অবন্তর আসক্তি পর্ব ২৫

0
953

#অবন্তর_আসক্তি
#পর্ব_২৫
#Sharmin_Akter_Borsha
________
“ চাচি আম্মো এই মেয়েকে কাজকর্ম শিখাও না কেন? এর তো বিয়ে হবে না আজব সারাদিন খেয়ে বসে দিন কাঁটায়। ”

ডাইনিং টেবিলে পায়ের উপর পা তুলে হালুয়া খেতে খেতে বলল অভ্র। সামনের চেয়ার থেকে কাটা চামচ ছুঁড়ে ফেলল তিন্নি অভ্রর দিকে ও কিছুটা ঝুঁকে পরল টেবিলের পাশে চামচটা মেঝেতে পরে টুংটাং শব্দ তুলল। অভ্রর পেছনে দাঁড়িয়ে আছে বর্ষা তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। রান্নাঘর থেকে বের হয়ে আসল অভ্রর মা তিনি ওর মাথায় গুঁতো দিয়ে কর্কশকন্ঠে বলে উঠল, “ তুই না জেনেই একটু বেশি বেশি বকবক করিস। কে বলেছে আমাদের মেয়ের বিয়ে হবে না শুনি। ”

অভ্র এক বাক্যে উত্তর দিলো, “ কেনো আমি বলেছি। ”

“ কেনো বলেছিস শুনি কারণ কি? ” অভ্রর আম্মু বলল।

“ রান্না বান্না জানে না তাই বিয়ে হবে না। ” চামচ দিয়ে হালুয়া খেতে খেতে বলল।

রান্নাঘর থেকে আসলেন রিয়ার আম্মু তিনি বললেন, “ তুমি যে মজা করে খাচ্ছো। যে খাবারের এত প্রশংসা করছো এগুলো কে রান্না করছে শুনি? ”

ডোন্ট কেয়ার এটিটিউট নিয়ে অভ্র বলে উঠল,“ তোমরা ”

টেবিলের উপর চামচ দিয়ে টুংটাং শব্দ তুলে তিন্নি বলল, “ আজ্ঞে নাহহ। টেবিলে যে এত সাজানো পরিপাটি সকল খাবার দেখছো এগুলো একটাও আম্মু বা চাচি আম্মুরা কেউ করেনি। এগুলো সবকিছুই ভোর পাঁচ টা বাজে ঘুম থেকে উঠে বর্ষা নিজে একা রান্না করেছে। আর সেইসব খাবার তুমি কিছুক্ষণ পূর্বে সবার আগে টেস্ট করে এত এত প্রশংসা করেছো। ”

তিন্নির কথা শুনে বিষম খেলো অভ্র পেছন থেকে এগিয়ে আসল বর্ষা।
টেবিলের উপর থেকে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিলো অভ্রর দিকে গ্লাসের অর্ধেকের বেশি পানি ঢকঢক করে খেয়ে সে বিমর্ষ কন্ঠে বলল, “ তাহলে বিয়ে হবে ”

বলে অভ্র ঘাড় ঘুরিয়ে পাশে তাকালো যে পানি দিলো তাকে থ্যাঙ্কস জানানোর জন্য কিন্তু পাশে তাকাতে তার চোখ কপালে উঠে যায়। রাগে রক্তচক্ষু নিক্ষেপ করে তাকিয়ে আছে বর্ষা অভ্রর দিকে। তা দেখে শুকনো ঢোক গিলল অভ্র আমতা আমতা করে বলে উঠল, “ তুতুতুতু, তুই কখন এ্যলি? ”

বর্ষা টেবিলের উপর থেকে পানির জগ নিয়ে সোজা অভ্রর মাথার উপর ঢেলে দিলো। থতমত খেয়ে গেলো সকলে থমথমে হয়ে তাকালো। অভ্র মুখ কিছুটা হা করে বর্ষার দিকে তাকালো অভাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে সে, বর্ষা রাগী গলায় বলে উঠল, “ যখন তুমি বলছিলে আমার বিয়ে হবে না তখন। ”

বলে ধুপধাপ পা ফেলে কিচেনে চলে গেলো বর্ষা। অভ্র দুইদিকে মাথা নাড়ালে চুলের ছিটেফোঁটা পানি মেঝেতে টুপটুপ করে পরছে। অভ্র এক চামচ হালুয়া মুখে দিয়ে বলল, “ দেখেছো চাচি আম্মু তোমার মেয়ের বিয়ে করার শখ মারাত্মক লেভেলের। বিয়ে হবে না বলেছি বলে আমাকে ভিজিয়ে দিলো। ”

ফ্রিজ খুলে দুইটা কাঁচামরিচ বের করে চিবিয়ে চিবিয়ে খেতে লাগল বর্ষা। তখনই কিচেনে উপস্থিত হয় তিন্নি ও অভ্র বর্ষাকে কাঁচামরিচ চিবিয়ে খেতে দেখে অভ্র পা বাড়ালে তিন্নি ওর হাত ধরে সরু কন্ঠে বলে, “ এখন যাস না ”

“ কিন্তু ওর তো ঝাঁল লেগেছে দেখছিস না কাঁদছে ”
অভ্র বলল।

“ তোকে আমি আগেই বলেছি ওকে রাগিয়ে দিস না। ওর রাগ সম্পর্কে তোর কোনো ধারণা নেই। ওর যখন মাত্রারিতিক্ত রাগ হয় তখনই ও ঝাঁল সহ্য করে হলেও কাঁচামরিচ খায়। এতে চোখের জল গড়িয়ে পরলেও ওর কিছু যায় আসে না। মরিচ খেলে নাকি ওর রাগ কমে। ” তিন্নি অভ্রর হাত ধরে বলল।

তিন্নির হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে অভ্র কর্কশকন্ঠে বলল, “ কিন্তু আমার যায় আসে আলবাত যায় আসে। তুই জানিস সব সবকিছু তারপরেও কিভাবে ভাবলি আমি ওকে এভাবে কষ্ট পেতে দেখে সহ্য করে নেবো? ”

বলে অভ্র বর্ষার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো ঝাঁল সহ্য করতে না পেরে চোখ বন্ধ করে নিয়েছে তবুও কাঁচা মরিচ চিবিয়ে যাচ্ছে। বর্ষার ঠোঁট জোড়া এমনিতে হালকা লাল ঝাঁলে দ্বিগুণ লাল হয়ে গেছে। হাত থেকে কাঁচামরিচ টেনে নিয়ে নিলো অভ্র ফ্লোরে ছুঁড়ে ফেলে দিলো। চোখ জোড়া খোলে তাকালো বর্ষা অশ্রুসিক্ত নয়নে অস্পষ্ট দেখছে সে। অভ্র কে সামনে দেখে কেঁদে উঠল বর্ষা। অভ্রর বুকের উপর হাত রেখে পেছনে ধাক্কা দিয়ে কান্না ভেজা কন্ঠে বলল, “ আমার মরিচ ফেললে কেনো? ”

অভ্র বর্ষার দুই হাত শক্ত করে ধরে নিচু কন্ঠে বলতে শুরু করল, “ সরি বর্ষ্যু আমাকে ক্ষমা করে দে। আমি আর কখনো তোকে রাগাবো না। প্রমিস করছি কখনো তোর পেছনে লাগবো না৷ আমার উপর রাগ করে তুই নিজেকে কষ্ট দিস না আমি সহ্য করতে পারি না। এভাবে কাঁচা মরিচ চিবিয়ে খেতে তোকে কোন পাগলে শিখিয়েছে? ”

বর্ষা অভ্রর হাত ছাড়াতে ছাড়াতে বলল, “ হ্যাঁ আমি পাগল হইছে খুশি এখন ছাড়ুন আমার হাত ”

বললে অভ্র এক টানে বর্ষাকে নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ করে নেয়। নিজের আষ্টেপৃষ্টের সাথে জড়িয়ে নেয়৷ বর্ষা এবার আরো জোরে জোরে কেঁদে উঠল।

অভ্র বর্ষার কানে কানে ফিসফিস করে বলল, “ তোর জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে। কান্না বন্ধ করলে দিবো। ”

বর্ষার কান্নার আওয়াজ কমে গেলো নাক টেনে টেনে বলল, “ কি সারপ্রাইজ? ”

অভ্র বর্ষার হাত ধরে নিজের সামনে দাঁড় করালো। বর্ষার অশ্রু ভেজা মুখটি দেখে সে সশব্দে হেসে উঠল, ঠোঁটের কোণে মৃদুহাসি ফুটিয়ে মাথা নিচে করে ফেলল বর্ষা লজ্জায় লাল হয়ে গেছে তার গাল। অভ্র হাসি কোনোরকমে থামিয়ে বলল, “ তোকে এখন পুরো পেত্নী লাগছে ”

বলে পেটে হাত দিয়ে হাসতে লাগল। অবশ্য বর্ষার বুঝতে বাকি নেই। অভ্র এমন লাগাম ছাড়া হাসছে কেনো? কেননা, বর্ষা কান্না করায় ওর চোখের কার্নিশের কাজল ও অশ্রু মিশ্রিত হয়ে দুই গালে ল্যাপ্টে রয়েছে।

বর্ষা অভিমানী কন্ঠে বলল, “ কি সারপ্রাইজ? ”

অভ্র বর্ষার সামনে এসে দাঁড়ালো কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসে আওয়াজে বলল, “ তোর রুমে বিছানার উপর রাখা আছে। ”

আর কে পায় বর্ষাকে ছুটে সিঁড়ি বেয়ে এক দৌঁড়ে রুমে চলে আসল।
বিছানার উপর লাল রঙের রেপিং পেপারে মুঁড়ে একটা গিফট বক্স। বর্ষা বিছানার উপর গিয়ে পা তুলে বসল। বক্সটা দুইহাত দিয়ে ধরে নিজের কোলে তুলে নিলো, বক্সটার উপর হলুদ রঙের কালার পেপার অর্থাৎ চিরকুট দেখে বুকের মধ্যে মোচড় দিয়ে উঠল বর্ষার। ও মনে মনে ভেবে নিলো,
“ চিঠি? তাহলে ওই চিঠিবাজটা কি অভ্র ভাইয়া? ”

আর ভাবতে পারছে না কাগজটা খুলে দেখল তাতে লিখা:-

“ শুভ জন্মদিন আমাদের প্রিয় বর্ষ্যু! কৃষ্ণচূড়া ফুল যখন গাছ থেকে ঝড়ে পরে মাটির বুকে, তখন চারদিকে মাটির সৌন্দর্য বিপুল হয়। মাটি নতুন রূপে সজ্জিত হয়। তার আপন রঙ ভুলে কৃষ্ণচূড়ার রঙে। খুশি দেখে কে তখন মাটির? নিজের গায়ের উপর লুটিয়ে থাকা কৃষ্ণচূড়াকে আঁকড়ে ধরে মাটি সেজে উঠে কৃষ্ণচূড়া ফুলে।
আমিও চাই তোকে কৃষ্ণচূড়ার রাঙা লাল রঙে সসজ্জিত দেখতে। তোর জন্য এই বক্সটায় আমার তরফ থেকে ছোট্ট একটা উপহার। প্রত্যাশা রাখছি আজ সন্ধ্যা ঠিক ছয়টায় রেডি থাকবি। কিন্তু শর্ত একটাই পাঁচটার আগে বক্সটা খুলতে পারবি না। খুলবি না কিন্তু? খুললে কিন্তু আমি পাঁচ তলার ছাঁদ থেকে একবার নিচে তাকিয়ে আবারও রুমে চলে আসবো হুহহহ। ”

অভ্রর লেখা চিরকুটটার শেষাংশ পড়ে বর্ষার মুখে হাসির ঢল নামে। পুরো পুরে হাসির শব্দ। হাসতে হাসতে গাল ব্যাথা হয়ে যায় তবুও হাসতে লাগল। বক্সটাকে জড়িয়ে ধরে বিছানার উপর শুয়ে পরে বর্ষা। ভাবান্তর হয়ে বলে উঠে, “ কি আছে তোর মধ্যে হুহহ? দেখার জন্য যে আমার তোড় সইছে না। আল্লাহ কখন বাজবে পাঁচটা? ”

কিছুক্ষণ পর অভ্রর দেওয়া চিরকুট ও সেই চিঠিবাজের দেওয়া চিরকুট দুইটা ভালো করে মিলিয়ে দেখছে কিন্তু দুইটা মিলছে না। দুইরকম লেখা ভারী দীর্ঘ শ্বাস ত্যাগ করে নির্মলকন্ঠে বলল, “ চিঠিবাজ অভ্র ভাইয়া না। ”

আজ তার জন্মদিন কিন্তু তার বন্ধু বান্ধবী একটাও কল করে উইশ করল না। মিনিটের মধ্যে উদাস হয়ে গেলো। বিছানার উপর পা গুটিয়ে বসে রয়। তখনই ফোন বেজে উঠে তার। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখল আননোন নাম্বার কল রিসিভ করে কানে লাগাতে সে বলল, “ জলদি চলে আয় তারাতাড়ি সময় নেই? ”

কল কেটে তারাহুরো করে রুম থেকে হন্ন হয়ে বের হলাম। বাড়ির বাহিরে এসে কাউকে দেখতে পেলাম না। ভ্রুখানিক কুঞ্চন করে কিছুটা সামনে এগিয়ে যেতে লাগলাম তখনই সামনে লক্ষ্য করলাম, চার থেকে পাঁচটা কুত্তা ঘেউঘেউ করে দৌঁড়ে আসছে তা দেখে ভয় পেয়ে চিৎকার করলাম, “ আহহহহহহহ ”

আমার পাশে থাকা ব্যক্তি সজোরে চিৎকার দিয়ে উঠল, “আহহহহহহহ”

আমি তার চিৎকার শুনে পেছনে ঘুরে তাকিয়ে বিমূঢ় কন্ঠে প্রশ্ন ছুঁড়লাম, “ আপনি চিৎকার করলেন কেন? ”

সে বলল, “ তুমি চিৎকার করেছে তাই ”

আমি চোখজোড়া পিটপিট করে তাকিয়ে শাণিতকন্ঠে বলে উঠি, “ আমি তো ভয় পেয়ে চিৎকার করেছি ”

সে বলল, “ আমিও তোমার চিৎকার শুনে ভয় পেয়ে চিৎকার করেছি ”

আমি কর্কশকন্ঠে চেচিয়ে বললাম,“ কি বললেন? ”

সে অস্ফুটস্বরে বলল, “ কোই আমি কিছু বলিনি তো? ”

পেছন থেকে কারো চিৎকার শুনে ঘাবড়ে পেছনে তাকালাম, সবগুলো একসাথে চেঁচিয়ে বলল,
“ হ্যাপি বার্থডে বর্ষা আমাদের অন্তর আত্মা ”

মাহিরা, আহিতা, রিয়া, রিমা, বৃষ্টি, নিঝুম, নিভ, মুরাদ সকলকে দেখে হেসে ফেললাম। চোখের কার্নিশ বেয়ে একফোঁটা অশ্রু কণা গড়িয়ে পরল। কোই? আমি ভাবছিলাম ওরা ভুলে গেছে আমার বার্থডে কিন্তু না ওরা ভুলেনি। সারপ্রাইজ দিবে বলে চুপ ছিল। সবাই এসে আমাকে জড়িয়ে ধরল। দূরে দাঁড়িয়ে রইল নিভ ও মুরাদ।

মুরাদ আহ্লাদী স্বরে নিভকে উদ্দেশ্য করে বলল, “ আয় দোস্ত আমি তোকে জড়াই ধরি। মাইয়া গুলারে দেইখা এহন আমার মনেও জড়াই ধরার শখ জাগছে। ”

নিভ তেজি কন্ঠে বলল, “ সর শালা! তোর আহিতাকে গিয়া জড়াই ধর। আমারে কি তোর গার্লফ্রেন্ড পাইছোস নাকি? ”

মুরাদ ফ্যালফ্যাল নয়নে তাকিয়ে বলল, “ তুই আমারে এমনে কইতে পারলি দোস্ত? ”

বর্ষা পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তির দিকে তাকিয়ে শাণিতকন্ঠে বলে উঠল, “ আপনি কি বার্থডে উইশ করবেন নাকি আপনার জন্য চেয়ার টেবিল আনতে হবে? ”

দাঁড়িয়ে থাকা আদ্রিক সশব্দে হেসে উঠল, বাকিরা ও তালে তাল মিলিয়ে হেসে উঠল।
________
পাঁচ টা বাজতে এখনও পাঁচ মিনিট বাকি বর্ষা বক্সটা সামনে নিয়ে বিছানার উপর বসে আছে। বারবার মোবাইলের মধ্যে সময় দেখে চলেছে কখন যে বাজবে পাঁচটা? শেষের পাঁচ মিনিট জেনো শেষই হচ্ছে না। দীর্ঘ অপেক্ষার পর মেবাইলে এলার্ম-ঘড়ি বাজলো। বর্ষা পাঁচটার এলার্ম দিয়ে রেখেছিল। যাতে করে পাঁচটা বাজার সঙ্গে সঙ্গে বক্স খুলতে পারে এক সেকেন্ড সময়ও সে ব্যয় করতে চায় না। সকাল থেকে অপেক্ষা করছে বক্সটা খুলার। অবশেষে সে ঘড়ি এসেই গেলো। ১০ ইঞ্চি হবে বক্সটার লম্বা সাইজ। কোলের উপর রেখে বক্সের গা থেকে রেপিং পেপার খুলতে লাগল বর্ষা।

চলবে?

(কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here