মন প্রাঙ্গনে এলে যখন পর্ব ১১

0
374

#মন_প্রাঙ্গনে_এলে_যখন
#লেখনীতেঃ #আলফি_শাহরিন_অর্পা
#পর্ব_১১

জানালার সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে পরশি দৃষ্টি তার নিবদ্ধ দূর আকাশে উপস্থিত চাঁদের দিকে। এই নিস্তব্ধ রাতে চাঁদের দিকে তাকিয়ে থাকতে তার কেনো জানি খুব ভালো লাগছে কেননা চাঁদও তার মত সঙ্গী হীন। হঠাৎ করে চোখ দিয়ে পানি ঝড়ে পড়লো। আর মনে পড়ে গেল সেই নিষ্ঠুর অতীতের কিছু স্মৃতি।

~অতীত~

বাগানে ছক কেটে মেয়ে সার্ভেন্টদের কুতকুত খেলছে পরশি। গায়ে একটা লাল-কালো মিশ্র রঙের একটি থ্রী-পিচ কিন্তু ওরনাটা কালো রঙের। কালো রঙা ওরনাটি শরীরে সাথে পেঁচিয়ে কোমরের সাথে বাঁধা। আর ঠোঁটে এক অমায়িক হাসি যা যে কাউকে ঘায়েল করতে পারবে।
হঠাৎ খেলতে খেলতে পরশির ব্যালেন্স বিগড়ে গেলো। সে পড়ে যাবে তাই ভয়ে চোখ-মুখ বুজে ফেললো। কিন্তু সে যদি পড়ে গেছে তাহলে ব্যাথা কেনো পেলো না। পরশি তাই ধীমে ধীমে চোখ খুললো।

আজ জয় প্রথমবারের মত নিজের বন্ধু রুদ্ধের বাসায় এসেছে। এর আগে কখনো রুদ্ধ তার কোনো বন্ধুকে নিজের বাসায় আনেনি কেননা তার রাজনীতি করার কারণে তার শত্রুর অভাব নেই। কে কখন পিঠে ছু*ড়ি ঢুকিয়ে দিবে সে তা বলতে পারবে না। তাছাড়া বাসায় তার একটা বোন আছে সে যত লোকচক্ষুর আড়ালে থাকবে তত ভালো। কিন্তু জয় খুব অল্প সময়ে তার বিশ্বাসযোগ্য মানুষদের খাতায় নাম লিখিয়েছে। তাছাড়া জয় ছেলে হিসেবে খুব ভালো।

জয় গাড়ি থেকে নেমে বাসার দিকে যাচ্ছিল তখনই কারো খিলখিল হাসি শুনে থমকে গেলো। শব্দ বাড়ির সাইড থেকে আসছে তাই সে কৌতূহল দমাতে না পেরে সে দেখতে গেলো এই হাসির ঝংকারটা কার। জয় সেখানে যেয়ে দেখলো একটা মেয়ে বাগানে মনের আনন্দে খেলছে। নেহাৎ বাচ্চা একটা মেয়ে কিন্তু পোশাক একদম বড়দের মত। জয়ের কী জানি কি হলো সেও মেয়েটির খেলা দেখতে লাগলো। হঠাৎ করে মেয়েটির ব্যালেন্স বিগড়ে গেল। মেয়েটি পড়ে যাবে তাই জয় দেড়ি না করে দৌড়ে গেলো মেয়েটিকে ধরতে।

পরশি চোখ খুলে দেখলো তার সামনে এক সুদর্শন যুবক দাঁড়িয়ে আছে। সে হা করে তার দিকে তাকিয়ে আছে। জয়ও এক ধ্যানে পরশির দিকে আছে। এই বাচ্চা মেয়ের চেহারা ভরপুর মায়া দিয়ে ভরা।

–কী হচ্ছে এখানে? হঠাৎ পুরুষালি কণ্ঠ শুনে জয় আর পরশি একে অপরের থেকে ছিটকে সরে এসে পড়লো, তারা তাকিয়ে দেখলো রুদ্ধ।
–ভাই! কিছু হয়নি। আমি খেলতে যেয়ে আমার ব্যালেন্স হারিয়ে ফেলেছিলাম তখন উনি এসে আমাকে বাঁচালো। রুদ্ধ পরশির কথা শুনে উত্তেজিত হয়ে পড়লো।
–বোন! তুই ঠিক আছিস তো? কোথাও ব্যাথা লাগেনি তো? রুদ্ধ পরশির কাছে এসে হাঁটু গেড়ে বসে পরশির হাত-পা চেক করে উত্তেজিত কণ্ঠে কথাগুলো বললো রুদ্ধ।
–না ভাই! আমি একদম ঠিক আছি। আমি পড়ে যাওয়ার আগে ইনি আমাকে বাঁচিয়ে ফেলেছে। এতক্ষণ পরশি আর রুদ্ধের দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো জয়। ওদের একে অপরের প্রতি ভালোবাসা দেখে ওর নিজের ছোটবোনের কথা মনে এসে পড়লো। রুদ্ধ এতক্ষণ জয়কে খেয়াল করেনি কিন্তু পরশির কথা শুনে জয়কে দিকে তাকালো। জয়কে দেখে রুদ্ধের মুখে হাসি ফুটে উঠলো সে যেয়ে জড়িয়ে ধরলো জয়কে।
–থাংকস ইয়ার! তুই আমার অনেক বড় উপকার করলি। বোন একটু আঘাত পেলেও আমি তা সহ্য করতে পারতাম না।
–দূর মিয়া! বন্ধুদের মধ্যে এই সরি-থাংকস কবের থেকে আসলো। এসব কথা বাদ দে৷ আর সারাক্ষণ কী এখানে দাড় করিয়ে রাখবি ভিতরে নিবি না?
–ওফ! টেনশনে মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। হ্যাঁ চল! ভিতরে চল। এই বলে জয় আর রুদ্ধ ভিতরে চলে গেল। আর পরশি হা করে এতক্ষণ ওর ভাই আর জয়ের কথা শুনছিলো। তাদের কথোপকথন থেকে এইটুকু বুঝে গেছে তারা দু’জন খুব ভালো বন্ধু। কিন্তু কেনো জানি সে জয়ের প্রতি একটা টান অনুভব করছে। ছোটবেলায় দিম্মা যখন কাহিনী বলতে কীভাবে সাদা ঘোড়ায় চড়ে একটা রাজকুমার আসতো রাজকুমারীর জন্য এবং তার সাথে নিয়ে যেত, তখন সেও মনে করত তার জন্যও একটা রাজকুমার আসবে। জয়কে দেখে তার কল্পনার রাজকুমারের কথা মনে পড়ে গেল। আর মনটা আনন্দে নেচে উঠলো। অবশেষে সে তার রাজকুমার পেয়ে গেছে।

সময় পেরিয়ে যাচ্ছে নিজ গতিতে। মানুষ ও কারো জন্য থেমে থাকতে পারে না, তাদেরও সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হয়ে হোক সেটা দেড়ি করে। সময়ের সাথে সাথে রুদ্ধ আর জয়ের বন্ধুত্ব আরো বেশি গাঢ় হয়ে গেলো। সেই সাথে জয়ের আসা-যাওয়া বেড়ে গেল রুদ্ধের বাসায়। পরশির ছোট্ট মনেটাও জয়কে নিয়ে হাজার স্বপ্ন বোনা শুরু করে দিয়েছে। জয় বাড়িতে আসলে সে চুপিচুপি জয়ের দিকে তাকিয়ে থাকত। নানান বাহানা দিয়ে তার আশেপাশে যাওয়ার চেষ্টা করত। জয় তার সাথে কথা বললে তার মনেও বসন্তের মতো নতুন ফুল জন্মাতো। ভালোবাসার ফুল। এইভাবে দিন পেরচ্ছে আর পরশিও জয়ের সাথে ফ্রি হয়ে যাচ্ছে। সব ঠিক ছিলো যতদিন পর্যন্ত না সে তাদের জীবনে আসলো আর পরশির ভালোবাসার ফুলও ঝড়ে পড়লো।

~বর্তমান~

–না আমি এখন আর এইসব নিয়ে ভাববো না। যে একবার ছেড়ে চলে যেতে পারে সে দ্বিতীয় বার ছেড়ে যাবে না তার কী গ্যারান্টি। বিরবির করে কথাগুলো বলে চোখের জল মুছে ফেলো।

________________________

স্নিগ্ধা দাড়িয়ে আছে রুদ্ধের রুমের সামনে। রুদ্ধ তাকে ডেকে পাঠিয়েছে কিন্তু কেনো তা বলেনি। কালকে রুদ্ধ যা করেছে তারপর থেকে রুদ্ধের সামনে যেতে তার প্রচণ্ড ভয় করে। এই কয়দিনে এইটুকু জেনে গেছে লোকটা এবং লোকটার রাগ খুবই ভয়ংকর।

–দরজার সামনে দাড়িয়ে থাকবে নাকি ভিতরেও আসবে? হঠাৎ রুদ্ধের কণ্ঠ শুনে স্নিগ্ধা চমকে গেলো। বেশি কিছু না ভেবে তড়িঘড়ি করে রুমের ভিতরে ঢুকে গেল স্নিগ্ধা।

রুদ্ধের সামনে জড়ো হয়ে বসে আছে স্নিগ্ধা। খানিকটা হাসফাস লাগছে ওর। রুদ্ধ কিছু বলছেনা দেখে সেই ভাবলো রুদ্ধকে জিজ্ঞেস করবে তাকে কেনো এখানে ডেকেছে। যেই ভাবা সেই কাজ। সে রুদ্ধকে কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবে তার আগেই রুদ্ধ বলে উঠলো-

–এখানে আর কতদিন থাকার ইচ্ছা আছে?রুদ্ধের প্রশ্নটা শুনে স্নিগ্ধা হতভম্ব হয়ে গেল। কী বলবে সে। তার তোহ যাওয়ার কোনো জায়গা নেই।
–আপনি তো অনেক বড় মাপের মানুষ আমাকে একটা কাজের ব্যবস্থা করে দিন,আমি এখান থেকে চলে যাবো। কিছুটা করুন স্বরে কথাটি বললো স্নিগ্ধা।
–মেয়ে! তুমি আসলেই বোকা। এত বাস্তবিকতার সম্মুখীন হয়েও তোমার মাথায় বুদ্ধি হলো না। যে কেউ পারবে তোমাকে ঠকাতে। খুব তো বললে চাকরি জোগাড় করে দিতে চলে যাবে কিন্তু এটা কী খেয়াল আছে বাহিরে হিংস্র হায়নার মত মানুষ আছে। যার কবলে একবার পড়লে তোমাকে খু*ব*লে খেতে তাদের এক মিনিট ও সময় লাগবে না। রুদ্ধের এই কথাটি শুনে স্নিগ্ধার শরীরের পশম দাঁড়িয়ে গেল। কী বলবে সে। রুদ্ধ কিছু ভুল তো বলেনি।
–কোন ক্লাস পর্যন্ত পড়ালেখা করেছ?আচমকা প্রশ্নটি করল রুদ্ধ।
–১০ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করেছি কিন্তু এসএসসি এক্সাম দিতে পারিনি।
–কেনো?
–পরীক্ষা দেওয়ার জন্য অনেক টাকা লাগত তাই আম্মা আমাকে পরীক্ষা দিতে দেয়নি।
–এখন যদি তোমাকে পড়ালেখার সুযোগ করে দেই তাহলে পড়বে?
–কিন্ত আপনি আমার জন্য এমন কেনো করবেন? আমি যখন থেকে আসছি তখন থেকে আপনার জন্য সমস্যা তৈরি করে যাচ্ছি।
–আগ্রহ থাকা ভালো কিন্তু অতি আগ্রহ ভালো নয়। কিছু জিনিস সময়ের উপর ছেড়ে দাও। সময় তোমার সব প্রশ্নের জবাব দিয়ে দিবে।
–কিন্তু আমি ফ্রিতে এসব সুযোগ সুবিধা ভোগ করব না। আমি আমার খরচ নিজে চালাতে চাই।
–ঠিক আছে! তা কীভাবে তুমি নিজের খরচ চালাবে আমিও শুনি?
–আমি আপনাদের বাসায় কাজ করে নিজের খরচ চালাবো।
–শরীরে হাড্ডি ছাড়া কিছু নাই সে আবার কাজ করবে। ক্ষানিকটা তাচ্ছিল্য স্বরে কথাটি বললো রুদ্ধ। তারপর আবার বললো-
–ঠিক আছে! এতই যখন কাজ করার শক তাহলে তোমার এই ইচ্ছে টাও পূরণ করলাম। আজ থেকে আমার সব কাজ তুমি করবে। আমিও দেখবো তুমি কত কাজ করতে পারো।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here