মন প্রাঙ্গনে এলে যখন পর্ব ৪

0
201

#মন_প্রাঙ্গনে_এলে_যখন
#লেখনীতেঃ #আলফি_শাহরিন_অর্পা
#পর্ব_৪

ভার্সিটিতে ভর্তির এডমিশন টেস্টের ডেট আসতে বেশি দিন নেই তাই রুমে বসে পড়ালেখা করছিলো পরশি। হঠাৎ কলিং বেলটি বেজে উঠলো। সে ভাবলো সার্ভেন্টরা দরজা খুলে দিবে কিন্তু পরক্ষণেই মনে পড়লো সার্ভেন্টদের তোহ ভাই ছুটি দিয়েছে। তাই নিজেই গেলো দরজাটা খুলতে।

বর্তমানে পরশি দাড়িয়ে আছে দরজার সামনে আর তাকে জরিয়ে ধরে আছে একটি মেয়ে। পরশির চোখে নোনাজল। সে তাকিয়ে আছে সামনের ব্যক্তিটির দিকে। তাকে দেখে তার অতীতের সৃতি গুলো খুব মনে পড়ছে, য থেকে বাঁচার জন্য সে এই শহর ছেড়ে ছিল, নিজের ভাইকে ছেড়েছিল, তার জন্য কত রাত কেঁদে বালিশ ভিজিয়েছিলো সব মনে পড়ছে তার। না!তার সামনে দূর্বল প্রকাশ যাবে না। তাই তার চোখের জল গুলো গরিয়ে পরার আগে তা মুছে ফেলতে হবে আর সে তাই করলো।

–মিষ্টি আপু! কেমন আছো তুমি? পড়ালেখা করতে যেয়ে আমাকে তোহ একদম ভুলেই গেলে। আমি কিন্তু তোমার উপর খুব রাগ করেছি। পরশিকে জরিয়ে ধরা মেয়েটি কথাগুলো বললো। পরশি ওর কথা গুলো শুনে মুচকি একটা হাসি দিলো।
–এত রাগ করা ঠিক না জয়া। রাগ মানুষকে ধ্বংস করে দেয়। আর কে বললো আমি তোকে মনে করিনি, আমি তোকে খুব মনে করেছি। কিন্তু পড়ালেখার ব্যস্ততার কারণে আর কথা হয়ে উঠতে পারেনি। আর সব কথা কী এদিকে বলবি চল ভিতরে চল।
–সরি আপু! আমি তোহ এখন থাকতে পারব না স্কুল আছে। তুমি আসছ বলি এক্সাইটমেন্ট ধরে রাখতে পারিনি তাই ভাইয়ুর সাথে জিদ দেখিয়ে
এখানে এসেছি। তুমি আবার রাগ করো না। কিছুটা গোমরা মুখ করে কথা গুলো বললো জয়া।
–ওমা! আমি রাগ করতে যাবো কেন? আমি তোহ খুব খুশি আমার পরীটা এখন কত আগ্রহ নিয়ে পড়ালেখা করছে। এক কাজ কর ছুটির পর এখানে এসে পড়িস।
–তা তুমি না বললেও আসতাম।(এই বাড়িতে যে আমার খুব প্রাণের একজন থাকে। তাকে দেখার জন্য হলেও রোজ আমি তোমার বাড়িতে আসবো। এতদিন তুমি ছিলে না তাই তার কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ পাইনি কিন্তু এখন যখন পেয়েছি আর তা ছাড়বো না।) মনে মনে কথাগুলো বললো জয়া।

–আপনি ভিতরে আসুন। ভাই স্টাডি রুমে সেখানে যেয়ে দেখা করে আসুন। এই বলে পরশি চলে গেল। আর পরশির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হতাশার নিঃশ্বাস ছাড়লো জয়। সে খুব ভালোভাবে ওর এভাবে তাড়াহুড়ো করে যাওয়ার মানে বুঝতে পারছে কিন্তু এখন তার হাতে করার মত কিচ্ছু নেই।

~পোলাও পোলারে তুই অপরাধী রে
আমার যত্নে গড়া ভালোবাসা দে ফিরাইয়া দে~

–এই মেয়ে? এদিকে আসো? তর্জনীর আঙ্গুল উঠিয়ে জয়াকে ইশারা করে ডাকলো লোকটি। হঠাৎ এমন আকস্মিক কণ্ঠ শুনে সে কিছুটা ভরকে গেলো। পাশ ফিরে দেখলো এক যুবক তাকে ডাকছে পড়নে তার সাদা শার্ট আর কালো প্যান্ট আর চোখে চশমা। ছেলেটি দেখতে মাশাল্লাহ অনেক কিউট। সে কিছুক্ষণ ভ্রু কুঁচকে ছেলেটির দিকে তাকালো তারপর এগিয়ে গেলো তার দিকে।

বর্তমানে জয়া কোমড়ে হাত ভ্রু কুঁচকে দাড়িয়ে আছে আর তার সামনে দাড়ানো লোকটি হাতের তর্জনী আঙুল দিয়ে চশমা ঠিক করছে। লোকটি কিছু বলছে না দেখেই জয়া বিরক্তি নিয়ে নিজেই বললো-
–এই আপনি আমাকে শুধু শুধু ডেকেছেন কেন?
আপনার জন্য আমার লেট হয়ে যাচ্ছে। যদি কোনো কাজই না থাকে শুধু শুধু মানুষকে হেনস্তা করার মানে কী? এসব কথা বলতে বলতে জয়ার সামনের কাটা ছোট চুল গুলো মুখে এসে পড়ল সে বিরক্তির সাথে ফু দিয়ে চুলগুলো সরালো। অপর পাশের ব্যক্তির কোনো ভাবাবেগ না দেখে সে তার হাত দিয়ে তুড়ি বাজালো।
–এই মেয়ে তোমার বয়স কত?
–এই আপনার কী কোনো কমন সেন্স নেই। চেনা নেই জানা নেই কোথা থেকে উঠে এসেছেন তাও জানি না আর আমাকে জিজ্ঞেস করছেন আমার বয়স কত? আপনি কি জানেন মেয়েদের বয়স জিজ্ঞেস করা অনেক বড় অপরাধ।
— এই মেয়ে আমাকে কমন সেন্সের লেকচার দিতে আসবে না তোমার চেয়ে তা আমার বেশিই আছে। বেয়াদব মেয়ে! তোমার যদি এতই সেন্স থাকত তাহলে বড়দের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় সেটা তুমি জানতে আর যদি এতই বড় হতে তাহলে রাস্তা দিয়ে পাগলের মত গান গেয়ে নাচতে নাচতে যেতে না। কোনো ভদ্র ঘরের মেয়েকে এসব করতে তুমি দেখেছ আমি তোহ কখনো দেখিনি তাহলে তুমি ভদ্র কীভাবে হলে।
— প্রথমে বেয়াদব তারপর পাগল আর সর্বশেষে অভদ্র এই তিনটা শব্দ শোনার পর জয়ার মাথায় রক্ত উঠে গেল। সে রাস্তার সাইড থেকে মাটি উঠিয়ে ছেলেটির উপর ছুড়ে মারলো। অতঃপর ছেলেটির সামনে যেয়ে বললো-
–আমি ভালো কী খারাপ তার সার্টিফিকেট আমি আপনার থেকে চাইনি। আমি যেমন আছি সারাজীবন তেমনই থাকব। আই হোপ ইউ আন্ডারস্ট্যান্ড। এই বলে হাত ঝাড়তে ঝাড়তে জয়া চলে গেল।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here