তার_শহরে পর্ব ১৩

0
513

#তার_শহরে

পার্ট : ১৩

লেখা : ইসরাত সিনহা


আমাকে কেউ পাজোঁ কোলে করে নিয়ে চলে যাচ্ছে যার জন্য মনে হচ্ছে আমি শূন্যে ভাসছি ..!


কে আমায় নিয়ে যাচ্ছে দেখার জন্য আমি উক্ত ব্যক্তিটির দিকে তাকালাম ,তাকিয়ে দেখি আদিল ভাইয়া ! উনাকে দেখে আমি শুকনো একটা ঢুক গিললাম । বিস্ময়ে আর ভয়ে চাপা চিৎকার দিয়ে উনাকে জিজ্ঞেস করলাম ,
-আদিল ভাইয়া আমাকে কোলে নিয়েছেন কেন ? প্লিজ নামান বলছি ।
আমার কথায় যেন আগুনে ঘি ঢালার মতো দাউদাউ করে আদিল ভাইয়ার রাগ জ্বলে উঠল । উনি অগ্নি দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন ,
-আনি চুপচাপ বসে থাকো , নয়তো কোল থেকে ফেলে দিব । আমি যা বলি তাই করে দেখিয়ে দেই ।
উনার এমন ভয়ংকর গলা শুনে আমার বুক অজানা ভয়ে কেঁপে উঠল । আমি কি আজ কোনো বড় ভুল করেছি যার জন্য উনি এমন আগুন হয়ে আছেন ? কই আমার তো মনে পরছে না । আদিল ভাইয়া অন্য সময়ের তুলনায় আজ যেন একটু বেশি রেগে গেছেন । এর কারণ কি হতে পারে , আর উনি আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন ? আমাকে মেরে ফেলবেন না তো ? উনি যা রেগে আছেন এটাও করতে পারেন । ভয়ে আমার মুখ রক্ত শূন্য হয়ে আছে । এর মাঝে উনি আমাকে নিচে নামিয়ে দিয়েছেন ।
আমাকে নিচে নামাতেই যেন আমার প্রাণ পাখি ফিরে ফেলাম । ভালোকরে তাকিয়ে দেখি এটা আমার নিজের রুম । বুঝতে পারছিনা পার্টি থেকে এখানে নিয়ে আসার মানে কি ? ভয়ে ভয়ে উনার দিকে তাকালাম,তাকিয়ে দেখি উনি পকেটের ভেতর হাত ঢুকিয়ে আমার দিকে অগ্নি চোখে চেয়ে আছেন । উনার এমন ভয়ংকর চাহনি দেখে ভয়ে আমার হৃৎপিন্ড টা যেন ট্রেনের গতিতে ছুটছে ।
আস্তে আস্তে উনি আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলেন , আর আমি পেছনে পিছাতে লাগলাম । এভাবে পিছাতে পিছাতে এক সময় আমার পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেল ।
আদিল ভাইয়া উনার দু হাত দেয়ালের দু পাশে রাখলেন ,উনার দু হাতের মধ্যকানে আমায় আবদ্ধ করে নিলেন । উনার চোখের দিকে তাকাতে পারছি না , রাগে লাল হয়ে আছে । ভয়ে জড়সড় হয়ে নিচের দিকে চেয়ে আছি । তখনি আদিল ভাইয়া শান্ত কন্ঠে বললেন ,
-আনি তোমাকে না করে ছিলাম না সাহিল থেকে দূরে থাকবে ? সাহিলের সাথে মিশবে না ।
মনে মনে ভাবছি, আরে উনি দেখলেন কি ভাবে সাহিল ভাইয়ার সাথে যে কথা বল ছিলাম ? উনি তো কোথাও ছিলেন না ..!এর মধ্যে আদিল বেশ ঝাঁজালো গলায় বলল ,
-স্পিক আউট ডেম ইট ,আনসার মি , কেন তুমি সাহিলের সাথে কথা বলেছো ? আর সাহিল কেন তোমায় জড়িয়ে ধরলো ? শুধু জড়িয়ে ধরেনি হাতও ধরেছে , কেন আনি কেন ? আদিল এখন ভয়ংকর ভাবে রেগে গেছে ।
উনার এমন হিংস্র রাগ দেখে আমার শরীর কাঁপছে , প্রচন্ড পানির তৃষ্ণনা পেয়েছে । ভয়ে গলা শুকিয়ে কাট হয়ে আছে । তারপর ও কাঁপাকাঁপা গলায় বললাম ,
-আসলে সাহিল ভাইয়া আমার পিছন দিকে এসে জড়িয়ে ধরে ছিলেন আমি দেখতে পাইনি ।
আনিতার কথা শুনে আদিল আরো রেগে বলল ,
-ও তোমার হাত ধরে যখন কথা বলছিল তখন কি ওর হাতও দেখতে পাওনি ?
আনিতা কে আর কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে আদিল আনিতার হাত চেপে ধরল।
উনার এমন হাত ধরায় আমি ব্যাথায় চিৎকার দিয়ে উঠে বললাম ,
-আদিল ভাইয়া প্লিজ ছাড়ুন আমার লাগছে। আমার কথা যেন উনার কান অব্দি পৌঁছালো না , উনি আমাকে ওয়াশরুমের দিকে টেনে নিয়ে যেতে লাগলেন । ওয়াশরুমের ভেতর গিয়ে আমাকে শাওয়ার এর নিচে দাঁড় করালেন , তারপর শাওয়ার ছেড়ে দিয়ে বাহিরে চলে গেলেন । উনার করা কান্ডে আমি থ বনে গেলাম ।
শাওয়ারের পানি পরছে আমার উপরে আমি ভিজে একাকার । সাথে চোখের পানিও অবিরাম ধারায় ঝরছে । উনি আমার সাথে এরকম করেন কেন ? উনাকে কেন আমি এতো ভয় পাই , কেন কিছু বলতে পারিনা ?



এদিকে আদিল আনিতার রুম থেকে বাহিরে এসে তার নিজের রুমে গিয়ে চিৎকার করে বলছে ,
-আই এম সরি মায়াকুমারী তোমাকে এতো কষ্ট দেওয়ার জন্য । আমি জানি এখানে তোমার কোনো দোষ নেই , সাহিলই তোমাকে জড়িয়ে ধরেছে । আমি চাইনা আমি ছাড়া ,আমার মায়াকুমারীর শরীরে আর কারো স্পর্শ লাগোক তাই তো তোমার সাথে এরকম টা করলাম । তোমার ভয়ে কাঁচুমাচু হয়ে যাওয়া মুখটা দেখে বিষণ মায়া হচ্ছিল।ইচ্ছা করছিল আমার বুকে জড়িয়ে নেই , অশান্ত মন কে শান্ত করি । কিন্তু রাগের জন্য পারিনি । এভাবে আর চলতে দেওয়া যাবে না ,তোমাকে আমার নিজের করে চাই আনি। আজ মম-পাপার ৩২তম এনির্ভাসারি । এনির্ভাসারির দিনটা তাদের কাছে বিশেষ দিন । এনির্ভাসারির দিনে তারা খুশি হয়ে আমরা তিন ভাইকে কিছু চাইতে বলেন । যা তারা দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করেন । কিন্তু আমি কখনই কিছু চাইনি , সাহিল নেহাল বরাবরই চেয়ে এসেছে । আদিল গম্ভীর কন্ঠে বলল , এবার ঘটবে তার ব্যতিক্রম । আমি চাইব …!



এনজেলা আমি তোমার কাছে কিছু চাইব , দেবে ? রাদিফের মাম্মি মিসেস এনজেলা কে বলছেন । মিসেস এনজেলা উনার স্বভাব অনুযায়ী হেসে বললেন ,
-জি আপা বলেন , আমার সাধ্যের ভেতরে থাকলে দেওয়ার চেষ্টা করব । রাদিফের মা বললেন ,
-আনিতা কে আমার খুব পছন্দ হয়েছে এনজেলা । আনিতাকে আমার একমাত্র ছেলে রাদিফের বউ বানাতে চাই ।
মিসেস এনজেলা একটু অপ্রস্তুত গলায় বলে উঠলেন ,
-কোন আনিতা আপা ? কার কথা বলছেন ?
রাদিফের মা বললেন ,
-ওই যে আনিতা বাংলাদেশ থেকে এসেছে ।
মিসেস এনজেলা এবার বুঝলেন উনি কার কথা বলছেন । মিসেস এনজেলা মৃদু হেসে বললেন ,
-ওহ আপা বুঝেছি কার কথা বলছেন । আনিতা আমার ননদের মেয়ে । আনিতা তো এখানে পড়া লেখা করতে এসেছে , ওঁকে বোধহয় এখন বিয়ে দেবেন না । পড়ালেখা শেষ হলে ওর পছন্দ মতো ছেলে দেখে বিয়ে দিবে আনিতার বাবা-মা , এরকম টাই বলেছেন উনারা । রাদিফের মা তারপর ও মিসেস এনজেলা কে বললেন ,
-এনজেলা তুমি একটু আনিতার বাবা-মার সাথে কথা বলে দেখো তো উনারা কি বলেন। আর আনিতার মামার সাথেও কথা বলো । মেয়েটা কে আমার বেশ ভালো লেগেছে , মোট কথা আমার রাদিফ আনিতা কে পছন্দ করে । মিসেস এনজেলা একটু চিন্তিত ভাবে বললেন ,
-ঠিক আছে আপা আপনি এত করে যখন বলছেন , আমি আনিতার মামার সাথে এই বিষয় নিয়ে কথা বলবনে ।
রাদিফের মা বলে গেলেন ঠিক আছে আমাকে জানিয়ও ।
রাদিফের মা যাওয়ার পরই মিসেস এনজেলা একটা রহস্যময় হাসি দিলেন ।


ইতিমধ্যে পার্টি শেষ হয়ে গেছে , গেস্ট’রা চলে গেছে । বাড়ি একদম ফাঁকা হয়ে গেছে । তখনি মিসেস এনজেলার মনে পড়ল
-আনিতা কোথায় , ওঁকে তো অনেক্ষণ হলো দেখছি না । তিনি চিন্তিত ভঙ্গিতে আনিতার রুমের দিকে পা বাড়ালেন ।
আনিতার রুমের সামনে য়েয়ে মিসেস এনজেলা বললেন ,
-মামনি ভেতরে আসব ?
আনিতা বেডের একোণে গুটিশুটি মেরে বসে কাঁদছিল , মিসেস এনজেলার গলার আওয়াজ পেয়ে আনিতা চোখ মুছে বলল ,
-মামিমা এসো ভেতরে এসো । মিসেস এনজেলা রুমে ঢুকে আনিতা কে বলে উঠলেন ,
-কি হয়েছে মামনি তোমায় দেখছি না যে অনেক্ষণ হলো ?
শরীরঠিক আছে , চোখ মুখের এমন অবস্থা কেন মামনি কি হয়েছে ?
মামিমার এমন হুটহাট শ্রশ্ন করায় আমি একটু ভরকে গেলাম ,এখন কি বলবো ?তারপর একটু অপ্রস্তুত গলায় জবাব দিলাম,
-মামিমা আমার প্রচুর মাথা ব্যাথা করছিল তাই পার্টির ওকান থেকে চলে এসেছিলাম ।
মামিমা সন্দিহান চোখে চেয়ে বললেন ,
-সত্যিই কি তাই মামনি !
মামিমার কথায় ভেতরে ভেতরে বেশ ভয় করছে , মামিমা কি বুঝে ফেললেন না কি কিছু ? না , না বুঝতে দেওয়া যাবে না এতে প্রবলেম হতে পারে । তাই বললাম , না মামিমা সত্যিই মাথা ব্যাথা করছে । মামিমা আমাকে ডিনার করার জন্য বললেন,আমি খাব না বলে না করে দিয়েছি । উনি চলে গেলেন , আর আমি আমার রুমের বেলকোনির দিকে পা বাড়ালাম ।



আদিল , সাহিল , নেহাল তিন জন বসে আছে তাদের মম-পাপার সামনে । জনাব আলী মেহবুব বললেন ,
-তোমরা নিশ্চয়ই জানো তোমাদের তিন ভাই কে কেন ডাকা হয়েছে ?
তিন জনই একসাথে বলে উঠল , জি জানি।
জনাব আলী মেহবুব আবার বললেন ,
-তোমরা তিন ভাইয়ের মধ্যে নেহাল সব ছোট তাহলে নেহালই প্রথম বলুক ,তার কি চাই ? বলো নেহাল ,
নেহাল হেসে বলল ,
-আমার আর কি চাই তা তোমরার অজানা নয় পাপা ? ভালো ব্রানডের ঘড়ি , আর দামি ফোন হলেই আমার হবে । নেহালের কথা শুনে সবাই একসাথে হেসে উঠল । মিসেস এনজেলা হাসি থামিয়ে সাহিলের উদ্দেশ্য বললেন ,
-সাহিল তোমার কি চাই তা তো আমাদের জানা , তোমার ট্যুরে যাওয়ার জন্য টাকা লাগবে তাই তো ? তুমি তো এটাই চাও প্রতিবার , ওকে পেয়ে যাবে ।
সাহিল তার মম কে বলল ,
-না মম এবার আমার অন্যকিছু লাগবে ।


সাহিলের অন্যকিছু চাই কথা টা শুনে আদিলের বুক এক অজানা আশংকায় কেঁপে উঠল ।

এরমধ্যে জনাব আলী মেহবুব আদিল কে বললেন ,
-তোমার কি কিছু চাই আদিল ?
আদিল হ্যাঁ সুচক মাথা নাড়াল । সবাই যেন আদিলের হ্যাঁ শুনে বিস্ময়ে অবাক হলো .!
বিস্ময় কাটিয়ে জনাব আলী মেহবুব অধীর আগ্রহে বলে উঠলেন ,
-তোমার কি চাই আদিল বলো , তাড়াতাড়ি বলো…!!(চলবে)

গতকাল ব্যস্ততার কারণে ১২ নাম্বার পার্টটা রিভিশন দিতে পারিনি । তাই একটা টাইপিং মিস্টেক ছিল দেখতে পাইনি ,৩২তম এর জায়গায় ৫০তম বসে ছিল ।আমি কিছু স্থানে ঠিক করে দিয়েছি,আর কিছু স্থানে ঠিক করতে পারিনি ।তার জন্য আমি আন্তরিক ভাবে দু:ক্ষিত । ইন শাহ্ আল্লাহ পরির্বতীতে এমন হবে না , সেদিকে খেয়াল রাখব ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here