অবন্তর আসক্তি পর্ব ২৪

0
491

#অবন্তর_আসক্তি
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা

পর্ব – ২৪

‘ ধমকাচ্ছো কেন আমাকে? ‘ (রাগী গলায়)

‘ধমকাবো না তো কি করবো আজ তোর জন্য আমি এখানে ফেঁসে গেছি৷ চোরের মতো গ্রাম বাসী ঘরে আঁটকে রেখেছে। ‘ অভ্র ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল।

‘আল্লাহর কাছে শুকরিয়া করো ভাগ্য ভালো যে চোর বলে পিটানি খাও নাই। ‘ বিড়বিড় করে বলল।

ভ্রুকুটি কুঞ্চিত করে তাকিয়ে থেকে রাগে ফোঁসফোঁস করে বলল, ‘ কি বললি? ‘

‘ কিচ্ছু না। যাইহোক ভেবেছো এখান থেকে বের হবে কিভাবে? ‘

এক কথায় উত্তর দিলো অভ্র,’ নাহহ। ‘

‘জানতাম এটাই বলবে। ‘ চোখ জোড়া ছোটছোট করে তাকিয়ে বলল।

‘ তুই কিভাবে জানতি? তুই আমার মনের মধ্যে উঁকি দিয়ে দেখেছিস নাকি? ‘ অভ্র ঠোঁট বাঁকা করে বলল।

‘ হয়তো ‘

‘ মানে?’

‘ মানে বানে কিচ্ছু না। এদিকে আসো তো। ‘

‘ কাছে যাবো কেন? ‘

‘ ধ্যাত ‘

বলে অভ্রর এক হাত ধরে টান মেরে নিজের সামনে দাঁড় করালো বর্ষা। কানে কানে বলে উঠল, ‘ আমার কাছে আক্কাস আলীর ঝাক্কাস আইডিয়া আছে৷ ‘

অভ্র বর্ষার সামনে থেকে কিছুটা দূরে সরে গেলো। কঠোর কন্ঠে বলল, ‘ এসব কোন ধরনের ভাষা? ‘

বর্ষা কোনো প্রত্যত্তর করল না। অভ্র বর্ষার দিকে ঘুরে দেখল মাথায় হাত দিয়ে বর্ষা পরে যাচ্ছে, ছুটে দু’হাতে ধরে ফেলে। বিমূঢ় কন্ঠে বারবার, ‘বর্ষা’ বলে ডাকতে লাগে। হুট করে চোখ খুলে তাকায় বর্ষা। অভ্র তার চোখের দিকে তাকাতে চোখাচোখি হয়ে যায়। বর্ষা মেকি হাসি দিয়ে চোখ টিপ মারে। ভেবাচেকা খেয়ে যায় অভ্র হাত ছেড়ে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে বর্ষা মাটিতে পরে যায়। তবে ব্যাথা পায় না। মাটি থেকে কিছুটা উঁচুতে অভ্র তাকে ধরে রেখেছিল।

অভ্র রাগী কন্ঠে বলল, ” এই মাথা ঘুরে পরে যাওয়া কি তোর নাটক ছিল? ”

বর্ষা পাটির উপরে সোজা হয়ে শুয়ে পরে হেয়ালি কন্ঠে বলে,’ আবার জিংগায়। ‘

লাফিয়ে অভ্রর সামনে দাঁড়িয়ে দুইহাত ঝাড়তে ঝাড়তে বলল,’ এখন প্লান শুনো। আমি এখানে অসুস্থের মতো শুয়ে থাকবো। তুমি দরজার সামনে গিয়ে গ্রামের মানুষ দের আওয়াজ দিবে। দরজা খুললে বলবে আমার অবস্থা অতন্ত্য খারাপ। মাথা ঘুরে পরে গেছি তারাতাড়ি হাসপাতালে নিতে হবে। বাস এতটুকুই বলবে এর থেকে বেশি একটা কথাও বলবা না। ওকে? ‘

‘এতে কাজ হবে? যেতে দিবে তারা আমাদের? বিশ্বাস করবে তোর এক্টিংকে সত্য মনে করবে? ‘

‘ আলবাত কাজ করবে। তুমি বিশ্বাস করছো না তারাও করবে। ‘

বলেই সশব্দে হেসে উঠল বর্ষা। ঠোঁটের উপর দাঁত দিয়ে আলতো চাপ দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে অভ্র ইচ্ছে করছে তার কষিয়ে বেয়াদর মেয়ে অর্থাৎ বর্ষার গালে চড় মারতে। এটা একটা ফালতু আইডি মনে হচ্ছে তার কাছে। বের হওয়ার দ্বিতীয় কোনো রাস্তা না পেয়ে রাজি হতে হয় অভ্রকে মেনে নিতে হয় বর্ষার মাথার ঝাক্কাস আইডিয়া।

বর্ষার আইডিয়া সাকসেস হওয়ায় বাইকে বসে অভ্র কিছুক্ষণ সেই বিষয়ে আলোচনা করল। বর্ষা একটু এটিটিউট নিয়ে বলল,’ দেখতে হবে না আইডিয়া টা কার। ‘

‘হুহহ, পেত্নী জংলী মেয়ের। ‘

‘ অভ্র ভাইয়া! ‘ চেঁচিয়ে বলল বর্ষা।


বাড়িতে পৌঁছালে হয় আরও এক ঝামেলা। বাড়ির সকলো তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বর্ষার দিকে বর্ষা ভয় পেয়ে অভ্রর পেছনে লুকিয়ে পরে। অভ্র বাড়ির সকলকে শান্ত করার জন্য কাল গ্রামে পৌঁছানোর পর কি ঘটেছিল তা বলে৷ শুধু গ্রামের মাতব্বরের শর্তের কথা গোপন রাখে। বর্ষার সঙ্গে অভ্র ছিল বৈকি সকলে এবারের মতো তাকে মাফ করে দেয়। কিন্তু সকলে শাসিয়ে যায় এর পর জেনো একা কোথাও না যায়।

রুমে এসে সর্ব প্রথম ফ্রেশ হয়ে নেয় বর্ষা।
কলেজের সময় হলে সে রেডি হয়ে নেয়। কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে রুম থেকে বের হয়। নিচে ডাইনিং টেবিলে আগে থেকেই সকলে খেতে বসে পরেছিল। বর্ষা চেয়ার টেনে খেতে বসে খেয়াল করল। টেবিলের এ মাথা থেকে শেষ পর্যন্ত সকলে আছে শুধু অভ্র ছাড়া। বাকিদের অভ্রর কথা জিজ্ঞেস করলে বর্ষার দাদা বলেন,’ সারারাত জেগে তোকে পাহারা দিয়েছিল। দু’জনে একসাথে ঘুমিয়ে পরলে যদি গ্রামের লোকেরা কোনো ক্ষতি করে বসে সে জন্য এখন ঘোড়া বিক্রি করে নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছে। ‘

দাদার কথা শুনে বর্ষার মন খারাপ হয়েগেলো। সারারাত একটা মানুষ ঘুমায়নি আর সে দিব্যি ঘুমিয়েছে। নাস্তা শেষ করে কলেজের উদ্দেশ্য বের হয়ে পরল।

রিমা আর বর্ষাকে আজ হেঁটে হেঁটেই যেতে হবে। বাড়ির তিনটা গাড়ি তিনজনে নিয়ে গেছে, বর্ষার বাবা ও দুই চাচা। তিনজনের আজ ভিন্ন তিন জায়গায় মিটিং আছে তাই সেখানে চলে গেছে। যখন বর্ষা ফ্রেশ হতে রুমে গিয়েছিল তখন। আর যেসব ভাইদের বাইক আছে তারাও বেরিয়ে গেছে। তাদের নাকি আজকে ঘুরতে যাওয়ার কথা৷ আর একটা বাইক আছে তবে যার বাইক সে তেল বেইচা ঘোড়া বেইচা ঘুমাইতাছে।

রিয়া হাঁটছে আর বারবার ঘড়ির টাইম দেখছে। বর্ষা হেঁটে যাচ্ছে আর রাস্তায় পরে থাকা ছোট ছোট ইটের কোণা খালি বোতল সেগুলো তে পা দিয়ে লাথি মারছে। লাথি লেগে সেগুলো কিছুটা দূরে চলে যাচ্ছে। বর্ষা সেটা দেখে হাত তালি দিচ্ছে ফিক ফিক করে হাসছে।

কলেজে পৌঁছাতে কিছুটা সময় লেগে যায়। তবে কলেজে এসে ধুমধুম পিঠে কতগুলো কিল পরে বর্ষার। কিল দিয়েছে আহিতা, নিঝুম, মাহিরা কাল না জানি কোথায় হারিয়ে গিয়েছিল। কত টেনশনে ফেলে দিয়েছিল বর্ষা ওদের। সেই অভিমানেই দু-একটা কিল মেরে বসল।

তাদের অভিমান বুঝলো না বর্ষা। উল্টো এখন সে অভিমান করে বসে পরল। পুরো ক্লাসে কেউ কারো সাথে কথা বলেনি। ক্লাস শেষে বর্ষা সকলকে ফেলে একা একা চলে আসে। তাদের আড্ডাখানায় কৃষ্ণচুড়া গাছের নিচে এক বড় বেঞ্চের নিচে বসে আছে। চারদিকে বাতাস বয়ে যাচ্ছে কৃষ্ণচুড়া গাছ থেকে কিছু কিছু ফুল বাতাসে বর্ষার উপরে পরছে। চোখ বন্ধ করে প্রকৃতি উপভোগ করছে। চোখ মেলে তাকাতে বড়সড় শকট খেলো। তিনটা মেয়ে কুকুর তার সামনে হাঁটু গেঁড়ে কানে ধরে বসে আছে। বিস্মিত স্বরে বলছে,’ সরি আর হবে না। তোকে আর কখনো কিল ঘুসি মারবো না। এবারের মতো আমাদের ক্ষমা করে দে। ‘

বর্ষা তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। সেখান থেকে উঠে চলে যেতে নিলে পেছন থেকে শীতলাকন্ঠে কে জেনো বলল,’ ক্ষমা চাওয়া ব্যক্তির থেকে ক্ষমা করে দেওয়া ব্যক্তি উত্তম। ‘

বর্ষা পেছনে ঘুরে তাকালো। একসাথে তিনটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে মুরাদ, নিভ,আদ্রিক।

কিছুক্ষণ আগের কথাটা আদ্রিক বলেছে। বর্ষা আঁড়চোখে তিনজনের দিকে তাকিয়ে আছে। নিভ বর্ষার সামনে বেঞ্চে বসে বলল,’ ওরা তোকে নিয়ে বেশ চিন্তিত ছিল তাই রাগে অভিমানে মেরেছে আর তুই ওদের রাগ অভিমান না মিটিয়ে উল্টো রাগ করে বসে আছি? ‘

মুরাদ বলল,’ আমি ছেড়ি মাইনষের মধ্যে নাই। এরা কহন কি চায় এরা নিজেও জানে না। এক একটা শয়তানের নানি এগুলার পেটে পেটে জিলাপির পেচ। ‘

বর্ষা ধ্রুত পা ফেলে মুরাদের সামনে এসে দাঁড়ালো। ফট করে মুরাদের কান মোলা দিয়ে বলে, ‘ কি বললি তুই?’

মুরাদ বর্ষার হাতের উপর রাখ রেখে বলল,’ শয়তানের নানি ছাড় কইতাছি। আমি কি তোরে কইছি নাকি? ‘

বর্ষা মুরাদের কান ছেড়ে দিয়ে বলল,’ তো কারে বলছিস? ‘

মুরাদ বর্ষার সামনে থেকে কিছুটা দূরে চলে গেলো। হাতের নাগালের বাহিরে গিয়ে চেঁচিয়ে বলল,’ তোকেই বলছি শয়তানের নানি জড় তুফান ছেড়ি। সপ্তাহে একদিন ফ্রেন্ড সার্কেলের মধ্যে জড় না তুললে তোর ভাল্লাগে না? ‘

বর্ষা রাগান্বিত চোখ জোড়া মুরাদের উপর নিক্ষিপ্ত করে এক পা সামনে এগিয়ে যেতে যাবে তখন আদ্রিক বলল,’ ওরা তোমার ফ্রেন্ড বর্ষা। সব সময় রাগ মোটেও ভালো নয়। ওদের তোমাকে নিয়ে চিন্তা হয় দুশ্চিন্তা হয় ওদের। তোমার ওদের ফিলিংস বুঝা উচিত নাকি উল্টো ওদের সাথে রাগ করে একা একা বসে থাকা উচিত। তুমি ওদের সাথে কথা বলো দেখবে মান অভিমান সকলের মিটে যাবে। ‘

আদ্রিকের কথার সাথে নিভ উঠে দাঁড়িয়ে সহমত প্রকাশ করল। বর্ষা ভাবান্বিত ফেস বানিয়ে আঁড়চোখে তাকিয়ে আছে, আহিতা,নিঝুম,মাহিরার দিকে। ওরাও ইনোসেন্ট ফেস বানিয়ে বর্ষার দিকে তাকিয়ে আছে। ওদের ওমন মুখের আকার আকৃতি দেখে সশব্দে হেসে উঠল বর্ষা। পরক্ষণে সকল মান অভিমান সাইডে রেখে বান্ধবী গুলোকে জড়িয়ে ধরল। পৃথিবীতে বাবা মায়ের পরে যারা একান্ত কাছের হয়ে যাদের সাথে সুখ দুঃখ সব কিছু শেয়ার করা যায় তারাই হচ্ছে বেস্ট ফ্রেন্ড।

কৃষ্ণচুড়া গাছের নিচে আজ মিলন মেলা বসেছে বন্ধু বান্ধবের মিলন মেলা।

সকলের সাথে আজ অনেকক্ষণ মন খুলে আড্ডা দেয় বর্ষা। বাড়িতে ফিরে যেতে হবে মাথায় আসতে সকলকে বিদায় দিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দিলো।
আজ তার মনে হচ্ছে সে পৃথিবীর সব থেকে খুশি বাড়িতে এসে। জামাকাপড় চেঞ্জ করে নিয়ে খেতে বসে। কলেজ ছুটির পর বসে আড্ডা দেওয়ার জন্য দুপুরে লাঞ্চের সময় পার হয়ে গেছে। সকলে খাবার খেয়ে নিয়েছে শুধু বর্ষা আর রিয়াই এখন একা একা খাচ্ছে।

সন্ধ্যার পর, বর্ষা, রিমা, রিয়া, বৃষ্টি চারজনে একত্রিত হয়েছে।

রিমা হুট করে বলে উঠল,’ আজ তোর চিঠিবাজ তোকে কোনো চিঠি দেয় নি? ‘

বর্ষা লাফিয়ে উঠল খুশিতে আহ্লাদী কন্ঠে বলে উঠল,’ ঠিক ভালো কথা মনে করিয়ে দিছিস। ‘

বলে বিছানা থেকে নামল। পড়ার টেবিলের উপর থেকে ব্যাগ টা নিয়ে এসে বিছানার উপর রাখল।
ব্যাগ থেকে একটা একটা বই বের করল। সবগুলোতে খুঁজেছে কিন্তু কোনো চিরকুট আজ পায়নি। মূহুর্তে বর্ষার হাসি খুশি উজ্জ্বল মুখটা বিষন্নতায় ছেয়ে গেলো। এক রাশ অভিমান জড়ো হলো তার মুখে। ফেঁকাসে লাগছে বর্ষার মুখটা। বর্ষার অবস্থা দেখে সকলে নিরব দর্শক হয়ে গেছে৷ বিছানা থেকে নামল বর্ষা। পড়ার টেবিলের সামনে গিয়ে চেয়ার টেনে বসে পরল। অভিমানি হয়ে বিস্মিত স্বরে বলল, ‘ আজ চিঠি কেনো দিলো না? ‘

#চলবে?

(কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ)
?___________________?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here