আলেমের বউ পর্ব ৭+৮

0
457

#আলেমের_বউ (পর্ব-৭+৮)


-নাজিফা আপু ধরোতো?
-কী এটা?
-খুলে দেখোনা!
-আচ্ছা,প্যারেন্টাল মিটিং এর জন্য ডেকেছে টিচার।
-ওহ,মা তো নেই কাছে আর বাবা ও তো কাজে!কে যাবে তাহলে আমার সাথে?
-হুম আমি তো আছি!আমি যাবো!
-রেডি হয়ে নাও।আমাকে তাড়াতাড়ি যেতে হবে!
-কেনো রে?
-প্যারেন্টাল মিটিং শুরু করার আগে আমি সেখানে গজল শুনাবো সবাইকে আব্দুল্লাহ আল মামুন সিনিয়র শিক্ষক,উনি আমাকে সিলেক্ট করছেন!
-মাশাআল্লাহ্,তুই যে এত সুন্দর গজল জানিস আমাকে তো শুনালি না!
-আচ্ছা ঠিক আছে এখন রেডি হয়ে নাও,কিছুক্ষণ পরেই তো শুনবে!
-হুম!



প্যারেন্টাল মিটিং
শুরু!নুসাইরকে ডেকে নিলেন টিচার,গজল শুনাবার জন্য!


যার ঋন কোনো দিন শোধ হয় না!
পৃথিবীতে যার কোনো নেই তুলনা!
সে যে আমার পরম জনম দুঃখীনি মা”
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

আমি ভাবতে পারছিনা,কবে কখন নুসাইর এই গজল শিখে নিলো!
নুসাইর গজল শেষ করে নিরব হয়ে আছে!
আব্দুল্লাহ আল মামুন সিনিয়র টিচার বলেন,মাশাআল্লাহ্ সুন্দর হয়েছে!কিন্তু মন খারাপ করে আছো কেন নুসাইর?
নুসাইর চলচল চোখে আমার দিকে তাকালো!আমি বললাম,
নুসাইর কী হয়েছে ভাই?
-আপু মা আমাদের ছেড়ে কেনো গেলো?
মায়ের কী আমাদের কথা মনে পড়ে না?
বলো না আপু?মা কী রাগ করে চলে গেছে?
মা কী খুব রাগী?মা কেন চলে গেলো?কবে আসবে?আপু বলো না!


সবার সামনে
নুসাইরের এত্ত প্রশ্নের উওরের আগেই নাজিফার চোখের কোণে পানি জমতে শুরু করেছে!
কোনো মাই তো তার সন্তনকে একা করে যেতে চায় না!মা কী পারে নাকি সন্তানের সাথে রাগ করতে!কখন ও না!মা যে পৃথিবীর মাঝেই নেই কী করে আসবে কাছে!কেউ যে কখন সেখান থেকে ফিরে আসে না!


আব্দুল্লাহ আল মামুন স্যার বলনেন:নুসাইরের বোন নাকি?
-জ্বী!
-প্যারেন্টাল মিটিং তো
প্যারেন্ট কেউ আসলো না যে?
-নাজিফা নুসাইরের দিকে তাকায় আর একবার স্যারের দিকে,নুসাইর ও হয় তো শুনার জন্য আগ্রহী তাই তাকিয়ে আছে বোনের দিকে!
নিরবতা ভেঙ্গে জবাব দিলো!প্যারেন্ট বিজি আছেন!তাই আমি আসলাম!
-প্রধান শিক্ষক বললেন,”ওহ আচ্ছা!আসলে তারা কেউ আসলে হয়তো নুসাইর একটু বেশি খুশি হতো!তার মনটা ছোট্ট হয়ে আছে অন্য চাইল্ডের প্যারেন্টরা আসছে দেখে!
-জ্বী!বাবা কাজে তাই আসা সম্ভব নয়!আর মা,,,,,,
থেমে যায় নাজিফা!
-উম্মে হানি ইতি ম্যাম,”মা তো আসতে পারতো!উনার পেশা কী?আসলো না কেন?,খুব বিজি নাকি তিনি?

-একজন বিজ্ঞ মা তার পেশা সম্পর্কে লিখেছিলো,আমি ঐ লিখার আলোকে বলতে চাই!যদি অনুমতি দেন!(নাজিফা)
-প্রধান শিক্ষক বলেন,”হ্যা অবশ্যই,নাজিফা বলো!
-আমার মা একজন গবেষক ছিলেন!(নাজিফা)
-ইতি ম্যাম,”বুঝলাম না নাজিফা!
-জ্বী ম্যাম বলতেছি,আমার মা
শিশুর মানসিক এবং শারিরীক বিকাশ সাধন পর্যবেক্ষণ করে সে অনুযায়ি পরিকল্পণা প্রণয়ন করতেন।বয়স্কদের নিবিড় পরিচর্যার দিকে খেয়াল রাখতেন তিনি।
সুস্থ পরিবার ও সমাজ বিনির্মানে নিরলস শ্রম দিয়ে রাষ্ট্র কাঠামোগত ভীত মজবুত করছেন তিনি।প্রতিটি মুহুর্তেই মাকে নানারকম চ্যালেন্জের ভিতর দিয়ে যেতে হতো এবং অত্যন্ত দক্ষতার সাথে তা মোকাবিলা করতে হতো।কারণ মায়ের সামান্য ভুলের জন্য যে বিশাল ক্ষতি হয়ে
যেতে পারে।জানেন পৃথিবীর গুনি জনেরা বলেন,মায়ের প্রকল্পের কাজ এতো বেশি দূরহ আর কষ্ট সাধ্য যে, দিনের পর দিন আঙুলের নখ দিয়ে সুবিশাল একটি দিঘী খনন করা নাকি তার চেয়ে অনেক সহজ!মায়ের সেই রিসার্চ প্রজেক্টতো আসলেই অনেকদিন ধরেই চলছিলো।
সার্বক্ষণিক তিনি ল্যাবরেটরি এবং ল্যাবরেটরীর বাইরেও কাজ করতে হয়েছিলো।আহার,নিদ্রা করারও মায়ের ঠিক সময় ছিলো না!সব সময় মাকে কাজের প্রতি সজাগ থাকতে হতো।


সব টিচার্স হা করে নাজিফার কথা শুনছে!বাকি চাইল্ডের প্যারেন্ট ও মন দিয়ে শুনছেন!
নাজিফা আবার ও বলতে শুরু করলো!
দুজন উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অধীনে মূলত মা তার প্রকল্পের কাজ নিরবিচ্ছিন্ন
ভাবে চালাচ্ছিলেন,অবশ্যই সরাসরি দেখা যায়না (একজন
হলেন স্রষ্টা আরেকজন হলো বিবেক)
মায়ের নিরলস কাজের স্বরুপ মাকে একবার স্বর্ণপদকে ভূষিত করা হয় (এক জন কন্যা সন্তান আমি নিজে)
“উষর মুরুর ধূসর বুকে, ছোট্ট যদি শহর
গড়ো, একটি শিশু মানুষ করা তার চাইতেও অনেক বড়”।প্রতিদিন মাকে ১৪ থেকে ১৬ ঘন্টা আবার কোনো কোনো দিন মাকে ২৪
ঘন্টাই ল্যাবে কাজ করতে হয়ে ছিলো!কাজে এতো বেশি ব্যস্ত থাকতো যে, কবে যে শেষবার ভালো করে ঘুমিয়েছে তা কোনো রাতে বা দিনে,তাও আমার মনে নেই।অনেক সময় নিজের আহারের কথা ভুলে যেতো তিনি।আবার অনেক সময় মনে থাকলে ও সবার মুখে অন্ন তুলে না দিয়ে খাওয়ার ফুরসত না।অথবা সবাইকে না
খাইয়ে নিজে খেলে পরিতৃপ্তি পেতো না,পৃথিবীর সব পেশাতেই কাজের পর ছুটি বলে যে কথাটি আছে মায়ের পেশাতে সেটা একেবারেই ছিলনা।২৪ ঘন্টাই মায়ের অন কল ডিউটি ছিলো।
হয়তো আপনাদের জানতে ইচ্ছে করছে এ চ্যালেন্জিং প্রকল্প পরিচালনায় বেতন কেমন হতে পারে?বেতন ভাতা হলো পরিবারের সবার মুখের হাসি আর পারিবারিক প্রশান্তি।
এর চেয়ে বড় অর্জন আর বড় প্রাপ্তি যে কিছুতেই নেই।পৃথিবীর অতিসাধারণ এক মা!নাজিফার মায়ের মুখ চোখের সামনে ভেসে ওঠে, তারপর মায়ের ধূসর হয়ে যাওয়া মুখটি কল্পনায় করে অপলকে চেয়ে থাকেন।টিচার্সদের ও নিজের অজান্তেই চোখের জল টপ টপ করে পড়তে থাকে সাথে অন্য প্যারেন্টদের ও।
নাজিফা আবার ও বলে,”
আসলে “মা” এর মাঝে যেন নেই কোনো বড় উপাধির চমক।বড় কোনো পেশাদারিত্বের করপোরেট চকচকে ভাব।কিন্তু কত সহজেই পৃথিবীর সব মা নিঃস্বার্থ ভাবে প্রতিটি পরিবারে
নিরলস শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন। মাতৃত্বের গবেষানাগারে প্রতিনিয়ত তিলেতিলে গড়ে তুলছেন একেকটি মানবিক নক্ষত্র।
সেই মা সবচেয়ে খুশি হন তখনি!
যখন সন্তান প্রকৃত মানবিক মূল্যবোধ নিয়ে ধনে নয়,সম্পদে নয়, বিত্তে নয়, ঐশ্বর্যে নয় শুধু চরিত্রে আর সততায় একজন খাঁটি মানুষ হয়।



ইতি ম্যাম-একদম ঠিক বলেছো নাজিফা!
-জ্বী,আমি খুব কাছের থেকে দেখেছি মা তার সন্তন প্রসূতকালে ব্যথায় ব্যতিত হয়েছিলো যখন, তখন হয় তো আল্লাহ্ আরশ কেঁপেছে সেই ব্যথায়।সাড়ে আট মাসের শিশুকে পৃথিবীতে আলো দেখাতে গিয়ে,তিনি নিস্বার্থভাবে জীবন দিয়ে দিলেন তাঁর।যাকে আলো দেখালো তাকে ও দেখার সৌভাগ্য তাঁর হয়নি!



নাজিফা দেখলো নুসাইর মন দিয়ে সব শুনছে!কিছু না বুঝলে ও তাঁর চোখ হয়তো বুঝেছিলো!চোখ দিয়ে পানি পড়তে শুরু করেছে!
টিচার্স ও বুঝলেন নাজিফার আর নুসাইরের মা নেই!
আর নাজিফা তা নুসাইরকে এখন ও বলেনি!


সব প্যারেন্ট আর টিচার্স মিলে নাজিফা আর নুসাইরকে অনেক দোয়া করলেন।


প্রধান শিক্ষক বললেন,”
নাজিফা এই নাও দ্বিতীয় সেমিস্টার পরীক্ষার রেজাল্ট কার্ড।বাসায় নিয়ে তোমার বাবাকে দেখাবে নুসাইর খুব ভালো করেছে।আর আগামীকাল কিন্তু কার্ড জমা দিতে হবে!কারণ তারপর মাদ্রাসা বন্ধ থাকবে কিছু দিন!
নাজিফা বলল,”আচ্ছা দিয়ে যাবো!
তারপর মিটিং শেষ করে তারা বাসায় আসলো!
!
!
চলবে

#আলেমের_বউ (পর্ব-৮)


বাসায় এসেই নুসাইরের লাপাচ্ছে আর বলছে,বন্ধ পেয়েছি কতদিন বেড়াতে যাবো নানির বাড়িতে!
মা হারা ছেলের আবদার বাবা তো আর ফিরাতে পারেনা!



-বাবা আমাদের দিয়া আসিও
আগামীকাল নানির বাড়িতে!(নুসাইর)
-হ্যাঁ,তোরা রেডি হয়ে দোকানে যাবি,আমি দোকানেই থাকবো,দোকান তো চিনিস রফিক আঙ্কেল এর?(বাবা)
-হ্যাঁ বাবা আমি চিনি!(নাজিফা)
-তাহলে তো আর সমস্যা নেই!দরকার হলে কল দিবি কারো ফোন থেকে!(বাবা)
-আচ্ছা বাবা!


নাজিফা আর নুসাইর রেডি হয় পরের দিন।

-নুসাইর বলল,”আপু কোন রং এর পাঞ্জাবীটা পড়ে যাবো?
-তোর যেটা পছন্দ হয়!
-না,তুমি বলো একটা!
-আচ্ছা নীলটা!
-হিহিহি!
-কীরে হাসিছ ক্যান?
-নীল আমার ও ভালো লাগে আপু!
-ওয়াও!তাই বুঝি?
-হুম,আপু তোমার বিয়েতে একটা নীল শাড়ি কিনে দেবো!
-ওরে আল্লাহ”!আমি শেষ!পাকনামি কম কর!
-আপু জানো তো নীল শাড়িতে নীল পরীর মত লাগবে নাজিফাকে।কি যে ভালা লাগে”
-ঐ তুই থামতো!
-আচ্ছা!চুপ হলাম!আমাকে ক্যামন লাগছে বলোতো?
-তোকে তো…..
-কী আমাকে বলো?
-অনেক কিউট লাগছে,মাশাআল্লাহ।
-হুম জানি তো!
-কী জানিস?
-কিউট যে আমি!
-ওলে মা!তা আমাকে কেন জিজ্ঞেস করলি তাহলে?
-তোমার মুখ থেকে শুনতে ভাল লাগে!
-তুই না বেশি পাকনামি করিস!চুপ করে বস তো!
-চুপ করে থাকতে ভালা লাগে না!
-ওরে আল্লাহ্,তা কী ভালা লাগে শুনি!
-কথা বলতে!
-বেশি কথা বললে তো পাগল হয়ে যাবি!
-হিহিহাহা!

নুসাইরের আর কোন কথা শুনা গেলো না শুধু খিলখিল হাসির শব্দ হচ্ছে!
নাজিফা মুগ্ধ হয়ে তা দেখছে।




নুসাইর ডেকে বলে আপু
তুমি বের হয়ে রাস্তায় দাঁড়াও আমি স্যারের কাছে রেজাল্ট কার্ড জমা দিয়ে আসি।

তুই রাস্তা একা পার কেমন করে হবি?
একা যাওয়ার প্রয়োজন নেই!আমার হয়ে গেছে এক সাথে যাবো দুইজন।
নাজিফা একাই কথা বলে যাচ্ছে,
ঘাড় ফিরিয়ে দেখে নাজিফা নুসাইর নেই।
আল্লাহ্ এই নুসাইরকে নিয়ে কী যে হবে!আমাকে রেখেই চলে গেলো মনে হচ্ছে স্কুলে!
তাড়াতাড়ি নাজিফা দরজা লক করে রাস্তার দিকে পা রাখে!



স্কুল গেট সোজায় রাস্তায় এত মানুষ কেন কী হলো আবার এখানে!
এই যে আন্টি?আন্টি শুনছেন?
-আমাকে কইতাছো?
-জ্বী!আপনি তো ঐ দিক থেকে আসলেন সেখানে কী হয়েছে এত মানুষের ভীড় কেন?
-কোন পোলায় রাস্তা পার হইতে যাইয়া নাকি বাসের তলে চাপা পরেছে,হেরলাইগা সবাই যাইয়া দেখতাছে ক্যার পোলা!




নাজিফা কেমন জানি শূন্যতা অনুভূত হলো!পায়ে যেনো কোনো জোর নেই সামনে যাওয়ার।তবুও দেখা দরকার কে ছেলেটা!এক পা এক পা করে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে!এইটুৃকু পথ তবুও যেনো অনেক দূর!মনে মনে ভাবছে কার জানি মায়ের সন্তান!কার জানি ভাই।কে জানি আজ সন্তান হারা হলো,কে জানি ভাই হারা হলো!
ভীড়ে এসে শুনে বিভিন্ন মহিলা গুলো দোয়া করছে তাদের বাচ্চা যেনো না হয়।নাজিফা ও মনে মনে ভাবছে আমাদের নুসাইর ও যেনো না হয়!না না নুসাইর কেন হবে!কী উল্টা পাল্টা ভাবছি!মাথা কী গেছে নাকি আমার!


নাজিফা ভীড়ে মাঝে আস্তে আস্তে প্রবেশ করে!রক্ত মাখা পাঞ্জাবীর বাচ্চাটির কাছে গিয়ে বসে পরে!নীল রং এর পাঞ্জবী আর লাল রং এর রক্ত মিলে রং টা মাটিময় ধূসর হয়ে গেছে,
একটা চিৎকার দিয়ে বলে এটা কী করে হলো নুসাইর বলেই নাজিফা বুকে টেনে নেয় রক্তমাখা প্রাণহীন নুসাইরকে!আর কোনো শব্দ করলোনা নাজিফা,কণ্ঠনালীর মাঝে সব কাঁন্নার সুর আটকে গেছে!
সে দিন ও মেডিকেল নাজিফা তার মাকে আটকাতে পারেনি।আজ ও পারেনি নুসাইরকে আটকাতে!চলে গেলো নুসাইর নাজিফাকে একা করে!



নাজিফা নুসাইরকে বুকে নিয়ে কাঁন্না করে সবার উদ্দেশ্য করে বলে ওকে ডাক্তার এর কাছে নিয়ে চলো,ও বেঁচে যাবে।সব মহিলা গুলো তখন নাজিফাকে বুঝালো।নুসাইর চলে গেছে পৃথিবী ছেড়ে আর আসবেনা!


কী করে এমন হলো?(নাজিফা)
-আমি দেখছি মা!ওর হাতে একটা কি ছিলো,ও রাস্তা পার হতে গিয়ে একটা জুতা মাঝ রাস্তায় রেখে আসে!ফিরে আবার জুতার জন্য যায়।তখনি একটি বাস চলে আসে আর ও চাপা পড়ে!(দোকানদার)


না না নুসাইর আমাকে ছেড়ে যেতে পারেনা!আবার ও বুকের থেকে মাথা তুলে নাজিফা নুসাইরের রক্তমাখা মুখে চুমু খেয়ে কপালে সবাইকে বলে নুসাইর মরেনি,আমি চুপ করে থাকতে বলেছিলা তাই নুসাইর চুপ করে আছে!এই নুসাইর কথা বল না ভাই!প্রমিজ করছি যা বলবি শুনবো আমি!নুসাইর কথা বল না!
প্রাণহীন নুসাইর কোনো কথা বলে না!
গতকালকের সব টিচার্স ও জোড় হয় সেখানে!কাঁন্নারত ভাবে এসে নাজিফার সামনে দু’চারটে কথা বলে ও শান্তনা দেওয়ার ভাষা হারিয়ে গেছে!কী করে ভুলবে নাজিফা নুসাইরকে।যাকে পৃথিবীতে আলো দেখাতে গিয়ে মা চিরতরে চলে গেলো।তাকে টানা একমাস তিন দিন জন্মের পর পর্যবেক্ষণ যন্রে রাখা হয়।গ্লাচের মাঝে দেখে আর নিজের সাথে কথা বলে অপেক্ষার প্রহর গুনে সেই ছোট্ট নুসাইরকে নিয়ে এইটুকু পথ এসেছে নাজিফা!আর নুসাইর নাজিফাকে একা করে চলে গেলো!
আব্দুল্লাহ আল মামুন স্যার নাজিফার বাবাকে স্কুল গেট আসার জন্য ফোন করেন!
অল্প কিছুক্ষন পরে নাজিফার বাবা চলে আসে!বাবা ও সব ভাষা হারিয়ে ফেলে নুসাইরের লাশ দেখে।নাজিফার পাশে বসে পরেন তিনি ও।
পথের যে মানুষ গুলো দেখেছিলো তারা সবাই নাজিফার সাথে কেঁদেছিলো।মনে হয়েছে গাছের প্রতিটা পাতা ও কাঁন্না করেছে!


নুসাইরের লাশ নিয়ে বাড়ির দিকে রওয়ানা হয়।নুসাইরকে কিছুতেই নাজিফা অন্য কোথায় ও রাখতে দেয়নি।গাড়িতে বুকে জড়িয়ে নিয়ে আসে বাড়িতে।বাড়িতে আসার পর ও কেউ নুসাইরকে নাজিফার হাতের থেকে কেড়ে নিতে পারছেনা!জোর করে নুসাইরকে ছাড়িয়ে নেওয়া হয় নাজিফার থেকে।সাথে সাথেই নাজিফা মাটিতে ঢলে পরে যায় জ্ঞান হারিয়ে।


নাজিফাকে একটা রুমে রাখা হয়।অন্য দিকে নুসাইরের লাশ দাপন করা হয়।নাজিফার মায়ের কবরের পাশেই কবর দেওয়া হয় নুসাইরকে।


নাজিফার জ্ঞান তখন ও ফিরেনি!সন্ধ্যায় নাজিফাকে থানার পাশের মেডিকেল নিয়ে যাওয়া হয়!


সারাটি রাত চলে যায় কিন্তু নাজিফার জ্ঞান ফিরে না!
পরের দিন ও কেটে যায় জ্ঞানহীন ভাবে নাজিফার!
দ্বিতীয় রাত একবার জ্ঞান ফিরলে ও তা কয়েক মিনিটের জন্য ছিলো।আবার ও জ্ঞান হীন ভাবে নাজিফার পড়ে থাকে মেডিকেল বেডে!
তৃতীয় দিন ও জ্ঞান ফিরলে নুসাইর বলে চিৎকার দিয়ে আবার ও জ্ঞান হারিয়ে ফেলে নাজিফা!
যতবার জ্ঞান ফিরে ততোবার নুসাইরকে খুঁজে।ডাক্তার এক পর্যায় না পেরে আর, ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে রাখে নাজিফাকে!


চলবে,
লিখা:শারমনি সুলতানা সালমা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here