আলেমের বউ পর্ব ১৫+১৬

0
490

#আলেমের_বউ (পর্ব-১৫+১৬)


সন্ধ্যায় রাবেয়া আপুকে হলুদ কাপড়ে সাজানো হলো!তারপর তার এক খালাতোবোন (মেঘলা)মেহেদী দিয়ে দিলো হাতে!নাজিফাকে প্রথম বলেছে কিন্তু নাজিফা রাজি হয়নি!রাবেয়া আপু বলল,”একটা ছবি তুলে রাখ না নাজিফা তোর ফোনে!নাজিফা হেসে দিয়ে রাবেয়া আপুর সাথে কয়েকটা পিক তুলে নেয়!
চলে আসে শাহপরান ভাইয়া!নাজিফা যত চায় কেটে যেতে সে ততোই আটার মত লেগে থাকার চেষ্টা তার,যা নাজিফা মোটেই পছন্দ করেনা।
নাজিফাকে রুম থেকে বের হতে দেখলেই পিছু নিয়ে দরজার পাশে এসে শক্ত করে হাত চেপে ধরে!নাজিফার রাগ উঠে যায়!শাহপরান নাজিফার মুখের দিকে জোকতে গেলে নাজিফা জোর করে হাত ছাড়িয়ে একটা তাপ্পর লাগিয়ে দিয়ে চলে আসে উপরে দৌড়ে!

শুয়ে এপাশ ওপাশ করতেই নানিমনির ফোন।
কথা শেষ করে নাজিফা,নানিমনি অসুস্থ জানিয়েছে যাওয়ার জন্য!
রাতটা কাটিয়ে দেয় নাজিফা টেনশন করেই!রাতেই বাবা আসে,কিন্তু বাবাকে এখন কিছু বলে টেনশন দিবে না ভেবে আর বলা হয়নি কিছু!


সকালের সোনালি আলো ফুটে উঠে!বিয়ে বাড়িতে যেমন হৈ চৈ তেমন এই বাড়িতে ও গতরাতে শাহপরানকে তাপ্পর দিয়েছে সে হয়তো রেগে আছে নাজিফা মন দিয়ে কিছুই করতে পারছেনা!গাজর কাটতে গিয়ে হাত কেটে বসে রয়েছে!শাহপরান এসে বলল,”এমন আনমনা হলে চলে কী?
-নাজিফা চোখ তুলে তাকায় মনে হচ্ছে গতকাল রাতের কথা তার কিছু মনে নেই!নাজিফা বুঝে দুষ্ট লোকের মিষ্টি কথা!চুপ করে থাকে নাজিফা!পেস্ট এনে দেয় শাহপরান।
নাজিফা নিজে হাতে পেস্ট লাগিয়ে শাহপরান এর দিকে তাকিয়ে বলল,”স্যরি অর থ্যাংস!
-স্যরি কেন নাজিফা?
-রাতের খারাপ ব্যবহার করার জন্য!
-দূর আমি কিছু মনে করিনি!ইভেন ভুলে গেছি!
-আচ্ছা বলে নাজিফা রাবেয়া আপুর রুমে চলে আসে!



বর পক্ষ চলে এসেছে!আরো একবার হৈ চৈ পড়ে যায় সারা বাড়িতে!রাবেয়া আপুকে কনের সাজে সাজানো হলো!খুব সুন্দর লাগছে!নাজিফা হা করে তাকিয়ে রাবেয়া আপুকে দেখে!
-কী রে নাজিফা হা করে কি দেখিস?
-তোমাকে!
-কেন গো?
-অনেক সুন্দর লাগছে!ভাবতেছি!
-কী ভাবছিস?
-ভাইয়াতো চোখ ফিরাবে না তোমার থেকে!
-যা দুষ্টু


জমকালো সাজে চোখের থেকে রাবেয়া আপু ও মামি চোখের পানি ফেলছে,মেয়েকে অন্য বাড়িতে দিবে তা ভেবে কষ্ট হচ্ছে মামি,আর রাবেয়া আপু চলে যাবে তা ভেবে।


বিয়ের কাজ শেষ!খাওয়া ও শেষ হলো!রাবেয়া আপুকে নিয়ে যাচ্ছে!গাড়িতে তুলে দেওয়া হলো!এমন সময় আপুর খালাতো বোন বলল,নাজিফা বোন একটু কষ্ট করো না!(মেঘলা)
-কী বলো?(নাজিফা)
-উপরের ডান পাশের রুমে মিষ্টির তিনটা কার্টুন আছে!রাবেয়া আপুর শশুড় বাড়িতে পাঠাবে যে!আমি পায়ে ব্যথা পেলাম নিয়া আসবে একটু বোন!তাড়াতাড়ি নিয়ে আসো!চলে যাচ্ছে গাড়ি!
-আচ্ছা আমি যাচ্ছি বলেই নাজিফা সিঁড়ি দিয়ে উপরে চলে আসে!
রুমে ঢুকে কোথায় ও মিষ্টির কার্টুন পায়নি নাজিফা!
মনে হয় ভুল রুমে এসেছে তাই তাড়াতাড়ি রুম থেকে বের হবে!তখনি চোখে পড়ে দরজা কেউ লক করে সামনে দাঁড়িয়ে!
কিছু বুঝার আগেই মুখ বেঁধে দেয় শাহপরান নাজিফার!আর বলতে থাকে এখনি সুযোগ!আর সুযোগ হাত ছাড়ার ছেলে আমি শাহপরান হাসান নই!
নাজিফা বুঝতে পারছে যাতে চিৎকার করলে কেউ না শুনে তাই মুখ বেঁধে দিয়েছে আর কি ঘটতে যাচ্ছে নাজিফার সাথে!নাজিফা চোখ দিয়ে পানি পড়ছে আর
Allah save me….
Allah save me,,,,,,,,,,,
Allah save me,
বলেই চোখ গেলো রুমের কোণায় নারকেল এর গাছের পাতার থেকে যে ঝাড়ু হয় এমন কয়েকটা নতুন ঝাড়ু!অদ্ভুত তো বিল্ডিং এ ফুলের ঝাড়ু থাকার কথা এই ঝাড়ু কেন!না ভাবার সময় নেই এখন!অপর দিকে শাহপরান গায়ের পাঞ্জাবি খুলে ফেলেছে!নাজিফা দৌড়ে গিয়ে কণার থেকে ঝাড়ু নিয়ে ইচ্ছা মত চোখ বন্ধ করে কত গুলো লাগিয়ে শাহপরানকে,
রুমের দরজা খুলেই দরজার সামনে ঝাড়ু ফেলে মুখের বাঁধন নিয়েই দৌড়ে নিচে আসতে থাকে!সিঁড়ির কাছে আসতেই মনে হলো বাঁধনটা রাখা ঠিক হবে না!একটানে খুলে দ্রুত নিচে নামতে থাকে!সামনে দাঁড়িয়ে মেঘলা দাঁত কেলিয়ে হাসি!নাজিফা ও বুঝে এই মেয়ে ও শাহপরান এর দলের!নাজিফা ও দাঁত কেলিয়ে হাসি দিয়ে বলল,”মেঘলা আপু মিষ্টির কার্টুন তো ফেলাম না মনে হয় মামি নিয়ে এসেছে!কথাটা শুনে মেঘলার হাসি ধূলায় মিশে গেলো নাজিফা বুঝতে পারলো!কিন্তু এখন তা দেখার সময় নেই!দ্রুত বাবার কাছে গিয়ে বলল,”বাবা চলো এই বাড়ি ছেড়ে নানুমনির বাসায় যাই!
-কী বলছিস রে মামুনি!বিয়ে বাড়ি ছেড়ে হঠাৎ তোর নানুমনির বাসায় গেলে সবাই কী মনে করবে?
-তা তুমি ঠিক বলেছো বাবা!কিন্তু যেতে হবে!আর উপায় ও একটা বের করতে হবে!
-আমার মাথায় কিছু আসছে না তুই বল!
-আইডিয়া পাইছি!
-কী?

মাহমুদ মামাকে বলো আমার নানুমনি অসুস্থ আমাকে দেখতে চায় আর এখনি নিয়ে যেতে হবে!
-মাশাআল্লাহ্ তুই পারিস ও বটে!ভাল আইডিয়া,রেডি হয়ে নেয়!আমি তোর মামাকে বলি?
-আইডিয়া নয় বাবা!নানিমনি গতরাত ফোনে বলেছে তিনি অসুস্থ তাকে দেখে আসতে।
-আমাকে বললিনা যে?
-ব্যস্ত ছিলে তাই বলা হয়নি!
আচ্ছা আমি গিয়ে রেডি হয়ে নেই বাবা!!!


-মাহমুদ ভাই?
-হ্যাঁ বল!
-নাজিফার নানির অসুখ বলেছে নাজিফাকে একটা নজর দেখিয়ে আনি যেনো!
-ওহ আচ্ছা! তাহলে তো যাওয়া দরকার! কিন্তু আগামীকাল তো আমরা রাবেয়াকে তার শশুড় বাড়ি থেকে আনতে যাবো!
-আরে ভাই টেনশন করো না!সকালের মাঝেই চলে আসার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ্!
-বাবা আমি রেডি!(নাজিফা)



বাড়ি থেকে বিদায় নিয়ে বের হলে!নাজিফা যেন বুক থেকে পাথর সরিয়েছে এমন মনে হয়!
-বাবা আমি আর এই বাড়িতে আসবো না!আর ঢাকাও তাদের বাসায় ফিরে যাবো না!
-কেন মামুনি?
-আমি গতরাত শাহপরান ভাইয়াকে তাপ্পর দিয়েছি আমার সাথে বেয়াদবি করছিলো বলে!আর সে আজ আমাকে দোতলার একটা রুমে নিয়ে আটকিয়ে ছিলো তাই তাকে সামনে ঝাড়ু পেয়ে ইচ্ছা মত শরীর থেকে ভুত ঝেড়ে দিয়েছি!
-একদম ঠিক করছিস!আমি হলে জবা করে দিতাম!আমি ঢাকায় লক্ষ্য করেছি সে ভালো না!
-হুম বাবা ঠিক!কিন্তু তোমার কোনো ক্ষতি করবেনা তো গেলে!
-না করবে না,ইনশাআল্লাহ
-আচ্ছা বাবা!
নাজিফার বাবা আর নাজিফা পৌঁছে যায়!
নাজিফার নানুমনিদের ও দোতলা বাড়ি করেছে!বাড়িটা শান্ত!প্রবেশ করে বুঝতে পারলো নানুমনি অসুস্থ!


সেই রাতে অনেক মজা করে নাজিফা এবং নানুমনিকে ও বলে এই ঘটনা!নানি আর নাতনী মিলে অনেক রাত হাসি আর গল্পে কাটিয়ে দেয়!নাজিফা আসাতে নানুমনি অনেকটা সুস্থ! মনে হয় কোন অসুখ নেই!


সকালে নাজিফার বাবা চলে যায় মাহমুদ ভাইয়ের বাড়িতে!
-নাজিফা আসেনি?(শাহপরান)
-নারে বাবা শাশুড়ি মা আসতে দেয়নি!আর নাজিফা ও নানিকে পেয়ে খুশি তাই আমি জোর করিনি!
-ঠিক করছিস আরিফ!তোর শাশুড়ি তার মেয়েকে হারিয়েছে এখন নাতনী কাছে থাকলে ভালো লাগবে!(মাহমুদ)

-হ্যাঁ মামা বাবা ঠিকি বলেছে!কিন্তু বিয়েটা শেষ হলে গিয়ে থাকলে ভালো হতো!রাবেয়া ও খুশি হতো!(শাহপরান)
-থাক এখন এই সব কথা!কাজ আছে অনেক চল!(মাহমুদ)
-হ্যাঁ ভাই চলো!(আরিফ)

নাজিফা(নানিমনি)
-হ্যাঁ বলো,
-তোর বরকে বলবি আমাকে যেন লাল শাড়ি দেয়!
-আচ্ছা বলবো,না দিলে আমারটা দিয়ে দেবো!খুশি?
-আরে কি বলিস তোরটা দিলে
হবে না!
-কেন হবে না,বর আমাকে মনে করে তোমাকে নিয়ে পালাবে!হি হি হি হি!

নাজিফারে?
-বলো নানিমনি?
-তুই বিয়ে করবি একজন আলেমকে!
-তোমার মাথা ঠিক আছে?আমি সারাজীবন একা থাকলে ও কোনো আলেমকে বিয়ে করবো না!
-কেন,কী হয়েছে আলেমের?
-তুমি জানো না কি হয়েছে?
-বল কী হয়েছে,
-নুসাইরের মাদ্রাসায় কী হয়েছে,ভুলে যাইনি!শুধু তা নয় শাহপরান হাসান ও তো আলেম ছিলো,সে কী কী করলো আমার সাথে তার কিছুই আমি ভুলি নাই!সো আমাকে দিয়ে আলেম বিয়ে করা সম্ভব নয়,আন্তরিক ভাবে দুঃখীত।

নাজিফারে?
-বলো নানুমনি?
-তুই বিয়ে করবি একজন আলেমকে!
-তোমার মাথা ঠিক আছে?আমি সারাজীবন একা থাকলে ও কোনো আলেমকে বিয়ে করবো না!
-কেন,কী হয়েছে আলেমের?
-তুমি জানো না কি হয়েছে?
-বল কী হয়েছে,
-নুসাইরের মাদ্রাসায় কী হয়েছে,ভুলে যাইনি!শুধু তা নয় শাহপরান হাসান ও তো আলেম ছিলো,সে কী কী করলো আমার সাথে তার কিছুই আমি ভুলি নাই!সো আমাকে দিয়ে আলেম বিয়ে করা সম্ভব নয়,আন্তরিক ভাবে দুঃখীত।


-বোকা মেয়ে,সব আলেম কি এক?তুই বিয়ে করবি আহলে সুন্নাতে ওয়াল জামায়াত আকিদার একজন মদিনাওয়ালার পাগল আলেমকে।
-সেটা আবার কী?

-শুন সব বিষয়ে ছাড় দেওয়া যায়,কিন্তু অাকিদার বিষয়ে কোন ছাড় বা অাপোষ করা যাবেনা, রাসূলপাক সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদীস, অামার উম্মত ৭৩ দল হবে ১ দল জান্নাতি,সেটাই অাহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত।যাদের অাকিদা, রাসূলপাক সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অাল্লাহর নূরের সৃষ্টি,রাসূলপাক সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
অাল্লাহ প্রদত্ত এলমে গায়েব জানেন,রাসূলপাক সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাজির ও নাজির,রাসূলপাক সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রওজাতে স্ব শরীরে জিন্দা
এই সকল কথাগুলো সম্পূর্ন কোরঅান হাদীস,ইজমা কিয়াস ভিত্তিক
এর বাহিরে যে ৭২ দল অাছে তারা রাসূলপাক সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
তাজিম শান মান না মানার কারনে জাহান্নামি।
এরাই বহুরুপী কওমি,খারিজি লা মাজহাবি,তাদের থেকে৭২ ফের্কা ও অারো বহুদল
যেমন, রাফিজি,শিয়া,মুতাজিলা ইত্যাদি এই সবদলের লোকগুলো নামাজ,রোজা,হজ্ব করে কিন্তু অাকিদার কারনে ৭২ জাহান্নামি দল হবে।
সূত্রঃ-
নুরুল অানোয়ার
তাফসিরে রুহুল মায়ানি,
গানিয়াতুত তালিবিন কিতাব দ্রষ্টব্য


ঠিক আছে আলেম কে বিয়ে করবো কিন্তু মদিনাওয়ালার পাগল আলেম বুঝবো কী করে?
-শুন কিছু প্রেমের কাহিনী মদিনাওয়ালার পাগলদের,,,,,

-আচ্ছা বলো,?

-রাসূলপাক সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এর প্রেম পাগলল যারা ছিলেন তাদের মাঝে প্রথম
হয়রত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ),,,,,
হয়রত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) নিজের জীবনের মায়া ছেড়ে রাসূলপাক সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-এর সাথে মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেন।রাসূলপাক সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এর প্রতি অগাধ প্রেমের কারণেই তিনি রাসূলপাক সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এর একবারে পাশেই শায়িত।
সুবহানআল্লাহ বল?
-সুবহানআল্লাহ!

-হযরত ওমর ফারুক (রাঃ) রাসূলপাক সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-এর প্রেমে তাঁর পিতার শিরশ্ছেদ করেছেন।যেহেতু তাঁর পিতা রাসূলপাক সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
কে পাগল(নাউজুবিল্লাহ্) বলেছিল।আশারা-ই-মোবাশ্ শারা( বেহেশতে যাবার সুসংবাদ প্রাপ্ত দশজন)সাহাবীগণও নিজের জীবন বিপন্ন করে রাসূলপাক সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-এর প্রেমের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
-সুবহানআল্লাহ!

-হযরত আলী (রাঃ) এর প্রেম,,,,,
হযরত আলী (রাঃ) রাসূলপাক সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
কে সবচেয়ে
বেশি ভালবাসতেন এবং তার প্রমাণ হিসেবে হযরত রাসূলপাক সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম,যে রাত্রিতে মক্কা ত্যাগ করে মদিমার উদ্দেশ্যে হিজরত করেন,সে রাত্রিতে হযরত আলীন(রাঃ) নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও রাসূলপাক সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এর বিছানায় শুয়ে থেকে রাসূলপাক সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
প্রেমের জ্বলন্ত প্রমাণ রেখেছেন।
-সুবহানআল্লাহ!

-হযরত তালহা,হযরত দোজানা,হযরত আব্দুল্লাহ্ (রাঃ) এর প্রেম,,,
ওহুদের প্রান্তরে কাফেরেরা যখন রাসূলপাক সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এর প্রতি বৃষ্টির মত তীর ছুঁড়ছিলো তখন হযরত তালহা (রাঃ) হযরত আবু দোজানা
(রাঃ) ও হযরত আব্দুল্লাহ (রাঃ), তাঁরা নবী (দরূদ)কে এমন ভাবে জড়িয়ে ধরেছেন যাতে আর একটি সুঁইও তাঁর শরীর মোবারকে বিদ্ধ হতে না পারে।এমন ভাবে হযরত রাসূলপাক সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-এর প্রতি নিক্ষিপ্ত ৭০ টি তীর হযরত তালহার (রাঃ)
এর পিঠে বিদ্ধ হল।কিন্তু তিনি রাসূলপাক সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
কে জড়িয়ে ধরে রেখে হাসিমুখে শাহাদাৎ বরণ করলেন।(ইন্না লিল্লাহি,,,,,,,রাজিউন) রাসূলপাক সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এর প্রেমে জীবন উৎসর্গ করে কত বড় নিদর্শন তিনি রেখে গেলেন।
-সুবহানআল্লাহ!


-আকির নামক গাধার প্রেম,,,,

রাসূলপাক সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এর পবিত্র ভেছালের খবর শুনে আকির নামক একটি গাধার তিন দিন না খেয়ে মাটির দিকে তাকিয়ে থেকে অবশেষে রাসূলপাক সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এর প্রেমে অস্থির হয়ে কুপে ঝাপ দিয়ে প্রাণ বিলিয়ে দেয়। রাসূলপাক সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এর প্রেম গাধা ও প্রাণ বিসর্জন দিয়ে রাসূলপাক সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
প্রেমের স্মরণীয় ইতিহাস সৃষ্টি করেছে।

সুবহানআল্লাহ!

-নানুমনি আমি তো সত্যি মদিনাওয়ার পাগল আলেমের প্রেমে পড়ে গেলাম!
-এই টুকু শুনেই তোর এমন অবস্থা! আল্লাহর এমন একজন বান্দা আছে যাকে রাসূলপাক সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
নিজের খেরকা (জামা বিশেষ) দান করেছিলেন।যিনি ছিলেন প্রকৃত নবীপ্রেমী, একজন মহান সাধক।বলবো?
-অবশ্যই বলবে,বলো,আমার তো ভাল লাগছে!
-শুন তাহলে,
রাসূল পাক রাসূলপাক সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
প্রায়ই বলতেন, ইয়েমেনের দিক থেকে আল্লাহর রহমতের সুগন্ধি বাতাসে ভেসে আসছে।
-এটা কীসের বাতাস নানুমনি?
-হ্যাঁ বলছি,এই সুগন্ধি বাতাস হল একটি পবিত্র, পুষ্পিত হৃদয় মাত্র। যাঁর নাম হযরত ওয়ায়েস কারনী(রঃ) যিনি ছিলেন স্বনামধন্য এক তাবেয়ী।
তিনি তখন ইয়েমেনে থাকতেন এবং তাঁর সাথে রাসূলপাক সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কখনো দেখা হয়নি।
-তারপর কী হয়েছিলো?


-রাসূলপাক সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন তাঁর সাহাবায়ে কেরামদের বলেছিলেন, “তোমরা জেনে রাখ, আমার এমন একজন ভক্ত আছেন, যিনি শেষ বিচারের দিনে রাবী ও মোজার গোত্রে ছাগপালের পশম সংখ্যাতুল্য আমার পাপী উম্মতের জন্য আল্লাহর কাছে সুপারিশ করবেন।”
সবাই অবাক, কে এই সৌভাগ্যবান পুরুষ?
রাসূলপাক সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
জানালেন তিনি আল্লাহর একজন প্রিয় বান্দা, যাঁর নাম ওয়ায়েস কারনী।
তিনি কি আপনাকে দেখেছেন ? – এই ছিল সাহাবায়ে কেরামের প্রশ্ন।
না, চর্মচক্ষু দিয়ে দেখেননি; তবে দেখেছেন নয়ন দিয়ে।
তিনি যদি আপনার এতই গুণ মুগ্ধ তবে আপনার সমীপে উপস্থিত হন না কেন?
রাসূলপাক সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন, দুটো কারণে। প্রথমত, আল্লাহ ও আল্লাহর নবীর প্রেমে তিনি এমনই বিভোর যে,তাঁর কোথাও যাওয়ার অবস্থা নেই।
দ্বিতীয়ত, বাড়ীতে থাকা বৃদ্ধা অন্ধ মায়ের দেখা-শুনা ভাল করার জন্য তাঁকে সেখানে থাকতে হয় এবং জীবিকার তাগিদে উট ও চরাতে হয়।
সাহাবীরা এই মহান ব্যাক্তিকে দেখার ইচ্ছে জানালেন,তখন রাসূলপাক সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
জানালেন হযরত উমর (রাঃ) ও হযরত আলী (রাঃ) ছাড়া আর কারো সঙ্গে তাঁর দেখা হবে না।
অতঃপর তিনি ওয়ায়েস কারনী (রঃ) -এর দৈহিক বর্ণনা দিলেন, তাঁর সারা দেহ বড় বড় লোমে ঢাকা এবং দু’হাতের বাম দিকে একটা করে সাদা দাগ আছে যা শ্বেতী নয়।
আসন্ন মৃত্যুর প্রাক্কালে রাসূলপাক সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
তাঁর সর্বক্ষণের সঙ্গী হযরত উমর (রাঃ) ও হযরত আলী (রাঃ) কে বললেন- আমার মৃত্যুর পর আমার খেরকা ওয়ায়েস কারনীকে দেবে। তাঁকে আমার সালাম জানিয়ে বলবে তিনি যেন আমার গুনাহগার উম্মতের জন্য দোয়া করেন।
রাসূলপাক সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই আদেশ যথাসময়ে পালিত হয়।
একদিন হযরত আলী (রাঃ) কে সাথে নিয়ে হযরত ওমর (রাঃ)
রাসূলপাক সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-এর নির্দেশ পালনের জন্য বেরিয়ে পড়লেন কুফার পথে ।
কুফার মসজিদে খুতবা পাঠকালে হযরত ওমর (রাঃ) উপস্থিত লোকদের কাছে জানতে চাইলেন ওয়ায়েস কারনী সম্পর্কে । লোকজন তেমন তথ্য দিতে পারল না । জানা গেল ওয়ায়েস কারনী লোকালয় ছেড়ে জনবিরল এলাকায় বাস করে, মাঠে উট চরায়, দিনের শেষে শুকনো রুটি খায় । লোকে যখন হাসে, সে তখন কাঁদে । আবার লোক যখন কাঁদে, সে তখন হাসে । খাপছাড়া টাইপের মানুষ ।
এ সংবাদের উপর ভিত্তি করে এলাকায় গেলেন ।
ওয়ায়েস তখন নামায পড়ছিলেন, মাঠে তাঁর উটের পাল চরছিল যার দেখাশোনা করছিল আল্লাহর ফেরেশতারা । নামায শেষে তিনি অতিথিদের সালাম দিলেন ।
হযরত ওমর (রাঃ) তাঁর নাম জানতে চাইলে তিনি জানালেন আব্দুল্লাহ । আসল নাম জানতে চাইলে তিনি জানালেন ওয়ায়েস । হযরত ওমর (রাঃ) তাঁর হাত পরীক্ষা করে রাসূলপাক সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
– এর বর্ণনার সাথে মিল খুঁজে পেলেন । তিনি ওয়ায়েস কারনী (রঃ) – এর হাতে চুমো খেলেন । তারপর তাঁর হাতে তুলে দেয়া হল রাসূলপাক সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
– এ পবিত্র খেরকা । আর তিনি যেনো রাসূলপাক সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
– এর উম্মতের জন্য দোয়া করেন সে কথাও তাঁর কাছে নিবেদন করা হল ।
কিন্তু ওয়ায়েস (রঃ) বললেন, আপনারা ভাল করে খোঁজ নিন । সম্ভবতঃ তিনি অন্য কারো কথা বলেছেন । তখন ওমর (রাঃ) জানালেন তাঁরা ভালো করে খবর নিয়ে নিশ্চিত হয়েছেন তিনিই রাসূলপাক সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-এর পরম প্রিয় ওয়ায়েস কারনী (রঃ) ।
এতক্ষণে ওয়ায়েস আগন্তুকদের পরিচয় জানতে চাইলেন । পরিচয় পেয়ে তাঁদের হাতে চুমো খেলেন, বললেন নবীজির গুনাহগার উম্মতের মুক্তির জন্য দোয়া করার যোগ্যতা তাঁদেরই বেশী ।
ওমর (রাঃ) বললেন, আমরা তা করছি । আপনিও রাসূলপাক সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
– এর নির্দেশ পালন করুন ।
রাসূলপাক সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
– এর পবিত্র খেরকাটি নিয়ে ওয়ায়েস কারনী (রঃ) সেজদায় লুটিয়ে পড়লেন ।
তিনি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা জানালেন, প্রভূ গো ! রাসূলুল্লাহর উম্মতদের গুনাহ মাফ না করলে আমি খেরকা পরব না । নবী মুস্তাফা সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
হযরত ওমর ও হযরত আলীর প্রতি যে দায়িত্ব ন্যস্ত করেছিলেন তা তাঁরা পালন করেছেন, এখন আপনার কাজ বাকী । আপনি আপনার প্রিয় বন্ধুর উম্মতের পাপ মাফ করে দিন ।
দৈববাণী হল, হে ওয়ায়েস ! তোমার দোয়ার কারণে কিছু সংখ্যক উম্মতকে মাফ করা হল ।
কিন্তু তিনি শুনলেন না । বললেন, যতক্ষণ না সমস্ত উম্মতকে মাফ করা না হয় ততক্ষণ আমি নবীজির দেওয়া খেরকা পরব না ।
ইলহাম এল- তোমার দোয়ার জন্য কয়েক হাজার মানুষকে মার্জনা করা হবে ।
তখন সেখানে হযরত ওমর (রাঃ) উপস্থিত হলেন । তাঁকে দেখে তিনি বললেন যতক্ষণ পর্যন্ত সকল উম্মতকে মাফ করাতে না পারছি সে পর্যন্ত আমি রাসূলপাক সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
– এর খেরকা গায়ে তুলব না ।
ছিন্ন বস্ত্র পরিহিত এ মানুষটির অন্তর্জোতি দেখে হযরত ওমর (রাঃ) অভিভূত হয়ে পড়লেন । তাঁর কাছে খিলাফত তুচ্ছ মনে হল । তিনি বললেন, এমন কেউ আছ যে, একখানি রুটির বিনিময়ে খেলাফতের দায়িত্ব নিতে পার ?
তাঁর এই স্বগতোক্তি শুনে ওয়ায়েস (রঃ) বললেন, যে বোকা সেই তা নেবে । মন না চাইলে ছুঁড়ে ফেলুন, যার মন চায় সে কুড়িয়ে নেবে ।
এই কথা বলে তিনি রাসূলপাক সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-এর প্রদত্ত পোশাক পরম ভক্তিভরে পরলেন । তারপর বললেন, আল্লাহ এ অধমের প্রার্থনায় প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, রাবী ও মোজার কবিলার ছাগ লোমের তুল্য নবীজীর উম্মতকে মার্জনা করবেন ।
হযরত ওমর (রাঃ) ও হযরত আলী (রাঃ) এ কথা শুনে বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে গেলেন ।
কিছুক্ষণ পরে ওমর (রাঃ) জানতে চাইলেন কেন তিনি রাসূলপাক সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
– এর সাথে সাক্ষাত করেননি ।
তিনি এ প্রশ্নের জবাব না দিয়ে উলটো প্রশ্ন করলেন, আপনারা তো তাঁকে দেখেছেন; বলুন তো তাঁর পবিত্র ভুরু দুটো জোড়া ছিল, না আলাদা ?
প্রশ্ন শুনে তাঁরা অপ্রস্তুত হয়ে গেলেন । আশ্চর্যের কথা , তাঁরা কেউই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলেন না ।
ওয়ায়েস কারনী (রঃ) জানালেন ওহোদের যুদ্ধে রাসূলপাক সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-এর পবিত্র দাঁত শহীদের খবর শুনে তিনি নিজের সকল দাঁত ভেঙে ফেলেছেন । কারন তিনি জানতেন না রাসূলপাক সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
– এর কোন দাঁত শহীদ হয়েছে ।
হযরত ওমর (রাঃ) তাঁকে কিছু দিতে চাইলেন । তখন ওয়ায়েস কারনী (রঃ) জামার পকেট থেকে দুটো পয়সা বের করে বললেন, আমি উট চরিয়ে এ পয়সা রোজগার করেছি । আপনি যদি বলতে পারেন এ পয়সা খরচ করার পরেও আমি বেঁচে থাকব তাহলে আমার কিছু জিনিষের প্রয়োজন হবে । তারমানে, জীবন কখন ফুরায় কেউ জানে না । সুতরাং কোন কিছু সঞ্চয়ের প্রশ্ন আসে না ।
এরপর তিনি অতিথিদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিলেন এবং বললেন কিয়ামতের দিন তাঁদের সাথে আবার দেখা হবে । তাঁদের বিদায় জানিয়ে তিনি নিজেও সেখান থেকে চলে গেলেন ।
এরপর ওয়ায়েস কারনী (রঃ) – এর নাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে । এরপর তিনি ঐ এলাকা ছেড়ে কুফায় চলে যান । শোনা যায় হারম ইবনে জামান ছাড়া আর কারো সাথে তাঁর দেখা হয়নি।


চলবে,

#আলেমের_বউ (পর্ব-১৬)


আসবো মা?(নাজিফার মামা শাহেদ)
-আরে আয় ভেতরে আয়!(নানুমনি)
-মা তোমাকে কিছু বলার ছিলো নাজিফাকে নিয়ে!
-কি বলবি বলনা?
-একটা ভালো ছেলে আছে মানে আমাদের ফারুক!আমার বড় শ্যালক এর ছেলে!
-মানে কী?কি করে সে?
-কাতার থেকে এসেছে মা,নাজিফাকে ভাল রাখবে সে খুব ভাল মা!
-কিন্তু আমি তো নাজিফাকে একজন আলেমের বউ করতে চাইলাম!
-আরে মা যার ভাগ্যে যা লিখা তাই তো হয়, তুমি চাইলে কি নাজিফা আলেম কাউকে পাবে?আলেমরা তো আলেমা মেয়ে চাইবে তাই না?
-নাজিফা আলেমা নয় এই কথা সত্য কিন্তু তার স্বামী একজন আহলে সুন্নাতে ওয়াল জামায়াত আকিদার আলেম হলে
তাকে সে একজন আলেমার মতো তৈরী করে নেবে!
-মা তুমি বুঝতে পারছো না,নাজিফা জেনারেল লাইনে আছে,তা ছাড়া তার মা নেই ঘরে,বাবার অবস্থা তেমন ভাল নয়,সব কিছু চিন্তা করে আমি নাজিফাকে ফারুকের হাতে তুলে দিবো!তুমি না বলিও!আর মামা হিসেবে আমার এইটুকু দায়িত্ব রয়েছে তা পালন করতে পারি।
বলেই নাজিফার মামা রুম থেকে চলে যায়।
সামনে পায় নাজিফাকে!নাজিফা মা শুন তো,
-জ্বী মামা বলো!
-যা রুমে যায় রেডি হয়ে নেয় সুন্দর করে!একটু পরে ছেলে পক্ষ আসবে দেখতে তোকে!ছেলে পক্ষ আর অন্য কেউ নয় তোর মামির ভাই আর ভাবী আসবে আর তাদের ছেলে ফারুক!


নাজিফা না পারছে দাঁড়িয়ে থাকতে না পারছে রুমে যেতে!তবুও শক্তি নিয়ে রুমে আসে;নানুমনি আমি কী এমন কাউকে বিয়ে করবো?
-না করবি না,ছেলেকে না বলে দিবি!


দুপুরের মাঝে ছেলে পক্ষ চলে আসে!নাজিফা না সাজতে চাইলে নাজিফার মামি জোর করে সাজিয়ে দেয়!কুরবানির হাটের গরুর মত করে হাতে ধরে টেনে টেনে নাজিফাকে সামনে নিয়ে আসে!নাজিফা ভাবে মামি তো চাইলে মায়ের আসন নিতে পারে এমন করছে কেন আমার সাথে,আজ মা বেঁচে থাকলে এমন কিছুই হতো না!চোখ বন্ধ করেই চোখ টিপে পানি ফেলছে!কেন মা চলে গেলে আমাকে একা করে,আজ এমন দিন তোমাকে অনেক প্রয়োজন মা!কেন একা করে চলে গেলে আমায়?



চোখ বন্ধ করেই নাজিফা মা কে নিয়ে চিন্তা করে যাচ্ছে!এই দিকে একে একে ছেলে,ছেলের মা ও বাবা প্রশ্ন করে যাচ্ছে!নাজিফা কোনো প্রশ্ন শুনেনি উওর তো দূরের কথা!


হঠাৎ মামি হাত চেপে ধরে কীরে নাজিফা আজ তো বিয়ে নয় এখনি কাঁন্না করে শেষ!চল ভিতরে যাবি!মামির ভাবী বলল,”আরে কি রুমে যাবে আমরা তো আংটি টা এখন পড়াইনি!আংটির কথা শুনে চোখ তুলে তাকায়!নাজিফার গলা শুকিয়ে যায়,তখনি মামি নাজিফার হাত তুলে ধরলেই ছেলেটি আংটি পড়িয়ে দেয়!নাজিফা হা করে তাকিয়ে দেখছে,কোন শব্দ করছেনা!কারণ মামি হাতে শক্ত
করে ধরে আছে,একটু পরই মামি তুলে নিয়ে আসে নাজিফাকে রুমে!
-তোর বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে,শুক্রবারে(মামি)
-কিন্তু মামি আমি এই বিয়ে করতে পারবো না!
-তুই এই বিয়েটা করবি,আর করতে হবে!কোন রকম চালাকি করার চেষ্টা করবিনা!আজ থেকে বিয়ে পর্যন্ত এই রুমে থাকবি!
মামি কথা গুলো বলেই চলে যায়!
রুমে নানুমনি আসলেই নাজিফা নানুমনিকে জড়িয়ে ধরে!নানুমনি ও জড়িয়ে ধরে!
-নানুমনি তুমি কেন সেখানে আসলে না?
-আমাকে এখানে তোর মামা খুব কড়া কথা শুনিয়েছে!তোকে মেরে ফেলবে বলল তাই রাজি হয়ে গেলাম!আমাকে ক্ষমা করে দেয়!
নাজিফা নানুমনিকে আর কি বলবে,তাড়াতাড়ি ফোন নিয়ে বাবার ফোনে কল দেয়!নানুমনি বুঝে কাকে নাজিফা কল দিচ্ছে!
-নাজিফা কল দিয়ে কাজ হবে নারে,তোর মামা একই কথা তোর বাবাকে বলে রাজি করিয়েছে!তোর বাবা ও অনেক কাঁন্না করেছে ফোনে!তুই এই বিয়েটা মেনে নেয়!বলে নানুমনি চলে যায়!


নাজিফা আজ চিৎকার করে কাঁন্না করতে চায় কিন্তু গলার মধ্য দিয়ে কোন শব্দ বাহির হচ্ছে না!



একটু পর মামা আবার বাবাকে ফোনে বলছে,ভাই বৃহস্পতিবার চলে আসো,নাজিফাকে বৃহস্পতিবার ঘরে একটু মেহেদী দেওয়া হবে আর শুক্রবারে বিয়ে!সব খরচ আমার।চিন্তার কারণ নেই,আমি এখন রাখি!


নাজিফা ভাবতে পারছে আগামীকাল মেহেদী অনুষ্ঠান,মাত্র আলেম কাউকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা শুরু করলাম।স্বপ্ন শুরু না হতেই ভেঙ্গে গেলো!এমন ভাবতেই ফোন ভেজে উঠে,চেয়ে দেখে বাবার কল!তাড়াতাড়ি রিসিভ করে!
-দুই পাশেই কাঁন্নার শব্দ!
নিরব হয়ে আছে!নিরব অশ্রু ফেলছে,এক পাশে নিরুপায় বাবা আর এক পাশে বিয়ের আসনের অসহায় নাজিফা!
-আমাকে ক্ষমা করে দেয় মামুনি,তোর বাবা হয়ে ও তোর ইচ্ছা পূর্ণ করতে পারলাম না!
-নাজিফা কোনো কথা বলে না,বাবার কথা গুলো শুনে যায়!
-নাজিফা,একটা কথা রাখবি মা?
-বলো বাবা!
-তোর বাবা তো কোনো টাকা তোর বিয়েতে খরচ করতে হবে না,আমি চাই আমার টাকায় তোর বিয়ের শাড়ীটা কিনে দেবো,সেটা পড়ে তুই বিয়ের আসনে বসবি,আর বিয়ে করবি?
-ঠিক আছে বাবা তাই হবে!
-মামুনিরে কেমন কিনবো বলে দেয় না?
-লাল এর মাঝে গোল্ডেন রং!
-ঠিক আছে মামুনি!মন খারাপ করিস না!বাবা কিন্তু শুক্রবারে সকালে আসবো!বাবা এখন খুলনায় আছি!তাই আসতে আসতে লেট হবে!তুই চিন্তা করিস না,বিয়ের আগেই চলে আসবো!রাখছি!


আজ শুক্রবার
নাজিফার বিয়ে!বাবা ফোনে দশটায় বলল কুমিল্লার কাছা-কাছি চলে এসেছে তারপর থেকে আর কোনো খবর নেই!অপর দিকে নাজিফাকে গোসল করানো হয়ে গেছে!
নাজিফা পথ চেয়ে আছে কখন বাবা আসবে,বার বার ফোনের দিকে তাকায় এই বুঝি বাবা ফোন দিলো!কেটে যায় তিন ঘণ্টা!বর পক্ষ চলে এসেছে সারা বাড়িতে হৈ চৈ,,,,,
নাজিফা বার বার কল দিয়ে ব্যর্থ ফোনে কল যাচ্ছে না!কনে সাজাবে বলে সবাই পাগল হয়ে গেছে!
নাজিফা বলল বাবার যে শাড়ী আনবে তা পড়ে বিয়ের আসনে বসবে কিন্তু বাবার লেট দেখে মামি জোর করে বর পক্ষের শাড়ী পড়ানো শুরু করলো।নাজিফা বার বার কল দিয়ে যাচ্ছে!


হঠাৎ লাইন পেয়ে যায় নাজিফা!ফোন রিসিভ হতেই বলা শুরু!
-ও বাবাই কোথায় তুমি
সবাই জোর করে আমাকে বর পক্ষের শাড়ী পড়িয়ে দিলো!তুমি তাড়াতাড়ি আসো না বাবাই!
ঐ পাশে নিরব!
-আমি আপনার বাবা নই!
-নাজিফা দাঁড়ানো থেকে বসে যায়,কাঁপা গলায় তো কে আপনি? বাবাই কোথায়?
-ফোনটা যার তিনি এক্সিডেন্ট করেছে,ঢাকা থেকে আসা বাস আর চট্টগ্রাম থেকে আসা মালের ট্রাক আর কুমিল্লা বিশ্বরোডের অটো তিনটা মিলে!
আপনি কুমিল্লা মুন হাসপাতালে চলে আসুন!
লাইন কেটে যায়!


নাজিফা ফ্লোরে বসে পড়ে!

নাজিফা ফ্লোরে পরে যায়!


ফোনটা হাতে নিয়ে ফ্লোর থেকে উঠে দাঁড়ায় নাজিফা!চোখ দিয়ে পানি অঝরে পড়ছে!
-কী হয়েছে নাজিফা?(নানুমনি)
-বাবা এক্সিডেন্ট করছে নানুমনি!কুমিল্লা মুন হাসপাতলে আছে!এখনি যেতে বলেছে!কথা গুলো বলেই নব বধূর সাজে বিয়ের আসন থেকে বের হয়ে পড়ে নাজিফা!পথ আটকে নাজিফার হাত চেপে ধরে নাজিফার মামা শাহেদ।
-বিয়ে না করে তুই কোথায় ও যাবি না!চল রুমে!
-হাত ছাড়িয়ে নেয় নাজিফা!আমি
কোনো বিয়ে করতে পারবো না এখন,বিয়ের ছেড়ে আমার বাবার জীবনের মূল্য আমার কাছে অনেক বেশি বলেই আসর ত্যাগ করে নাজিফা!বোকরা না পড়ে লাল শাড়ীতে মেহেদী রাঙ্গা হাতে দৌড়ে রাস্তায় উঠে নাজিফা!মেইন রোডে এসে গাড়িতে উঠে পড়ে!তারপর কুমিল্লা যাওয়ার জন্য বাসে উঠে!বাসের কিছু লোক আড় চোখে নাজিফাকে দেখছে!নাজিফা শাড়ির আঁচলে মুখ ঢেকে রাখে!এক ঘণ্টায় পৌঁছে যায় নাজিফা মুন হাসপাতালে!
আবার ও বাবার নম্বর কল দিলে লোকটি জানায় জরুরি বিভাগের সামনে যেতে!নাজিফা দৌড়ে জরুরি বিভাগের সামনে আসে!লোকটি বুঝে যায় নাজিফা বিয়ের আসর থেকে এসেছে!কারণ
নাজিফার বাবার এক্সিডেন্ট হবার পর যখন লোকটি হাসপাতালে নিয়ে আসে তখন ফোন আর শাড়ী লোকটির হাতে দিয়ে বলেছে আমার মেয়েকে শাড়ীটা পৌঁছে দেবেন!
নাজিফা বলল,”বাবাই কোথায়?
-জরুরি বিভাগের মাঝে আছে,শান্ত হয়ে বসো বোন!(অপরিচিত লোক)
-নাজিফা একটা সিটে বসে পড়ে!
-আপনার কি বিয়ে আজ বোন?
-নাজিফার চোখ থেকে পানি পড়ছে!নিরবে মাথা নাড়ালো!
-এই শাড়িটা নিন বোন,আপনার বাবা দিয়েছে আসার সময় আমার হাতে!
নাজিফা শাড়ী হাতে জড়িয়ে নিয়ে আরো জোরে কাঁন্না শুরু করে!
এমন সময় ডাক্তার মোস্তাফিজুর রহমান বলল,”অনেক রক্তক্ষরণ হয়েছে,রক্ত লাগবে।
নাজিফা কি করবে বুঝতে পারছে না!কোথায় থেকে রক্ত দিবে!
-বোন আপনার বাসায় কেউ নেই!(অপরিচিত লোকটি)
-আছে,তবে কেউ আসেনি!
-চিন্তা করবেন না আমি ব্যবস্থা করে দিবো,ইনশাআল্লাহ্



এক ঘণ্টা পর নাজিফার নানু্মনি ও মামা আসে!
মামা এসেই জানতে পারে আরিফুর রহমান জরুরি বিভাগে আছে!
নাজিফা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে!যতটুকু শক্তি ছিলো যেমন করে পারলো একটা তাপ্পর বসিয়ে দিলো নাজিফার গালে!নাজিফা তাপ্পর খেয়ে অভাক হয়ে যায়!জন্মের পর মায়ের কাছে যতটুকু বড় হয়েছে কখন মারেনি!মায়ের মৃত্যুর পর বাবা ও কখন হাত উঠায়নি নাজিফার গায়ে!আজ প্রথম কেউ মারলো তাও আবার মায়ের আপন ভাই!
-তুই বিয়ের আসন থেকে কেন চলে আসলি?
-আমি আগে ও বলছি এখন ও বলছি!বিয়ের চেয়ে আমার কাছে বাবার জীবনের মূল্য অনেক বেশি!
-তুই জানিস বিয়েতে আমার কত টাকা খরচ হয়েছে!তারা বিয়ে ভেঙ্গে এখন চলে গেছে!শুধু তাই নয় বলে গেছে তোর মত অলক্ষি মেয়েকে তারা তাদের ঘরের বউ করে নিবে না!আমার মান-সম্মান সব শেষ করে দিলি তুই!
নাজিফা চুপ করে সব শুনে রইলো!
-আর একটা কথা তুই না তোর বাবা আর কোন দিন আমাদের বাড়িতে যাবি না!আমাদের সীমানায় ভূল করে ও পা রাখবি না!কথাটা মনে রাখিস!কথা গুলো বলেই মামা চলে যায়!


নাজিফার নানুমনি অপর দিকে অপরিচিত লোকটিকে নাজিফার জীবনে ঘটে যাওয়া কাহিনী কিছুটা বলে!অপরিচিত লোকটি নাজিফার মাথায় হাত রাখে!আজ থেকে তুমি আমার ছোট বোন!
-নাজিফা চোখের পানি ফেলে আর লোকটির দিকে তাকায়!
-আমার নাম নাফিজ!
-আমি নাজিফা!
-আমাকে তোমার ভাই হিসেবে মেনে নিয়েছো.?
-নাজিফার নুসাইরের কথা মনে পড়ে!নুসাইর ছোট আর নাফিজ বড়!কিন্তু ভাই তো!হ্যাঁ মেনে নিয়েছি!তবে একটা কথা?
-হ্যাঁ বোন বলো!
-সবাই আমাকে ছেড়ে চলে যায়,নুসাইর ও চলে গেছে আমাকে একা করে!তুমি যাবে না তো!
-নারে বোন কথা দিলাম যাবো না!
-আচ্ছা!
-আমরা পাঁচ ভাই,আমাদের কোন বোন নেই!তাই তোমাকে ছোট বোন বানিয়ে নিলাম!
-আচ্ছা!
-আমি বাসায় জানিয়েছি বাবা মা তারা আসবে এখন!



জাকির হোসেন ও তার বউ রহিমা বেগম চলে আসেন মুন হাসপাতালে!
রহিমা বেগম বলল,”নাফিজ কইরে আমার মেয়ে?
নাফিজ বউ এর সাজে নাজিফাকে দেখিয়ে দিলো!নাজিফাকে রহিমা বেগম জড়িয়ে ধরলেন!নাফিজের থেকে রহিমা বেগম নাজিফার সম্পর্কে কিছুটা জেনে নিয়েছে!মাকে হারিয়ে নাজিফা এই প্রথম বার মায়ের মত নতুন একটি মাথা রাখার মত স্থান পায় রহিমা বেগমের বুকের মাঝে!


অপর দিকে আরিফুর রহমান কে চার ব্যগ রক্ত দেওয়া হয়ে গেছে!তবুও কোন খবর নেই!জোর করে ও কেউ নাজিফাকে কিছু খাওয়াতে পারেনি!বাবার জন্য জরুরি বিভাগের দরজায় বসে থাকে!২ দিন কেটে যায়!
৩ দিন পর ডাক্তার মুস্তফিজুর রহমান বলল,”আন্তরিক ভাবে আমরা দুঃখিত!অনেক রক্তক্ষরণ হওয়ার কারনে আমরা তাকে বাঁচাতে পারিনি!
নাজিফা বলল,”না,না আমি বিশ্বাস করিনা”বাবাই আমাকে একা করে যেতে পারেনা!জরুরি বিভাগ থেকে লাশ বের করলে!নাজিফা দৌড়ে গিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরে!ও বাবাই কথা বলো!দেখো আমি নাজিফা!চোখ খুলে দেখো বাবাই!এই বাবাই কথা বলো না কেন!তুমি রাগ করেছো তাইনা!আমি তোমার শাড়ী পড়ে বিয়ে করবো!রাগ করিও না বাবাই!বার বার এমন কথায় নাজিফা তার বাবার মুখ থেকে কোনো কথা শুনতে পেলোনা!
-বোন তোমার বাবা চলে গেছে!আর কথা বলবে না!(নাফিজ)
-নাজিফা বাবার মুখে মুখ রেখে চিৎকার করে উঠলো!এই বাবাই আমাকে একা করে কেন চলে গেলে!আমি বাঁচবো ক্যামন করে!যে দিন ছোট ছিলাম আমার হাত ধরে স্কুলে নিয়ে যাওয়ার পথে বলেছো তোর মা তোকে একা করে গেছে আমি যাবো না নাজিফা!ও বাবাই তুমি কি সে কথা ভুলে গেলে!আমাকে কে মামুনি বলে ডাকবে!কথা বলো বাবাই!আমাকে একা করে তুমি কোথায় যাও বাবাই?আমাকে ও নিয়ে যাও!বাবাই,,,,,,,,
ধীরে ধীরে নাজিফার চোখে অন্ধকার নেমে আসে!ফ্লোরে পরে যায়!ফুলের টব ছিলো পাশে,অনেকটা মাথায় লাগে জোরে!যার কারণে মাথাটা পেটে রক্তক্ষরণ শুরু হয়ে যায়!নাজিফাকে জরুরি বিভাগে রেখে,নাফিজ নাজিফার নানুমনির সাহায্যে নাজিফার দাদার বাড়িতে লাশ নিয়ে যায় এবং দাপন সম্পূর্ণ করে!জ্ঞানহীন থাকায় নাজিফা তার বাবাকে আর শেষ দেখা দেখতে পারেনি!রহিমা বেগম রয়েছে হাসপাতালে নাজিফার সাথে!

নাজিফার টানা বারো ঘণ্টা পর জ্ঞান ফিরে!সব কিছু হারিয়ে চুপসে যায় এই যেন পাথর!


রহিমা বেগম নাজিফার মাথায় হাত রাখলেন আর বললেন,”
“ইন্নাল্লাহা মা’আস সাবিরিন”
“নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন”
Verily, Allah is with those who are Patient
[Quran 2:153]


ধৈর্য ধারন করো নাজিফা!
নাজিফা চলচল চোখে তাকায় রহিমা বেগমের দিকে আর চোখ টিপে পানি ফেলছে অঝরে,,,,,,


সুস্থ হলে নাজিফার নানুমনি বাড়িতে নিতে চাইলে নাজিফা রাজি হয়নি,কারণ মামা যাওয়ার সময় না করেছে বাবা মেয়ে কেউ যাতে না যায় সেই বাড়িতে,বাবাই তো চলে গেলো চিরতরে আর যেতে হবে না,আমি গেলে হয় তো তাড়িয়ে দেবে,তুমি চলে যাও নানুমনি!আমি যাবো না!
-তাহলে তুই কোথায় যাবি?(নানুমনি)
-আরে আমার মেয়েকে কোথায় ও যেতে হবে না,আমাদের বাড়িতে যাবে!(রহিমা বেগম)
-তাহল আমি এখন যাইরে নাজিফা।ফোনে যোগাযোগ করিস।(নানুমনি)
-আচ্ছা(নাজিফা)
-কই তোমরা এসো গাড়ি চলে এসেছে!(নাফিজ)
-চল নাজিফা(রহিমা বেগম)


কখন ভাবিনি এমন অপরিচিত মানুষ হয়ে ও আজ বুকে টেনে আপন করে নিবে!


নাজিফা উঠ মা?(রহিমা বেগম)
-উঠবো,তার আগে বলো তোমাকে কী নামে ডাকবো?
-তোর যা খুশি?
-আচ্ছা মামুনি বলি তাহলে?
-তোর খুশিতে আমি খুশি!ফ্রেশ হয়ে নেয়।
-আচ্ছা।


আজ আগস্ট এর নয় তারিখ।
নাজিফার এইচ এস সি রেজাল্ট দেবে!সকাল থেকে টেনশন!


অপেক্ষার প্রহর শেষ হয়ে রেজাল্ট পেলো কিন্তু আশা অনুরূপ হয়নি!তবুও শুকরিয়া রবের কাছে যে পাশ করেছে!


নাজিফা ভর্তি হয় কুমিল্লা
ভিক্টোরিয়া কলেজে।
কলেজ বাসা থেকে দূরে হবার কারণে কলেজের কাছেই ভাড়া বাসা নেওয়া হয়।নতুন বাসায় এসে নাজিফার ভালই লাগছে কারণ পরিবেশটা খুব সুন্দর আর নাজিফার রুমের সামনেই বেলকুনি।রোজ সকালেই দাঁড়িয়ে বেলকুনির মাঝে বাহিরের দৃশ্য দেখে।


October পনেরো তারিখে ভার্সিটির প্রথম ক্লাস অনার্স প্রথম বর্ষের।আলহামদুলিল্লাহ নিকাব,হিজাব এবং মোজা ব্যবহার এর জন্য কোনো কথা শুনতে হয় না নাজিফার।
বড় আপুদের থেকে শুনা পরীক্ষারর হলে ধরা হয়,নাজিফা ভাবে তা পরীক্ষারর সময় দেখা যাবে।এখন তো কোনো স্যার বা ম্যাম কিছু বলেনি।বললে তা পরে দেখা যাবে।


ঘুম থেকে উঠে বেলকুনিতে না গেলে নাজিফার ভাল লাগেনা,সারাদিন একবার হলে ও যাবে।


এমনি এক সকালে পাশের বেলকুনির থেকে সু-মধুর কণ্ঠে নাত শরীফ শুনা যায়, একটি পুরুষের কণ্ঠে,,,,,,,,,

Noor wala aya hain.
Noor lekar aya hain.
Sare alam main dekho
Kecha noor chaya hain.
Assalatu assalamu alaika
Ya Rasulallah,
Assalatu assalamu alaika
Ya habib Allah…………………………….

নাজিফা চোখ তুলে তাকায়
হ্যাঁ দেখতে পেয়েছে,পাঞ্জাবি পড়া কোন এক পুরুষ নাত শরীফ গাইতেছে,মুখটা দেখা যায় না দক্ষিণ দিকে মুখ করে রাখার কারণে।নাজিফা আনমনে মনের মাঝে মুচকি হাসে,মুখ দেখার প্রয়োজন নেই এমন সু-মুধুর কণ্ঠে রোজ নাত শরীফ শুনতে পারলেই হলো।
কিন্তু সেই দিনের পর আর কাউকে নাত শরীফ গাইতে দেখা ও গেলো না আর শুনা ও গেলো না।
তবুও রোজ বেলকুনিতে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করে আবার ও কখন শুনবে সেই সু-মধুর কণ্ঠ সুর।


এমন করেই দিন চলে যায় মাস চলে যায়,একটি বছর চলে যায়,
সেপ্টেম্বর এর এক তারিখ থেকে অনার্স প্রথম বর্ষের পরীক্ষা শুরু হবে,


চলবে,
লিখা:শাঁরঁমিঁনঁ সুঁলঁতাঁনাঁ সাঁলঁমাঁ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here