আলেমের বউ পর্ব ১৩+১৪

0
437

#আলেমের_বউ (পর্ব-১৩+১৪)

আজ পয়েলা জুলাই!
নাজিফার কলেজের প্রথম দিন।


কলেজ ড্রেস পড়ে নিয়ে তার উপর কালো হিজাব আর নিকাব লাগিয়ে হাত মোজা আর পা মোজা লাগিয়ে যায়।


সব মুখ গুলো অপরিচিত!আনমনা হয়ে নাজিফা প্রথম বেঞ্চে বসে!যারা আছে বেঞ্চে তারা সবাই বাহিরে ছিলো
ঘণ্টা পড়ার সাথে সাথে সব গুলো মেয়ে ছেলে ক্লাসে ঢুকা শুরু করলো।উক্ত বেঞ্চের মেয়ে গুলো ও চলে আসে।
ভূত বলে একটা মেয়ে নাজিফার সামনে চিৎকার করে উঠে!
নাজিফা চোখ তুলে তাকায় মেয়েটার দিকে!ফর্সা মুখ,
চুল গুলো রং করা,ফ্যানের বাতাসে মুখের উপর পড়ছে!চুলগুলো বুকের ডানপাশে কিছুটা এনে,বাকীটা পিছনে দিয়ে সুন্দর করে সাজলো মেয়েটা,মায়াবী চোখ,আরো সুন্দর দেখানোর জন্যে পছন্দের নীল শেড আর আইলেনার পেন্সিল দিয়ে টানাটানা করে চোখ সাজালো মেয়েটা!
অন্য একটা মেয়ে বলে উঠে কই ভুত নীলিমা?
নাজিফা বুঝতে পারলো মেয়েটার নাম নীলিমা!


মেয়েটা হাত তুলে নাজিফাকে দেখিয়ে দিলো!সবাই অট্টহাসি দিয়ে ক্লাস কাঁপিয়ে তুলল!
সাথে কিছু ছেলেরা জোড় হলো!


-এই ক্ষেত মেয়েটার সাথে আমি নীলিমা চৌধুরী বসবো নাকি?এই উঠ!
-নাজিফা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো নীলিমার দিকে!কী সুন্দরী মেয়ে আর তার আচরণ কেমন!


নীলিমা আবার ও চিৎকার দিয়ে বলল,”এই মেয়ে কথা কানে যায় না তোর?
ক্লাসের সবাই হা করে তাকিয়ে রইলো!


নাজিফার মনে পড়ে গেলো
সেই ক্লাস ওয়ানের কথা!একটা ফুটফুটে মেয়ে হাতে ধরে টেনে নিয়ে পিছনের বেঞ্চে বসিয়ে দেয়!


আজ নাজিফার সাথে তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না!নীলিমা নাজিফার হাতে ধরে টেনে তুলে!নাজিফা ও নীলিমার সামনে উঠে দাঁড়ায়!দুইজন মুখো-মুখী

নাজিফা বলল,”
আমি এই বেঞ্চেই বসবো!বলে নীলিমার হাতের থেকে নাজিফা নিজের হাত সরিয়ে নেয়!


তোর সাহস তো কম নয়!উঠ বলছি!
-বললাম না আমি এই বেঞ্চেই বসবো!ভাল না লাগলে আপনি উঠে যেতে পারেন!


স্যার চলে আসে ক্লাসে!যে যার মত বসে যায়!নীলিমার ব্যাগ নাজিফার পাশে ছিলো অন্য একটা মেয়েকে ঐ পাশে দিয়ে সবাই বসে যায়!



ক্লাস শেষ হলে স্যার চলে যায়!নীলিমা এসে নাজিফার সামনে দাঁড়ায়!তখন আবার নতুন আরেক স্যার চলে আসে!মনে হয় নীলিমার পরিচিত স্যার!নীলিমার সাথে মজা করছে!নাজিফা বুঝে যায় এই স্যারকে বলিয়ে হয় তো কিছু করবে!
যা ভেবেছে নাজিফা তার হয়তো সূচনা শুরু!
-স্যার আমাদের পাশের মেয়েটাকে অন্য বেঞ্চে বসতে বলুন না!আমার ফ্রেন্ড তানিয়া বসতে পারছে না!(নীলিমা)
-কেন বসতে পারে না?কে আগে এসেছে?
-নাজিফা দাঁড়িয়ে বলল,”আমি এসে বেঞ্চে তিনটা ব্যাগ দেখেছি!তখন আমি এই বেঞ্চে বসি!
-নীলিমা তাহলে তানিয়া অন্য বেঞ্চে বসবে যেহেতু এই মেয়েটা আগে এসেছে!
-স্যার আপনি মেয়েটাকে ভালো করে দেখেন ক্যামন জানি ক্ষেত ক্ষেত লাগছে!আমাদের
সাথে ও কেমন করে বসবে?
-শুনো নীলিমা আমি তোমাদের English teacher”
তোমাদের ইংরেজি মেইন যে বুকটা আছে lesson 1 কী সম্পর্কে জানো?
-না,স্যার!
-আমি আজ প্রথম দিন ভাবছি ক্লাস নিবো না বাট এখন মনে হচ্ছে ঐ lesson সম্পর্কে আজই বলতে হবে!

স্যার তার লেকচার শুরু করলেন!
Nelson Mandela,from Apartheid Fighter to President!
নাম শুনেছো?
-জ্বী স্যার উচ্চ সুরে ক্লাসের সব স্টুডেন্ট!

স্যার আবাও বললতে শুরু করেন,

নেলসন ম্যান্ডেলা দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে একটি বহুজাতিক গণতন্ত্রের থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা পরিচালিত করেছে এবং সমঝোতা আইকন হিসেবে, যারা সারা বিশ্বের বিচারের জন্য সংগ্রাম করতে এসেছে।
সাদা সংখ্যালঘু শাসনের বিরুদ্ধে তার লড়াইয়ের জন্য প্রায় তিন দশক ধরে বন্দী, ম্যান্ডেলা কখনো তার মানুষ মুক্তি জন্য লড়াই করতে পারেনি।গৃহযুদ্ধ এড়িয়ে যাওয়ার সময় তাকে বর্ণবাদী নিয়ে যেতে হয়।তার ইজ্জত এবং ক্যারিশমা তাকে বিশ্বের সমর্থন জয় করতে সাহায্য করেছে।
ম্যান্ডেলা ১৯৯৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম কালো রাষ্ট্রপতি হওয়ার বিষয়ে তার মাওলার ভাষণে বলেছেন,”

আমি রেস বৈষম্য ঘৃণা করি আর সব ক্ষুধা।আমি আমার জীবনের সব সময় লড়াই করেছি;আমি এখন যুদ্ধ করব, এবং আমার ১০ দিনের শেষ পর্যন্ত তাই করবো!
তিনি কিন্তু সফল হয়েছেন!


আশা করি সবাই বুঝেছো!
ক্লাস শেষ হলে স্যার চলে যায়!নতুন স্যার আসে,স্যার তার পরিচয় দেয়!এমন করে প্রথম দিন শেষ হলো!

নাজিফা পরের দিন ও সঠিক সময় ক্লাসে এসে প্রথম বেঞ্চে বসে!নতুন একটি মুখ,”আমি রাইসা!
-আমি নাজিফা!
-একটা কথা বলি?
-হ্যাঁ,অবশ্যই!
-ক্লাসে তো আমরা সবাই ভাই বোনের মত এত পর্দার কী প্রয়োজন?
-তারা ভাইয়ের মত হলে ও কিন্তু আমাদের জন্য মাহরাম নয়!তুমি জানো ইসলামে কাদের সাথে দেখা দেওয়া যায় আর কাদের দেওয়া যায় না?

-না তো #মাহরাম_কী?

-#মাহরাম_হলো যে সকল পুরুষের সামনে নারীর দেখা দেওয়া,কথা বলা জায়েজ এবং যাদের সাথে বিবাহ বন্ধন সম্পূর্ণ হারাম তাদের কে শরীয়তের পরিভাষায় মাহরাম বলে|

-তাহলে #মাহরাম_কারা নাজিফা?

-#মাহরাম_হলো_তারা
-সূরা আন নূরের ৩১ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা নারীর মাহরাম নির্ধারিত করে দিয়েছেন|
#এক_নজরে_মাহরাম_পুরুষ –
১. স্বামী
(দেখা দেওয়া,সৌন্দর্য প্রদর্শনের প্রেক্ষিতে মাহরাম)
২. পিতা, দাদা, নানা ও তাদের উর্ধ্বতন পুরুষগণ।
৩. শ্বশুর, আপন দাদা ও নানা শ্বশুর এবং তাদের উর্ধ্বতন পুরুষগণ।
৪. আপন ছেলে, ছেলের ছেলে, মেয়ের ছেলে ও তাদের ঔরসজাত পুত্র সন্তান এবং আপন মেয়ের স্বামী।
৫. স্বামীর অন্য স্ত্রীর গর্ভজাত পুত্র।
৬. আপন ভাই,সৎ ভাই
৭. ভাতিজা অর্থাৎ, আপন ভাইয়ের ছেলে এবং সৎ ভাইয়ের ছেলে।
৮. ভাগ্নে অর্থাৎ, আপন বোনের ছেলে এবং সৎ বোনের ছেলে।
৯. এমন বালক যার মাঝে মহিলাদের প্রতি কোন আকর্ষণ নেই। (সূরা নূর-৩১)
১০. দুধ সম্পর্কীয় পিতা, দাদা, নানা, চাচা, মামা এবং তাদের উর্ধ্বতন পুরুষগণ।
১১. দুধ ভাই, দুধ ভাইয়ের ছেলে, দুধ বোনের ছেলে এবং তাদের ঔরসজাত যে কোন পুত্র সন্তান।
১২. দুধ সম্পর্কীয় ছেলে, তার ছেলে, দুধ সম্পর্কীয় মেয়ের ছেলে এবং তাদের ঔরসজাত যে কোন পুত্র সন্তান। এবং দুধ সম্পর্কীয় মেয়ের স্বামী। (বুখারী শরীফ হাদীস নং ৫০৯৯, মুসলিম শরীফ হাদীস নং ১১৪৪)
১৩. আপন চাচা, সৎ চাচা।
১৪. আপন মামা,সৎ মামা। (সূরা নিসা-২৩)

#উপরোক্ত পুরুষ যাদের সাথে দেখা করতে বা দেখা দিতে পারবে তারা ছাড়া অন্য সমস্ত পুরুষকে দেখা দেওয়া সম্পূর্ণ নাজায়েয এবং হারাম।

-না জেনে এত দিন কত গুনাহ করলাম!আর যাদের সাথে দেখা দেওয়া যাবেনা তাদের কী বলে?
-তাদের গায়রে মাহরাম বলে।
-#গায়রে_মাহরাম_কী বোন?

-#গায়রে_মাহরাম_হলো
– যে সকল পুরুষের সামনে যাওয়া নারীর জন্য শরীয়তে জায়েজ নয় এবং যাদের সাথে বিবাহ বন্ধন বৈধ তাদের কে গায়রে মাহরাম বলে|
বস্তুতঃ গায়রে মাহরামের সামনে একান্ত অপারগ হয়ে যদি যাওয়াই লাগে তবে নারী পূর্ণ পর্দা করে সামনে যাবে|
-তাহলে #গায়রে_মাহরাম_কারা?

-#গায়রে_মাহরাম_হলো_তারা
-মাহরাম বাদে সমস্ত বিশ্বে-মহাবিশ্বে যত পুরুষ আছে সব গায়রে মাহরাম!
নিজ পরিবারে
চাচাত/খালাত/মামাত/ফুপাত সব ভাই,
নিজ দুলাভাই,
দেবর,
ভাসুর,
(আপন,দাদা ও নানা শ্বশুর বাদে) সমস্ত চাচা-মামা-খালু-ফুপা শ্বশুর…
নিজ খালু/ফুপা এরা সবাই গায়রে মাহরাম!
তাদের সামনে নিজেকে প্রদর্শন করা আল্লাহর হুকুমের অবাধ্যতা করা!
মাহরাম ছাড়া সকল পুরুষের সামনে পর্দা করতে হবে এবং হবেই..

-মাশাআল্লাহ্! আল্লাহ্ তোমার জ্ঞান আরো বাড়িয়ে দিক!আমি ও পর্দা করবো এখন থেকে!
-আলহামদুলিল্লাহ, শুকরিয়া বোন!


একটু পরেই নীলিমার আগমন,

নীলিমা এসে প্রথমেই নাজিফার ব্যাগ ফেলে দেয়!
অন্য মেয়ে গুলো হাসিটে ক্লাস কাঁপিয়ে তুলছে!নাজিফার নিকাব ভিজে যায় চোখের পানিতে!উঠে গিয়ে ব্যাগ নিয়ে পরের বেঞ্চে বসে!নীলিমা চোখ রাঙ্গিয়ে আবার ও বলল,”তুই আমার আশে-পাশে বসতে পারবিনা!পিছনে যা!
-নাজিফা চুপ করে বসে রইলো!
-এই মেয়ে উঠ!তুই জানিস আমি কে?
-নাজিফা নিজের থেকে উঠে নীলিমার দিকে জুকে বলল,আপনি যে কেউ হোন না কেন?এটা ক্লাস!সবাই স্টুডেন্ট!মাইন্ড ইট!
বলেই নাজিফা বসে যায়!


নীলিমার পাশের ছেলে মেয়ে গুলো নীলিমাকে ক্ষেপাচ্ছে!
দেখ নীলিমা মেয়েটার সাহস দেখ!তুই ও দেখিয়ে দেয়
তোর সাহস কতটা!
নীলিমার চোখ লাল হয়ে উঠে!ড্রেসের হাতা ডান হাত দিয়ে বাম হাতেরটা তুলছে!নীলিা আস্তে করে জুকে তাদের দিকে বললো!আমি মেয়েটার নিকাব খুলবো তার পর তাপ্পর দেবো!ভিডিও অন কর!



নাজিফার সামনে এসে বেঞ্চের মাঝে দুই হাত রেখে নাজিফার চোখে চোখ রেখে নীলিমা বলল,দেখা যাক কার সাহস বেশি!


চলবে,

#আলেমের_বউ (পর্ব-১৪)


নীলিমা আস্তে করে জুকে তাদের দিকে বললো!আমি মেয়েটার নিকাব খুলবো তার পর তাপ্পর দেবো!ভিডিও অন কর!নাজিফা ও মনে মনে বলতে লাগলো আমার নিকাব খোলা এত সস্তা নয়!



নাজিফার সামনে এসে বেঞ্চের মাঝে দুই হাত রেখে নাজিফার চোখে চোখ রেখে নীলিমা বলল,দেখা যাক কার সাহস বেশি!বললেই নাজিফার নিকাব খুলে ফেলবার জন্য হাত বাড়ায়!নাজিফা দাঁড়াতে দাঁড়াতে নীলিমার হাতে ধরে নেয়!নীলিমা হাত সরিয়ে নাজিফার নিকাবের উপরেই গালে তাপ্পর দেওয়ার জন্য হাত উঠায়!


নাজিফা নীলিমার এবার ও হাতটা ধরে ফেলে!শক্ত করে চেপে ধরে বলল,চেয়েছিলাম কিছু করবো না!বাট করতে বাধ্য করলেন বলে নাজিফা নিজেই তার হাত দিয়ে নীলিমার গালে তাপ্পর তোলে!
সবাই অবাক চোখে দেখছে!
নাজিফা তাপ্পর দেয়নি!হাত সরিয়ে নেয়!কাউকে তাপ্পর মারা মানে এই নয় যে গালে লাগছে!তুলেছে সেটাই অনেক!

নাজিফা বলতে বলতে শুরু করে নাজিফার হাত দেখিয়ে এটা সেই হাত!
যে হাত দিয়ে সকালে ঠান্ডা পানিতে তালা-বাসন,গ্লাস, পাতিলা ধুই!এটা সেই হাত যে হাত যে হাত দিয়ে আলু,পটল,বেগুন,পেয়াজ,মরিচ ইত্যাদি ইত্যাদি কেটে কখন হাত কেটে ফেলা হাত!
নীলিমার হাতটা উপর করে তুলে আবার ও বলল,আর এটা সেই হাত!যে হাত সকালে এক কাপ চা/কপির কাপ ছুঁয়ে দিন শুরু করে!এটা সেই হাত একটা বিন্দু কণা লাগলেই রক্ত বের না হতেই ডাক্তার ডাক্তার বলে সব শেষ করে!

সবাই হা করে তাকিয়ে আছে!নাজিফা নীলিমার হাত ছেড়ে দেয় আবার ও বলতে শুরু করে আপনি সেই মেয়ে যে প্রাইভেটকার নিয়ে কলেজে এসেছেন!আর আমি সেই মেয়ে যে কি না অর্ধেক হেটে আর অর্ধেক রিকশায় করে কলেজে এসেছি!নাজিফা ঢোক গিলে আবার ও বলা শুরু করে!

-আপনি সেই মেয়ে যে একটু আনন্দ করে বৃষ্টিতে ভিজলে ঐ রাতেই কাঁপুনি দিয়ে জ্বর চলে আসবে আর বড় বড় মেডিকেল নিয়ে কেবিন ভাড়া করে, সু-চিকিৎসা দেবে!
আর আমি সেই ক্ষেত মেয়ে যে না চাইলে ও বৃষ্টিতে ভিজে উঠানের ধান ঘরে নিতে হয়েছে!জ্বর আসলে জল পট্টি দিয়েছে নয় তো নাপা খাইয়ে,,,এইটুকুই!


ক্ষেত মেয়ে গ্রাম থেকে এসেছি তাই না?মানুষ মনে হয় না?আমার এই হাতের একটা তাপ্পর খেলে এমনিতে জ্ঞান হারাতেন!আচ্ছা ক্ষেত মেয়েটার গালে তাপ্পর দিতেন আপনার হাতে কি নোংরা লাগতো না?ক্যামন করে এই হাতে খাবার খেতেন?


নাজিফা হালকা হাসির রেস টানে আর বলে জানি এগুলোর উওর আপনার থেকে নেই!


নীলিমা আর তার দল কেউ ঐ দিনের পর নাজিফার সাথে খারাপ আচরণ করেনি!

নাজিফার ইন্টার প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষার ফরম পূরন করার জন্য আট হাজার টাকা লাগে!নাজিফা একটা রিকশায় না গিয়ে মাঝে মাঝে হেটে গিয়ে কলেজে ক্লাস করতো ঐ ভাবে এক বছরে পাঁচ হাজার টাকা জমিয়েছে!আরো তিন হাজার টাকা বাকি!বাবাকে টাকার কথা বলার সাহস পায় না!নাজিফা জানে বাবার কাছে এত টাকা নেই!রাতে তবুও চলচল চোখে বাবাকে বলে তিন হাজার টাকা লাগবে!
-বাবা চোখের পানি টলমল করছে!হেসে বলে,”চিন্তা করিস না মা!সকালে পাবি!
-আচ্ছা!


বেলকুনিতে ফোনে বাবা কার সাথে কথা বলছে নাজিফা কাছে যায়!
-হ্যালো!
-আসসালামু আলাইকুম!
-ওয়ালাইকুমুস সালাম!
-আমি আরিফুর রহমান বলছি!
-জ্বী,বলুন!
-একটা সিরিয়াল দিয়েছিলাম ডাক্তার তানিম চৌধুরীর কাছে!
-জ্বী!
-ওটা কেটে দেন!
-আচ্ছা!
.

নাজিফা না চাইতেই চোখের পানি চলে আসে!বাবা সকালে যে টাকা গুলো দেবে সেই টাকা গুলো ডাক্তার দেখাবার জন্য বাবা রেখেছেন!আর আমাকে দিবেন বলে নিজে আর ডাক্তার দেখাবে না বলে সিরিয়াল কেটে দিতে বলল ফোনে!



এপাশ ওপাশ করে নাজিফার রাত বিচানায় শুয়ে।চোখে ঘুম নেই!পাশের রুম থেকে বাবার কাশের শব্দ বেসে আসছে!বাবার খুব কষ্ট হচ্ছে!একটানা কাশ দিয়ে যাচ্ছে!আদা দিয়ে ভাল করে গরম পানি এনে দেয় নাজিফা।এমন ভাবে কেটে যায় রাত!


-নাজিফা মামুনি এই নেয় তিন হাজার টাকা!
নাজিফা বাবার দু”চোখের দিকে তাকাতে পারছেনা!নিজেকে অপরাধি মনে হচ্ছে!টাকা গুলো নিয়ে কলেজে চলে আসে!


নাজিফা না?(মোস্তফা কামাল স্যার)
-আসসালামু আলাইকুম।
-ওয়ালাইকুমুস সালাম!
-জ্বী আমি নাজিফা।
-টাকা জমা দিয়েছো?
-না স্যার,আজ দেবো!
-সব দিতে পারবে?
-পারবো কিন্তু,
-কিন্তু কী?
-না মানে!
-বলো!
-একজন অসুস্থ বাবার চিকিৎসার টাকা দিয়ে সবটা দিতে পারবো!
-মানে কী?তোমার বাবা অসুস্থ?
-শুধু অসুস্থ নয়,আজ ডাক্তার দেখার কথা ছিলো সিরিয়াল কেটে দিয়েছে আর আমাকে টাকা গুলো দিয়ে দিয়েছে!
-কী বলছো তুমি?
-হ্যাঁ স্যার!
-তুমি একটা আবেদন পত্র লিখ!আমাকে দিও!তাড়াতাড়ি করো!
-আচ্ছা স্যার!


অবশেষে চার হাজার টাকা দিয়ে ফরম পূরনের কাজ শেষ করে নাজিফা!


বাসায় না গিয়ে দোকান থেকে বাবাকে নিয়ে সোজা মেডিকাল!


ডাক্তার তানিন চৌধুরী নাক,কান ও গলার ডাক্তার।
তিনটা রক্ত পরীক্ষা করতে দেন ডাক্তার!
রিপোর্ট এর জন্য অনেকটা সময় ধরে অপেক্ষা বাবা আর মেয়ে!


রিপোর্ট হাতে নিয়ে তাড়াতাড়ি দেখে নিলাম।মনে হচ্ছে দুইটা নরমাল একটায় সমস্যা!তাড়াতাড়ি ডাক্তার এর রুমে এলাম!
-ভয়ের কারণ নেই,নিয়মিত ঔষধ খেলে ভাল হয়ে যাবে।ইনশাআল্লাহ।(ডাক্তার)
-আচ্ছা (নাজিফা)


বাবার চোখে পানি।না এটা কষ্টের নয়,আনন্দের হাসি”ঔষধ নিয়ে বাসায় এসে নাজিফা দেখে,”
অনেক মহিলা রুমে!
পরে জানতে পারে ছেলে পক্ষ এসেছে রাবেয়া আপুকে দেখতে!দেখা শেষ পছন্দ হয়েছে!
তারিখ দেবে বিয়ের!
মাহমুদ মামা তাদের বলে দেয়!তার বড় ছেলে আসলেই তারিখ দেবেন!
চলে আসে বড় ছেলে
শাহপরান হাসান
বাংলাদেশে!বাসায় সম্পূর্ণ পর্দা মেনে চলে প্রতিটা মেম্বার্স! তাই কখন নাজিফা শাহপরান ভাইকে দেখেন না!

নাজিফার ইন্টার ফাইলা পরীক্ষা ও শেষ আজ!ব্যবহারিক পরীক্ষা দিয়ে শু-প্রভাত বাসে উঠে!পাশে বসে সুন্দরী এক আপু!
বাট মেয়েটা কাঁন্না করছে বুঝা যায়।বার বার ফোনটা বের করে কাউকে ফোন করে,হতাশ হয়ে ফোন রেখে দেয়!আমার কৌতহল বেড়ে য়ায।
-আসসালামু আলাইকুম
-ওয়ালাইকুমুস সালাম(অপরিচিত মেয়ে)
-আপু বলতে পারি!
-হ্যাঁ বলেন!
-আমি আপনার ছোট হবো,তুমি বলিলি?
-শিউর!
তুমি কাঁন্না কেন করছো?
-কই না তো!
-লুকাবে না!আমি দেখেছি আর বুঝেছি!সো বলেলে দাও না ছোট বোন মনে করে।
-আচ্ছা, শুনো তাহলে,,,,,

-শুনো তাহলে,
-হ্যাঁ বলো?
-আমার শরীরটা ভাল নেই বোন!রক্ত পরীক্ষা করিয়েছি।
-রিপোর্ট কী আসলো?
– ক্যান্সার!
-ডাক্তার কী বলে?
-কি আর বলবে বাহিরের দেশে গেলে হয় তো ভালো হবে নয় তো মরণ!
-এমন কথা বলো না,তুমি সুস্থ হবে ইনশাআল্লাহ।
-আমি আমার কথা ভাবছিনা!আমার একটা ছেলে আছে তার কী হবে?
-কতটুকু সে??
-চার বছর!
-ছোট অনেক!বাবা ও নেই তার?
-না,তার জন্মের এক বছর পরেই বিদেশে মারা যায়!
-ওহ আচ্ছা!আমি তোমাকে কিছু পয়েন্ট বলি!শুনো!
-বলো”
-হ্যাঁ,

ক্যান্সার উধাও!
ওশ স্টেট মেডিকেল ইউনিভার্সিটি, মস্কো, রাশিয়ার ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডা. গুপ্তপ্রসাদ রেড্ডি (বি ভি) বলেছেন, ক্যান্সার কোনো মরণব্যাধি নয়, কিন্তু মানুষ এই রোগে মারা যায় শুধুমাত্র উদাসীনতার কারণে। তার মতে, মাত্র দুটি উপায় অনুসরণ করলেই উধাও হবে ক্যান্সার। উপায়গুলো হচ্ছে:-
১. প্রথমেই সব ধরনের সুগার বা চিনি খাওয়া ছেড়ে দিন। কেননা, শরীরে চিনি না পেলে ক্যান্সার সেলগুলো এমনিতেই বা প্রাকৃতিকভাবেই বিনাশ হয়ে যাবে।
২. এরপর এক গ্লাস গরম পানিতে একটি লেবু চিপে মিশিয়ে নিন। টানা তিন মাস সকালে খাবারের আগে খালি পেটে এই লেবু মিশ্রিত গরম পানি পান করুন। উধাও হয়ে যাবে ক্যান্সার। মেরিল্যান্ড কলেজ অব মেডিসিন- এর একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, কেমোথেরাপির চেয়ে এটি হাজার গুণ ভাল।
৩. প্রতিদিন সকালে ও রাতে তিন চা চামচ অর্গানিক নারিকেল তেল খান, ক্যান্সার সেরে যাবে।
চিনি পরিহারের পর নিচের দুটি থেরাপির যেকোনো একটি গ্রহণ গ্রহণ করুন। ক্যান্সার আপনাকে ঘায়েল করতে পারবে না।
তবে অবহেলা বা উদাসীনতার কোনো অজুহাত নেই।
উল্লেখ্য, ক্যান্সার সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে ডা. গুপ্তপ্রসাদ গত পাঁচ বছর ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে এই তথ্যটি প্রচার করছেন।
সেই সঙ্গে তিনি সবাইকে অনুরোধ করেছেন এই তথ্যটি শেয়ার করে সবাইকে জানার সুযোগ করে দেয়ার জন্য।
তিনি বলেছেন, “আমি আমার কাজটি করেছি। এখন আপনি শেয়ার করে আপনার কাজটি করুন এবং আশেপাশের মানুষকে ক্যান্সার থেকে রক্ষা করুন। তথ্যসূত্রঃ অনলাইন….



-ধন্যবাদ তোমাকে বোন!অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বলে দিলে।
-আলহামদুলিল্লাহ,শুকরিয়া তোমাকে জানাতে পেরে!

বাস টঙ্গি সরকারি কলেজের সামনে আসলে নাজিফা নেমে পড়ে।

নাজিফার পরীক্ষা ও শেষ!বিয়ের তারিখ ও দিয়ে দেওয়া হয় রাবেয়া আপুর!বিয়ে গ্রামে হবে!ছেলে হাফেজ! মসজিদের ইমাম!
নাজিফার বাবা বিয়ের দিন যাবেন!আগেই চলে আসলো বাকিরা গ্রামে!নাজিফার ইচ্ছা করছিলো না বাবাকে রেখে আসতে!
বাবা বলল,”দেখ মা আমরা তাদের এখানে থাকি এবং খাচ্ছি!তাদের দোকানে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছি!তাদের কথা তো শুনতেই হবে!বাবার কথা মেনে নিয়ে নাজিফা গ্রামে আসে রাবেয়া আপুর বিয়েতে!


দোতলা একলা একটা নতুন বাড়ি!মেহমানে গিজগিজ করছে বাড়িটা!পর্দা ও করা যাচ্ছে না!যে কেউ যখন খুশি রুমে চলে আসছে!এগুলো নাজিফার একদম ভালো লাগছেনা!
জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছে নাজিফা!পিছনের থেকে পুরুষের কণ্ঠ সুর!
-আপনি নাজিফা তাই?
-ঘাড় ফিরিয়ে নাজিফা উওর দিলো,”হ্যাঁ!
-আমি শাহপরান হাসান!
-ওহ আচ্ছা!
-এখানে একা কেন দাঁড়িয়ে আছেন?আর হ্যাঁ আপনি আমার ছোট হবেন তুমি করে বলি!
-আচ্ছা!
-আসলে আমি তোমাকে বাসায় কয়েকবার দেখেছি লুকিয়ে!কিন্তু কখন সামনাসামনি কথা বলার সুযোগ হয়নি!


নাজিফা অবাক হয়ে যায় কী বলে এই আলেম সাহেব!বরাবর নাজিফা হুজুর পছন্দ করেনা নুসাইরের সাথের ঘটনা গুলো মনে পড়ে!তার মাঝে এ কোথায় থেকে এসে কী বলছে এগুলো!
-এই যে ম্যাম!
শাহপরান এর ডাকে নাজিফার ঘোর কাটে!
-জ্বী ভাইয়া বলুন!
-আরে আমি তোমার আপন ভাইয়া না!আমাকে একদম ভাইয়া বলবে না!

নাজিফা নতুন রহস্যের গন্ধ পাচ্ছে!তাই মামি ডাকছে বলে কেটে পড়ে সেখান থেকে!

চলবে,
লিখা:শাঁরঁমিঁনঁ সুঁলঁতাঁনাঁ সাঁলঁমাঁ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here