মন প্রাঙ্গনে এলে যখন পর্ব ৬

0
177

#মন_প্রাঙ্গনে_এলে_যখন
#লেখনীতেঃ #আলফি_শাহরিন_অর্পা
#পর্ব_৬

পরশি স্নিগ্ধার সাথে কথা বলে আনমনে সিঁড়ি দিয়ে নামছিলো। হঠাৎ সে সিঁড়িতে পা রাখতে যেয়ে সিঁড়িতে বিছানো কার্পেটের ভিতর পা ঢুকিয়ে দেয় ফলে কার্পেটের সাথে পা বেজে পড়ে যেতে নেয়। পড়ে যাওয়ার ভয়ে পরশি চোখ বন্ধ করে নিলো কিন্তু সে নিচে পড়ে নেই। তার আগেই কেউ তাকে ধরে ফেলেছে। তাই সে তাড়াতাড়ি চোখ খুললো দেখার জন্য কে তাকে বাচিয়েছে। লোকটি আর কেউ নয় জয়।

জয়কে দেখে পরশির মনে হচ্ছে পুরাতন সব স্মৃতি গুলো তার চোখের সামনে ভাসছে। তার সাথে হওয়া অবহেলা, অন্যায় এবং তার দেওয়া আঘাত গুলো মনে হচ্ছে আবার তাজা হচ্ছে। না! আর না! অনেক সহ্য করেছে সে। নিজেকে এই বলে সান্ত্বনা দিয়ে নিজেকে জয়ের কাছ থেকে আলাদা করে নিলো। আর কোনোদিকে না তাকিয়ে চলে যেতে নিলো তখনই পেছন থেকে এক কণ্ঠ তার কানে এসে ভাসলো।
–পালিয়ে যাচ্ছ? উক্ত উক্তিটি শুনে থমকে দাড়ায় পরশি। পিছনে ফিরে জয়ের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্য হাসি দেয়। অতঃপর জয়কে উদ্দেশ্য করে বলে-
–পালিয়ে তারা যায় যারা কোনো অন্যায় করে। আমি না কখনো অন্যায় করেছি আর না অন্যায়কে প্রশ্রয় দিয়েছি। তাহলে আমি কেনো পালাবো। হ্যাঁ! আমি মানছি অতীতে কিছু সময়ের জন্য অন্ধ হয়ে গেছিলাম, ঠিক-ভুল বিচারের বোধ শক্তি লোপ পেয়েছিল কিন্তু যখন সত্য যানতে পেরেছি এমন কোনো ব্যক্তি বা বস্তুকে জীবনে রাখিনি। ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছি। শান্ত কণ্ঠে কথাগুলো বললো পরশি। কথাগুলো বলে পরশি আর সেখানে এক মিনিট ও দাড়ালো না, সেখান থেকে চলে গেল। পরশির কথাগুলো শুনে হতভম্বের মতো দাঁড়িয়ে রইলো জয়। তার আর কিছু বলার ভাষা নেই। কী-ই বা বলবে সে, সে কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। দিন শেষে সব দোষ তোহ তারই।

পরশি নিজের রুমে এসে দরজাটা বন্ধ করে দিলো। দরজার সাথে হেলান দিয়ে বসে পড়লো। অতঃপর কান্না করে দিলো, যাকে বলে বোবা কান্না। এই কান্না সবার সামনে করা যায় না। নিস্তব্ধতা ভরা পরিবেশে যখন আশেপাশে অনেকে থাকলেও মনে হবে কেউ নেই তখনি এই কান্না আসে। যতই সে নিজেকে তার ভাইয়ের সামনে বা জয়ের সামনে স্ট্রং দেখাক কিন্তু সে অতো স্ট্রং নয়। সে এখনো ভুলতে পারছে না তার প্রথম প্রেমের অনুভূতি, প্রথম ভালোবাসার স্মৃতি। আর নাই ভুলতে পারছে ভালোবাসার মানুষের দেওয়া বিশ্বাসঘাতকতা,আর না প্রথম বিচ্ছেদ। যতই সে জয়কে কটুকথ শোনাক কিন্তু কিশোরী বয়সের প্রথম ভালোবাসা/ভালোলাগা কী ভোলা যায়?

এরইমধ্যে কেটে যায় তিনদিন। সময় কারো জন্য থেমে থাকে না। সে চলতে থাকে নিজ গতিতে। আজ অনেক দিন পর স্নিগ্ধা রুম থেকে বের হলো। রুমে বন্দী থাকতে তার আর ভালো লাগছে না। কে-ই বা চাবে একটা বদ্ধ ঘরে নিজেকে আবদ্ধ রাখতে। তাই সে পরশির কথা শুনলো সকল ইতস্ততাকে বিসর্জন দিয়ে সে এসেছে এই মহলের মত বাড়িটি ঘুরতে। বাড়িটি ঘুরতে তার এতটা ভালো লাগলো না কেননা আসবাবপত্র দেখতে কার বা ভালো লাগবে। আসবাবপত্র গুলো যথেষ্ট আধুনিক তাই এর সম্পর্কে ওর ওতোটা ধারণা নেই। হঠাৎ ওর মনে পড়লো পরশি ওকে বলেছিলো তাদের বাড়িতে একটা সুন্দর বাগান আছে সে চাইলে সেখানে যেতে পারে, তাই সে আর দেরি না করে বাগানের উদ্দেশ্য রওনা দিলো।

বাগানে এসে স্নিগ্ধার মন-মেজাজ ফুরফুরে হয়ে গেল। বাগানে হরেক রকম ফুল দিয়ে সাজানো। এর মধ্যে কিছু ফুল তার চিনা আর কিছু সে কখনো দেখেনি। কিন্তু সে সবচেয়ে বেশি খুশি হলো চন্দ্রমল্লিকা গাছটি দেখে, চন্দ্রমল্লিকা তার খুবই প্রিয় একটি ফুল। কিন্তু সে কখনো এটি নিজ চোখে দেখেনি। একবার হয়ত টিভিতে দেখেছিল, দেখেই তার এই ফুলটিকে ছুঁয়ে দেওয়ার খুব ইচ্ছে হয়েছিল। তখন সে ভেবছিল বাস্তবে নাই বা ছুলাম টিভিতে হাত দিয়ে তোহ ছুঁতে পারবো তাই সে আর কোনো কিছু টিভিতে হাত লাগিয়ে দিলো। তখনই কোথা থেকে তার মা এসে তাকে মারতে শুরু করলো আর বললো-
— জীবনে তোহ মনে হয় টিভি দেখোস নাই আর না এর ব্যবহার কেমনে করতে হয় তা জানোস। না জাইনা না বুইঝা কোন সাহসে তোর নোংরা হাত টিভির স্ক্রিনে লাগাস। স্ক্রিন নষ্ট হলে কী এর টাকা তোর মরা বাপ আইসা দিয়া যাইবো। এসব কথা শুনে নিজেকে তখন আর ঠিক রাখতে পারি না, জোরে জোরে কান্না করে দিছিলাম। অতীতের কথা ভেবে এখনো চোখ দিয়ে পানি ঝড়ছে। তাড়াতাড়ি হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে ফেললো কেননা সে তারঅতীত পিছনে ফেলে এসেছে। সে তার অতীত মনে করবে না আর না অতীতের ঘৃণিত স্মৃতি গুলো। তাই এসব না ভেবে সে যায় চন্দ্রমল্লিকা গাছের দিকে। নিজের প্রিয় ফুলগুলো সামনে থেকে দেখে স্নিগ্ধা লোভ সামলাতে পারলো না,কয়টা ছিঁড়ে ফেললো। তখনি দূর কোথা থেকে ভেসে আসলো গুলির শব্দ, শব্দটি শুনে হাতে থাকা ফুলগুলো নিচে পড়ে গেলো। ভয়ে থরথর কাঁপতে লাগলো সে।

আজ তিন দিন পর স্কুলে এসেছে জয়া। এতদিন ভয়ে স্কুলে আসতে পারেনি। আজ মা জোর করে ঠেলে ঠুলে স্কুলে পাঠিয়েছে। কত করে বললাম যাবো না তাও মাদার বাংলাদেশ কথা শুনলো না। এটা ভেবে মুখ গোমরা করে বসে আছে জয়া। তখনি জয়ার গোমরা মুখ দেখে ওর বেস্ট ফ্রেন্ড রুশমি ওর কাছে আসলো।
–কীরে জয়া! তোর কী হয়েছে? এমন গোমরা মুখ করে কেন বসে আছিস? রুশমির এই কথা শুনে জয়া রুশমির দিকে করুণ চোখে ঠোঁট উল্টে তাকালো একদম বাচ্চাদের মত। রুশমি জয়ার এমন অবস্থা দেখে ভ্রু কুঁচকে ফেললো। অতঃপর জয়া ওর আর আহনাফের সাথে হওয়া ঘটনা থুক্কু দূর্ঘটনার ব্যাপারে সব বলে দিলো আর জয়া নিজে স্যারের সাথে কী করেছে তাও বললো। রুশমি জয়ার এসব কথা শুনে ফিক করে হেঁসে দিলো।
–দোস্ত! আমি এখানে টেনশনে মরতাসি আর তুই হাসছিস? তুই আমার বন্ধু নাকি শত্রু? অত্যন্ত করুণ কণ্ঠে প্রশ্নটি করলো জয়া। জয়ার প্রশ্ন শুনে রুশমি হাসি থামিয়ে দিলো। জয়ার পাশে এসে বসলো।
–দোস্ত! তুই তোহ গেছিস। স্যারকে যখন প্রথম দেখেছিলাম সেই লেভেলের ক্রাশ খাইসিলাম, ভেবেছিলাম আমার বাবুর আব্বু তাকে বানাবো। কিন্তু আমার ক্রাশ যে বাঁশ হয়ে যাবে জানতাম না। ওনার চেয়ে টাক্কু স্যারটা ভালোই ছিলো। এটলিস্ট পড়া না পারলে খালি ঝাড়তো কিন্তু উনি ডাইরেক্ট ইনসাল্ট করে। রুশমির কথাগুলো মন দিয়ে শুনছিলো জয়া। তারা কথা বলায় এত বিভোর ছিলো যে তারা দেখেনি আহনাফ ক্লাসে প্রবেশ করেছে আর ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। শুধু আহনাফ কেনো ক্লাসের প্রায় সবার মধ্যমণি হয়ে আছে রুশমি আর জয়া। তখনি একটা চক এসে জয়ার মাথায় লাগলো।
–কোন টিকটিকির লেজরে! আজ তোর একদিন কী আমার একদিন। আমাকে মারার সাহস কার হয়েছে? এমনিতে জয়া বিরক্ত + টেনশনে ছিলো তার মধ্যে কেউ ওর উপর চক ফেলে তাকে মহাবিরক্ত করে দিয়েছে। তাই সে কোনো কিছুর দিকে না তাকিয়ে বলে দিলো।
–আমার। এই শব্দটি শুনে জয়া মাথাটা উপরের দিকে উঠালো, সামনের মানুষটিকে দেখে তার আত্মা বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম। কেননা মানুষটি আর কেউ না আহনাফ।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here