তার_শহরে পর্ব ২১

0
499

#তার_শহরে

পার্ট : ২১

লেখা :ইসরাত সিনহা

-সকাল বেলা আদিলের রুমে আসার কারণ তোমাকে একটা কথা বলতে এসে ছিলাম …!

আমি ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলাম ,
-কি বলতে এসেছ জেনি ? জেনি স্বাভাবিক গলায় বলল ,
-আসলে গতকাল তোমাদের বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারিনি , তার জন্য আই এম সরি । গতকাল আমার এক বন্ধুর বার্থডে পার্টি ছিল তো , তাই সেখানে চলে গিয়ে ছিলাম ।
জেনির কথা শুনে চাপা হেসে বললাম ,
-ইট’স ওকে জেনি এটা কোনো ব্যাপার না , এরজন্য সরি বলতে হবে না । আমি মাইন্ড করিনি ,
জেনি হাল্কা হেসে আমাকে বলল ,
-তোমাদের ম্যারিড লাইফে কংগ্রেস । ওর বলা কথায় কেমন যেন একটা রহস্যের গন্ধ পাচ্ছিলাম ।
এ কথা বলেই জেনি যখন রুমের বাহিরে চলে যাবার জন্য পা বাড়াল , তখনি আমি ওকে পিছনে ডাক দিলাম ,
-জেনি এক মিনিট শুনো ,
জেনি পিছন ঘুরে আমার দিকে জিজ্ঞাসা চোখে তাকাল ,
আমি মৃদু হেসে বললাম ,
-তুমি একটা কথা ভুল বলেছো । জেনি প্রশ্নবিদ্ধ গলায় বলে উঠল ,
-কোন কথা ভুল বললাম আনিতা ?
আমি হাল্কা কেশে বললাম ,
-ওই যে বললে আদিলের ঘর এ কথা , এই রুম এখন একা উনার না , তুমি হয়তো ভুলে গেছ এখন আমরা হাসবেন্ড , ওয়াইফ । সো তোমাদের রুম বলবে ।
জেনি যেন আমার কথায় তেলে বেগুনে জ্বলে উঠল। আমার কথাটা হয়তো মানতে পারেনি , রুুক্ষ গলায় বলল ,
-বাহ! আনিতা বিয়ের এখনো পুরোপুরি একদিন হলো না , আর অমনি শুরু করে দিয়েছো আমাদের , তোমাদের ? তাহলে তো কয়েকদিন পর বলবে ,
-আদিলের সব প্রোপার্টি তোমার করে নিতে চাও ?
জেনির বলা কথায় আমি বাকরুদ্ধ শ্রোতা হয়ে গেলাম ।
আমি কি বলতে চাইলাম আর ও কি বললো ? নাহ আর নিরব থাকা যায় না , আজ এই নোংরা মনের মেয়েটিকে ডিটারজেন্ট ছাড়াই ধুয়ে দেবও । পেয়েছে কি আমি কি ওর মতো লোভী নাকি ?
জেনি ঠাট্টার সুরে আবার বলল ,
-কি হলো আনিতা কথা বলছো না যে , কি বা আর বলবেই যা সত্যি তাই তো বললাম ।
আমি আর চুপ থাকতে পারলাম না , ঝাঁজালো গলায় বলে উঠলাম ,
-সব কে নিজের মতোই ভাবো, না জেনি ? আসলে যে যেরকম তার অন্যের প্রতি ধারণাটাও থাকবে সে রকম । তোমার তো দেকি সেই প্রথম দিন থেকেই উনার প্রোপার্টি নিয়ে মাথা ব্যাথা , কেন জেনি ?
একটা কথা কান খুলে শুনে রাখও জেনিফার, আমার উনার প্রোপার্টির প্রতি কোনো লোভ নেই , আমি কোনো ভিকারির মেয়ে নয় । আমার বাবার যথেষ্ট টাকা পয়সা রয়েছে , তোমার মতো তিন , চার জন জেনি সারা জীবন বসে খেতে পারবে ।
জেনি রাগে গজগজ করতে করতে বলল
-তা তোমার বাবার যখন এতো টাকা তো কানাডার ভার্সিটির হোস্টেল এ থেকে পড়ালেখা করলেই তো পারতে , এ বাসায় উঠে ছিলে কেন ? আদিল কে পটিয়ে ওর সব কিছু হাতিয়ে নেওয়ার জন্য ?
জেনির যুক্তিহীন কথা শুনে আমার গা পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে যেন , নিজেকে অনেকটা স্বাভাবিক রেখেই বললাম ,
-কানাডায় আমি নতুন । তেমন কিছু চিনতামও না
তারজন্য মামার বাসায় উঠা । কিন্তু এখানে বিনা পয়সায় থাকছি না জেনি , বাবা প্রতি মাসে মামার একাউন্টে টাকা ট্রান্সফার করে দেন । মামা-মামি নিতে চাননি , বাবা জোর করেই দিচ্ছেন । আর রইল আমার হাত খরচের টাকা , আমি বালিশের নিচ থেকে আমার ক্রেডিট কার্ড জেনি কে এনে দেখালাম । দেখিয়ে বললাম , জেনি আমি আমার ক্রেডিট কার্ড থেকেই টাকা খরচ করি , আনিতা আহমেদ কারো টাকায় চলে না । আনিতা আহমেদের বাবা’ই আনিতা আহমেদের জন্য এনাফ ।
জেনি খানিকটা লজ্জা পেল তার এমন যুক্তিহীন কথায় , তাই আর কোনো কথা না বারিয়ে আমার রুম থেকে হনহন পায়ে চলে গেল । আমার আজ খুব ভালো লাগছে ওই মেয়েকে ধুয়ে দিতে পেরে । নিজে কে ভাবে কি ও , সারাক্ষণ আমার পিছে লেগে থাকে । আমি সবই বুঝি জেনিফার তুমি কেন এতো লেগে থাকো আমার পিছনে ? আনিতা রহস্যময়ী হাসি ঠোঁটের কোণে ঝুলিয়ে রেখে বলল ,
-জেনি তুমি যা-ই করো না কেন , আমিও অতো সহজে হেরে যাওয়ার মেয়ে না , আমি মিসেস আদিল মেহবুব ।
এরমধ্যে আদিল মুচকি হেসে রুমে ঢুকল ,
আমি উনার হাসার কারণ টা ঠিক বুঝলাম না , আমি উনাকে আস্তে করে বললাম ,
-আপনি কই গিয়ে ছিলেন , এতক্ষণ দেখলাম না যে ?
উনি আমাকে পিছন দিক দিয়ে জড়িয়ে ধরলেন ।
আর কানে কানে বললেন ,
-মিস করছিলে বুঝি ?
আমি কেঁপে উঠা গলায় বললাম ,
-কি শুরু করলেন সকাল বেলা , ছাড়ুন তো ভার্সিটির যাবো লেট হয়ে যাবে ।
আমার কথা যেন উনার কান অব্দি গেলনা , উনি আমার চুলে মুখ গুজে নেশা জড়ানো কন্ঠে বললেন ,
-আজ ভার্সিটি না গেলে হয় না মিসেস মেহবুব ? উনার স্পর্শে আমি চোখ বুজে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠলাম ,
-জি না আমার যেতে হবে , ইম্পর্ট্যান্ট ক্লাস আছে তো । আর আপনার তো অফিস আছে যাবেন না ?
অফিসের কথা বলতেই উনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন ,
-হ্যাঁ , আনি আমার তো আজ একটা মিটিং আছে , তুমি রেডি হয়ে নাও । আমিও রেডি হচ্ছি তোমাকে ভার্সিটি ড্রপ করে দিয়ে যাবনে ।
উনি যখন ওয়াশরুমে ঢুকতে যাবেন তখন আমি পিছনে ডাক দিলাম ,
-“এই যে শুনছেন ” ?
উনি মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে এসে আমার সামনে জিজ্ঞাসা দৃষ্টিতে তাকালেন ,
নিচের দিকে তাকিয়ে উনাকে মৃদুস্বরে বললাম ,
-আপনি রুমে ঢুকে মুচকি হাসলেন কেন ?
উনি খানিকক্ষণ কি যেন ভাবলেন , ভেবে বললেন ,
-তোমার কি কারণ টা এখনি জানতে হবে নাকি পরে জানলে হবে ?
“মানুষ মাত্রই কৌতূহলী ” আমিও আমার কৌতূহল ধমিয়ে রাখতে না পেরে বললাম ,
-এখনি জানতে চাই , যদি বলি পরে তাহলে আপনার মনে থাকবে না কাজেই এখন বলুন ।
উনি আমার কপালে একটা চুমু এঁকে দিলেন , আমাকে অবাক করে দিয়ে পাঁজো কোলে তুলে বেলকোনির দিকে হাঁটা শুরু করলেন ।
আমি বুঝলাম না উনার এমন কান্ডের মানে কি ? উনার দিকে প্রশ্ন বোধক চোখে চেয়ে রইলাম ।
উনি আমার দিকে তাকিয়ে হাল্কা হেসে বলে উঠলেন ,
-নিচে বাগানের দিকে তাকাও আনি ।
উনার কথায় আমি এক মিনিটও লেট না করে বাগানের দিকে তাকালাম । তাকিয়ে কিছুটা অবাক হলাম , কারণ সেখানে জেনি রাগি মুখ করে একমনে পায়চারি করছে । জেনির এমন রাগের মানে আমার জানা ।
তাই জেনির দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে উনার দিকে তাকালাম ।
উনি হেসে আমার কপালে কপাল ঠেকিয়ে বললেন ,
-মিসেস মেহবুব কিছু বুঝলেন ?
আমার গলা দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না , উনার নিঃশ্বাস আমার চোখে মুখে আঁচড়ে পরছে , উনি আমার একদম কাছে চলে এসেছেন । যার জন্য উনার নিঃশ্বাস এর শব্দও শুনতে পারছি , অন্যরকম এক অনুভূতি অনুভব করছি । আমি উনার গলা শক্ত ভাবে জড়িয়ে ধরলাম , উনি ঘোর লাগা চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন ।
আমিও উনার সবুজ চোখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম , উনার সবুজ রংয়ের চোখ দুটো যেন অামায় টানছে খুব করে ।
হঠাৎ দরজায় নখ হওয়ার আওয়াজে আমি ধড়ফড়িয়ে উঠলাম ।
উনি সাথে সাথে আমাকে উনার বুকে চেপে ধরে উতলা গলায় বলে উঠলেন ,
-তুমি ঠিক আছো আনি ? ভয় পেয় না পাগলি, নেহাল এসেছে । তুমি এতো ভয় পাও কেন সব কিছুতে ? বলেই উনি রুমের দিকে আসতে লাগলেন ।
আমি চোখ বন্ধ করে আছি , হঠাৎ আওয়াজ হওয়ায় ভয় পেয়ে গেছিলাম ।
আমাকে কোলে করেই উনি দরজার কাছে গিয়ে নেহাল কে ভেতরে আসতে বললেন ।
নেহাল ভেতরে আসবে শুনে আমি কোল থেকে নামানোর জন্য ছটফটানি শুরু করলাম ।
উনি দুষ্টমি হাসি দিয়ে বললেন ,
-আরে তুমি এতো লাফাচ্ছো কেন , নেহালই তো। দেখলে দেখবে আমি আমার বউকে কোলে নিয়েছে অন্যকাউকে তো না । এখানে লজ্জার কি আছে মিসেস মেহবুব ? উনার সাথে কথায় পারা যায় না তাই চুপ করে রইলাম ।
নেহাল বাহির থেকেই বলল ,
-ভাইয়া তুমি আর আপু নাস্তা করতে নিচে যাচ্ছো না দেখে ডাকতে আসলাম , তোমারা ফ্রেশ হয়ে গেলে নিচে নাস্তা করতে চলে এসো । সবাই ওয়েট করছে ।
আদিল নেহাল কে বলল ,
-ওকে আমরা আসছি , তুই যা ।
নেহাল চলে যেতেই উনি আমাকে কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে বললেন ,
-জেনি কে সব সময় এরকম মুখের উপর উচিত জবাব দেবে , যেরকম টা আজকে দিয়েছ । তাহলে ও আর এরকম অহেতুক কথা শুনাতে আসবে না ।
যে যেরকম তার সাথে তেমন বিহেভ করতে হয় , কাঁটা দিয়ে একমাত্র কাঁটাই তুলা যায় মিসেস মেহবুব । আমি আড়ালে দাঁড়িয়ে তোমার আর জেনির সব কথোপকথন শুনেছি । “ও ভালো ব্যবহারের দাম দিতে জানে না , ভালো ব্যবহার করলে দূর্বল ভাবে” ।
উনার কথায় শুধু মৃদু হাসলাম , হেসে বললাম ,
-আপনি কি এরজন্যই মুচকি হাসছিলেন ?
উনি আমার গাল টেনে দিয়ে বলে উঠলেন ,
-হ্যাঁ , ‘গো’ আমার আদুরী মাখা বউ । লেট হয়ে যাচ্ছে তো তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিচে চলো সবাই ওয়েট করছে ।
কিছুক্ষণ পরে আমরা রেডি হয়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছি , নামার সময় খেয়াল করলাম জেনি বাঁকা চোখে আমার দিকে আর উনার দিকে তাকালও ।
সাহিল ভাইয়াও একবার তাকিয়ে আবার নিচের দিকে চোখ নামিয়ে নিলেন ।
নিচে নেমে মামিমা আর মামা কে সালাম করলাম ,
মামা আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন ,
-তোমরা সুখী হও মা দোয়া করি , আজ থেকে তুমি আমার ভাগ্নি নয় আমার মেয়ে ।আনিতা এখন থেকে তুমি আমাকে পাপা বলে ডাকবে ঠিকছে ?
আমি হেসে মামা কে জড়িয়ে ধরে বললাম ,
-ঠিক আছে পাপা , আজ থেকে আমি তোমার বড় মেয়ে । সাহিল ভাইয়ার বউ হবে মেজে মেয়ে আর নেহালের বউ হবে তোমাদের ছোট মেয়ে ।
মামিমা মুখ গুমরা করে অভিমানী কন্ঠে বলে উঠলেন ,
-হ্যাঁ , আমি তো মামনির কিছুই না , আমি মামিমা’ই রয়ে গেলাম !
আমি মামা কে ছেড়ে মামিমা কে জরিয়ে ধরে বললাম ,
-কে বলেছে আপনি আমার মামিমা ? আপনি তো আমার মম ।
মামিমা খানিক রেগে বললেন ,
-আমি যেহেতু তোমার মম তাহলে আপনি বলে সম্মোধন করছো কেন ? তুমি করে বললেই আমি খুশি হবো মামনি ।
হেসে বললাম ,
-ওকে মম তুমি যা বলবে তাই হবে ।
মামিমা খুশি হয়ে আমার কপালে চুমু খেয়ে বললেন ,
-দোয়া করি মা তুমি আর আদিল যেন সুখে থাকাে ।
জেনি রাগে ফেটে পড়ছে , আনিতা কে সবাই ভালোবাসে এটা জেনি সহ্য করতে পারছে না ।
আনিতার দিকে রাগের চোখে তাকালো , তাকিয়ে আবার খাওয়ায় মন দিলো ।
নেহাল মাঝকানে বলে উঠল ,
-দূর , তবে তো আপু কে আর ভাবি ডাকতে পারব না । ভেবে ছিলাম মাঝে মধ্যে আপু কে ভাবি ডাকব , কিন্তু এখন তো আপু বড় আপু হয়ে গেল !
আনিতার দিকে চেয়ে বলল , আপু তুমি কি এখন আমায় শাসনও করবে ?
নেহালের কথায় আমি না হেসে পারলাম না , এই ছেলেটা মাঝে মাঝে বাচ্চাদের মতো কথা বলে ।
হাসি থামিয়ে বললাম ,
-হুম , শাসন তো করবোই , কথা না শুনলে মাইরও দিতে পারি ।
আনিতার কথা শুনে আদিল হেসে বলে উঠল ,
-আনির মাইর তোর জিম করা বডির জন্য কোনো ব্যাপার না , ওর আর কি শক্তি ?
কি যেন বল ছিলে নেহাল আনি কে ভাবি ডাকতে পারবি না ?
তোর যখন ইচ্ছে আনি কে ভাবি ডাকিস কারণ ও আগে তোর ভাইয়ার বউ , এরপর তোর আপু ।
জনাব আলী মেহবুব আর মিসেস এনজেলা ওদের কথাবার্তা শুনে হাসছেন ।
নেহাল আনিতার দিকে তাকিয়ে দুষ্টমি করে বলল ,
-ভাবি তুমি খাচ্ছ না কেন , আমি কি হেল্প করবো ?
নেহালের ভাবি ডাক শুনে সবাই এক সাথে হু হু করে হেসে উঠল , জেনি ছাড়া । জেনি বিরক্তি ভাব নিয়ে বসে আছে ।
জেনি মনে মনে বলছে ,
-হেসে নাও মেহবুব পরিবার মন খুলে হেসে নাও , এরপরে তোমাদের শুধু কাঁদতে হবে ।


আদিল আনিতা নাস্তা শেষ করে এক সাথে বেরিয়ে পড়ল । নেহাল চলে গেল তার কলেজে, সাহিল বাহিরে বেরিয়ে পড়ল , তার ক্লাস নেই । জেনি শয়তানি হাসি ঠোঁটে ঝুলিয়ে রুমে গেল ।
আদিল গাড়ি ড্রাইভ করছে আর আড়চোখে আনিতার দিকে তাকাচ্ছে । আজ যেন আদিলের চোখে আনিতা কে অপরূপ সুন্দরী লাগছে ।
আনিতা ডার্ক-ব্লু কালার টি-শার্ট পরছে , সাথে হোয়াইট জিন্স আর হোয়াইট স্কার্ফ গলায় ঝুলিয়ে রেখেছে । চুল গুলো রাবার দিয়ে উঁচু তে বাঁধা , পায়ে ডার্ক -ব্লু সু । ঠোঁটে পিংক কালার লিপস্টিক , এতেই আনিতা কে অনেক সুন্দর দেখাচ্ছে ।
আনিতা বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে , বাতাসের ঝাঁপটায় সামনের ছোট ছোট চুল গুলো আনিতার চোখে মুখে পরছে । আনিতা হাত দিয়ে আলতো ভাবে চুল গুলো কে কানের পিছে গুছে দিচ্ছে ।
এই দৃশ্যটা আদিল খুব উপভোগ করছে , তার কাছে এই ব্যাপার মনোমুগ্ধকর মনে হলো ।
কিছুসময় পর তাদের গাড়ি ভার্সিটির সামনে এসে থামল , থামতেই আনিতা গাড়ি থেকে নেমে পড়ল , আদিলও নামল।
আনিতা বাই বলে ভার্সিটির দিকে চলে যাচ্ছিল , তখনি আদিল, আনি বলে ডাক দিল ।
আনিতাও যেন এই ডাকের অপেক্ষায় ছিলো , আদিল ডাক দিতেই আনিতা দ্রুত এসে আদিলের সামনে এসে জিজ্ঞেস করল ,
-ডাক ছিলেন কেন ?
আদিল মুচকি হেসে আনিতার কপালে ঠোঁট ছুয়ে দিল ,
আনিতা কপালে হাত দিয়ে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলল ,
-এটা কি হলো , আপনি কি এর জন্য ডাকছিলেন ?
আদিল বাঁকা হেসে বলল ,
-তুমি তো এটা পাওয়ার জন্যই চলে গিয়েও এতো দ্রুত ফিরে এসেছো মিসেস আদিল মেহবুব ?
আনিতা লজ্জায় আদিলের দিকে তাকাতে পারছে না । লজ্জা মিশ্রিত কন্ঠে বলল ,
-আপনি যা ভাবছেন তা নয় , আমি ভেবেছি কিছু ফেলে গেছি বোধহয় । তাই আপনি ডাকছেন ।
আদিল আর কথা না বারিয়ে বলল ,
-আচ্ছা তোমার ক্লাসের লেট হয়ে যাচ্ছে , সব স্টুডেন্ট ভেতরে চলে গেছে ।
আনিতা ও তাড়া দেওয়া গলায় বলল ,
-আপনিও যান , আমি চলে যাচ্ছি ।
আদিল আনিতা দুজনেই তাদের গন্তব্যের দিকে চলে গেল ।


দুপুর ১টার দিকে আমি ক্লাস শেষে ভার্সিটির বাহিরে বেরোলোাম , বাসার উদ্দেশ্য । দেখি নেহাল দাঁড়িয়ে আছে গাড়ি নিয়ে । নেহালের কাছে যেতেই ও বলে উঠল ,
-আপু তোমার ক্লাস শেষ ? ভাইয়া ফোন দিয়ে বললেন তোমাকে ড্রপ করে যেন নিয়ে যাই । ভাইয়া একটা কাজে আঁটকে গেছেন , আসতে পারবেন না।
আমি মৃদু হেসে বললাম ,
-নেহাল চলো আজ তোমার ভাইয়ার অফিস থেকে ঘুরে আসি , এখন বাসায় যেতে ভাল লাগছে না ।
নেহাল আমার কথায় সম্মতি দিয়ে বলল ,
-চলো , গাড়ি তে বসো ।

আমরা অল্প সময়ের মধ্যে এসে উনার অফিসে পৌঁছালাম । নেহাল গাড়ি পার্ক করে বলল ,
-আপু তুমি যাও, ভাইয়ার সাথে দেখা করে এসো, আমি ওয়েট করছি । আমি আর কিছু না বলে অফিসের ভেতরে ঢুকে পড়লাম। এর আগে একবার এখানে আসায় সবাই আমাকে চেহারায় হয়তো চিনে ফেলেছে , তাই হাই, হ্যালো জানালো । আমিও হাই, হ্যালো বলে উনার কেবিনের দিকে চলে গেলাম ।
উনার কেবিনের সামনে গিয়ে দেখলাম দরজা ফাঁক করা , উনার সামনে রাদিফ ভাইয়া বসে আছেন ।
ভেতরে প্রবেশ করার জন্য দরজার কাছে গিয়ে উনার আর রাদিফ ভাইয়ার কথা গুলো শুনে প্রচন্ড রাগ হলো। রাগে আর ভেতরে গেলাম না। কান্না পাচ্ছে খুব , কান্না চেপে রেখে রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে গজগজ করতে করতে উল্টো দিকে হাঁটা দিলাম ।কান্না থেকে রাগটাই বেশি হচ্ছিলো,,,, (চলবে)

/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here