মন প্রাঙ্গনে এলে যখন পর্ব ১০

0
173

#মন_প্রাঙ্গনে_এলে_যখন
#লেখনীতেঃ #আলফি_শাহরিন_অর্পা
#পর্ব_১০

জয়া খুশিমনে আর আইসক্রিম খাচ্ছে। আজ আচ্ছা মজা দেখিয়েছে ঐ আহনফকে। আমার সঙ্গে পাঙ্গা এখন হারে হারে টের পাবে মিস আহনাফ শেখ। এসব ভাবছে আর মিটিমিটি হাসছে জয়া। তখনই জয়ার মা মিসেস সেলিনা চৌধুরী জয়ার রুমে প্রবেশ করলো। এসেই দেখলো তার মেয়ে আইসক্রিমের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে আর আশেপাশে তাকিয়ে দেখলেন ঘরের অবস্থা একদম নাজেহাল। কাপড়-চোপড় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে রুমে। একটা মেয়ে এতটা অগোছালো হয় কীভাবে তাই ভাবছেন তিনি।

–এই নবাবজাদী ! রুমের কী অবস্থা করে রাখেছিস? মায়ের এমন রাগান্বিত কণ্ঠ শুনে ধ্যানক ভাঙে জয়ার। এইসময় জয়া তার মাকে দেখার আশা করেনি। একবার মাকে দেখছে আরেকবার নিজের রুমকে আর মনে মনে ভাবছে ‘তুই তোহ আজ গেলিরে জয়া। আজ মা তোকে আস্ত রাখবে না।’ ভয়ে ভয়ে কয়টা ঢোক গিলে বললো-
–ম..মা! তুমি, এইসময়ে? আমি রুম পরিষ্কার করতে যাচ্ছিলাম কিন্তু তার আগেই তুমি এসে পড়লে। মেকি হাসি দিয়ে কথাটি বললো জয়া।
–আমি তোর মা তুই আমার মা না। আমি জানি তুই কতটা পরিষ্কার করতি।
–এমন করে বলছো কেনো মা প্রতিদিন তোহ আমি আমার রুম পরিষ্কার করি। ইনোসেন্ট মার্কা ফেস করে কথাটি বললো জয়া।
–ওমা!তাই নাকি। কিন্তু আমি তোহ জানি জুই এসে
তোর রুম প্রতিদিন পরিষ্কার করে দিয়ে যায়। ‘এইরে চুরি ধরা পরে গেল’ বিরবির করে কথাটি বললো জয়া। তারপর আবার মাকে বললো-
–মা! জুইতো মাঝে মাঝে পরিষ্কার করে দিয়ে যায়। বাকি সময় আমিই করি।
–থাক! আর মিথ্যা বলতে হবে না। তাড়াতাড়ি ঘর গুছিয়ে নিচে খেতে আয়। এই বলে জয়ার মা চলে গেলেন।
–যাক বাবা! বাঁচা গেলো। বুকে হাত দিয়ে কথাটি বললো জয়া।

_______________________

স্নিগ্ধা নিজের রুমে বিছানার উপর জড়সড় হয়ে বসে আছে। এখনো তার মাথায় ঐ ঘটনাটা ঘুরপাক খাচ্ছে। নিজেকে এখন দুনিয়ার সবচেয়ে বড় অসহায় মনে হচ্ছে। ধুরো মনে হবে কী সে তো আসলেই অসহায়। তখনি কেউ তার কাঁধে হাত রাখলো স্নিগ্ধা হকচকিয়ে গেলো, তাকিয়ে দেখলো পরশি।

–আমি জানি স্নিগ্ধা তুমি ভয় পাচ্ছ যদি ভাইয়া যা বলেছে তা সত্যি করে। কিন্তু তুমি একদমই চিন্তা করো না ভাই এমন কিছুই করবে না। স্নিগ্ধার পাশে বসে কথাগুলো বললো পরশি। স্নিগ্ধা পরশির দিকে করু চোখে তাকালো। নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলো না পরশিকে জরিয়ে হুহ্ হুহ করে কেঁদে দিলো। আজ সে খুবই ভয় পেয়ে গেছিলো। রুদ্ধের সেই ভয়ংকর কথাগুলো মনে আসতেই তার পুরো শরীর কেঁপে উঠছে।
–স্নিগ্ধা তুমি ভাইকে যতটা খারাপ মনে করছো ভাই ততটা খারাপ নয়। ভাইয়ের মধ্যে মায়াদয়া আছে। কিন্তু রাজনীতি এমন একটা জায়গা যেখানে নিজেকে টিকে রাখতে এমন অনেক কাজ করতে হয়।

পরশি স্নিগ্ধাকে ঘুম পারিয়ে রুম থেকে বের হচ্ছে। ঠিক ঘুম পারিয়ে দিয়েছে বললে ভুল হবে মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে গেছে। দরজা ভিরিয়ে সে সোজা গেলো রুদ্ধের রুমের দিকে।

–ভাই!ভাই!
–কী হয়েছে বোনু? এভাবে চিৎকার করছিস কেনো?
–ভাই!তোর মেয়েটাকে ভয় দেখানো একদম উচিত হয়নি। মেয়েটা প্রচুর কাঁপছিল। আমার মনে হয় না মেয়েটা তাড়াতাড়ি এই শক থেকে বের হতে পারবে। কিছুটা রাগান্বিত কণ্ঠে বললো পরশি।
–এই তো কিছুই না বোন এর চেয়েও বেশি কিছু সয্য। যেহেতু মেয়েটা এখন থেকে আমাদের বাড়িতে থাকবে তাহলে এসব কিছু সয্য করার ক্ষমতাও থাকতে হবে কেননা এসব ঘটনা এই বাড়িতে অহরহ ঘটে।
–কিন্তু ভাই ও এমনি একটা ট্রমার মধ্যে ছিলো আজ আবার নতুন করে একটা মানসিক ধাক্কা পেলো এভাবে তো ওর মানসিক অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে। মেয়েটা মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পরবে।
–বোনু তোর মনে আছে যখন তুই প্রথম আমাকে মারামারি করতে দেখেছিলি?
–হ্যাঁ ভাই! কিন্তু এখন এখানে এই বিষয়ে টানার মানে কী?
–তোর বয়স তখন ছিলো ১৪। আমাকে মারামারি করতে দেখার পর আমার সাথে কথা বলতি না একদম নিজেকে ভয়ে গুটিয়ে ফেলতি আমার থেকে সবসময় দূরত্ব বজায় রাখতি। এক কথায় আমাকে প্রচণ্ড ভয় পেতি। কিন্তু আমি থামিনি। কেননা তখন রাজনীতি আমার রক্তের সাথে মিশে গিয়েছিল।
–ভাই!তুই কী বোঝাতে চাচ্ছিস?
–এটাই কী মানুষ অভ্যাসের দাস। প্রথম প্রথম নতুন কিছু করতে গেলে তাকে বিভিন্ন হয়রানির শিকার হতে হয় কিন্তু একবার যদি মানুষ সে অবস্থার সাথে ক্ষাপ খাওয়াতে পারে তাহলে তার কোনো সমস্যা হয় না। যেমন তুই আমাকে মারামারি করতে দেখতে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে গেছিলি তাই আমার সাথে মানিয়ে নিতে পেরেছিস, এভাবে ঐ মেয়েকে নিজেকে এই পরিবেশে মানাতে হবে যদি এখানে টিকে থাকতে হয় আর এ বাসায় টিকা কোনো যুদ্ধের থেকে কম নয়।

_________________________

রাতে খাবারের জন্য খাবার টেবিলের সামনে উপস্থিত হয়েছে জয়া, জয় আর মিসেস সেলিনা। জয়ার বাবা হাসান চৌধুরী বিজনেস ট্রিপের জন্য বাহিরে গেছে তাই সে সেখানে নেই।

খাবার টেবিলে সবাই খাচ্ছে আর জয়া খাবার নাড়াচাড়া করছে। ওর এই কান্ড দেখে মিসেস সেলিনা রেগে গেলেন।
–জয়া! তোকে কতবার বলেছি খাবার নাড়াচাড়া করবি না চুপচাপ খাবি তাও তুই এই কাজ করছিস?
–ছাড়ো না মা! ভালো লাগছেনা খেতে।
–এই একদম খাবার রেখে উঠবি না তাহলে একটা মাইরও নিচে পড়বে এই আমি বলে দিলাম। জয়ার আর কী করার চুপচাপ খেতে লাগলো। আর জয় ওদের কান্ড দেখে মিটিমিটি হাসছে।

–ভালো মত খা! দিনদিন যে পাটকাঠি হচ্ছিস কয়দিন পর তো তোকে পাওয়াই যাবে না। ফু দিলেই উড়ে যাবি। মস্করা করে কথাটি বললো জয়।জয়ের কথা শুনে জয়া রেগে গেল।
–মা! তোমার এই সুপুত্রকে বলো ভালোই ভালোই আমার থেকে ক্ষমা চাইতে নাহলে ওর মাথায় একটাও চুল থাকবে না। জয় ওর কথা শুনে হাসতে লাগলো। আর খাবার টেবিল থেকে উঠে মাকে জরিয়ে ধরে বললো –
–মা আমাকে কিছু বলবে না। মা আমাকে অনেক বেশি ভালোবাসে।

–জয়! আমাকে ছাড়। তোর এই আদিক্ষেতা আমার ভালো লাগছে না। এই বলে জয়ের হাতটা ঝাড়া দিয়ে সরিয়ে ফেললো। মায়ের কথা কানে যেতে জয়ের হুশ ফিরলো একটুর জন্য মনে হয়েছে পুরানো দিনে ফিরে গেছে। কিন্তু হঠাৎ করে আবার তার অতীত তার সামনে ধরা দিলো। একটা দোষের জন্য মা তার সাথে ২ বছর ধরে কথা বলে না। জয় তার মার এমন রূড় আচরণ মানতে পারলো না, তাই সেখান থেকে চলে গেল।

–মা! আমি বুঝি না দুই বছর আগে এমন কি হয়েছে যে তুমি আর বাবা ভাইয়ের সাথে এমন ব্যবহার করো? ভাইয়ার সাথে এমন ব্যবহার আমার মোটেও পছন্দ না।
–জয়া যে ব্যাপারে জানো না সেই ব্যাপারে কথা বলো না। আর ঠিক-ভুল বোঝার বয়স তখন তোমার না হলেও তোমার ভাইয়ের ছিলো। এই বলে মিসেস সেলিনা চলে গেলেন।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here