পর্ব ১১

0
1455

পর্ব ১১
#আনিশা_সাবিহা

–“আমারই ভুল হয়েছে। ওই মেয়েটার থেকে এমন কিছু এক্সপেক্ট করাই ঠিক হয়নি। ভাবলাম শেষমেশ আমার জন্য একটা ভালো কাজ করে যাবে। ও তো শুধু গন্ডগোল পাকাতে জানে। উফফ….!”
অভয়ের ভাবনার ওপর পানি ঢেলে দিয়ে ঘুমোচ্ছে ঐশানী। রাগে-দুঃখে কি রিয়েকশন দিবে সেটা অভয়ের নিজেরই বোধগম্য হচ্ছে না। মেয়ের কর্মকান্ডে মিসেস. দিশা নিজেই থতমত খান। এবার উনার সন্দেহ হতে শুরু করে। একি আদোও নিজের মেয়ে? বিশ্বাস হয় না! মিসেস. দিশা সবকিছুতেই বরাবরের মতো সিরিয়াস থাকেন। তার মেয়ে কিনা এতো ছন্নাছাড়া ভাবের। আশেপাশে সবাই প্রাণ খুলে হাসছে। তা দেখে উনার মাথা কাটা যাচ্ছে লজ্জায়। তবুও একটা জড়ো হাসি দিয়ে সবার উদ্দেশ্যে বলেন…..

–“আজ ঐশানীর বিয়ে তো। তাই গতকাল ঘুমোতে পারেনি। তাই বোধহয় ঘুমিয়ে পড়েছে। আমি দেখে আসছি।”
বলেই মাথার কাপড় ঠিকঠাক করে ঐশীকে নিয়ে ঐশানীর ঘরে যেতে লাগলেন। কাঠকাঠ গলায় বলেন….
–“ঘুমিয়েছে মানলাম। তোরা তুলে ডেকে আনতে পারিসনি? এসে সবার সামনে চিল্লিয়ে বলতে হবে আপু ঘুমিয়েছে? মানসম্মান আর রাখলি না।”
–“আরে মা। আমরা দূর থেকে ডাকছিলাম। অনেকবার ডেকেছি। কিন্তু আপু উঠছে না। জানো তো আপু ঘুমিয়ে পড়লে সহজে জাগতে চায় না। কাছে গিয়ে গায়ে হাত দিয়ে নাড়িয়ে ডাকতে পারিনি কারণ আপু যদি অভয় ভাইয়ার মতো গালে চুমুটুমু দেয় তখন?”

মিসেস. দিশা চোখ গরম করতেই মুখটা বন্ধ করে চলতে শুরু করে ঐশী। রুমের ভেতরে ঢুকতেই তারা দেখতে পায় ঐশানীর বান্ধবীরা দেদারসে ডেকে যাচ্ছে। ঐশানী একটু একটু নড়চড় করে তাকিয়ে আবার চোখ বুজতেই মিসেস. দিশা গিয়ে বসেন তার পাশে।
–“বিয়ের দিনে কেউ এতোটা গাঢ় ঘুম দেয়? ঐশানী উঠে পড়। নয়ত পানি ছিটিয়ে দেব মেকআপ ধুয়ে যাবে।”
–“আরেকটু ঘুমায় না আম্মু। এতোক্ষণ কাকগুলো আমার মাথাব্যাথা ধরিয়ে দিল। তুমিও শুরু করো না প্লিজ।”

বলেই মায়ের হাত সরিয়ে ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে মাথা তুলে মায়ের কোলে রেখে শুয়ে থাকে ঐশানী। ঘুম জড়ানো গলায় আবার বলে…..
–“আজ তো চলেই যাব না? আর তো যখন তখন এভাবে কোলে মাথা রেখে ঘুমাতে পারব না।”
মিসেস. দিশা দুর্বল হয়ে পড়েন মেয়ের কথায়। আসলেই যখন তখন ঐশানীর পাগলামি দেখতে পাবেন না তিনি। বুকটা ধক করে ওঠে উনার। দুটো মেয়ে ছাড়া যে বাড়ি পুরোটা ফাঁকা লাগবে! চোখ ভরে পানি আসে। তবে মুছে নেন আড়ালেই। অনেকটা বুঝিয়ে শুনিয়েও যখন ঐশানীকে উঠানো গেল না তখন বকাবকি করে বসিয়ে দেন মিসেস. দিশা।

আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসে ঐশানী। হাই তুলতে তুলতে যখনই চোখ ডলতে যাবে তখনই রিনি হাত ধরে সিরিয়াসভাবে বলে….
–“চোখে হাত দিস না দোস্ত। এক ঝটকায় পরী থেকে পেত্নীতে রুপান্তরিত হবি। তখন মেকআপ ঠিক করতে করতে দুনিয়া আন্ধার হয়ে যাবে।”
ঐশানী এক ঝটকায় নিজের হাত ছাড়িয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। সবার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুঁড়ে….
–“বিয়ে করতে কতক্ষণ লাগবে? ত্রিশ মিনিটে হবে? আমি আবার ঘুমাবো।”
–“চুপ চুপ। বিয়ের দিনেও থাপ্পড় খাবি মায়ের হাতে।”
ফিসফিসিয়ে বলে ঐশী। ঐশানী থম মেরে মায়ের দিকে তাকায়। সবাই যখন ওকে বিয়ের আসরে নিয়ে যেতে উদ্যত হয় তখনই আঁটকে দেন মিসেস. দিশা।

–“দাঁড়া তোরা।”
–“কেন আন্টি? বিয়েতে যাবে না?”
অবাক কন্ঠে প্রশ্ন করে মেঘনা। মিসেস. দিশা গম্ভীর মুখে উত্তর দেন….
–“কি করে যাবে? পারবে না তো।”
ঐশানীর মনটা হঠাৎ করেই নেচে ওঠে। মনটা তিড়িংবিড়িং করে বলে….
–“ঐশু! মনে হয় মা বিয়েটিয়ে দেবে না আর। নিশ্চয় কিছু বুঝেছে। ঐশানীর জিনিয়াস মা কিনা! বিয়ে ভাঙলে কোন ডান্সটা দিবি বল? কালা চশমা নাকি নাগিন ডান্স?”
ঐশী তাড়াহুড়ো করে প্রশ্ন করে…..
–“কেন মা কি হয়েছে?”

–“আরে ও বিয়েতে যাবে কি করে? ওর কান দুটো দেখেছিস? ফাঁকা করে রেখে দিয়েছে। এভাবে বিয়ের আসরে বসলে লোকে কি বলবে? এই ঐশানী কানের দুল কথায় রেখেছিস?”
নিমিষেই ঢেকে গেল ঐশানীর গজদাঁতের হাসি। মুখটা অসহায় করে জবাব দেয়….
–“খুব ভারি লাগছিল তাই খুলে ড্রেসিং টেবিলের ওপর রেখে দিয়েছি।”
মিসেস. দিশা নিজহাতে মেয়েকে কানে দুল পরিয়ে পাঠিয়ে দেন মেয়েকে বিয়ের আসরে সবার সাথে। উনি পেছন পেছন আসেন।

বিয়ে পড়ানোর শুভ মূহুর্ত চলছে। কাজি সাহেব বিয়ে পড়াতে মগ্ন। পাত্রপক্ষ আর পাত্রীপক্ষের সামনে পাতলা পর্দা। সবার মাঝখানে ঝিম মেরে বসে আছে ঐশানী। মুখটা শুকিয়ে গেছে তার। যতই হোক এটা তার বিয়ে! সারাজীবনের ব্যাপার। চেয়েও হেলাফেলা করতে পারছে না। বারংবার নিজের মনকে শক্ত করতে চেয়েও শুধু কাঁদতে মন চাচ্ছে। যার মনে অন্যকেউ বসবাস করে তার সাথে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া কি ঠিক? এসব ভাবতে ভাবতে কাজি সাহেব হঠাৎ অভয়ের উদ্দেশ্যে বলে ওঠেন….
–“তিনবার কবুল বলুন।”

ঐশানীর নিশ্বাস ওঠানামা করতে থাকে। জোরে মুঠো করে নিজের বেনারসি। পলকহীন চোখে সাদা পাতলা ফিনফিনে পর্দা ভেদ করে দেখতে থাকে অভয়কে। একটা শুকনো ঢক গিলতেই অভয় একটু সময় নিয়েই একদমে তিনবার কবুল উচ্চারণ করে। তা শুনে এক নিশ্বাসে যেন ঐশানীর প্রাণটা বেরিয়ে আসে। চোখটা পলক পেলে বন্ধ করে নেয়। তার কানে ভেসে আসছে সবার আলহামদুলিল্লাহ বলা!

–“এবার কন্যার পালা। তিনবার কবুল বলুন।”
ঐশানীর গা শিরশিরানি দিয়ে ওঠে। শুধু তিনবার কবুল আর দুজনকে এক করে দেওয়া হবে? ভাবতেই কেঁপে ওঠে ঐশানী। তবে সমাজের দৃষ্টিতে এক হলেও বাস্তবে তাদের এক হওয়াটা পৃথিবীর অসম্ভব ব্যাপারগুলোর মাঝে একটা। সাইড চেপে ভীরু কন্ঠে পাশের জনকে জিজ্ঞেস করে….
–“কবুল কি বলতেই হবে?”
–“ওমা, এটা আবার কেমন কথা? কবুল না বললে বিয়ে হবে কেমন করে?”

ঐশানীর গলা মূহুর্তেই শুকিয়ে এলো। সবাই উৎসুক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাকিয়ে আছে তার দিকে। তারা অপেক্ষা করছে ঐশানীর মুখ থেকে কবুল শোনার। বড় বড় নিশ্বাস ফেলে ফট করেই তিনবার কবুল বলে ঐশানী। সঙ্গে সঙ্গে হাসিমুখে সবাই বলে ওঠে আলহামদুলিল্লাহ। দোয়া করা হয়, মিষ্টিমুখ করা হয়। রাহাত সাহেব এবং ইমতিয়াজ সাহেব জড়িয়ে ধরেন একে ওপরকে। মুগ্ধ হয়ে রাহাত সাহেব বলেন…
–“অবশেষে আমরা একে ওপরের বেয়াই রে। এই আনন্দ কই রাখি?”
–“যেখানে ইচ্ছা রাখ। শুধু আমার মেয়েটাকে দেখে রাখিস। ভরসা করে তুলে দিলাম তোদের হাতে।”

মুখে হাসি নিয়ে দুর্বল কন্ঠে বলে ওঠেন ইমতিয়াজ সাহেব। রাহাত সাহেব উনার কাঁধ জড়িয়ে বেশ কনফিডেন্সের সাথে বলেন…..
–“আরে বেটা! তোর মেয়ে কি আমার মেয়ে নয়? শুধু দেখবি তোর মেয়েটা কত সুখে থাকবে।”
কথাটি শুনে স্বস্তি পান ইমতিয়াজ সাহেব।

খাওয়াদাওয়া শেষে বিদায়ের পালা শুরু হয়। ঐশানী কেঁদে কূল পাচ্ছে না। বাচ্চাদের মতো শব্দ করে কেঁদে চলেছে। একে একে পালা পালা করে সবাইকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। মেয়ের কান্না সহ্য করতে না পেরে ইমতিয়াজ সাহেব ভেতরে চলে আসেন। মিসেস. দিশা চোখেমুখে কাপড় ঢেকে কাঁদছেন। তার সংসার টা আর ঐশানীর পাগলামি দ্বারা মাতবে না। শুনতে পাবেন না মেয়ের মুখ থেকে, ‘আম্মু শোনো আমাকে বিয়ে দেওয়ার চিন্তা করলে বাড়ি থেকে পালিয়ে যাব। এখন খিদে পেয়েছে। খেতে দাও।’

সব শেষে ঐশীকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে ঐশানী। ঐশী তো নাকের পানি, চোখের পানি একজায়গায় করে কাঁদছে। হুট করেই মূহুর্তেই নিরব হয়ে যায় সে। জড়িয়ে থাকা অবস্থায় ঐশানীর কানে কানে বলে…..
–“এই হুদাই প্যাচপ্যাচ করে কাঁদছিস কেন আপু? জাস্ট তো কয়েকটা মাস। তারপর আবার বাড়িতে!”
ঐশীর কথায় ঐশানীর কান্না বন্ধ হয়ে যায়। অতিরিক্ত এক্সাইটেড হয়ে বলে….
–“কি করে?”
–“তোর কথা যদি সঠিক হয় অভয় ভাইয়ের গফ আছে। যদি ওদের প্রেমের কাঁঠালের আঠা থাকে তাহলে নিশ্চয় ওরা এখনো একে ওপরকে চায়। ইট মিনস অভয় ভাইয়া তোকে ছাড়তে চাইবে।”

ঐশানী কান্নামাখা মুখে হাসি ফুটে ওঠে। ও সরে দাঁড়ায়। সবাই ওর মুখে হাসি দেখে হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। মেয়েটা কিছুক্ষণ আগেই কেঁদে সব ভাসিয়ে ফেলছিল। এখন দেখা যাচ্ছে হাসি মুখে ধরছে না। অনিন্দিতা তো প্রশ্ন করেই ফেলল….
–“কি এমন বললে ঐশী? যে ভাবি একদম ঝাক্কাস হাসি দিচ্ছে?”
–“ইটস এ বিগ সিক্রেট!”
ভাব নিয়ে বলে ঐশী। তারপর ঐশানীকে ধীর গলায় বলে…..
–“শুধু এমন বাঁধনে নিজেকে বাঁধিস না যেই বাঁধন ছাড়াতে তোর প্রাণটা বেরিয়ে যায়। জগতে সব দুঃখ এসে তোর মনে ভীড় জমায়। তাহলে হাসিমুখেই বেরিয়ে আসতে পারবি।”

রিনিসহ সব বান্ধবীরা এসে একসাথে জড়িয়ে ধরে ঐশানীকে। চাপাচাপিতে দম বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম ঐশানীর। দিয়া ইমোশনাল হয়ে টিস্যু দিয়ে পানি মুছতে মুছতে বলে….
–“বেহায়ার মতো হাসছিস কেন বান্ধবী? তুই হাসলে আমি নকল চোখের পানি দিয়ে কি করব? মুছেই নিই। আসলে চোখে পানি আসছিলই না। তবে জীবনটা বরবাদ হয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নে। কাজ করতে করতে দিনে আন্ধার দেখবি।”
দিয়ার কথায় সবাইকে ধাক্কা দিয়ে এসে গাড়িতে ওঠে ঐশানী। গাড়ি চলতে শুরু করে। জানালা দিয়ে তাকায় মা-বাবা আর বোনকে দেখার জন্য। মা আর বোনকে দেখলেও বাবাকে পাচ্ছে না তার চোখ। গেটে গিয়ে আঁটকে যায় তার চোখ বাবার দিকে। কোণায় অশ্রুসিক্ত নয়নে, হাসিমুখে উনি বিদায় দিচ্ছেন মেয়েকে।

নতুন বউ আসায় বাড়িতে রমরমা ভাব ছড়িয়ে পড়েছে। গিজগিজ করছে মানুষ নতুন বউ দেখার জন্য। শ্বশুড়বাড়িতে পা রাখতেই ঐশানীকে ঘিরে ধরে লোকজন। ঘুম তো দূরে থাক ঘুম নামক জিনিসটা তার চোখ থেকে কর্পূরের মতো উড়ে যায়। পুতুলের মতো বসে থাকে বড় ড্রয়িংরুমের একটি সোফায়। অভয় আগেই উঠে গেছে রুমে ফ্রেশ হতে। তার আর ভালো লাগছে না এসব। বিয়েটা যে সে করেছে এটাই অনেক। এখন পুতুলের মতো ঐশানীর পাশে বসে থাকা ইম্পসিবল!!!

রুমে এসেও আরেক বিপত্তি! তার রুমটা সাজানো হচ্ছে। সব থেকে বড় কথা মেয়েদের রুম সাজানোর উপদেশ দিচ্ছেন তার বাবা স্বয়ং।
–“বাবা তুমি? কি করছো আমার রুমে? রুমে এতো ফুল দিয়ে সাজাতে বলছো কেন?”
–“আরে আজব! তোদের বাসর ঘর সাজাবো না? ঐশানী প্রথম ঢুকবে এই ঘরে। প্রথম না শুনেছি এর আগেও একবার এসেছে। কিন্তু এবার আসবে এই রুমের ভাগিদার হয়ে। তাকে স্বাগত জানাতে এসব করব না?”
অভয় থম মেরে দাঁড়িয়ে যায়। তার বাবার এসব ছেলেমানুষী স্বভাব কোনোদিনও পাল্টানো গেল না।

–“তাই বলে তুমি নিজের ছেলের ঘর এভাবে সাজাবে?” (ইতস্তত বোধ করে)
–“এভাবে সাজাবে মানে? ফুল দিয়েই তো সাজাচ্ছি। এমন করছিস তোর ঘরে আগুন লাগিয়ে দিয়ে যাচ্ছি।”
–“আগুন লাগিয়ে দিয়ে যাচ্ছো মানে? পুরো আগুনের মস্ত বড় গোলা এনে তুলেছো বাড়িতে। সে নাকি আমার ঘরেও থাকবে। আমার ঘর তো এমনি পুরে যাবে।”
রাহাত সাহেব প্রচন্ড হাসেন অভয়ের কথায়। হাসতে হাসতে বলেন…..
–“তুই ঐশানীর কথা বলছিস? তাও ওর জন্য যদি তোর সুবুদ্ধি হয় তাহলে তো ভালো! এখন বের হ বের হ।”

অভয় একপ্রকার বিরক্ত নিয়ে বেরিয়ে আসে। অনিন্দিতার রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে গা এলিয়ে দেয়। অনিন্দিতার এখন আসার কথা নয়। নতুন ভাবিকে নিয়ে যে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে তাতে পুরো জগত ভুলেই গেছে।
একেবারে রাতে হাফ ছেড়ে বাঁচে ঐশানী। সবার মুখে ওর গজদাঁতের কথা শুনতে শুনতে তার কান পঁচে যাবার উপক্রম। তার চেহারা সুন্দর তার প্রশংসা যেমন শুনেছে তেমনই গজদাঁত থাকার হাজারো নিন্দা করে গেছে প্রতিবেশিরা। তাতে তার কোনো মাথাব্যাথা নেই।

ঐশানীকে রাতের খাবার নিজহাতে তুলে খাওয়ালেন মিসেস. তনয়া। উনি শুনেছেন ঐশানীকে বেশিরভাগ সময় ওর মা তুলেই খাইয়ে দেন। তাই উনিও ঐশানীর শ্বাশুড়ি কম মা হবার কোনো কমতি রাখতে চান না। ক্লান্ত চোখমুখ নিয়ে খেল ঐশানী। সাথে অনিন্দিতাও ভাগ বসালো। সঙ্গে অভয় নেই। সে ক্লান্ত ঘুমিয়ে পড়েছে। ঘরেই খেয়ে নিয়েছে। তবে পাশে অভয়ের ফুপাতো ভাই রয়েছে। যে বাড়ি দূরে হবার কারণে বিয়ের সময় পৌঁছাতে পারেনি। ছেলেটা বেশ দুষ্টু আর ফাজিল প্রকৃতির। সেটা ঐশানী কথা বলেই বুঝেছে।

খাওয়াদাওয়া শেষে কিছুক্ষণ পরেই ঢুকিয়ে দেওয়া হলো ঐশানীকে ফুল সাজানো অভয়ের ঘরে। অনিন্দিতা ঐশানীকে দুষ্টু হাসি দিয়ে বলে….
–“নাও আমার নিরামিষ ভাইকে আমিষ ভাই বানানোর দায়িত্ব তোমার।”
–“ইম্পসিবল!” (বিড়বিড়িয়ে)
অভয় সবে ফোন হাতে নিয়েছিল। সায়রার অনেকগুলো কল দেখে সে কলব্যাক করতেই যাচ্ছিল তার আগেই ফোনটা কেঁড়ে নেয় অনিন্দিতা। কিছু বলার আগেই বাইরে থেকে দরজা লাগিয়ে দিয়ে দৌড় মারে সে।

ঘরে রয়ে যায় অভয় আর ঐশানী। ঘরটা বেশ সুন্দর করে সাজানো। টেবিলের ওপর একটা পাত্রে গোলাপের পাপড়ি আর পানি দেওয়া। তার ওপর প্রদীপগুলো টিমটিম করে জ্বলছে। সেই আলোতে হঠাৎ অভয়ের চোখজোড়া স্থির হয় ঐশানী ওপর। তার মুখে ক্লান্ত ক্লান্ত ভাব। নাকে তার পরিবার দেওয়া নাকের ফুল চিকচিক করছে। আলোতে কি তার সৌন্দর্য বেড়েছে নাকি? নয়ত অভয়ের চোখ স্থির কেন?
চোখ সরিয়ে নেয় অভয়। গলা খাঁকারি দিয়ে বলে….
–“আমার ঘুম পেয়েছে আমি ঘুমাবো।”

–“তো ঘুমান। আমিও ঘুমাবো। আপনি নিচে শুয়ে পড়ুন।”
ঐশানীর কথায় বিস্ফোরিত চোখে তাকায় অভয়। তার ঘরে তাকেই নিচে ঘুমোতে বলা হচ্ছে? চেঁচিয়ে বলে ওঠে….
–“ওই, আমার ঘর, আমার বেড আমি ওপরে ঘুমাবো। তুমি নিচে।”
–“ওই শুনুন, আঙ্কেল থুরি শ্বশুড় বাবা বলেছে এই ঘড়ে আমারও অধিকার। আপনার ওপরেও। কিন্তু আপনার প্রতি আমার লোভ নেই বলে ছাড় পাচ্ছেন। কিন্তু বেড আমার।”

অভয় ক্লান্তি মাখা চোখেমুখে তাকায়। ঝগড়া করার ইচ্ছে তার একদমই নেই।
–“আচ্ছা ঠিক আছে। একদিন তুমি বেডে ঘুমাবে। একদিন আমি ওকে?”
–“নো ওকে। আমি আপনাকে এই ঘরে ঘুমোতেই দেব না।” (চিল্লিয়ে)
–“কেন এটা তোমার বাপের ঘর?”
ঐশানীর থেকে অতিমাত্রায় চিল্লিয়ে বলে অভয়। ঐশানী আরো চিৎকার দিয়ে আঙ্গুল উঁচিয়ে বলে….
–“একদম বাপ তুলে কথা বলবেন না।”
অভয় আরো কিছু বলতে উদ্যত হবে তখনই বেডের নিচ থেকে কেউ বেরিয়ে আসে। কানে হাত দিয়ে কাঁদছে সে। সে আর কেউ নয় অভয়ের ফুপাত ভাই ইশান।

–“আরে ভাই, রোমান্টিক কথাবার্তা শুনতে ঘরে ঢুকেছিলাম। ঝগড়া করে কানের মাথা নষ্ট করতে না।”
তারা এতোই জোরে ঝগড়া করেছে যে বাইরে থেকে সবাই ঘরে এসে ঢুকে পড়ে। অনিন্দিতা হুড়মুড় করে বলে….
–“এই ঘরে কি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছিল? আর ইশান ভাইয়া তুমি কি করছো??”
–“ওই দুর্ভাগা হলে যা হয়। যেচে কান নষ্ট করতে এসেছিলাম।”
বলেই দাঁড়িয়ে পড়ে সে। মিসেস. তনয়া অভয় আর ঐশানীর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন।

–“তোমরা বর-বউ নাকি টম অ্যান্ড জেরি? এভাবে ঝগড়া করছিলে কেন?”
দুজনেই চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে। মিসেস. তনয়া এবার কড়া আদেশ দিয়ে বলেন…..
–“তোমাদের দ্বারা বাসর ঘর টর হবে না আগেই বুঝেছিলাম। তাই কোনো আয়োজন করিনি। কিন্তু তোমাদের বাবা তো শুনল না। আমি ঠিক করেছি তোমরা কেউই এই ঘরে থাকবে না। দুজনেই ঘরের বাইরে থাকবে।”

চলবে…..

[বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here