তুমি_আছো_হৃদয়ে_তাই পর্ব_২২

0
2115

#তুমি_আছো_হৃদয়ে_তাই
#শোভা_আক্তার(লাভলী)
#পর্ব_২২

মাশরাত আজ তারাতাড়ি অফিস এসেছে৷ অফিসের কোনো কর্মচারী এখনো আসে নি। মাশরাতকে দেখে দারোয়ান মামা অবাক হয়ে বললেন-
“মাশরাত বাবা, তুমি আজ তারাতাড়ি ক্যান?”
“মামা ইনভেস্টর আসবে আজ। আমি উনাদের ওয়েলকাম করবো।”
“কিন্তু তোমার লাইগা তো বাকিরা অনেক আয়োজন করসে।”
“আমার জন্য?”
“হ তুমি নতুন এমডি তাই।”
“তা আর লাগবে না। এমডি হওয়ার আগে তো আমি তাদেরই কলিগ।”
মামা হেসে মাশরাতের মাথায় হাত বুলালো। মাশরাত মুচকি হেসে ভেতরে চলে গেল। আশে পাশে তাকিয়ে দেখে কেও নেই। ঘড়ির দিকে তাকাল, সবার আসতে আসতে ৭ টা বাজবে। এখন ৬ টা ৩৫ বাজছে। অফিস সার্ভেন্টরা এসেছে অফিস পরিষ্কার করতে। মাশরাত তার আগের ডেস্কেই বসে রইল। সে তার নতুন কেবিনও দেখতে যায় নি। মিটিং-এর পর যাবে। কিছুক্ষণ পর এক এক করে সব কর্মচারী আসতে লাগলো। মাশরাতকে দেখে শায়লা ভ্রু কুঁচকে বলল-
“তুমি আজ তারাতাড়ি কেন আসলে?”
“বস বলেছে ইনভেস্টর যখন আসবে। ওয়েলকাম যাতে সুন্দর মতো হয়।”
“আর তোমার ওয়েলকামের কি? আমরা কত আয়োজন করেছি জানো?”
“তা লাগবে না। সেগুলো ইনভেস্টরের জন্য রেখে যাও।”
“দয়ালু বাবা হার মানলাম আমি। আর তুমি এখানে বসে না থেকে কেবিনে গিয়ে বসো। দেখো গিয়ে কেবিন পছন্দ হয়েছে কি’না।”
“কেবিন আবার পছন্দ করা লাগে? যেমনই হোক আমার চলবে।”
শায়লা আর কথা বাড়াল না। মাশরাত যেটা একবার বলে সে কথা আর পরিবর্তন হয় না। মাশরাতের বোরিং লাগছে। আধুনিক্তা হয় তো ঘুম, নাহলে তাকেই কল দিয়ে কথা বলতো। সময় ঘনিয়ে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর বস আসলো। মাশরাত বসকে দেখে দ্রুত হেটে গেল।
“কখন আসলে তুমি?”
“৬ টার পর এসেছি।”
“এত তারাতাড়ি? এনি ওয়েজ গুড জব। মিস্টার মজুমদার এসে পরবে খুব শীগগিরই। আমরা উনাকে সুন্দর মতো ওয়েলকাম করবো। আমরা যত বেশী তাকে ইনপ্রেস করতে পারবো আমাদের তত লাভ।”
“ইয়েস বস আই আন্ডারস্ট্যান্ড।”
বস চলে গেল তার কেবিনে। মাশরাত আবার বসে রইল। কিছুক্ষণ বসে থেকে আবার উঠে দাঁড়াল। বাহিরে গিয়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে আধুনিক্তার বাবার৷ হঠাৎ মোবাইল বেজে উঠল। স্ক্রিনে আধুনিক্তার নাম দেখে মুচকি হাসলো। রিসিভ করে কানে ধরতেই আধুনিক্তা ধমকের স্বরে বলল-
“রোদে দাঁড়িয়ে আছো কেন তুমি?”
মাশরাত থতমত খেয়ে গেল। সত্যি সে রোদে দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু আধুনিক্তা জানলো কিভাবে? মাশরাত রাস্তায় চোখ বুলালো। অনেক গাড়ি এখানে। আধুনিক্তা হেসে বলল-
“পারবে না আমাকে খুঁজতে। তুমি ছায়ায় গিয়ে দাঁড়াও এখনই।”
মাশরাত বাধ্য ছেলের মতো ছায়ায় গিয়ে দাঁড়াল। তার চোখ চারপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে আধুনিক্তাকে খোঁজার জন্য।
“কোথায় তুমি?”
“জ্যামে বসে আছি। ভার্সিটি যাচ্ছি এডমিশনের জন্য।”
“এত তারাতাড়ি?”
“হ্যাঁ দাদাইও সাথে যাচ্ছে। ক্লাস শুরু হওয়ার আগে ভর্তি হয়ে যাব।”
“চেয়ারম্যান সাহেবের সামনে তুমি আমার সাথে কথা বলছো?”
“হ্যাঁ তো? দাদাই আমার বেস্টফ্রেন্ড।”
“যাক ভালো হয়েছে। তোমার আব্বু কোথায়?”
“আব্বু তৈরী হচ্ছে। এসে পরবে কিছুক্ষণের মধ্যে।”
“নাস্তা করেছো?”
“হ্যাঁ, তুমি তো না খেয়ে এসেছ। নাস্তা কখন করবে? কিছুক্ষণ পর তো মিটিং শুরু হবে।”
“না আমি নাস্তা করেছি।”
“মিথ্যে বলবে না একদম।”
“আচ্ছা আচ্ছা সরি, কিন্তু তুমি কি করে জানলে?”
“আন্টির সাথে কথা হয়েছে কিছুক্ষণ আগে। উনি-ই বললেন তুমি না খেয়ে বেরিয়েছ।”
“আম্মুকে বলে দিতে হবে তোমাকে সত্যি বলতে না।”
“আমার আন্টিকে নিজের মতো ভেবো না। আর হ্যাঁ আজ যেভাবেই হোক আমার সাথে দেখা করো।”
“আজ তো সম্ভব না।”
“আমি কিছু জানি না। তুমি আসবে মানে তুমি আসবে।”
“বুঝার চেষ্টা করো প্লিজ।”
“না আমি কিছু বুঝতে চাই না।”
“ওকে আমি হার মানলাম। আসবো আমি অফিস শেষ করে।”
“গুড বয়, পোস্টঅফিসের সামনে দেখো।”
তাদের অফিসের অপরদিকে পোস্টঅফিস রয়েছে। মাশরাত সেখানে তাকাল। আধুনিক্তা একটা গাড়ি থেকে উঁকি দিয়ে তাকিয়ে আছে। মাশরাত মুচকি হাসলো। আধুনিক্তা বলল-
“নাস্তা করে নিয়েন মিস্টার হোসেন। এরপর কখনো আমি যদি শুনি আপনি নাস্তা না করে বাসা থেকে বেরিয়েছেন খবর আছে আপনার।”
মাশরাত হাসলো, জ্যাম খুলতেই সব গাড়ি ধীরে ধীরে চলতে শুরু করলো।
“রাখছি এখন, আমি অপেক্ষা করবো প্লে গ্রাউন্ডে।”
“সেটা তো বাচ্চাদের খেলার জায়গা।”
“প্রেমে পরলে মানুষ এমনিতেও বাচ্চা হয়ে যায়। মানে ন্যাকামো করে আর কি।”
মাশরাত শব্দ করে হেসে উঠল। আধুনিক্তা কল কেটে দিলো। ফ্লাইং কিস ছুঁড়ে মেরে টাটা দিলো। মাশরাত কান থেকে মোবাইল নামিয়ে টাটা দিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। তখনই একটা কালো রং এর গাড়ি এসে মাশরাতের সামনে দাঁড়াল। হঠাৎ আসায় মাশরাত ভয়ে এক কদম পিছিয়ে গেল। গাড়ির দরজা খুলে আধুনিক্তার বাবা বের হলো। সামনের মোড় রাগী কন্ঠে তাকাল। তার বাবার গাড়ি দেখা যাচ্ছে। উনি আবার মাশরাতের দিকে তাকালেন। মাশরাত কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। বাবা রাগান্বিত কন্ঠে বললেন-
“আধুনিক্তা ছিল তাই না?”
মাশরাত কিছুক্ষণ স্তব্ধ থেকে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়াল। বাবা হাত মুঠো শক্ত করে ফেলল।
“দূর থাকতে বলেছিলাম আমার মেয়ের থেকে।”
মাশরাতের রাগ হচ্ছে। অকারণেই এই মানুষটা সবসময় তাকে কেন দোষ দেয়? বাবা আবার বলল-
“তোমার অফিস এর ইনভেস্টর আমি। আমার মেয়ে আধুনিক্তা। একদিক দিয়ে তোমার ম্যাম হয় ও। তাই অন্য কিছু ভাবার আগে দু’বার ভেবে নিও।”
মাশরাতের মাথা বিগড়ে গেল। তার মাথায় রক্ত চড়ে গিয়েছে। ভাবলো আর চুপ থাকলে চলবে না। ইনভেস্টর হয়ে এসেছে। নিশ্চয়ই মাশরাতের কাজে অনেক বাঁধা দিবে।
“স্যার, আপনি কি মনে করেন আমাকে? আমি আপনার মেয়ের পেছনে ঘুরি? আমার এত ফালতু সময় কোথায় বলুন তো? আমি আমার ভাগ্য অনেক আগেই উপর ওয়ালার হাতে ছেড়ে দিয়েছি। তাই আজ আমার আর্থিক অবস্থা এই পর্যায়ে। আমি আমার প্রেম ভাগ্য-ও উপর ওয়ালার হাতে ছেড়ে দিয়েছি। উনি আমার জন্য যা করবেন আমি চুপচাপ মেনে নিব। তাই আমার কোনো প্রয়োজন নেই আধুনিক্তার পেছনে ঘুরার।”
“তুমি খুব তর্ক করো।”
“আপনি আমাকে যা তা বলেন আমি জবাব দিলেই দোষ? আপনি চান সবকিছু আপনার হিসেবেই হোক। একবারো কি জানতে চেয়েছেন আপনার মেয়ের মনের কথা?”
বাবা দাঁতে দাঁত চেপে ধরলেন। কিছু বলার আগেই মাশরাতের বস এগিয়ে আসলো। বস-কে দেখে মাশরাত নিজেকে শান্ত করলো। বাবাও চেহারায় হাসি ফুটিয়ে নিলো।
“আসসালামুআলাইকুম স্যার, আমার ছোট্ট ব্যবসার দুনিয়ায় আপনাকে স্বাগতম।”
“ধন্যবাদ, আশা করছি আপনারা নিরাশ করবেন না।”
“কখনো না স্যার ইন শাহ আল্লাহ, মাশরাত সবাইকে গিয়ে বলো ইনভেস্টর স্যার এসেছেন।”
মাশরাত মাথা নাড়িয়ে হেটে ভেতরে চলে গেল। সবাইকে বলল ফুল রেডি রাখতে। ইনভেস্টর স্যার আসলে উনার হাতে যাতে দিতে না ভুলে। আধুনিক্তার বাবাকে খুব সুন্দর করে ওয়েলকাম জানানো হলো। আধুনিক্তার বাবা ভেবেছিল কোনো খুঁত বের করে প্রজেক্ট ক্যান্সেল করে দিবে। কিন্তু উনি সবকিছু পারফেক্ট পেয়ে মুগ্ধ হলেন। মিটিং শেষে উনি বাধ্য হলেন এই কোম্পানিকেই প্রজেক্ট দিতে। মাশরাতকে উনার পছন্দ না কিন্তু মাশরাতের কাজের প্রতি আগ্রহ খুব বেশী। এই ব্যাপারটা উনার মনে ধরেছে বেশ। বস রিকুয়েষ্ট করলেন আধুনিক্তার বাবাকে তাদের সাথে ব্রেকফাস্ট করতে। বাবা না করতে পারলেন না। উনারা একসাথে বসে নাস্তা করে নিলেন। নাস্তা করে কিছুক্ষণ বসে কথা বলে বাবা উঠে দাঁড়ালেন।
“আজ আসি তাহলে”
“আপনাকে ধন্যবাদ স্যার। আপনি আমাদের এই প্রজেক্ট দিয়ে অনেক বড়ো উপকার করেছেন। আমরা আপনাকে নিরাশ করবো না। এই আমাদের ওয়াদা রইল।”
“শুনে ভালো লাগলো। আল্লাহ হাফেজ, আগামীকাল থেকে কাজ শুরু করে দিন আপনারা। আমি প্রতিদিন না আসলেও ২/৩ দিন পর পর আসবো।”
“ওকে স্যার, আসুন আপনাকে বাহির পর্যন্ত দিয়ে আসি।”
“নিশ্চয়ই”
বস, মাশরাত আর আধুনিক্তার বাবা বাহিরে আসলেন। ১০ টা বেজে গিয়েছে অলরেডি। মাশরাত ও তার বস-কে বিদায় দিয়ে আধুনিক্তার বাবা গাড়িতে উঠে বসলেন। মাশরাতের দিকে হঠাৎ রাগী দৃষ্টিতে একবার দেখে গাড়ির জানালা বন্ধ করে দিলেন। বস ব্যাপারটা খেয়াল করে ভ্রু কুঁচকালেন। আধুনিক্তার বাবার গাড়ি যেতেই উনি মাশরাতকে জিজ্ঞেস করলেন-
“উনার সাথে কি তোমার কোনো গন্ডগোল হয়েছে মাশরাত?”
“না তো স্যার”
“শিওর? আমি প্রতিবার দেখি উনি তোমার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকান সবসময়। তোমরা তো একে অপরকে আগে থেকে চিনো। নিশ্চয়ই কিছু হয়েছে তাই না?”
মাশরাত লুকাতে পারলো না। বস উনাদের ছোটো ভাই মানে তাই বলতে মাশরাতের সমস্যা নেই।
“বস আসলে, উনার মেয়ে আর আমি একে অপরকে পছন্দ করি।”
“পছন্দ করো না-কি ভালোবাসো?”
“দু’টোই ভাবতে পারেন। আধুনিক্তা আমাকে খুব ভালোবাসে। উনি এই বিষয়টা মানতে পারছেন না। তাই উনার চোখের বিষ আমি।”
“হায় রে ভালোবাসা, আমি আর একটা বিষয় খেয়াল করেছি তুমি উনাকে কিছু হলেও ভয় পাও।”
“উনি সবসময় আমার আর্থিক অবস্থা নিয়ে সমালোচনা করেন। আমার এই বিষয়টা মোটেও ভালো লাগে না। ভয় পাই না, রাগ হয় ভীষণ তাই চুপ করে থাকি।”
“এত ভালো বিজনেস ম্যানের মন এমন? যদিও এমন হওয়া স্বাভাবিক। উনার তো আবার টাকার অভাব নেই।”
“হ্যাঁ বস তাই তো কিছু বলি না।”
“শুনো মাশরাত, পেয়ার কিয়া তো ডারনা কেয়া? তুমি ভয় পেও না। চেষ্টা চালিয়ে যাও। তোমার ভালোবাসা সত্যি হলে তুমি তাকে পাবেই।”
“ভাগ্যের উপর সব ছেড়ে দিয়েছি।”
“এটাই ভালো, কিন্তু আশা ছেড়ো না। তুমি আমাদের প্রজেক্টের মাধ্যমেই উনার মনে জায়গা করে নিতে পারো। দেখবে উনি নিজে তোমার হাতে উনার মেয়েকে তুলে দিবে।”
“এমনটা যদি হয়, আকাশ জমিন এক হয়ে যাবে।”
“হা হা হা, হ্যাঁ উনার কথা শুনলেই বুঝা যায় উনি সহজে মানার মানুষ না।”
তখনই মাশরাতের কল আসলো। পকেট থেকে মোবাইল বের করে দেখে আধুনিক্তা কল করেছে। মাশরাত কল কেটে পকেটে রেখে দিলো।
“কল কাটলে কেন?”
“এভাবেই বস রং নাম্বার।”
“মিথ্যে বলবে না”
“বস, আধুনিক্তা কল দিয়েছে। সে বলেছিল আজ দেখা করতে চায়।”
“তাহলে যাও দেখা করে নাও।”
“আজ লাগবে না। আমি মেসেজ করে বলে দিব আজ ব্যস্ত আছি।”
“আজ কাজ নেই আগামীকাল থেকে প্রজেক্ট শুরু করবো আমরা। এখন তুমি গিয়ে উনার মেয়ের সাথে দেখা করে নাও।”
“আর ইউ শিওর বস?”
“হান্ড্রেড পার্সেন্ট”
মাশরাত হেসে বস-কে বিদায় দিয়ে হাঁটা ধরলো। আধুনিক্তাকে কল করে কানে ধরতেই রিসিভ হলো। অপর পাশ থেকে তুফানের গতিতে আধুনিক্তা বলা শুরু করলো।
“তুমি আমার কল কাটলে কেন? মিটিং শেষ আমি জানি। নাস্তা করেছো? করো নি জানি। আর কি বলেছিলাম? আজ দেখা করতে। কিন্তু তুমি এখনো আসো নি। আমি এডমিশন নিয়ে নিয়েছি। অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছি এখন তো আসো প্লিজ। কি হলো কথা বলো না কেন?”
“তুমি আমাকে কথা বলতে না দিলে কিভাবে বলবো?”
“ওহ, সরি”
“ইটস ওকে, তুমি আর একটু অপেক্ষা করো আমি আসছি।”
“সত্যি আসছো?”
“হ্যাঁ রওয়ানা দিয়ে দিয়েছি।”
“ঠিক আছে, আমি অপেক্ষায় আছি।”
রিকশা না পেয়ে দৌড়াতে দৌড়াতেই গেল মশারাত। সে বুঝতে পারে না তার ভাগ্য এত খারাপ কেন? যখন দরকার তখন একটা রিকশা সিএনজি পায় না। ১৫ মিনিট পর মাশরাত প্লে গ্রাউন্ড পৌছে গেল। আধুনিক্তা একটা বাচ্চার সাথে বল ক্যাচ খেলছে। মাশরাত মুচকি হাসলো তা দেখে। আধুনিক্তার নজর হঠাৎ প্লে গ্রাউন্ডের প্রবেশ দরজার দিকে গেল। আধুনিক্তা দাঁড়িয়ে পরলো। বাচ্চাটার হাতে বল দিয়ে বলল সে পরে আবার খেলবে। মাশরাত এগিয়ে এসে আধুনিক্তার বরাবর দাঁড়াল। দুজনই নিঃশব্দ। একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে হাসিমুখে। মাশরাত নিরবতা ভেঙে বলল-
“তো বলুন আমরা প্লে গ্রাউন্ডে কি করবো?”
“বসে বসে কথা বলবো। অন্য কোথাও গেলে বাবা দেখে ফেলার চান্স আছে। আমাদের ভাগ্য খারাপ জানোই তো। এইখানে কেও আসবে না।”
“তুমি এত বুদ্ধিমতী কবে হলে?”
“হোয়াট ডু ইউ মিন?”
আধুনিক্তা চোখ ছোটো ছোটো করে প্রশ্নটা করলো৷ মাশরাত হেসে বলল-
“দুষ্টুমি করছিলাম”
মাশরাত ডান বাম দেখে বলল-
“ওখানে দোলনা আছপ বসবে?”
“ওকে, তুমি আমাকে দোলাবে?”
“মানুষ কি বলবে? তুমি বসে থেকো। আমি নাহয় দাঁড়িয়ে থাকবো।”
“অন্যান্যা মানুষের টাকায় জীবন কাটাও?”
মাশরাত না সূচক মাথা নাড়াল। আধুনিক্তা মাশরাতের হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল। সে দোলনায় বসে মাশরাতকে ইশারায় বলল পেছনে গিয়ে তাকে দোলাতে। মাশরাত চারপাশে চোখ বুলালো। যে যে যার কাজে ব্যস্ত। মাশরাত গিয়ে ধীরে ধীরে দোলনা দোলাতে লাগলো।
“আমাকে মিস করেছিলে?”
“এমন কোনোদিন নেই যেদিন তোমার কথা মনে আসে নি।”
“বিয়ে করো নি কেন?”
“সব মেয়েরা রিজেক্ট করে দিচ্ছিল তাই।”
“মেয়েরা রিজেক্ট করেছিল না-কি তুমি নিজেই করেছিলে?”
“একই হলো”
“আমাকে কিন্তু অনেক ছেলেরাই প্রপোজ করেছিল।”
“তুমি কি করেছো?”
“দুজনের সাথে রিলেশন করেছিলাম। আর একজনকে রিজেক্ট করেছিলাম।”
“নাইস জোক।”
আধুনিক্তা শব্দ করে হেসে উঠলো।মাশরাত পেছন থেকে হেটে এসে দোলনার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়াল। আধুনিক্তা মাশরাতের দিকে তাকিয়ে বলল-
“তোমাকে ছাড়া আর কাওকে মনে জায়গা দিতে পারবো না।”
মাশরাত আধুনিক্তার হাত ধরে নিজের কাছে নিয়ে এসে বলল-
“আমি ভেবেছিলাম তাবাসসুমকে ছাড়া আর কাওকে ভালোবাসতে পারব না। কিন্তু আমি ভুল ছিলাম৷ আমাকে কেও একজন বলেছে, প্রথম বা দ্বিতীয় ভালোবাসা বলতে কিছু নেই। যে সম্পর্ক শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত টিকে থাকে সেটাই সত্যিকারের ভালোবাসা। তোমার সাথে আমার সম্পর্ক আমি শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত টিকিয়ে রাখতে চাই।”
আধুনিক্তা মাশরাতের বুকে মাথা রাখলো। মাশরাতের ইচ্ছে করছে না আশে পাশে থাকা মানুষদের কথা ভাবতে। শুধু এই মুহূর্তটাকে উপভোগ করতে ইচ্ছে করছে। হঠাৎ আধুনিক্তা তার ওড়নার আঁচলে টান অনুভব করলো। মাশরাত আর আধুনিক্তা মাথা নিচু করে দেখে একটা বাচ্চা দাঁড়িয়ে আছে। আধুনিক্তা মুচকি হাসলো। সে এই বাচ্চাটার সাথেই খেলছিল কিছুক্ষণ আগে। আধুনিক্তা হাঁটু গেড়ে বসলো তার সামনে।
“কিছু বলবে?”
“তুমি আমার সাথে আর খেলবে না আপু?”
“তোমার আম্মু তো বলেছিল চলে যাবে।”
“আম্মু আপুর স্কুলে গিয়েছে। আমাকে বলেছে এখানে খেলা করতে। আমার একা ভয় করে।”
মাশরাতও তাদের সাথে বসে বাচ্চাটার হাত ধরে বলল-
“বাস্কেটবল খেলবে?”
“হ্যাঁ ভাইয়া খেলব।”
মাশরাত আধুনিক্তার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকালো।
“আমি খেলব না।”
“হোয়াট?”
মাশরাত বড়ো বড়ো চোখ করে ফেলল। আধুনিক্তার কপালে হাত রেখে বলল-
“জ্বর তো আসে নি।”
“ধ্যাত আমার জ্বর আসবে কেন?”
“তুমি খেলবে না, শুনেই মনে হলো আমি শকড।”
“এখন এই খেলা আমাকে কাবু করতে পারে না।”
মাশরাত আর কিছু বলল না। সব তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। মাশরাত বাচ্চাটাকে নিয়ে খেলতে চলে গেল। আধুনিক্তা গিয়ে বসলো একটা বেঞ্চে। মাশরাত আর সেই বাচ্চাটা খেলছে। আধুনিক্তা বসে বসে তাদের দেখছে। হঠাৎ ভাবলো, ভবিষ্যতে যদি তাদের একটা ছেলে বাবু হয়। মাশরাত তার ছেলের সাথে এইভাবেই খেলবে আর আধুনিক্তা একপাশে বসে বাপ ছেলেকে দেখে হাসবে। মন তো হাজারো স্বপ্ন বুনে। কিছু স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত হয়। ও কিছু স্বপ্ন অবাস্তব রয়ে যাবে। কিছুক্ষণ পর বাচ্চাটার মা ও বোন আসলো। মাশরাত আর মাশরাতকে ধন্যবাদ দিয়ে চলে গেল। মাশরাত আধুনিক্তার দিকে তাকিয়ে বলল-
“অপারেশনের কারণে খেলো না আর?”
“ডাক্তার বলেছে আমি একদম সুস্থ আছি। দৌড়াদৌড়ি করলেও আমার কিছু হবে না। কিন্তু আমার আর বাস্কেটবল ভালো লাগে না। একদম বোরিং একটা গেম।”
“ন্যাশনাল প্লেয়ার মুখ থেকে এমন কিছু শোনার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না।”
আধুনিক্তা হাসলো, মাশরাত আধুনিক্তার হাত ধরে বলল-
“ইটস ওকে, তোমার পছন্দ অপছন্দকে আমি সম্মান করি। চলো তাহলে অন্য কোথাও যাওয়া যাক।”
“নাস্তা করেছো তুমি?”
“হ্যাঁ মিটিং-এর পর ভেবেছিলাম।”
“গুড বয়, চলো দুজন হাতে হাত রেখে খোলা আকাশের নিচে হাঁটি।”
মাশরাত মাথা নাড়াল। আধুনিক্তার হাত ধরে প্লে গ্রাউন্ড থেকে বের হলো। রাস্তার কিনারা থেকে দুজন হাটছে। আধুনিক্তা এমনিতে প্রচুর কথা বলে। কিন্তু তাকে চুপচাপ থাকতে দেখে মাশরাত খুব অবাক হচ্ছে। মেয়েটা তো এমন ছিল না। এতটা পরিবর্তন হতে পারে একটা মানুষ৷ কিন্তু মাশরাতের বেশ ভালো লাগছে এই পরিবর্তনটা। আজও আকাশে মেঘ। একবার রোদে ভরা আকাশ আর একবার মেঘে ঢাকা আকাশ। প্রকৃতির এমন খেলা দেখতে ভালোই লাগে।
“হয় তো বৃষ্টি পরবে।”
“হুম হয় তো”
“চলো তাহলে তোমাকে বাসায় দিয়ে আসি।”
“না, আজ বৃষ্টি হলে আবার তোমার সাথে ভিজবো। দেখো চারপাশে গাড়ি রিকশা নেই। এক এক করে সবাই চলে যাচ্ছে বৃষ্টি পরবে বলে। এমন নিরব রাস্তার মাঝে ভিজতে বেশ ভালো লাগবে।”
মাশরাত কিছু বলল না। হাটতে হাটতেই বৃষ্টি নেমে আসলো৷ আধুনিক্তা মাশরাতের হাত ছেড়ে এগিয়ে গেল। মাশরাত আবার গিয়ে আধুনিক্তার হাত খোপ করে ধরে বলল-
“কোথায় যাচ্ছো? হাত ধরে রাখো। চারপাশে কাদামাটি আছে। পড়ে যাবে তো।”
“পড়ে গেলেও সমস্যা নেই, তুমি আছো তো আমাকে ধরার জন্য।”
“আমি কিন্তু ধরবো না। তোমাকে রেখেই চলে যাব।”
“তুমি এমনটা করতে পারবে?”
“হ্যাঁ পারব, আমার জন্য এটা বড়ো কোনে ব্যাপার না।”
আধুনিক্তা চোখ ছোটো ছোটো করে ফেলল। মাশরাত হাসলো তার চাহনি দেখে। আধুনিক্তা মাশরাতের পেছনে তাকাল। সেখানে পানি জমেছে। আধুনিক্তা দুষ্টুমি হাসি দিয়ে মাশরাতকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো। মাশরাত হতবাক, আধুনিক্তার হাসতে হাসতে শেষ। মাশরাত অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল-
“এটা আমার ফেবারিট হোয়াইট শার্ট ছিল।”
“তাতে আমার কি? এনি ওয়েজ, তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে।”
মাশরাত চারপাশে চোখ বুলালো। রাস্তায় বেশী কেও নেই। ওপারের রাস্তা দিয়ে গাড়ি যাচ্ছে। এই পারের রাস্তা খালি। অন্য পাশের টং দোকানও বন্ধ। আধুনিক্তা বলল-
“কি ভাবছো?”
মাশরাত আধুনিক্তার দিকে তাকাল। পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে তারাতারি উঠে বসে আধুনিক্তার হাত ধরে টেনে পাশে ফেলে দিলো। আধুনিক্তা অবাক হয়ে বলল-
“এটা কি করলে? কত জীবানু আছে এখানে জানো?”
“আমাকে ফেলার আগে ভাবো নি জীবাণুর ব্যাপারে।”
আধুনিক্তা উঠতে নিলো। কিন্তু তার হাত ধরে টেনে আবার ফেলে দিলো। মাশরাত তারাতাড়ি উঠে দাঁড়িয়ে বলল-
“তুমি এই জীবাণুতে ঘুমাও আমি যাই।”
বলেই মাশরাত ঘুরে দ্রুত গতিতে হাটা ধরলো। আধুনিক্তাও তারাতাড়ি উঠে মাশরাতের পেছনে দৌড়ে গেল। মাশরাত পেছনে ফিরে দেখে আধুনিক্তা দৌড়ে আসছে। কিন্তু কাদায় স্লিপ আধুনিক্তা পড়ে যেতে নিলো। মাশরাত দৌড়ে গিয়ে আধুনিক্তাকে জাপ্টে ধরলো। বৃষ্টির দিনে পিছলা না খেলে চলে???

চলবে…….

[গতকাল গল্প দেই নি বলে ওয়াদা করেছিলাম আজ দু’টো পর্ব দিব। রাতে আরো একটা পর্ব পাবেন। অপেক্ষা করার অনুরোধ রইল❤️❤️]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here