আলেমের বউ পর্ব ১৭+১৮

0
466

#আলেমের_বউ (পর্ব-১৭+১৮)


সেপ্টেম্বর এক তারিখ থেকে অনার্স প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হবে।কয়েক দিন বন্ধ থাকায় ক্লাস,নাজিফা বাড়িতে আসে,নাজিফাকে পেয়ে ভাই গুলো খুশিতে আত্মহারা!রহিমা বেগম নাজিফার প্রিয় খাবার তৈরি করা নিয়ে ব্যস্ত!নাজিফা শুয়ে আছে আর নাত শরীফ শুনছে ফোনে!
রহিমা বেগমের ছোট জা আয়শা এসে বলল,নাজিফা আমার সাথে বাজারে যাবে একটু?
-কেন?(নাজিফা)
-পার্লারে যাবো,আর কিছু কেনা কাটা করবো!
-ওমারে তুমি এখন পার্লারে কেন যাবে?
-আর বলিস না তোর চাচ্চু আসবে বিদেশ থেকে আট তারিখে।তার আগে পার্লার থেকে ভ্রু গুলো একটু তুলে আসতে চাই,আমার ভ্রূ গুলো খুব মোটা যার কারণে আমাকে তেমন সুন্দর লাগেনা!জানিস তো পুরুষের মন রাখার জন্য কত কিছুই না করতে হয়,যখন বিয়ে হবে তখন বুঝবি!
-তাই নাকি?
-হ্যাঁ।
-তুমি কি জানো ভ্রূ তুলে ফেলে দেওয়ার কারণে গুনাহ হয়!
-গুনাহ হবে কেন?আমি তো আমার স্বামীর জন্য এসব করছি তাহলে গুনাহ হতে যাবে কেন?
-হ্যাঁ ভ্রূ তুলতে পারো যদি দুইজনেই এক সাথে জাহান্নামে যেতে চাও, তাহলে পারবে সমস্যা নাই!হিহিহি।
-কী বললে নাজিফা আমরা দুইজনে জাহান্নামে কেন যাবো,খুলে বল তো?
-হ্যাঁ বলছি,

হযরত আলকামা (রাঃ) বলেন,হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) লাওনত করেন এমন সব নারীর উপর,যারা অপরের অঙ্গে উলকি উৎকীর্ণ করে।যারা কপাল প্রশস্ত করার জন্য কপালের উপরিভাগের চুল গুলো উপড়ে ফেলে।
তখন উম্মে ইয়াকুব জিজ্ঞেস করলেন,এটা কেন?উত্তরে আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বললেন,আমি কেন তার উপর লা’নত করব না যার উপর স্বয়ং রাসূলুল্লা (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) লা’নত করেছেন।এমন কি আল্লাহ্ কিতাবেও তাই আছে।
তখন উম্মে ইয়াকুব বললেন,আমি সমস্ত কিতাব(কোরআন ) পড়েছি,কিন্তু তাতে তো কোথায় ও পেলাম না।তখন আবদুল্লাহ বললেন,যদি তুমি কোরআন পাঠ করতে তা হলে অবশ্যই তাতে পেতে-
-রাসূল (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যা তোমাদের দেন তা মজবুত ভাবে আঁকড়ে ধর আর যা নিষেধ করেন,তা থেকে বিরত থাক।
হাদীস নং:৫৫১৪ (সহীহ বোখারী শরীফ)

-মাশাআল্লাহ্ অনেক সুন্দর হাদীস শুনালি আমি আর ভ্রূ তুলবো না।
-শুকরিয়া।
-আচ্ছা কিছু কিনার আছে জিনিজ পত্র এগুলো নিয়ে আসি।
-আচ্ছা যাও।
-তুই যাবিনা?
-না আসলে ভাল লাগছেনা শরীরটা তাই আর কি!
-আচ্ছা আমি যাই,ওহ একটু সেন্ট লাগিয়ে নেই।
-কী বললে তুমি?
-কেন সেন্ট লাগাবো বললাম।
-তুমি জানো না নারীরা সেন্ট বা পারফিউম লাগিয়ে বাহিরে যায় না।
-কী বলিস নাজিফা?আমি তো কোথায় ও যখন বেরর হই তখন সেন্ট ব্যবহার করি!
-শুনো,
পর্দার সাথে হলেও মহিলারা পারফিউম বা সেন্ট জাতীয় কোন সুগন্ধি ব্যবহার করে বাইরে যেতে পারবে না। কারণ তাতে ফিতনা আছে। মহানবী সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, “প্রত্যেক চক্ষুই ব্যাভিচারী। আর মহিলা যদি (কোন প্রকার) সুগন্ধি ব্যবহার করে কোন (পুরুষের)মজলিসের পাশ দিয়ে অতিক্রম করে, তবে সে ব্যভিচারিণী (বেশ্যার মেয়ে)।” ৫০৬ (আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে হিব্বান, ইবনে খুযাইমাহ, হাকেম, সহীহুল জামে, ৪৫৪০ নং)
এমন কি মসজিদে নামায পড়ার উদ্দেশ্যে যেতেও সে সেন্ট ব্যবহার করতে পারবে না। মহানবী সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন, “আল্লাহ্ বান্দীদেরকে মসজিদে আসতে বারণ করো না, তবে তারা যেন খোশবূ ব্যবহার না করে সাধাসিধাভাবে আসে।” ৫০৭ (আহমাদ, আবূ দাঊদ, সঃ জামে ৭৪৫৭ নং)
“যে মহিলা সেন্ট ব্যবহার করে মসজিদে যাবে, সে মহিলার গোসল না করা পর্যন্ত কোন নামায কবুল হবে না।” ৫০৮ (ইবনে মাজাহ ৪০০২, সঃ জামে ২৭০৩।
-হায় আল্লাহ্ আমি তো জানতাম না এগুলো।
-এখন তো জানলে আর ব্যবহার করে বাহিরে যেও না!



আজ পয়েলা সেপ্টেম্বর! নাজিফার অনার্স প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা।যথা সময়ের আগে ক্লাসে চলে আসলো নাজিফা।কারণ সিট খুঁজে নিতে হবে।
সিট পড়েছে চারতালায়।তা ও আবার
সিট পড়েছে মেয়ের সোজা-সুজি হলে ও পাশে অন্য ডিপার্টমেন্ট এর ছেলে।মনটা নাজিফার খারাপ হয়ে গেলো তাই।



তানু জানিস তোর পাশে একটা মেয়ে বসেছে?(আকাশ)
-এই তোকে না বলছি আমাকে তানু বলে ডাকবি না (তনয়)
-স্যরি দোস্ত!আর তোকে তানু বলে ডাকবো না (আকাশ)
-হুম এবার বল।
-হুম মেয়েটা কেমন জানিস?
-খুব সুন্দরী নিশ্চয়?
-আমি কি দেখেছি নাকী?
-তাহলে যে বললি!
-আরে মামা মেয়েটা তো আপাদ মস্তক ঢেকে এসেছে।
-বলিস কি?এতো জনপ্রিয় একটা ভার্সিটিতে পর্দা?
-হুম সেটাই তো আশ্চর্যের বিষয়।
-মেয়েটাকে তো দেখতেই হয়,চল মামা দেখে আসি।
-তাড়া করছিস ক্যান মেয়ে তো তোর পাশের সিটেই বসছে।
-হুম,,,,দেখছি,,,,


-হ্যালো কালো বোরখা (শিষ বাজিয়ে নাজিফাকে উদ্দেশ্য করে বলল তনয়)
নাজিফা শুনেও না শুনার ভান করে চুপ করে বসে রইলো।
তনয় আর আকাশ নাজিফার ব্যবহারে হা করে রইল।
আজ পর্যন্ত কেউ তনয়ের সাথে এমন ব্যবহার করেনি, তনয়েরর মত হ্যান্ডসাম ছেলের পিছনে মেয়েরা আঠার মত লেগে থাকে আর নাজিফা এমন করল???খুব রাগ হলো তনয়ের।
আকাশকে বলল: মামা মেয়েটার খুব দেমাগ, একে বোঝাতেই হবে আমি তনয় কি জিনিস।
তনয় পাশ দিয়ে নাজিফার ডিপার্টমেন্ট এর ফারিহা যাচ্ছিলো
তাকে ডাক দিলো
তনয়:ফারিহা এই মেয়েটার সম্পর্কে কিছু জানিস?
ফারিহা: মেয়েটা খুবই অদ্ভুদ, প্রয়োজন ছাড়া কারো সাথেই কথা বলে না
তনয়: মেয়েটা দেখতে কেমন রে?
ফারিহা:কালো ভুত মনে হয়, তাইতো কারো সামনেই মুখ বের করেনা
তনয়:তোদের সামনেও মুখ খোলেনা?
ফারিহা:না।
তনয়: হুম তুই যেতে পারিস
আকাশ শোন
আকাশ: হুম বল
তনয়:স্যার বা ম্যাম যেই আমাদের হলে আসুক তাদের জানিয়ে দেয়, exam টাইমে সবাই যেনো মুখ বের করে পরিক্ষার দেয়।
আকাশ: ওকে দোস্ত
আকাশ চলে গেলো,তনয় আনমনে বলে উঠল, এবার দেখব তুমি আপাদ মস্তক ঢেকে পরীক্ষা দেও কি করে?????
পরিক্ষা চলতেছে,,, সবাই যে যার আসনে বসে আছে।

আকাশকে কলম দিয়ে গুতো দিচ্ছে তনয়!
এই আকাশ বলেছিস তো?
আকাশ:হ্যাঁরে দোস্ত বলেছি!একটু পর মজা দেখবি!

চলবে…

#আলেমের_বউ (পর্ব-১৮)
.
.
হলে দুই জন পুরুষ শিক্ষক এবং এক জন মহিলা শিক্ষিকা আছেন!
কাগজে সাইন করতে এসে ম্যাম এর চোখ কপালে উঠে গেছে নাজিফার মুখ ঢাকা দেখে।
-এই মেয়ে মুখ খোল।এটা পরীক্ষার হল।আমরা কী করে বুঝবো স্টুডেন্ট পরীক্ষা দিচ্ছে না অন্য কেউ?
-জ্বী ম্যাম আমি মুখ খুলে দেখাচ্ছি আপনাকে আপনি রেজিস্টার কার্ড আর এডমিট কার্ড এর পিক এর সাথে মিলিয়ে নিতে পারেন।
-ঠিক আছে।(ম্যাম)
নাজিফা দাঁড়িয়ে ম্যাম এর মুখের সোজা মুখ রেখে খুলে দেখিয়ে আবার নিকাব লাগিয়ে নেয়।
তনয় আর আকাশ নাজিফার মুখ না দেখতে পেয়ে রাগে গজগজ করতে থাকে।নাজিফা নিকাবের মাঝেই মুচকি হাসি দিয়ে রবের কাছে শুকরিয়া জানায়।
একে একে টানা পাঁচটা পরীক্ষা এমন ভাবে দিয়ে দেয় নাজিফা।
তনয় ব্যর্থ হয় ঠিক করে নেয় শেষ পরীক্ষার দিন কিছু একটা করবে।
ভাগ্যকর্মে তনয়ের প্রিয় মিজান স্যার শেষ দিন হলে পড়েন।
আজই সুযোগ নাজিফাকে নাজেহাল করার।
যেই ভাবা সেই কাজ।
স্যার কিছুতেই নাজিফাকে মুখ ঢেকে পরীক্ষা দিতে দেবেন না জানিয়ে দেয় এমন কি পরীক্ষার কাগজ আর প্রশ্ন ও আটকে রাখে।হলের অন্য স্যার নাজিফাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললেন,তুমি নিচে গিয়ে প্রিন্সিপাল স্যারের থেকে অনুমতি আর লিখিত নিয়ে আসতে পারলে পরীক্ষা দিতে পারবে নয় তো পারবেনা।
তনয় আর আকাশ খুশিতে পারেনা ডান্স করে ক্লাসে।
নাজিফা চারতলা থেকে নিচে আসে প্রিন্সিপাল এর কাছে।প্রিন্সিপাল সব শুনে বললেন,
প্রিন্সিপালঃ তুমি কি জানো পরিক্ষা না দিলে রেজাল্ট এক বিষয় অকৃতকার্য আসবে এবং পরে তা আবার দিতে হবে।
নাজিফাঃ স্যার মাফ করবেন! দুনিয়ার পরিক্ষা দিয়ে কি করব যদি আখেরাতের পরিক্ষায় ফেইল হয়ে যাই?
প্রিন্সিপালঃ আখেরাতের চিন্তা তো পরেও করতে পারবে, আগে তো ক্যারিয়ার গড়ে তুলো।
নাজিফাঃ স্যার একটা বরফের খন্ড হাতে তুলে রাখলে তার ২মিনিট অথবা পাচঁ মিনিটের গ্যারান্টি আছে কিন্তু আমার নিঃশ্বাষের তো সেই গ্যারান্টিও নেই।
আমি যে এখান থেকে বাড়িতে পৌছতে পারব তার গ্যারান্টি দিতে পারবেন?
প্রিন্সিপাল আমতা আমতা করে বলল, হ্যাঁ তা পারবো না।আচ্ছা তুমি এখন যেতে পারো আর হ্যাঁ পরিক্ষা দিবা কোন প্রবলেম হলে আমি দেখব।
নাজিফা: শুকরিয়া স্যার,কিন্তু লিখিত লাগবে?
-আমি আসতেছি।
-আচ্ছা বলে নাজিফা
সালাম দিয়ে চলে আসে।
প্রিন্সিপাল স্যার ক্লাসেরর সামনে এসে মিজান স্যারকে ডেকে নিলেন।
মিজান স্যার:
স্যার আপনি ওকে পরিক্ষা দিতে বললেন?
প্রিন্সিপাল: হ্যাঁ বললাম কারণ ও যা বলেছে সবি যুক্তি সঙ্গত কথা বলেছে। এখন যান হলে এ ব্যাপারে আর কোন কথা বলতে চাই না।
মিজান স্যারের মনে রাগ চেপে বসলো আরো জোরালো ভাবে।নাজিফাকে চার ঘণ্টায় খোচা মেরে অনেক কথা শুনায়।
নাজিফা পরিক্ষার হলে লিখলে ও নিকাব ভিজিয়ে ফেলে নিজের অজান্তে কাঁন্না করে।পরীক্ষা শেষ করে।বাসার দিকে রওয়ানা হয়।

রাইসা নামের একটি মেয়ে নাজিফার হাতে ধরলো।
-আজ তোমাকে মিজান স্যার অনেক কথা শুনিয়েছে।খুব খারাপ লাগছে আমার।স্যার এমনি প্রিন্সিপাল ছাড়া
আর উনাকে কেউ কিছু বলে না,কেউ কিছু বললে তার খবর আছে।
নাজিফা: হুম
বোঝলাম।
কিন্তু বোন আপনার নাম কি?
রাইসা:আবদুল্লাহ বিনতে রাইসা।তোমার নাম কি??
নাজিফা: মাশা’আল্লাহ খুব সুন্দর নাম…
আমার নাম হচ্ছে নাজিফা
রাইসা: একটা কথা জিজ্ঞেস করি?
নাজিফা: হ্যাঁ বলেন,
রাইসা: এই যে তুমি কালো একটা বোরখা আর চার থেকে পাচঁ লেয়ারের হিজাব পড়ে, নিকাব নামিয়ে চোখে সানগ্লাস পড়েছো তাও কালচে গ্লাসের চশমা, আবার হাতে মোজা পায়ে মোজা, তোমার কি গরম লাগেনা?
নাজিফা: সত্যি কথা বলবো? আমার এতে একটুও গরম লাগেনা, এসব পড়লে কেমন জানি মনে প্রশান্তি অনুভব করি।
বেপর্দা ভাবে চললে তার শাস্তি জাহান্নাম! এখন যদি এই টুকু গরম সহ্য না করে বেপর্দা ভাবে ঘুরাফেরা করি তাহলে জাহান্নামের আগুনের উত্তাপ কি করে সহ্য করব?আপনি কি জানেন বোন নামায, রোজার মত মেয়েদের জন্য পর্দাও ফরজ ইবাদত!
পর্দা হলো ফরজে আইন অর্থ্যাৎ এটা আল্লাহর হুকুম এবং আবশ্যক।
আল্লাহর এই আইন যদি না মানি তাহলে জাহান্নামের গর্জন রত কালো ভয়ানক আগুনে দগ্ধ হতে হবে লাখ কোটি বছর।
জাহান্নাম এতো ভয়ংকর যে ৭০ হাজার ফেরেস্তা ৭০হাজার লোহার শিকল দিয়েও বেধে রাখতে পারছেনা।
রাইসাঃ হুম বাট আমি ও তো স্কার্ফকে হিজাবের করে
যথেষ্ঠ শালীন ভাবেই থাকি শুধু মুখ ঢাকি না, তাতে কি আমার
পর্দা হয় না?শোন নাজিফা মনের পর্দাই বড় পর্দা
তাছাড়া তোমাকে তো কেউ দেখতেই পারেনা এসব আবরনের জন্য! সবাই ভাবে তুমি কালো ভুতের মতো
নাজিফা: মাশাআল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ
রাইসা: হোয়াট? সবাই তোমাকে কালো ভূত বলে এতে তোমার খারাপ লাগেনা?
নাজিফা: না একদম খারাপ লাগে না, কারণ তারা আমার শরীরের একটু অংশ দেখতে পারে না বলেই কালো ভূত বলে তার মানে আমার পর্দা নিখুত
রাইসা: তুমি কি পাগল?
নাজিফা:শুনেন বোন
কুরআনে কী বলে,,,,,,

#হে নবী! আপনি আপনার পত্নীগণকে, কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দাংশ নিজদের উপর টেনে দেয়,এতে তাদের চেনা সহজ হবে, ফলে তাদের উত্যক্ত করা হবে না, আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু!”
(সূরা আহযাবঃ ৫৯)
এই আয়াতে স্পষ্ট ভাবে চেহারার পর্দার কথা বলা হয়েছে,
‘চাদরের কিয়দাংশ নিজের উপর টেনে দেয়’ বাক্যটিই প্রমান করে এখানে গায়ের চাদরের কিছু অংশ মুখের উপর টেনে দেয়ার কথা বলা হয়েছে..

#তারা যেন যা সাধারনত প্রকাশ্যমান তা ব্যতীত তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে।”
(সূরা আন নূরঃ ৩১)
এই আয়াতটির ভুল ব্যাখ্যা করে অনেকে মুখ খোলা রাখার ব্যাপারে যুক্তি দেখান,কারন এখানে বলা হয়েছে যা সাধারনত প্রকাশমান!
সুতরাং তারা চেহারাকে প্রকাশ্য বস্তু ধরে নিয়েছে!
অথচ যা দৃশ্যত প্রকাশমান বলতে নারীর দৈর্ঘ ও খর্বতা, কৃশতা ও স্থুলতা, বাতাসের দোলে বোরকার নিচের পোশাক বা দেহের কোন অংশ দেখা যাওয়াকে বুঝানো হয়েছে..
অর্থাৎ নারীর সৌন্দর্যের কোন কিছু অনিচ্ছায় প্রকাশিত হওয়ার বিষয়টি পর্দার হুকুম থেকে বিয়োজ্য..
সেজন্যই উক্ত আয়াতে আল্লাহ ‘নারী নিজে যা প্রকাশ করে’ কথাটি বলেননি,
বলেছেন,যে সৌন্দর্য নারীর স্বেচ্ছা সম্পাদন ব্যতীত এমনিতেই প্রকাশিত হয়ে যায়!সুতরাং হাত, মুখ,পা এগুলোও পর্দার অন্তর্ভুক্ত..
#আল্লাহ ইরশাদ করেন,
‘মুমিনদের বলুন,তারা যেন তাদের দৃষ্টি কে নত রাখে এবং লজ্জাস্থানের হিফাযত করে,এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে, নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন!’
(সূরা নূরঃ ৩০)
.
প্রতিটি বিবেকবান ব্যক্তিই বুঝবে এই আয়াতে কি বুঝানো হয়েছে..
নারীর চেহারা পর্দামুক্ত রাখার অর্থই হল তারা যেন পুরুষদেরকে তাদের দেখার প্রতি আমন্ত্রন জানাচ্ছে!
#এই আয়াতে র পরবর্তী আয়াতেই কি বলা হয়েছে মিলানোর চেষ্টা করুন…
‘ঈমানদার নারীদের বলুন,তারা যেন তাদের দৃষ্টি কে নত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে,এবং সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে!'(সূরা নূরঃ ৩১)
প্রথমে পুরুষদের দৃষ্টি নত রাখতে বলা হয়েছে, পরবর্তী আয়াতেই নারীর সৌন্দর্য প্রদর্শন করতে নিষেধ করা হয়েছে…
মানে কি দাঁড়াল?
আপনি সৌন্দর্য প্রদর্শন করলে পুরুষ রা তাকাবেই, তাই নারীর পর্দা পুরুষদেরকে তাদের দৃষ্টি অবনত রাখতে সাহায্য করবে…

#দেখুন কোরআন আমাদের জন্য কি সুন্দর পবিত্রতা বর্ণনা করছে!
‘তারা যেন তাদের গোপন সাজসজ্জা প্রকাশের জন্য জোরে পদচারণা না করে!’
(সূরা নূরঃ ৩১)
.
নারীর জন্য পায়েল বা নুপুরের শব্দ নিয়ে ঘর থেকে বের হওয়া হারাম,
নুপুরের রিনিঝিনি শব্দ পুরুষের মনে ফিতনার উদ্রেগ ঘটাতে পারে,
নারীর জন্য যেহেতু শব্দ তোলে এমন কিছু পরিধান করার বৈধতা টুকুও নেই,
#আল্লাহ ইরশাদ করেন,
‘তোমরা গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করবে,মূর্খতা যুগের অনুরূপ নিজেদেরকে প্রদর্শন করবেনা।’
(সূরা আহযাবঃ ৩৩)
.
যদিও জাহিলী যুগের নারীরা অধুনা বিশ্বের নারীদের মত বাহু, কাঁধ, বক্ষ, পিঠ, উরু উন্মুক্ত করে চলত না,
তারা কেবল চেহারা খোলা রাখত, বড়জোর চুল বের করে চলত, তদুপরি অজ্ঞতার যুগের অধিকাংশ নারীই চেহারা পর্দাবৃত রাখত,
সেকালের কাব্য সাহিত্য থেকে এমনটিই জানা যায়!
এরপরও আল্লাহ ইরশাদ করেন ‘অজ্ঞতা যুগের অনুরূপ নিজেদের প্রদর্শন করবে না।’

#পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে,
‘তোমরা তার (নবী) পত্নীগণের কাছে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে,এটা তোমাদের অন্তরের জন্য এবং তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারন!
(সূরা আহযাবঃ ৫৩)
আয়াতটি চেহারার পর্দার আবশ্যিকতার ব্যাপারে সুস্পষ্ট দলিল,
এখানে নবী পত্নীদের সম্মোধন করা হলেও তা উম্মতের জন্য ব্যাপকভাবে প্রযোজ্য..
.
……..কেননা…..
আমরা সকলেই জানি নবী পত্নীগণ ছিলেন সকল উম্মতের মা,
এমনকি তাঁদের বিবাহ করা হারাম ছিল..
উম্মতের মা হওয়া সত্ত্বেও তাদের জন্যও পর্দার হুকুম কঠোর ছিল,
সাহাবায়ে কেরামগণ (রা) দের সামনে আসাও নিষেধ ছিল!
সাহাবায়ে কেরামগণ (রা) উম্মুল মুমিনীনের (রা) এর সাথে কথা বলার প্রয়োজন হলেও যেন পর্দার আড়াল থেকে কথা বলে এজন্যই উক্ত আয়াত নাযিল হয়েছে!
অথচ ঈমান আখলাকের দিক থেকে সাহাবা (রা) গণ কত উচ্চ পর্যায়ের ছিলেন!
তাদের জন্যও যদি পর্দার হুকুম এত স্ট্রং হয়,
তবে এযুগে যেখানে আপন পিতার দ্বারা কন্যা ধর্ষিত হয়!
আপন ভাইয়ের দ্বারা বোন ধর্ষিত হয়!
আপন মামা দ্বারা ভাগ্নী ধর্ষিত হয়!
সেখানে পর্দার হুকুম আরও কত স্ট্রং তা তো বোন আশা করি বুঝতে পারছেন।?
আর তাছাড়া মুখ থেকেই তো পাপের সূচনা।যে নারী বোরখা পড়ে মুখ খোলা রাখল, সে যেনো জানালা বন্ধ করে দরজা খোলা রাখল।
রাইসাঃ
আচ্ছা এ ব্যাপারে পরে আলোচনা করব।বাড়িতে চলো।
নাজিফা:হুম
রাইসা আর নাজিফা বাড়ির পথে পা বাড়ালো ঠিক তখনি…
চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here