আমায় ফাঁসাতে চাইছে , কেন ? সাহিলের কপালে চিন্তার ভাজ পড়ল , তাহলে কি সিস কোনো ভাবে জড়িত আনিতার আচমকা পা পিছলে পড়ে যাওয়ায় ? সাহিল আর কিছু ভাবতে পারছে না , তার মাথা ঝিমঝিম করছে , শরীরও দূর্বল লাগছে তাই সে বাসার উদ্দেশ্য বেরিয়ে গেল ।
শুনশান নীরবতার মাঝে জনাব আলী মেহবুবের ফোন বেজে উঠল , উনি ফোন বের করেই আঁতকে উঠে বললেন ,
-এনজেলা আনিতার মা কল করেছে , এখন কি বলব ?
মিসেস এনজেলা চোখ মুছে ধীর কন্ঠে বললেন ,
-আগে ফোন রিসিভ করুন , দেখুন না কি বলে ?
জনাব আলী মেহবুব কাঁপা হাতে ফোন রিসিভ করলেন । ফোন রিসিভ করতেই অপর পাশ থেকে আনিতার মা শান্ত গলায় বলে উঠলেন ,
-আসসালামু ওয়ালাইকুম ভাইয়া , তুমি কেমন আছো ?
জনাব আলী মেহবুব কন্ঠ স্বাভাকি করে বললেন ,
-ওয়ালাইকুম আসসালাম , আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি । তুই কেমন আছিস আলেয়া ?
আনিতার মা হাল্কা হেসে বললেন ,
-আমি ভালো আছি ভাইয়া । ভাইয়া আনিতা ফোন রিসিভ করছে না কেন , অনেক বার ট্রাই করলাম ।
জনাব আলী মেহবুব থতমত গলায় বলে উঠলেন ,
-আনিতা কে একটু ডক্টর এর কাছে নিয়ে এসেছি আলেয়া ।
আনিতার মা মিসেস আলেয়া আতংকিত হওয়া কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন ,
-ভাইয়া আমার আনিতার কি হয়েছে , ও ঠিক আছে তো ভাইয়া ?
জনাব আলী মেহবুব শান্তনাস্বরে বললেন ,
-চিন্তা করিস না আলেয়া , ও মাথায় একটু ব্যাথা পেয়েছে । ডক্টর বলেছে ঠিক হয়ে যাবে ।
মিসেস আলেয়া এবার কেঁদেই দিলেন , কান্না করতে করতে জিজ্ঞেস করলেন ,
-ভাইয়া আনিতার বেশি লাগেনি তো , কি ভাবে মাথায় আঘাত পেলো ?
মিসেস এনজেলা ফোন জনাব আলী মেহবুবের কাছ থেকে নিয়ে নরম গলায় বললেন ,
-তুমি এতো চিন্তা করো না তো আলেয়া , আমরা আছি তো । আনিতার বেশি লাগেনি , ডক্টর ওর ট্রিটমেন্ট করছে ঠিক হয়ে যাবে । তুমি খামোকা দুশ্চিন্তা করো না , আনিতা ডক্টর এর চেম্বার থেকে বের হলে তোমাকে ফোন দিবনে ।
মিসেস আলেয়া কান্না করা গলায় বললেন ,
-ভাবি তোমরা সবাই আমার মেয়েটা কে দেখে রেখো প্লিজ ।
মিসেস এনজেলা ভরসা দিয়ে বললেন ,
-তুমি কোনো চিন্তা করো না , আনিতা তো আমারও মেয়ে তাই না ? ওর কোনো অযত্ন আমি হতে দিব না । তুমি নিশ্চিন্তে থাকো , এখন রাখছি বলেই মিসেস এনজেলা লাইন কেটে দিলেন ।
জনাব আলী মেহবুব আর মিসেস এনজেলা একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছেন , তারা আদৌও জানেন না আনিতার কি হবে ? তারা শুধু মিসেস আলেয়া কে মিথ্যা শান্ত না দিলেন ।
আদিল সব কিছুই শুনছে কিন্তু কোনো কথা বলছে না , আদিলের চোখ গুলো বার বার ভিজে আসছে ।
জেনি খানিক দূরে একটা চেয়ারে বসে ফোনে কিছু একটা করছে আর আড় চোখে সবাই কে দেখছে ।
মনে মনে সে পৈশাচিক আনন্দ বোধ করছে , জেনি শয়তানি হাসি দিয়ে মনে মনে বলল ,
-আমি তো এটাই চেয়ে ছিলাম এতো দিন মেহবুব পরিবার আমার সামনে বসে কাঁদুক । আমাকে বিয়ে না করার এই শাস্তি মি.আদিল মেহবুব । বলে ছিলাম না আমাকে চড় দেওয়ার শাস্তি , আমার সাথে মিসবিহেভ করার শাস্তি তোমার ভালোবাসার আনি পাবে ? মিললো তো আমার কথা আদিল বেবি ? বলেই আরেক বার শয়তানি হাসি দিলো জেনি । তুমি ভুলে গিয়েছিলে মি.আদিল মেহবুব তুমি কার সাথে লাগতে এসেছিলে , জেনিফার সাথে লাগার শাস্তি এরকমই হয় । এখন এই মেয়েটা মরে গেলেই বাঁচি , আমার রাস্তার কাটা সরে যাবে ।



সন্ধ্যা পেড়িয়ে গেছে আদিল এক নাগাড়ে বিরতিহীনভাবে হসপিটালের বারান্দায় পায়চারি করছে । আনিতা কে একটা কেবিনে সিফ্ট করা হয়েছে , কেবিনের কাচের জানালা দিয়ে আদিল মাঝে মাঝে উঁকি দিয়ে তাকিয়ে দেখছে বাহির থেকে আনিতার জ্ঞান ফিরছে কি না ?
আদিলের কাছে মনে হচ্ছে সময় পেরচ্ছে না । প্রত্যেক সেকেন্ড কে মনে হচ্ছে মিনিটের সমান , মিনিট গুলো কে মনে হচ্ছে ঘন্টার সমান , ঘন্টা কে মনে হচ্ছে এক দিনের সমান ।
আমাদের সকলের কাছেই এমনটা মনে হয় ভালো সময় গুলো বোধ হয় একটু তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যায় , আর খারাপ সময় গুলো যেন যেতেই চায় না বা খুব দেড়িতে পার হয় ।
আদিলের কাছে আজ এমনটাই লাগছে , আর মাত্র ১ ঘন্টা সময় বাকি তারপরই বুঝা যাবে আনিতার কি হবে ।
এই ১ ঘন্টা সময় যেন আদিল কে গলায় বিঁধে থাকা কাটার মতো যন্ত্রণা দিচ্ছে । আদিল বার বার হাত ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে , সবাই বসে আছে আনিতার জ্ঞান ফিরবার অপেক্ষায় ।
দুপুরে আদিল কিচ্ছু খায়নি , তাকে জোর করেও কিছু মুখে দেওয়াতে পারলো না কেউ । যে ই আদিল কে খাওয়ার রিকুয়েস্ট করেছে আদিল সাফ সাফ জানিয়েছে ,
-আগে আমার আনির জ্ঞান ফিরুক, তারপর খাবো । আনিও অনেক্ষণ হলো কিছু খায়নি । আদিল যেভাবে বাসা থেকে এসেছিল ওভাবেই আছে । মাত্র কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে আদিলের চোখ মুখের নাজেহাল অবস্থা ।
জেনি আদিলের কথা শুনে মনে মনে ব্যঙ্গ করে বলে উঠল ,
-আদৌও আনিতা বাঁচবে কি না সেটাই জানেনা , আর উনি বসে আছেন আনিতার জ্ঞান ফিরলে খাবেন । যত্তসব আধিক্যেতা গা জ্বলে যায় এসব ন্যাকামি দেখলে ।
জেনি কপাল কুঁচকে অন্যদিকে তাকিয়ে বলল , ডহং । জেনি চাচ্ছে আনিতা একবারে মরে যাক , আনিতা বেঁচে থাকলে সে আদিল কে পাবে না ।

৭ ঘন্টা হতেই আদিল তাড়াহুড়ো করে ডক্টর কে ডাক দিলো ।
ডক্টর একা আনিতার কেবিনে ঢুকলেন , সবাই বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে ।
কিন্তু আনিতার কোনো রেসপন্স পাওয়া যাচ্ছে না , ডক্টর কিছু সময় পর বাহিরে আসলেন ।
ডক্টর বেরোতেই আদিল ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করল ,
-ডক্টর আমার ওয়াইফের জ্ঞান ফিরেছে ?
ডক্টর নিচুস্বরে বললেন ,
-মি.মেহবুব আরো কিছু সময় ওয়েট করুন ,হয়তো জ্ঞান ফিরতে মিসেস মেহবুবের খানিক লেট হতে পারে ? আশা করছি উনার জ্ঞান ফিরবে , উনার লক্ষণ ভালো আছে ।
আদিল জড়ানো গলায় বলল ,
-কেন ডক্টর আরো লেট হবে কেন ? আমার আনি ঠিক হবে তো ?
জনাব আলী মেহবুব আদিলের দিকে তাকিয়ে বললেন ,
-আদিল তুমি শান্ত হও , আনিতার জ্ঞান ফিরতে লেট হবে ডক্টর তো সেটাই বললেন ।
আদিল উত্তেজিত হয়ে ডক্টর কে বলল ,
-ডক্টর আমাকে প্লিজ আনির কাছে যেতে দিন , আমি একবার ওকে দেখে আসব প্লিজ । না করবেন না ডক্টর রিকুয়েষ্ট করছি আপনার কাছে ।
ডক্টর আদিলের এমন কাকুতি ফেলতে পারলেন না , তিনি শান্ত কন্ঠে বললেন ,
-ঠিক আছে মি.মেহবুব আপনি একা ভেতরে যান , আর হ্যাঁ মনে রাখবেন পেসেন্ট এর কাছে গিয়ে জোরে কোনো ডাকা ডাকি করবেন না । এতে পেসেন্ট এর ক্ষতি হতে পারে ।
আদিল ডক্টর কে ধন্যবাদ জানিয়ে ভেতরে প্রবেশ করল ।
কেবিনে প্রবেশ করতেই আদিলের বুকের ভেতর ধুকধুক শুরু করেছে , এক অজানা ভয়ে তার বুকের ভেতর হাতুড়ি পিটার মতো শব্দ তুলছে ।
আদিল ধীর গতিতে হেঁটে আনিতার বেডের পাশে যেয়ে দাঁড়াল , আনিতার মুখখানা কেমন ফ্যাকাশে দেখাচ্ছে আদিলের কাছে । মাথায় ব্যন্ডেজ করা , মুখে অক্সিজেন লাগানো ।
আদিল আস্তে করে বেডের পাশে থাকা চেয়ারে বসল ।
অনেক সময় ধরে সে তাকিয়ে আছে আনিতার মুখের দিকে , একসময় তার চোখ দিয়ে অঝরে জল গড়িয়ে পরতে লাগল । আনিতার একটা হাত আদিল তার হাতের মুঠোয় নিয়ে কয়েক বার চুমু খেল ।
আদিল ক্ষীণ আওয়াজে আনিতার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল ,
-আনি তোমার এ অবস্থার জন্য আমি দায়ী , আমি তোমাকে দেখে রাখতে পারিনি । আনি আমি তোমার ব্যর্থ স্বামী , যে তার স্ত্রী খেয়াল নিতে পারে না । তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও আনি । আমি তোমাকে সত্যিই খুব বেশি ভালবাসি আনি ।
তোমার যদি কিছু হয় আনি আমি হয়তো বাঁচব না, নয়তো পাগল হয়ে যাবো । আদিলের চোখ থেকে কয়েক দন্ড জল গড়িয়ে পড়ল আনিতার হাতে ।
আদিল কান্না জড়ানো গলায় আবার বলতে শুরু করল ,
-তোমাকে অনেক কষ্টের বিনিময়ে পেয়েছি আনি , এখন যদি তুমি আমাকে ভুলে যাও তা আমার জন্য মেনে নেওয়া পসিবল না ।
তার থেকে আমার মৃত্যু শ্রেয় হবে ।
আনিতার হাত অল্প নড়েচড়ে উঠল , আনিতা অনুভব করছে তার হাত ধরে কেউ বসে আছে ।
আনিতা পিটপিট চোখে তাকিয়ে দেখার চেষ্টা করছে কেউ কি সত্যি বসে আছে ?
আদিল মাথা নিচের দিকে রেখে চোখ বন্ধ করে নিশ্চুপ চোখের জল ফেলছে ।
আনিতা পিটপিট চোখে তাকিয়ে আদিল কে দেখল , আনিতা বুঝতে পারছে আদিল কাঁদছে ।
আনিতা মুখ থেকে অক্সিজেন খুলে নিয়ে বসা গলায় আস্তে করে বলল ,
-আপনি কাঁদছেন কেন , আমি ঠিক আছি তো ।
আনিতার গলা শুনে আদিল চমকে উঠল , সে বিশ্বাস করতে পারছে না তার আনিতার জ্ঞান ফিরেছে ।
মাথা তুলে আদিল আনিতার দিকে তাকাতেই আনিতা ম্লান হাসল ।
আদিল যেন তার হারানো প্রাণ ফিরে পেল , তার আঁটকানো নিঃশ্বাস স্বস্তির ভাবে ছাড়ল ।
আদিল অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে আনিতার দিকে মনে হচ্ছে যেন শত যুগ পরে দেখা হয়েছে দু’জনার।
আনিতাও শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল । তাদের দুজনের চোখের কোণে জল চিকচিক করছে ।
আদিল বসা থেকে উঠে আনিতার ব্যন্ডেজ করা কপালে অজস্র চুমু এঁকে দিল , আনিতা অনুভব করছে আদিলের ভালবাসা গুলো ।
আদিল দেড়ি না করে ডক্টর কে ডাক দিলো , ডক্টর তাড়াতাড়ি ভেতরে ঢুকে দেখলেন আনিতার জ্ঞান ফিরেছে ।
ডক্টর শান্তির নিঃশ্বাস পেলে বললেন ,
-মি.মেহবুব আপনার ওয়াইফ মিসেস মেহবুবের ভাগ্য উনাকে ফেবার করেছে , আর গড আপনাদের সহায় ছিলেন । নচেৎ এরকম পেসেন্ট ইমপ্রুভ করতে অনেক দিন লেগে যায় ।
ডক্টর চেকাপ করে দেখলেন আনিতার সব কিছু ঠিকঠাক আছে , ডক্টর চলে গেলেন ।
এরপর ভেতরে মিসেস এনজেলা , জনাব আলী মেহবুব আর নেহাল প্রবেশ করলেন ।
জেনি আনিতার জ্ঞান ফিরায় চিন্তিত হয়ে পড়ল , আনিতা যদি থাকে দেখে থাকে তাহলে তো আদিল কে বলে দেবে ।
আদিল কি করবে তা জেনি মনে করতেই তার শরীর ঠান্ডা হয়ে গেল । আবার মনে মনে নিজেকে শান্তনা দিলো , নাহ আমাকে আনিতা দেখতে পায়নি আমি তো পিছনে ছিলাম দেখবে কি করে ?
মেয়েটার কি পুঁটি মাছের প্রাণ এতো বড় আঘাতের পরেও বেঁচে গেল কি করে ? ইচ্ছে তো করছে এখন গিয়ে গলা টিপে মেরে ফেলি ।
মিসেস এনজেলা গিয়ে আনিতার পাশে বসে কান্না করছেন আর বলছেন ,
-মামনি তুমি পা পিছলে পড়ে গেলে কি ভাবে ? তুমি এতো কেয়ারলেস হয়ে চলা ফেরা করো কেন মামনি ?
জনাব আলী মেহবুব ধমকের সুরে মিসেস এনজেলা কে বলে উঠলেন ,
-এনজেলা কি শুরু করলে , এখন এতো প্রশ্ন করো নাতো । সবে মাত্র মেয়েটার জ্ঞান ফিরলো ওকে রেস্ট করতে দাও ।
মিসেস এনজেলার দিকে আনিতা তাকিয়ে আছে কিছু বলছে না , আনিতার মনেও হাজার প্রশ্ন ধলা বেঁধে আছে , যার উত্তর সে মিলাতে পারছে না ।
নেহাল আনিতার দিকে তাকিয়ে মৃদুস্বরে বলল ,
-আপু এখন কেমন লাগছে ?
আনিতা আস্তে করে উত্তর দিল ,
-একটু ব্যাটার লাগছে নেহাল । আনিতা চারপাশে চোখ বুলিয়ে দেখল সবাই আছে শুধু সাহিল , জেনি বাদে । তার খটকা লাগল ওদের দুজন কে না দেখে ।
আনিতার ভাবনার মাঝে জেনি কেবিনে ঢুকল , ঢুকেই হাল্কা হেসে জিজ্ঞেস করল ,
-আনিতা কেমন ফীল করছো , শরীর ঠিক আছে তো ?
আনিতা চোখ বন্ধ করে দূর্বল গলায় বলল ,
-হ্যাঁ , জেনি খানিকটা ব্যাটার ফীল করছি ।
ডক্টর এসে আনিতা কে কিছু খাওয়ানোর কথা বলে মেডিসিন খাওয়াতে বলে গেলেন ।
আদিল একটু দূরে দাঁড়িয়ে ছিল আনিতা ইশারা করে ডাক দিল কাছে আসার জন্য ।
আদিল দ্রুত কাছে এসে জিজ্ঞেস করল ,
-আনিতা তোমার কি মাথায় যন্ত্রণা হচ্ছে , ডক্টর কে ডাকব ?
আনিতা ম্লান হেসে আস্তে করে বলল ,
-না , না আমার যন্ত্রণা হচ্ছে না , আমি ডেকেছি এরজন্য আপনি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসুন । চোখে মুখের কি হাল করেছেন সে দিকে খেয়াল করেছেন ?
আদিল আনিতার কথায় শুকনো হাসি দিয়ে বলে উঠল ,
-তুমি তো আছো আমার খেয়াল রাখার জন্য তাই না বউ ? আনিতা আদিলের কথায় লজ্জা মাখা হাসি দিল কিছু বলল না ।
আদিলও হাসল আনিতার হাসি দেখে , আনিতা কে বলল ,
-হয়েছে আর লজ্জা পেতে হবে না , এখন তুমি অসুস্থ চাইলেও আদর করতে পারব না । বলেই চোখ টিপ মারল । অসুস্থ চেহারায় ও আনিতা লজ্জায় লাল রাঙা হয়ে উঠল আদিলের কথায় ।
আদিল আনিতার কপালে আরো কয়েকটা ভালবাসা পরশ এঁকে দিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেল ।
সবাই বাসায় চলে গেছে ফ্রেশ হওয়ার জন্য , আর ডিনার করে সবাই আবার আসবে । আদিল কে রেখে গেছেন আনিতার পাশে ।
কিছুক্ষণ পর আদিল ফ্রেশ হয়ে এসে আনিতা কে স্যুপ খাইয়ে দিয়ে নিজেও খেয়ে নিল ।
আনিতা মেডিসিন খাবে না বলে কান্না করল , আদিল অনেক বকাঝকা করে মেডিসিন খাইয়ে দিল ।
আনিতা এক দৃষ্টিতে আদিলের দিকে তাকিয়ে নরম কন্ঠে বলল ,
-আপনার বুকে মাথা রাখতে খুব ইচ্ছে করছে , প্লিজ একবার আমাকে বুকে নিবেন ?
আদিল অবাক হলো সাথে খুশিও লাগছে এই প্রথম আনিতা তাকে বুকে নেওয়ার জন্য বলছে , নিজের ইচ্ছা থেকে । কিন্তু আদিলের খুশি বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না , যখন মনে পড়ল আনিতার তো মাথায় আঘাত পেয়েছে ওকে বুকে নেওয়া যাবে না । বেশি নড়াচড়া করলে মাথার ক্ষতি হতে পারে । আদিল আনিতার হাত ধরে আদুরে গলায় বলল ,
-শুনো আমার আদুরে পিচ্চি বউ তোমার তো মাথায় ব্যাথা পেয়েছ এখন বেশি নড়াচড়া করলে প্রবলেম হবে । তুমি সুস্থ হয়ে গেলে যত ইচ্ছা আমার বুকে মাথা রাখবে , আদিল হাত দিয়ে তার বুকের বা পাশ দেখিয়ে বলল , এই জায়গাটা তোমার আনি, আজীবন তোমারি থাকবে । মন খারাপ করো না প্লিজ ।
আনিতা কিছুটা মন খারাপ করে বলল ,
-ঠিক আছে , তাহলে আমার পাশে শুয়ে থাকেন ।
আদিল হেসে আনিতার পাশে বেডে শুয়ে গেল । আদিল আনিতাকে জড়িয়ে ধরে গলার এক সাইডে মুখ গুজে নিল। আনিতা ঠিক মতো কথা বলতে পারছে না মাথায় অল্প ব্যাথা করছে । আদিল কে তা বুঝতে না দিয়ে লজ্জা পাওয়া কন্ঠে বলল ,
-এই এরকম করছেন কেন ? আমার সুড়সুড়ি লাগছে তো ।আদিল মুখ গুজে রেখেই বলল ,
-লাগুক এটা তোমার শাস্তি , আমাকে এতো কষ্ট দেওয়ার জন্য । আনিতা হেসে ধীর গলায় আবার বলে উঠল,
-কেউ এসে পড়বে তো , তখন আপনার তো লজ্জা লাগবে না , লাগবে আমার । আদিল গম্ভীর কণ্ঠে আনিতা কে বলল ,
-আচ্ছা আনি আমি ভাবছি ফুফি আর আংকেল কে ব্যাপার টা জানিয়ে দেওয়া উচিত ।
আনিতা বুঝতে পারছে না কোন ব্যাপার এর কথা বলছে , আস্তে করে প্রশ্ন করল ,
-কোন ব্যাপারের কথা বলছেন ? আমার মাথায় আঘাত পাওয়ার কথা ?
আদিল বলল ,
-না । আনিতা আদিল কে কিছু বলতে না দিয়ে কিছুটা উত্তেজিত গলায় প্রশ্ন করল ,
-মা-বাবা কি জানেন আমার মাথায় আঘাত পাওয়ার কথা , আপনারা কি ফোন করে জানিয়ে দিয়েছেন ?
আদিল শান্ত কন্ঠে বলে উঠল ,
-এতো উত্তেজিত হইওনা তো , ফুফি কল করে ছিলেন পাপা কে । তুমি কল রিসিভ করছো না দেখে , পাপা বলেছেন তুমি মাথায় অল্প ব্যাথা পেয়েছ তোমাকে ডক্টর এর কাছে নিয়ে এসেছেন । পাপা ব্যাপার টা এতো গাড় ভাবে ফুফি কে বলেন নি , উনি চিন্তা করবেন বলে ।
এখন তুমি অনেক সুস্থ আছো পাপা ফোন করে জানিয়েছেন ।
আনিতা স্বস্থীর শ্বাস ফেলে বলল ,
-পাপা একদম ঠিক করেছেন , মা -বাবা শুনলে অস্থির হয়ে পড়বেন । অযতাই চিন্তা করবেন ।
আদিল গলায় মুখ গুজেই গম্ভীর গলায় বলল ,
-আনি তুমি পড়লে কি ভাবে ? আর সকালে আমাকে ঘুম থেকে না উঠিয়ে নিচে কেন যাচ্ছিলে ?
আনিতা মনে মনে ভাবছে আমি কি উনাকে সত্যি কথা বলে দিবো , না কি পরে বলবো ?
আদিল খানিক বিরক্তি নিয়ে বলল ,
-কি হলো আনি উত্তর দাও ?
আনিতা ভয়ে ভয়ে বলল
-আমি যখনি সিঁড়ি দিয়ে নামতে যাব তখন কেউ….
আনিতা কথা সম্পূর্ণ করতে পারলো না সাহিল কেবিনে দরজায় দাঁড়িয়ে আছে । আনিতা সাহিল কে দেখেই থেমে গেল ।
সাহিল অপ্রস্তুত বোধ করলো আদিল , আনিতা কে এ ভাবে দেখে ।
সাহিল চলে যেতে নিলেই আনিতা ক্ষীণ আওয়াজে ডাক দিল ,
-সাহিল ভাইয়া চলে যাচ্ছেন কেন , ভেতরে আসুন ।

সাহিল এসেছে দেখেই আদিল দেড়ি না করে শুয়া থেকে উঠে বসল । (চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here