তুমি_আছো_হৃদয়ে_তাই পর্ব_২১

0
2166

#তুমি_আছো_হৃদয়ে_তাই
#শোভা_আক্তার(লাভলী)
#পর্ব_২১

বাবা একবার আধুনিক্তাকে দেখে আবার মাশরাতের দিকে তাকাল। রাগে উনার গা জ্বলছে। হঠাৎ হাতে কারো স্পর্শ পেল। পাশে ফিরে দেখে উনার স্ত্রী। আধুনিক্তার মা চোখের ইশারায় শান্ত থাকতে বলল। বাবা একটা লম্বা নিশ্বাস ফেলে এগিয়ে গেল। মা আধুনিক্তার কাছে গিয়ে ডাকতেই আধুনিক্তার হুশ ফিরল। মায়ের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মা মুচকি হাসলো। আধুনিক্তা তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে নিলো। তারপর মায়ের হাত ধরে এগিয়ে গেল। মাশরাত আধুনিক্তার বাবাকে দেখে মাথা নিচু করে ফেলল। বস কনফিউজ হয়ে বলল-
“মাশরাত তুমি উনাদের চিনো? আরমান তোমাকে চিনলো কিভাবে?”
মাশরাত জবাব দিলো না। আরমান বলল-
“আরে উনি তো আমার মাশরাত ভাইয়া।”
“তার মানে স্যার, আপনারা একে অপরকে চিনেন না।”
আধুনিক্তার বাবা ঠোটে হাসি ফুটিয়ে বলল-
“হ্যাঁ চিনি বেশ ভালো মতো চিনি।”
“ওহ দ্যাটস গ্রেট স্যার। মাশরাতের প্রশংসা করা একবার শুরু করলে আমি আর থামবো না। সত্যি বলছি ও অনেক ভালো একজন মানুষ৷ সত্যি বলতে আমার অফিস আজ যে পর্যায়ে আছে আই আমার অফিসের কর্মচারীদের কারণে। আর মাশরাত, ও সবচেয়ে বেশী পরিশ্রম করেছে। তাই তো সে আমার অফিসের এমডি হতে চলেছে। আমি নিশ্চিত আপনাকে আমরা নিরাশ করবো না।”
বাবা হাসলেন, উনার তো ইচ্ছে করছে চলে যেতে। মাশরাত অফিসের এমডি জানলে কখনো ইনভেস্ট করতো না। কিন্তু এখন যেহেতু ইনভেস্ট করার কথা বলেছে পিছে হাঁটা যাবে না। মা কাছে আসতেই মাশরাত মুচকি হেসে সালাম দিলো। মা সালামের জবাব দিলো। উনি আজ বেশ খুশী, মাশরাতের মাথায় আলতো করে হাত বুলালো। মাশরাত আধুনিক্তার দিকে তাকাল। আধুনিক্তা তার দিকেই তাকিয়ে আছে। বাবা বলল-
“চলুন তাহলে ভেতরে যাওয়া যাক।”
“জি স্যার চলুন, মাশরাত ম্যামদের নিয়ে আসো।”
“না আমরা এক সাথেই যাই। আসো তোমরা।”
আধুনিক্তার মা মাথা নাড়াল। আরমানের হাত ধরে উনি এগিয়ে গেলেন। বাবা আধুনিক্তাকে চোখের ইশারায় ভেতরে যেতে বলল৷ আধুনিক্তা মাথা নিচু করে চুপচাপ ভেতরে ঢুকলো। মাশরাতের মা আধুনিক্তাকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। আধুনিক্তা দূর থেকে মাকে দেখে হাসিমুখে দ্রুত হেটে গেল। মায়ের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে জড়িয়ে ধরলো। আধুনিক্তার বাবা দেখে বিরক্ত চেহারা বানালো। আধুনিক্তার মা পরিস্থিতি সামলানোর জন্য ফিসফিস করে বলল-
“শুনো এখন মেয়েকে কিছু বলো না। সে যেভাবে আছে থাকতে দাও। বাসায় গিয়ে তাকে বুঝিয়ে বললেই হবে।”
বাবা বিরক্ত হয়ে এগিয়ে গেল। মা একটা লম্বা নিশ্বাস ফেলল। বাবা আবার ফিরে এসে আধুনিক্তার মায়ের বরাবর দাঁড়িয়ে নিচু স্বরে বলল-
“পাবলিক প্লেসে আমি তামাশা করতে চাই না। আধুনিক্তাকে যেভাবেই হোক তুমি তাদের থেকে দূর রাখো।”
“আচ্ছা তুমি যাও বিজনেস সামলাও।”
বাবা চলে গেলেন আবার। মা হেটে গিয়ে আধুনিক্তার কাছে গেল। আধুনিক্তা মাকে দেখে বলল-
“আন্টি উনি আমার আম্মু। আর আম্মু উনি মাশরাতের আম্মু।”
উনারা একে অপরকে সালাম দিয়ে পরিচয় হয়ে নিলেন। আধুনিক্তা হাসি মুখে তাকিয়ে আছে। তখনই মালিহা আসলো কানের দুল পড়তে পড়তে। আধুনিক্তা মালিহাকে দেখে হা হয়ে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখলো। মালিহা অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে দু’বার চোখের পলক ফেলল। তারপর হেসে দ্রুত হেটে এসে আধুনিক্তাকে জড়িয়ে ধরলো। তাদের দেখে মনে হচ্ছে দুজন বন্ধুর অনেক বছর পর দেখা হলো।
“আপু তুমি কেমন আছো?”
“আমি একদম ভালো আছি। তুমি কেমন আছো? আর তোমাকে এত কিউট লাগছে কেন আমি তো ফিদা হয়ে গেলাম।”
“থাক থাক আর কিছু বলতে হবে না। আজ মেকআপ একটু বেশী করেছি তাই হয় তো কিউট লাগছে।”
আধুনিক্তা হেসে মালিহার গালে হাত রাখলো। হঠাৎ মালিহা খেয়াল করলো আধুনিক্তার পেছনে একটা বাচ্চা দাঁড়িয়ে আছে। সে বার বার উকি মেরে মালিহাকে দেখছে আবার লুকিয়ে যাচ্ছে। মালিহা হেসে আধুনিক্তার পেছনে উঁকি মেরে বলল-
“আমি কি জানতে পারি এই ছোটো মিস্টার হ্যান্ডসামটা কে?”
আধুনিক্তা হেসে বলল-
“আমার ছোটো ভাই।”
“মানে আরমান?”
আধুনিক্তা হেসে মাথা নাড়াল। মালিহা আরমানের হাত ধরে টেনে সামনে নিয়ে আসলো। আরমান লজ্জায় মাথা নিচু করে রেখেছে।
“আপু তুমি বললে না কেন তোমার ছোটু এত হ্যান্ডসাম।”
আরমান শুনে আধুনিক্তাকে জড়িয়ে ধরে মুখ লুকালো। আধুনিক্তা প্রথম অবাক হলেও পরে হেসে বলল-
“ও ভীষণ লাজুক। কেও ওর প্রশংসা করলে লজ্জা পায়।”
মালিহা হাসলো, আরমান দৌড়ে বাবার কাছে চলে গেল।
“আপু, ভাইয়া বলেছিল তোমার অপারেশনের জন্য বাহিরে গিয়েছিলে।”
“হ্যাঁ, আমি এখন একদম সুস্থ আছি। ঔষধ চলছে এখনো।”
“আমি অনেক খুশী তুমি সুস্থ হয়ে গিয়েছো।”
“আচ্ছা মালিহা তোমার ভাইকে বিয়ে দাও নি কেন এখনো?”
“ভাইয়া একজনের অপেক্ষায় ছিলো৷ অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো আজ। এইবার হয় তো বিয়ে হয়েই যাবে।”
“আমাকে দাওয়াত দিতে ভুলো না। বরযাত্রা যাওয়ার সময় আমি আর তুমি একসাথে নাচবো।”
বলেই আধুনিক্তা আর মালিহা একসাথে হেসে দিলো। মাশরাতের চোখ বার বার আধুনিক্তার দিকে আটকে যাচ্ছে। আধুনিক্তার বাবার কথা ভেবে চোখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।

কিছুক্ষণ পর মল্লিকা আর কবির এলো। আধুনিক্তা তাদের দেখে কিছুক্ষণ থমকে গেল। ইমোশনাল হয়ে যাচ্ছে সে। মল্লিকা হঠাৎ আধুনিক্তাকে দেখে তব্দা খেয়ে দাঁড়িয়ে রইল। কবির মল্লিকাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সামনের দিকে তাকাল। আধুনিক্তা দাঁড়িয়ে আছে। কবির আধুনিক্তাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে দু’বার চোখের পলক ফেলল। মল্লিকা দৌড়ে গিয়ে আধুনিক্তাকে জড়িয়ে ধরলো। দুজনই যেন শকড। তারা কান্না তো দূরের কথা হাসতেও যেন ভুলে গিয়েছে। মাশরাত তাদের দেখে মুচকি হেসে এগিয়ে আসলো। কবিরও দ্রুত এসে মাশরাতের সামনে দাঁড়িয়ে বলল-
“আধুনিক্তা? মানে ও কখন আসলো?”
“লম্বা কাহানী পরে বলবো। এখন তাদের একা ছেড়ে দে।”
মাশরাত কবিরকে নিয়ে চলে গেল। মল্লিকা আর আধুনিক্তার খুনসুটি ঝগড়া শুরু হলো। মল্লিকা এক সময় কান্না করে দিলো। আধুনিক্তা হেসে আবার জড়িয়ে ধরলো মল্লিকাকে। তখনই আধুনিক্তার নজর গেল দরজার দিকে। মেহরিন অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আধুনিক্তা শব্দ করে হেসে মল্লিকাকে ছেড়ে বলল-
“হ্যাবলার মতো তাকিয়ে না থেকে এইদিকে আয়।”
মেহরিন হাসি মাখা মুখে দৌড়ে এসে আধুনিক্তাকে জাপ্টে ধরলো। মল্লিকাও যোগ দিলো তাদের সাথে। রিয়াজ অবাক হয়ে এগিয়ে এসে বলল-
“আমি কি স্বপ্ন দেখছি? আধুনিক্তা কি সত্যি এসেছে?”
মাশরাত রিয়াজের মাথায় আস্তে করে থাপ্পড় মেরে বলল-
“না এটা সত্যি।”
“কখন এসেছে ও? আর আমাদের সাথে যোগাযোগ করেনি কেন?”
“এটা তো আমারো প্রশ্ন।”
আধুনিক্তা মল্লিকা আর মেহরিনকে ছেড়ে মাশরাতের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল-
“তোমার নাম্বারের কি হয়েছে জানতে পারি?”
মাশরাত কিছুক্ষণ ভেবে বলল-
“খেলার দিন আমার মোবাইল ভেঙে গিয়েছিল। এরপর আর ঠিক করানো হয় নি। আর আগের নাম্বারও তুলি নি।”
আধুনিক্তা আড়াআড়ি ভাবে হাত ভাজ করে বলল-
“তো এতে দোষ কার? তোমাদের সবার সাথে আমি অপারেশনের পর যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলা। কিন্তু ভাগ্য কি, কারো নাম্বার ঠিক মতো মনে ছিল না। শুধু তাই না তোমাদের বাসায় পর্যন্ত গিয়েছিলাম।”
মাশরাত মন খারাপের স্বরে বলল-
“আমাদের বাসা বেশ পুরানো ছিল। গত ৭ মাস আগের ভুমিকম্পের কারণে ফাটল ধরেছিল। তাই রিস্ক না নিয়ে আমরা বাড়ি বিক্রি করে দেই। এখন সেখানে বাচ্চাদের জন্য পার্ক বানিয়েছে।”
“তুমি জানো আমি কত ভয় পেয়েছিলাম? ভেবেছিলাম হারিয়ে ফেলেছি তোমাকে।”
এই কথা শুনে মেহরিন ভেংচি কেটে বলল-
“আর আমরা?”
মল্লিকা বলল-
“আমরা আকাশ থেকে টপকে পরেছি।”
আধুনিক্তা মাশরাতের দিকে তাকিয়ে থেকেই বলল-
“একটা এক্সেমপল দেই। তোরা আমার হৃদয় হলে মাশরাত আমার হৃদয়ের স্পন্দন।”
মাশরাত মুচকি হাসলো। মেহরিন আর মল্লিকা মজা নেওয়া শুরু করেছে৷ কিন্তু আধুনিক্তার দৃষ্টি মাশরাতের দিকে। মাশরাত মুচকি হেসে বলল-
“ভালো হয়েছে আগে যোগাযোগ হয় নি। হঠাৎ তোমাকে দেখে আজ ভীষণ ভালো লাগছে।”
“তোমাকে কিছু বলার আছে।”
“বলো”
আধুনিক্তা মুচকি হেসে বলল-
“মাঝে মধ্যে লোভী হতে মন চায়। এখন বলব না।”
মাশরাত হাসলো, আধুনিক্তার রহস্যময় কথাবার্তা তার মাথায় ঢুকে না। হঠাৎ আধুনিক্তার মাথায় একটা কথা আসতেই রাগান্বিত কন্ঠে বলল-
“আর তোমার সাহস কত বড়ো তুমি মেহরিনকে নিয়ে পালিয়েছো। জানো ওর খান্দান তোমাদের পাগলের মতো খুঁজে বেড়াচ্ছে? একবার ধরা পরলে তোমরা শেষ।”
মেহরিন অবাক হয়ে বলল-
“আমার ভাই? তুই কি করে জানলি এসব?”
“তোর বাসায় গিয়েছিলাম। কি দরকার ছিলো পালানোর? তুই বিয়ের জন্য না করতে পারলি না।”
রিয়াজ বলল-
“তুমি ফিরে এসেছো আমি ভীষণ খুশী। এইবার ওর ক্লাস নও। ওর উচিত ছিলো আমাকে সব বলা। কিন্তু না ম্যাডাম তার বিয়ের দু’দিন আগে আমাকে সব বলেছে।”
“আমি থাকলে একটা চড় মেরে তোর সব দাঁত ফেলে দিতাম।”
“দোস্ত বাদ দে না। যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে।”
“যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে? তোর কি একবারো আন্টির কথা মনে আসে না?”
মেহরিন মাথা নিচু করে ফেলল। রিয়াজ বুঝতে পারলো পরিস্থিতি বেশ সিরিয়াস হয়ে উঠেছে। সে বলল-
“আধুনিক্তা, এমন কোনো দিন নেই মেহরিন আন্টিকে কল করে নি। আন্টি কল তুলছে না। ওর ভাইকে কল দেওয়ায় হুমকি দিয়েছে আবার কল দিলে আমাদের দুজনকেই মেলে ফেলবে।”
“বাহ, মজুমদার পরিবারের চেয়ারম্যান দেশ ছেড়ে যাওয়ার পর সবার দেখি পাওয়ার বেড়ে গিয়েছে। দাদাইকে বলতে হবে এই বিষয়ে। কাওকে মেরে ফেলা এতোই সহজ?”
কবির বলল-
“হ্যাঁ আজকাল এলাকায় প্রচুর মার্ডার হচ্ছে। আর জানো বর্তমান চেয়ারম্যানের ছেলে এলাকার বেশীরভাগ ছেলে মেয়েদের খারাপ করে ফেলেছে ড্রাগস দিয়ে। চেয়ারম্যানকে চেয়ারম্যানের স্থান থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।”
“ডোন্ট ওয়ারি দাদাই ফিরে এসেছে। সব ঠিক হয়ে যাবে।”
মেহরিন আধুনিক্তার হাত ধরে বলল-
“আধু, আমি মানুষ ভুল হতেই পারে। আমি রিয়াজকে ছাড়া কখনো সুখে থাকতাম না সত্যি বলছি। তবুও তো আম্মুর কথার মতো রাজি হয়েছিলাম। শেষে কিছু ভাবতে না পেরে পালিয়েছি। মাফ চেয়েছিলাম কিন্তু আম্মু মাফ করেনি। আমার শ্বশুর বাড়ির লোকজনরা খুব ভালো রে। আমার শ্বাশুড়ি আম্মু সবচেয়ে ভালো। আম্মুকে আমি সব বলতাম যাতে আমার সুখ দেখে আমাকে মাফ করে দেয়। আমি জানি আমি কষ্ট দিয়েছি আম্মুকে। এর শাস্তিও পেয়েছি। আম্মুর সাথে কথা না বললে একদিনও আমার ভালো কাটে না। প্লিজ দোস্ত কিছু একটা কর।”
আধুনিক্তা কিছুক্ষণ ভেবে মাশরাতের দিকে তাকাল৷ মাশরাত বুঝেছে আধুনিক্তার মাথায় কিছু তো এসেছে। কিন্তু তার চাহনি দেখে মাশরাত ভয় পেলো। মেয়েটার মাথায় তুফানি আইডিয়া আসলে সব শেষ। কিন্তু মাশরাতকে শক দিয়ে আধুনিক্তা বলল-
“আমি এতে কিছুই করতে পারবো না৷ তোর নিজে সব ঠিক করতে হবে। হ্যাঁ আমি দাদাইকে বলতে পারি তোর ভাইয়ের সাথে কথা বলার জন্য।”
“দোস্ত তুই ঠিক আছিস তো? মানে তোর কাছে তো আইডিয়ার অভাব হয় না। হঠাৎ কি হলো?”
আধুনিক্তা হেসে মেহরিনের মাথায় টোকা মেরে বলল-
“কিছুই হয় নি। তুই চেষ্টা করতে থাক। আন্টি একদিন মেনে নিবে তোদের। তুই আন্টিকে সত্যি খুব কষ্ট দিয়েছিস। এবার উনার কষ্ট মুছে ফেলার দায়িত্ব তোর আর রিয়াজের।”
মেহরিনের মুখে হাসি ফুটে উঠলো। মাশরাত অবাক হলো আধুনিক্তার কথা শুনে। পরে আবার মুচকি হেসে ভাবলো বয়সের সাথে সাথে মানুষের বুদ্ধির বিকাশ ঘটে।

পার্টি চলাকালীন প্রতিটি সময় আধুনিক্তা মাশরাতের আশে পাশেই ছিলো। সন্ধ্যা ৭ টা বাজতেই বাবা যাওয়ার কথা বলল। পার্টি রাত ১০ টার পর্যন্ত চলবে। মাশরাত ও তার বস বার বার বলছে রাতের ডিনার করে যেতে। কিন্তু বাবার এখন বেশ তাড়া। আধুনিক্তা বাবার কান্ড দেখে মায়ের কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলল-
“দেখলে তোমার স্বামীর কান্ড? উনি তো পাগল হয়ে গিয়েছে যাওয়ার জন্য। মানে নিজে প্রেম করে বিয়ে করতে পারবে মেয়ে প্রেম করলেই দোষ?”
“তোর বাবা তো এমনই। কলেজ জীবনে সবাইকে বলতো সিংগেল লাইফ ইজ বেটার। কিন্তু নিজেই পরে আমাকে প্রেমের প্রস্তাব দিতে দিতে পাগল হয়ে গিয়েছিল।”
“রাজি হয়েছিলে কেন? এমন হিটলার বাবা পেতে বেঁচে যেতাম তুমি না বললে।”
মা হেসে আধুনিক্তার গালে আস্তে করে থাপ্পড় মেরে বলল-
“দুষ্টুমি সাইডে রাখ। তোর বাবা বেস্ট হাসব্যান্ড ইন দ্যা ওয়াল্ড।”
“হুম এন্ড দ্যা মোস্ট ওয়ার্স্ট ফাদার ইন দিজ ওয়াল্ড। কি দরকার আমার প্রেমের শত্রু হওয়ার? এখন তো মাশরাতের টাকা পয়সারও কমতি নেই। উনি তো এমনই স্বামী চান আমার জন্য।”
মা না হেসে পারলো না। শব্দ করে হেসে উঠল। বাবা ভ্রু কুঁচকালো মা মেয়েকে দেখে। মেয়ে বাংলার পাঁচের মতো চেহারা করে রেখেছে। আর মা দাঁড়িয়ে হাসছে। মাশরাত আধুনিক্তাকে ইশারায় জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে। আধুনিক্তা না সূচক মাথা নাড়াল। মাশরাত ও তার বস এক সময় হার মানলো। আধুনিক্তার বাবা বেশ জেদি। উনি চলে যাবেন মানে এখনই যাবেন। আধুনিক্তা বিরক্ত হয়ে বাবার পিছু ধরলো। মাশরাত ও তার বস সাথে যাচ্ছে গাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার জন্য। মাশরাত গাড়ির কাছে এসে দ্রুত দরজা খুলে দিলো। মা মুচকি হেসে মাশরাতের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। ছেলেটাকে দেখলে উনার বেশ মায়া হয়। মাশরাত উনাকে সালাম দিয়ে বলল আবার আসতে। মাথা সালামের জবাব দিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো। আধুনিক্তা গাড়িতে বসার আগে ফিসফিস করে বলল তাকে কল দিতে নাম্বার মালিহার কাছে দিয়ে দিয়েছে। মাশরাত কিছু বলল না। ওর আত্মার পানি শুকিয়ে যাচ্ছে আধুনিক্তার বাবাকে দেখে। বাবা গাড়িতে উঠার আগে বলল-
“তুমি আমার কর্মচারী এখন। তাই সেটাই থাকো অন্য কিছু হওয়ার স্বপ্ন দেখার প্রয়োজন নেই।”
মাশরাত মাথা নিচু করে ফেলল। বাবা ড্রাইভারের পাশের সিটে বসে পরলো। আরমান মাশরাতের হাত ধরে ইশারায় নিচু হতে বলল। মাশরাত মুচকি হেসে হাঁটু গেড়ে বসলো আরমানের সামনে।
“কিছু বলবেন ছোটো সাহেব?”
আরমান নিচু স্বরে বলল-
“মাম্মাম আমাকে বলেছে তোমাকে পাপ্পা ডাকতে।”
মাশরাত হেসে বলল-
“তোমার মাম্মাম একজন সাইকো, তুমি আমাকে ভাইয়া-ই ডাকবে।”
“ওকে, কিন্তু ওয়াদা করো তুমি আর মাম্মামকে কাঁদাবে না। আমরা যখন সিঙ্গারায় ছিলাম মাম্মাম তোমাকে কল দিয়ে না পেলে কান্নাকাটি করতো।”
মাশরাত হেসে বলল-
“সিঙ্গারা নয়, সিঙ্গাপুর।”
“উফফো তোমরা কিছুই বুঝো না। আমি সিঙ্গাপুরকে সিঙ্গারা বলে ডাকি।”
“ওকে ওকে ছোট সাহেব বুঝলাম। আর আমি ওয়াদা করলাম আপনার মাম্মামকে আর কাঁদাবো না।”
“ইউ আর দ্যা বেস্ট ভাইয়া ইন দ্যা ওয়াল্ড।”
আরমান মাশরাতের গালে চুমু দিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো। মাশরাত দাঁড়িয়ে আধুনিক্তার দিকে তাকাল। আধুনিক্তা বাবার দিকে তাকিয়ে দেখে বাবা মাশরাতের বস এর সাথে কথা বলছে আর মা আরমানের জ্যাকেট খুলে দিচ্ছে। আধুনিক্তা দুষ্টুমি হাসি দিয়ে মাশরাতকে ফ্লাইং কিস ছুঁড়ে মারলো। মাশরাতের মনে হলো কেও তাকে ইলেকট্রিক শক দিয়েছে। ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে। আধুনিক্তাকে যেন সে চিনতেই পারছে না। আধুনিক্তা বেশ পরিবর্তন হয়েছে। গাড়ি স্টার্ট দেওয়া হলো। আধুনিক্তা মুখ লটকিয়ে মাশরাতকে টানা দিলো। মাশরাতও টাকা দিয়ে ইশারায় বলল হাসতে। আধুনিক্তা মুচকি হেসে মাথা নাড়াল। গাড়ি ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে। যেতে যেতে কিছুটা দূর চলে গেল। আধুনিক্তা মন খারাপ করে বসে আছে। মা হঠাৎ বলল-
“দেখেছো আধুনিক্তার আব্বু? মাশরাত কত সুন্দর পার্টি দিয়েছে। পার্টিটা ভীষণ ভালো ছিল।”
“এটা কোনো পার্টি হলো? আমি তো এর থেকে বড়ো পার্টি দিতে পারি।”
“হ্যাঁ তো তোমার টাকা বেশী দিতেই পারো। তার যতটুকু সামর্থ্য হয়েছে ততটুকুতেই পার্টি দিয়েছে।”
“এহ আসছে, আমার মেয়ের বিয়েতে আমি এলাকার সবচেয়ে বড়ো সেন্টার নিয়ে অনুষ্ঠান করবো।”
“হ্যাঁ তোমার যা খুশী করো আমরা না করিনি।”
আধুনিক্তা রাগে গজগজ করতে করতে বলল-
“তুমি কথায় কথায় মাশরাতকে নিচু করার চেষ্টা করো না।”
“যে অলরেডি নিচু তাকে আর কি নিচু করবো?”
“তোমার মতো বাবা আমার কপালে কেন জুটলো বুঝলাম না।”
“বেশী বলছো আধুনিক্তা।”
“আমার মনে কি চলছে এখনো সব বলেনি।”
বাবা উনার স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বলল-
“ওকে বলো বার বার আমাকে অপমান না করতে।”
“ও ছোটো মানুষ ওর প্রতি কথায় তুমি চুপ থাকলেই হয়। ও কি একা একা বকবক করতে পারবে? জবাব না পেয়ে একসময় চুপ হয়ে যাবে।”
“হ্যাঁ ঠিক বললে আমি আর জবাবই দিব না ও একা একা বকবক করুক।”
বাবা সোজা হয়ে বসে পরলেন আবার। আধুনিক্তার মায়ের কানের কাছে ফিসফিস করে বলল-
“তোমার স্বামী এক নাম্বারের বোকা আমি আগেই জানতাম।”
“কিছু কিছু রাগী মানুষদের বুদ্ধি কম থাকে। তাই তো বলা হয় খালি মাথা শয়তানের ঘর। আর রাগ তো শয়তানের তরফ থেকেই আসে। উনার মাথায় কিছু নেই তাই তো কথায় কথায় রাগ করে।
“ইউ আর দ্যা বেস্ট মম”
“থ্যাঙ্ক ইউ থ্যাঙ্ক ইউ”
আধুনিক্তা হেসে মাকে জড়িয়ে ধরলো। বাবা লুকিং গ্লাস দিয়ে মা মেয়েকে দেখে বোকার মতো তাকিয়ে আছে। সবকিছু উনার মাথার উপর দিয়ে গেল।

রাতেরবেলা…..
মাশরাত ছাদে এসেছে মাদুর নিয়ে। মাটিতে মাদুর পেতে সেটার উপর শুয়ে পরলো। মালিহার কাছ থেকে আধুনিক্তার নাম্বার নিয়ে এসেছে। নাম্বার ডায়াল করে কানে ধরলো। রিং বাজছে, কিছুক্ষণ পর রিসিভ হলো। অপর পাশ থেকে আধুনিক্তার ঘুমন্ত কন্ঠ ভেসে আসলো। মাশরাত ঘড়ির সময় দেখল। এখন ১১ টা ২৫ বাজছে। মাশরাত মোবাইল কানে ধরে বলল-
“তুমি ঘুম? আমি কি জাগরণ অবস্থায় স্বপ্ন দেখছি?”
“না আমি সত্যি ঘুমাচ্ছিলাম। আমি আসার পর থেকে অপেক্ষায় ছিলাম। তুমি কল দাও নি কেন?”
“পার্টি ১০ টায় শেষ হয়েছে। মা আর মালিহা একা কাজ করবে ভেবেই খারাপ লাগছিল। তাই আমিও তাদের সাহায্য করলাম ঘর গুছাতে।”
“তুমি দুনিয়ার সবচেয়ে ভালো ভাই এবং ছেলে। আই এম প্রাউড অফ ইউ মাই লাভ।”
মাশরাতের বুক ধুক করে উঠলো আধুনিক্তার মুখে লাভ শব্দ শুনে।
“কি বললে তুমি?”
“কি বললাম?”
“না থাক কিছু না। তো বলো তুমি কেমন আছো? পার্টিতে ঠিক মতো কথাও হলো না।”
“আমি একদম ভালো আছি। আগামীকাল ভার্সিটি যাব আবার এডমিশন নিতে। তুমি আসবে দেখা করতে?”
“আমি শিওর না, আগামীকাল মিটিং আছে তোমার বাবার সাথে। তাই মনে হয় আসতে পারবো না।”
“ঠিক আছে, জানো মাশরাত আমি বেশ খুশী তোমাকে দেখে। তুমি এমন এক মানুষ যাকে নিয়ে আন্টি আর মালিহা গর্ব করতে পারবে।”
মাশরাত জবাবে হাসলো। রাত ১ টার পর্যন্ত তাদের ফোনালাপ হলো। আধুনিক্তার ঔষধের কারণে তার ঘুম তারাতাড়ি এসে পড়ে। মাশরাত আধুনিক্তাকে ঘুমাতে বলে কল কেটে দিলো। মোবাইল বুকের উপর রেখে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল। আজ তার মনে হচ্ছে সে দুনিয়ার সবচেয়ে সুখী মানুষ। আধুনিক্তাকে দেখে তার মনে হলো সে আবার প্রেমে পরেছে। মাশরাত কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চোখ বন্ধ করে ফেলল।

চলবে……

[গল্প রাতে দিলেই ভালো হবে না? কারণ দেরি করে দিলে আমি পর্ব বড়ো করে দিতে পারি৷ আর ভাবার জন্যও বেশ সময় পাই। আমার তো ৩ ঘন্টা ভাবতে ভাবতেই সময় পাড় হয়ে যায়? লিখার জন্য নাহয় ১ ঘন্টা ধরলাম? ডিসিশন ফাইনাল গল্প রাতেই দিব। আশা করছি আমার সমস্যাটাও বুঝবেন? ভুল ক্রুটি থাকতে পারে, ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন❤️❤️]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here