তার_শহরে পর্ব ২২

0
456

#তার_শহরে

পার্ট : ২২

লেখা : ইসরাত সিনহা



কান্না পাচ্ছে খুব , কান্না চেপে রেখে রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে গজগজ করতে করতে উল্টো দিকে হাঁটা দিলাম ।কান্না থেকে রাগটাই বেশি হচ্ছিলো ।



অতি দ্রুত হেঁটে গাড়ির কাছে গেলাম । আমাকে দেখেই নেহাল বলে উঠল ,
-আপু চলে এলে যে , ভাইয়া কি অফিসে নেই ?
আমি খানিকটা রাগিস্বরে বললাম ,
-তোমার ভাইয়া খুব ইম্পর্ট্যান্ট কাজে আছেন । চলো আমি বাসায় যাব ।
নেহাল আমার রাগিস্বর বুঝতে পেরে বলল ,
-কি হয়েছে আপু তুমি এতো রেগে আছো কেন , ভাইয়া কিছু বলেছেন ?
ওর প্রশ্ন গুলো এখন আমার কাছে বিরক্তিকর লাগছে , কোনো উত্তর না দিয়ে বললাম ,
-এতো প্রশ্ন করো না তো নেহাল , বাসায় চলো ।
ও আর কিছু জিজ্ঞেস করল না , গাড়িতে গিয়ে বসল । আমিও গাড়িতে বসে পরলাম ।
নেহাল ড্রাইভ করছে , আর মাঝে মাঝে গান গাইছে । আমি বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছি । কিছুই ভালো লাগছে না , মন চাইছে দেশে চলে যাই । এই মূহুর্তে যেন সব কিছু কে আমার কাছে অসহ্য মনে হচ্ছে । উনি এরকম করলেন কেন , আমাকে বললে কি এমন হতো ?
এসব ভাবতেই চোখের কোণে জল চিকচিক করে উঠল । চোখের জল কে আঁটকে রাখতে পারলাম না সতো চেষ্টার পরেও । কয়েক দন্ড অবাধ্য অশ্রু গড়িয়ে পরল আমার অজান্তেই ।
হাতের উল্টা পিঠ দিয়ে মুছে নিলাম , নেহাল দেখতে পেলে হাজার খানেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে ।
যা এই মূহুর্তে আমার কাছে বিরক্তিকর লাগবে ।
নেহাল আমার সাথে আর কথা বললো না , সারা রাস্তাই নিরব ছিল ।
অনেকটা সময় পর আমরা বাসায় পৌঁছালাম । নেহাল গাড়ি থামাতেই আমি তাড়াতাড়ি নেমে বাসার ভেতর ঢুকে পরলাম । বাসায় ঢুকে উপরের সিঁড়ি বেয়ে উঠতে যাবো , তখনি মামিমা ডাক দিলেন ,
-মামনি আজ ফিরতে এতো লেট হলো যে ?
আমি ম্লানস্বরে বললাম ,
-উনার অফিসে গিয়ে ছিলাম মম তাই ফিরতে একটু লেট হলো ।
মামিমা হেসে বললেন ,
-একা গিয়েছিলে মামনি ?
নেহাল পিছন থেকে বলে উঠল ,
-তোমার বউমা একা কেন যাবে মম , তার ছোট দেবর থাকতে ? আনিতার দিকে তাকিয়ে বলল ,
-ঠিক বলছি না ভাবি ?
নেহালের কথায় মামিমা হা হা করে হেসে উঠলেন , আমার কেন জানি এখন হাসি পাচ্ছে না । মন খারাপ থাকলে হাসতে ভাল লাগে না , আমারও হাসি এলো না ।
মামিমা আমার নিরবতা দেখে হাসি থামিয়ে বললেন ,
-মামনি তোমার কি হয়েছে , মুখ এরকম শুকনো লাগছে কেন ? মন খারাপ না কি আনিতা ?
ম্লান হেসে বললাম ,
-না , মম মন খারাপ না ওই একটু মাথা ব্যাথা করছে তাই হয়তো মুখ এরকম লাগছে ।
মামিমা আমার কথা বোধ হয় পুরোপুরি বিশ্বাস করলেন না , সন্দেহজনক গলায় বলে উঠলেন ,
-মাথা ব্যাথা না অন্য কিছু মামনি , যা তুমি আমার নিকট ব্যক্ত করছো না ।
জোর পূর্বক গলায় বললাম ,
-অন্য কিছু কি হতে যাবে মম , তুমি অযথা চিন্তা করছো । আমি উপরে গেলাম , বলেই দ্রুত রুমের দিকে হাঁটা দিলাম ।
উনার রুমে গেলাম না আমার রুমে চলে এলাম ।
নেহাল নিচে চিন্তিত মুখ করে দাঁড়িয়ে কি একটা ভাবছিল , তখনি মিসেস এনজেলা বলে উঠলেন ,
-নেহাল , মামনির কি হয়েছে , তুমি তো সাথে ছিলে ? আদিল কিছু বলেছে ?
নেহালের কপালে চিন্তার সুক্ষ্যভাজ পরল , তরপর মৃদু আওয়াজে বলল ,
-আপু ভাইয়ার সাথে দেখা করতে ভেতরে গিয়ে দেখা না করে আবার ফিরে আসে । জিজ্ঞেস করি আপু দেখা করেছো , আপু কে তখন খুব হাইপার দেখাচ্ছিল । এর কারণ আমার জানা নেই মম ।
মিসেস এনজেলা ও চিন্তায় পরে গেলেন , আনিতা কেন এমন রাগি বিহেভ করল ? আদিল কে ফোন দিবেন ভেবেও আর দিলেন না । নেহাল তার রুমে চলে গেল ।
আনিতা রুমে এসে পা থেকে সু খুলে ছুড়ে মারল দরজার দিকে ।
আনিতার রাগ হচ্ছে খুব , সে ওয়াশরুমে ঢুকে শাওয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে রইল আধা ঘণ্টার মতো ।
আর নিরব অশ্রু চোখ দিয়ে ঝরে পরল ।
আনিতা শাওয়ার করে রুমে এসে বাড়িতে ফোন করল , তার মা , বোনের সাথে কথা বলল যাতে মনটা হাল্কা হয় । ওর মন খারাপ এটা বুঝতে দিলো না ।
সন্ধ্যা ৭ টা বাজে আদিল আনিতা কে ফোন দিলো , কিন্তু আনিতা ফোন রিসিভ করল না ।
আদিল অনেক বার ট্রাই করলো , আনিতা রিসিভ করল না ।
শেষে বাধ্য হয়ে আদিল আনিতা কে টেক্সট করলো ,
-বউ ফোন রিসিভ করো , কথা বলবো তো ।
তাও আনিতা রিপ্লাই করলো না । আদিল কিছু টা রেগে গেল আনিতা ফোন রিসিভ না করায় ।
আনিতা রুম ভেতর থেকে লক করে বসে আছে ।
মিসেস এনজেলা অনেক বার লাঞ্চ করার জন্য বলে ছিলেন , আনিতা প্রতিবারই মাথা ব্যাথার দোহাই দিয়ে ফিরিয়ে দিল ।
সেই এসে যে রুমে ঢুকে ছিল এখন সন্ধ্যা ৭ টা বাজে রুম থেকে বাহির হয়নি আনিতা ।
ব্যাপার টা মিসেস এনজেলা কে খুব ভাবাচ্ছে , আনিতা এমন করছে কেন ? তিনি আদিল কে ফোন দিলেন , আদিল জরুরি মিটিং এ থাকায় ফোন সাইলেন্ট করে রাখা ছিল । অনেক বার ট্রাই করলেন , কিন্তু আদিল ফোন রিসিভ করলো না ।
মিসেস এনজেলা চিন্তিত ভাবে রুমে বসে রইলেন ।
আনিতা কেঁদে কেটে চোখ মুখ লাল করে ফেলেছে ।



আদিল রাত ১০:৩০ এ অফিসের কাজ শেষ করে ফোন হাতে নিয়ে দেখে মিসেস এনজেলার অনেক গুলো মিসেড কল । আদিল ভ্রু কুঁচকে ফোনের দিকে তাকিয়ে বলল ,
-মম এতো ফোন দিয়ে ছিলেন কেন , কোনো বিপদ হলো না তো ?
আদিল তাড়াতাড়ি কল বেক করল ।
মিসেস এনজেলা দ্রুত ফোন রিসিভ করে উদ্বিগ্ন কন্ঠে বললেন ,
-আদিল তুমি কোথায় ছিলে এতো কল করলাম ?
আদিল স্বাভাবিক গলায় বলল ৷,
-আমি মিটিং এ ছিলাম মম , ফোন সাইলেন্ট ছিল । বাসায় সব কিছু ঠিক আছে তো মম ?
মিসেস এনজেলা শান্ত কন্ঠে বললেন ,
-হ্যাঁ , হ্যাঁ সব ঠিক আছে , তবে……
আদিল অস্থির হয়ে বলে উঠল ,
-তবে কি মম কি হয়েছে , আনি ঠিক আছে তো ? ওকে অনেক বার কল করলাম কিন্তু রিসিভ করলো না ।
মিসেস এনজেলা বললেন ,
-তোমার অফিস থেকে আসার পর থেকেই মামনি দরজা বন্ধ করে আছে , লাঞ্চ ও করেনি ।
আদিল চেঁচিয়ে বলল ৷,
-হোয়াট ? কি বলছো মম ও কখন আমার অফিসে আসল ?
মম ফোন রাখছি , আমি বাসায় আসছি ।
মিসেস এনজেলা ফোন রেখে ডিনার প্রস্তুত করতে গেলেন ।
জেনি , সাহিল , নেহাল খাবার টেবিলে বসে আছে ।
জনাব আলী মেহবুব ও আসলেন , তিনি এসেই জিজ্ঞেস করলেন ,
-এনজেলা আনিতা কোথায় ও খাবে না ?
মিসেস এনজেলা বললেন ,
-আদিল আসলে হয়তো খেতে আসবে , আদিল এসে পরবে এখনি কল করে ছিলাম ।
এরমধ্যেই কলিং বেল বেজে উঠল , মিসেস এনজেলা দ্রুত গিয়ে দরজা খুলে দিলেন ।
আদিল চিন্তিত ভাবে তাড়াতাড়ি করে উপরের সিঁড়ি দিয়ে উঠতে লাগল ।
সবাই আদিলের এরকম ভাবে চলে যাওয়া দেখল ,
জনাব আলী মেহবুব মিসেস এনজেলা কে জিজ্ঞেস করলেন ,
-এনজেলা আদিলের কি হলো ওকে এরকম টেন্স দেখাচ্ছে কেন ?
জেনি বলে উঠল ,
-আর ও এতো দ্রুত হেঁটে উপরেই বা গেল কেন ?
হঠাৎ আদিলের চিৎকার শুনা গেল , আদিল চিৎকার করে বলছে ,
-আনি ওপেন দ্যা ডোর , তোমার কি হয়েছে বলবে তো ? আনিতার কোনো সারাশব্দ পেল না আদিল ।
আদিল এর এরকম আনিতা কে ডাকায় সব এসে জড়ো হলো আনিতার রুমের সামনে ।
জনাব আলী মেহবুব আদিলের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন ,
-আদিল তোমার আর আনিতার মাঝে কি কোনো মনোমালিন্য হয়েছে ?
আদিল অস্থির হয়ে বলল ,
-না পাপা ওর সাথে তো সব কিছুই ঠিক ছিলো , বুঝতে পারছি না কেন এরকম করছে ?
জেনি মনে মনে খুশি হয়ে বলল ,
-ভালোই হলো আদিল আনিতার মাঝে যদি এখন দূরত্ব সৃষ্টি হয় , এই ফাঁকে আমি আদিলের মনে জায়গা করে নিবো ।
জনাব আলী মেহবুব আদিলের উদ্দেশ্য বললেন ,
-তোমরা তোমাদের নিজেদের ব্যাপার মিটিয়ে নাও , আমরা গেলাম । চলো সবাই ,
সবাই চলে গেল ডিনার করতে , আদিল আনিতা কে ডেকেই যাচ্ছে ।
আনিতা চুপ করে বেডে বসে আছে , তার আদিলের সামনে যেতে ভালো লাগছে না ।
এবার আদিল প্রচন্ড রেগে গর্জে উঠে বলল ,
-আনি তুমি দরজা খুলবে কি না বলো ? যদি এখন না খুলে দাও তাহলে খুব খারাপ কিছু ঘটবে ।
আদিলের রাগ দেখে আনিতা দরজা খুলে দিতে বাধ্য হলো , দরজা খুলতেই আদিল দ্রুত রুমে ঢুকল । ঢুকেই আনিতার দিকে রক্তচুক্ষু করে তাকিয়ে রাগি গলায় বলে উঠল ,
-এই মেয়ে তোমার কি হয়েছে , এতক্ষণ ধরে ডাকছি শুনতে পাওনি ? আমাকে চিন্তায় রাখতে তোমার খুব মজা লাগে না ?
আনিতা কিছু বলল না , অন্য মনস্ক হয়ে বেডে গিয়ে বসে পরল ।
আনিতার এমন বিহেভ আদিল মানতে না পেরে চিৎকার করে বলল ,
-তুমি কথা বলছো না কেন , আমার কথা কি কানে যায় না ?
আনিতা মৃদু গলায় বলে উঠল ,
-আমার কথা বলতে ইচ্ছে করছে না ।
আনিতার এমন নিরব গলা শুনে আদিলের রাগ পুরে গেল , রাগ পুরে গিয়ে আদিলের মনে জন্ম এক রাশ ভয় । আনিতার কন্ঠ আদিলের কাছে অন্যরকম শুনালো ।
আদিল আনিতার কাছে হাঁটো গেড়ে বসে আনিতার হাত ধরে শান্ত কন্ঠে বলল ,
-তোমার কি হয়েছে আনি , মন খারাপ কেন ?
আনিতা আবারও আস্তে করে বলল ,
-কই না তো আমার কিছু হয়নি , আর মনও খারাপ না ।
আমার অফিসে কেন গিয়েছিলে আনি , আর দেখা না করে চলে আসলে কেন ?
আনিতা তাচ্ছিল্যের সুরে বলে উঠল ,
-আপনার অফিসে না গেলে তো জানতেও পারতাম না “আপনি যে আমায় ভালেবাসেন না” । আমাকে শুধু রাদিফ ভাইয়া আর জেনির উপর জেদ মেটাতে বিয়ে করছেন ।
আদিল বিস্মিত গলায় বলল ,
-তুমি কি সব বলছো আনি , আমি জেদ মেটাতে তোমাকে বিয়ে করেছি ?
আনিতা রাগে দাঁড়িয়ে গেল , দাঁড়িয়ে চাপা চিৎকার দিয়ে বলল ,
-তা নয়তো কি মি.আদিল মেহবুব ? আপনি আমায় ভালবাসেন না , আজ জানলাম ।
কথা বলার মধ্যে আনিতার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরল । আনিতার চোখে জল দেখে আদিলের বুকে তোলপাড় শুরু হলো । তাই হ্যাচকা টানে আদিল তার বুকের সাথে আনিতা কে মিশিয়ে নিলো ।
আনিতার কান্নার বেগ আরো বেড়ে গেল । আদিল আনিতার কপালে কয়েকটা ভালবাসার পরশ এঁকে দিল , তারপর ধীর কন্ঠে আদিল জিজ্ঞেস করল ,
-তুমি কি এমন শুনলে আনি যার জন্য বুঝে গেলে আমি তোমায় ভালবাসি না ?
আনিতা কান্না মাখা গলায় বলল ,
-রাদিফ ভাইয়া আমাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন এই বিষয়ে আমি কিছুই জানতাম না আজ জানতে পারলাম । জেনি আমার আর রাদিফ ভাইয়ার একটা ফটোও পাঠিয়ে ছিল আপনার কাছে তাও আমি জানি না । এগুলো দেখে আপনি রাগে আমাকে বিয়ে করেছেন মাত্র , কোনে ভালবাসায় না ।
আদিল আনিতা কে বেডে বসালো , তার পাশে আদিল ও বসল । আদিল আনিতা কে বলল ,
-আনি যে কোনো বিষয় পুরোপুরি না জেনে ভুল বোঝা উচিত না । রাদিফের মা কে মম না করে দিয়িছিলেন বিয়ের ব্যাপারে , তোমাকে না জানিয়ে।
সে কথা শুনে রাদিফ ভার্সিটি গিয়েছিল তোমাকে এটা জিজ্ঞেস করতে যে তুমি কি তাকে বিয়ে করবে কি না ? আর সেদিনই জেনি তোমার আর রাদিফের ফটো আমাকে পাঠায় , আমি বুজতে পারি এটা জেনির কারসাজি । তাই তার চালে পা না দিয়ে আমি তোমাকে বিয়ে করে নেই , যাতে ও বুজে আদিল মেহবুব তার ভালবাসা কে অবিশ্বাস করে না । আমার অফিসে রাদিফ আজকে এসেছিল , জিজ্ঞেস করছিল তোমাকে এরকম হুটহাট বিয়ে করার কারণ কি ? সংক্ষেপে তাকে বুঝিয়ে দিলাম কেন হুটহাট বিয়ে করলাম । তুমি সবটা না বুঝে আমাকে ভুল বুঝে গেলে ।
আনিতা মিইয়ে যাওয়া গলায় বলল ,
-আপনি আমাকে এসব আগে জানালেই তো পারতেন তাহলে তো আমি ভুল বুঝতাম না । আমার রাগ হয়েছে এ কথা ভেবে আপনি মনে হয় আমাকে ভালবাসেন না তাইতো সব কথা গোপন করে গেলেন ?
আদিল মুচকি হেসে বলে উঠল ,
-আমি চাই নি পাগলি তুমি এসবে জড়িয়ে মন খারাপ করো , তাই তোমাকে বলিনি ।
শুনো আনি ভালোবাসা বলে বা কয়ে বুঝানোর জিনিস না , “ভালবাসা মন দিয়ে উপলব্ধি করতে” হয় । ভালবাসা শুধু মুখে বললেই ভালবাসা হয় না, প্রকাশ করেও ভালবাসা হয় না “ভালবাসা কেবল হৃদয়ের ব্যাপার “।
আনিতা তার ভুল বুঝতে পেরে আদিলের দিকে তাকিয়ে নিচুস্বরে বলল ,
-আই এম সরি , আর এরকম করবো না ।
আদিল মুখ গুমরা করে বলে উঠল ,
-তোমার সরি একসেপ্ট করব না , তুমি আমায় কষ্ট দিয়েছে ।
আনিতা পরলো মহামুসকিলে আদিল তো বেঁকে বসল , আনিতা বাচ্চা বাচ্চা ফেইস করে বলল ,
-বললাম তো সরি আর হবে না । কি করলে আপনি আমার সরি একসেপ্ট করবেন বলুন ?
আদিল যেন এমন কিছুই চাইছিল , আদিল বাঁকা হেসে বলল ,
-আগে রুমে চলো , আমি ফ্রেশ হয়ে গেলে বলব ।
আনিতা ভ্রু নাচিয়ে সন্দীহান গলায় বলে উঠল ,
-কি বলবেন যা এখন বলতে পারবেন না , ফ্রেশ হয়ে বলবেন ? আদিল আবারও বাঁকা হাসি ঠোঁটে রেখে বলল ,
-কি আর করবো রোমান্স করবো , বলেই চোখ টিপ মারল ।
আনিতা লজ্জায় মাথা নিচু কর নিলো , তার চোখ মুখ লজ্জায় লাল রাঙা হয়ে উঠল ।
আদিল আনিতার লজ্জা পাওয়া দেখে মাদক গলায় বলল ,
-জানো মিসেস মেহবুব লজ্জা পেলে তোমাকে খুব সুন্দর দেখায় , ইচ্ছে করে খেয়ে ফেলি ।
আনিতা মুখ টিপে হেসে বলে উঠল ,
-দুর কি বলেন আপনার যতো আজগুবি কথাবার্তা ৷
চলোন তো রুমে চলেন রাত অনেক হয়েছে,ফ্রেশ হয়ে ডিনার করবেন । আদিল আনিতা রুমে গিয়ে দুজনেই ফ্রেশ হয়ে নিচে গেল ডিনার করার জন্য ।
সবাই ডিনার করে অনেক আগেই যে যার রুমে চলে গেছে । আনিতা ফ্রিজে রাখা খাবার গুলো ওভেনে গরম করে এনে টেবিলে রাখল ।
আদিল বলল ,
-আনি আমাকে খাইয়ে দাও তোমার হাত দিয়ে ।
আনিতা মুচকি হেসে বলল ,
-কেন আপনি নিজ হাতে খেতে পারেন না ?
আদিল হাল্কা হেসে বলে উঠল ,
-পারি তো , কিন্তু আজ আমার বউয়ের হাত দিয়ে খেতে ইচ্ছে করছে । যদি আমাকে খাইয়ে দাও তাহলে তোমার সরি একসেপ্ট করবো ।
আনিতা আর কিছু না বলে আদিল কে খাইয়ে দিচ্ছে , আদিল মিটিমিট হাসছে আনির নার্ভাস অবস্থা দেখে । জেনি উপর থেকে দেখে রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে মনে মনে বলল ,
-তাহলে দূরত্ব সৃষ্টি হয়নি , আরো পিরীতি বাড়ছে ? যতসব আধিক্যেতা , বলেই হনহন করে ওর রুমে চলে গেল ।
আদিল , আনিতা খাওয়া শেষ করে রুমে চলে গেল।
রাতে প্রতিদিনকার মতোই আদিল আনিতা কে বুকে নিয়ে শুয়ে পরল । আনিতা কে বুকে না নিলে যেন রাতে আদিলের ঘুম আসে না । আনিতাও আদিলের বুকে পরম শান্তিতে ঘুমিয়ে গেল । আদিল , আনিতার মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে কপালে ঠোঁট ছুয়ে দিল ।

সকালে ৯ টার দিকে আনিতার ঘুম ভাঙল , ভাঙতেই আদিলের দিকে চেয়ে মিষ্টি একটা হাসি দিল । আদিলের কপালে ভালবাসার পরশ এঁকে দিয়ে বেড থেকে উঠে পরল । আদিল মুচকি হাসল , আনিতার ছোঁয়া পেয়ে ।
আজ আনিতা আদিল কে না ডেকে ফ্রেশ হয়ে নিচে যাওয়ার জন্য রুম থেকে বাহির হলো । আনিতা কয়েক সিঁড়ি নামতেই হঠাৎ কারো ধাক্কায় সিঁড়ি থেকে পরে গেল । আনিতা দেখতে পায়নি কে ধাক্কা দিলো , আনিতার মাথা ফেটে অঝর ধারায় রক্ত বের হচ্ছে। আনিতা মাথায় হাত দিতেই দেখল তার হাত রক্তে লাল হয়ে গেছে , রক্ত দেখে আনিতা ভয়ে আদিলের নাম ধরে চিৎকার দেয় , তারপরই জ্ঞান হারায় । (চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here