অবন্তর আসক্তি পর্ব ১৯

0
395

#অবন্তর_আসক্তি
#পর্ব_১৯
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা
______
‘আমাকে ভালোবাসতে হবে না, ভালোবাসি বলতে হবে না

মাঝে মাঝে গভীর আবেগ নিয়ে আমার ঠোঁট দুটো ছুঁয়ে দিতে হবে না,

কিংবা আমার জন্য রাত জাগাপাখিও হতে হবে না।

অন্য সবার মত আমার সাথে রুটিন মেনে দেখা করতে হবে না

কিংবা বিকেল বেলায় ফুচকাও খেতে হবে না।

এত অসীম অসংখ্য “না”-এর ভিড়ে শুধুমাত্র একটা কাজ করতে হবে;

আমি যখন প্রতিদিন একবার “ভালোবাসি”

বলবো তুমি প্রতিবার একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে

একটু আদর মাখা গলায় বলবে “পাগলটা”

যদি আমার কাজল পড়িয়ে দিতে হয় তোমাকে, চুলে মুখে রঙ মাখিয়ে দিতে হয়, গায়ে সুগন্ধি ছিটিয়ে দিতে হয়, সবচেয়ে ভালো শাড়িটাও যদি পড়িয়ে দিতে হয়, শুধু আমি দেখবো বলে মালাটা চুড়িটা পরে সাজতে হয়, যদি তলপেটের মেদ, যদি গলার বা চোখের কিনারের ভাঁজকায়দা করে লুকোতে হয়, তবে তোমার সঙ্গে অন্য কিছু, প্রেম নয় আমার।

প্রেম হলে আমার যা কিছু এলোমেলো যা কিছু খুঁত, যা কিছুই ভুলভাল, অসুন্দর থাক, সামনে দাঁড়াবো, তুমি ভালোবাসবে। কে বলেছে প্রেম খুব সহজ, চাইলেই হয়! এতো যে নারী দেখি চারদিকে, কই, প্রেমিকা তো দেখিনা ! তুমি যেমনই হও আমার জন্য তুমিই হচ্ছো আমার বিশ্বাস সুন্দরী রাগরাগিণী।

‘এই শুনো না! শুনছো? এই তুমি কি শুনছো হুম উত্তর দিচ্ছো না কেন? বলো হুম! ‘

বর্ষা মলিন হেসে ঠিঠির উত্তরে মৃদুস্বরে বলল,’ হুম ‘

‘ আমার রাগরাগিণী তুমি কি জানো আমার হিংসে হয়। অনেক হিংসে হয় যখন তুমি অনন্য ছেলেদের সাথে হেসে হেসে কথা বলো। মনে হয় মনের মধ্যে কে জেনো ধারালো ছুড়ি দিয়ে গায়েল করে দিচ্ছে। অজস্র যন্ত্রণা হয়। মাটির সাথে মিলিয়ে যেতে ইচ্ছে করে। তুমি কি জানো আমার হিংসে হয় তোমার ওই অবাদ্য ঘন কালো রেশম চুলগুলোর সাথে। যখন দেখি বেহায়া চুলগুলো তোমার কপালে এসে পরে থাকে। হাল্কা বাতাসে তা নেচে উঠে। তোমাকে বারবার জ্বালাতন করে বাতাসে উপচে পরে তোমার চোখে মুখে, তখন জানো আমার কি করতে ইচ্ছে করে? উঁহু জানো না। তখন আমার ইচ্ছে করে তোমার কাছে যাই তোমার হাত ধরে টান মেরে আমার সামনে দাঁড় করিয়ে নিজের হাতের তর্জনী দিয়ে একটা একটা চুল সরিয়ে তোমার কানের পেছনে গুঁজে দেই। আরও একটা ইচ্ছে করে আমি তোমার মুখে ফু দেবো। তুমি চোখ জোড়া খিঁচে বন্ধ করে নিবে মুখেতে লেগে থাকবে অমায়িক হাসি। যে হাসি দেখে আমি বারন বার প্রেমে পরবো তোমার। হাত ধরে টেনে তুলবে তুমি আমায়। তুমি আমার এমনই এক জন রাগরাগিণী তোমাকে হাজারও ভালোবেসে ভরবে না এ মন।

★ আমি ভালো নেই আমার সুঘ্রাণী ফুল। ভালো নেই আমি আমার অবদ্ধ মন যে সারাক্ষণ তোমাকে চায়। সে জোরে জোরে বিট করে আমাকে জানান দেয়। আমার শুধু তোমাকে চাই। আমি কোনো কিছু তেই মন দিতে পারি না। কাজে কর্মে পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করে আমি ব্যর্থ হয়েছি। মন বলে, আমি তোমাকে পেয়ে গেলে আমার সকল বিষন্নতা একাকীত্ব আপনা আপনি কেটে যাবে। এই আমার বকুল ফুল বলো না তুমি কি হবে আমার? একাকীত্বের সঙ্গী। কাছে আসবে আমার? ভালোবাসার অতল সাগরে ভাসবে আমার সাথে? কথা দিচ্ছি তুমি একটিবার আমার হয়ে গেলে আমি শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত তোমাকে আগলে রাখবো। ভালোবাসি! ভালোবাসার থেকেও অধিক ভালোবাসি। আমার মন পাড়ায় শুধু একটাই নাম ‘ বর্ষা রাগিনী ‘ আমার ভালোবাসার শুভ্র রঙে রাঙিয়ে রাখবো তোমায়। আমি ভালোবাসি শুধুই তোমাকে ‘
______

চিঠিবাজের চিঠি পড়ে প্রথম দিক দিয়ে ইমোশনাল হয়ে পরে চারবোন। মাঝখানটায় ফিক করে হেসে ফেলে। আবারও শেষের দিকে ইমোশনাল হয়ে পরে বর্ষা। আনমনে ভাবতে লাগে, ‘ কে এই চিঠিবাজ? যে সবার চোখের আড়ালে চিঠি রেখে যাচ্ছে। তাও এমন ভুবন ভুলানো শব্দে লেখা তার চিঠি পড়ে যে হৃদয়ে এক অজানা অনূভুতি দোলা দিয়ে যায়। কে এই প্রেমিক যে নিজের থেকেও অধিক ভালোবাসে বর্ষাকে?

রিমা কাটা চামচে নুডলস পেঁচাতে পেঁচাতে বলল,’ কে এই চিঠিবাজ? যে আমার অলস রাজ্যের রাণী বর্ষার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। ‘

রিয়া ও বৃষ্টি সশব্দে হেসে উঠল। আমি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তে তাকাতে ওদের দৃষ্টি মলিন হয়ে গেলো।
আমি আকস্মিক বিপর্যয় ঘটিয়ে হুট করেই বলে ফেললাম, ‘ কিছুক্ষণ আগে গাড়ি থেকে নামার সময় অভ্র ভাইয়া আমাকে বলেছিল, আমি জেনো আদ্রিকের সাথে কথা না বলি। আদ্রিককে ভালো ছেলে বলে তার মনে হয় না। মানে সে চায় না আমি ওর সাথে কথা বলি। ‘

বৃষ্টি ও রিমা অবাক হয়ে বলে উঠল,’ কিহহহ?’

রিয়া আমাদের তিনজনের দিকে এক নজর তাকিয়ে এটিটিউট নিয়ে বলল,’ তাতে কি যায় আসে ভাইয়া আমাকেও বলছে আদ্রিকের থেকে দূরে থাকতে। আর আদারস ছেলেদের সাথেও জেনো তেমন কথা বার্তা না বলি। ‘

রিয়ার কথা শুনে চুপসে গেলাম। তখনই অভ্র ভাইয়া রুমে প্রবেশ করল। আমাদের গোল মিটিং করতে দেখে রুমে ঢুকে আসল৷ শব্দহীন ভাবে পা টিপে টিপে এসেছে। আমাদের চারজনের উপস্থিতি বাদেও আরও একজনের উপস্থিতি আমরা বুঝতেই পারিনি। হাতে চিরকুট টা নিয়ে তাতে চোখ বুলাচ্ছি। হঠাৎ করে কেউ একজন ‘ ছ’ মেরে হাত থেকে টান মেরে কাগজ টা নিয়ে নিলো। পেছনে না তাকিয়েই অস্ফুটস্বরে চেঁচিয়ে বললাম, ‘ আব্বে কে রে? কার এত বড় সাহস? ‘

বিছানা থেকে নেমে ঘাড় ঘুরিয়ে ‘থ’ হয়ে গেলাম।
অভ্র ভাইয়া কে আমার রুমে দেখে মনে হলো আমার ১০৪° জ্বর এসে গেছে গায়ে। পরক্ষণেই মনে হলো এটা তো তার দেওয়া চিঠি সে কিছুই বলবে না।

তৎপর সে আমাদের আকস্মিক চেহারা কে বিস্মিত করে দিয়ে বলল,’ কলেজে যাসনি লাভ লেটার আদান প্রদান করতে? কি এইসব? এইসব করতে যাস তুই কলেজে? আজকে আসুক চাচ্চু তোর বিয়ের ব্যবস্থা করাচ্ছি। প্রেম করা লাভ লেটার দেওয়া গুচাচ্ছি। ‘

বলে চিঠিটা হাতের মধ্যে দুমড়েমুচড়ে ফেলল। নিজের শোঁখে আহত কেন হচ্ছি আমি আজব? এখন চিঠি নয় নিজেকে বাঁচাবো কিভাবে সেটাই ভাবান্তর।
আমার মাথায় এমন অবস্থায় শয়তানি বুদ্ধি অটোমেটিক চলে আসে। জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে বললাম,

‘ অভ্র ভাইয়া তুমি ভুল ভাবছো। এ চিঠি আমার নয়। চিঠি টা তো আমার ফ্রেন্ড নিঝুম হ্যাঁ নিঝুমের। ও একটা ছেলেকে ভালোবাসে আর আমাকে বলছে একটা চিঠি লিখে দিতে। আমি তো শুধু তাই করছিলাম লিখছিলাম। ‘

উনার চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে উনি আমার কথা মোটেও বিশ্বাস করেননি। তিনি গুরুগম্ভীর কন্ঠে বললেন, ‘ নিঝুমের চিঠি হলে, এখানে পাগলী হবে পাগল কেন লিখছিস? ফাজলামি করিস তুই আমার সাথে আর এটা কি তোর হাতের লেখা? ‘

ঠিচিটা আমার চোখের সামনে ধরে বলল। আমি দু’দিকে মাথা নাড়ালাম। মুখ দিয়ে বললাম, ” নাহহ, আমি ফাজলামি করছি না। ওটা পাগলীটা হবে ভুলে ই আকার দিতে ভুলে গেছি। দাও দাও চিঠি টা দাও, এখন আবার নতুন করে লিখতে হবে। ‘

অভ্র ব্রো আমার কথা মোটেও বিশ্বাস করলেন না। আঁড়চোখে আমার সৈন্য বাহিনীর দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুড়ল, ‘ বর্ষা যা বলছে সব কি সত্যি? ‘

বৃষ্টি, রিয়া, রিমা তিনজনেই উপর নিচ মাথা দুলাতে লাগল। অভ্র ভাইয়া দুই পাশে দুবার মাথা দুলিয়ে চিঠিটা আমার হাতে গুঁজে দিলো। সাথে আরও একটা জিনিস গুঁজে দিয়ে ফিসফিস আওয়াজে বলল,’ নিজের জিনিস সব সময় নিজের কাছে ও যত্নে রাখাই ভালো। কখন কোথায় হারিয়ে যায় বলা মুশকিল৷ একবার হারিয়ে ফেলা জিনিস দ্বিতীয় বার আর পাওয়া যায় না। ‘

চলেই যাচ্ছিল ফিরে এসে আরও বলল,’ সময় পেলে ফ্রিজ খুলে দেখিস। ‘

চলে গেলো সে। আমি নির্বাক তাকিয়ে রইলাম তার যাওয়ার দিকে, অভ্র ভাইয়া যখন আমার সামনে আসে, আর এমন ভাবে ফিসফিস করে কথা বলে। তখন আমার হার্ট বিট তীব্র গতিতে ছুটতে লাগে। মনে হয় জেনো এখনই আত্মা টা বের হয়ে যায়। বুকের বা পাশে ধুকধুক শব্দ হয়। উনি চলে যেতে আমি হাতের মুঠি খুললাম, আমার এক জোড়া কানের দুল। হয়তো গাড়িতে খুলে পরে গিয়েছিল। আরও একটা হচ্ছে পায়েল। দু’টো একসাথেই হয়তো গাড়িতে পরে গিয়েছিল আর উনার চোখ পরে যায়। তাই তো হাতে করে নিয়ে আসি।

আমার ভাবনার ব্যতিক্রম ঘটিয়ে রিয়া প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো, ‘ এই বর্ষা কি হয়েছে তোর এমন পাথরের মতো দাড়িয়ে আছিস কেন? ‘

রিমা বলল, ‘ অভ্র ভাইয়া তোকে ফিসফিস করে কি বলল রে?

আমি ওদের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকালাম। চিঠিটা ছুড়ে বিছানার উপর ফেলে দিলাম। অলস ভঙ্গীতে বিছানার উপর বসে কষ্ঠমাখা কন্ঠে বললাম,’ কে জানি বলছিলো চিঠির মালিক অভ্র ভাইয়া। আয় বোইন সামনে আয়। দুইটা উস্টা দিয়া বিড়ালের ছাউয়ের মতোন জানালা দিয়ে ফালাই দেই। ‘

কথার পিঠে হাসির আওয়াজ ভেসে আসছে। পেত্নীদের মতো হ হ করে হাসছে। পেত্নী তিনটায়।

বৃষ্টি থমথমে গলায় বলল, ‘ তার মানে এই চিঠিবাজ আমাদের অভ্র ভাইয়া না। ‘

বর্ষা হাত দিয়ে দাঁতের নখ কামড়াচ্ছে, চোখ তুলে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ উঁহু! ‘

রিয়া ও রিমা লাফিয়ে উঠে একসাথে প্রশ্ন ছুড়ল, ‘ তাহলে কে? ‘

ওদের দু’জনের কথার পিঠে এবার আজি ঠোঁট উল্টালাম। সন্ধ্যার দিকের ঘটনা বর্ষার মনে আসতেই উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বলে উঠ, ‘ কোন বই থেকে বের হয়েছে চিঠি টা? ‘

রিয়া আমার বইটা আমার দিকে ছুঁড়ে দিলো আর বলল, ‘ এই বই থেকে, কেন কি হইছে? ‘

বইটা হাতে নিয়ে উল্টিয়ে পাল্টিয়ে দেখতে দেখতে মনে মনে বললাম, ‘ এ এটা ওই বইটাই ‘

আমারে চিন্তিত দেখে বৃষ্টি প্রশ্ন ছুড়ল, ‘ কি ব্যাপার একটা সামান্য বইয়ের জন্য এত চিন্তিত কেন দেখাচ্ছে তোকে? ‘

আমি বইয়ের উপরে দৃষ্টি সংযত রেখেই বললাম, ‘ এটা এখন মোটেও সাধারাণ বই না। ‘

রিমা ঠোঁট জোড়া বাঁকা করে বলল, ‘ অসাধারণ হওয়ার জন্য কি এমন কাজ করছে বইটা? ‘

রিমাকে আঁটকে দিয়ে রিয়া বলল, ‘ যার ফলে বইটাকে তুই অসাধারণ উপাধি দিচ্ছিস? ‘

আমি ওদের দিকে তাকিয়ে থেকেই নিচু কন্ঠে বলতে লাগলাম,
‘ সন্ধ্যার দিকে কাজ সব শেষ করে অডিটোরিয়াম থেকে চলে আসার সময় আমাকে পিছু ডেকেছিল আর্দিক। আদ্রিক-ই তখন আমার হাতে এই বইটাই দিয়েছিল। ‘

আমার মুখে আদ্রিক নাম শুনে উপস্থিত তিনজনের মুখ হা হয়ে যায় অস্ফুটস্বরে তিনজনেই বলে উঠে, ‘ কিহহহ ওই আদ্রিক নিদ্রিক ছেলেটা তোর চিঠিবাজ? ‘

রিয়া ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে উঠল,’ নাহহ! আমি মানি না মানবো না। ওই আদ্রিক নিদ্রিক ডাবল রোল বেটাকে আমি দুলাভাই হিসেনে মানবো নাহহহ। নো, নাহহ, নুহহহহ ‘

#চলবে

(কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here