বৃষ্টিশেষে প্রেমছন্দ পর্ব ৩

0
1158

বৃষ্টিশেষে_প্রেমছন্দ
#মুমুর্ষিরা_শাহরীন

০৩.
শেষ বিকালে বৃষ্টির আনাগোনা। লুকোচুরি খেলছে আবহাওয়া। হঠাৎ আকাশের ঘন কালো মেঘে ঢেকে যাচ্ছে সূর্য তো আবার আধার সরিয়ে হয়ে যাচ্ছে শুভ্র নির্মল গোধূলি বিকাল। লুকোচুরি খেলতে খেলতেই এই বুঝি ঝপঝপ করে বৃষ্টি নামলো! ঠান্ডা বাতাসের সাথে গা ভাসিয়ে আদর দাঁড়িয়ে ছিলো ঘরের বারান্দাটাতে। মিনিট দশেক হলো সে চেম্বার থেকে ফিরেছে। এক দেড় ঘন্টা পর আবার ছুটতে হবে তাকে মানবসেবায়।

হাতে ধোঁয়া উঠা কফির মগ…বাতাসে বৃষ্টির ছন্দ… প্রেম প্রেম ভাব…চারিপাশে সব ঠিকঠাক। শুধু যথার্থ মানুষের অভাবে এই প্রেমময় সময়টাকে ভাগাভাগি করে নেওয়া যাচ্ছে না। ইশশ দুঃখ!
পেছন থেকে ডেকে উঠলো মনোয়ারা খান, ‘আদর….’

মোলায়েম বৃষ্টি বৃষ্টি আবহাওয়া থেকে চোখ সরিয়ে আদর মায়ের পানে তাকালো। মনোয়ারা খান বললেন,

‘তোর বাবা তোর জন্য আরেকটা মেয়ে দেখেছে। কাল বা পরসু গিয়ে দেখা করে আসিস।’

বিরক্তিতে চোখ মুখ কুচকে উঠলো আদরের। সেই পনেরো দিনের সো কল্ড প্রেগন্যান্ট মেয়েকে দেখার পর আজ প্রায় পনেরো দিন পার হয়ে গেছে।
পনেরো দিন! হ্যাঁ পনেরো দিন। ইশশ…সব এতো পনেরো পনেরো কেনো? জীবনের গল্পের নামটা বৃষ্টিশেষে প্রেমছন্দ না দিয়ে পনেরো দিন দিলেই বোধ হয় বেশি ভালো হতো। এই পনেরো দিন টা যেনো আষ্ঠেপৃষ্ঠে প্রেমিকার মতো জড়িয়ে ধরে আছে আদরকে। আদর বিরক্তিতে আরক্তনয়নে বলল,

‘মা, কেনো আমার জন্য মেয়ে দেখছো? এই মুহুর্তে আমার বিয়ে করার ইচ্ছা নেই। সময় হলে আমি তোমাদের জানাবো। আমারো তো পছন্দ অপছন্দ আছে নাকি?’

মনোয়ারা খান গমগম করে বললেন, ‘সেটা তোর বাবাকে কে বুঝাবে? এমনিতেই কত কান্ড হয়েগেছে তুই তো কিছু জানিস না। ওই বাড়িতে ফোন দিয়ে তোর বাবা অনেক খারাপ কথা শুনিয়েছিলো।’

আদর অবাক গলায় বলল, ‘কোন বাড়িতে? যেই মেয়েকে দেখতে গিয়েছিলাম?’

‘হ্যাঁ’

আদর বিরক্তের চরম সীমায় পৌঁছে গেলো যেনো, ‘মা তোমরা এতো বোকা কেনো হ্যাঁ? পনেরো দিনের কেউ প্রেগন্যান্ট হয়? মেয়েটা বিয়ে করতে চাইছিলো না বোধ হয় এর জন্য এমন একটা লেইম এক্সকিউজ বের করেছে।’

মনোয়ারা খান খুব যে একটা বিশ্বাস করলেন তা মনে হলো না। কপালে ভাঁজ ফেলে ছেলের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘তুই সব জানিস? আজকাল কার ছেলেমেয়েরা ভালো হয়না রে। তুই তো ডাক্তার মানুষ ব্যস্ত থাকিস তাই অতশত বুঝিস না।’

মায়ের কথায় যথারীতি সবসময়কার মতো মুখে বিরক্ত ফুটিয়ে তুলে আদর আবারো বৃষ্টি আবেগ পরিবেশে মগ্ন হলো। ধোঁয়া উঠা কফির মগ টা থেকে এখন আর ধোঁয়া উঠছে না। কফিতে মুখ দিলেই দেখা গেলো কফি ঠান্ডা পানি হয়ে গেছে। তিক্ততায় আদর বলল, ‘কফিটা ঠান্ডা হয়ে গেছে মা নিয়ে চলে যাও।’

মনোয়ারা খান ছেলেকে একবার ঠিকঠাক পরখ করে চলে গেলেন। মা চলে যেতেই আদর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। বারান্দার রেলিং ধরে ওই প্রেম প্রেম ভাব পরিবেশটার দিকে তাকিয়ে রইল বিষন্ন মুখে। কেউ কেনো বুঝে না লাইফে একটা প্রপার টাইম থাকে আর সেই টাইমে পারফেক্ট মানুষের এন্ট্রি ঘটে। প্রপার টাইম টা পাওয়ার জন্য লাইফকে এনাফ সময় দিতে হয়। কিন্তু এই বাবা-মা রা না সবসময় তারাহুরো করে। আদরের বিরক্ত লাগে।
এই যে বৃষ্টিশেষে আবারো বৃষ্টি বৃষ্টি ভাব। আকাশে ঘোমট মেঘে ছাই রঙা রং এ সজ্জিত হওয়ার আভাস। বাতাসে প্রেম প্রেম ছন্দ। ইশশ কি দারুন অনুভূতির গন্ধ! এই সময়টার পার্ফেক্ট একটা নাম দেওয়া উচিত। যে নামে থাকবে বৃষ্টি, প্রেম, ছন্দ এবং তার শুরু ও শেষ। আদর তার হালকা গোলাপি ঠোঁট দুটো নাড়িয়ে মোহবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে আওড়ালো, “বৃষ্টিশেষে প্রেমছন্দ।”

____________________________

বিশেষ কোনো কাজে বাইরে বের হয়েছিল টায়রা। রিক্সা দিয়ে বাসায় ফেরার সময় নিজের নামের মাত্র বয়ফ্রেন্ড কে অন্য কোনো এক সুন্দরী রমনীর হাত ধরে থাকতে দেখে নাকের পাটাতন ফুলে গেলো তার। রিক্সাওয়ালা মামাকে দাড় করিয়ে নিজের ডায়নী রূপ ধারন করে সে গেলো রাফি নামক সেই ছেলেটার কাছে।

‘এই তুমি এখানে কি করছো?’ কোমড়ে হাত দিয়ে ভ্রু কুটি করে বলল টায়রা।

আচমকা টায়রাকে অসময়ে এখানে দেখে হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে পরলো রাফি। মুখ ছোট হয়ে এতোটুকুনি হয়ে গেলো। দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে ভিষন ভয়ে আছে। ঢোক গিলে সে তার নিউ গার্লফ্রেন্ড রাফিয়ার হাতটা শক্ত করে ধরলো। টায়রা আড়চোখে তা দেখে ফুসে উঠে বলল,

‘কু* বাচ্চা….তুই আমাকে ধোকা দিছস? আমি থাকতে অন্য মেয়ের লগে চিপকায় থাকস?’ হাতের ভেনিটি ব্যাগ দিয়ে সজোরে দিলো এক বাড়ি।

রাফিয়া নিজের বাবুকে এই শাকচুন্নির হাত থেকে বাঁচাতে ন্যাকা স্বরে চেঁচিয়ে উঠলো, ‘এই তুমি আমার বাবুকে মারছো কেনো?’

রাফিকে মারা থামিয়ে টায়রা রাফিয়ার দিকে তাকালো। এরপর রাফিয়ার থুতনি ধরে টান দিয়ে ওর মতোই ন্যাকা গলায় বলল, ‘ওওও…তোমার বাবু…? তুমি ওর মা লাগো বুঝি? ইশশ…বেচারাকে শুধু শুধু এতোক্ষন মারলাম। থাক জান, আই এম সো সরি।’ রাফির গালে হাত বুলিয়ে চুমু দেওয়ার ভঙ্গিতে ঠোঁট চোখা করল টায়রা।

রাফিয়া চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে ফুসতে লাগলো। রাফি চোখ মুখ কুচকে বলল, ‘দেখো টায়রা, তোমার মতো তারছিড়া মেয়ের সাথে রিলেশন রাখা আমার পক্ষে সম্ভব না। প্লিজ আমার জীবন থেকে চলে যাও। আমি রাফিয়া কে নিয়েই ভালো থাকবো। ওর মাঝেই আমার সুখ।’

টায়রা একবার চোখ বন্ধ করে আবার টপাস করে খুলল। রণচণ্ডী রূপ ধারন করে বলল, ‘বাংলা সিনেমার ডায়লগ মারস? ওর মাঝেই আমার সুখ। আহারে! আর আমি তারছিড়া? ওই শালা আমি তারছিড়া? তোর মতো রাফির বাচ্চা আমার পেছনে প্রতিদিন বিশ বাইশ টা ঘুরে। আর তুই আসছোস আমাকে তারছিড়া বলতে হ্যাঁ?

‘তাহলে যাও তাদের সাথে গিয়ে প্রেম করো আমাদের কেনো ডিস্টার্ব করছো?’

‘তোরে আমি ডিস্টার্ব করতাছি? গত একটা বছর তুই আমার পেছনে লালু কুত্তার মতোন ঘুরছস। এখন দুই মাস যাইতে না যাইতেই ফুস..’

‘শুনো, আমি এতোকিছু বুঝি না। মোট কথা হলো তোমার সাথে আমার মিলে না কোনোকিছু। তুমি শুধু পেইন দেও। কিন্তু রাফিয়ার সাথে দেখো সবকিছুই মিলে আমার। ইভেন আমাদের নামটাও কি সুন্দর মিল দেখছো?’

কেনো কে জানে এই পর্যায়ে টায়রার চোখ থেকে এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পরে গেলো নির্লজ্জ ভাবে। চোখ মুছে নাক টেনে ইমোশনাল মুড থেকে বেরিয়ে এসে টায়রা আঙ্গুল উঁচিয়ে শাসানো গলায় বলল, ‘প্রেম করতাছোস না? কর। আমার বিয়াত তোরে আমি আমার উকিল বাপ বানামু দেখিস তুই। মাইন্ড ইট।’

টায়রা হনহন করে চলে গেলো। রাফি বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে থাকলো। পাশ থেকে রাফিয়া ন্যাকি গলায় আবারো বলল, ‘বাবু? উকিল বাপ কি?’

রাফি বিরক্তিতে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে তেজি গলায় বলল, ‘আমারে উকিল বানায়ে পরে ওর বাপ বানাবো। যত্তসব।’

,

ঘরে ঢুকেই গোলাপি রঙের ব্যাগ টাকে ছুড়ে মারলো একদিকে। টিকলি যথারীতি চোখে চশমা পরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বই পড়ছিলো। ‘শেষের কবিতা’! কোমড়ে হাত দিয়ে টায়রাকে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে দেখে টিকলি উঠে টায়রার কাধে হাত রাখলো। মেয়েটার মুখ হয়ে আছে লাল। বাতাসের সাথে পাল্লা দিয়ে তার ঘনঘন নিঃশ্বাস পরছে। চোখে পানিরা উপচে গেছে। বারবার মুছেও সামাল দেওয়া যাচ্ছে না আবার ভিজিয়ে দিচ্ছে। এমতাবস্থায় কাধে বোনের হাতের ছোঁয়া পেয়ে টায়রা নিজেকে আটকাতে পারলো না। জড়িয়ে ধরলো বোনকে। এরপর শব্দ করে কেদে দিলো।

বোনকে শেষ কবে কান্না করতে দেখেছে তা মনে নেই টিকলির। এতোদিন বাদে মেয়েটাকে কাদতে দেখে টিকলি ভিষন রকমের অবাক হয়েছে। টায়রার মাথায় হাত বুলিয়ে আদুরে স্বরে টিকলি বলল, ‘কি হয়েছে আমার সোনা বোনটার? কাদছে কেনো সে? কে বকেছে হুম?’

ব্যস, কান্নার বেগের মাত্রা বাড়লো। হেচকি দিয়ে কেদে উঠে টায়রা বলল, ‘রাফি আমাকে ভালোবাসে না। ও এই দুই মাস আমার সাথে শুধু এডজাস্টমেন্টে ছিলো। আমার সাথে এডজাস্ট করতে না পেরে ও এখন রাফিয়া নামের আরেকটা মেয়ের কাছে গেছে।’

‘এই ছেলে না তোর পেছনে এক বছর ঘুরেছিলো?’ টিকলি বলল সন্দিহান গলায়।

চোখ মুছে টায়রা বলল, ‘হুম’

‘তুই ভালোবাসতিস ছেলেটাকে?’

কান্না থামিয়ে চুপ করে বিছানায় বসে নাক টেনে টায়রা বলল, ‘না।’

টিকলি অবাক গলায় বলে, ‘না? তাহলে কাদছিস কেনো?’

‘ও আমাকে রিফিউজ কেনো করলো? ব্রেকাপ আমি করতাম। আমি অন্য একটা ছেলের সাথে রিলেশনে জড়াতাম। রাফি কেনো জড়াইলো? ও সম্পর্ক ভাঙ্গলো কেনো? ইটস হার্ট মাই ইগো।’

বোনের কথা শুনে জোরালো এক দীর্ঘশ্বাস ফেলল টিকলি। টায়রা এমনি কারোর রিফিউজ সহ্য করতে পারে না। বোনের মাথায় হাত রেখে টিকলি শান্ত কণ্ঠে বলল,

‘সবসময় নিজের ইগোকে নিয়ে ভাবলে আমাদের চলবে না টায়রা। অন্যদের টাও বুঝতে হবে। তুই যদি আজ রাফিকে বুঝার চেষ্টা করতি তাহলে সম্পর্ক টা ভাঙ্গতো না। ও অন্য মেয়ের কাছে চলে যেতো না। তোকে রিফিউজ করতো না।’

টিকলির কথা শুনে টায়রা টিকলির দিকে তাকালো। এরপর নিরব মনে বলল, ‘আমি আর রিলেশন ই করবো না। এটাই লাস্ট।’

‘প্রত্যেকবার ব্রেকাপ করে এসে এটাই বলিস। নাথিং নিউ। যদিও প্রতিবার ব্রেকাপ তুই করিস আর এবার তো…..’

বোনের দেওয়া খোঁচা বুঝতে পেরে হনহন করে ওয়াশরুমে চলে গেলো টায়রা। টিকলি জোরে হেসে দিলো।

__________________________

চেম্বার থেকে মাত্র ফিরলো আদর। একান্ত ব্যক্তিগত নিজের ঘরটাতে এসেই আর্দ্রর দেখা পেয়ে সে ভ্রু কুচকালো। আর্দ্র ফোন টিপছিলো। ঘড়িতে চোখ রাখতেই আদর দেখলো রাত এগারোটা বাজে। সে তীক্ষ্ণ কণ্ঠে বলল,

‘কিরে তোর রুম নাই? আমার রুমে এসে ফোন টিপার লাগে?’

ফোন থেকে মাথা তুলে আদরের কথার উত্তর না দিয়ে দিয়ে আর্দ্র উল্টে বলল,

‘ওহ এসে পরেছো। যাও ফ্রেশ হয়ে আসো। অনেক ইম্পোর্টেন্ড কথা আছে।’

কুচকানো ভ্রুতেই ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এলো আদর। বিছানায় এক কোণায় বসার সাথে সাথে তার হাতে কিছু মেয়ের ছবি ধরিয়ে দিলো আর্দ্র। বলল,

‘আম্মু বলেছিলো ছবিগুলো তোমাকে দিতে। মেয়েগুলো হেব্বি সুন্দর। আমি দেখেছি তুমি দেখো ভাইয়া। অনেক পছন্দ হবে।’

রাগে ভ্রু কুচকে আদর বলল, ‘এটা তোর ইম্পোর্টেন্ড কথা?’

ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে আর্দ্র বলে, ‘হ্যাঁ। আর তুমি সবসময় এতো ভ্রু কুচকাও কেনো? মনে হয় রাজ্যের বিরক্তি এসে তোমার ঘাড়ে চেপেছে।’

‘বাজে কথা বন্ধ কর। তোরা সবাই আমার বিয়ের পেছনে হাত ধুয়ে লেগেছিস কেনো বল তো? আমি যে বিয়ে করতে চাইছি না এটা কি বাবা মা বুঝতে পারছে না?’

ভাইয়ের মুখোমুখি বসে আর্দ্র গোয়েন্দা গলায় বলল,

‘আমি জানি না ভাইয়া। কিন্তু বাবা একদম হাত ধুয়েই নেমেছে। যে করেই হোক তোমাকে বিয়ে দিতেই হবে। এটাই এখন তার জীবনের এক এবং একমাত্র মিশন। তার ধারণা তুমি প্রেম করো। আর তুমি তো জানো প্রেমে বাবার এলার্জি আছে। অথচ নিজেই প্রেম করে বিয়ে করেছে। যদিও এর জন্য তাকে আমি সারাজীবন পস্তাতে দেখেছি।’

আর্দ্রকে থামিয়ে দিয়ে আদর বলল, ‘হইছে হইছে। চুপ কর ভাই। তোকে প্রশ্ন করলাম একটা আর তুই হিস্টোরি শোনাইতাছস? আমি কি জানিনা এসব?’

‘তাহলে আর কি বলবো? তুমি সুন্দর হ্যান্ডসাম মেয়েরা তোমার পেছন সারাক্ষণ ঘুরঘুর করে। প্রেম করতেই পারো বলে বাবার ধারণা। ‘

‘উপায় বল। এই বিয়ে করানোর পোকা বাবার মাথা থেকে নামবে কীভাবে?’

আর্দ্র ঠিকঠাক হয়ে বসলো। এরপর আয়েশী ভঙ্গিতে বলল, ‘ভাইয়া অনেকদিন না ঘুরতে যাই না। চলো আমরা পাঁচ সাতদিনের ট্যুরে যাই। কিন্তু বাসার কাউকে জানাবো না। তারা জানবে তারা তোমাকে জোর করে বিয়ে দিতে চাইছে বলে তুমি ভেগে গেছো। ছেলে ভেগে গেছে এই দুঃখে বাবার ঘাড় থেকে ভূত ও নামবে।’

আদর ভ্রু কুটি করে বলল, ‘আমি কি মেয়ে নাকি যে ভেগে যাবো? কিসব মেয়েলী বুদ্ধি তোর মাথায়। আর আমার ছুটি নাই।’

‘ছুটি নিবা। এইটুকু করতে না পারলে বিয়ে করে ফেলো।’

আদর কিছুক্ষন ভেবে বলল, ‘কোথায় যাবি?’

খুশিতে আটখানা হয়ে আর্দ্র বলল, ‘নিঝুম দ্বীপ। একদম নিরব জায়গা। তোমার জন্য পার্ফেক্ট।’

____________________________

টিকলির ছোট্ট কুটিরে যখন মনখারাপের বৃষ্টি নামে টিকলি তখন বই পড়ে। বইয়ের মাঝে মন ভালো করার ওষুধ আছে বলে সে বিশ্বাস করে। আজও মন খারাপ তাই সে বই পড়ছে।
টায়রা এবার সন্দিষ্ট গলায় বলল, ‘তোর কি মন খারাপ?’
‘হুম।’ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল টিকলি।
‘কিন্তু কেনো খারাপ? মন খারাপ হওয়ার কথা তো আমার।’ চিন্তিন গলায় বলল টায়রা।
বইটাকে বন্ধ করে টিকলি অসহায় গলায় বলল, ‘বাবা আবার ছেলে দেখছে। আমি বিয়ে করতে চাইনা। কেনো বুঝে না তারা? মেয়ে বড় হলেই বিয়ে দিতে হবে নাকি? তোকে ছাড়া থাকতে পারবো না আমি।’

টায়রা চোখ বড় বড় করে বলল, ‘কি?? এর জন্যই বলেছিলাম, চল বাড়ি থেকে পালিয়ে যাই। কিছুদিন উদাও হয়ে গেলেই মেয়েদের মর্ম বুঝবে।’

‘কিন্তু পালিয়ে যাবোটা কই?’ টিকলি চিন্তিত মুখে বলল। টায়রাও গালে হাত দিয়ে বসলো। কিছুক্ষণ ভাবার পর টিকলি আমোদিত গলায় বলল, ‘এই টায়রা ঘুরতে যাবি? চল ঘুরতে যাই। বাড়ি থেকে পালানো ও হবে। ঘুরাও হবে।’

‘ ব্রিলিয়ান্ট আইডিয়া। কিন্তু কোন জায়গায় যাবো?’

‘নিঝুম দ্বীপ।’

টিকলি বলল কিছুটা ঘোর লাগানো গলায়। কেনো জানি না এই জায়গাটায় যাওয়ার তার খুব ইচ্ছা। চার-পাঁচ বছর আগে এই জায়গা সম্পর্কে একটা ভিডিও দেখেছিলো সে। সেখান থেকেই তার খুব ইচ্ছা এই জায়গাটাতে যাওয়ার। তার আবার খুব ইউনিক ইউনিক ইচ্ছা জাগে। লোকজন যা কিছুতে আকৃষ্ট সে তাতে আকৃষ্ট না। যেমন, বান্দরবান, সিলেট, কক্সবাজার এসব টুরিস্ট প্লেস তাকে টানে না। অন্যদিকে নিঝুম দ্বীপে লোকজন ঘুরতে যায়না বললেই চলে সেখানে যাওয়ার তার খুব ইচ্ছা।

টায়রা অসহযোগ গলায় বলল, ‘এ্যাহ…নোয়াখালী?’
‘হ্যাঁ নোয়াখালী তো কি হয়েছে? চল না যাই প্লিজ বোন। আমার কতোদিনের শখ।’
‘আচ্ছা চল। লঞ্চে করে যাবো।’
‘ওকে ডান।’

চলবে❤️

আমি একটা মস্ত বড় ভুল করে ফেলেছি। প্রথম পর্বে দিয়েছিলাম আদর কফিতে চুমুক দিয়ে টিকলির সাথে কথা বলছে। কিন্তু দ্বিতীয় পর্বে দিয়েছে টিকলি আদরকে দেখেনি মাস্ক পরা ছিলো তাই। আমি অত্যন্ত দুঃখিত এবং লজ্জিত। সবাই আমাকে মার্জনা করবেন। আমার আরেকটু সতর্ক হওয়ার উচিত ছিলো। কফি খাওয়ার অংশটুকু গল্পে নেই এমনভাবে পড়ার অনুরোধ রইল। কারন এখন এডিট করা সম্ভব না। অনেকগুলো গ্রুপে দেওয়া হয়েছে গল্পটা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here