বেলা_শেষে_শুধু_তুমি শেষ পর্ব (প্রথমাংশ)

0
1642

বেলা_শেষে_শুধু_তুমি শেষ পর্ব (প্রথমাংশ)
#আনিশা_সাবিহা

–“কিন্তু আমি তো ভরসা পাচ্ছি না মিস. ঐশানী। আগের বারের মতো আবার আমায় ছেড়ে চলে গেলে নিজেকে সামলানো বড় কষ্টকর হয়ে যাবে। এতো বড় রিস্ক নিতে ইচ্ছে করছে না আমার।”
অভয়ের কথায় ঠোঁটজোড়া উল্টে অসহায় চোখে তাকায় ঐশানী। অভয়ের হাতজোড়া নিজের হাতে কোমলভাবে ধরে ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বলে…..
–“আপনিও তো বুঝুন আমার সিচুয়েশন টা। আমি বুঝতে পারিনি আপনাকে কোন মুখে এতো বড় সত্যি বলব। উত্তেজিত হয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি। আর তার জন্য আমি মুহূর্তে মূহুর্তে ভুগতে থাকি।”
–“তাহলে ফিরে আসতে কি হয়েছিল?”

–“এই ভেবে আসিনি যে আপনি হয়ত আমায় ভুলে….”
পুরোটা না বলেই থেমে যায় ঐশানী। পিটপিট করে তাকায় অভয়ের দিকে। অভয় তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকে।
–“আমি তোমাকে ভুলে গেছি এই ভেবেই আসোনি তাই তো? আমি তো জানতাম ভালোবাসার মানে তুমি জানো ঐশানী! কিন্তু তুমি তা জানো না। ভালোবাসা প্রিয় মানুষকে ভুলতে যাওয়া শেখায় না। ভালোবাসা প্রিয় মানুষকে নিজের মাঝে খুঁজতে শেখায়।”
–“আই এম সরি!”
অনুতপ্ত হয়ে বলে ঐশানী। অভয় কি বলবে ভেবে পায় না। এতোকিছুর জন্য সরি? জাস্ট সরি? এটা মানতে পারছে না সে।

ঐশানী দেখে অভয় অন্যদিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবছে। ঐশানী মিনমিনিয়ে বলে…..
–“আপনি আমায় বিয়ে করবেন তো?”
–“ভেবে দেখব।”
ঐশানী এবার রেগে যায়। কোমড়ে হাত দিয়ে ভ্র কুঁচকে চেঁচিয়ে বলে…..
–“আপনি আমায় বিয়ে করবেন না? তো কাকে করবেন? সায়রাকে? হ্যাঁ? ওকে করবেন বিয়ে? কালকেও দেখেছি আপনাদের হেসে কথা বলতে। সায়রাকে বিয়ে করবে….”
কথার মাঝখানে ঐশানীকে এতো জোরে কথা বলতে দেখে মুখটা চেপে ধরে অভয়। এতো জোরে কেউ কথা বলে?

–“এই এই চুপ! এতো চিল্লিয়ে কথা বলে নাকি? তাও আবার সায়রার সঙ্গে আমাকে জুড়ে দিচ্ছো! ওর সঙ্গে আমার কোনো লেনাদেনা নেই।”
ঐশানী শুধু ‘উম…উম…’ শব্দ করে চলেছে আর অভয়ের হাত নিজের মুখের ওপর থেকে সরানোর চেষ্টা করছে। অভয় ঐশানীর বড় বড় চোখ সহ পা থেকে মাথা পর্যন্ত সূক্ষ্ম চাহনি নিয়ে পর্যবেক্ষণ করে নিল। ঘোর লাগানো কন্ঠে বলল…..
–“লুকিং গর্জিয়াস…! আমার পছন্দ এতোটাও খারাপ না। কি বলো? নাকি তুমি মানুষটাই এমন সবেতেই মুগ্ধতাময়ী দেখায়?”
–“আরে ঐশু! কি করছিস এখানে? ঘর থেকে বের হতে মানা করলাম না?”
মেয়েলি গলায় অভয় ঐশানীকে ছেড়ে দুইহাত দূরে ছিটকে গিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে হালকা কাশে।

ঐশানী বড় কয়েকটা শ্বাস নিয়ে রিনির দিকে তাকায়। রিনি একবার ঐশানী আরেকবার অভয়ের দিকে তাকায়। বোধহয় সে একেবারেই ভুল সময়ে এসে পড়েছে। কি বলা উচিত তাও বুঝতে পারছে না। হাসতে চেয়েও যখন হাসি এলো না পাশ কাটিয়ে দিয়া গিয়ে ঐশানীর হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যেতে যেতে বলল…..
–“বিয়ের আগে নিজেদের সঙ্গে এতো পারসোনাল কথা কীসের? পারসোনাল কথা, পারসোনাল কাজ সব বাসর ঘরে হবে। চল এখন।”
ঐশানী দিয়ার সঙ্গে চলতে চলতে ভাবুক হয়ে উঠল। দিয়ার কথাবার্তায় পরিষ্কার বিয়েটা অভয় আর ঐশানীর হবে। মাথাটা একপাক চক্কর দিয়ে ওঠে তার। তাহলে কিছুক্ষণ আগে অভয় যা ভয় দেখালো তা কি ছিল? ঐশানী পেছন ফিরে তাকায়। অভয় বুকে হাত রেখে স্মিত হেসে দাঁড়িয়ে আছে। ঐশানীকে পেছন ঘুরতে দেখে চোখ টিপ দিল সে। সঙ্গে সঙ্গে ঢক গিলে ঘাড় সোজা করল ঐশানী। কি সাংঘাতিক লোক….!‌

ঘরে পায়চারি করছে ঐশানী। তা দেখে ঐশী হাতে বিরিয়ানির প্লেট হাতে নিয়ে এক চামুচ করে মুখে দিচ্ছে আর বিস্ময় নিয়ে তাকাচ্ছে বোনের দিকে। খাওয়ায় মূল উদ্দেশ্য হলো সে জনসম্মুখে খেতে পারবে না। তার চেয়ে আগেই একটু খেয়ে নাওয়া ভালো। কিন্তু ঐশানীর পায়চারি আর অস্থিরতা তাকে ভাবিয়ে তুলছে।
–“আপু? তোকে না আমার ঠিক সুবিধের লাগছে না।”
–“কেন রে? আমি তোর কোন পাকা ধানে মই দিয়েছি? যে আমাকে সুবিধের লাগছে না?” (তেতিয়ে)

–“তুই ঠিক তখনই এভাবে পায়চারি করিস যখন তোর মাথায় গন্ডগোলের বাত্তি জ্বলতে থাকে।”
–“গন্ডগোল তো তুই শুরু করেছিলিস। করিসনি? আমার আবার বিয়ে দেওয়ার প্লানিং অভয়ের সাথে তুই করেছিস? ঠিক বলছি না?”
ঐশীকে কটাক্ষ করে বলে ঐশানী। ঐশী খাওয়া বাদ দিয়ে শুকনো ঢক গিলে তাকায়। তার আপু সব ধরে ফেলল? এখন কি বিয়ের দিনে তার ওপর ঠাটিয়ে থাপ্পড় পড়বে? প্লেট সাইডে রেখে তাড়াহুড়ো করে উঠে দাঁড়িয়ে ঐশানীর কাঁধ ধরে মিষ্টি করে বলে….
–“ও আপু, রাগ করিস না প্লিজ। আমার কোনো দোষ নেই। আমি তো জাস্ট ভাইয়াকে বলেছিলাম তোর একটা ইচ্ছে আছে সেটা হলো তোর আর আমার বিয়ে একই দিনে করার ইচ্ছে।”

–“ওহ তুই এটাও বলে দিয়েছিস?” (ঝাঁঝালো কন্ঠে)
–“আমি কি করব? তুই তো ভাইয়ার অবস্থা দেখিসনি। আমি দেখেছি। সবাই দেখেছে। তুই ভাইয়াকে পাগল বানিয়ে রেখে গিয়েছিলি। আর তুইও তো ভালো ছিলি না। আমি সত্যি বলছি তো?”
ঐশানী নিরব হয়ে গেল। কারণ ঐশীর কথাগুলো ঠিক। সেও ভালো ছিল না। এখনও ভালো নেই। কাঙ্ক্ষিত মানুষটাকে চোখের সামনে থেকে, নিজের হয়েও নিজের না হওয়ার যন্ত্রণা অনেকটা! ঐশী বলে ওঠে….
–“তুই জানিস আমি ঠিক বলছি। তাই চুপ করে আছিস। তুই যদি সত্যিই চলে যেতে চাস আমরা আর কেউ তোকে আটকাবো না। কিন্তু ভাইয়া সহ ওই বাড়ির প্রত্যেকে এখনো তোকে চায়। এখন বাকি সিদ্ধান্ত তোর।”

–“বড্ড পাকনামি শিখেছিস ঐশী!”
শান্ত সুরে বলে ঐশানী। ঐশী একটু হেসে বড়দের মতো করে বলে…..
–“যদি নিজের বোনের সংসার বাঁচাতে এতোটুকু করতে হয় আমি করতে রাজি। তুই আমার বড় বোন। আমার দ্বিতীয় মায়ের মতো। তোকে কষ্টে দেখতে পারা অসম্ভব আমার কাছে।”
ঐশানীর চোখে অশ্রু চলেই আসে। তার বোনটাকেও কত বোঝে তাকে। বোনেরা তো এমনই হয়!

বাইরে থেকে হট্টগোলের আওয়াজ আসে। বর এসেছে। ঐশানী তা শুনে বিদ্রুপ করে বলে….
–“কিরে ঐশী? তোর বফ মানে বর্তমানে হবু বর কি এখনো পেন্সিলের মতো আছে নাকি একটু হলেও পরিবর্তন ঘটেছে।”
–“এই আপু দেখ আমার বরকে পেন্সিল মোটেই বলবি না। ওর ওজন ৬৩ কেজি।”
–“তুই কি করে জানলি?”
–“তুই এতো পেন্সিল, পেন্সিল বকিস তাই শুনে নিয়েছি।”
ঐশানী হেহে করে হেসে দেয়। ঐশী মুখ ফুলিয়ে তাকিয়ে থাকে।

আকাশে অর্ধচাঁদ দেখা যাচ্ছে। ঐশীকে কিছুক্ষণ আগেই ঘরে দিয়ে গেছে ওর ননদ। সকলের ভীড়ে থেকে থেকে গরমে হাঁপিয়ে গেছিল সে। ফুল দিয়ে সাজানো ঘরে হালকা আলো টিমটিম করছে। ঐশী গরমের চোটে মাথার ওপর থেকে কাপড় ফেলে দিল।
–“কি গরম!! জানালাটাও লাগিয়ে রেখেছে।”
বলেই উঠে যায় জানালা খুলতে। জানালা খুলে দাঁড়াতেই দমকা হাওয়া উপভোগ করে সে।

–“গরম লাগছে বুঝি?”
পুরুষের গলা শুনে হকচকিয়ে পেছন ফিরে তাকায় ঐশী। রিত্তিক দরজা লাগিয়ে দিয়ে ধীর পায়ে এসে ঐশীর গা ঘেঁষে দাঁড়ায়। ঐশী মাথা নাড়ায়। রিত্তিক চুপ করে থাকে। ঐশীও বলার মতো কিছু পাচ্ছে না। মিনিট পাঁচেক পর ঐশী গলা খাঁকারি দিয়ে বলে….
–“চুপ করে আছো যে?”
–“আসলে জীবনের প্রথম বাসর রাত তো একটু নার্ভাস লাগছে।”
কথাটি বলে নিজেই বোকা বনে গেল রিত্তিক। ঐশীর রিয়েকশন দেখার জন্য ওর দিকে তাকাতেই ঐশীর বড় বড় চোখজোড়া দেখে ভড়কে গেল সে। ও ঐশীকে বেশ ভালোভাবে চেনে। মেয়েটা দিনে আগে একশবার ব্রেকআপ ব্রেকআপ বলে চেঁচাত।

–“এই তুমি কি বললে? প্রথম বাসর রাত? এর মানে কি? তুমি এরপর কি আরো বাসর রাত করার প্লানিং নিয়ে বসে আছো?”
–“এমা না না। আমি আসলে সেভাবে বলতে চাইনি।”
–“তুমি সেভাবেই বলতে চেয়েছো। আজ থেকে তোমার সাথে আমার ব্রেকআপ।”
রিত্তিক কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে হেসে দিয়ে বলে….
–“তুমি একরকমই রয়ে গেলে। আমাদের বিয়ে হয়েছে ঐশী। ব্রেকআপ বললেও লাভ হবে না। বলে নাও যত পারো।”

রিত্তিক এসে বসে পড়ে খাটে বালিশ নিয়ে। ঐশীর রাগমাখা মুখ দেখতে বেশ মজা পাচ্ছে সে। ঠোঁটে ঠোঁট চেপে হেসে দৃষ্টিপাত করছে লাল বেনারসি ও গয়না পরিহিত নিজের স্ত্রী এর দিকে। ঐশীও কড়া চোখে রিত্তিক কে দেখে চলেছে। রিত্তিক গোল্ডেন শেরওয়ানী পড়েছে। তার ওপর লাল রঙের ভারি কাজ করা। রিত্তিক নজরকাড়া সুন্দর নয়। তবে দেখতে ফর্সা, নাক খাঁড়া। শরীরের গঠন চিকন তবে খুব বেশি চিকন নয়। যেমনটা সে তেমনটাই তাকে মানায়। ঐশীর রাগ পড়ে যাচ্ছে রিত্তিক কে দেখে। নিজের রাগ বজায় রেখে সে ধুপধাপ শব্দ করে এসে রিত্তিকের সামনে দাঁড়ায়।

–“ব্রেকআপ হবে না। ডিভোর্স তো হবে। যাও তোমার সাথে ডি….”
ঠোঁটের ওপর আঙ্গুল রাখতেই থেমে যায় ঐশী। রিত্তিক মুচকি হেসে ফিসফিস করে বলে…..
–“ইয়েস। এরপরেও বাসর রাত করার প্লানিং ভেবে রেখেছি আমি।”
ঐশী রেগে লাল হয়ে যায়। কিছু বলতে উদ্যত হতেই রিত্তিক আবারও বলে ওঠে…..
–“কিন্তু তোমার সাথে…।”
প্রথমে রাগে ঐশীর চেহারা লাল বর্ণ ধারণ করলেও বর্তমানে লজ্জায় গোলাপী বর্ণ ধারণ করছে ঐশী। তবে চোখে রিত্তিকের জন্য অজস্র ভালোবাসা। এতো বছরেও তার প্রতি ভালোবাসা একটুও কমেনি। তারা আজ নিজের অন্য জীবন শুরু করবে। ভালোবাসা শুরু হবে ভিন্ন আঙ্গিকে।

মিসেস. তনয়ার সামনে বসে আছে ঐশানী। মিসেস. তনয়ার মুখটা ভার। উনি ভীষণই অসন্তুষ্ট ঐশানীর ওপরে। মেয়েটাকে এতো ভালোবাসা দিয়েছিলেন অথচ মেয়েটা তার ছেলেকে রেখে চলে গেল। তাই উনার অভিমানের রেশ কাটেনি। বড় শ্বাস নিয়ে উনি ঐশানীর উদ্দেশ্যে বললেন…..
–“আমি জানতাম না আমার ছেলে আবার তোমায় বিয়ে করে আনবে। তাই বিশেষভাবে আয়োজন করতে পারিনি। কিছু মনে করো না।”
ঐশানী কিছু না মনে একধ্যানে তাকিয়ে থাকে তার শ্বাশুড়ি মায়ের দিকে। অভয় সোফার পাশে দাঁড়িয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে। এককথায়, সবটা শুনেও না শোনার ভান করছে। সেটা খেয়াল করলেন রাহাত সাহেব। তাকে ধমক দিয়ে বললেন….

–“এইযে আমার হতভাগা ছেলে! আগে জানাবি না তুই আবার বিয়ে করতে চলেছিস? তাহলে আরেকবার অনুষ্ঠান করতাম। তোকে তো আর বিয়েতে বাঁধা দিতাম না। যা করিস সব একা একা। খুব বড় হয়ে গেছিস না?”
–“এতো আয়োজন করে কি হবে বাবা? তোমার বউমার নজর লেগে যাবে। তাছাড়া আগের বার যা ভীড় ছিল বউ দেখার জন্য। এবারও একই কান্ড করতে চাইনি।”
ফোনের দিকেই মগ্ন হয়ে বলল অভয়। রাহাত সাহেব আর কিছু বললেন না। ঐশানীর দিকে তাকিয়ে আলতো হেসে বললেন…..

–“দেখো ঐশানী মা, তুমি এই বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিলে। কিন্তু এই বাড়ির দরজা তোমার জন্য বন্ধ হয়নি। তোমায় আমি আরেক মেয়ে হিসেবে গ্রহণ করেছিলাম। এখনো তোমায় মেয়ের মতোই মানি। আশা করছি আর এমন কিছু করবে না। তোমার সমস্যার জন্য আমরা কেউ বিভ্রান্ত নই। আজকাল তো অনাথ আশ্রম থেকে বাচ্চা এডাপট করে নেওয়া হয়। এর অনেক সমাধান ছিল। শুধু শুধু জীবনের দুটো বছর নষ্ট করলে তুমি।”

ঐশানীর ভীষণ খারাপ লাগে। এবার বুঝতে পারছে সে ভীষণ বড় ভুল করে ফেলেছে। এমনটা করা তার সাজে নি। মাথা নুইয়ে সে বলল….
–“আমি দুঃখিত বাবা। আর আম্মু!”
কথাটা বলেই মিসেস. তনয়ার বিষন্ন মুখের দিকে চেয়ে হাতটা চেপে ধরে ঐশানী। অনুনয়ের সাথে বলে…..
–“আম্মু, তুমি তো আমাকে অনিন্দিতার মতোই ভাবো তাই না? তাহলে ভেবে নাও যে তোমার মেয়ে একটা ভুল করেছে। ক্ষমা করে দাও এবারের মতো। আমি আর কখনো তোমাদের ছেড়ে যাব না।”

মিসেস. তনয়া বেশিক্ষণ মুখ ঘুরিয়ে থাকতে পারেন না। তাকিয়ে ফেলেন ঐশানীর দিকে। ওর মতো মেয়ের সাথে বেশিক্ষণ রাগ করে থাকা যায় নাকি? চাপা সুরে বলে….
–“ঠিক আছে। মনে থাকে যেন। এবারের মতো মাফ করে দিচ্ছি। পরের বার এসব কথা মাথায় আনলে কিন্তু খুব খারাপ হবে। মনে থাকবে?”
ঐশানী ছলছল চোখে তাকিয়ে হেসে মাথায় দুলায়। তখনই সিঁড়ি থেকে ছুটে নেমে আসে অনিন্দিতা। ঐশানীর হাতে ধরে ঐশানীকে তুলে বলে…..
–“অনেক বলেছে ভাবি তোমাদের সাথে কথা। আরে এভাবে কথা বলতে থাকলে তো রাত পার হয়ে যাবে। গতবারের কথা মনে আছে তোমাদের? ভাবি আর ভাইয়াকে বের করে দিয়েছিলে।”

রাহাত সাহেব আর মিসেস. তনয়া হেসে দেন। অনিন্দিতা ঐশানী কাঁধ জড়িয়ে বলে…..
–“আর ভাবি আমারও রাগ নেই তোমার ওপর। তুমি আবার এই বাড়ি এসেছো শুনে সব রাগ ভ্যানিশ। এখন চলো দেখি ওপরে চলো।”
ঐশানীকে ধরে ওপরের ঘরে নিয়ে যায় অনিন্দিতা।

দীর্ঘ দুই বছর পর নিজের ঘরে ঢুকতেই ঐশানী সেই চেনা গন্ধ উপলব্ধি করতে পারে। সেই মানুষটার গন্ধ পুরো রুম জুড়ে থাকে সেই মানুষটাকেও এই রুমে উপলব্ধি করতে পারে। ঘরের আশপাশটা দেখে নেয় সে। সবটা আগের মতোই আছে। কোনোকিছু পাল্টাইনি। আচমকা ইশানের গলা শুনে ঐশানী চমকে পেছন ফিরে তাকায়। ইশানকে অনিন্দিতা টেনেহিঁচড়ে বের করছে খাটের নিচ থেকে।
–“উফফ…..অনি ছাড়ো বলছি। আমার সব প্লান ফ্লপ করে দিলে। প্রথম বাসর রাতে কানটা খারাপ হয়েছিল এই বাসর রাতে অন্তত কিছু রোমান্টিক কথোপকথন শুনতে পেতাম। তুমি তা হতে দিলে না।”

–“তোমার অন্যের ঘরে কান পাতার স্বভাব গেল না। বের হও বলছি।”
ইশানের মুখ হয় দেখার মতো। নিচ থেকে বেরিয়ে গা ঝেড়ে উঠে দাঁড়ায় সে। অনিন্দিতা তাকে টানতে টানতে বাইরে নিয়ে যায়। ইশান ফিসফিসিয়ে বলে….
–“অন্যের রোমান্স সিন তো দেখতে পারলাম না। নিজেই রোমান্স করি আর দেখি। কি বলো?”
অনিন্দিতা ইশানের বুকে কিল দিয়ে লাজুক হাসি দিয়ে বলে…..
–“তুমি একটা যা তা!!”

ঐশানী এসে বেডে বসে। বেডে দুটো বালিশ রাখা। বামদিকে ঐশানী ঘুমাতো। তার মুখে হাসি ফোটে। দরজা বন্ধ করার শব্দে গুটিশুটি মেরে যায় সে।
–“পুরোনো স্মৃতি মনে করছো বুঝি?”
–“ওই আরকি!”
অভয় আর কিছু বলে না। এসে ঐশানীর সামনে দাঁড়াতেই ঐশানীও দাঁড়িয়ে পড়ে। অভয়ের চোখজোড়া লাল। আজ সকল রাগে-অভিমান ঐশানীর ওপর ঝাড়বে সে। এতোদিন একটু একটু করে নিজের সবটা মনের মাঝে রেখে দিয়েছে।

ঐশানী মাথা নিচু করে নখ কাটতে থাকে। তারপর হন্তদন্ত হয়ে কিছু বলতে নিতেই অভয় হাত মুখের ওপর হাত রাখে। গম্ভীর গলায় বলে…..
–“উঁহু না। দুই বছর আগে তুমি চিঠিতে শুধু বলেছো। আমি পড়েছি। আজ আমি বলব তুমি শুনবে। কোনো কথা বলবে না। নো মোর ওয়ার্ডস।”
ঐশানী উৎসুক হয়ে চেয়ে থাকে। অভয় তার মুখ থেকে তার সরিয়ে তার বাহু ধরে ঝাঁকিয়ে বলে…..
–“তোমার কি মনে হয় ঐশানী? আমি পরিণতি, ফলাফল দেখে তোমায় ভালোবেসেছি?”
একটু থেমেই সে আবার বলে….
–“না ঐশানী। আমি লাভ-ক্ষতি দেখে তোমায় ভালোবাসিনি। ভালোবাসায় কেউ ফলাফল দেখে ভালোবাসে না। তাকে ভালোবাসা বলে না। তুমি আমার সাথে অন্যায় করেছো।”

চলবে……

[বি.দ্র. কাল গল্পের শেষাংশ দেওয়া হবে। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here