তার_শহরে পর্ব ২৩

0
452

#তার_শহরে

পার্ট : ২৩

লেখা : ইসরাত সিনহা



আনিতা মাথায় হাত দিতেই দেখল তার হাত রক্তে লাল হয়ে গেছে , রক্ত দেখে আনিতা ভয়ে আদিলের নাম ধরে চিৎকার দেয় , তারপরই জ্ঞান হারায় ।


আনিতার আদিল বলে চিৎকার আদিলের কানে বাজতেই আদিল ঘুম থেকে ধরপড়িয়ে উঠে ।
আদিল বসে ভাবছে সে কি সঠিক শুনলো আনিতা তার নাম ধরে ডাক দিলো ? তবে কিশের জন্য আনিতা এমন বিকট চিৎকার দিলো ? আদিলের এসব চিন্তা ভাবনার মাঝেই মিসেস এনজেলা কান্না করা গলায় ডাক দিলেন ,
-আদিল তাড়াতাড়ি নিচে আসো , মামনি পা পিছলে পরে গেছে ।
আদিল লাফ দিয়ে বেড থেকে নেমে দৌঁড়ে নিচে গেল । নিচে নেমেই আদিলের শরীরর দিয়ে এক ঠান্ডা শ্রোত বয়ে গেল , এই মূহুর্তে আদিলের মনে হচ্ছে ভেতর থেকে কেউ তার হৃৎপিণ্ড টা ছিঁড়ে নিয়ে যাচ্ছে । আদিল চেয়ে আছে আনিতার চোখ বন্ধ করা মুখের দিকে ।
আনিতার চারপাশ রক্তে লাল হয়ে গেছে । আনিতা পরে আছে ফ্লোরে নিস্তেজ অবস্তায় । মিসেস এনজেলা এক নাগারে আনিতা ডেকেই চলছেন , আর কান্না করছেন ।
জেনি মিসেস এনজেলা কে বলল ,
-আন্টি আনিতা সেন্সলেস হয়ে আছে , আগে ওর সেন্স ফিরাতে হবে ।
জনাব আলী মেহবুব এম্বুলেন্স কে ফোন দিলেন ।
মিসেস এনজেলা কান্না করতে করতে আদিল কে বললেন ,
-আদিল তুমি পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছো কেন ? মামনি কে ডাক দাও , দেখনা মামনি চোখ খুলছে না ।
আদিল ধীর পায়ে আনিতার কাছে এসে বসল ,কিছুক্ষণ আনিতার রক্তে লাল হয়ে যাওয়া চেহারার দিকে তাকিয়ে রইল । তারপরই আদিল আনিতা কে টান দিয়ে বুকে জড়িয়ে এক ভয়ংকর চিৎকার দিয়ে বলল ,
-তোমার কি হয়েছে আনি কথা বলছো না কেন , তোমার এ অবস্থা হলো কিভাবে ? আদিল এগুলো বলছে আর আদিলের চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পরছে ।
মিসেস এনজেলার দিকে তাকিয়ে আদিল বলে উঠল ,
-মম আমার আনির এরকম হলো কি করে , ও পরে গেল কিভাবে ? নাকি কেউ ওকে ফেলে দিয়েছে ইচ্ছে করে ? এ বাড়িতে তো আনির শত্রুর অভাব নেই ।
জনাব আলী মেহবুব আদিলের কথার মানে কিছুই বুঝলেন না , উনি পাল্টা কিছু জিজ্ঞেস না করে বললেন ,
-আমরা কেউই সঠিক ভাবে কিছু জানি না আদিল , এটা কেবল আনিতাই বলতে পারবে কিভাবে কি হলো ।
সাহিল , জেনি একে উপরের দিকে তাকাল ।
আদিল প্রচন্ড রাগে গর্জে উঠে বলল ,
-যদি কেউ ইচ্ছে করে এই কাজ করে থাকে তবে আদিল মেহবুবের হাত থেকে তার রেহাই নেই । বলেই আদিল অগ্নিচুক্ষু দিয়ে তাকাল সাহিল , জেনির দিকে । আদিলের তাকানোয় মনে হয়েছিল এখনি বোধ হয় এদের দুজন কে অগ্নিচুক্ষু দিয়ে ভস্ম করে দিবে ।
সাহিল চিন্তিত মুখ করে দাঁড়িয়ে রইল ।
মিসেস এনজেলা আদিলের উদ্দেশ্য বললেন ,
-এখন এতো কিছু ভাবার টাইম নেই আদিল , মামনি কে আগে ডক্টর এর কাছে নিতে হবে । মামনির খুব ব্লিডিং হচ্ছে ।
ইতিমধ্যেই এম্বুলেন্স এসে গেল , আনিতা কে এম্বুলেন্সে তোলা হলো । মিসেস এনজেলা , জনাব আলী মেহবুব আর আদিল আনিতার সাথে গেলেন।
আদিলের পরনে শুধু একটা থ্রি -কেয়াটার আর একটা টি-শার্ট । আদিলের কোনো দিকে হুঁশ নেই ।
খানিক বাদে তারা পৌঁছালো কানাডার একটা প্রাইভেট ক্লিনিকে , এখানেই আনিতা কে ভর্তি করা হলো ।
ডক্টররা জানিয়েছে আনিতার অবস্থা খুবই ক্রিটিকাল , আনিতা কে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হবে । একথা শুনে আদিল পাগলের মতো করতে থাকে , সে আনিতা কে একা কোথাও যেতে দিবে না ।
জনাব আলী মেহবুব আদিল কে শান্ত না স্বরে বললেন ,
-আদিল বাবা আমার পাগলামি করো না , আনিতা কে যদি এখন অপারেশন থিয়েটারে যেতে না দাও তাহলে আনিতার অবস্থা আরো ক্রিটিকাল হবে ।
তুমি একজন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ হয়ে এটা কোন ধরনের পাগলামি করছো ?
আদিল কথা বলতে পারছে না , তার গলায় কান্না আঁটকে আছে । গলায় বিঁধে থাকা কান্না গুলো আঁটকানোর জন্য আদিল ঢুক গিলল , ঢুক গিলে জড়ানো গলায় বলল ,
-পাপা আমার আনির কিছু হবে না তো বলো , ও ঠিক হয়ে যাবে তো ?
জনাব আলী মেহবুব ছেলের এমন কথায় চোখের কোণে জমে থাকা জল গুলো আড়ালে মুছে নিয়ে বললেন ,
-হ্যাঁ , আদিল , আনিতা আবার ঠিক হয়ে যাবে । যাও তুমি এখন ভালো ছেলের মতো পেপারে সাইন করে দিয়ে আসো ।
আদিল বসা থেকে উঠে ধীর পায়ে রিসিপশনের দিকে এগিয়ে গেল , রিসিপশনের মেয়েটির কাছ থেকে পেপার টা নিয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে সাইন করছে ।
রিসিপশনের মেয়েটি অবাক হয়ে আদিলের দিকে তাকিয়ে আছে । মেয়েটি মনে মনে বলল ,
-মি.আদিল মেহবুবের হাত এভাবে কাঁপছে কেন , আর উনার এ অবস্থা কেন ? উনাকে তো এর আগেও এই হসপিটালে অনেক বার দেখেছি , অনেক হ্যান্ডসাম আর অনেক নাম করা বিজনেস ম্যান । যাকে এক ডাকে সবাই চিনে আদিল মেহবুব , তার এমন উুসকো খুসকো চেহারা কেন কি হয়েছে মি.মেহবুবের ? একবার কি জিজ্ঞেস করব পেসেন্ট মি.মেহবুবের কি হয় ? যারজন্য পেপারটাতে সাইন করতে উনার হাত কাঁপছে ?
আদিল পেপারে সাইন করা শেষে মেয়েটির দিকে পেপার এগিয়ে দিলো । যখনি আসতে উদ্বেত্য হলো তখন মেয়েটি নম্র কন্ঠে ডাক দিল ,
-এক্সকিউজ মি স্যার ,
আদিল পেছন ঘুরে মেয়েটির দিকে জিজ্ঞাসা দৃষ্টিতে তাকাল ,
মেয়েটি কোনো ভণিতা ছাড়াই জিজ্ঞেস করল ,
-ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড স্যার , পেসেন্ট আপনার কি হয় ?
এই মূহুর্তে আদিলের কারো সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না , ভদ্রতার খাতিরে ইচ্ছের বিরুদ্ধে যেয়ে আদিল আস্তে করে বলল ,
-আমার ওয়াইফ, মিসেস আদিল মেহবুব ।
আদিলের মুখে ওয়াইফ কথাটা শুনে মেয়েটি বিস্মিত গলায় বলে উঠল ,
-স্যার আপনি বিয়ে করে নিয়েছেন , কবে ? কোনো নিউজে তো আপনার বিয়ের কিছু দেখলাম না ?
আদিল এবার প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে বলল ,
-হেই লিসেন , আমি তোমাকে সব উত্তর দিতে বাধ্য নয় ।
আদিলের এমন খরা কথায় মেয়েটি লজ্জা পেয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে বলল ,
-আই এম সরি স্যার ,
আদিল আর কোনো কথা না বলে হসপিটালের বারান্দার চেয়ারে বসে পড়ল ।
রিসিপশনের মেয়েটি মনে মনে বলল ,
-স্যার বোধহয় উনার ওয়াইফ কে বেশিই ভালবাসেন ? উনার বিদধস্ত চেহারায়ই প্রকাশ করছে উনি কোন পরিস্থিতিতে আছেন ?
আদিলের দু পাশে ওর মম , পাপা বসে আছেন , আদিল দু হাঁটোর উপর দু হাত ঠেকিয়ে মুখ ঢেকে বসে আছে । আনিতা কে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ।


সাহিল , নেহাল , জেনি হসপিটালে আসলো , জেনির হাতে কিছু শুকনো খাবার । কারণ সকালে কেউই নাস্তা করেনি ।
জেনি মিসেস এনজেলার হাতে খাবার দিয়ে বলল ,
-আন্টি তোমরা নাস্তা করে নাও । আমরা তিন জন অল্প কিছু নাস্তা করে এসেছে বাসা থেকে ।
মিসেস এনজেলা আর জনাব আলী মেহবুব উনারও অল্প নাস্তা করলেন , আনিতার চিন্তায় তাদের গলা দিয়ে খাবার নামছে না । আদিল কে কিছুতেই খাওয়ানো যাচ্ছে না । তার মুখে শুধু একটাই কথা ,
-আমার আনি না খেয়ে আছে , আমি কি করে খাই । আমার গলা দিয়ে খাবার নামবে না , আমি খাবো না ।
মিসেস এনজেলা আদিল কে কঠিন গলায় বলে উঠলেন ,
-আদিল তুমি এটা কেন বুঝতে পারছো না , তুমি যদি এখন খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দাও তাহলে তুমি অসুস্থ হয়ে পরবে ? তুমিও অসুস্থ হয়ে গেলে আমরা কাকে রেখে কাকে দেখবো ? এতো ভেঙে পরলে চলবে না আদিল তোমাকে শক্ত হতে হবে ।
আদিল মিসেস এনজেলার হাত থেকে খাবার গুলো নিয়ে অল্প খেয়ে এক পাশে রেখে দিলো ।
জনাব আলী মেহবুব এক নাগারে হসপিটালের বারান্দায় পায়চারি করছেন , উনাকে বিষণ চিন্তিত দেখাচ্ছে ।
উনার এমন চিন্তিত মুখ সাহিলের চোখে পরল , সাহিল দ্রুত হেঁটে জনাব আলী মেহবুবের সামনে এসে উত্তেজিত গলায় জিজ্ঞেস করল ,
-পাপা তোমাকে এতো চিন্তিত দেখাচ্ছে কেন ? তুমি কি কোনো বিষয় নিয়ে খুব ওয়ারিড ?
জনাব আলী মেহবুব বারান্দার গ্রিল দিয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে চিন্তিত ভাবে বললেন ,
-হুম , সাহিল আমি একটা বিষয় নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় আছি ।
সাহিল শান্ত কন্ঠে বলল ,
-কোন বিষয়ে পাপা , আমাকে কি বলা যাবে ?
জনাব আলী মেহবুবের চিন্তিত চেহারায় ফুটে উঠল ম্লান হাসি , উনি ম্লান হেসে সাহিল কে বললেন ,
-হ্যাঁ , বলা যাবে সাহিল । তেমাদের কে আমার দুশ্চিন্তার কারণ বলবো না তো কাকে বলবো ?
সাহিল মৃদু হাসল , তার পাপার কথায় ।
জনাব আলী মেহবুব গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলেন ,
-সাহিল আমার চিন্তা হচ্ছে আনিতার বাবা-মার কথা ভেবে । ওরা যখন ফোন দিবে তখন আমি কি বলে জবাব দেবো ? যদি আনিতার এই অবস্থার ওর বাবা-মা জানতে পারে তাহলে পাগল হয়ে যাবে ।
আনিতা তাদের খুব আদরের মেয়ে , খুব ভালবাসে তারা আনিতা কে ।
জেনি পিছন থেকে বলে উঠল ,
-কি আর বলবেন আংকেল যা সত্যি তাই বলবেন ।
সাহিল ভ্রু কুঁচকে জেনি কে প্রশ্ন করল ,
-কি সত্যি সিস ?
জেনি আত্নবিশ্বাসী গলায় বলল ,
-আনিতা সিঁড়ি থেকে পা পিছলে পরে গেছে , এটাই তো সত্য ।
সাহিল শক্ত কন্ঠে বলে উঠল ,
-তুমি এতো কনফিডেন্সে এর সহিত বলছো কি ভাবে সিস যে আনিতা পা পিছলে পরেছে ? অন্য কিছু ও তো হতে পারে ?
জেনি কাঠ কাঠ গলায় বলল ,
-তা নয় তো কি সাহিল , অন্যকিছু কি হতে যাবে ? এক মিনিট সাহিল তাহলে কি তুই আনিতা কে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছিস ?
সাহিল চোখ বড় বড় করে জেনির দিকে তাকালো , তাকিয়ে বিস্ময় ভরা কন্ঠে বলে উঠল ,
-হোয়াট , আমি আনিতা কে ধাক্কা দেবো কেন ? আর ইউ ক্রেজি সিস ?
জেনি ভ্রু নাচিয়ে সাহিলের দিকে তাকিয়ে বলল ,
-এতো অবাক হওয়ার মতো কিছু বলিনি সাহিল , এটা অসম্ভব কেনো ব্যাপার না , হতেও তো পারে এই কাজ টা তুই করেছিস ? যা এখন আমাদের কাছ থেকে লুকচ্ছিস ! তা না হলে অন্য কিছু বলতে তুই কি বুঝাতে চাইছিস ?
জেনির এমন কথায় জনাব আলী মেহবুব জেনি কে কপট রাগ দেখিয়ে বলে উঠলেন ,
-জেনি তুমি এসব কি বলছো , সাহিল কেন আনিতা কে ধাক্কা দিতে যাবে ? আনিতা তো সাহিলের কোনো ক্ষতি করেনি ?
জেনি রাগি ভাব নিয়ে বলল ,
-ক্ষতি তো করেছে আংকেল , সাহিলকেই জিজ্ঞেস করে দেখেন ? বলেই জেনি রেগেমেগে চলে গেল ।
সাহিল হতবাক নয়নে চেয়ে আছে জেনির যাওয়ার দিকে ।
সেখানে মিসেস এনজেলাও এসে উপস্থিত হলেন , তিনি জিজ্ঞেস করলে ,
-তোমরা সবাই এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন ?
জনাব আলী মেহবুব মিসেস এনজেলার কথার কোনো উত্তর না দিয়ে , গমগম গলায় সাহিলের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন ,
-সাহিল জেনি কি বলে গেলও , সত্যিই কি আনিতা তোমার কোনো ক্ষতি করেছে ।
সাহিল একটু অপ্রস্তুত গলায় বলল ,
-না , পাপা আনিতা আমার কি ক্ষতি করবে ? আমি তো আ … এটুকুনি বলে সাহিল থেমে গেল ।
মিসেস এনজেলা কিছু আন্দাজ করতে পারছেন না কি নিয়ে কথা হচ্ছে , তিনি নিরব শ্রোতা হয়ে শুধু শুনে যাচ্ছেন ।
জনাব আলী মেহবুব আবারও চাপা রাগ দেখিয়ে বললেন ,
-‘তুমি তো’ কি সাহিল , বলো ?
জনাব আলী মেহবুবের এমন হঠাৎ রাগ দেখে সাহিল খানিকটা ভয় পেয়ে গেল । খালি গলায় সাহিল একটা ঢুক গিলে ভয় পাওয়া কন্ঠে বলে উঠল ,
-পাপা আনিতা কে আমি ভালবাসতাম , আনিতা কানাডায় আসার পরে ওকে দেখে আমার ভালো লেগে যায় ।
মিসেস এনজেলা এখন ব্যাপার টা বুঝতে পারলেন , তিনি গম্ভীর কণ্ঠে বললেন ,
-তাহলে সেদিন তুমি আর জেনি আনিতার কথাই বলতে গিয়েছিলে সাহিল ?
সাহিল মাথা নিচের দিয়ে ছোট করে উত্তর দিল ,
-হ্যাঁ , মম ।
জনাব আলী মেহবুব আগের মতোই বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছেন , গভীর ভাবে কিছু একটা ভাবছেন ।
সাহিল তার মম -পাপার নিরবতা দেখে ভয়ে ভয়ে বলল ,
-তাই বলে আমি আনিতা ধাক্কা দেইনি পাপা ট্রাস্ট মি ? হ্যাঁ , আমি মানছি ভাইয়া আনিতা কে বিয়ে করায় আমার রাগ হয়েছিল , বাট আমি এতো নিচু কাজ করতে পারি না ।
জনাব আলী মেহবুব নিরবতা ভেঙে বলে উঠলেন ,
-সাহিল ছোট বেলা থেকেই তোমার একটা অভ্যাস ছিল , আদিল যা পছন্দ করতো তা তুমিও পছন্দ করতে ।
যদি সে জিনিস একটা থাকতো তাহলে আদিল তোমাকে দিয়ে দিতো , কেন জানো তোমাকে খুশি রাখার জন্য । আদিল তোমাদের দু ভাইকেই খুব ভালবাসে ।
আদিলের সব কিছু তে ভাগ বসাতে বসাতে এখন তার ভালবাসার উপরও ভাগ বসালে ?
মিসেস এনজেলা তীব্র রাগি গলায় বললেন ,
-আসলে এটা সাহিলের অভ্যাসে পরিণত হয়ে গিয়েছে , আদিলের সব কিছুতে ভাগ বসানো ।
সাহিল কোনো উত্তর দিচ্ছে না , তার মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না । সবাই নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে আছে কারো মুখে কোনো কথা নেই ।
আচমকা ভাবে সেখানে আদিলের কন্ঠ শুনতে পেয়ে সবাই যেন ভূত দেখার মতো চমকে উঠল ।
মিসেস এনজেলা ভয়ার্ত গলায় জিজ্ঞেস করলেন ,
-আদিল তুমি কখন এলে ? আদিলের চোখ মুখ রক্তিম বর্ণ হয়ে আছে , যার থেকে বুঝা যাচ্ছে আদিল ভয়ানক রেগে ফুঁসছে ।
অনেক্ষণ হলো এসেছি মম , এখানে না এলে তো জানতেও পারতাম না সাহিলের গোপন কথা ।
আদিল খানিক নিরব থেকে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে তাকল , কিছু সময় পরে ফ্লোরের দিক থেকে চোখ সরিয়ে সাহিলের দিকে অগ্নদৃষ্টি নিক্ষেপ করে রাগে চিৎকার দিয়ে বলে উঠল ,
-সাহিল তুই আনি কে পছন্দ করিস আমি আগেই বুঝতে পেরেছিলাম , কিন্তু তুই ওকে না পেয়ে আমার জীবন থেকে সরিয়ে দিতে চাইছিস ? আমার উপরে প্রতিশোধ নিতে ?
আদিলের রাগ দেখে জনাব আলী মেহবুব আর মিসেস এনজেলা ভয় পাচ্ছেন , তারা ভাবছেন এখন যদি আদিল উল্টা -পাল্টা কোনো কান্ড করে ফেলে ?
সাহিলও ভয় পাচ্ছে আদিলের রাগ কে , তারপরও মনে সাহস এনে বলল ,
-ভাইয়া তুমি না জেনে আমাকে দোষ দিতে পারো না । আমি এরকম নিচুস্তরের কাজ করতে পারি এটা তুমি বিশ্বাস করো ? হাজার হোক আমি তোমার ভাই সাহিল মেহবুব , আমার মন মানসিকতা এতো খারাপ না ভাইয়া ।
জেনি দূরে আড়াল থেকে দাঁড়িয়ে সব কিছু দেখছে , মুখে তার একখানা শয়তানি হাসি ঝুলে আছে ।
আদিল হাত মুষ্টি বদ্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে কোনো জবাব দিল না ।
এর মাঝে একজন ডক্টর এসে উদ্বিগ্ন কন্ঠে বললেন ,
-মি.মেহবুব শুনুন মিসেস মেহবুবের অবস্থা ভালো না উনার মাথা থেকে প্রচুর রক্ত করণ হয়েছে । এখন আপনার ওয়াইফের রক্তের প্রয়োজন , এই মূহুর্তে আমাদের কাছে O নেগেটিভ রক্ত নেই । আর যা ও পেয়েছি সেগুলো বেশি ভালো না , পরবর্তীতে মিসেস মেহবুব এর শরীরের ক্ষতি হতে পারে ।
আদিল ডক্টর এর কথা শুনে উত্তেজিত গলায় বলল ,
-ডক্টর প্লিজ যে কোনো ভাবে রক্তের ব্যবস্থা করুন , যত টাকা লাগে আমি দেবো ।
ডক্টর নিরাশ কন্ঠে বললেন ,
-মি.মেহবুব কুল ডাউন , আমরা চেষ্টা করেছি , কিন্তু কোথাও ভালো রক্ত পাওয়া যাচ্ছে না ।
সাহিল ডক্টর এর দিকে তাকিয়ে বলল ,
-ডক্টর আমার ব্লাডগ্রুপ O নেগেটিভ , আমি ব্লাড দেবো আনিতা কে ।
ডক্টর মৃদু হেসে শান্ত গলায় বললেন ,
-থ্যানক্স মাই সন , তুমি আমাকে চিন্তা মুক্ত করলে , কাম উইথ মি ।
সাহিল ডক্টর এর সাথে চলে গেলো , আদিল আর তার মম-পাপা সাহিলের যাওয়ার পথে তাকিয়ে রইলেন ।


আদিল হসপিটালের লম্বা বারান্দায় চেয়ারে বসে স্থীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দেওয়ালের দিকে । মিসেস এনজেলা , জনাব আলী মেহবুব চিন্তিত ভাবে বসে আছেন আদিলের পাশে ।
আদিল স্থীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলেও তার চোখ মুখ বলছে সে কোনো গভীর চিন্তা করছে । বা কোনো সমীকরণ মিলাচ্ছে ।
১ ঘন্টা ৩০ মিনিট পর ডক্টর অপারেশন থিয়েটার থেকে বের হলেন । ডক্টর আদিলের সামনে আসতেই আদিল সহ তার মম -পাপা ও দাঁড়িয়ে গেলেন ।
আদিল ভয়ার্ত কন্ঠে ডক্টর কে জিজ্ঞেস করল ,
-ডক্টর আমার ওয়াইফ এখন কেমন আছে ?
ডক্টর বললেন ,
-মি.মেহবুব আপনার ওয়াইফের অপারেশন সাকসেসফুলি হয়েছে । কিন্তু এখনও মিসেস মেহবুব বিপদমুক্ত না , আগামি ৭ ঘন্টার মধ্যে জ্ঞান না ফিরলে হয়তো উনি অতীত ভুলে যাবেন নয়তো কোমায় চলে যেতে পারেন । কারণ উনার মাথার আঘাত টা খুব গুরুতর ভাবে পেয়েছেন ।
গড কে ডাকেন গড চাইলে সব কিছুই সম্ভব , বলেই ডক্টর চলে গেলেন ।
আদিল ধপ করে চেয়ারে বসে পড়ল , চোখের সামনে সব কিছু ঝাপসা দেখছে । মিসেস এনজেলা কান্না শুরু করলেন , জনাব আলী মেহবুব মাথায় হাত দিয়ে অপর পাশের চেয়ারে বসে পড়লেন । (চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here