মন প্রাঙ্গনে এলে যখন পর্ব ৫

0
198

#মন_প্রাঙ্গনে_এলে_যখন
#লেখনীতেঃ #আলফি_শাহরিন_অর্পা
#পর্ব_৫

ক্লাসরুমের বেঞ্চে বসে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলো জয়া। তখনই ক্লাসে প্রবেশ করলো প্রিন্সিপাল স্যার। প্রিন্সিপাল স্যারকে দেখে সকলে উঠে দাড়ালো আর সালাম দিলো। স্যার সালামের জবাব দিয়ে সকলকে বসতে বললো এবং তারপর বলা শুরু করলো –
— আজ আমি তোমাদের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি কথা বলতে এসেছি। তোমাদের ম্যাথ টিচার মানে অভিষেক স্যার স্কুল থেকে তিন মাসের ছুটি নিয়েছে। এই তিন মাসে তোমাদের পড়ালেখার খুব ক্ষতি হয়ে যেত যেহেতু তোমরা এসএসসি ক্যান্ডিডেট। তাই আমি আমার খুব কাছের বন্ধুকে রিকোয়েস্ট করেছি যাতে সে তার ছেলেকে আমাদের স্কুল জয়েন করতে বলে। সে আমাদের একজন প্রাক্তন শিক্ষার্থী। কলেজ পর্যন্ত আমাদের বিদ্যালয়ে ছিলো কিন্তু পরে সে লন্ডনে চলে যায় পড়াশোনা শেষ করতে। আমি আশা করছি তোমরা তার সাথে ভালো আচরণ করবে। আমি যেন তার কাছে তোমাদের নামে কোনো বিচার না শুনি। সো লেটস্ ওয়েলকাম ইউর নিউ টিচার মিস্টার আহনাফ শেখ।

এতক্ষণ প্রিন্সিপালের কথা মন দিয়ে শুনছিলো জয়া। প্রিন্সিপালের কথা শুনে নতুন টিচারকে দেখার জন্য তার উৎসাহ কয়েকগুণ বেড়ে গেল।

সে দরজার দিকে তাকিয়ে আছে নতুন টিচারকে দেখার আশায় তখনই সাদা শার্ট আর কালো প্যান্ট পড়া এক যুবক রুমে প্রবেশ করলো। ক্লাসের প্রত্যেক মেয়ে তার দিকে হা করে তাকিয়ে ছিলো। তাদের প্রত্যেকের হৃৎপিণ্ডের গতিও যেন বেড়ে গেছিলো সে সময়ে এবং এই মেয়েদের মধ্যে জয়াও ছিলো কিন্তু পার্থক্য হলো ক্লাসের মেয়েরা ক্রাশ নামক বাঁশ খেয়েছিল আর জয়া তার সাথে করা সকালের ঘটনা মনে করে। কেননা তার সামনে আর কেউ না সকালের সে ছেলেটি দাড়িয়ে আছে। জয়া টেনশনে আঙ্গুলের নখ চিবোতে লাগলো আর তার এই পদক্ষেপ দূর থেকে কেউ দেখে বাঁকা হাসছিলো।

অপরদিকে রুদ্ধ আর জয় বসে আছে সামনাসামনি। রুদ্ধ কঠোর দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে আছে জয়ের দিকে। আর জয় ভাবছে নিজের বেস্ট ফ্রেন্ডের সামনে অকওয়ার্ড ফিল করা প্রথম মানুষ মনে হয় সে। অতঃপর নিরবতা ভেঙ্গে রুদ্ধ বললো-
–তুই হঠাৎ আমার বাড়িতে কেন এসেছিস?
–এমন ভাবে বলছিস যেনো আমি তোর বাড়িতে আসতে পারি না।
–না! তুই আমার বাড়িতে আসার অধিকার হারিয়েছিস। তোর জন্য আমার বোন অনেক কষ্ট পেয়েছে। আসলে দোষটা তোকে একারও দেওয়া চলে না কেননা যা হয়েছিল তার অর্ধেক ভাগিদার আমিও ছিলাম। না তোর করা অন্যায় জিদকে আমি প্রশ্রয় দিতাম আর না আমার বোনের মন ভাঙতাম।
–রুদ্ধ আমি জানি আমি যা করেছি তা মাফ করার একদম অযোগ্য। তাও আমাকে মাফ করে দে।
–আমি এই ব্যাপারে কোনো কথা বলতে চাই না। আমার সাথে করা অন্যায়ের জন্য আমি তোকে অনেক আগে মাফ করে দিয়েছি কিন্তু যা তুই পরশির সাথে করেছিস তার কোনো মাফ নেই। আর আমার সাথে কোনো দরকার থাকলে অফিসে এসে কথা বলবি বাড়িতে আসার কোনো দরকার নেই। এই বলে রুদ্ধ সেখান থেকে চলে গেল আর জয় তার যাওয়ার দিকে ছলছল দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো।
–ছেলেদের বুঝি কাঁদতে নেই কিন্তু তার করা একটা ভুল না ভুল না অন্যায়ের জন্য তার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু তার থেকে দূরে চলে গেল। যে মেয়ে তার একটু ভালোবাসা পাওয়ার জন্য কাতর থাকত সে মেয়েও তার সাথে একজন অজানা ব্যক্তির মত আচরণ করছে। না! আমাকে সব ঠিক করতে হবে। অতীতে করা ভুলের জন্য যা শাস্তি দিবে তা মাথা পেতে নিব তাও এবার আমার বন্ধু আর ভালোবাসাকে নিজের করেই ছাড়বো।

বিছানায় হেলান দিয়ে বসে আছে স্নিগ্ধা। জানালার দিকে তাকিয়ে আছে। ঠিক জানালার দিকে বলা যায় না, জানালার বাহিরে যে দূর আকাশ আছে ঠিক সেদিকে তাকিয়ে আছে। সেখানে পাখিরা উড়ে উড়ে হয়তো তাদের নীড়ে ফিরে যাচ্ছে। সে কখন যাবে তার নীড়ে। এটা ভেবেই স্নিগ্ধা তাচ্ছিল্য হাসলো।
–তার তোহ কোনো বাসা নেই। আর না আছে এমন কেউ যে তার বাসায় ফিরার অপেক্ষা করবে।
সে নিজেই বোঝা হয়ে পড়ে আছে অন্য লোকের বাসায় কিন্তু তা-ই বা কতদিন। একদিন না একদিন তোহ তাকে যেতে হবে। নেহাৎ তারা ভালো মানুষ তাই আমাকে ঠাই দিয়েছে। কিন্তু যখন আমি সুস্থ হয়ে যাবো তখন কোথায় যাবো। আমার তোহ যাওয়ার কোনো স্থান নেই। এই বলে হতাশার একটা নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো। তখনই দরজায় খোলার শব্দ আসলো ফলে স্নিগ্ধার দৃষ্টি ভাঙলো দরজার পানে চেয়ে দেখলো পরশি এসেছে আর তার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিলো।
–এখন তোমার শরীর কেমন আছে স্নিগ্ধা?
–আগের থেকে ভালো।
–এই নাও তোমার জন্য অনলাইন থেকে নতুন পোশাক আনিয়েছি। আমার পোশাক যে তোমার ঢিলা হয় তা আমি কাল বুঝতে পেরেছিলাম। এই বলে একটা মুচকি হাসি দিলো। স্নিগ্ধা এতক্ষণ খেয়াল করেনি পরশির হাতের শপিং ব্যাগ গুলো।

–আপু এসবের কী দরকার ছিলো? আর আমিই বা এখানে কতদিন থাকব? তুমি শুধু শুধু এত কষ্ট করতে গেলে।
–শুনো মেয়ের কথা! তোমার জায়গায় যদি আমার কোনো ছোট বোন থাকত তার জন্য ও আমি এমন করতাম। আর এত যাবো যাবো করছো কেনো? আমি জানি তোমার কেউ নেই আর যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। তাই আজ থেকে তুমি আমাদের সাথে থাকবে।
–কিন্তু…আমি কীভাবে?
–চুপ আর কোনো কথা নয়।
–কিনতু উনি কী মানবে?আমি তোহ তার উপর চাকু দিয়ে হামলা করেছি।
–উনি বলতে কী তুমি রুদ্ধ ভাইকে বুঝিয়েছ? স্নিগ্ধা মাথা নেড়ে হ্যা বললো।
–এর চিন্তা তুমি করো না। ভাইকে আমি হ্যান্ডেল করে নিবো। আর সারাক্ষণ বুড়ো মানুষের মত রুমে কেনো বসে থাকো। বাহিরে বাগান আছে, বাগানে দোলনা আছে তাছাড়া আমাদের বাড়িও খুব বড় তুমি হাঁটাহাঁটি করার জন্য প্রচুর জায়গা পাবে। এই বলে পরশি চলে গেল। আর স্নিগ্ধা ভাবছে যেখানে তার আপনজন তাকে পর করে দিয়েছে সেখানে যাদের সে চিনেও না তারা তার আপন হয়ে উঠছে। পৃথিবী প্রুচুর বিচিত্র তার চেয়ে বিচিত্র এখানে বসবাস করা মানুষ।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here