তার_শহরে পর্ব ১১

0
570

#তার_শহরে
পার্ট : ১১
লেখা : ইসরাত সিনহা


এরই মাঝে ঝড়ের বেগে কোথা থেকে যেন জেনি আসলো,এসেই সুইট হার্ট বলে আদিল ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরল । আমি অবাক চোখে তাকিয়ে আছি….!!


-জেনির এভাবে উনাকে জড়িয়ে ধরায় আমার বুকের ভেতর তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে । চোখ জ্বলছে খুব , ইচ্ছে করছে কাঁদতে বিষণ কাঁদতে । আমি চোখের ছলছল জল লুকানোর জন্য নিচের দিকে চেয়ে আছি । আদিল ভাইয়া গর্জে উঠে বললেন ,
-জেনি তুমি আমায় ছাড়ও , নয়তো খারাফ হবে । জেনি ন্যাকা ন্যাকা ভাবে বলল ,
-কেন আদিল তোমাকে ছাড়ব কেন ? আমি তো তোমায় সারা জীবন এভাবে জড়িয়ে থাকতে চাই ডারলিং ।
জেনির ন্যাকামো দেখে আমার গা পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে , এই মেয়ে আরো বেশি নির্লজ্জ বেহায়া । কি একটা ড্রেস পরেছে হাঁটু অব্দি দেখা যাচ্ছে । মনে মনে এসব ভাবছি ।
জেনি আদিল ভাইয়াকে ছেড়ে দাঁড়িয়ে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠল ,
-আদিল এই মেয়ে এখানে কি করে , এই মেয়ে না ভার্সিটি যাবে বলে বের হলো ? তাহলে তোমার অফিসে কি করছে আদিল ?
আমি চোখ তুলে তাকিয়ে দেখি আদিল ভাইয়ার চোখ থেকে যেন ,
লাল আভা টিকরে টিকরে পড়ছে । উনি যে প্রচন্ড রকম রেগে গেছেন বুঝতে পারছি ।উনি স্তির চোখে তাকিয়ে জেনি কে বললেন ,
-আমার সব কিছুর কৈফৎ তোমাকে দিতে আমি বাধ্য নই জেনি । আনি কে আমি আমার দরকারে এখানে নিয়ে এসেছি । তুমি কেন আমার অফিসে এসেছ ?
উনার এমন রাগ দেখে জেনি যে ভয় পাচ্ছে তা বেশ ভালো করেই বুঝতে পারছি । জেনি তাও আদিল ভাইয়ার রাগ কে কোনো তোয়াক্ষা না করে বলল ,
-এই সাধারণ একটা মেয়ের সামনে তুমি আমায় অপমান করছ আদিল ?
উনি গম্ভীর কন্ঠে বললেন ,
-তোমার কাছে আনি সাধারণ মেয়ে হতে পারে বাট আমার কাছে নয় । আর ওঁকে এই মেয়ে,এই মেয়ে না বলে ওর নাম ধরে ডাকো । ভালো দেখাবে ।
আমি শুধু নিরব শ্রোতা হয়ে শুনছি । জেনি বোধ হয় আদিল ভাইয়া কে ভালোবাসে তাই তো আমাকে দেখে এমন রিয়্যাক্ট করছে । জেনি আমাকে বলল,
-এই মেয়ে তাকাও আমার দিকে ।
আমি তাকালাম জেনির দিকে ,তাকাতেই জেনি বলে উঠল ,
-ধনি ছেলে দেখে লোভ সামলাতে পারছনা না ,ওমনি পিছুনিয়েছ । তোমরা বাংলাদিশি মেয়েরা এতো লোভী কেন ? পড়া লেখা করতে এসেছ না আদিল এর সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে এসেছ । জেনির এমন কথা শুনে আমার পায়ের তলার মাঠি সরে গেল,এক মূর্হতের জন্য যেন আমার পৃথিবী থমকে গেছে । জেনি কি বলছে এসব ?আমার চোখ থেকে কয়েক দন্ড নুনা জল গড়িয়ে পরল জেনির এমন যুক্তিহীন কথা শুনে ।


আমি কিছু বলার আগেই আদিল ভাইয়া এক ভয়ংকর চিৎকার দিয়ে বললেন ,
-এনাফ ইজ এনাফ জেনি ।এতক্ষণ তোমায় সহ্য করেছি আর না । তুমি আনি সম্পর্কে আর একটা বাজে কথা বললে আমি ভুলে যাব তুমি একজন নারী । তোমার মন মানসিকতা এতো চিপ কেন জেনি ? নিজের মতো সবাই কে ভাববে না , তুমি তো আমার পিছন ঘুরো আমার জন্য না আমার প্রাচর্যের লোভে । আনি তুমার মতো লোভী না , আর ওর বাবার দেশে যতো সম্পত্তি আছে তা তোমার কল্পনার বাহিরে । আনির নামে আর একটা মন্তব্য করলে তোমার জ্বিব আমি টেনে ছিঁড়ে ফেলবো । মাইন্ড ইট ..!
তুমি আদিল মেহবুব কে চিনোনা জেনিফার । বলেই আদিল জোড়ে দেয়ালে একটা ঘুষি মারলো ।
উনার ভয়ানক রূপ দেখে আমি কাঁপছি । উনি যেন বাঘের ন্যায় কেঁপে উঠেছেন । জেনি আর কিছু না বলে চলে গেল । যাওয়ার আগে আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে গেল ।
আর আমি কাঁদছি ভয়ে,অপমানে । আদিল ভাইয়ার সাথে তো আমার কোনো রিলেশনও নাই তাহলে , জেনি আমাকে অপমান করল কেন ? আমি কেন অন্যের সম্পত্তির উপর লোভ করতে যাব ? কাঁদতে কাঁদতে আমার হেচকি উঠে গেছে ।


আদিল ভাইয়া আমার পাশে বসে খুব শান্ত গলায় বললেন ,
-বোকা মেয়ে কাঁদছ কেন ? জেনি মেয়েটাই এমন আমাকে কারো সাথে সহ্য করতে পারে না । তোমাকে ও সহ্য করতে পারেনি তাইতো এতো বাজে বিহেভ করেছে । কান্না থামাও আনি প্লিজ,বলেই উনি আমাকে উনার বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলেন ।
-আমার কি হলো আমি জানি না আমিও উনাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করছি । উনার বুকে কেমন যেন একটা শান্তি শান্তি লাগছে ।
উনি আমার মাথায় পরম যত্নে হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন ।
আদিল মনে মনে বলছে , কান্না থামাও আনি তোমার কান্না আমার বুকে তুমুল ঝড় সৃষ্টি করে । তোমাকে কি করে বুঝাব?
আদিল ভাবছে,
জেনি এখন আনির পিছন নিবে । নানা ভাবে আনির ক্ষতি করতে চাইবে এটা আমি হলপ করে বলতে পারি । এই মেয়ে কে আমার হারে হারে চিনা আছে । কিন্তু এই আদিল মেহবুব থাকতে তার ভালোবাসার গায়ে একটা আঁচ ও লাগতে দিবেনা । এটা আমার নিজের কাছে করা নিজের প্রমিজ ।
আদিলের ভাবনায় ছেদ পড়ল আনিতার ডাকে । আনিতা বলছে ,
-আদিল ভাইয়া আমি বাসায় চলে যাবো।আমার ভালো লাগছে না ।
উনি আমার দিকে মায়া ভরা চোখে তাকিয়ে বললেন ,
-আই এম সরি আনি । আমার জন্য জেনি তোমায় এত্তগুলা বাজে কথা বলে গেল ।
আমি নিরব কন্ঠে বললাম ,
-ইট’স ওকে আদিল ভাইয়া আমি কিছু মনে করিনি । বলেই একটা ফেইক হাসি দিলাম ।যাতে উনার মনটা ভালো হয়ে যায় । উনিও মুচকি হাসি দিয়ে বললেন,
-চলো বের হওয়া যাক ।
আর কোনো কথা না বলে উনার পিছনে হাঁটতে লাগলাম ।
-জেনির কথা গুলো বার বার কানে প্রতিধ্বনি হচ্ছে । আবার কান্না পাচ্ছে খুব । এই মেয়ের মাইন্ড এতো নোংরা ছি! “সুন্দর হলেই না ভেতরটাও সুন্দর হওয়া প্রয়োজন”।জেনি যতটা সুন্দর তার চেয়ে দ্বিগুন কুৎসিত তার মন !!



আমার আর কোনো দিকে খেয়াল নেই । এলোমেলো পায়ে গাড়ির কাছে আসলাম । এসেই গাড়ির ভেতর ধপ করে বসলাম । কিছু ভালো লাগছে না চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে । আমাকে কেউ কখনো লোভী বলে গালি দেয়নি , মিথ্যা অপবাদ টা আমার বুক ভারি করে দিচ্ছে । মস্তিষ্ক ফাঁকা ফাঁকা লাগছে , এই মূর্হতে লোভী শব্দটা ছাড়া মাথায় আর কোনো শব্দ নেই ।
আদিল ভাইয়া গাড়ি ড্রাইব করছেন আর আড়চোখে তাকাচ্ছেন আমার দিকে । আমি ইচ্ছে করে আমার চুল থেকে রাবার টা খুলে দিলাম । যাতে আমার কান্না মাখা মুখটা আদিল ভাইয়ার চোখের ওগুচরে থাকে ।


-বাতাসে ঝাপটায় চুল গুলো আমার চোখে মুখে লেপ্টে আছে । এখন ইচ্ছে মতো কাঁদতে পারছি উনি বুঝতে পারলে কষ্ট পাবেন, নিজেকে অপরাধি ভাববেন ।
গাড়ি ব্রেক করায় আমি চোখ মুছে উনাকে বললাম ,
-আমরা এসে গেছি আদিল ভাইয়া ?তাকিয়ে দেখি এটা বাসা নয় । বড় একটা শপিংমল ।আমি কিছু বলতে যাব তখনি উনি গম্ভীর গলায় বলে উঠলেন ,
-নামো আনি এখানে আমার দরকার আছে।
বাধ্য মেয়ের মতো নেমে গেলাম ।
আমরা লিফ্টে উঠলাম উপরের মল গুলোতে যাওয়ার জন্য ।
লিফ্টে উঠে উনি সুইচড বাটন চেপে দরজা বন্ধ করে দিলেন । আমি লিফ্টের এক কোণায় জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে আছি ।
হঠাৎ করে আদিল ভাইয়া আমাকে হ্যাচকা টানে উনার বুকে নিলেন । তারপর বলতে লাগলেন ,
-আনি তুমি এখনো কাঁদছ কেন?সারা রাস্তা কেঁদেছ ভাবছ আমি দেখব না ? তুমি যদি আর কাঁদবে তাহলে মেরে তক্তা বানিয়ে দিব।
বলেই আরো শক্ত করে উনার বুকে চেপে ধরলেন । আমার কান্না টা আরো বেড়ে গেল ,উনার বুকে মুখ গুঁজেই কেঁদে চলছি । কান্না থামাতে পারছি না ।


আদিল ভাইয়া আমার মুখটা উপরের দিকে তুলেই, উনার ঠোঁট দিয়ে আমার ঠোঁটে চুমু বসিয়ে দিলেন । আর আমি উনার এমন কান্ডে ফ্রিজড হয়ে গেলাম । সব কিছু আমার মাথার উপর দিয়ে গেল । এখনো আমি আমার ঠোঁটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি ।


যখন বুঝতে পারলাম কি হয়েছে,তখন উনার দিকে জিজ্ঞাসা দৃষ্টিতে তাকালাম ?
আর উনি বাঁকা হাসি দিয়ে বললেন ,
-তোমার কান্না থামছে না বলে চুমু দিলাম ।
দেখনা আমার চুমু খাওয়ার জন্যই তো এতো সময় কাঁদলে । চুমু দিতেই কান্না থেমে গেছে ।
বললেই পারতা আনি ,তুমি আমার চুমু খেতে চাও,তাহলেই তো হয়ে যায় । এতো কান্না-কাটির দরকার কি ? বলেই শয়তানি হাসি দিলেন উনি ।
আমি লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছি । হাসিও পাচ্ছে খুব উনার কথা বলার ধরন দেখে ।
মনে মনে বজ্জাত টা কে গালি দিলাম , ব্যাটা চুমুকুর ।
ইতিমধ্যে আমরা লিফ্ট থেকে নেমে গেছি । এখন আর কান্না পাচ্ছে না , মন কিছুটা ভালো হয়ে গেছে ।বজ্জাতটার দিকে তাকাতে ও পারছি না লজ্জায় । উনি মল থেকে কি কি যেন কিনলেন ।
তারপর বাসার দিকে রওনা হলাম । বাহিরে তাকিয়ে দেখছি কানাডার শহর ।সন্ধ্যা হয়ে গেছে আভছা আলো দেখা যাচ্ছে । অন্ধকার গুলো কানাডার শহরটা কে ঘিরে ধরছে । সন্ধ্যার ম্লান আলোয় কানাডার শহর কে আরো মনো মুগ্ধকর দেখাচ্ছে ।


বাসায় ঢুকে একটু অবাক হলাম , বাসায় এতো সাঁজ সজ্জা কেন? বাসাকে খুব মনোরম ভাবে সাঁজানো হয়েছে । চারিদিকে লাইটিং লাগানো। আদিল ভাইয়া আমায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে উঠলেন ,
-ভেতরে চলো আনি , ভেতরে গেলে বুঝতে পারবে এই সাঁজ-সজ্জার কারণ ..!!(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here