তার_শহরে পর্ব ১৭

0
450

#তার_শহরে

পার্ট :১৭

লেখা :ইসরাত সিনহা




আনিতার মুখ বির্বণ হয়ে গেছে ভয়ে । তার পা অল্প কাঁপছে । আনিতা তাকানোয় চার্লস , চার্লিও তাকালো সে দিকে ..



আনিতা ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করল ,
– রাদিফ ভাইয়া আপনি এখানে ?
রাদিফ হাল্কা হেসে উত্তর দিলো ,
-তোমাকে দেখতে মন চাইছিল আনিতা , তাই চলে এলাম । খুশি হওনি ?
আনিতা নিজেকে সামলে একটু কঠিন গলায় বলে উঠল ,
– জি না রাদিফ ভাইয়া আমি খুশি হতে পারিনি । আপনি যদি আমার বাসায় দেখা করার জন্য যেতেন তাহলে খুশি হতাম ।
আনিতার এমন খরা কথা শুনে রাদিফ লজ্জা পেলও । রাদিফ নিজেই নিজেকে ধিক্কার দিচ্ছে এমন বোকামি করার জন্য । এরকম না করলে ও পারতাম , আনিতা যে কি ভাবছে আমাকে ?
রাদিফ কিছু সময় পর নিজেকে সামলে নিয়ে আনিতা কে বলল ,
– আসলে আনিতা আমি এইদিক দিয়েই যাচ্ছিলাম , ভাবলাম তোমাকে দেখে যাই ।
আনিতা বুঝতে পারছে রাদিফ অপ্রস্তুত বোধ করছে , তাই সে বলল ,
– ইট’স ওকে রাদিফ ভাইয়া , একদিন বাসায় যাইয়েন বসে গল্প করবনে । এখন আমার ক্লাস টাইম , আমি ক্লাসে গেলাম । বলেই আনিতা চার্লি আর চার্লস কে নিয়ে চলে গেলও । রাদিফ বোকার মতো দাঁড়িয়ে আছে । রাদিফ আনিতার ভার্সিটিতে আসার মূল কারণ হলো , আনিতা কে বিয়ের কথা বলা । মিসেস এনজেলা রাদিফের মা কে ফোনে না করে দিয়েছেন , আনিতা কে রাদিফের সাথে বিয়ে দেবেন না । আনিতা কে আদিল পছন্দ করে । এ কথা শুনে রাদিফ জানতে চেয়ে ছিল আনিতাও কি আদিল কে পছন্দ করে । তাই সে কথাই এখন বলতে চেয়ে ছিল । রাদিফ ভয়ে আর কিছু জিজ্ঞেস করার জোঁ পায়নি , আনিতা যে রিয়েক্ট করলো ভার্সিটি আসায় । বিয়ের কথা শুনলে তো পুরাই ধুয়ে দিবে । রাদিফ চলে এলো , আর বললো ,
– আনিতা আমার নই , সে আদিল মেহবুবের হবে । আনিতা এমন এক প্রকৃতির মেয়ে যে কেউই ওর প্রেমে পরে যাবে । সবার সাথে তার অমায়িক ব্যবহার , নম্র, ভদ্র। কথাবার্তার মাঝে কোনো অহংকারের লেশমাত্র নেই , এমন মেয়েতো প্রত্যেক ছেলেই আশা করে । আমিও করে ছিলাম , কিন্তু সে তে আমার হবে না । আনিতা যার কাছে ভালো থাকবে তার কাছেই থাক । আদিলের কাছে যে , ভালো থাকবে তা নিশ্চিত ভাবে বলা যায় । আদিল রাগি হলেও মনটা সচ্ছ কাচের মতো পরিষ্কার ।



চার্লস ক্লাসে এসে আনিতা কে জিজ্ঞেস করল ,
– আনিটা ছেলে টা কে ?
আনিতা আপন মনে বলল ,
– আমার মামাতো ভাইয়ের বন্ধু । এরমধ্যে চার্লি বলে উঠল ,
-আনিটা ছেলেটা খুব সুন্দর , খুব স্মার্ট ও বটে ।
আনিতা মৃদু হেসে বলল ,
– কি ব্যাপার চার্লি প্রেমে পরে গেলে নাকি ? লক্ষ্য করলাম , মূহুর্তেই চার্লির ফর্সা মুখকানা লজ্জায় লাল বর্ণ ধারণ করল । তাই চার্লি কে আরেকটু লজ্জা দেওয়ার জন্য বললাম , তাহলে তুমি রাদিফ ভাইয়ার প্রেমে পরেই গেছ । আমার কথা শুনে চার্লি কিছুটা লজ্জা মিশ্রিত কন্ঠে বলল ,
– আরে না আনিটা তেমন কিছু না । তুমি বেশি বেশি ভাবছো ।
চার্লস সন্দেহ গলায় বলল ,
– আনিটা ওই রাদিফ এমনি এমনি তোমার সাথে ভার্সিটিতে দেখা করতে আসেনি ।
চার্লস এর কথায় আমি অবাক হলাম , চার্লস এর দিকে জিজ্ঞাসা দৃষ্টিতে তাকালাম ,
– চার্লস খুব আত্মবিশ্বাস এর সহিত বলল , হ্যাঁ আনিটা রাদিফ কিছু একটা তোমায় বলতে চেয়েছিল । ওর মুখ দেখে আমার এরকমই মনে হলো । আমি কিছু বলার আগেই চার্লি বলে উঠল ,
-তুই কিভাবে এতো আত্মবিশ্বাস এর সাথে বলছিস চার্লস যে , উনি আনিটা কে কিছু বলতে এখানে এসেছিলেন ?
চার্লস চার্লি কে বলল ,
-তুই তো জানিস চার্লি আমি মানুষের চোখ, মুখ দেখে অনেক কিছু আন্দাজ করে বলতে পারি । রাদিফের চোখে মুখে কিছু একটা বলতে না পারার অস্থিরতা কাজ করছিল , সেটা আমার চোখ এড়ায়নি । চার্লি আর কোনো প্রশ্ন করলো না , চার্লস যে এ ব্যাপারে খুব পটু তার জানা আছে ।
আমি বেশ মনোযোগ দিয়ে তাদের কথাবার্তা শুনছি , রাদিফ ভাইয়া কি বলতে এসেছিলেন ? না বলে চলেই বা গেলেন কেন ? প্রশ্ন গুলো মনে মনে ঘুরপাক করছে । সত্যিই কি উনি কিছু বলতে এসেছিলেন ?



ক্লাসে এ নিয়ে আর কোনো কথা হলো না আমাদের কারো মধ্যে । ক্লাস শেষে বের হবো তখনি চার্লি বায়না করে সে বাইরে খাবে আজ । আমি অনেক বার না করলাম যাবো না , ভয় পাচ্ছি যদি আদিল ভাইয়া জানতে পারেন । তাহলে নিশ্চয়ই রক্ষা পাবনা উনার শাস্তি থেকে ? চার্লস , চার্লির জন্য যেতেই হলো ওদের সাথে । চার্লস গাড়ি নিয়ে এসেছে , ওর গাড়ি দিয়েই রেস্টুরেন্টে গেলাম ।
রেস্টুরেন্টে ঢুকে অবাক হলাম , রেস্টুরেন্ট টা অনেক সুন্দর ভাবে সাঁজানো । ভেতরে গেলাম ভেতর টা আরো পরিপাটি , আমরা তিনজন একটা গোল রাউন্ড টেবিলে বসলাম । চার্লি আমাকে জিজ্ঞেস করল ,
-আনিটা তুমি কি খাবে ?
ভাবছি কি অর্ডার করা যায় ? বেশি কিছু খেতে পারব না লেট হয়ে যাবে তাই একটা কুল কফি বললাম । চার্লস বলল ,
– জাস্ট কফি কেন আনিটা ? অন্য কিছু অর্ডার করো । হাল্কা হেসে চার্লস কে বললাম ,
-না , অন্য কিছু খাবনা । কফি হলেই চলবে ।
ওরা ভাই -বোন অনেক খাবার অর্ডার করলো , খানিক বাদে ওয়েটার খাবার গুলো সার্ভ করে চলে গেল । কফিতে চুমুক দিতেই আমার মন ভরে গেল , কফিটা অসাধারণ হয়েছে । কফি খাচ্ছি আর আমার সাইডের কাচের জানালা দিয়ে বাহিরের মানুষ জন দেখছি । চার্লস , চার্লি তারা একমনে খেয়েই যাচ্ছে। তাদের কোনো দিকে যেন তাকানোর টাইম নাই , ওরা দু’জনই খাদক টাইপের লোক । খাবার ফেলে আর কোনে হুঁশ থাকে না যেন তাদের।
কানাডার শহর টা সত্যিই খুব সুন্দর , সব কিছু কেমন যেন গোছালো । এদেশের মানুষের চিন্তা ভাবনা অনেক উন্নত , তাই তো তাদের জীবন ধারাও অন্যরকম ।
কখন যে কফি শেষ হয়ে গেছে বুঝতেই পারলাম না।
মনে মনে বললাম ,
-এখানে আবার আসব কফি খাওয়ার জন্য । কফির স্বাদটা ভুলবার মতো নয় ।
চার্লস , চার্লির খাওয়া শেষ হয়ে গেছে , তাই তাদের তাগাদা দিলাম বাসায় যাওয়ার জন্য । রেস্টুরেন্ট থেকে গাড়িতে গিয়ে বসলাম । গাড়িতে বসে ভাবছ ,
-বজ্জাত টা যদি জেনে যায় আমি এখানে এসেছি , না , না কিভাবে জানবেন আমি বললে তবেই না জানবেন ? আর আমি তো এই কথা ঘুর্নাক্ষড়েও বলব না । দূর আমি বেশিই ভাবছি অযতা ।




আদিল অফিসে জরুরি কাজ করছে , এরমাঝে ফোনে মেসেজ এর টুংটাং শব্দে তার কাজের মনোযোগ ভাঙ্গল । অনেক কানি বিরক্তি ভাব নিয়ে দেখলো , হোয়াটসঅ্যাপ থেকে আনন নাউন নাম্বারে কে একটা ফটো পাঠিয়েছে ।
আদিল কোনো চিন্তা ভাবনা ছাড়াই ফটো ওপেন করল । ফটো দেখেই আদিল চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে পড়ল , রাগে আদিলের শরীর গরম হয়ে গেছে । এসির নিচে থেকেও গামছে প্রচন্ড রাগে । রাগে তার কপালের শিরা গুলো ধপধপ করে ফোলে উঠছে ।
আদিল হাত মুষ্টি করে দেওয়ালে কয়েকটা ঘুষি মারল , এতেও যেন রাগ কমছে না । তার সবুজ চোখদ্বয় অতিমাত্রায় লাল বর্ণ হয়ে গেছে । সে কাজ ফেলে রেখে বাসার উদ্দেশ্য রওনা দিলো ।



বিকাল ৫:৩০ দিকে আনিতা বাড়ি ফিরলো । মিসেস এনজেলা এতো লেট করে ফিরার কারণ জানতে চাইলেন ।
আনিতা শান্ত ভঙ্গিতে তার লেট হওয়ার কারণ বিশ্লেষণ করল । মিসেস এনজেলা মিষ্টি হেসে আনিতার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন ,
-আচ্ছা মামনি যাও ফ্রেশ হয়ে লাঞ্চ করে নাও ।
আমিও আর কিছু না বলে ফ্রেশ হওয়ার জন্য আমার রুমের দিকে চললাম ।
মিসেস এনজেলা আর জনাব আলী মেহবুব উনাদের রুমে বসে কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা করছিলেন , তখনি দরজার অপর পাশে কেউ নখ করলো রুমে আসার জন্য । মিসেস এনজেলা বললেন ,
-কে , ভেতরে আসো ।
অনুমতি পেয়ে সাহিল আর জেনি রুমে প্রবেশ করল। সাহিল আর জেনি কে এক সঙ্গে দেখে মিসেস এনজেলা কিছুর আবাস ফেলেন যেন । তারপরও তিনি মুখ সাবাভিক রেখেই বললেন ,
– কি ব্যাপার সাহিল , জেনি ? কিছু বলবে ?
সাহিল , জেনি দুজনেই ভয় পাচ্ছে , কি ভাবে কথাটা শুরু করবে তারা ভেবে কোনো কুলকিনারা পাচ্ছে না ।
জনাব আলী মেহবুব দুজনের এমন অবস্থা দেখে বলে উঠলেন ,
-তোমরা এতো অপ্রস্তুত বোধ করছো কেন ? কি বলতে চাও নির্ধায় বলো ।
সাহিল জেনিকে ইশারায় বলল ,
-সিস বলা শুরু করো । জেনি তাও বলছে না ভয় করছে তার । সে সাহিল কে ইশারার মাধ্যমে বলল ,
-তুই বল ব্রো , আমার ভয় করছে ।
মিসেস এনজেলা এবার একটু রাগের সুরেই বললেন ,
-তোমরা কি এভাবে ইশারায় ই কথা বলবে , নাকি স্পষ্ট করে বলবে কি বলতে চাও ?
এর মধ্যে শুনা গেলও তীব্র আওয়াজে কে যেন বাহিরের কলিং বেল চাপছে । নন স্টপলি কলিং বেল চেপেই চলছে , পারলে যেন দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে যাবে এমন লাগছে । মিসেস এনজেলার কাছে ব্যাপারটা খুব বিরক্তিকর তাই তিনি কপাল কুচকে রইলেন । (চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here