আলেমের বউ পর্ব ২১+২২

0
429

#আলেমের_বউ (পর্ব-২১+২২)

মামুনি:কীরে তোরা রেডি হবি কখন এগারোটা বাজে।তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নেয়।গাড়ি চলে আসছে।
নাজিফা:এই তো নিকাব লাগাবো তারপর শেষ।


প্রায় একটা বাজে
ভাইয়ার শশুড় বাড়িতে চলে আসলাম রাইসা,সাজিয়া খালামনি আর আমি।
জোহরের নামাজ হবু নতুন ভাবী মিলে সবাই শেষ করলাম।


সবাই মিলে ভাবীকে সাজানোর কাজ শেষ হলো।বিয়ের কাজ ও শেষ হলো।
খাওয়া দাওয়ার ও শেষ হলো।
আমি দেখলাম ভাবীর মা কাঁন্না করছে।
অদ্ভুত মায়া কাটিয়ে ভাবী বিয়ের আসনে বসে আছে!
এ নিয়ম কে যে বের করেছে। যদি তাকে হাতের কাছে পাইতাম,তাহলে মেরে একদম বর্তা বানিয়ে ফেলতাম আমি।


ভাবীর মায়ের মুখে হতাশার অশ্রু।সবার অগোচরে একদম খায়েশ মিটিয়ে তিনি কাঁদতেছেন।
জানিনা এই অশ্রুতে কারোর নামে অভিশাপ লিখা আছে কিনা।তবে এই অশ্রুতে ব্যথা লুকিয়ে আছে, এটা আমি নিশ্চিত।গাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে চোখের অশ্রুকণা লুকিয়ে রেখে হাসিমুখে একটা মেয়েকে বিদায় দেওয়ার ব্যথাটা কতটুকু যন্ত্রণাকর তা শুধু একজন মা-ই জানেন। আদর, সোহাগ, ভালোবাসা দিয়ে একটা মেয়েকে অন্যের ঘরে প্রদীপ জ্বালানোর জন্য বড় করাটা সত্যি সাংঘাতিক ব্যাপার। যখন বুকের মধ্যে ফুঁপিয়ে কান্নারত অবস্থায় ভাবী বলল,আমাকে ক্ষমা করো মা।এতদিন খুব বেশি জ্বলিয়েছি তোমায়। হৃদপিণ্ডের চাপটা ভাড়ি হতে থাকে তখন। মনে হয় পৃথিবীর সবচেয়ে ভাড়ি বস্তুটা আমার বুকের সাথে ঠক্কর লাগিয়ে মনকে একদম ছিন্নভিন্ন করে। অসহায় এক অবস্থা তখন। নূনাজলগুলো আসলেই কতটুকু দামী জিনিস, তা ঠিক তখনই বুঝে আসে, যখন অপরিচিত কারোর হাতে সপে দিয়ে আসে।খুব করে তখন টেনশন জাগে। অপরিচিত লোক, অপরিচিত মুখ, অপরিচিত জায়গা।মেয়েটা সুখের দেখা পাবে তো!!!
আমার কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে অসহায় মানুষদের তালিকার মধ্যে সর্ব প্রথম যেই মানুষটির নাম লিখা আছে, সে হলো বিয়ের আসরের মেয়েটি।বাড়ি ভর্তি মেহমানরা গিজগিজ করছে।আনন্দ ফূর্তি হৈ হোল্লার মধ্য দিয়ে যে মানুষদের আমি কাঁদতে দেখেছি তারা হলো মেয়েটির জন্মদাত্রী মা। অনুষ্ঠানের জমকালো আয়োজনে মেয়েটির চোখের থেকে টপটপ করে গড়িয়ে পড়া অশ্রুকণাগুলি আমি কাছ থেকে দেখেছি।এতদিনের সুখ দুঃখ ভাগীদার মা বাবা, আর খুনসুটির আদরের ভাইকে ত্যাগ করেছে সে হলো বিয়ের আসরে বসে থাকা মেয়েটি। বিয়ের তারিখ নির্ধারন হওয়ায় দু’জন মানুষ খুব করে কাঁদে। একজন চলে যাবে বলে কাঁদে। অন্যজন হারাবে বলে কাঁদে। আমি যেসব নীতিমালা সম্পর্কে জানি, সেখানের কেউ-ই চলে যাওয়ার সময় কাঁদেনি। একমাত্র বিয়ের আসরের মেয়েটি।
.
ধৈর্য ধারণের জন্য যদি কাউকে পুরস্কৃত করা হত তাহলে সেখানে মেয়েদের তালিকা ছাড়া অন্য কারোর তালিকা খুঁজেই পাওয়া যেত না।আল্লাহ সুবাহানাহু ওতাআল্লাহ মেয়েদের একটা মহান গুণ দিয়ে জন্ম দিয়েছেন, আর সেটা হলো একটা মেয়ে হয়ে দুটি ঘর উজ্জ্বল করার ক্ষমতা। বাপের ঘরের সাথে তারা অপরিচিত একটা স্বামী নামক মানুষের ঘরও উজ্জ্বল করে তোলে।


ভাবীর ছোট ভাইটা চলচল চোখে বোনকে বিদায় দিলো।
আমি জানি তার মনের অবস্থা কী,চাইলে ও আর ঘরে এসে বড় আপুর ব্যাগ থেকে চকলেট চুরি করতে পারবে না,বায়না ধরে বড় আপুর কাছে আবদার করে ও কোনো টাকা নিতে পারেনা।


ছেলেরা সহজে কাঁন্না করে না!ভাবীর বড় ভাই ও পারছিলো না।কিন্তু আদরের বোনকে আমার সোহান ভাইয়ার সাথে গাড়িতে তুলে দিতে তার বুকটা ও ফেটে যাচ্ছিলো।কিন্তু তা প্রকাশ করতে পারছিলো না।


কখন যে ভাবীর সাথে মনের অজান্তে কাঁন্নায় করে আমি ও নিকাব ভিজিয়ে ফেলেছি বলতেঢ়য়য়য়পারবো না।ঘোর কাটলো সাজিয়া খালামনির ডাকে,”নাজিফা উঠ গাড়িতে।
-হ্যাঁ খালামনি

সন্ধ্যায় রাইসা মিলে ছাদে বসে গল্প করছিলাম সাজিয়া খালামনি সহ।
রাইসা:নাজিফা আজ কত তারিখ ছিলো?
নাজিফা:কেন তেরো তারিখ।
রাইসা:আগামীকাল কয় তারিখ?
সাজিয়া:চৌদ্দ তারিখ।
রাইসা:হুম মানে হলো ১৪
ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালবাসা দিবস।
নাজিফা:হুম বেহায়াপনা দিবস।
সাজিয়া:মানে?
রাইসা:ভালবাসা আবার বেহায়াপনা হয় ক্যামনে?
নাজিফা:শুনো,
১৪ ফেব্রুয়ারি! বর্তমান বিশ্বে এ দিনকে ভ্যালেন্টাইন ডে (বিশ্ব ভালোবাসা দিবস) নামে উদ্যাপন করা হয়। ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে এ দিবস অত্যন্ত আড়ম্বর, জাঁকজমকপূর্ণ ও রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা হয়। এর সূচনা মধ্যযুগে হলেও নব্বই দশকের শুরু থেকে বিশ্বব্যাপী এর প্রসার ঘটে। আশির দশকেও বাংলাদেশের মানুষ এ দিবসটির সঙ্গে ছিল অনেকটা অপরিচিত। তবে নব্বইয়ের দশক থেকে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর সহযোগিতায় ও মিডিয়ার কল্যাণে এ দেশের যুবসমাজের মাঝে তা ছড়িয়ে পড়ে। ভালোবাসা দিবসের উৎস নিয়ে নানা মত প্রচলিত আছে। এ সম্পর্কে যদ্দুর জানা যায়, লুপারকালিয়া নামে প্রাচীন রোমে এক উৎসব ছিল, যা ১৩ থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি অবধি হতো। যে উৎসবে নারী-পুরুষ সমানতালে মদ পান করত এবং লটারির মাধ্যমে সঙ্গী বেছে নিয়ে তার সঙ্গে একান্তে মিলিত হতো। অতঃপর রোমানরা যখন তাদের প্রাচীন ধর্ম ত্যাগ করে খ্রিস্টধর্মে ধাবিত হচ্ছিল, তখন তারা প্রাচীন দেবীর নামে লুপারকালিয়া উৎসবকে মেনে নিতে পারছিল না। আবার উৎসবটি খুব জনপ্রিয় ছিল বলে ছেড়েও দিতে পারছিল না। অবশেষে উৎসবটিকে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের নামে উৎসর্গ করে উদযাপন করত। বিখ্যাত ইতিহাসবিদ নোয়েল লেন্সকি বলেছেন, লুপারকালিয়া উৎসবে পুরুষরা দেবী লুপারকাসের নামে একটি ছাগল আর একটি কুকুর বলি দিত। তারপর মৃত ছাগল বা কুকুরের চামড়া দিয়ে উৎসবে অংশগ্রহণকারী মেয়েদের বেদম প্রহার করত। তাদের বিশ্বাস, এ প্রহারের কারণে মেয়েদের প্রজননক্ষমতা বাড়ে।
ভালোবাসা দিবসের সূচনা ইতিহাস সম্পর্কে আরও যা জানা যায়, ২৭০ খ্রিস্টাব্দে রোমান সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস বিবাহিত পুরুষদের সেনাবাহিনীতে নিয়োগ বন্ধ করে দেন এবং আইন জারি করেন, তার সাম্রাজ্যে কেউ বিয়ে করতে পারবে না। কারণ বিবাহিত সেনারা স্ত্রী-সন্তানদের মায়াজালে আবদ্ধ হয়ে যুদ্ধের ময়দানে মৃত্যুর ঝুঁকি নিতে চাইত না। কিন্তু রোমান এক ধর্মযাজক সেন্ট ভ্যালেন্টাইন সম্রাটের ন্যায়ভ্রষ্ট নিয়মের প্রতিবাদ করেন এবং বিয়ে করেন। এ খবর সম্রাট ক্লডিয়াসের কাছে পৌঁছলে তিনি সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে গ্রেফতার করে মৃত্যুদণ্ড দেন। আর সে মৃত্যুদণ্ডটি কার্যকর হয় ১৪ ফেব্রুয়ারি। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই এ দিবসকে ‘বিশ্ব ভালোবাসা দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়। আবার কারও কারও মতে, ভ্যালেন্টাইন ছিলেন একজন খ্রিস্টান পাদরি ও চিকিৎসক। সে সময় রোমানরা ছিল দেব-দেবীর অনুসারী। ২৭০ খ্রিস্টাব্দে রোমান সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস খ্রিস্টধর্ম প্রচারের অভিযোগে ভ্যালেন্টাইনকে মৃত্যুদণ্ড দেন। বন্দী অবস্থাতেই ভ্যালেন্টাইন জেলারের অন্ধ মেয়ের চোখের চিকিৎসা করেন। ফলে মেয়েটি তার দৃষ্টিশক্তি ফিরে পায়। মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের দিন ভ্যালেন্টাইন মেয়েটিকে লিখে যান, Love From your valentine. আর এ ঐতিহাসিক দিনটি ছিল ১৪ ফেব্রুয়ারি।
প্রেম-ভালোবাসা, মায়া-মমতা ও ভক্তি-শ্রদ্ধা মানুষের স্বভাবজাত বিষয়। এসব মানবিক গুণ আছে বলেই এখনো টিকে আছে এ নশ্বর পৃথিবী। আল্লাহতায়ালা নিজেই ঘোষণা করেছেন, ‘আল্লাহর কুদরতের মধ্যে অন্যতম একটি নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের থেকে তোমাদের স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাকো এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা ও অনুগ্রহ সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্য নিদর্শনাবলি রয়েছে।’ (সূরা আর রুম : ২১)।
ভালোবাসা হলো খোদায়ি অনুভূতি, আত্মার তৃপ্তি ও মনের প্রশান্তি। আল্লাহতায়ালা আমাদের অকৃত্রিম ভালোবাসা শিক্ষা দিয়েছেন, যা কোনো বিশেষ দিবসের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। ভালোবাসা, সম্প্রীতি ও উত্তম চরিত্রমাধুর্য দ্বারা আমাদের প্রিয় নবী (সা.) জয় করে নিয়েছেন শত কোটি মানুষের হৃদয়; বিশ্বময় ছড়িয়ে দিয়েছেন ইসলামের বিকিরণ। প্রতিটি ভালোবাসা হতে হবে আবেগ, বিবেক ও স্রষ্টার সম্মতির সমন্বয়। কিন্তু যে ভালোবাসার পরিচালক হয় শুধু আবেগ বা কুপ্রবৃত্তি, সে ভালোবাসা মানুষের ইহকাল-পরকাল উভয়কে ধ্বংস করে দেয়। ধ্বংস করে মানুষের মনুষ্যত্ব, জাগরিত করে পশুত্বের হিংস্র বৈশিষ্ট্য। দুঃখজনক হলেও সত্য, বর্তমান বিশ্বে ভালোবাসা দিবসের নামে উৎপত্তি হচ্ছে নানান অপসংস্কৃতি ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড, ছড়িয়ে পড়ছে অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা। ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে পাশ্চাত্য সংস্কৃতির আগ্রাসন; যা ইসলামের নীতি ও আদর্শবহির্ভূত। যে কোনো দিবস উদ্যাপনে সুস্থ ও সুন্দরভাবে আবেগ-অনুভূতি প্রকাশে সচেষ্ট হওয়া ইসলামের শাশ্বত নীতি। আজ পবিত্র ও সত্যিকার ভালোবাসার অভাবে সর্বত্র বৃদ্ধি পাচ্ছে হিংসা-বিদ্বেষ, ছড়িয়ে পড়ছে গুম, খুন ও ধর্ষণের মতো অসংখ্য অপরাধ। তাই মহান স্রষ্টার সমীপে এই মিনতি যে, সমাজ থেকে চিরতরে নির্মূল হোক সব ধরনের অশ্লীলতা, বেলেল্লাপনা ও অপসংস্কৃতি। জয় হোক পবিত্র, অকৃত্রিম ও নিঃস্বার্থ ভালোবাসার।


চলবে,

#আলেমের_বউ (পর্ব-২২)


ছাদের থেকে এসে
সোহান ভাইয়ার ফোন নিয়ে সব বিয়ের পিক দেখতে লাগলাম।
সোহান ভাইয়া বলল,”নাজিফা তুই যে গতকাল জিজ্ঞেস করছিলি কে নাত শরীফ গেয়েছে একটা পিক দেখিয়ে বলল,
এটা ঐ ফ্রেন্ড আমার।
-আমি পিকটা জুম করছিলাম আর ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করলাম সে বিয়েতে যায়নি?
-না!জরুরি কাজ পড়ে গেছে সকালে নাস্তা করে চলে গেছে।
-ওহ আচ্ছা কী করেন তিনি ভাইয়া?
-সে আহলে সুন্নাতে ওয়াল জামায়াতের একজন আলেম।
-ওহ আচ্ছা বাড়ি কোথায়?
-আমাদের পাশের এলাকায় বেশি দূরে নয়!
-ওহ আচ্ছা
বলে আমি
তার পিকের দিকে এ অপলক নয়নে তাকালাম।খোঁচা খোঁচা দাড়ি,মাথায় টুপি,হলুদাভ গায়ের রঙ যেন চারপাশে ঠিকরে বেরিয়ে যাচ্ছে। ডান গালে সামান্য কাটা দাগ,সম্ভবত ব্লেডে কেটেছে। লালচে দাগটা রীতিমত চোখে পড়ছে। সে দাগ ছুঁয়ে দিয়ে বলতে ইচ্ছে করছে, ” পুরুষ মানুষ এত সুন্দর হবে কেন?”
তাদের সুন্দর হয়ে জন্মানোটা ভয়াবহ অন্যায়ের পর্যায়ে পড়ে।নারীজাতি পুড়ে ভস্ম হয়ে যাবে কিন্তু সেই ভস্মের কোন মূল্য নেই,তা কেবল ব্যবহৃত হবে দাঁত মাজার উপাদান হিসেবে। এইসব রূপবান পুরুষ না বুঝবে কোন নারীর চোখের ভাষা, না বুঝবে কোন নারীর ধীরে ধীরে অঙ্গার হয়ে যাওয়ার বেদনা। এক্ষেত্রে পুরুষ হয়ে জন্মানোর যথেষ্ট সুবিধা আছে। লাজ লজ্জা ভেঙে অন্তত বলা যায়, “আমি কিন্তু বিষ খাব” নরম হৃদয়ের নারী মন আর কতদিন অগলিত থাকবে?
কথা আর দেখা কিছুই হলো না।চলে গেলো সে।আল্লাহ হয়তো চায়নি এখন দেখা হোক তাই হয় তো হয়নি।আল্লাহ খুশিতে আমি খুশি।তিনি যখন চাইবেন,ইনশাআল্লাহ তখন দেখা হবে।



আবার ও নাজিফা মন দিলো পড়াতে দ্বিতীয় বর্ষের ফাইনাল দিয়ে বাড়িতে আসে।আর মামুনিকে রাইসার জন্য মেঝো ভাইয়ার কথা বলে।দুই পরিবার মিলে রাইসার সাথে নাজিফার মেঝো ভাইয়ার বিয়ে হয়ে গেলো।

বড় ভাবী:নাজিফা তাড়াতাড়ি গোসল করে আসো।
নাজিফা:আসতেছি।


গোসলখানা থেকে বের হয়ে রুমে বড় ভাবীকে ও দেখছিনা আর মেঝো ভাবীকে ও দেখছিনা।মামুনির রুমে গেলাম সেখানে মামুনি ও নেই।সারা বাড়িতে আমি একা ঘুরছি এই রুম থেকে ঐ রুম
এই দুপুরবেলা সবাই গেলো কোথায়।হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো।মেঝো ভাবীর ফোন!
-নাজিফা ছাদে আসো তাড়াতাড়ি।
-ঐ ভাবী!

দূর লাইন কেটে দিলো।কি জানি কি হলো ছাদে আবার।দ্রুত সিঁড়ি বেড়ে ছাদে উঠতে লাগলাম।সে কী ছাদের দরজা বাহির থেকে বন্ধ করা।দরজা ধাক্কা দিলাম কেউ খুলছেনা।দূর ফোনটা ও নিয়ে আসিনি।তাহলে আবার ভাবীকে কল দিতে পারতাম।কেউ মনে হচ্ছে দরজা খুলে দিয়েছে।
ছাদে পা রাখলাম তখনি
বড় ভাবী,মেঝো ভাবী আর মামুনি বলে উঠলো,””””happy birth day to u Nazifa””””
15.03.1999
বড় ভাবী:কেমন দিলাম নাজিফা?
নাজিফা:একদম ভয় পাইয়ে দিয়েছো।দুপুরবেলা কেউ জন্মদিন পালন করে নাকি?
মেঝো ভাবী:আমাদের একটা মাত্র ননদ,তাই করলাম আর কী!হিহিহি
মামুনি:একটাই তো মেয়ে!হিহিহি,তোর প্রিয় আইসক্রিম বানালাম।খেয়ে দেখ ক্যামন লাগে!
দুই ভাবী আর মামুনি মিলে আমার প্রথমবার জন্মদিন পালন করলো।



অনার্স ফাইনাল পরীক্ষা দিয়ে বাড়িতে আসি।সন্ধ্যায় ছাদে চাঁদ দেখতে যাই।বড় ভাবী আর মেঝো ভাবী পাশে ছিলো।মিট মিট করে হাসির শব্দ তুলে বলল,”আগামী শুক্রবার বিয়ে তোমার!
হা করে দুই ভাবীকে দেখলাম।আর বললাম,”ক্যার সাথে বিয়া?
বড় ভাবী:তোমার বরের সাথে!
আমার বিয়া আর আমি কি না জানিনা?!
বড় ভাবী:তোমার বড় ভাইয়ার ফ্রেন্ড!সে ঠিক করছে সব।
ভাবীর কথা শুনতেই আমি রীতিমতো অভাক।আমাকে একবার জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন মনে করলোনা রাগে সিঁড়ি বেড়ে নিচে চলে আসলাম।
.
.
.
মামুনি,মামুনি?
মামুনি:বল নাজিফা!
-আগামী শুক্রবার নাকি আমার বিয়ে?
মামুনি:কে বলল?
-বড় ভাবী বলল।
-হ্যাঁ তোর বড় ভাইয়া সব ঠিক করছে।
আমি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না,মামুনিকে জড়িয়ে ধরে কাঁন্না শুরু,,,,

আজ শুক্রবার নাজিফার বিয়ে।নাজিফা সকালে নামাজ পড়ে নাস্তা না করেই ঘুমাচ্ছে,,,,রাতে কাঁন্না আর চিন্তা করে ঘুম হয়নি।সকাল বেলা সব ঘুম চোখে এসে বসেছে।




তখনো আমি কাঁথা গায়ে দিয়ে গভীর ঘুমে আছি। মাথার তালুতে একটা নরম স্পর্শ টের পাচ্ছি।আমি চোখ মেলে তাকাই না।চোখ বুজেই নরম আদর নিচ্ছি।বুঝতে পারছিলাম এটা মামুনির হাত। আম্মুর সাথে মামুনির মিল।মামুনির আঙ্গুল গুলো পিয়াজের মত পলি পলি করে খাজ কাটা। কপালে যখন মামুনি হাত দিচ্ছিল স্পষ্টই আঙ্গুলের খাঁজ কাটা জায়গাতে খস খস সূক্ষ আওয়াজ তুলছিল।কম করে হলেও গত ত্রিশ বছর তিনি তার এই আঙ্গুলের ডগা দিয়ে গাজর, মুলো, আলু, পটল, পিয়াজ কেটেছেন। সময় সুযোগ বুঝে দা’ ও তার প্রতিশোধ নিয়ে নিয়েছে। নিত্যদিন কাটাকাটির ঘর্ষণে মামুনির আঙ্গুল গুলো এখন ফালা ফালা হয়ে আছে।সেই জায়গাগুলো কুচ কুচে কালো।
আমি ভাবি- একদিন মামুনির হাত ও ছিল লাঊ ডগার মতোন। তার আঙ্গুলের সাদা চামড়ার নিচেও একদিন রক্তরা খেলা করছে দেখা যেত, এখন সেসব জায়গা কালো।
মামুনি দক্ষিণের জানালা খুলে দিয়েছে। একটা মিষ্টি বাতাসে ঘর ভেসে যায়। অগ্রহায়ণের বাতাস সব সময় মিষ্টি। বহুদূরের মাটির ক্ষেত থেকে পাকা ধানের গন্ধ তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায় এই অগ্রহায়ণের বাতাস। আমার রুমে সেই বাতাস ডুকে। বাতাসে মামুনির মাথা থেকে কাপড় সরে যায়।
-নাজিফা আর কতক্ষণ শুয়ে থাকবি,উঠ না এবার,নাস্তা করবি,,,আয়!
-হুম উঠছি।


মেঝো ভাবী:বর পক্ষের কিছু মহিলা আসছে এই রুমে নাজিফা উঠ,
-কথাটা শুনে,মনে হচ্ছে পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে।কিন্তু আমি শুয়ে আছি তখন ও।টেনে বড় ভাবী তুলে বসিয়ে দিলো।আজ আম্মু নেই,নুসাইর নেই আর আব্বু ও নেই।আবার ও চোখের কোণে পানি চলে আসে,
ভয়ে ভয়ে জ্বর মনে হচ্ছে।জোহরের আজান শুনা যাচ্ছে।সময়টাকে আটকানো যায় না,উঠে অজু করে নামাজ পড়ে নিলাম। অনেক কথার শব্দ শুনতে পাচ্ছি,,
অপরিচিত কয়েক জন মহিলা আমার রুমে আসলো!!
-নাজিফা তুমি?(অপরিচিতা মহিলা)
-জ্বী,আমি নাজিফা।
-মাসাআল্লাহ্!ভাইয়ার পছন্দ আছে!
-অ্যাঁ,আমাকে কখন কোন ভাইয়া দেখলো,আবার পছন্দ ও করে নিলো মনে মনে বির বির করছি।
আরো একজন ঢুকলো মহিলা,হাতের ভিতর লাকেজ নিয়ে!!(অপরিচিতা মহিলা গুলোর দিকে তাকিয়ে)মেয়ের সব জিনিস,তাদের ফ্যামেলির কাউকে বুঝিয়ে দেওনা?
-(অন্য একজন অপরিচিতা)হ্যাঁ দিচ্ছি, বলেই একটা লম্বা লিস্ট হাতে নিয়ে বলা শুরু করলো,,,,১:শাড়ি,২….৩…৪,,,,ইত্যাদি,,,,,
-বড় ভাবী বলল,জ্বী সব পেয়েছি।
-অপরিচিতা এক জন বলল,তাহলে সাজানো শুরু করেন!!!
-মেঝো ভাবী বলল,”আপনাদের বউ, চাইলে আপনারা সাজাতে পারেন!আর এক সাথে আমরা সবাই মিলে সাজালে তাড়াতাড়ি ও হবে।
-অপরিচিতা একজন বলল,”হ্যাঁ,তাই তো!শুরু করা যাক!
-শাড়ী কোন রং এরটা পড়াবেন?(অপরিচিতা)
-বিয়ের সাজে কনেকে তো বেশি ভাল লাগে গোল্ডেন এর মাঝে লাল এমন শাড়ি!!(মেঝো ভাবী)
-আমরা এমন শাড়ি এনেছি তো,ঐ যে নিচের টা!!(অপরিচিতা)
-আমি হ্যাঁ করে দেখছি!!!এক্টু কাঁন্না করবো তা ও পারছিনা,কণ্ঠ নালীর মধ্যে আটকে যাচ্ছে আমার কাঁন্নার শুর।আমার বিয়ে,তাই তো সবাই কত খুশি।নিজের খুশি বিসর্জন দেওয়ার নামই তো ভালবাসা।যুগে যুগে সব মেয়েরাই তাদের খুশি বিসর্জন দিয়ে এমন করে বিয়ের পিড়িতে বসে।
-কী রে নাজিফা কী ভাবছিস(বড় ভাবী)
-বড় ভাবীর কথায় হুশ ফিরে আসলো,কই কিছু না তো!!
-কিছু না ভাবলে,বলতো আমরা একটু আগে কি বলছিলাম?
-আমি চুপ হয়ে গেলাম।কারন,আমি তো এতক্ষণ ওদের কোনো কথাই শুনি নি!!
-অপরিচিতা একজন বলল,”আমি জানি,ভাইয়ার কথাই ভাবছে!!!হি,হি,হি
-আমি এক্টু লজ্জা পেলাম।মাথা নিচু করে নিলাম।
-কে রে এটা,আমার নাজিফা মামুনি বুঝি?মাশাল্লাহ্(মামুনি)
-আমি দেখেছি তখন মামুনির ঐ মুখটি,হ্যাঁ পৃথিবীর সব থেকে সুন্দর তম দৃশ্য,,,মামুনির মুখের হাসি।কতদিন এই হাসির অপেক্ষায় ছিলাম।আজ সেই দিন,আমার বিয়ের দিন।তাকিয়ে রইলাম মানুনির দিকে।
-মামুনি আঁচলে মুখ আড়াল করে নিলো!এমন ভাব করছে যেনো চোখে কিছু পড়েছে।
-চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা করছে,”আমি বোকা নই,আমি বুঝিতো তুমি চোখের পানিটাকে আটকাতে পারোনি কিন্তু আড়াল করার অভিনয় টা খুব ভাল করেছো।আমি ও চোখের পানি আটকাতে পারিনি,অজরে ঝরে পড়ছে!!!
-অপরিচিতা একজন বলল,”সে কী গো?সব সাজ যে নষ্ট করে ফেলছেন কাঁন্না করে।আমি অবাক হচ্ছি এখান এই যুগের মেয়ে হয়ে ও আপনি কাঁন্না করে যাচ্ছেন!!!!
-আমি তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে নিলাম।
-সাজানো হয়েছে?নাহ্ হলে একটু পরে সাজাবেন।এখন কাজি সাহেব আসতেছেন,সবাই একটু সরে পড়েন।(বড় ভাইয়া)
সবাই দূরে গেলো,কেউ কেউ রুম থেকে চলে গেলো!!আমি অনুভব করছি,জ্বর কাপুনি দিয়ে আসছে!!তবুও নিজেকে শক্ত রাখার ট্রাই করছি!!!সব মেয়েদের কি বিয়ের সময় এমন হয়?নাকি শুধু আমারই এমন হচ্ছে?নাহ্ কিছু কিছু মেয়ে তো পালিয়ে বিয়ে করে,আল্লাহ্ জানে এই মেয়ে গুলো কত সাহসী!!!নাহ্, হয় তো এমন হয় কিন্তু বলেনা কাউকে,কাকে বা বলবে,,নাহ্ এমন হলে কি আর পালায় নাকি!!কি জানি বাবা,,,ভাবতে পারছি না আর!!!
-আপনি শুনছেন তো?? (কাজি)
-আমি তো কিছু শুনি নি,তাই চুপ করে রইলাম।কিছু বললাম না।
-আবার ও সব লিখা পড়ে নিলেন,তারপর বলল,”আলহামদুলিল্লাহ, বলেন?(কাজি)
-আমি অনুভব করছি,খুব জ্বর,,,গলা দিয়ে কোনো শব্দ বের করতে পারছি না।মনে হচ্ছে কেউ কণ্ঠনালীর মধ্যে চাপ দিয়ে রেখেছে।নাহ্ আমাকে যে বলতেই হবে,তা না হলে সবার সম্মান,মুখের হাসি শেষ হয়ে যাবে!!কিন্তু আমি মুখ কেন খুলতে পারছি নাহ্!!!!!আমার কথা বলার শক্তি কি আজ বিধাতা নিয়ে গেলো নাকি???
একটু আগে ও তো মানুনির আর ভাবীর সাথে কথা বলছি,তাহলে এখন কি হলো আমার!!!!!
-আপনি কী শুনছেন নাহ্??নাকি এই বিয়েতে রাজি নাহ্??!! (কাজি)
((((পাশের থেকে কিছু মহিলার কথা শুনা যাচ্ছে,মেয়ে হলো জেনারেল লাইনের,আরো ভার্সিটির মেয়ে।এমন মেয়েকে কিনা বিয়ে দিচ্ছে হুজুর ছেলের কাছে।এখানকার মেয়ে দাঁড়িওয়ালা ছেলে পছন্দ করে নাকি।এই মেয়ের হয়তো অন্য কোথায় সম্পর্ক আছে!বিয়েতে রাজিনা।)))
-আমি বুঝতে পারছি না কী হচ্ছে আমার সাথে,চোখ গুলো টান টান লাগছে,মাথাটা জিম জিম করছে,,আর নিজেকে আটকাতে পারিনি,জ্ঞান হারিয়ে ফেলি!!!!!

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here