বেলা_শেষে_শুধু_তুমি পর্ব ১৩

0
1500

বেলা_শেষে_শুধু_তুমি পর্ব ১৩
#আনিশা_সাবিহা

কারো উষ্ণতায় ঘুমের মাঝে নড়েচড়ে ওঠে ঐশানী। চোখে লাগে সকালের তীব্র আলো। বেশ বিরক্ত হয় সে। আশেপাশে বালিশ বা চাদর খুঁজতে থাকে নিজেকে আড়াল করার জন্য হাতড়ে। খুব বিশেষ একটা লাভ হয় না। তার হাতে আসে অন্য কারো শক্ত একটা হাত। ঘুমের ভেতরে বেশ চমকে ওঠে ঐশানী। তার রুমে অন্য কেউ কোথা থেকে এলো? এক পলকেই চোখ খোলে সোজা হয়ে বসে সে। চোখ কচলাতে কচলাতে প্রচন্ড কৌতুহল নিয়ে পাশে তাকায়। অভয়কে দেখে আরেক দফা চমকায় ঐশানী। তাও আবার অভয় আর তার মাঝে না আছে কোনো দূরত্ব। হার্টবিট তা উপলব্ধি করতে পেরেই যেন ঘোড়ার বেগে ছুটতে শুরু করে। তাৎক্ষণিক বিদ্যুৎ এর গতিতে দূরে গিয়ে ছিটকে শেষ প্রান্ত বসে পড়ে সে।

অভয় গম্ভীর চোখেমুখে একবার ঐশানীর দিকে লক্ষ্য করছে একবার সামনের দিকে। ঐশানী তোতলাতে তোতলাতে বলে…..
–“আসলে সরি। কাল রাতে বারান্দায় গেছিলাম। ভেবেছিলাম সেখানে রাত কাটানো যাবে। কিন্তু ওখানে এখানের থেকেও বেশি মশা ছিল। হাঁটতে হাঁটতে পুরো বাড়ি দেখে ফেলেছি। ক্লান্ত হয়ে এসে দেখি আপনি পুরো সোফা জুড়ে ঘুমিয়ে নাক ডাকছেন। তো আমি উপায় না পেয়ে সোফার অল্প অংশ ফাঁকা ছিল সেখানে বসি। ঘুমিয়ে কখন আপনার ওপর পড়ে গেছে খেয়াল করিনি।”
বলেই ঐশানী খেয়াল করে অভয় ঠোঁট কামড়ে হাসি আটকানোর চেষ্টা করছে। ঐশানী তা দেখে ভ্রু কুঁচকায়।
–“এভাবে হাসছেন কেন?”

ঐশানী কথায় আর হাসি চেপে রাখতে পারে না অভয়। হেসে দেয়। শব্দ করে হেসে দেয়। ঐশানী বুঝতেই পারে না এতো হাসির কারণ। মনে মনে নিজের একটু আগে বলা কথাগুলো রিপিট করতে থাকে। নাহ, সে হাসির কোনো কথা বলেনি। একসময় চোখ বড় বড় করে তাকায় ঐশানী। যেন সে ভূত দেখেছে। অভয় হেসেই কূলকিনারা পাচ্ছে না। আর সেদিকেই ভূত দেখার মতো তাকিয়ে থাকে ঐশানী। ক্লান্ত হয়ে হাসি থামায় অভয়। বড় বড় শ্বাস নিতে নিতে বলে….
–“এভাবে তাকিয়ে আছো কেন? আমার চেহারা পাল্টে গেছে নাকি?”

–“আপনি হাসতে জানেন??”
অদম্য উচ্ছাস নিয়ে কথাটা বলে ঐশানী। এমন কথা শুনে অভয় তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিয়ে তাকায়। সন্দিহান হয়ে বলে….
–“মানে? না হাসতে জানার কি আছে এখানে?”
–“আপনার সাথে প্রথম দেখার থেকে কখনো হাসতে দেখিনি। আমি তো ভেবেই নিয়েছিলাম যে আপনি হাসতেই জানেন না। ওইযে, একটা গল্প পড়েছিলাম একটা লোক কত বছর যেন না হেসে থেকেছিল। আমি তো আপনাকে ওই লোকেরই আপডেট ভার্সন ভেবেছিলাম।”

ঐশানীর উদ্ভট কথার কোনো জবাব খুঁজে পায় না অভয়। শুধু ধীরে বলে ওঠে……
–“যত্তসব অদ্ভুত চিন্তাভাবনা।”
বলেই আড়মোড়া ভেঙে উঠে দাঁড়ায় অভয়। হাই তুলে হাঁটতে হাঁটতে চলে যায় অন্যদিকে। পেছন থেকে ঐশানীর কথায় ফিরে তাকায় কিছুক্ষণের জন্য।
–“হাসলে আপনাকে খুব একটা খারাপও দেখায় না। মাঝে মাঝে হাসবেন। দেখবেন ফ্রেশ লাগবে। আপনার ফ্যামিলির সবাই যে আপনাকে নিরামিষ মনে করে সেটা আর করবে না।”

অভয় শুধু শোনে কথাগুলো। একটা টু শব্দও না করে হাঁটা দেয়। সকাল বেলা উঠে একটু না হাঁটলে তার চলেই না। আজ ঐশানী ছিল বলে দ্রুতই সরে এসে হাঁটতে লাগল সে। মেয়েটির সামনে তার অস্থিরতা প্রগাঢ় হয়। গতকাল যখন ঐশানী ঘুমে তার ওপর ঢলে পড়েছিল তখন সে ঘুম থেকে জাগ্রত হয়েছিল। তার ঘুম খুবই হালকা। একটু শব্দ হলেই ঘুম ভাঙে তার। সেই জায়গায় তার ওপর ঐশানী পড়েছিল! জাগতে তো হতোই। তবুও সরায়নি তাকে। এমনিতে মাথা গরম করে অনেক কথা শুনিয়েছে ঐশানীকে। সেকারণে তখন চুপচাপ সেভাবেই ঘুমিয়েছিল সে। আবার ঘুমিয়েছিল বললে ভুল হবে। ঐশানীকে নিজের এতো কাছে দেখে উসখুস করছিল। অশান্ত লাগছিল। এভাবে করতে করতেই ভোরের দিকে তারও চোখ লেগে আসে। এখন কয়টা বাজে কে জানে!

বাড়িতে কেউ হয়ত উঠেনি। এই ভেবে শান্ত হয়ে সোফায় বসে থাকে ঐশানী। কাকে ডাকবে কি করবে বুঝতে পারছে না। সবার আগে ফ্রেশ হওয়া দরকার। এসব ভাবতে ভাবতে দেখা পায় অনিন্দিতার। মিষ্টি হাসি নিয়ে ধীর পায়ে একে একে সিঁড়ি দিয়ে নামছে সে। বিনিময়ে ঐশানীও একটা মিষ্টি হাসি ছুঁড়ে দেয়।
–“গুড মর্নিং ভাবি। সো রাত টা নিশ্চয় অদ্ভুত কেটেছে! শান্তি মতো ঘুমাতে পারো নি। সমস্যা হয়েছে না?”
–“না। তবে একটু তো সমস্যা হয়েছে। সোফার সবটা জুড়ে তোমার নিরামিষ ভাই শুয়ে ছিল যে!

–“সেকারণে তুমিও ওর ওপরেই শুয়ে পড়লে। কি তাইতো?”
অনিন্দিতার কন্ঠে দুষ্টুমির আঁচ পায় ঐশানী। এমন কথায় লজ্জাগুলো এসে ভর করে তার মাঝে। কথাগুলো মুখে বন্ধ হয়ে যায়। তবুও থেমে থেমে থেমে বলে….
–“কি বলছো? আমি কেন উনার ওপর….”
–“মিথ্যে বলে লাভ নেই। আমি এই বাড়িতে সবার আগে উঠি। আজও উঠেছি। নিচে এসে সব দেখে ফেলেছি। সব থেকে বড় বিষয় এটাই যে ছবিও তুলে নিয়েছি।”

চোখটা মূহুর্তেই রসগোল্লার মতো হয়ে যায় ঐশানী। তারপর নড়েচড়ে উঠে গাম্ভীর্যের সঙ্গে উপদেশ দেওয়ার ন্যায় বলে ওঠে…..
–“দেখো অনিন্দিতা, ভালো মেয়েরা এমন করে না। আমি ইচ্ছে করে ওখানে ঘুমায় নি। ইচ্ছে করে কেউ ওই শক্ত পাটাতনের মতো শরীরের ওপর ঘুমায়? একদমই না। তুমি ভালো মেয়ের মতো ছবিগুলো ডিলেট দিবা ঠিক আছে?”
–“ভাবি, তুমি যাই বলো। নিজেই শক্ত পাটাতনের ওপর হা করে ঘুমাচ্ছিলে।” (হেসে)
ঐশানী কিছু বলার মুখ খুঁজে পায় না।

–“বাড়িতে নতুন সদস্য আসতে না আসতেই তাকে বিরক্ত করতে শুরু করেছিস অনি?”
মিসেস. তনয়া অনিন্দিতাকে উদ্দেশ্য করে বলেন কথাটি। অনিন্দিতা স্পষ্ট জবাবে বলে….
–“এই বাড়ির সদস্য যখন হয়েইছে তখন আমাকে তো সহ্য করতেই হবে।”
–“সেটাই। তোকে আর কে থামানোর আছে বল? ঐশানী মা, তুমি যাও ঘরে। আমি দরজা খুলে দিয়েছি। আমি গতরাতে যা করেছি তা কিন্তু তোমাদের ভালোর জন্য। কিছু মনে করো না।”
–“আম্মু আপনি তো বলেছিলেন যে আপনি মায়ের মতো শাসন করবেন। এখন এভাবে বলছেন কেন? আপনি শাসন করলে তবেই না মনে হবে আমার মা শাসন করছে!”

কথাগুলো বেশ ভালো লাগে মিসেস. তনয়ার। উনার মন বলে, এটা তার আরেক মেয়ে। এখন শুধু অভয় মেয়েটাকে নিজের করে নিতে পারলে হয়। কবে যে ছেলেটা চিনবে আসল সোনা!
ঐশানী উঠে চলে যায় রুমে ফ্রেশ হতে।

মিসেস. তনয়া আয়েশ করে বসে পড়েন সোফায়। সোফার থেকে বেশ কিছু দূরত্ব রেখে সামনেই সদর বড়সড় একটা দরজা। দরজা পেরিয়ে ছোটখাটো ফুলের বাগান মিসেস. তনয়া নিজহাতে বানিয়েছেন। সকালে চিনি ছাড়া আদা চা খেয়ে গাছে পানি দেওয়া নিত্যদিনের অভ্যেস। গলা ছেড়ে উনি ডাকতে থাকেন কাউকে।
–“রেনু! রেনু! কোথায় গেলি রে? এদিকে আয়। আদা চা কি আজ পাব না?”
রেনু এক প্রকাশ হম্বিতম্বি হয়ে হয়ে আসে হাতে চায়ের কাপ নিয়ে। রেনুকে এই বাড়ির কাজের জন্য রাখা হয়েছে। যদিও সহজেই এই বাড়ির আরেক সদস্যও হয়ে উঠেছে বলা চলে। দেখতে বেশ রোগা মতো! কোঁকড়ানো চুল সর্বদা খোঁপা করে রাখে।
–“এইতো বড় আম্মা আপনের চা।”

চা হাতে নিয়ে তৃপ্তি ভরে চুমুক দেন মিসেস. তনয়া। রেনুর হাতের থেকে মুখ চলে সবসময়। আজও মুখ চলা বাদ গেল না।
–“শুনলাম আপনে কালকে রাইতে নতুন জামাই-বউ রে বাসর ঘর থেইক্কা বাইর কইরা দিছেন। কথা খান সত্যি?”
–“হুমম।”
–“ওমা কেন বড় আম্মা? যাই কন! নতুন বউরে মিষ্টি দেখতে। চাঁদের বদন!”
–“তোর পছন্দ হয়েছে?”

মিসেস. তনয়ার কথায় রেনু হইহই করে উল্লাসের সাথে জবাব দেয়….
–“কি যে কন বড় আম্মা! এমন মিষ্টি মাইয়া কার না পছন্দ হয়। আমার পোলা বড় হইলে এমন মাইয়া দেইখা বিয়া দিমু।”
–“তোর যখন পছন্দ হয়েছে অভয়েরও হবে। কি বলিস??”
–“একশবার হইব। শুনছিলাম অভয় ভাই নাকি সাহেবের শত্রুর মাইয়ার লগে প্রেম করত? ওর লগে বিয়া না দিয়ে ভালা করছেন। বলা যায় না, হয়ত বাপের কথায় মাইয়াডা ষড়যন্ত্র করতেছিল।”

মিসেস. তনয়া দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন। বেশ ভারাক্রান্ত মনে বললেন….
–“তুইও বুঝে গেলি রেনু! অথচ এসব কথা অভয় বুঝল না। এতো এডুকেটেড ছেলে আমার ভুল করে কি করে?”
–“সবই আবেগের বশে বড় আম্মা! আবেগ ছাইড়া ভালোবাসা বুঝবো। তখন এমনেই বউয়ের পেছনে ছুটবো। মিলাই লইয়েন।”
–“দেখা যাক। এখন যা তো রান্নাঘরে। ইশান ছেলেটা বাড়িতে এসেছে ভালোমন্দ খাওয়াতে হবে। তাছাড়া নতুন বউও তো এসেছে নাকি!”
কথা না বাড়িয়ে রেনু ছোটে রান্নাঘরের দিকে।

পেছনে দাঁড়িয়ে দেখে সবটাই শুনছিল অনিন্দিতা। এসব কথায় কনফিউজড হয়ে মায়ের পাশে বসে পড়ে সে। ভাবুক হয়ে বলে ওঠে….
–“মা, তোমার কি সত্যিই মনে হয় কখনো ভাবির ওপর ভাইয়া আকৃষ্ট হতে পারে?”
–“অবশ্যই হবে। বিয়ে বন্ধন কতটা পবিত্র তুই জানিস? এই বন্ধন একবার কারো সাথে জুড়ে গেলে তা ছাড়ানো বড্ড কঠিন হয়ে পড়ে। বিয়ে হওয়া মানে এই মালার পাশাপাশি দুটো ফুল হয়ে যাওয়া। বাঁধন ছিঁড়লে দুজনেই পড়ে যাবে।”
সায়রা বেশ মনোযোগ দিয়ে শোনে কথাগুলো। তারপর জিজ্ঞেস করে…..
–“আর সায়রা? ওদের মাঝে বার বার সায়রা আসে তাহলে কি করে তা হবে?”

–“এই সম্পর্কে আমারও কোনো ধারণা নেই অনি। আমি বুঝতেই পারছি না এর পরিণতি কি! কিন্তু কাল ওরা যেভাবে কথা কাটাকাটি করছিল তাতে বার বার চিন্তিত পড়ছি আমি। বিয়ে দিয়ে ভুল করলাম না তো?”
অনিন্দিতা মাথা নাড়ায়। নিজের মাকে আশ্বাস দিয়ে বলে….
–“এক্ষুনি তে বললে বিয়ে পবিত্র বন্ধন। এখনি বলছো ভুল করেছো? ওরা একদিন ঠিক দুজন দুজনের পরিপূরক হয়ে উঠবে দেখো!”

হঠাৎ পেছনে চেনা পরিচিত পুরুষালি কন্ঠ ভেসে আসে। অনিন্দিতা উঠে দাঁড়ায়।
–“তেল আর পানিকে একসাথে করানো যতটা কঠিন! তার থেকেও দ্বিগুন কঠিন হচ্ছে আমাকে আর ঐশানীকে এক করানো।”
–“ভালোবাসা সবসময় নিজের থেকে বিপরীত মানুষের প্রতিই জন্মে। তোরও জন্মাবে। সেদিন তুই পাগলের মতো চাইবি ঐশানীকে।”
অভয় সন্দেহী চোখে তাকায়। তার ধারণা এমনটা কখনো হবার নয়। হতেই পারে না। ক্ষীণ সুরে বলে…..
–“চ্যালেঞ্জ করিস না। হেরে যাবি।”
–“এই জীবনে কনফিডেন্সের সাথে তোর সঙ্গে বাজি ধরলাম ভাইয়া।”
–“তাহলে কনফিডেন্স গুঁড়িয়ে যাবার জন্য রেডি থাক।”
অনিন্দিতা বিনিময়ে হাসি দিয়ে বুঝিয়ে দেয় সে হারবার পাত্রী নয়।

গোসল করে চুল ঝাড়তে ঝাড়তে বের হচ্ছে ঐশানী ওয়াশরুম থেকে। ধমকানিতে পিলে চমকে ওঠে তার।
–“হোয়াট দ্যা হেল! চুলের বাহার দেখতে চাইনি আমি তোমার। স্টপ।”
–“আরে অদ্ভুত তো। গোসল করে একটু নায়িকা নায়িকা ফিলিংস বানিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হচ্ছিলাম আর মাঝখানে ভিলেন হয়ে এসে ঢুকে বন্ধ করে দিলেন নায়িকাগিরি?”
–“নিজের বাড়িতে অনেক নায়িকাগিরি দেখিয়েছো। আমার এখানে এসব চলবে না।”

ঐশানী চোখ ছোট থেকে ছোট্ট করে তাকায়।
–“আপনি টিপিক্যাল বরের মতো করছেন কেন? কি হয়েছে বলুন তো? এজন্যই তো বলি আপনার একটু লুজ আছে।”
–“হোয়াট??”
বলেই নিজের প্যান্টের দিকে তাকায় অভয়। সে টাওজার পড়েছিল। নাহ কোথাও লুজ তো হয়নি। ঐশানীর দিকে রাগান্বিত চেহারা নিয়ে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করে ও কি বলল একটু আগে? ঐশানী ঠোঁট বাঁকিয়ে বলে….
–“আরে ধুর প্যান্ট না! ক্যারেক্টার, ক্যারেক্টার। কাল রাতে বললাম তো ভালোবাসা নিয়ে রচনা শুনিয়ে দিলেন।” (ঠোঁট উল্টিয়ে)

অভয় চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে ঐশানীর টাওয়াল নিয়ে নেয়। হাত বাড়িয়ে দিয়ে টাওয়ালটা মুড়িয়ে দেয় ঐশানীর চুলে। গমগমে আওয়াজে বলে ওঠে….
–“তোমার নায়িকাগিরি দেখাতে গিয়ে পেছনের চুল থেকে পানি পড়ে ব্লাউজসহ শাড়িও ভিজে যাচ্ছে। নিজের খেয়াল রাখতে পারো নাকি সবসময় আবোলতাবোল বকতে ব্যস্ত থাকো?”
ঐশানী কিছু না বলে নির্বাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। নিজের চুলটা ঠিক করে মুছে নেয়। অভয়ও নিজের টাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ায়।

হঠাৎ কি যেন মনে হলে পেছন ঘুরে তাকিয়ে বলে….
–“গতরাতের জন্য সরি। আমার এতোকিছু বলা উচিত হয়নি।”
–“ও আমি কিছু মনে টনে করিনি। আপনার কথায় মনে করার কি আছে? আপনি যে গোমড়ামুখোর শ্যামলা ঘোড়া সেটা আমার জানা হয়ে গেছে। আমিও তখন ইমোশনাল হয়ে অনেক কিছু বলেছি। তবে হ্যাঁ আপনার প্রেমিকার সাথে মিলিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব আমার।”
অভয় সবটা শুনে ওয়াশরুমের গেট লক করে দেয়।
কিছুক্ষণের মধ্যে তীব্র চিৎকারে কানে তালা লেগে যায় ঐশানীর। ওয়াশরুম থেকে অভয় বলে ওঠে….
–“এই মেয়ে, আমার ব্রাশের কি অবস্থা করেছো? ইয়াক!!”

ঐশানীর কিছু একটা মনে হতেই জিহ্বা কাটে। মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলে….
–“ইয়ে মানে ওটা ব্রাশ ছিল? আমি তো ভাবিনি। বেসিন নোংরা হয়ে ছিল তাই পরিষ্কার করে দিয়েছি ওটা দিয়ে।”
ঐশানীর কথায় আরো একটা ভয়ানক চিৎকার দিয়ে অভয় ডাকে…..
–“ঐশানী আমি বাইরে বের হলে কিন্তু কি করব জানি না!”
ঐশানীকে আর পাওয়া যায়? সুযোগ বুঝে কেটে পড়ে রুম থেকে।

খাবার সময়। সবাই খেতে ব্যস্ত। ঐশানী সবাইকে খাবার বেড়ে দিচ্ছে। অনেক বলার পরেই সে এই দায়িত্বটা পেয়েছে। মিসেস. তনয়া মেয়েটাকে কাজ করাতে রাজি নন। তার ওপর ঐশানী তেমন একটা কাজও জানে না। তবুও খাবার বেড়ে দিচ্ছে সে। অভয় চূড়ান্ত রেগে আছে। মুখ লাল করে খাবার চিবুচ্ছে। তা দেখে মিসেস. তনয়া বলে….
–“আহ অভয়, সামান্য ব্রাশই তো! কিনে নিবি। এটার জন্য মুখ লাল করে থাকার প্রয়োজন দেখছি না। মেয়েটা খেয়াল করেনি।”
–“হ্যাঁ তাই তো। ছেলেটা এমন করছে যেন হিরা চুরি হয়েছে।”
মজা করে বলেন রাহাত সাহেব। অভয় কিছুই বলে না। জানে মা ঐশানী নামক মেয়েটিরই পক্ষ নেবে। চুপচাপ খেতে থাকে।

একসময় মিসেস. তনয়ার জোড়াজুড়িতে ঐশানী নিজেও বসে পড়ে খাবার টেবিলে। খাবারে মাছ রয়েছে। মাছের কাটা বাছতে ঐশানীর সমস্যা হয়। কিন্তু সেটা প্রকাশ করে না সে। মাছ অনেকক্ষণ ধরে বেছে বেছে খেতে থাকে। এক পর্যায়ে হুট করেই গলায় আঁটকে যায় কাটা। কাশতে শুরু করে ঐশানী। সবাই অস্থির হয়ে ওঠে। কিন্তু অভয় বাদে।অনিন্দিতা পানি এগিয়ে দেয়। পানি এগিয়ে দিয়েও বিশেষ কোনো লাভ হয় না। ইশান অভয়কে ধাক্কা দিয়ে ফিসফিস করে বলে….
–“তোর বউ রে একটা চুমু খা। দেখবি সব ঠিকঠাক। আরে বিয়ের পরেই তো বউয়ের মেডিসিন হয় স্বামী।”
–“ইডিয়েট মার্কা কথাবার্তা কম বল।”

বলেই নিজের হাতে ভাত মুঠো করতে থাকে অভয়। সবাই হতভম্ব হয় অভয়ের হেলদোল না দেখে। হতাশও হয়। ছেলেটার মেয়েটার প্রতি কোনো মায়া অবধি নেই। সে খেতে ব্যস্ত। কি করে ভালোবাসা জন্মাবে? কিন্তু সবাইকে ভুল প্রমাণ করে অভয় শুধু ভাত ঐশানীর মুখের সামনে ধরে। ঐশানীর কাশি সেখানেই থেমে যায়। সেও অবাক। মানুষটারও মায়া হয় তার প্রতি?
–“কি হলো খাও! খালি ভাত খেলে গলার কাটা নেমে যাবে।”
নড়েচড়ে ঐশানী ভাত মুখে নেয়। ভাত গিলতেই গলার কাটা নেমে যায়। সবার দিকে তাকিয়ে অভয় খাওয়াতে মন দেয়।
–“আমি এতোটাও নির্দয় নই যতটা তোমরা ভাবো। সাহায্য করতে ক্ষতি কি?”
এটা কি সাহায্য ছিল? নাকি কেয়ার?

চলবে…..

[বি.দ্র. অভয়কে হাসতে দেখে কার কেমন রিয়েকশন? ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here