পুষ্পের_হাতে_পদ্ম (পর্ব- ০৪)

0
1631

#পুষ্পের_হাতে_পদ্ম (পর্ব- ০৪)
– সুমাইয়া বিনতে আ. আজিজ

কেউ তো কল্পনাও করতে পারেনি যে, বিবাহিত একটা মেয়েকে আকিব এভাবে ভাগিয়ে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করবে। এটা তো রীতিমতো অবিশ্বাস্য ও অসম্ভব একটা কর্ম। সেই অবিশ্বাস্য ও অসম্ভব কর্মটাকে অতি সহজেই সম্ভবে পরিণত করে আকিব ভাই আর পুষ্প ভাবি ঢাকায় গিয়ে ওদের নব্য সংসার জীবনের সূচনা ঘটায়। সে নব্য সংসারের অন্তরালে কারো বদদোয়া, দীর্ঘশ্বাস, বুক ফাটা আর্তনাদ, হাহাকার, হৃদয়ের রক্তক্ষরণ ব্যতীত অন্য কিছুই ছিল না।

১০

প্রথম অবস্থায় ব্যাপারটা চেপে রাখা গেলেও পরবর্তীতে তো আর চেপে রাখা যায়নি। এইসব ঘটনা বাতাসের আগে আগে ছড়ায়। পুষ্পর প্রাক্তন শ্বশুরবাড়ি এই খবর পৌঁছানো মাত্রই সেখানকার প্রতিটা সদস্য পুরোপুরি স্তব্ধ, বাকরুদ্ধ হয়ে যায়। এটা যেন স্রেফ একটা দুঃস্বপ্ন। বাস্তবে পুষ্পকে দ্বারা এটা কখনোই সম্ভব না। এই বাড়িতে কেউ তাকে এমন কোনো কিছুর অভাব কখনো দেয়নি যার জন্য ওকে আরেক ছেলের হাত ধরে পালাতে হবে। আর ওর চালচলনও কখনো সন্দেহজনক মনে হয়নি। তাহলে তারা কেন এইসব আজগুবি কথাবার্তা বিশ্বাস করবে? প্রশ্নই আসে না এসব বিশ্বাস করার!

তাকবিরেরও একই অবস্থা। তার পক্ষেও পুষ্পর বিরুদ্ধে এতবড় অপবাদ কিছুতেই হজম করা সম্ভব না। সে তার বাবাকে ফোন করে বলল, “পুষ্প যদি সত্যিই এখন ওই ছেলের সাথে থাকে তবে আমি এটা বলতে বাধ্য হবো যে পুষ্পকে ওই ছেলে জোর করে তুলে নিয়ে গেছে। ও কিডন্যাপড হইছে। ও স্বেচ্ছায় কখনো ওই ছেলের সাথে যায় নাই। আমি ওকে খুব ভালো করেই চিনি। এইতো দুইদিন আগেও তো ও আমার দেশে আসা নিয়ে আমার সাথে কত প্ল্যান-প্রোগ্রাম করল। আমি দেশে আসলে এইখানে ঘুরতে যাবে, ওইখানে যাবে। কক্সবাজার গিয়া পনেরদিন থাকবে। আরো কত কথা! কত্ত এক্সাইটেড ছিল সে আমার দেশে আসা নিয়ে!”

তাকবির থামল। ওর গলাটা ধরে আসলো কেমন যেন। ওদিকে ওর বাবাও ছেলের এমন আর্তনাদমিশ্রিত বুলি শুনে নীরবে অশ্রু ঝরাচ্ছেন। কোনো কথা বলতে পারছেন না তিনি। শুধু শুনেই যাচ্ছেন ছেলের আর্তনাদ।

তাকবির এবার ব্যাকুলতার সাথে কান্নাজড়িত স্বরে বলল, “আব্বা! তুমি পুষ্পকে ভুল বুইঝো না প্লিজ। তুমি ওর উপর রাগও কইরো না। খোঁজ নিয়া দেখো কোথায় আছে ও। যেখানেই থাকুক, ওরে তুমি সসম্মানে বাড়িতে নিয়ে আসো। এই দুর্ঘটনার জন্য ওকে কেউ যেন একটা বাঁকা কথাও না বলে। কেউ যেন ওকে কোনোরকম দোষারোপ কখনো না করে। তুমি ওকে সসম্মানে বাড়ি নিয়ে আসো আব্বা। ”

তাকবির আর কিছু বলতে পারল না। ওর বুকটা ক্রমশও ভারী হয়ে আসছে। বহু কষ্টে বুকের মাঝে জমিয়ে রাখা কান্নাগুলো গলায় এসে দলা পাকাচ্ছে। তবুও সে কাঁদতে পারছে না। পুরুষদের নাকি কান্না করতে নেই! সে নিজের কান্না চেপে রেখে প্রাণপণে পুরুষ হওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করে যাচ্ছে। এক পর্যায়ে এসে যখন মনে হলো যে, তার পক্ষে পুরুষজাতির এই চির-চারিত বৈশিষ্ট্য নিজের মধ্যে ধারণ করা আর সম্ভব হয়ে উঠছে না; তখন সে বাবার ফোনটা কেটে দিলো। পুরুষজাতির বৈশিষ্ট্য নিজের মধ্যে ধারণ করতে না পারার অক্ষমতার ব্যাপারে সে অন্য কাউকে অবহিত করতে চায় না। তাই বাবার ফোনটা কেটে দিয়ে আলমারি থেকে ওর কাছে রাখা পুষ্পর পরনের শাড়িটা বের করে, সেটা বুকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে অবুঝ বাচ্চাদের মতো কেঁদে উঠল।

পুষ্পর গায়ের গন্ধকে সর্বক্ষণ নিজের সাথে সাথে রাখার জন্য ওর পরনের এই শাড়িটা সে দুইবছর আগে বাংলাদেশ থেকে সুদূর ইতালিতে বয়ে নিয়ে এসেছিল। এই শাড়িটা বুকে জড়িয়ে ধরে রেখে পুষ্পকে অনুভব করতে করতে কত রাত যে কাটিয়ে দিয়েছে সে! আগে এই শাড়িটা বুকে জড়িয়ে ধরলে পুষ্পকে কত কাছের মনে হতো! মনে হতো, পুষ্পর শাড়ি নয়; বরং স্বয়ং পুষ্পই বুঝি ওর বুকে লেপ্টে আছে। অথচ আজ এই শাড়িটা বুকে জড়ানোর পর পুষ্পকে আর কাছের কাছের মনে হচ্ছে না কেন? কেন মনে হচ্ছে না যে, পুষ্প ওর বুকে গুটিসুটি মেরে লেপ্টে আছে? কেন আজ নিয়তির সাথে সাথে অনূভুতিরাও তার সাথে মজা নিচ্ছে?

এরকম হাজারো প্রশ্ন তাকবিরের বুক চিড়ে অস্ফুট কান্নার সাথে বের হতে লাগল। কিন্তু সেসব প্রশ্নের কোনো উত্তরই তৎক্ষনাৎ আর মিলল না।

দুইদিন পর তাকবিরের বাবা যখন ওকে জানালো যে, পুষ্পকে জোর করে নয়; বরং সে স্বেচ্ছায়ই আরেক ছেলের হাত ধরে পালিয়ে গিয়েছে, তখনও তাকবির অপ্রকৃতস্থ ভঙ্গিতে বেসামাল হয়ে বলে যাচ্ছিল, “তবুও ওর কোনো দোষ নাই আব্বা। ও ছোট মানুষ। না বুঝে একটা ভুল করে ফেলছে। ওরে তুমি বুঝাইয়া বাড়ি নিয়া আসো।”

ছেলে যে বউ-পাগল সেইটা তাকবিরের পরিবারের লোকজন জানত। কিন্তু সে যে বউয়ের ব্যাপারে এরকম বদ্ধপাগল সেইটা ওর পরিবারের লোকজনের ধারণার বাইরে ছিল। তাকবিরের এরকম পাগলামি, অস্থিরতা রীতিমতো ওর পরিবারের লোকজনের জন্য ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। হাজার হোক, সে দূর দেশে একা থাকে। এরকম একটা পরিস্থিতিতে এরকম একটা পাগলকে মানসিক সাপোর্ট দেয়ার জন্য হলেও কাউকে না কাউকে পাশে থাকা প্রয়োজন। কিন্তু ওর পাশে তো কেউই নেই। আল্লাহ না করুন, সে যদি উল্টা পাল্টা কিছু করে বসে তখন! যেরকম পাগলামি শুরু করেছে সে, তাতে করে উল্টা পাল্টা কিছু করে ফেললেও খুব একটা অবাক হবে না কেউ।

সবশেষে তাকবির ওর বাবাকে অনুরোধ করে বলেছিল, অন্তত একটাবার যেন উনি পুষ্পর সাথে ওর ফোনালাপের ব্যবস্থা করে দেন। পুষ্প চলে যাওয়ার পর থেকে ওর ফোন নাম্বার বন্ধ পাচ্ছে তাকবির। কোনোভাবেই ওর সাথে যোগাযোগ করতে পারছে না। কিন্তু একটাবার, অন্তত একটাবার ওর সাথে কথা বলা যে বড্ড বেশি জরুরি। তাকবিরের কেন যেন শুধু মনে হয় যে, সবার কথাই মিথ্যা। সব মিথ্যা। পুষ্পর সাথে একটাবার কথা বললেই সত্যিটা সে জেনে যাবে। তার আগে কিছুতেই সত্যিটা জানা সম্ভব না। পুষ্পর মুখ থেকে সরাসরি কিছু শোনার আগে সে কারো কথাই মন থেকে বিশ্বাস করতে পারবে না। কারো কথাই না। কিন্তু সেই কথা বলাটাই তো সম্ভব হয়ে উঠছে না। বাবাকে অনুরোধ করায় বাবা প্রত্যুত্তরে বলেছিলেন, “ওর লগে তোরে কেমনে কথা কওয়াই দিমু? ওর লগে তো আমরাই আর সরাসরি যোগাযোগ করবার পারি নাই। ওর ভাই যতটুকু যা কইছে, আমরা ততটুকুই জানি।”

বাবার কথা শুনে তাকবির উৎফুল্ল হয়ে বলেছিল, “তাইলে তো পলাশ ভাইকে বললেই উনি পুষ্পর সাথে আমার যোগাযোগ করার ব্যবস্থা করে দিতে পারবে৷ তাই না আব্বা?”

বাবা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেছিলেন, “পারব না রে বাপ। পুষ্প তো ওর ভাইয়ের লগেও যোগাযোগ করে নাই। ভাইয়ের লগে কথা কওনের সাহস পাইবো কই এহন? ও বিয়া কইরা ঢাকায় নাকি গেছে। ঢাকায় গিয়া বিয়াইনরে কল দিয়া কইছে যে, ওর জন্যে জানি কেউ চিন্তা না করে। ও ভালো আছে। ওইটুকুই কইয়াই ওই নাম্বার নাকি বন্ধ কইরা দিছে। আর খুলে নাই। ”

তাকবির আর কথা বাড়ায়নি বাবার সাথে। ওর গলা দিয়ে আর যেন কথা বেরুচ্ছিল না তখন। বাবার ফোনটা কেটে দিয়ে সরাসরি শাশুড়িকে ফোন দেয়। ফোন দিয়ে আকুতিভরা স্বরে ধরা গলায় বলেছিল, “আমি জানি আম্মা, পুষ্প আবার আপনার সাথে যোগাযোগ করবে। ও আপনার সাথে নেক্সট টাইমে যোগাযোগ করলে আপনি প্লিজ শেষ বারের মতো ওর সাথে একটাবার আমার যোগাযোগ করিয়ে দিয়েন আম্মা। শুধুমাত্র একটাবার! একটাবার আমি ওর সাথে কথা বলতে চাই।”

পুষ্পর মা স্পষ্ট বুঝতে পারছিলেন যে তাকবির কাঁদছে। কাঁদছিলেন তিনি নিজেও। কান্নাভেজা স্বরে তাকবিরকে কথা দিয়েছিলেন যে, সে সেভাবেই পারুক পুষ্পর সাথে তাকে কথা বলিয়ে দিবে।

তাকবির সেই অপেক্ষাতেই ছিল। একদিন, দুইদিন, এক সপ্তাহ, এক পক্ষ; অতঃপর অপেক্ষা করতে করতে একমাসই অতিবাহিত হয়ে গেল। তাকবিরের দেশে আসার দিনও দোরগোড়ায় এসে পড়ল। দেশে আসলো তাকবির। সঙ্গে নিয়ে আসলো পুষ্পর জন্য কিনে রাখা এত শত জিনিসগুলোও। শুধু যে দেশে আসার ডেট ফিক্সড হওয়ার পর পুষ্পর জন্য সে কেনাকাটা করেছে এমনটা না। বরং এই দুই বছরে যখন যা ভালো লেগেছে পুষ্পর জন্য, তাই কিনে কিনে রেখেছিল নিজের কাছে। একটা, দুইটা করে কিনতে কিনতে কত জিনিসই যে জড়ো হয়েছে! সেসবের দিকে তাকিয়ে শুধু দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া আর কিছুই করার নেই এখন। সবকিছুই সে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছে। তার দৃঢ় বিশ্বাস, পুষ্প একটাবার ওর সাথে কথা বললে ওকে সে যেভাবেই হোক ফিরে আসতে রাজি করাতে পারবে। এত আত্মবিশ্বাস সে কোত্থেকে পায় কে জানে!

তাকবির যেদিন দেশে আসলো তারপরের দিনই সন্ধ্যার পর পুষ্পদের বাড়ি যায়। কাকতালীয়ভাবে তাকবির ওই বাড়িতে উপস্থিত থাকাকালীনই পুষ্প দ্বিতীয়বারের জন্য ওর মায়ের কাছে ফোন দেয়। আর পুষ্প যখন ফোন দেয় তখন ওর মা তাকবিরের সামনেই বসা ছিল। মা-মেয়ের কুশলাদি বিনিময় শেষে পুষ্পর মা আবেগময়ী কণ্ঠে অনুনয়ের স্বরে বলল, “তোরে শ্যাষবারের নাগাল একটা অনুরুদ করি মা? আমার শ্যাষ অনুরুদডা রাকবি?”

পুষ্প কী বুঝলো কে জানে! বলল, “আর যাই বলো, ফিরা আসতে বইলো না আমারে। আমি ফিরা আসতে পারমু না মা।”

পুষ্পর মা বললেন, “ফিরা আইবার কমুও না। অন্য একটা অনুরুদ করমু। কতা দে রাকবি।”

পুষ্প কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, “আচ্ছা, রাখা সম্ভব হইলে রাখমু।”

“তাকবির আমার সামনে বইয়্যা রইছে। ও তোর লগে কথা কইবার চায়। তুই ওর লগে একটুখানি কথা ক মা।” একদমে অনুরোধটুকু পেশ করলেন পুষ্পর মা।

তাকবিরের কথা শুনে পুষ্পর কলিজাটা ধক করে উঠল। মায়ের এরকম অনুরোধ শুনে বিস্ময়ের সপ্তম পৌঁছে বলল, “মা!”

পুষ্পর মা ওর বিস্ময় ভঙ্গিকে উপেক্ষা করে বললেন, “যদি আইজ তুই ওর লগে কতা না কস তাইলে আর জীবনেও আমারে ফোন দিবি না। আমার লগে কথা কবি না।”

পুষ্প কিছুক্ষণ স্তব্ধ, বাকরুদ্ধ হয়ে বসে রইল। ওই মানুষটার সাথে তার কথা বলার আর মুখ নেই। কিভাবে কথা বলবে তার সাথে? কী কথা বলবে? কোন মুখে কথা বলবে? তার সাথে কথা বলার সমস্ত যোগ্যতা সে স্বেচ্ছায় গলাটিপে হত্যা করেছে। এমনিতেই তো সে নিজের কাজের জন্য চরমভাবে লজ্জিত। এখন আবার ওই মানুষটা তার সাথে কথা বলতে চেয়ে ওকে আরো বেশি লজ্জায় ফেলতে চাচ্ছে কেন? সে কি বুঝে না যে তার সাথে কথা বলা কিংবা তার মুখোমুখি হওয়া ওর পক্ষে সম্ভব না আর?

পুষ্পর এই নিস্তব্ধতার মাঝেই তাকবির শাশুড়ির হাত থেকে ফোনটা নিয়ে এক পৃথিবী সমান আবেগ, অনুরোধ, কাকুতি-মিনতি, কান্না স্ব-কণ্ঠে ঢেলে দিয়ে বলল, “ফোনটা কাটবা না পুষ্প। প্লিজ পুষ্প। পাঁচটা মিনিট কথা বলো আমার সাথে। প্লিজ ফোন কাটবা না পুষ্প। আল্লাহর দোহাই লাগে!”

তাকবিরের কণ্ঠ কান্নায় জড়িয়ে গেল। সে ফোনটা হাতে নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে রাস্তার দিকে চলে গেল। ওদিকটায় রাতের বেলা মানুষজনের আনাগোনা না থাকায় বেশ নিরিবিলি থাকে৷

ওদিকে পুষ্প ফোন কাটতে গিয়েও তাকবিরের কান্নার শব্দ শুনতে পেয়ে আর কাটতে পারল না। আবেগী হয়ে নিজেও কান্না করে ফেলল। কান্নাভেজা স্বরে বলল, “তোমারে কষ্ট দেওয়ার কোনো ইচ্ছা ছিল না আমার। আর আমি তোমারে ঠকাইতেও চাই নাই। যা করছি নিজের সাথে না পাইরা করছি। আমার মাফ কইরা দিয়ো তুমি।”

তাকবির পুষ্পর কথাকে উপেক্ষা করে আবেগঘন স্বরে নিজের আবেদন পেশ করলো, “তুমি ফিরা আসো পুষ্প। তুমি যা যা করছ আমি সবকিছু ভুলে যাব। আই প্রমিস পুষ্প! শুধু তুমি ফিরা আসো প্লিজ।”

এতকিছুর পরেও তাকবিরের মুখ থেকে এরকম কিছু শোনার জন্য একদমই প্রস্তুত ছিল না পুষ্প। তাই স্বাভাবিকভাবেই তাকবিরের কথা শুনে সে খানিকটা থমকে যায়। এই কথার প্রত্যুত্তরে ওর কী বলা উচিত সেইটা যেন ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না। ঠিক এই মুহূর্তেই ওর মন ও মস্তিষ্ক উভয়ই যেন নিজেদের সংঘাতের অবসান ঘটিয়ে প্রথমবারের মতো একসাথে ওকে তীব্রভাবে নিন্দা জানিয়ে বলল যে, “ভুল করে ফেলেছিস তুই! বড্ড বেশিই ভুল করে ফেলেছিস!”

পুষ্প বেশ অবাক হলো। অন্যান্য সময় ওর মনটা ওর মস্তিষ্কের বিরুদ্ধে কাজ করে সবসময়। এইযে এতসব কাহিনী ঘটিয়ে ফেলল ও; এই সবকিছু তো মনের কথা শুনতে গিয়েই হয়েছে। মস্তিষ্কের কথামতো চললে কখনোই এতসব কাহিনী সে ঘটাতে পারত না। যখনই সে নেতিবাচক কিছু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তখনই মন আর মস্তিষ্ক; দুজন দুজনের সাথে বাকবিতণ্ডা শুরু করে দিয়েছে। মস্তিষ্ক যতবারই ওকে নেতিবাচক কাজ থেকে বিরত রাখতে চেয়েছে, মনটা ঠিক ততবারই নেতিবাচক কাজের প্রতি ওকে অগ্রসর হতে উৎসাহ দিয়েছে। এবং বরাবরই মস্তিষ্ক মনের কাছে হার মেনেছে।

পুষ্পর মনে হলো যে, এই প্রথম তার মস্তিষ্ক আর মনের মধ্যে একতা দেখতে পেল সে। আর এটা উপলব্ধি হওয়ার সাথে সাথেই মনে মনে সে ভড়কে গেল। তবে কি সত্যিই সে আবেগে অন্ধ হয়ে বড়সড় কোনো ভুল করে ফেলল? একটা সোনার হরিণকে সে স্বেচ্ছায় গলা টিপে হত্যা করল! এরকম একটা ফেরেস্তার মতো মানুষকে সে কীভাবে কষ্ট দিতে পারল? এত কষ্ট তো এই মানুষটার প্রাপ্য ছিল না। তবে কেন পুষ্প তাকে এত কষ্ট দিলো?

ঠিক এই মুহূর্তে হঠাৎ পুষ্পর কানে দূর কোথাও থেকে একটা গানের সুর ভেসে আসলো,

“আলেয়ার পিছে, ঘুরে মিছে মিছে,
বুঝিনি সে আলোর ভাষা;
আজকে তোমাকে হারিয়ে বুঝেছি, কাকে বলে ভালোবাসা!”

কিছুক্ষণ ঝিম মেরে বসে থাকার পর পুষ্প বুঝতে পারল যে, গানের এই সুরটা দূরের কোনো জায়গা থেকে নয়; বরং তার বুকের গহীন থেকে বুকের চামড়া চিড়ে এই গানের সুর বের হচ্ছে।

চলবে ইন-শা-আল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here