বেলা_শেষে_শুধু_তুমি পর্ব ১২

0
1425

বেলা_শেষে_শুধু_তুমি পর্ব ১২
#আনিশা_সাবিহা

–“মা, আমার রুমে আমি থাকব। যদি বের করে দিতেই হয় একে বের করো। আই কান্ট টলারেট হার। তুমি এখন ওর জন্য আমাকেও রুম থেকে বের করে দেবে?”
ক্রুদ্ধ হয়ে কথাগুলো ঝড়ের গতিতে বলা শেষ করে অভয়। মিসেস. তনয়া ক্ষীণ সুরে অভয়কে কটাক্ষ করে বলেন….
–“ওর জন্য মানে কি? তুই ওর সাথে ঝগড়া করিসনি? দুজনেই পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া করেছিস। শাস্তিটাও দুজনের এক। এখন যদি তোদের এভাবে ছেড়ে চলে যাই তাহলে সারা রাত তোরা গলা ফাটিয়ে ঝগড়া করবি আর সবার ঘুম হারাম করবি।”

ঐশানী ঠোঁট উল্টে চোখজোড়া সরু করে নরম কন্ঠে মিসেস. তনয়াকে কনভিন্স করবার চেষ্টা করে।
–“আম্মু, আসলে এতো জোরে বলে ফেলব বুঝতেই পারিনি। সরি। আর এমন হবে না। ছোট একটা ভুলের জন্য এভাবে রুম থেকে বের করে দেবেন?”
–“আই এম সরি মাই ডিয়ার! তোমাদের এখন ক্ষমা করে দিলে সারা রাত দুজনে কোনো না কোনো কারণে ঝগড়া করতেই থাকবে। এই অনিন্দিতা, যা তো বাড়িতে যত রুম আছে তালা দিয়ে আয়। আর চাবিটা আমাকেই দিবি।”
অনিন্দিতা মুখ টিপে হেসে আনন্দের সাথে দৌড় দেয় বাইরের দিকে।

–“আর হ্যাঁ ঐশানী মা। আমি যতটা তোমাকে মায়ের মতো আদর করার চেষ্টা করব ততটা শাসন করারও চেষ্টা করব। ভুল হলে দুজনেই শাস্তি পাবে। বের হও দুজনে।”
–“আরে থাকব কোথায় তাহলে? সব রুম বন্ধ করে দিতে বললে?”
চেঁচিয়ে বলে অভয়।
–“তোমাদের যেখানে ইচ্ছে থাকো। ড্রয়িংরুমটা খালিই পড়ে থাকে। তোমরা শেয়ার করে সোফায় শুয়ে পড়তে পারো। এখন বের হও দুজনেই।”
মিসেস. তনয়ার কথায় তালে তাল মিলিয়ে ইশান অভয়কে টানতে টানতে রুম থেকে বের করে। ঐশানীও শুকনো ঢক গিলে বেরিয়ে আসে।

–“আমার কান কষ্ট করা না? এখন থাক বাইরে। শাস্তিটা জবরদস্ত হইছে!”
দাঁত কেলিয়ে হেঁসে বলে ইশান। অভয় ভাবে এখন একমাত্র ইশানের রুম ছাড়া কোনো উপায় নেই। তাই তাকে নরম হতে হবে। গলা খাঁকারি দিয়ে ইশানের কাছে গিয়ে অভয় সুন্দর করে বলে…..
–“দেখ আমরা তো ভাইভাই না? তোর তো উচিত ভাই হয়ে ভাইয়ে পাশে থাকা। তাহলে, আজকের জন্য তুই আর আমি রুম শেয়ার করে থাকি?”
–“না না না! এগুলা পামে আমি ফুলছি না। আমি এখন যাব নাকে তেল দিয়ে ঘুমাবো।”
অভয়কে স্পষ্ট মানা করে দিয়ে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায় ইশান। অন্যদিকে মিসেস. তনয়া অভয়ের ঘরে চাবি দিয়ে নিজের ঘরে চলে যান রাহাত সাহেবের সঙ্গে।

কিছুক্ষণ ধরেই ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে আছে অভয়। তার থেকে বেশ কয়েকহাত দূরে বসে আছে ঐশানী। এর মানে দুজনে সোফার দু’প্রান্তে। এটাই একমাত্র জায়গা কোনোমতে শুয়ে পড়ার। তবে দুজনে শেয়ার করে শুয়ে পড়া অসম্ভব। ঘুমের কারণে ঢুলছে ঐশানী। শাড়ি,গয়না কিছুই চেঞ্জ করা হয়নি। সোফায় ঠেস দিয়ে নেতিয়ে পড়েছে সে। অন্য প্রান্তে অভয় চোখ বুঁজে সোফায় মাথা ঠেকিয়ে আছে। বিরক্তিতে তার ভ্রু দুটো হালকা কুঁচকানো। এভাবে কি ঘুমানো যায়? চোখ বুঁজে থাকা অবস্থায় অভয় নিজের হাতে অন্য হাত দিয়ে চাপড় দেয়। চোখ খুলে তাকিয়ে নিজের হাতে মশা আবিষ্কার করে সে।
–“শিট! এ কোথায় ফেঁসে গেলাম মেয়েটার সাথে? সবটা ওই মেয়ের জন্য। এখন কিনা মশার কামড় খেতে হবে?”

বলতে বলতে পাশে তাকায় অভয়। ঐশানীর চোখেমুখে বেশ কয়েকটা মশা পড়েছে। আর মেয়েটার কোনো হুঁশই নেই। সে সোফার হ্যান্ডেলে মাথা রেখে ঘুমে টলিয়ে পড়েছে। অভয়ের কেমন জানি অস্বস্তি হয় সেটা দেখে।
–“মুখে এক গাদা মশা পড়ে নিজের কাজ সেরে চলে যাচ্ছে আর মেয়েটা কোনো হুঁশই নেই। বাহ দারুণ!”
বলে বসে থাকে অভয়। তবে বারবার চোখ যায় ঘুমন্ত ঐশানীর দিকে। একসময় উঠে দাঁড়িয়ে পড়ে সে। দাঁতে দাঁত চেপে বিড়বিড়িয়ে বলে….
–“মেয়েটা আমাকে এক দন্ড বসতেও দেবে না। হে আল্লাহ, রক্ষা করো আমায়!”

অভয় কয়েকধাপ হেঁটে গিয়ে ঐশানীর কাছে দাঁড়ায়। কি দিয়ে সে মশাগুলো তাড়াবে? হাতের কাছে তেমন কিছু না পেয়ে নিজের হাতটাই কাজে লাগায় সে। হাতটা নিয়ে গিয়ে ছোঁয়ায় ঐশানীর গালে। উড়ে যায় মশাগুলো। এরপর ঐশানীর হাতেও হাত ছোঁয়ায়। ঐশানী নড়েচড়ে ওঠে। কিন্তু অতিরিক্ত ক্লান্ত থাকায় হয়ত চোখ খোলা হয়ে ওঠেনা। মশাগুলো উড়ে যাওয়ার পর স্বস্তি অনুভব করে অভয়। এক স্বস্তির শ্বাস ফেলে সোফায় বসতে নিবে তখনই তার চোখ যায় ঐশানীর কানের দিকে। ভারি ও বড় বড় কানের দুলগুলো যেন ওর কান থেকে ছিঁড়েই পড়বে। অভয়ের বসা হয় না। এদিক-ওদিক তাকিয়ে ভাবতে থাকে ওর কি ঘুমন্ত ঐশানীকে সাহায্য করা উচিত?

–“আমার কি? ওর কি হলো না হলো আমার তাতে যায় আসে না।”
বলে দাঁড়িয়েই থাকে অভয়। চোখটা আপনাআপনি চলে যায় ঐশানীর দিকে। বাঁকা চোখে তাকিয়ে আবারও চোখ সরিয়ে নেয়।
–“সাহায্য করলে ক্ষতি কি? ওকে ভালো তো বাসতে যাচ্ছি না। জাস্ট সাহায্য করব। এতটুকুই।”
নিজেকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে ঐশানীর পাশ ঘেঁষে বসে অভয়। নিজের শুকিয়ে যাওয়া ঠোঁটকে হালকা ভিজিয়ে ঐশানীর দিকে হেলে কাঁপা কাঁপা হাতটা দেয় ঐশানীর কানের দুলে। আরেকটা হাত কানের পিঠে দিতেই অভয়ের মনে ঝড়ের সৃষ্টি হয়। এই ঝড়ের উৎপাত কেন হলো? হয়ত একটা মেয়ের সংস্পর্শে আসার জন্য।

আস্তে করে কানের দুল খুলে নেয় অভয়। এতটুকু করতেই সে ঘেমে একাকার! অন্য কানের দুল খুলতে চুলগুলো সরাতে হবে তার। চুলে হাত দিয়ে হালকা করে চুল সরিয়ে দিতেই ঐশানী হুট করেই নিজের হাত দিয়ে আবদ্ধ করে নিয়ে নিজের ঘাড়ে রেখে থুঁতনি দিয়ে জড়িয়ে ধরে কিছু একটা বিড়বিড় করতে থাকে।
–“আমাকে ছেড়ে যেও না। আর যেতে দেব না। একবার পালিয়েছো। খুব কষ্ট পেয়েছি। আর না প্লিজ। প্লিজ সা…..”
বলতে বলতে থেমে যায় ঐশানী। হয়ত শাহরুখ খানের নাম নিতে চাইছিল। মেয়েটা শাহরুখ খানের এতো বড় ফ্যান! হয়ত শাহরুখ খান তার এতো বড় ফ্যান কে দেখলে নিজেই পাগল হয়ে যাবে। ভেবে হাসি পায় অভয়ের।

কয়েক সেকেন্ড পর অভয় অনুভব করে তার হাত ঐশানী ছেড়ে দিয়েছে। সে চোখ তুলে তাকাতেই ঐশানীকে জাগ্রত অবস্থায় দেখতে পায়। ঐশানীর মুখের ওপর হেলে থাকা অভয় গলা খাঁকারি দিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে দূরে সরে দাঁড়ায়। অভয় কিছু বলার আগেই ঐশানী বলতে শুরু করে…..
–“আপনাদের বাড়িতে হেলিকপ্টারের সমান মশা! এখানে থাকব কি করে সারারাত??”
অভয় দেখে ঐশানী মশা হাতে নিয়ে কথাগুলো বলছে। কপালে হাত দিয়ে বসে পড়ে সোফায় অভয়।

–“সবটাই তোমার জন্য। যদি এতোটা ঝগড়া না করে আমার কথামতো নিচে শুয়ে পড়তে এতো কিছু হতোই না।”
–“এই একই কথা তো আমিও আপনাকে বলতে পারি।”
অভয় কিছু না বলে বুকে হাত জড়িয়ে বসে থাকে। চোখটা তার লাল হয়ে গেছে ঘুমে। আর মন ভরে উঠেছে অস্থিরতায়। এই অস্থিরতা কীসের জন্য? হ্যাঁ আজ তো তার সায়রার সাথে একবারের জন্যও কথা হয়নি। হয়ত সেকারণেই। তবুও সঠিক কারণ উন্মোচন করতে পারল না সে।

–“বাই দ্যা ওয়ে, আপনি আমার এতো কাছাকাছি কি করছিলেন?”
ঐশানীর অদ্ভুত কন্ঠের প্রশ্নে সোজাসাপটা উত্তর দেয় অভয়।
–“এতো হাইপার হওয়ার কোনো দরকার নেই। আমি জাস্ট মশা তাড়াতে গেছিলাম আর তোমার কানের দুল খুলতে!”
–“আমার কানের দুল? কেন কেন? আমার ওপর মশা-মাছি, পোকা যাচ্ছেতাই পড়ুক। আপনার এতো সমস্যা কেন? আপনি কি করতে এসেছিলেন বলুন তো?”

ঐশানীর অদ্ভুত অভিযোগ। ও কি ভাবছে ঘুমের ঘোরে ওর সাথে…..?? ব্যাপারটা ভাবতেই চোখমুখ জড়িয়ে আসে অভয়ের। ভার কন্ঠে বলে….
–“তুমি যা ভাবছো তা একদম নয়। অযথা না জেনেশুনে ফালতু বকবে না। পরিণাম খুব খারাপ হবে।”
ঐশানী তেত ওঠে। বেনারসি দুইহাত দিয়ে ধরে দাঁড়িয়ে যায়।
–“হ্যাঁ এখন তো আমাকে ধমকে আমাকে চুপ করাবেনই। আমি সত্যিটা জেনে গেছি না?”

অভয়ের মনে এমনি এক অদ্ভুত অস্থিরতার সৃষ্টি হয়েছে। এর ওপর ঐশানীর কথাগুলো নিতে পারছে না সে। রাগের মাথায় সে ধমকে বলে দিল….
–“হ্যাঁ জেনেছো তো কি হয়েছে? মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে গেছে? আমার যতদূর মনে আছে আমরা বিয়ে করেছি না? সো তোমাকে টাচ করতে তোমার পারমিশন নেওয়ারও আমার কোনো প্রয়োজন নেই। বিকজ আমি তোমায় স্পর্শ করার সার্টিফিকেট আমি পেয়েছি। আন্ডারস্ট্যান্ড?”
অভয়ের এমন বেহায়া কথাবার্তায় জবান বন্ধ হয়ে আসে ঐশানীর। মুখটা লাল হয়ে ওঠে।

–“মা…মানে আপনি স…সত্যি সত্যিই ওসব….!!”
অভয়ের হুঁশ ফেরে। সে যা নয় তাই বলেছে অস্থিরতার দোলাচালে! চোখ বন্ধ করে নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করে সে বলে…..
–“না আসলে সরি। আমি বলতে চাইনি। কিন্তু তুমি আমাকে বাধ্য করলে। আমার এমন কোনো ইটেনশান ছিল না।”
–“আপনাকে তো আমি ভালো ভাবতাম। ভাবতাম, আপনার প্রেমিকা আছে। প্রচন্ড ভালোবাসেন। কিন্তু এখন তো মনে হচ্ছে আপনি সমস্যার লোক। আয় হায়! কার সাথে বিয়েটা হলো আমার? আপনি এমন আপনার গার্লফ্রেন্ড জানে?”
–“ওহ জাস্ট কিপ ইউর মাউথ শাট। তোমার ঘুমানোর ইচ্ছে নেই ঠিক আছে কিন্তু আমায় অন্তত ঘুমোতে দাও।”

–” না না। চুপ করা যাবে না। আমি আপনার সাথে থাকতে পারব না। আপনার প্রেমিকা যদি না জানে তাহলে তো আপনার সমস্যার কথা আমায় ওকে জানাতে হবে।”
অভয়ের আর সহ্য হলো না এতোসব কথাবার্তা। অবশেষে বোম বিস্ফোরণ হবার মতো অভয়ও বিস্ফোরিত হয়। উঠে দাঁড়িয়ে ধীরে কিন্তু অতিরিক্ত রাগ নিয়ে বলে….
–“ভালোবাসা কি তোমার ধারণা আছে? ভালোবাসা কি আদোও বুঝো তুমি? তুমি জানো এই ভালোবাসা শব্দের মানে কি?”

ঐশানী থম মেরে যায় ভালোবাসার কথা শুনে। সেই সুযোগে অভয় আবারও বলতে শুরু করে…..
–“একে তো নিজে যেচে পড়ে আমার লাইফে ঢুকে পড়লে। আর এমন ভাবে ঢুকে পড়লে যে আমার ভালোবাসার মানুষের সাথে আমার সম্পর্কে চির ধরে গেল। সবটা তোমার জন্য হয়েছে। তুমি জানো আমি কতটা অস্থিরতায় ভুগছি? জানো না! কতটা চাপে পড়ে বিয়েটা করেছি জানো? জানো না! আরে তুমি তো ভালোবাসার মর্মই বুঝো না। ভালোবাসার মানুষকে নির্মম ভাবে হারিয়েছো কোনোদিন? হারাওনি। কারণ তুমি তো কাউকে ভালোই বাসোনি। তুমি তো ভালোবাসতেও জানো না। আমি হারিয়েছি আমার সায়রাকে। আমার ভালোবাসাকে। আমিই জানি আমার মনে কি চলছে।”

ঐশানী বেশ কয়েকবার কেঁপে উঠে মাথা নিচু করে ফেলে। কথাগুলো তার মনে একেকটা তীরের মতো বিঁধেছে। অভয় আবারও বলে….
–“প্লিজ যেই কয়টা দিন আছে শান্তিতে তুমিও থাকো আর আমাকেও থাকতে দাও।”
বলেই বসে পড়ে অভয় সোফায়। গা এলিয়ে দিয়ে অতিরিক্ত রাগ নিয়ে চোখ বন্ধ করে থাকে সে। ঐশানী চলে এসে একটি দরজার কাছে দাঁড়ায়। এদিক দিয়ে হয়ত বারান্দায় যায়। দরজা ধরে একটুখানি থেমে থেমে বলে…..
–“হয়ত আমি ভালোবাসিনি। কিন্তু আপনার কষ্টটা আমি বুঝি। যদি আপনার মনে হয় আমার জন্য আপনাদের সম্পর্কে ভাঙনের মুখে পড়েছে তাহলে সেই সম্পর্ক জুড়ে দেওয়ার দায়িত্ব আমার। আপনাদের জুড়ে দিয়ে আমার ছুটি!”
ঐশানীর কথা অবাক হয়ে শোনে অভয়। ঐশানী সেই দরজা দিয়ে চলে যাচ্ছে খোলা বারান্দার দিকে। অভয় ডাক দিতে চেয়েও পারে না। এটাকেই হয়ত ইগো বলে। ঐশানীর কথাগুলো ভেবে সটান হয়ে সোফায় শুয়ে পড়ে সে।

সকালে ফোনের রিংটোনে ঘুম ভাঙে অনিন্দিতার। চোখটা যেন খুলতে চাইছে না তার। তবে এটা তো তার ফোনের রিংটোন নয়। আগ্রহ নিয়ে চোখ খুলে পাশের ল্যাম্পশিট রাখা ড্রয়ার বক্সের ওপর তাকায় সে। অভয়ের ফোনটা বাজছে। আড়মোড়া ভেঙে উঠে ফোনটা হাতে নিতেই কপালে ভাঁজ পড়ে তার। কারণ স্ক্রিনে সায়রা নামটি লিখা। কলটা রিসিভ করে কানের কাছে ধরতেই ওপাশ থেকে উত্তেজনায় ভরা কন্ঠ ভেসে আসে।
–“কাল থেকে ফোন করছি আর তুমি ইগনর করছো। আর তুমি কিনা বলেছিলে যাই হোক আমাকে ইগনর করার সাধ্য তোমার নেই। বউ পেয়ে অবশেষে আমায় ভুলেই গেলে অভয়!”

–“ভুলে যাওয়ারই তো কথা। তুমি ভাইয়ার পাস্ট ছিলে। যারা পাস্ট ছেড়ে বর্তমানে মন দেয় তারাই সুখি হয়। পাস্ট কে কখনো বয়ে বেড়াতে নেই। একটা কথা শুনে রাখো। তুমি ওর প্রেমিকা ছিলে। আর আমার ভাবি ওর বউ। দুটোর মাঝে কিন্তু অনেক ফারাক। প্রেমিকার প্রতি ভালোবাসা জন্মাতে যদি ১০ মিনিট লাগে তাহলে বউয়ের প্রতি ভালোবাসা জন্মাতে ১ মিনিটই যথেষ্ট হয়! আসলে বিয়ে জিনিসটাই এমন হয়।”
সায়রা অভয়ের নম্বরে মেয়েলি কন্ঠে যতটা না অবাক তার থেকে বেশি অবাক হয় কথাগুলো শুনে। তার মনে বড় আঘাত লাগে। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে….

–“কে ত…তুমি?”
–“অনিন্দিতা। অভয়ের বোন। আসলে কি বলো তো ভাইয়ার গতকাল বিয়ে হয়েছে। বিয়ের দিন রাত প্রতিটা মানুষের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ হয় তা নিশ্চয় তোমার জানা? কেন ফোন দিয়েছো? তোমার ফোনের জন্য ভাইয়ার ডিস্টার্ব হবে সেকারণেই ফোনটা আমার কাছে।”
–“তা…তার মানে অভয় কাল ওর স্ত্রীর সাথে সারারাত কাটিয়েছে?”
–“এটা কেমন কথা? ভাইয়া বিয়ে যখন করেছে ভাইয়ার সবকিছুতে ভাগ বসানোর মানুষটা তো ভাগ বসাবেই। তোমার জন্য এটাই বেটার হবে বর্তমান নিয়ে ভাবো।”

সায়র আর সহ্য করতে পারে না। তার চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়ে যাচ্ছে। ফোনটা কেটে দেয় সে। হাঁটু গেঁড়ে বসে পড়ে। ফোনটা অন্যদিকে ঠেলে দেয়। অপর পাশে ফোনটা রেখে দীর্ঘ নিশ্বাস ছাড়ে অনিন্দিতা। ফোনের দিকে তাকিয়ে বলে….
–“আই এম সরি সায়রা। ভাইয়ার জন্য যে নয় তার প্রতি ভাইয়াকে আকৃষ্ট হতে দেব না আমি।”

চলবে…..

[বি.দ্র. ভুক ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গঠনমূলক কমেন্টের আশায় রইলাম। ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here