তার_শহরে পর্ব ১৮

0
483

#তার_শহরে

পার্ট : ১৮

লেখা : ইসরাত সিনহা


নন স্টপলি কলিং বেল চেপেই চলছে , পারলে যেন দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে যাবে এমন লাগছে । মিসেস এনজেলার কাছে ব্যাপারটা খুব বিরক্তিকর তাই তিনি কপাল কুচকে রইলেন ।



খানিক বাদে বাসার কাজের লোক দরজা খুলে দিলো । দরজা খুলতেই আদিল ঝাঁজালো গলায় কাজের লোককে বলল ,
-দরজা খুলতে এতো সময় লাগে কেন , কখন থেকে দাঁড়িয়ে আছি । কাজের লোকটা আদিলের এমন রাগ দেখে আমতা আমতা করে বলল ,
-কিচেনে কাজে ব্যস্ত ছিলাম স্যার , শুনতে পাইনি ।
আদিল খরা কন্ঠে শাসিয়ে গেল নেক্সট টাইম যেন আর এরকম না হয় ।
আদিল ভয়ানক রাগ নিয়ে উপরের সিঁড়ি বেয়ে উঠছে । কাজের লোক এখনও আদিলে যাওয়ার পথে চেয়ে আছে , আর নিজ মনেই বলল ,
-আজ আদিল স্যার ভয়ানক রকম কেঁপে আছেন , না জানি এই ঝড় কার উপর দিয়ে যাবে ?
কলিং বাজা বন্ধ হতেই জনাব আলী মেহবুব বললেন ,
-বলো জেনি কি বলতে চেয়েছিলে তোমরা ?
জেনিই প্রথমে বলল ,
-আংকেল সাহিল একজন কে ভালবাসে । মিসেস এনজেলা একটু বিরক্তিকর ভাবে বলে উঠলেন ,
-এ আর নতুন কি জেনি ? সাহিলের তো অনেক গার্লফ্রেন্ড থাকে এক সাথে , তা আমাদের কারো অজানা নয় ! সাহিল থতমত গলায় বলল ,
-না , মম এবার আমি সত্যি সত্যি ভালবেসেছি ওকে।
সাহিলের মম-পাপা বললেন , তাহলে একদিন মেয়েটা বাসায় নিয়ে আসিস ।
এরমধ্যেই জেনি আগবাড়িয়ে বলে উঠল ,
-মেয়েটি আর কেউ নয় আ…..
জেনির কথা অসম্পূর্ণ থেকে গেলে , আদিল চিৎকার দিয়ে আনিতা কে ডাকছে ।
আদিলের এমন হুটহাট চিৎকারে মিসেস এনজেলা আর জনাব আলী মেহবুব ঝড়ের গতিতে রুমের বাহিরে এলেন । সাহিল , জেনি শয়তানি হাসি দিল একজন অন্যজনের দিকে তাকিয়ে ।
আদিল আনিতার দরজায় জোরে জোরে করাঘাত করছে , দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করা ।
আদিল কে আনিতার দরজায় দেখে মিসেস এনজেলা ভয় পেয়ে গেলেন , নিশ্চয়ই খারাপ কিছু ঘটবে আজ আদিল ভয়ংকর ভাবে রেগে আছে ।
জনাব আলী মেহবুব আদিলের কাছে যেয়ে জিজ্ঞেস করলেন ,
-কি হয়েছে আদিল , তোমাকে এতো হাইপার দেখাচ্ছে কেন ? আদিল তার পাপার প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে , আবার আনিতা কে ডাক দিল ।
আনিতা ওয়াশরুমে থাকায় আদিলের ডাক শুনতে পায়নি , যখন বের হলো তখন শুনতে পেলও আদিলের গলা ।
আদিল ভাইয়ার গলা শুনে ভয়ে কয়েকটা শুকনো ঢুক গিললাম , না জানি আবার কি করে বসেন ?
শুনতে পেলাম আদিল ভাইয়া ডাকছেন আমার নাম ধরে । উনার কন্ঠে ছিল তীব্র রাগ । দরজা খুলার সাহস পাচ্ছি না । মামা-মামিমার কন্ঠও কানে আসলো সাথে । ভাবছি উনি কি জেনে গেলেন আমার রেস্টুরেন্টে যাওয়ার কথা ? ভয়ে আমার হৃৎপিণ্ড ট্রেনের গতিতে ছুটছে । যেন এখনি ধম আঁটকে শ্বাস রূদ্ধ হয়ে মারা যাবো ।
ওপাশ থেকে দরজা খুলার জন্য উনি আবার ডাক দিলেন । প্রচন্ড ভয় নিয়ে দরজা খুলার জন পা এগিয়ে গেলাম , ভয়ে পা যেন জমে গেছে । হাঁটার শক্তি পাচ্ছি না , পায়ের মধ্যে কাঁপন ধরে গেছে ।
দরজার কাছে গিয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে দরজা খুলে দিলাম । দরজা খুলতেই আদিল ভাইয়া হাওয়ার গতিতে ভেতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলেন । উনার এভাবে দরজা বন্ধ করায় আমি বিষণ ভয় পেয়ে গেলাম । দরজা বন্ধ করে উনি আমার দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকালেন , আমি তো উনার চোখ দেখেই ভয়ে থরথর করে কাঁপছি ।
উনি কিছু না বলেই আমাকে হ্যাচকা টান দিয়ে উনার বুকে শক্ত করে জরিয়ে ধরলেন , যেন ছেড়ে দিলেই হারিয়ে যাব । আমার সদ্য শাওয়ারের পানিতে বিজানো চুলে অজস্র চুমু খেয়ে চলছেন ।
উনার স্পর্শে আমি কেঁপে উঠছি , উনার পরনের স্যুট এক হাত দিয়ে আঁকড়ে দাঁড়িয়ে রইলাম । আদিল ভাইয়ার এমন কান্ডের মানে কিছুই বুঝলাম না , আমি উনার স্পর্শ গুলো শুধু অনুভব করছি ।
দরজার বাহিরে মামিমা করুন কন্ঠে আদিল ভাইয়া কে বললেন ,
-আদিল বাবা প্লিজ মামনি কে কোনো শাস্তি দিয়না।
কি হয়েছে আমাদের কাছে বললেও না ।
জনাব আলী মেহবুব ও আদিল কে দরজা খুলার জন্য রিকোয়েস্ট করছেন , কিন্তু আদিলের কোনো ভাবান্তর নেই এতে । সাহিল , জেনিও সেখানে উপস্থিত হলো । সাহিল , জেনিকে ফিসফিসিয়ে বলল ,
-সিস তোমার প্ল্যান কাজ করছে বোধ হয় , ভাইয়া যা রেগে গেছে । আজ তো আনিতার রক্ষা নেই ভাইয়ার হাত থেকে ।
জেনিও বিশ্ব জয় করার মতো হাসি দিয়ে বলল ,
-আগে আগে দেখো ইয়ার কিয়া হ তা হে ।



হঠাৎ করেই আদিল ভাইয়া উনার বুক থেকে ধাক্কা দিয়ে আমাকে সরিয়ে দিলেন ।
আমি ঠাল সামলাতে না পেরে কিছু দূর ছিটকে পরলাম । ঘুরে উনার দিকে জিজ্ঞাসা দৃষ্টিতে তাকালাম ,
-উনি রাগে হুংকার ছেড়ে বলে উঠলেন ,
-তোমার সাহস কি করে হয় আনি রাদিফের সাথে ভার্সিটিতে যেয়ে কথা বলার ? শুধু রাদিফ ই নয় আরো একটি ছেলেও ছিল তোমার পাশে । রাদিফ কেন ভার্সিটি গিয়েছিল আনি ? আনসার মি .!
উনার প্রশ্ন শুনে আমি হতবিহ্বল চোখে তাকিয়ে রইলাম , উনি কি করে জানলেন রাদিফ ভাইয়া ভার্সিটি গিয়েছিলেন ?
উনি এখন যে হিংস্র বাঘের মতো কেঁপে আছেন , কিছু বললেও কাজ হবে না ।
আদিল ভাইয়া আবার আমার কাছে এসে আমার দুই বাহু শক্ত করে ধরে চেঁচিয়ে বললেন ,
-আনি তুমি বুঝনা কেন , তোমাকে কারো সাথে দেখলে আমার রক্ত গরম হয়ে যায় । আমার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দেয় , মনে হয় এই বুঝি তোমাকে হারিয়ে ফেললাম । রাগে উনার সবুজ চোখদ্বয় ঝলঝল করছে , যেন এখনি আমাকে ভস্ম করে দিবেন উনার সবুজ রংয়ের চোখ দিয়ে ।
আমি চুপ করে আছি দেখে উনি আমার বাহু ঝাঁকি দিয়ে বলে উঠলেন ,
-কথা বলছো না কেন ? রাদিফ কেন গিয়ে ছিল ভার্সিটি , তোমার সাথে দেখা করতে ?
উনার উন্মাদের মতো আচরণ দেখে আমার গলা প্রায় শুকিয়ে গেছে , কালি গলায় একটা ঢুক গিললাম । তারপর কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম ,
-রাদিফ ভাইয়া কেন গিয়ে ছিলেন তা সঠিক জানি না , তবে আমি জিজ্ঞেস করে ছিলাম আমার ভার্সিটি আসার কারণ কি ? উনি বললেন এই দিকে নাকি একটা কাজে যাচ্ছিলেন , তাই আমাকে ও দেখতে এলেন ।
আদিল ভাইয়ার রাগ কিছু নিভেছে মনে হলো , উনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন ,
-আর কি কিছু বলেছে রাদিফ ?
আমি মাথা নাড়িয়ে না , বললাম । উনি আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন ,
-তোমার পাশে যে আরেক টা ছেলে ছিল , ব্রাউন কালার চোখ , চুলটা ও ব্রাউন কালার ও কে ?
তাৎক্ষণিক ভাবে উত্তর দিলাম ,
-ও চার্লস , আমার নিউ ফ্রেন্ড । আর ওর বোন চার্লি । তারা দু’জনই খুব ভালো আর মিশুক ।
আদিল ভাইয়া রক্তচুক্ষু করে রাগি কন্ঠে বললেন ,
-তোমাকে কতবার না করেছি কোনো ছেলে ফ্রেন্ড বানাবা না ? মনে আছে এই বিষয় নিয়ে তোমার সাথে বাংলাদেশে প্রচন্ড কথা কাটাকাটি হয়ে ছিল ?
আর আমি কানাডা ফিরে আসি ।
উনার কথায় আমার অতীতে ডুব দিলাম ।
বাংলাদেশে আমার এক ফ্রেন্ড ছিল নাম রনক। ছোট থেকেই ওর সাথে বড় হয়েছি , লেখাপড়াও এক সাথেই করতাম । আদিল ভাইয়ারা যখন বাংলাদেশে যান তখন রনক একটা কাজে আমাদের বাসায় গিয়েছিল । রনক কে মামা-মামিমার সাথে পরিচয় করিয়ে দেই । আদুল ভাইয়ার সাথেও পরিচিত হলো রনক । আদিল ভাইয়া আর রনক এক সঙ্গে বসে অনেক্ষণ গল্প করলেন । এর ঘন্টা খানিক পর রনক আমাদের বাসা থেকে চলে গেল।
সন্ধ্যার পরে আমি পড়তে বসেছি , এ সময় উনি আমার রুমে ঢুকে কোনো ভাব ভঙ্গি ছাড়াই বলে উঠলেন ,
-আনি তুমি আর রনক এর সাথে মিশবে না ।
আমি চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলাম কেন মিশব না ? উনি সোজা উত্তর দিলেন ,
-রনক তোমাকে ভালবাসে , শুধু বলতে পারছে না ।
একটু রাগি ভাবে বললাম ,
-না , আদিল ভাইয়া আপনি যে ভাবে ভাবছেন ওরকম কিছু না ও আমার ভালো ফ্রেন্ড । দ্যাট’স ইট
উনি মূহুর্তেই রেগেমেগে আমার হাত চেপে ধরে বললেন ,
-আমি যা বলেছি তা চিন্তা ভাবনা করেই বলেছি । তুমি রনক এর সাথে মিশবে না এটাই ফাইনাল ।
সেদিন আমিও রাগের বসবর্তী হয়ে উনাকে অনেক কথা শুনিয়ে দিয়ে ছিলাম । যা আদিল ভাইয়া মানতে না পেরে সবাই কে দেশে রেখে উনি কানাডা ফিরে এসেছিলেন ।
তার কয়েকদিন পরই রনক আমায় প্রপোজ করে বসে , তখন বুঝি আমি ভুল ছিলাম আর আদিল ভাইয়া সঠিক । মনে মনে আদিল ভাইয়া কে সরি ও বলি । উনি হয়তো রনক এর হাবভাব বুঝে ছিলেন ।
রনক কে না করে দিয়ে ছিলাম । তাও সে অনেক জামেলা করে ।
হাতে টান পরায় আমার অতীতের ভাবনা কেটে গেল, চেয়ে দেখি আদিল ভাইয়া আমার হাত ধরে আছেন। আমি তাকাতেই উনি আমার হাত ছেড়ে দিয়ে আমার কোমড় জরিয়ে ধরলেন , আমি আবার কেঁপে উঠলাম । একদম উনার বুকের কাছে নিয়ে গেলেন আমাকে , উনার হার্টের শব্দ শুনতে পাচ্ছি। আদিল ভাইয়া এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছেন আমার দিকে।
আদিল আনিতার মুখের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল ,
-সরি , মায়াকুমারী তোমাকে অনেক কিছু বলে ফেলেছি রাগের মাথায় । তোমাকে দেখলে আমার রাগ চলে যায় , খুব স্নিন্ধ লাগছে তোমাকে । ইচ্ছে করছে আমার বুকের ভেতর লুকিয়ে রাখি তোমায় । আমি জানি জান পাখি তুমি এসবের কিছুই জানোনা , তোমাকে যে বা যারা ফাঁসাতে চেয়েছিল তাদের আমি ছেড়ে দিবনা । তারা চেয়েছিল আমি তোমায় ভুল বুঝে দূরে ঠেলে দিব , কিন্তু তারা তো জানে না আমি আমার মায়াকুমারী কে কত টা জানি । এতো নোংরা কার কাজ হতে পারে আমি ভালো ভাবেই জানি , তার শাস্তি তো ওদের পেতেই হবে । লক্ষ্য করলাম উনার চোখে মুখে এখন আর আগের মতো রাগ নেই , উনার চোখে কি একটা যেন আছে আমায় খুব টানছে । আমার অজানতেই উনার গালে আমার হাত রাখলাম , উনি উনার একটা হাত আমার হাতের উপর রাখলেন । তারপর নেশা লাগানো কন্ঠে বললেন,
-আমায় ভালোবাস আনি ! (চলবে)

আপনাদের অনুরোধ আমি উপেক্ষা করতে পারিনি, তাই ব্যস্ততার মাঝে ও একটা ছোটকাটো পার্ট দিলাম। মানুষ মাত্রই সমস্যা ব্যস্ততা থাকতেই পারে, কাল পার্টটা ছোট হওয়ায় একজন পাঠক খুব বাজে একটা গালি দিয়েছেন কমেন্ট বক্স এ। আমি শুধু এতোটুকু বলবো কারো সমস্যার কথা না যেনে এরকম বাজে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here