তার_শহরে পর্ব ১২

0
563

#তার_শহরে

পার্ট : ১২

লেখা : ইসরাত সিনহা



-ভেতরে চলো আনি , ভেতরে গেলে বুঝতে পারবে এই সাঁজ-সজ্জার কারণ ..!!


-আমিও আর কোনো প্রশ্ন না করে ভেতরের দিকে হাঁটা দিলাম । ভেতরে ড্রইংরুমে ঢুকতে মামিমা আমাকে বললেন ,
-তাড়াতাড়ি রুমে যাও মামনি , গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও । তারপর কিছু খেয়ে তৈরী হয়ে নিচে আসো ।
মামিমার কথার মাথা,মুন্ডু কিছুই তো বুঝলাম না । আমি রেডি হবো কেন , আর বাড়িতেই বা এতো সাজঁ-সজ্জাঁ কিসের জন্য ? নিজের অধীর আগ্রহ আর চেপে রাখতে না পেরে মামিমা কে জিজ্ঞেস করলাম ,
-আচ্ছা মামিমা বাড়িতে আজ কি কোনো বিশেষ পার্টি আছে ?
মামিমা একটু লজ্জা পেলেন যেন আমার প্রশ্নে , লজ্জামাখা মুখ করেই বললেন ,
-আজ তোমার মামা’র আর আমার ৫০তম এনির্ভাসারি । তাই আদিল একটা পার্টি এরেন্জ করেছে । আমি অবশ্য না করে ছিলাম কিন্তু কে শুনে কার কথা ..!
সাথে সাথে আমি মামিমা কে জড়িয়ে ধরে উনার এনির্ভাসারির শুভেচ্ছা জানালাম ।
মামিমা আমাকে তাড়া দিয়ে বললেন
-যাও মামনি রেডি হয়ে নাও , গেস্ট’রা আসা শুরু করে দিয়েছে ।
উপরে উঠছি আর ভাবছি ,
-আমার তো জিন্স,শার্ট,টি-শার্ট , প্লাজু , থ্রি-কোয়াটার ছাড়া আর কোনো ড্রেস’ই নেই .! তাহলে আমি পরব টা কি ? এসব ড্রেস পড়ে তো আর গেস্টদের সামনে যেতে পারব না । এক কাজ করি মামিমার কাছ থেকে একটা শাড়ি নিয়ে পরলেই তো হয়ে যায় ..!শাড়ির কথা মনে পড়তেই সেদিনের ঘটনা আমার চোখের সামনে ভেসে উঠল । না , না দরকার হলে আমি পার্টিতে যাব না , তারপরও শাড়ি পড়ব না । আমি চাই না এমন বিশ্রী ঘটনার আবার পুনরাবৃত্তি হউক।দুর আমাকে কেউ আগে জানালে তো একটা ড্রেস কিনে রাখতাম । এসব ভাবনার মাঝে রুমে ঢুকে আমার চোখ গেল , আমার বেডের মধ্যেকানে রাখা একটা শপিং ব্যাগের উপর ।
চটজলদি গিয়ে ব্যাগটা হাতে নিলাম , ছোট খাটো একটা শক খেলাম । কারণ এর ভেতর সুন্দর , হোয়াইট কালারের একটা গাউন ছিল । ভাবছি কে রাখতে পারে এটা ? হঠাৎ করেই গাউনের মধ্যে একখানা চিরকুট দেখলাম , চিরকুট টা খুলে আরেক দফা শক খেলাম । চিরকুটের মাঝে বাংলায় বড় বড় করে লেখা “এটা তোমার জন্য পরি” ।
বুঝলাম না কে দিলো গাউন..!



আনিতা আবার কি মনে করে যেন একটা মুচকি হাসি দিয়ে রেডি হওয়ার জন্য উঠে পড়ল ।
আনিতা প্রত্যেক সময়ের মতো আজও সেজেঁছে । হাল্কা মেকাপ , চোখে গাড় করে কাজল , ঠোঁটে লাল কালার লিপস্টিক । চুল গুলো খুলাই রাখলো । এই সামান্য সাজেঁই আনিতা কে পরির মতো লাগছে । মনে হচ্ছে কোনো পরি ভুল করে পৃথিবীতে নেমে এসেছে । আয়নার দিকে চেয়ে বুঝতে পারছি না এটা কি আমি ?
হোয়াইট কালারে যে আমায় এতো ভালো মানায় এই গাউন না পড়লে জানা হতো না ।
আমি আরো হোয়াইট কালারের কাপড় পরেছি কিন্তু এত্ত ভালো লাগেনি , আজ একটু বেশিই লাগছে ।
দরজায় নক পরায় আয়না থেকে সরে এসে দরজা খুলে দিলাম । দেখি নেহাল দাঁড়িয়ে আছে , আমাকে দেখে নেহাল চোখ বড় বড় করে বলে উঠল ,
-আপু তোমায় আজ এতো সুন্দর দেখাচ্ছে বলে বুঝাতে পারব না । কতোজন যে ক্রাশ খাবে তার কোনো ইয়াত্তা নেই ।
নেহালের এমন প্রশংসায় আমি খানিক টা লজ্জা পেয়ে বললাম ,
-তুমি যতো টা সুন্দর বলছো নেহাল আমাকে ততোটাও সুন্দর লাগছে না । একটু বারিয়ে বলছো । আর তোমাকেও কম লাগছে না কিন্তু কোনো অংশে । নেহাল আমার কথায় বলল,
-সুন্দর আমাকেও লাগছে কিন্তু তোমার থেকে কম আপু , ট্রাস্ট মি ..!
আমি হেসে বললাম ,
-ওঁকে ট্রাস্ট করলাম । নেহাল মামা-মামিমা কি রেডি হয়ে গেছেন ?
নেহাল বলল ,
-হ্যাঁ , আপু । মম আমাকে পাঠিয়েছেন তোমাকে নিচে নিয়ে যেতে । তুমি কি রেডি হয়ে গেছ ?
-হ্যাঁ নেহাল চলো আমি রেডি ।
আমি আর নেহাল উপরের সিঁড়ি দিয়ে এক সাথে নিচে নামছি । তখন নেহাল আমাকে ফিসফিসিয়ে বলল ,
-দেখ আপু তোমার দিকে কি ভাবে সবাই তাকিয় আছে ।
নেহালের কথায় আমি নিচে তাকিয়ে দেখলাম সত্যিই সবাই তাকিয়ে আছে আমার দিকে । সবাই আমার দিকে তাকালেও আমার চোখ তাকিয়ে আছে আদিল ভাইয়ার দিকে । আদিল ভাইয়াকে আজ যেন অন্য রকম সুন্দর লাগছে । উনিও হোয়াইট কালার স্যুট পরেছেন । স্যুটের নিচে ব্লাক শার্ট , চুল গুলোকে স্পাইক করে রেখেছেন । হাতে ব্লাক একটা ঘড়ি , পায়ে ব্লাক সু । কথা বলছেন আর মাঝে মাঝে হাসছেন , এতেই যেন উনাকে আকর্ষনীয় করে তুলছে ।
উনি এতো কিউট কেন ? মাঝে মাঝে গিলে ফেলতে ইচ্ছে করে । আর উনার হাসিতে যে কেউই পাগল হয়ে যাবে ।
আমি নিচে নামতেই মামিমা আমাকে ঝাপটে ধরে বললেন ,
-আমার মামনি কে দারুন লাগছে তো । না জানি কার নজর লাগে আবার । মামিমার কথায় আমি মৃদু হেসে বললাম ,
-কি যে বলো মামিমা ! তোমায় আজ অনেক সুন্দর লাগছে ,মামা চোখ সরাতে পারবে বলে মনে হয় না । আমার কথায় মামিমার চেহারায় এক রাশ লজ্জা দেখা গেল । উনি লজ্জায় লাল হয়ে বললেন ,
-যাহ ফাজিল মেয়ে , শুধু দুষ্টমি । বলেই মামিমা চলে গেলেন গেস্টদের কাছে ।
মামিমা চলে যেতেই মামার আগমন ঘটলো।
মামা আমাকে দেখে বলছেন ,
-মাসাআল্লাহ আমার আনিতা কে তো আজ বেশ লাগছে । মামার কথায় আমি বেশ লজ্জা পেলাম । মামা আবার বললেন ,
-চলো আনিতা তোমাকে গেস্টদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেই । আমিও সম্মতি দিয়ে চললাম মামার সাথে ।

মামার গেস্টদের সাথে পরিচিত হয়ে আমি এসে একটা সোফায় বসে পরলাম । আদিল ভাইয়াকে দেখছি না উনি কোথায় গেলেন ভাবছি ।
কোথা থেকে যেন রাদিফ ভাইয়া হাজির হলেন আমার সামনে । আমাকে দেখেই উনি বলে উঠলেন ,
-হেই , আনিতা কেমন আছো ? অনেকদিন পর দেখলাম ।
আমি মনে মনে বলছি ,
-এই আপদটা আবার কোত্থথেকে আসলো ? বজ্জাতটার চোখে পরলে আমাকে গিলে খাবে ।রাদিফ ভাইয়া আবার বললেন ,
-আনিতা কথা বলছো না কেন ? তোমাকে জাস্ট অস্থির লাগছে ।
এবার আমি মৃদু হেসে বললাম ,
-ভালো আছি ভাইয়া । আপনি কেমন আছেন ? উনি বললেন ,
-আমি ভালো আছি আনিতা । তোমাকে আজ একজনের সাথে আলাপ করিয়ে দিবো। ওয়েট করো নিয়ে আসছি । বলেই উনি চলে গেলেন । উনি কার কথা বললেন কিছুই তো বুঝলাম না ..!



আচমকা ভাবে কে যেন আমাকে পিছন দিয়ে জড়িয়ে ধরল । তাকানোর সাহস পাচ্ছি না ।ভয়ে ভয়ে বললাম ,
-কে ?
সাহিল ভাইয়া আমার সামনে এসে বললেন ,
-আরে আনিতা আমি । এতো ভয় পাওয়ার কিছু নেই । এখানে একা বসে আছো কেন ?
সাহিল ভাইয়ার আমাকে এমন ভাবে জড়িয়ে ধরায় আমার প্রচন্ড রাগ হলো । কিন্তু কিছু বললাম না । রাগ সংযত করে বললাম ,
-ভালো লাগছে না ভাইয়া তাই এখানে বসে আছি ।
সাহিল ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বললেন ,
-তোমাকে খুব খুব সুন্দর লাগছে আনিতা ।

এদিকে সাহিল এর কার্যকলাপ দেখে একজন প্রচন্ড রাগে ফেটে পরছে । সাহিল আর আনিতা কেউই অজ্ঞাত ব্যক্তিটি কে দেখছে না ।

জেনি হঠাৎ করেই আদিলের সামনে এসে বলছে ,
-ওওউ আদিল ইউ লুকিং সো হট বেবি ..! বলেই আদিলের মুখের দিকে তাকালো জেনি,আদিলের মুখ তিব্র রাগে লাল হয়ে আছে । শরীর রাগে কাঁপছে , হাত মুষ্টিবদ্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে । যেন এখনি সব ধংস করে দিবে । জেনি আর কোনো কথা বলার জোঁ পেল না ।
আদিলের এমন ভয়ানক রাগের কারণ কি হতে পারে জেনি ভাবছে ।

সাহিল আনিতার সাথে কথা বলেই যাচ্ছে আর আনিতা শুনছে । আনিতার ইচ্ছা না থাকা সত্তে ও শুনতে হচ্ছে কারণ সাহিল আনিতার হাত ধরে আছে ।
এরমাঝে রাদিফ মধ্য বয়সি একজন মহিলা কে সাথে নিয়ে এসে আনিতার সামনে উপস্থিথ হলো । রাদিফ আসতেই সাহিল আনিতার হাত ছেড়ে দিল , আনিতা যেন প্রাণ ফিরে ফেলো । সাহিল এর এরকম হুটহাট জড়িয়ে ধরায় , হাত ধরায় আনিতা ভেজায় বিরক্ত ।
রাদিফ আনিতার উদ্দেশ্য বলল ,
-আনিতা এই যে আমার মাম্মি । মাম্মির সাথেই তোমাকে পরিচয় করানোর কথা বলে ছিলাম । মাম্মি তোমাকে দেখতে চেয়ে ছিলেন ।
রাদিফের মা আনিতার পাশে বসতেই রাদিফ সাহিল কে বলল ,
-সাহিল ব্রো চলো ওদিকে । আর তার মার দিকে চেয়ে বলল , তোমরা কথা বলো আমরা আসছি ।


রাদিফের মা আর আনিতা অনেকক্ষণ কথা বললেন । রাদিফের মা কথায় কথায় বললেন ,
-তোমাকে আমার বেশ পছন্দ হয়েছে মা । এরকম মেয়েই আমি চাই ।
আনিতা রাদিফের মায়ের কথার মানে বুঝলো না , তাই বলল ,
-আন্টি কি বললেন ঠিক বুঝলাম না ।
রাদিফের মা মিষ্টি হেসে বললেন ,
-তোমার বুঝতে হবে না মা । ওটা আমাদের বড়দের ব্যাপার ।
আনিতা সন্দিহান কন্ঠে বলল ,
-ওহ ..!!
নেহাল এসেই আনিতা কে বলল ,
-আপু আমার সাথে চলো তো ওইদিক টায়,কাজ আছে । আনিতা রাদিফের মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল ,
-আন্টি আমি আসছি , আপনি বসুন । মৃদু হেসে আনিতা নেহালের সাথে চলে গেল ।
নেহালের উদ্দেশ্য আনিতা বলল ,
-নেহাল ,আদিল ভাইয়া কোথায় দেখছি না যে ?
নেহাল দুষ্টমির সুরে বলল ,
-কেন আপু ভাইয়া কে কি মিস করছো ?
আনিতা চোখ গরম করে নেহালের দিকে তাকাতেই , নেহাল বলে উঠল ,
-এভাবে তাকিয়ও না আপু ভয় করে । ভাইয়া আছে এদিকে কোথা ও ।
আনিতা মনে মনে বলল ,
-যাহ আমাকেও কেউ ভয় পায় , শুনে একটু শান্তি পেলাম ।
নেহাল কে জিজ্ঞেস করলাম কোথায় নিয়ে যাচ্ছে ? নেহাল বলল ,
-ছাদে সবাই ডান্স করছে তাই তোমাকেও নিয়ে যাচ্ছি দেখানোর জন্য ।
আমি বললাম ,
-এসব ডান্স আমি পারি না , আমাকে কোনো ধরণের রিকুয়েস্ট করবা না আগেই বলে দিচ্ছি নেহাল ।
নেহাল হেসে মাথা নাড়িয়ে বলল ,
-আমি জানি আপু তুমি যে ডান্স পারো না । জাস্ট দেখবা আর ইনজয় করবা ।
ছাদে দাঁড়িয়ে আমি ডান্স দেখছি ।নেহাল , সাহিল ভাইয়া , রাদিফ ভাইয়া ডান্স করছিল। ওরা তিনজন’ই খুব ভালো ডান্স করছে ।


হঠাৎ করে অনুভব করলাম আমি শূন্যে ভাসছি ..!!
আমাকে কেউ পাজোঁ কোলে করে নিয়ে চলে যাচ্ছে যার জন্য আমার মনে হচ্ছে আমি শূন্য ভাসছি..!!(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here