অবন্তর আসক্তি পর্ব ১৮

0
405

#অবন্তর_আসক্তি
#পর্ব_১৮
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা
________
লাইফে এত প্যাড়া নেইনি যা আজ নিতে হচ্ছে আমার টিমেই পরেছে যত গাধার দল। এক একটা শুধু খেতে আর গিলতেই জানে। একটাও কোনো কাজের নয় সবগুলো এজ একটা অকর্মার ঠেকি।
সেই সকাল থেকে একা একাই সব করে যাচ্ছি। ওদের হেল্প চেয়ে কিছু করতে বললে, ওরা আরও আমার কাজ বাড়িয়ে দিচ্ছে প্রচন্ড রকমের মেজাজ খারাপ হচ্ছে এমন ভাবে চললে তো আর অডিটোরিয়াম সাজানোই হবে না। কলেজে সকলের সামনে অপদস্ত অপমানিত হতে হবে। আদ্রিক পাঁচ মিনিটের মতো ছিল। তারপর তার কোনো এক ইমপোর্টেন্ট কল আসে। আর সে বের হয়ে চলে যায়। আমার বন্ধু বান্ধবীদের মুখের দিকে তাকালে আমার এখন কান্না পাচ্ছে। ইচ্ছে করছে এখানে বসেই ব্যা ব্যা করে কান্না করি। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমি এখন আর ছোটোটি নই বড় হয়ে গেছি। ব্যা ব্যা করে কান্না আমাকে সোভা পায় না। কিন্তু আমার যে কান্না পাচ্ছে। খুব কান্না পাচ্ছে, কলেজের স্যাররা আমাকে বিশ্বাস করে একটা দায়িত্ব দিয়েছে আর আমি তা পালন করতে পারছি না। মাথা দুই হাঁটুর মাঝখানে রেখে বসে আছি। চোখের পানি আটকে রাখার জন্য দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরে আছি। ফুসফুস করে নিশ্বাস নিচ্ছিলাম তখন কানের কাছে কারো ফিসফিস আওয়াজ শুনলাম সে বলল,’ আমি থাকতে চিন্তা কিসের তোর? ‘

চেনা কন্ঠস্বর শুনে ঝটপট মাথা তুলে আমার ডান পাশে তাকালাম। তাকে এখানে দেখবো আমি ভাবিইনি। এক হাঁটু ফ্লোরে গেঁড়ে বসে আছে আমার দিকে চমৎকার হাসি দিয়ে আবারও বলল,’ আমরা এতগুলো ভাইবোন থাকতে তোর মান সম্মান নষ্ট হতে দেউ কি করে বল। এখন চোখের পানি মোছ। চোখের জলের অনেক মূল্য ছোট মোটো বিষয়ে কান্না একদমই করবি না। উল্টো মাথা ঠান্ডা রেখে ভাববি কি ভাবে পরিস্থিতি সামাল দিবি। ‘

কথাগুলো বলতে বলতে আমার গালে ল্যাপ্টে যাওয়া অশ্রুকণা গুলো সে নিজে হাতে মুছে দিলো। তার দিক থেকে চোখ সরিয়ে সামনে তাকাতে দেখলাম। অভ্র ভাইয়া সকলকে নিয়ে চলে আসছে। তিন্নি আপু, তনিমা তাপ্পি, মুন্নী আপু, বৃষ্টি, রিমা কাব্য ও নাঈম৷ পুতুল আপু আসেনি তার ছোট ছেলের জন্য হয়তো আসতে পারেনি। আর বাকি ভাইবোন গুলো ও হয়তো কোনো কারণ বসত আসতে পারেনি। তবুও যতগুলো এসেছে সকলে মিলে সাহায্য করলে আজকেই পুরো অডিটোরিয়াম সাজানো হয়ে যাবে। আজ শুধু বেলুন দিয়ে সাজানো হবে গতকাল সকালে সিকিউরিটি আঙ্কেলরা ফুল লাগিয়ে দিবে। আজ ফুল লাগালে তা আর কাল পর্যন্ত স্বচ্ছ থাকবে না।

অভ্র ভাইয়া আমাকে অনেক টা সাহায্য করছে তার কাজের ফাঁকে ফাঁকে আমাদের কাজ প্রায় শেষের দিকে এমন সময় আদ্রিক আসল। এসে আমাদের কাজ বিকেলের আগেই শেষ হয়েগেছে দেখে অবাক হলো। আদ্রিক এগিয়ে আসতে আসতে বলল,’ বাহহ ভালো তো সাজিয়েছো। ‘

আমরা সকলে মৃদু হেসে তাকে থ্যাংকস জানালাম। আদ্রিক সকলের সাথে পরিচয় হতে লাগল। একমাত্র অভ্র ভাইয়া তাকে দেখেই আমাদের পাশ থেকে সাইডে চলে গেলো। কারণটা আমরাও বুঝিনি হয়তো সে পরিচিত হতে ইন্টারেস্ট নয়। যাকগে তাতে আমার কি? কোই কিছু না তো আমার। আমরা সকলে একসাথে বাকি কাজগুলো করতে করতে গল্প জুড়ে দেই। হাসি ঠাট্টা তো চলছে। দূর থেকে একজন তা দেখছে।

সন্ধ্যা ছয়টার দিক দিয়ে আমাদের সকলের কাজ পুরো শেষ হয়। আমি অনেক আনন্দিত ইচ্ছে করছে খুশিতে এখন নাচতে। তখন ভেবেছিলাম পারবো না কিন্তু এখন সম্পূর্ণ অডিটোরিয়াম দেখে খুশিতে মাতোয়ারা হয়ে যাচ্ছি। আমাকে আর আদ্রিক কে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অভ্র ভাইয়া কর্কশকন্ঠে বলল, ‘ আমাদের এখন বাড়ি ফিরতে হবে চলো সবাই আমি গাড়ি নিয়েই এসেছি। ‘

চলে যাওয়ার আগে আদ্রিকের কাছ থেকে বিদায় নেই। আদ্রিক পিছু ডাকল,’ বর্ষা দাঁড়াও। ‘

আমি দাঁড়িয়ে পরলাম ঘাড় ও শরীর পুরো ঘুরিয়ে তার দিকে তাকালাম। সে আমার দিকে একটা বই বাড়িয়ে দিলো। বইটা দেখে চেনা চেনা লাগল। আদ্রিকের হাত থেকে ‘ছ’ মেরে বইটা নিয়ে নিলাম অস্ফুটস্বরে বলে উঠলাম, ‘ এটা তো আমার বই কোথায় পেলেন? ‘

‘ ফ্লোরে পরে ছিল। বইয়ের উপরে ছোট্ট করে বর্ষা নাম দেখে বুঝলাম তোমার বই তাই ফিরিয়ে দিলাম। ‘

‘ আচ্ছা আবারও থ্যাংকস ‘

বলে বেরিয়ে পরলাম। সবগুলা যাতাযাতি করে পেছনে বসেছে আর বজ্জাত টার পাশে ফ্রন্ট সিট রেখেছে আমার জন্য, অসহ্য।
গাড়িতে উঠে বসার পর সিট বেল্ট টাও বাঁধার জন্য সময় দেয়নি। সে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে ফুল স্পিডে চালাতে লাগল। আমি ভয়ে সিটের সাথে চিপকে রইলাম মনে মনে দোয়া দুরুদ পাঠ করছি। রাস্তা ঘাট সন্ধ্যার দিকটায় মোটামুটি ফাঁকাই থাকে সে সুযোগেই সে এভাবে চালাচ্ছে। বাড়িতে এসে পৌঁছাতে দশ মিনিট লাগে। কিন্তু আজ পনেরো মিনিট লেগেছে কারণ ভাইয়া, আহিতা, মাহিরা ও নিঝুমকে ওদের বাড়িতে ড্রপ করে দিয়ে আসছে। গাড়ি বাড়ির গেইট দিয়ে ঢুকল। আস্তে করেই ব্রেক কষলো অভ্র ভাইয়া, আমি জোরে জোরে নিশ্বাস ফেলতে লাগলাম। তার দিকে তাকিয়ে বিমূঢ় কন্ঠে বললাম, ‘ স্টক করাবেন নাকি? ‘

সে আমার দিকে না তাকিয়েই সিট বেল্ট খুলতে খুলতে পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো, ‘ কেন? হার্টের রোগী নাকি? ‘

‘ নাহহহহ! তবে খুব শীগ্রই হয়ে যাবো আপনার জন্য। ‘

বলে গাড়ির দরজা ধাক্কা দিয়ে খুলতে লাগলাম। মরার দরজা খুলছেও না। চোখ জোড়া খিঁচে বন্ধ করে নিলাম। ঘাড় ঘুরিয়ে পাশে তার দিকে তাকিয়ে দাঁত চেপে বললাম, ‘ দরজা লক করেছেন কেন? ‘

আমাকে অবাক করে দিয়ে সে আমার হাত ধরে নেয়। টান মেরে তার দিকে কিছু টা ঝুকিয়ে কঠোর গলায় বলল,’ ওই কি জেনো নাম আদ্রিক, ওই ছেলের সাথে তুই কথা বলবি না। ‘

‘ ইশ সে যা বলবে তাই জেনো হবে? ‘ (মনে মনে)

কন্ঠ স্বাভাবিক রেখেই জানতে চাইলাম, ‘ কেনো? ‘

‘ ছেলেটাকে আমার ভালো লাগেনি তাছাড়া মোটেও সুবিধার নয়। ‘

‘ সুবিধার নয় কেন অসুবিধার মতো কি করেছে? ‘

‘ বড্ড বেশে কথা বলিস। যা বলেছি তাই শুধু শুনবি ও করবি। ‘

আমি প্রত্যত্তরে কিছু বললাম না। সে দরজা আনলক করে বলল, ‘ যা নাম ‘

আমি গাড়ি থেকে নেমে পরলাম। দরজা ধরে দাঁড়িয়ে আছি তার দিকে ঘুরে ঝাঁঝালো কন্ঠে বললাম, ‘ আমার তাকে কোনো দিক দিয়েই খারাপ বা অসুবিধার মনে হয়নি৷ তাই আমি আপনার কথা রাখতে পারবো না সরি। ‘

বলে ধুরুম করে দরজা লাগিয়ে হাঁটতে লাগলাম। রুমে এসেই চারজন আগে ফ্রেশ হয়ে নেই। ঠান্ডা ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করার পর এখন নিজেদের আরাম লাগছে। সারাদিনের ক্লান্তি মূহুর্তেই বেনিশ হয়ে গেছে৷ পেটের মধ্যে ছুটোছুটি করছে ছোট একটা ইঁদুর প্রচুর খিদে পেয়েছে কিন্তু উঠে কিচেনে যেতে একদমই ইচ্ছে করছে না। বাংলার পাঁচের মতো করে বসে আছি আমি, রিয়া আর বৃষ্টি। সে তার বয়ফ্রেন্ড রিমন ভাইয়ার সাথে প্রেম আলাপ করছে তার আমাদের দিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। এত কি কথা বলে, ‘ আল্লাহ মালুম। ‘

নাকের মধ্যে নুডলসের ঘ্রাণ ভেসে আসছে। মনে হচ্ছে ঘ্রাণ টা আসতে আসতে অতি কাছে চলে আসছে। রিমা আমাদের চারজনের জন্য ট্রে তে চার বাটি নুডলস রান্না করে নিয়ে আসছে। তা দেখে লাফালাফি করে নিয়ে নিলাম আমি আর রিয়া। বৃষ্টি এখনো ফোন গুতাগুতি করছে।

সমস্যা তখন হলো যখন নুডলস ঠান্ডা করার জন্য রিয়া আমার বইটা নিলো। গরম গরম রান্না করে নিয়ে আসছে, বাটি থেকে ধোঁয়া উড়ছে তারাতাড়ি ঠান্ডা করার জন্য রিয়া আমার স্টাডি টেবিলের উপর আমার বই হাতে করে নিয়ে আসলো। বইটা ধরে বাটি চারটের উপর বাতাস করছে। আমাদের নুডলস খাওয়া ও বেস্তে গেছে। বইয়ের ভেতর থেকে গোলাপি রঙের একটা কাগজ বের হয়ে আসল। তা দেখে চারজনেই চারজনের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকায়ি আছি। চিরকুট টা হাতে নিয়ে খুলে ফেললাম। আজও কাগজের বুকে ছোটছোট অক্ষরে লিখা রয়েছে প্রেমকথোন।
হাতের লেখাটাও অসাধারণ, ছন্দ মিলিয়ে চিঠিবাজ খুব ভালোই লিখতে জানে সে আহ্লাদী স্বরে লিখেছে,

চলবে?

(কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ)

বিঃদ্রঃ তারাহুরোর জন্য গল্প বড় করে লিখতে পারছি না দুঃখিত। ভুলক্রটি ক্ষমার সাপেক্ষে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here