তার_শহরে পর্ব ১৪

0
519

#তার_শহরে

পার্ট : ১৪

লেখা : ইসরাত সিনহা



-তোমার কি চাই আদিল বলো , তাড়াতাড়ি বলো..!



আদিল কিছু বলার আগেই মিসেস এনজেলা বলে উঠলেন ,
-আগে সাহিলের কি চাই শুনবো , তারপর আদিলের ।
আদিল মনে মনে বলল ,
-না জানি সাহিল কি চাইবে , যদি আনি কে চায় ?
আদিলের মাথা ঘুরছে , অজানা ভয় তার মনের ভেতর কুড়ে খাচ্ছে । না , না সাহিল কে আমি আমার জান দিতে পারব না । আনি যে আমার জান পাখি , আমার ভালো থাকার ট্রনিক ।
এরমধ্যে সাহিল বলে উঠল ,
-আমি যা চাইব দিতে হবে কিন্তু মম ..! না করতে পারবে না ।
মিসেস এনজেলা বুঝতে পারছেন না সাহিল কি চাইবে ? তাই তিনি গম্ভীর গলায় বললেন ,
-বলো তোমার কি চাই , আমরা দেওয়ার চেষ্টা করব ।
সাহিল তার মমের কথায় যেন ভরসা পেল তাই সে বলল ,
-মম আমার নিউ মডেলের দামি গাড়ি চাই।
সাহিলের জবাব শুনে আদিল একটা স্বস্থির নি:শ্বাস ফেললো । তার ধমটা এতোক্ষণ আটকে ছিল , সাহিল কি চাইবে ভেবে ।
মিসেস এনজেলা মৃদু হেসে বললেন ,
-ওহ এই ব্যাপার পেয়ে যাবে । টাকা কখন লাগবে সাহিল ?
সাহিল জবাব দিল তার কাল লাগবে ।
সাহিল মনে মনে ভাবছে ,
-আজ গাড়ি চাওয়ার কারণ এক মাত্র আনিতা । গাড়ি কিনেই আনিতা কে নিয়ে আমি লং ড্রাইবে যাবো । একথা ভাবতেই এক অনাবীল আনন্দে সাহিলের মন পুলকিত হয়ে গেল ।
জনাব আলী মেহবুব উদ্বিগ্ন গলায় বললেন ,
-আমি আমার আদিলের কথা শুনতে চাই , ও কি চায় । আদিল তো কোনো দিন কিছু চায় না , তাই ও কি এমন চাইবে সেটা শুনার জন্য আমি এক্সসাইটেড ..!
সাহিল , নেহাল আর মিসেস এনজেলা ও অধীর আগ্রহ নিয়ে চেয়ে আছেন আদিলের দিকে ।
আদিল অস্থিত্ব ফিল করছে কি ভাবে কথা টা বলবে , আর লজ্জাও আছে সাথে ।
আদিল অস্থিত্ব আর লজ্জা কে পাত্তা না দিয়ে যখনি বলতে গেল ,
-পাপা আমার আ….
আদিল আর আনিতার কথা বলতে পারল না তার ফোনে অফিস থেকে জরুরি কল আসল ।আদিল বলতে চাইছিল , পাপা আমার আনি কে চাই ..!
আদিল ফোন রিসিভ করার জন্য এক মিনিট টাইম চেয়ে সবার কাছ থেকে আড়ালে গেল ।
সবাই বসে রইল আদিলের অসমাপ্ত কথা শুনার জন্য ।



আদিল ফোন কল সেড়ে যখন ফিরে আসলো তখন সে শুনতে ফেল তার মম তার পাপা কে বলছেন ,
-রাদিফ নাকি আনিতা কে পছন্দ করে , সে আনিতা কে বিয়ে করতে চায় । রাদিফের মা আমার সাথে এই ব্যাপারে আজ আলাপ করে গেছেন । সাথে এ ও বলে গেলেন , আপনার সাথে আর আনিতার বাবা-মার সঙ্গে যেন কথা বলি ।
মিসেস এনজেলা আর কিছু বলতে পারলে না তার আগেই আদিল এক চিৎকার দিয়ে বলে উঠল ,
-মম , আই জাস্ট কিল রাদিফ .!
আদিলের এমন হঠাৎ করে ভয়ংকর ভাবে রেগে যাওয়ার কারণ কেউ’ই বুঝল না । আর রাদিফ কে কেন খুন করতে চায় আদিল , সবার মনে একি প্রশ্ন ।
তাই মিসেস এনজেলা আদিল কে জিজ্ঞেস করলেন ,
-কি হয়েছে আদিল , এমন করে রেগে গেলে কেন ? রাদিফ কি করেছে ?
আদিল রাগে গজগজ করতে করতে বলল ,
-মম রাদিফ কেন আনি কে বিয়ে করতে চায় ? ওর চোখ আমি উপড়ে ফেলবো ও আনির দিকে তাকিয়েছে । রাদিফের সাহস কি করে হয় আদিল মেহবুবের কলিজায় হাত দেওয়ার ?
আদিল ঠিক কি বলতে চাইছে তা সবার কাছে স্পষ্ট নয় ।
এরমধ্যেই সাহিল আদিল কে জিজ্ঞেস করল ,
-ভাইয়া তুমি ঠিক কি বুঝাতে চাইছ , একটু ক্লিয়ার করে বলো ?
আদিল চিৎকার দিয়ে বলল ,
-আমার আনি কে চাই , আর এটাই আমি বলতে চেয়ে ছিলাম মম-পাপার কাছে । এ কথা বলেই আদিল রুম থেকে রেগেমেগে হনহন করে চলে গেল ।
সাহিল খানিকটা মন খারাফ করে তার রুমে চলে গেল ,
-নেহাল খুশি হয়েছে যাক এতোদিন বাদে তার ভাই তার মনের কথা প্রকাশ করতে সক্ষম হলো ।


মিসেস এনজেলা আর জনাব আলী মেহবুব একটু চিন্তিত মুখে একজন অপর জনের দিকে চেয়ে তারপরই ঘর কাঁপানো শব্দে হো , হো করে হেসে উঠলেন ।
তারা দুজনে আগেই বুঝতে পেরে ছিলেন আদিল আনিতা কে ভালবাসে , আর সেটা তারা বুঝেন জন’দের বাড়িতে ঘটে যাওয়া ঘটনার দিন । আদিল আনিতার ব্যাপারে দুর্বল হয়ে গেছে ,শুধু প্রকাশ করতে পারেনি এতো দিন ।
মিসেস এনজেলা জানেন আদিল অন্যদের মতো অনুভূতি প্রকাশ করতে পারে না ।
তাই মিসেস এনজেলা সুযোগ বুঝেই জনাব আলী মেহবুবের সাথে রাদিফের কথা তুলেন , যাহাতে আদিল শুনতে পায় উনার বলা কথা । আর রেগে তার মনের অনুভূতি গুলো প্রকাশ করতে পারে । হ্যাঁ তাই হলো আদিল রেগে বলেই দিল তার ভালবাসার কথা । আনিতার মামা-মামিমা ও আনিতাকে পছন্দ করেন , তারা এরকম ছেলের বউ ই আশা করেন ।
জনাব আলী মেহবুব আর মিসেস এনজেলা খুশি হলেন এটা ভেবে যে , তাদের ছেলে অবশেষে কোনো মেয়ে কে ভালবেসেছে ।



আনিতা বেলকোনির পাশে দাঁড়িয়ে আছে । তার অনেক প্রশ্ন আদিল কে নিয়ে , কেন আদিল তার সাথে এতো রুড বিহেভ করে ?


-আজ কেন জানি কানাডার এই শহরটা কে অসহ্য লাগছে । ইচ্ছে করছে নিজের দেশে নিজের শহরে ছুটে যাই । মা কে খুব মিস করছি , আনিশার অভাব টা এখন বুঝতে পারছি । মন খারাপের সময় গুলোতে আনিশা আমার পাশে থাকে , মন ভালো করার জন্য অনেক গল্প শুনাতো । হাসানোর চেষ্টা করতো।

নাহ আর পারছি না আদিল ভাইয়ার এমন বাজে আচরণ মেনে নিতে । আমি কি উনাদের বাসা থেকে চলে যাব , তাহলে হয়তো উনার অত্যাচার থেকে মুক্তি পাবো ? উনাকে বুঝা বড় দায় , কখনো বুকে টেনে নেন কখনো রুড বিহেভ করেন । মাঝে মাঝে মনে হয় আমি উনার বড় কোনো ক্ষতি করেছি , যার জন্য এতো অত্যাচার করেন ।
আদিল ভাইয়ার প্রতি যে আমার দুর্বলতা কাজ করে সেটা আমার কাছে স্পষ্ট । কিন্তু উনার কি কোনো দুর্বলতা কাজ করে আমার প্রতি ?



হঠাৎ কারো গিটার বাজানোর আওয়াজে আমার ভাবনার ঘোর কাটল । আনিতা বিচলিত কন্ঠে বলল ,
-এই বাড়িতে কে গিটার বাজায় , তাও আবার এতো রাত্রে ? গিটারের মাঝে বিষাদের সুর কেন , কার মনের আকাশে আজ এতো বিষাদের ছায়া ? গিটারের আওয়াজ কোন দিক থেকে আসছে বুঝতে পারছি না । মনে হচ্ছে ছাদ থেকে আওয়াজ টা আসছে । একবার কি গিয়ে দেখে আসব , কে গিটারে সুর তুলেছে । গিটারের সুরটা আমার কাছে খুব ভালো লাগছে । নাহ দেখে আসি একবার !
আমার রুম থেকে সাবধানে বের হলাম , পা টিপে টিপে ছাদের দিকে পা বাড়ালাম । দেখার কৌতূহল কে আর চেপে রাখতে পারছি না । ধীরে ধীরে ছাদের সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠলাম , বুকের ভেতর কেমন যেন ঢিপঢিপ করছে । ছাদে উঠে চারিদিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখি কেউ নেই , গিটারের সুরটাও আর শুনা যাচ্ছে না ।
মূর্হতেই আমার শরীর ভয়ে ঠান্ডা হয়ে আসছে , হাত পা ক্রমাগত কাঁপছে । তাহলে কি আমার মনের ভুল ছিল , আমি ভুল শুনলাম ? কোনো ভূত টোত নয় তো আবার , যদি আমাকে একা পেয়ে ঘাড় মটকে রক্ত খেয়ে নেয় ?
না, না ঘাড় মটকানোর আগেই পালাই এখান থেকে ।


যেই আনিতা চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়লো , অমনি কেউ আনিতা কে টান দিয়ে শক্ত করে বুকের সাথে চেপে ধরল । আনিতা ভয়ে চিৎকার করতে গেলে আনিতার মুখ চেপে ধরে । আনিতার শ্বাসরূদ্ধ হয়ে আসছে।


অজ্ঞাত ব্যক্তিটি যখন আনিতা কে এভাবে চেপে ধরে তখনই ছাদে একজন তৃতীয় ব্যক্তির আগমন ঘটে । আর রাগে তার চোয়াল শক্ত হয়ে গেল । চোখ লাল করে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে ,হাত মুষ্টিবদ্ধ করে তারপর দেয়ালে একটা ঘুষি মেরে হনহন করে ছাদ থেকে চলে যায় …!! (চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here