মন প্রাঙ্গনে এলে যখন পর্ব ৭

0
171

#মন_প্রাঙ্গনে_এলে_যখন
#লেখনীতেঃ #আলফি_শাহরিন_অর্পা
#পর্ব_৭

আজ অনেক দিন যাবত পরশির মনে হচ্ছে কেউ তাকে ফলো করছে। এইতো দুই দিন আগে সে তার স্কুল ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে বের হয় তখন ওর মনে হচ্ছিলো কেউ তাকে ফলো করছে।
আবার কয়েকদিন যাবত পরশিকে কেউ আননোন নাম্বার দিয়ে ফোন করছে কিন্তু ফোন ধরলে কথা বলে না। সে হ্যালো হ্যালো করতে থাকে তাও কোনো উত্তর অপর প্রান্ত থেকে আসে না। প্রথম প্রথম বিষয়গুলো স্বাভাবিক লাগলেও এখন এইসব কিছু তার কাছে অস্বাভাবিক লাগছে। মনে হচ্ছে কেউ তাকে বিরক্ত করার জন্য ইচ্ছে করে এসব করছে। আজ সকাল থেকে সেই নাম্বার থেকে তিনবার ফোন এসেছে কিন্তু পরশি ইচ্ছে করে আজ ফোন ধরেনি।

হঠাৎ গুলির শব্দে চমকে উঠেছিলো স্নিগ্ধা। কিছু সময়ের জন্য হাত-পা অসার হয়ে গিয়েছিলো কিন্তু পরক্ষণেই তার বোধ শক্তি ফিরে আসলো। এখানে গুলিকে চালাবে সে মনে হয় কানে বেশি শুনছিলো এই বলে মাথায় একটা চাটি মারলো। অতঃপর আবার ফুলগুলো তুললো আর একটা ফুল তার কানে গুঁজে নিলো। তখন আবার শব্দ হলো কিন্তু শব্দটা গুলির না, ভাংচুরের ছিলো। সে খেয়াল করে শুনে দেখলো শব্দ গুলো বাড়ির পিছনের দিক থেকে আসছে। তাই সে আল্লাহর নাম নিয়ে শব্দগুলোর উৎসের দিকে এগিয়ে গেলো। সে যত এগোচ্ছে শব্দ গুলো আরও প্রখর হচ্ছে। বাড়ির পিছনের দিকে পৌঁছে হঠাৎ সে চমকে গেলো কেননা বাড়ির পিছনে কতগুলো লোক মিলে একটা লোককে খুব নির্মমভাবে মারছে। লোকটির নাক ও মুখ দিয়ে রক্ত পড়ছে, দু চোখ লাল হয়ে গেছে। হাত-পা দেখে মনে হচ্ছে ভেঙে গেছে কিন্তু তাতে লোকগুলোর কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। তারা তাদের মতো কাজ করেই যাচ্ছে। কিন্তু সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো সেখানে রুদ্ধ উপস্থিত। পরনে তার সাদা পাঞ্জাবি আর পাজামা, চোখে কালো চশমা, ব্যক্তিটি আরামে চেয়ারে বসে ঐ লোকটার আর্তনাদ গুলো উপভোগ করছে আর ঠোঁটে এক অদ্ভুত রকমের হাসি।

–কীরে? তুই কী ভেবেছিলি আমার থেকে তুই বেঁচে পালাতে পারবি?বাঁকা হেসে কথাটি বললো রুদ্ধ। রুদ্ধের এমন হাস্যময় কণ্ঠ শুনে লোকটি ভয়ে কাঁপতে লাগলো। অতঃপর রুদ্ধ আবার বললো।
–আমার খেয়ে আমার পড়ে শেষে কিনা আমায় ছোবল মারলি। এত গুরুত্বপূর্ণ একটা ফাইল শত্রুপক্ষকে দিয়ে দিলি? তুই কী জানতিস না এই ফাইলের সাথে কত গুলো মানুষের জীবন জরিয়ে আছে? বিশ্বাসঘাতকতা করলি? এই বলে রুদ্ধ হকি স্টিক দিয়ে লোকটাকে ইচ্ছা মত পিটাতে থাকলো। অতঃপর আবার বললো-
–বিশ্বাস ঘাতকদের কোনো মাফ নেই। বিশ্বাস ঘাতকদের সাথে এই রুদ্ধ মাহতাব কী করে তা কী তোর মনে ছিলো না? হুংকার দিয়ে বলে উঠলো রুদ্ধ।
–ভাই! ভাই! এবারের মত আমাকে মাফ করে দিন। আর এমন হবে না। আহত ব্যক্তিটি কাতর কণ্ঠে বলে উঠলো। কিন্তু রুদ্ধের তাতে কোনো হেলদুল নেই।
–ঠিক বলেছিস। আর হবে না কেননা তুই আর এসব করার সুযোগটাই পাবি না। এই বলে নিজের একটা লোককে চোখ দিয়ে কিছু একটা ইশারা করলো। কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পর লোকটি হাতে করে উত্তপ্ত লোহার রড নিয়ে আসলো। রুদ্ধ হাতে গ্লাভস্ পরে রডটা হাতে নিলো। এতক্ষণ এসব কিছু দূর থেকে লক্ষ করছিলো স্নিগ্ধা, সে রুদ্ধ আর ঐ আহত ব্যক্তির কোনো কথোপকথন শুনেনি। রুদ্ধের হাতে রড দেখে সে যা বুঝার বুঝে গেল, তার কাছে এখন রুদ্ধকে পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যক্তি মনে হচ্ছে। তার মনে হচ্ছে রুদ্ধ লোকটির কোনো ক্ষতি করে ফেলবে। তাই সে আর নিজেকে আটকাতে পারলো না দৌড়ে গেল রুদ্ধের কাছে।

রুদ্ধ রডটা দিয়ে যখনই আহত ব্যক্তিটাকে মা*রতে যাবে তখনি স্নিগ্ধা দৌড়ে এসে রুদ্ধকে ধাক্কা মেরে দিলো ফলে রুদ্ধের হাতের রডটা ছিটকে নিচে পড়ে যায় আর রুদ্ধ ও কিছুটা দূরে সরে যায়। এভাবে হঠাৎ কেউ এসে ধাক্কা মারার ফলে রুদ্ধের যা রাগ লোকটার উপর ছিলো তা তিরতির করে আরও বেড়ে যায়। রুদ্ধ মাথা ঘুরিয়ে তাকলো কে তাকে ধাক্কা দিলো তা দেখার উদ্দেশ্য। সামনের ব্যক্তিকে দেখে রুদ্ধ রাগ কয়েকশত গুণ বেড়ে গেল কেননা যে রুদ্ধের কাছে আসতেও মানুষ ভয় পায় তাকে এই পিচ্চি মেয়েটা ধাক্কা দিয়েছে। এর আগেও এমন দুঃসাহসিক কাজ করেছিল আমার উপর ছু*ড়ি তাক করে আজ আবার সেই একই কাজ করেছে মেয়েটি।

–তোমার সাহস কী করে হলো মেয়ে আমাকে রুদ্ধ মাহতাবকে ধাক্কা দেওয়ার? গম্ভীর কণ্ঠে হুংকারের সাথে কথা গুলো বললো রুদ্ধ। রুদ্ধের এমন ভয়াবহ কণ্ঠ শুনে স্নিগ্ধার প্রাণ যায় যায় অবস্থা।
–আমি..মানে…আপনি…
–কী ছাগলের মত ম্যা ম্যা করছো কতক্ষণ ধরে। তোমার কাছে সময়ের মূল্য না থাকতে পারে কিন্তু আমার কাছে আছে। যা বলার সোজাসুজি বলো মেয়ে নাহলে তোমার অবস্থা ও এই লোকটার মত হবে। মাটিতে কাতরানো আহত ব্যক্তিটির দিকে হাত দিয়ে ইশারা করে বললো মেয়েটি। স্নিগ্ধা এবার নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে বললো-
–আ..পনি কেনো লোকটাকে এভাবে মারছেন? লোকটার অবস্থা দেখেছেন? একে.. দেখে মনে হচ্ছে কেউ তাকে খুব নির্মম…ভাবে পিটিয়েছে। আপনার মধ্যে কী মায়া… বলতে কিছুই নেই। ভয়ে ভয়ে কথাগুলো বললো স্নিগ্ধা। স্নিগ্ধার কথা গুলো শুনে হো হো করে হেসে দিলো রুদ্ধ, তাকে দেখে মনে হচ্ছে কেউ তাকে জোক শুনালো।
–তুমি বলছো এই কথাগুলো? সিরিয়াসলি! যে মেয়ে নিজেকে বাঁচানোর জন্য চেনা নেই জানা নেই হুট করে কারো ওপর ছু*ড়ি তাক করে সে মেয়ে আমাকে নির্ম*মতা শিখাচ্ছে। সরি আমার বলতে ভুল হয়েছে কথাটা এরকম হবে যে মেয়ে কোনো ব্যক্তিকে না চেনা সত্ত্বেও তার উপর ছু*ড়ি দিয়ে আ*ঘাত করে সেই মেয়ে আমাকে নির্ম*মতা শিখাবে। সেখানে আমার কোনো দোষ ছিলো কি না তা তুমি বিচার করোনি, সোজা আমার উপর হা*মলা করেছে। আর আমি তোহ জানি এই শু*য়ো*রের বা*চ্চা আমার কত বড় ক্ষতি করেছে তাকে আমি কীভাবে ছেড়ে দিব। রুদ্ধের এইটুকু কথা শুনে স্নিগ্ধা শান্ত হয়ে যায়। সে আর কী বলবে? মানুষ যখন বিপদে পড়ে তখন কতটা হিংস্র হয়ে পড়ে তার উদাহরণ সে নিজে।
–মেয়ে! তুমি তোমার ক্ষতি করা ব্যক্তিকে করুণা করে ছাড়তে পারো কিন্তু এতে তোমার কখনো লাভ হবে না বরং ক্ষতি হবে। যে একবার বিশ্বাসঘাত করতে পারে সে পরেরবার করতেও ভাববে না। তুমি মনে করছো ওকে শাস্তি দিয়ে আমি মজা পাচ্ছি। উহু!! ওর শাস্তি এখানে উপস্থিত সবার জন্য একটা শিক্ষা যাতে এদের মন-মস্তিষ্কে এটা গেঁথে যায় রুদ্ধ মাহতাবের সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করার ফল কী? একটা বিশ্বাস ঘাতক সব সময়ই বিশ্বাস ঘাতক থাকে। এই বলে রুদ্ধ রডটা উঠিয়ে আহত ব্যক্তিটির চোখে ঢুকিয়ে দিলো। স্নিগ্ধা এই দৃশ্য দেখে চিৎকার করে উঠলো। কিন্তু কেউ এসে তাকে পরম আবেশে জরিয়ে ধরলো।

চলবে….

বিঃদ্রঃ আপনারা যারা পেজ লাইক ও ফলো করেননি তারা দয়া করে লাইক ও ফলো করে দিন যদি আমার গল্প আপনাদের ভালো লেগে থাকে। ধন্যবাদ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here