আলেমের বউ পর্ব ৯+১০

0
419

#আলেমের_বউ (পর্ব-৯+১০)


নূরে জান্নাত আপু নাজিফাকে দেখতে আসেন মেডিকেল।


নাজিফা বোন,কেমন লাগছে এখন?
নাজিফা চোখ তুলে তাকায়!সব ভাষা হারিয়ে গেছে কথা বলার!
কোনো উওর দিলো না!শুধু চোখের থেকে নিরব অশ্রু কণা অঝরে ঝড়ে পড়ছে!
জান্নাত আপু জড়িয়ে ধরে নাজিফাকে!সে এসেছে মূলত নাজিফাকে বুঝাতে!কিন্তু সে ও সব ভাষা হারিয়ে কাঁন্না করা শুরু করে!

-আপু নুসাইর আমাকে একা করে দিয়ে চলে গেলো!আমি ভাই হারা হয়ে গেলাম!কেন নুসাইর চলে গেলো?সে কী বুঝেনা আমি কষ্ট পাবো!তাকে ছাড়া কী করে থাকবো?
-নাজিফা আমাদের সবাইকেই একদিন চলে যেতে হবে রে বোন!
জান্নাত আপু নিজেকে শক্ত করেন!তারপর নাজিফাকে বলতে শুরু করেন!

আল্লাহ্ তাআলার উপর ভরসা রাখ বোন।আল্লাহ্ প্রতি ভরসা ছাড়া কোন বান্দাই কোন মূহুর্ত অতিবাহিত করতে পারে না। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতও বটে।
আল্লাহ্ বলেন:
“আর ভরসা কর সেই জীবিত সত্বার (আল্লাহর) উপর, যিনি কখনো মৃত্যু বরণ করবেন না।” [সূরা ফুরক্বান-৫৮]


আপু আল্লাহ্ কেন এমন করলো!নুসাইরকে কেড়ে নিলো আমার থেকে!
-নাজিফা বোন শুন,
আল্লাহ্ বলেন কুরআনে:
আল্লাহতালার রহমত হতে নিরাশ হয়ো না
কারন কাফের সম্প্রদায় ব্যাতীত আল্লাহর রহমত হতে কেউ নিরাশ হয়নি।
(সূরা ইউসুফ-৮২)

আআল্লাহ্ কুরআনে বললেন,
তোমরা যদি মুমিন হয়ে থাকে তবে আল্লাহর উপরেই ভরসা কর।” [সূরা মায়েদা- ২৩]



আপু আমার খুব কষ্ট হয় নুসাইকে ছাড়া থাকতে!
-নাজিফা আল্লাহ্ কাউকে সাধ্যের অতিরিক্ত কষ্ট দেন না(আল-আনাম-১৫২)
“নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন”ধৈর্যধারণ কর বোন!

আল্লাহ্ কুরআনে আরো বলেলন:
“মু’মিনগণ যেন একমাত্র আল্লাহর উপরেই ভরসা করে।” [সূরা তওবা- ৫১]

তিনি আরও এরশাদ করেন:
“যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করবে, তিনিই তার জন্য যথেষ্ট হবেন।” [সূরা ত্বলাক- ৩]

তিনি আরও বলেন,
“যখন তুমি দৃঢ়ভাবে ইচ্ছা করবে, তখন আল্লাহর উপর ভরসা করবে। নিশ্চয় আল্লাহ্ ভরসা কারীদের ভালবাসেন।”
[সূরা আল ইমরান- ১৫৯]

১টি হাদীছও বর্ণিত হয়েছে। আনাস (রা:) হতে বর্ণিত,তিনি বলেন: জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল,হে আল্লাহর রাসূল! উটটিকে বাঁধার পর আল্লাহর উপর ভরসা করব? নাকি আল্লাহর উপর ভরসা করে (না বেঁধেই) ছেড়ে দিব? তিনি (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: “আগে তা বেঁধে দাও,তারপর আল্লাহর উপর ভরসা কর।” (তিরমিযী)

এক্ষেত্রে একদল লোক বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ে (প্রয়োজনীয় উপকরণ অবলম্বন না করে, কাজ না করে,পরিশ্রম না করে) নিজেদের অপারগতাকে ভরসা ভেবেছে, আর তাকেই ওযর বা ছুতা হিসেবে গ্রহণ করেছে। ফলে নিজের এবং পরিবারের অনেক অধিকার- ওয়াজিব বিষয় বিনষ্ট করেছে।



উল্লেখযোগ্য: রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হিজরতের সময় মদিনার দিকে যাওয়ার জন্য মক্কা থেকে উল্টা দিকে গমন করেন। আর তা ছিল রাতের আঁধারে। অত:পর তাঁরা ‘ছওর’নামক গুহায় আত্মগোপন করেন। আবু বকর (রা:) নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর হিজরতের ঘটনা বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেন, আমরা যখন ‘গারে ছওরে’ ছিলাম তখন আমি উপর দিকে দৃষ্টি দিয়ে দেখলাম মুশরেকদের পা আমাদের মাথার ঠিক উপরেই। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! তাদের কেউ যদি নিজের পায়ের দিকে তাকায় তাহলেই আমাদেরকে দেখতে পাবে। তখন তিনি আমাকে বললেন, “আমাদের দুজন সম্পর্কে তোমার ধারণা কি হে আবু বকর! আল্লাহ্ আমাদের তৃতীয় জন। অর্থাৎ আমাদের সাহায্যকারী।” (বুখারী ও মুসলিম)

যে কথা পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ এভাবে বর্ণনা করেছেন,
“যখন তাকে কাফেররা বহিষ্কার করেছিল, তিনি ছিলেন দুজনের একজন, যখন তারা গুহার মধ্যে ছিলেন। তখন তিনি আপন সঙ্গীকে বললেন, বিষন্ন হয়ো না, আল্লাহ্ আমাদের সাথে আছেন।” (সূরা তওবাহ্-৪০)

সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করবে,সে অকল্পনীয় ভাবে তার মর্যাদা লাভ করবে,তার ফলাফল ভোগ করবে। আর সে হবে সর্বাধিক উন্মুক্ত হৃদয়ের মানুষ,সবচাইতে সুখী মানুষ। হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা”[তিরমিযীঃ২৬৭৪]

বুঝলি নাজিফা?
-হুম,তুমি সব সময় আমার পাশে থেকো আপু!তুমি ও আবার আমাকে একা করে চলে যেওনা!
-ইনশাআল্লাহ,যাবো নারে পাগলী!
আজ আসি তাহলে!

সে দিনের মতো বিদায় নিয়ে চলে যায় নূরে জান্নাত আপু!




একটু ভালো দেখলে নাজিফাকে বাড়িতে নেওয়ার কথা বলে ডাক্তার।বাড়িতে নিয়ে আসে নাজিফার বাবা নাজিফাকে।কিন্তু নাজিফা কারো সাথে তেমন কথা বলেনা!
অপরদিকে,

আরিফুর রহমান বউ হারিয়ে তারপর ছেলেকে হারিয়ে মনমরা হয়ে পড়ে।তার উপর মেয়েটা ও কথা বলে না কারো সাথে।কষ্টের পাহাড় বুকে নিয়ে নাজিফার মাথায় হাত রাখে।নাজিফা চোখের পানি ফেলে চলচল চোখে বাবার দিকে তাকায়।নাজিফা ও বুঝে বাবা ও তো কতটা কষ্ট পাচ্ছে।নাজিফা বাবার হাত ধরে আরো বেশি কাঁন্নায় ভেঙ্গে পড়ে।
কী অবাক করা বিষয়
যে মানুষটা ছোট্টকালে মা হারিয়ে বাবা হারিয়ে, ভাই আর ভাবীদের অবহেলায় বড় হয়েছে।আবার সেই মানুষটাই তারপর নিজের বউ,ছেলেকে হারিয়েছে,তার থেকে কষ্টের মানুষ কে আছে আর!নাজিফা বাবার কষ্ট বুঝতে পারে কিন্তু প্রকাশ করার মত কোনো ভাষা নেই!


চলবে,

#আলেমের_বউ (পর্ব-১০)


নাজিফার বাবার স্বপ্ন মেয়েকে পড়াবেন,উচ্চ শিক্ষিত করবেন,নাজিফার যতটুকু ইচ্ছা পড়বে।নাজিফার কোনো ইচ্ছা তিনি অপূর্ণ রাখবেন না ইনশাআল্লাহ!কুমিল্লা থেকে এস এস সি দিয়ে শেষ হলে!ইন্টারের এডমিশনের জন্য ভালো কলেজ গুলোতে এপ্লিকেশন করে নাজিফা ঢাকাতে।এপ্লাই করার পনেরো দিন পর রেজাল্ট দেবে তাই এই পনেরো দিন
বাড়িতে থাকবে নাজিফা।তাছাড়া ঢাকাতে ও পরিচিত কেউ নেই,নাজিফার বাবা আরিফুর রহমানের ও কাজ খুঁজে নেবেন সেই সাথে একটা বাসা ও ভাড়া নেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে ব্যস্ত নগরীতে যাত্রা দিলেন!



চাঁদপুর সদর ঘাটে এসে পকেট দেখেন মাত্র একশত ত্রিশ টাকা আছে!লঞ্চে উঠেন,
টিকেট কাটতে গেলে জানতে পারেন বি আই পি সিট গুলোর দাম দুইশত টাকা।এক সিট দুইশত টাকা শুনে আরিফুর রহমান দাঁড়িয়ে থাকে!টিকেট কাউন্টারের লোকটি বলেন,”নরমাল সিট আছে একশত টাকা করে!
নাজিফার বাবা আরিফুর রহমান চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিলো তখন ও!
কাউন্টারের লোকটি নাজিফার বাবার নিরবতায় কি বুঝলো আল্লাহ্ জানে!তিনি অন্য লোকদের টিকেট কাটা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন!
আরিফুর রহমানের চোখ গেলো লঞ্চের মাঝ বরাবর যেখানে মানুষ ঘুটিশুটি হয়ে বসে আছেন কেউ শুয়ে আছেন!নাজিফার বাবা টিকেট কাউন্টারের লোকটিকে দেখিয়ে বললেন ঐ জায়গায় থাকলে কত টাকা লাগবে?
লোকটি ব্যস্ত গলায় উওর দিলেন ৭০ টাকা দেন!
নাজিফা বাবা আরিফুর রহমান
৭০ টাকায় টিকেট নিয়ে নেয়!
লঞ্চ প্রায় ছয় ঘণ্টা পর ঢাকা সদর ঘাট পৌঁছে যায়!


সদর ঘাটে পা রাখেন আরিফুর রহমান!পকেটে এখন আর ৬০ টাকা আছে!প্রচন্ড ক্ষুদা পায় তাই রেস্টুরেন্ট খুঁজেন চোখ তুলে এদিক ঐ দিক।কিন্তু এত কম টাকায় কী খাবেন!তাই তিনি চিন্তা করে একটি টঙ্গ দোকানে বসেন!দোকানদারকে বললেন এক কাপ রং চা দেন!সাথে নারকেলর দুইটা বিস্কুট দিয়েন!মুখে দিতে যাবে তখনি মনে হলো নাজিফা কী করছে?কিছু খেয়েছে মেয়েটা?
ফোন হাতে নিয়ে!বড় ভাবীর ফোনে কলে দিলেন আরিফুর রহমান!
-হ্যালো!
-আসসালামু আলাইকুম ভাবী!আমি নাজিফার বাবা বলছি!
-ওয়ালাইকুমুস সালাম!বল?
-আমি ঢাকায় এসেছি,ঠিক ভাবে পৌঁছলাম!নাজিফাকে বলিও!
-আচ্ছা”
-ভাবী,নাজিফা খেয়েছে?
-তুর কী মনে হয়?তুর মেয়েকে না খাইয়া রাখবো!
-না ভাবী এমন বলছিনা!আসলে নাজিফার আমাকে ছাড়া খায়না তো তাই!
-হয়েছে ন্যাকামু রাখ!মেয়ে বড় হয়েছে দু’দিন পর স্বামীরর ঘরে যাবে!বাপ মেয়ে মিলে আর ঢং করিস না!
লাইন কেটে দেন!


মেয়েটা খেয়েছে এখন আমি নিশ্চিতে খেয়ে নেই!



বিল আসছে নয় টাকা!
এক টাকার একটা পান মুখে নিয়ে,
পকেটে পঞ্চাশ টাকা রেখে দোকান থেকে বেরিয়ে পড়েন!


সারাদিন হেটে হেটে অনেক দূরে আসেন।অনেক খুঁজে ও কোনো কাজের মিল করতে পারলেন না!


সারাদিন কিছু না খেয়েই হেটেছে,তাই নাজিফার বাবা খুব ক্লান্ত আর ক্ষুদায় একটি গাছের নিচে বসে যান।
ভাগ্য আজ আরিফুর রহমানকে কোথায় নিয়ে আসলো!


হেটে হেটে তিনি গাজিপুর ন্যাশনাল ভার্সিটির সামনে চলে আসেন!একটি দোকান থেকে কিছু পাউরুটি আর কলা খেয়ে নিলে!বিল আসে বিশ টাকা!একটা বৃদ্ধ লোক পাশের থেকে ডেকে বলেন,বাবা কিছু টাকা দেইন্না গো,আজ সারাদিন কিচ্ছু খাইনা!
আরিফুর রহমান বুঝে সারাদিন না খেয়ে থাকার কষ্টটা!তিনি ও যে এমন ভুক্তভোগি!চেয়ে দেখেন পকেটে আর মাত্র ত্রিশ টাকা আছে!
চাচা আপনার যা ইচ্ছে খেয়ে নিন!বিল আমি দিয়ে দেবো!
বৃদ্ধ লোকটি পনেরো টাকা বিল আসলো।আরিফুর রহমান নিজের পকেট এ আর পনেরো টাকা রেখে দিয়ে!আবার ও ব্যস্ত শহরের রাস্তার পাশে জ্বলে থাকা আলোতে অনেকটা পথ হেটে আসলেন তবুও রাতে থাকার মত একটু জায়গা ও খুঁজে পেলেন না!
!
!
ক্লান্ত শরীর নিয়ে আর হাটতে ও পারছেন না তিনি!


চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here