তুমি_আছো_হৃদয়ে_তাই পর্ব_৩৬(শেষ পর্ব)

0
3234

#তুমি_আছো_হৃদয়ে_তাই
#শোভা_আক্তার(লাভলী)
#পর্ব_৩৬শেষ পর্ব)

“আজ যেহেতু সব সত্যি মাশরাত জেনে গিয়েছে। তাহলে তুমিও আজ একটা সত্যি শুনে নাও। সেদিন তাবাসসুমের এক্সিডেন্ট তোমার বাবা না, আমি করেছিলাম।”
আধুনিক্তা নিমিষে তব্দা খেয়ে গেল। বাবা এক হাত কপালে রেখে লম্বা নিশ্বাস ফেললেন। ডাইনিং টেবিলে তাবাসসুমের মা বাবা আধুনিক্তার দাদাই দাদী বসে ছিলেন। আধুনিক্তার মায়ের মুখে এ কথা শুনে উনারা দ্রুত এগিয়ে আসলেন। পরিস্থিতি আবার অস্বাভাবিক হয়ে উঠলো। মা ভেজা কন্ঠে বললেন-
“আমি ৪ বছর ধরে গাড়ি চালাই না। কারণটা জানো? কারণ সেই ৪ বছর আগে আমার হাতে তাবাসসুমের এক্সিডেন্ট হয়েছিল।”
আধুনিক্তা বলল-
“আ..আম্মু প্লিজ তু..তুমি কি বল..বলছো এইসব?”
“সত্যি বলছি, যখন এক্সিডেন্ট হয়েছিল তোমার বাবা না ড্রাইভ করছিলাম।”
“বুঝিয়ে বলো আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।”
মা আধুনিক্তার বাবার দিকে তাকালেন। বাবা উনার দিকে রাগী দৃষ্টি বানিয়ে তাকিয়ে আছে। মা সেদিকে মনোযোগ দিলেন না। একটা লম্বা নিশ্বাস ফেলে নিজেকে শান্ত করলেন। আধুনিক্তার দিকে তাকিয়ে বললেন-
“আমি আর মা আরমানের সাথে ছাদে ছিলাম সেদিন….”

অতীতের শেষ অংশ….
আরমান দাদীর হাত ধরে ধীরে ধীরে হাঁটছে আবার ক্লান্ত হয়ে বসে পরছে। সে একটু দেরি করে হাঁটা শিখেছে। মা বসে বসে আরমানকে দেখে হাসছে। হঠাৎ উনার মোবাইল বেজে উঠল। ফোনের স্ক্রিনে দেখে আধুনিক্তার বাবার কল। রিসিভ করে কানে ধরলেন-
“বলো”
“খেলতে খেলতে আধুনিক্তা ব্যাথা পেয়েছে। তাকে বাবা হসপিটাল নিয়ে গিয়েছে তারাতাড়ি হসপিটাল আসো তুমি।”
“বলো কি? কীভাবে কি হয়েছে?”
“ফোনে এতকিছু বলতে পারবো না। তুমি হসপিটাল পৌঁছাও। আমিও আসছি।”
“আচ্ছা আচ্ছা আসছি।”
মা আরমানকে দাদীর কাছে রেখে দ্রুত বাসা থেকে বের হলেন। কাঁদতে কাঁদতে উনার নিশ্বাস আটকে যাচ্ছে। অর্ধেক রাস্তা এগোনোর পর মাঝরাস্তায় আধুনিক্তার বাবাকে দেখলেন। বাবা গাড়ি থেকে বেরিয়ে দৌড়ে রাস্তা পাড় হবার চেষ্টা করছে। মা গাড়ি থামিয়ে উনাকে ডাকলেন। বাবা উনার স্ত্রীকে দেখে দৌড়ে এসে পাশের সিটে বসলেন।
“গাড়ি হঠাৎ নষ্ট হয়ে গিয়েছে স্টার্টই হচ্ছিল না। এখন তারাতাড়ি চলো।”
“মেয়ে ঠিক আছে তো?”
“আমি জানি না, আর তুমি কান্না করো না মেয়ে একদম ঠিক হয়ে যাবে।”
মা চোখের পানি মুছে মাথাম নাড়াল। গাড়ি স্টার্ট দিয়ে ফুল স্পিডে এগিয়ে যেতে লাগলো। সামনেই সিগনাল, মেয়ের অবস্থার কথা মাথায় ঘুরতে মা যেন পাগল পাগল হয়ে যাচ্ছিলেন। সময়ের মতো ব্রেক দিতে পারলেন না উনি। ডান দিকের রোড দিয়ে আসা একটা রিকশার সাথে এক্সিডেন্ট হয়ে যায়। মুহূর্তেই যেন চারপাশে হৈচৈ দিয়ে ভরে গেল। মা তব্দা খেয়ে বসে আছে। বাবা কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। ঝাঁকে ঝাঁকে মানুষ দৌড়ে আসছে উনাদের গাড়ির দিকে। উনি আধুনিক্তার মায়ের দিকে তাকালেন। এখন যদি কেস হয়ে যায়? হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশী যেহেতু সিগনাল দেখানোর পরও এক্সিডেন্ট হয়েছে। উনি তখন একটা কথা-ই ভেবেছেন যেভাবেই হোক উনার স্ত্রীকে এসব থেকে বাঁচাতে হবে। সে তো ইচ্ছে করে এক্সিডেন্ট করে নি। আর আরমান এখন খুব ছোটো। বাচ্চাটা মা ছাড়া কিছু বুঝে না। উনি দ্রুত পেছনের সিটে গিয়ে কোন মতো আধুনিক্তার মাকে টেনে নিয়ে পেছনের সিটে বসালেন।
“শুনো, শুনো এক্সিডেন্ট হয়ে গিয়েছে।”
“হুশ হুশ একদম চুপ। তুমি গাড়ি থেকে বের হবে না।”
“কিন্তু..কিন্তু দেখতে তো হবে মানুষটা কেমন হবে।”
“আমি গিয়ে দেখছি তুমি চুপচাপ বসে থাকো।”
“এক্সিডেন্ট তো আমি করেছি।”
“তোমাকে আমার কসম লাগে প্লিজ মুখ বন্ধ রাখো আর গাড়ি থেকে বের হবে না প্লিজ আই রিকুয়েষ্ট ইউ। আমি বিষয়টা হ্যান্ডেল করছি।”
মা আর কিছু বলতে পারলেন না। বাবা দ্রুত ড্রাইভিং সিটে গিয়ে দরজা খুলে বের হলেন। রাস্তার সবাই উনাকে ঘিরে ধরলেন। অনেকজন মারতে ধরেছিল। কিন্তু অন্যান্য মানুষরা থামিয়ে ফেলেছে। বাবা দ্রুত হেটে গিয়ে দেখো রিকশাওয়ালা কম আহত হলেও যাত্রী রক্তাক্ত অবস্থা। মা-ও বের হলেন গাড়ি থেকে। সবাই উনাকে কিছু বলার আগে বাবা সবাইকে থামিয়ে বলে উনার কোন দোষ নেই উনি পেছনের সিটে বসে ছিলেন। বাবা কোনমতে সবাইকে বুঝিয়ে তাবাসসুমকে কোলে তুলে গাড়ির ভেতরে রাখেন। তাবাসসুমের জিনিস পত্র গাড়িতে রেখে উনার স্ত্রীকে আস্তে আস্তে বললেন-
“তুমি আহত ব্যক্তিকে নিয়ে হসপিটাল যাও। শুনো আমার দিকে তাকাও। এতকিছু ভেবো না। তুমি হসপিটাল যাও আমি কিছুক্ষণের মধ্যেই আসবো। কাওকে কিছু বলবে না। তুমি ওয়াদা করো কাওকে সত্যটা জানতে দিবে না।”
মা কিছুক্ষণ আধুনিক্তার বাবার দিকে তাকিয়ে থেকে গাড়িতে উঠে বসলেন। বাবা গাড়ির জানালার দিকে ঝুঁকে বললেন-
“আব্বু আম্মুও যাতে এই বিষয়ে কিছু না জানে। আর এখন সুন্দর মতো ড্রাইভ করে হসপিটাল যাও।”
“তুমি আসবে তো?”
“হুম, যাও এখন।”
মা গাড়ি স্টার্ট দিয়ে কিছুটা এগিয়ে যেতেই পুলিশের গাড়ি আসলেন। আশে পাশের সবাই মন্তব্য দিলেন এই মানুষটা এক্সিডেন্ট করেছে। সবার স্টেটমেন্ট নিয়ে পুলিশ আধুনিক্তার বাবাকে গাড়িতে তুলে পুলিশ স্টেশন চলে যায়।

পুরো ঘটনা শুনে আধুনিক্তা তব্দা খেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার গলা দিয়ে শব্দ বের হচ্ছে না। এত বছর বাবাকে কত কিছু শুনিয়েছে সে। দাদাই রাগী কন্ঠে বললেন-
“তুমি কি ভাবো নিজেকে? এত মহান হবার কি প্রয়োজন ছিল?”
“তো আপনি কি চান আমার স্ত্রীর জেলে যাওয়া উচিত ছিল? আমার ছেলে তখন ২ বছরের ছোটো বাচ্চা ছিল। আমার মেয়ে তার মাকে ছাড়া এক মুহূর্ত থাকতে পারতো না।”
“আমি সেটা বলি নি। আমি কোন মতে জামিন করাতে পারতাম। তুমি পুলিশ স্টেশনে একটা কথা-ই বলছিলে ‘আমি এক্সিডেন্ট করেছি আমি এক্সিডেন্ট করেছি’৷ একবারো বলো নি ইচ্ছে করে এক্সিডেন্ট করো নি তুমি। যার কারণে সবাই ভাবছিল তুমি ইচ্ছে করে এক্সিডেন্ট করেছো। তোমাকে মার্ডারার ভাবছিল সবাই।”
“অতীতে যা হওয়ার হয়েছে। এখন এসব টেনে লাভ নেই।”
আধুনিক্তার মা তাবাসসুমের মা বাবার দিকে হেটে গিয়ে মাথা নিচু করে বললেন-
“ভাই, ভাবী আমি সেদিন তাবাসসুমের এক্সিডেন্ট করেছিলাম। এতে আধুনিক্তার বাবার কোন দোষ ছিলো না। আমি না বলার পরও উনি নিজের উপর নিয়ে নিয়েছে।”
তাবাসসুমের বাবা আধুনিক্তার বাবার দিকে তাকিয়ে বললেন-
“আপনার মহান হবার আসলেই খুব বেশী ইচ্ছে তাই না?”
“এমনটা না ভাইয়া, আমার তখন যা মনে হয়েছিল করেছি। আমি একটা কথা-ই ভেবেছিলাম কিভাবে আমার স্ত্রীকে এই অপরাধ থেকে বাঁচানো যায়।”
“হঠাৎ আধুনিক্তার ফুঁপানোর শব্দ আসলো। বাবা দ্রুত গিয়ে আধুনিক্তার সামনে দাঁড়ালেন। আধুনিক্তা চেহারা দু-হাত দিয়ে লুকিয়ে কাঁদছে।
“আম্মু কাঁদছো কেন? থাক থাক আর কাঁদে না। আমরা আছি তো। আমি থাকতে মাশরাতের সাহস হবে না তোমাকে ছাড়ার।”
আধুনিক্তা জাপ্টে ধরলো বাবাকে। বাবার বুকে মুখ লুকিয়ে কাঁদছে সে।
“তোমার থেকে মাফ চাওয়ার যোগ্যতাও হারিয়ে ফেলেছি আমি। কত বাজে ব্যবহার করেছি রাগের মাথায় তোমার সাথে। কখনো ভাবি নি আমার আব্বুর উপর দিয়ে কি যাচ্ছে। যে অপরাধ আমার আব্বু করেনি সেই অপরাধের শাস্তি আজ পর্যন্ত ভোগ করছে।”
বাবা মুচকি হাসলেন।
“তুমি আমার মেয়ে, রাগের মাথায় উল্টা পাল্টা বলা তো আমাদের খান্দানী ব্যবহার। আমি কখনো তোমার কথায় মন খারাপ করি নি। কারণ আমিও আমার বেলায় রাগের মাথায় আব্বু আম্মুকে অনেক কিছু বলতাম। আমার আম্মু আব্বু সহ্য করতে পারলে আমি কেন পারবো না?”
“আই লাভ ইউ আব্বু আই লাভ ইউ সো মাচ”
“আই লাভ ইউ টু”

বর্তমান….
মাশরাত চুপচাপ বসে আছে। সে আজ এত ঝটকা খেয়েছে মনে হচ্ছে স্ট্রোক করে ফেলবে। একটা লম্বা নিশ্বাস ফেলে হেলান দিয়ে বসে আধুনিক্তার দিকে তাকিয়ে বলল-
“শেষ হয়েছে আমাকে শকড করা?”
“হ্যাঁ শেষ, আমিও খুব শকড হয়েছি এতকিছু জেনে। আমার আব্বু এত ভালো আমি আগে জানতাম না মাশরাত।”
“আমার হিংসা হচ্ছে, আমি উনার থেকেও বেস্ট স্বামী হয়ে দেখাব।”
“পারবে না, আমার আব্বু সবচেয়ে বেস্ট।”
মাশরাত হাসলো, আধুনিক্তা মুচকি হাসি দিয়ে মাশরাতের দিকে তাকিয়ে আছে। এত স্বাভাবিক কিভাবে আছে মানুষটা? আধুনিক্তা ভাবছে সে মাশরাতের জায়গায় থাকলে এতক্ষণে ঝগড়া করতে করতে ডিভোর্স পর্যন্ত চলে যেত। কিন্তু মাশরাত এমনটা কিছু বলা তো দূর তাকে একটু বকাঝকাও করছে না। মাশরাত আধুনিক্তার দিকে তাকাল। আধুনিক্তার চাহনি দেখে বলল-
“মনে যা চলছে বলে দাও। এইভাবে রহস্যময় চাহনি না দিলেও হবে।”
“তুমি আমার উপর বা আমার পরিবারের উপর রাগো নি এই বিষয়টা আমাকে সবচেয়ে বেশী শকড করেছে।”
“তো তুমি আশা করছো আমি তোমাকে ডিভোর্স দিয়ে দেই? তোমার সাথে ঝগড়া করে সুইসাইড করে ফেলি। কি লাভ হবে এমনটা করে? আমি এসব কিছু ভাগ্যের লিখন মানছি। ভাগ্যে যা লিখা ছিল তাই হয়েছে। আমি এখন সব কষ্ট ভুলে যেতে চাই। প্রতিদিন সেই মানুষটার জন্য আমি দোয়া করবো বেশী বেশী।”
“ভবিষ্যতে যদি তোমার মনে হয় তাবাসসুম আপুর মৃত্যুর দায়ী আমি?”
“সেদিন ভেবে নিও আমি পাগল হয়ে গিয়েছি। আমাকে মেন্ট্যাল হসপিটাল দিয়ে এসো তখন।”
“আমি সিরিয়াস”
“আমি তোমার থেকে বেশী সিরিয়াস।”
মাশরাত যেন রেগে বলল কথাটা। আধুনিক্তা আর কথা বাড়ালো না। মাশরাত বিছানা ছেড়ে নেমে বলল-
“আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।”
“আচ্ছা আমি তাহলে খাবার গরম করে নিয়ে আসি ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে হয় তো।”
মাশরাত মাথা নাড়ালো। তোয়ালে নিয়ে বাথরুমে চলে গেল। আধুনিক্তা বিছানা থেকে নেমে খাবারের প্লেট নিয়ে রান্নাঘরে চলে গেল। খাবার গরম করে ঘরে ফিরে আসলো। মাশরাত ল্যাপটপ নিয়ে বসেছে। আধুনিক্তা লম্বা নিশ্বাস ফেলল। এগিয়ে গিয়ে খাটে বসলো মাশরাতের পাশে। মাশরাত ভ্রু দু’টো কুঁচকে কাজ করছে।
“খাবেন না-কি খাইয়ে দিতে হবে?”
“খাইয়ে দিলে খুশী হবো।”
আধুনিক্তা হেসে ভাত মেখে মাশরাতকে খাইয়ে নিজে খেয়ে নিলো। মাশরাত কাজ করতে করতে রাত ৩ টা বাজিয়ে ফেলল। ততক্ষণে আধুনিক্তার হেলান দিয়ে ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে গিয়েছে। মাশরাত বন্ধ করে রেখে এসে আধুনিক্তাকে ধরে শুইয়ে নিলো। আধুনিক্তা ঘুম ভাঙতেই উঠে বসতে নিলো।
“কিছু বলবে?”
মাশরাত আধুনিক্তাকে শুইয়ে দিলো আবার।
“না, তুমি বসে বসে ঘুমাচ্ছিলে তাই শুইয়ে দিলাম। এখন চুপচাপ ঘুমাও।”
“তুমি ঘুমাবে না?”
“হ্যাঁ ঘুমাবো, রিমোট খুঁজে পাচ্ছি না লাইট বন্ধ করার।”
“সুইচবোর্ড আছে কিসের জন্য?”
“গুড আইডিয়া”
মাশরাত উঠে গিয়ে লাইট বন্ধ করে এসে আধুনিক্তার পাশে শুইয়ে পরলো। আধুনিক্তা মাশরাতের বাম হাত জড়িয়ে ধরে কাঁধে গাল ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করলো। মাশরাত আধুনিক্তার দিকে ঘুরে আধুনিক্তাকে বুকের মাঝে টেনে নিয়ে চোখ বন্ধ করলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই আধুনিক্তা গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল। মাশরাতের ঘুম আসছে না। ধীরে ধীরে আধুনিক্তার কাছ থেকে সরে বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসলো। অস্থির লাগছে তার খুব। মন খারাপ না হলেও তাবাসসুমের জন্য তার কষ্ট হচ্ছে। মেয়েটা জীবিত থেকে তার থেকে দূর থাকলে এতটা কষ্ট হতো না। তাবাসসুমের মৃত্যু যেন মাশরাত মানতে পারছেনা। মাশরাত বিছানা থেকে নেমে জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়াল। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো সেখানে। অস্থিরতা না কমলে তার ঘুম আসবে না। হঠাৎ মাশরাতের কারো স্পর্শ অনুভব করলো। কেও তাকে জড়িয়ে ধরেছে পেছন থেকে। মাশরাতের মনে হচ্ছে স্পর্শটা তাবাসসুমের। পরে ভাবলো না এটা আধুনিক্তা। সবকিছু জানার পর আধুনিক্তার মধ্যে সে যেন তাবাসসুমকেও অনুভব করতে পারছে। বিষয়টা মাশরাত ভালো খারাপ কিছুই লাগলো না।
“আমি জানতাম তোমার মন খারাপ।”
আধুনিক্তার কন্ঠ শুনে মাশরাত পেছনে ফিরলো। আধুনিক্তা দাঁড়িয়ে আছে। মাশরাত আধুনিক্তার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে একটা চুমু দিলো।
“চিন্তা করো না, আমি কখনো তোমার সাথে রাগ করবো না। আমি আসলে তাবাসসুমের মৃত্যু মানতে পারছি না। আমি জানি দুনিয়ার সবাই এক না একদিন মৃত্যু গ্রহণ করবে। তবুও আপন মানুষ চলে গেলে সত্যটা যেন মন মানতে চায় না।”
“ঠিক বললে, আমরা সত্যটা জেনেও মানতে চাই না অনেক সময়। আমি তোমাকে বলছি না তাবাসসুম আপুকে ভুলে যেতে বা মন খারাপ না করতে। তোমার জায়গা আমি থাকলে কি করতাম আমি জানি না। কিন্তু আমি তোমার অনুভূতি বুঝতে পারছি।”
মাশরাত মুচকি হেসে আধুনিক্তার দু’গালে হাত রেখে বলল-
“সবসময় আমার পাশে থাকবে তো?”
“হ্যাঁ, শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত।”
“সেই অতি চেনা প্রশ্নটা আবার করি?”
“কোন প্রশ্ন?”
“এত ভালোবাসো কেন আমায়? সেটাই জানতে চাই।”
আধুনিক্তা মুচকি হেসে বলল-
“তুমি আছো হৃদয়ে তাই”
মাশরাত ধীরে ধীরে কাছে গিয়ে আধুনিক্তার কপালে চুমু দিয়ে জড়িয়ে ধরলো। শত অস্থিরতার মাঝেও এক প্রকার শান্তি অনুভব করছে মাশরাত।

সময় ঘনিয়ে যেতে সময় লাগে না। বিষয়টা হাস্যকর মনে হলেও সত্যি। আজকাল ১ মিনিট সময় যেন ১ সেকেন্ডে কেটে যায়। আবার অনেক সময় জীবনে বিপদ এসে ভর করলে সময় যেন কাটতেই চায় না। খুব শীগগিরই কেটে গেল ৩ টে বছর। এই তিন বছরে অনেক কিছু পরিবর্তন হয়েছে। মালিহার বিয়ে হয়ে গিয়েছে নাওয়ালের সাথে। শত না করার পরও তাদের নিয়তি মিলিয়েই দিলো। মাশরাত আর আধুনিক্তার সময় বেশ ভালো কাটছে। মাশরাত তার বস এর সাথেই কাজ করে। ব্যবসায় অনেকবার লস হয়েছে কিন্তু মাশরাত তার বসকে ছেড়ে আসে নি। সব বিপদে পাশে ছিলো।

আধুনিক্তা এই সময় তার ড্রেসিং টেবিলে সাজিয়ে রাখা মেকআপ গুলোর দিকে তাকিয়ে আছে। বাথরুম থেকে পানির শব্দ আসছে। মাশরাত অফিস থেকে এসে গোসল করতে গিয়েছে। সারাদিন মাশরাতের মা আধুনিক্তার আশে পাশেই থাকে। আধুনিক্তার কিছু প্রয়োজন হলে সাথে সাথে তার সামনে এনে হাজির করে। আধুনিক্তার বাথরুমের দরজার দিকে তাকাল। মাশরাত বের হতে হয় তো দেরি আছে। আধুনিক্তা ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে ফ্রেশ পাওডার নিয়ে খাটে বসলো৷ তার ভয়ে বুক কাঁপছে। তারাতাড়ি ফ্রেশ পাওডার খুলে ঘ্রাণ নিলো। এত সুন্দর ঘ্রাণ সে আর কোথাও খুঁজে পায় না। তার আবারো ইচ্ছে করছে একটুখানি খেয়ে দেখতে। কিন্তু মেকআপ খেলে যদি তার গর্ভে থাকা ৮ মাসের সন্তানটার কোন ক্ষতি হয়। আধুনিক্তা মুখ লটকালো। প্রেগন্যান্ট হবার পর থেকে সে একদম আজব বিহেভ করতে শুরু করেছে। একটুর মধ্যে কান্না আসে তার। কোন ইমোশনাল মুভি, সিরিয়াল দেখতে হাউমাউ করে কান্না করে। প্রিয় খাবার গুলো খেলে বমি করে দেয় কিন্তু মেকআপ দেখলে খেতে ইচ্ছে করে। হঠাৎ বাথরুমের দরজা খোলার শব্দ আসলো। আধুনিক্তা থতমত খেয়ে গেল। তার মাথা কাজ করছে না। মাশরাত বের হয়ে আধুনিক্তাকে দেখে মুচকি হাসলো। কিন্তু তার হাতে থাকা ফ্রেশ পাওডার দেখে দ্রুত এগিয়ে আসলো। আধুনিক্তা ভয়ে এদিক সেদিক দেখছে। মাশরাত খোপ করে আধুনিক্তার হাত থেকে ফ্রেশ পাওডার নিয়ে রাগী কন্ঠে বলল-
“আবার হসপিটাল যাওয়ার ইচ্ছে আছে তোমার?”
আধুনিক্তা না সূচক মাথা নাড়াল। মাশরাত একটা লম্বা নিশ্বাস ফেলে ফ্রেশ পাওডার রেখে আধুনিক্তার পাশে বসলো। আধুনিক্তার এক হাত নিজের দু-হাতের মুঠোয় নিয়ে মুচকি হেসে বলল-
“তুমি আমাকে মেয়ে উপহার দিবে তাই না?”
“আমি তো জানি না। ডাক্তারও কিছু বলেনি কি হবে।”
“মেয়েরা মেকআপ পছন্দ করে। আর তুমি মেকআপ দেখলে পাগল হয়ে যাও খাওয়ার জন্য।”
মাশরাত হেসে আবার বলল-
“সিরিয়াসলি আধু? মেকআপ তোমাকে এইভাবে কাবু করে?”
“আমার মনে হয় মেকআপ দুনিয়ার সবচেয়ে মজাদার খাবার। সবাই এটা চেহারায় কেন ব্যবহার করে বুঝি না।”
“হা হা হা তোমার মাথাটা গিয়েছে যা বুঝলাম। এখন এইসব রেখে বাহিরে চলো। ডিনা করে ঔষধ খেয়ে ঘুমাবে।”
আধুনিক্তা কিছু বলল না। মাশরাত দাঁড়িয়ে মাথা মুছে গেঞ্জি পড়ে নিলো। দুজন বাহিরে গিয়ে দেখে মা ডাইনিং টেবিলে খাবার সাজাচ্ছে।
“মা আমি আছি তো আপনি বসুন আমি বাড়ছি খাবার।”
“আরে আমি পারবো, বসো তুমি।”
“আপনি আমাকে একদমই কাজ করতে দেন না এখন। দেখুন তো আমার ওজন কত বেড়েছে। আপনার ছেলে আমাকে বাস্কেটবল বলে ডাকে এখন।”
“এই, তুই আমার মেয়েকে এইগুলো বলিস কেন?”
মাশরাত শব্দ করে হাসলো। মা আধুনিক্তার দিকে তাকিয়ে হাসিমুখপ বললেন-
“কিছুক্ষণ আগে বমি করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলে। তোমাকে না বলেছিলাম রান্নাঘরে যেতে না? কাজ কর্মের জন্য আমি আর কাজের মানুষ তো আছি। এখন শুধু বিশ্রাম নাও। সন্তান সুস্থ সবল তোমার কোলে আসুক। তারপর আমিই নাহয় আমার নাতি বা নাতনির খেয়াল রাখবো আর তুমি কাজ করে নিও।”
মাশরাত বলল-
“এই আইডিয়া বেস্ট। এখন আরাম করো। আম্মু কাজের জন্য নাহয় আরো কিছু মানুষ রেখে নিবে। আর আম্মু তোমার বৌমা আবার মেকআপ খেতে নিচ্ছিল।”
আধুনিক্তা ছোটো ছোটো চোখ করে মাশরাতের দিকে তাকাল। মা কিছু বললেন না উনি হেসেই চলেছেন। আধুনিক্তা লজ্জা পেলো। মা হাসি থামিয়ে বললেন-
“প্রেগ্ন্যাসি সময়টাই এমন। এক এক মানুষ এক এক রকম হয়ে যায়। মাশরাতের সময় আমার কেরাসিন তেলের ঘ্রাণ এতটাই ভালো লাগলো ইচ্ছে করতো খেয়ে ফেলি। মালিহার সময় চামড়ার তৈরী নতুন জুতার ঘ্রাণ ভালো লাগলো। বুঝে পারছো প্রেগ্ন্যাসি আমাদের কোন কোন রূপ ধারণ করতে বাধ্য করে?”
বলে মা আবার হাসলেন। আধুনিক্তার ভাত খেতে ইচ্ছে করছে না। মনে হচ্ছে খেলে বমি হয়ে যাবে। বসে বসে আপেল খেয়ে নিলো। মাশরাত ডিনার করে তার ঘরে চলে গেল। আধুনিক্তা টুকটাক মায়ের সাহায্য করে ঘরে চলে আসলো। মাশরাত হেলান দিয়ে বসে টিভি দেখছে। আধুনিক্তা সারাদিন ঢিলেঢালা থ্রি পিস পড়লেও রাতে মেক্সি পড়ে ঘুমায়। জামা পরিবর্তন করে এসে মাশরাতের পাশে বসলো। মাশরাত বাস্কেটবল খেলা দেখতে ব্যস্ত। আধুনিক্তা কিছুক্ষণ টিভির দিকে তাকিয়ে থেকে বলল-
“তোমার ইচ্ছে ছিল বাস্কেটবল প্লেয়ার হওয়া তাই না?”
মাশরাত আধুনিক্তার দিকে তাকিয়ে জবাবে হাসলো। আধুনিক্তা আবার বলল-
“তুমি বলেছিলে আমরা আমাদের স্বপ্ন পূরণ না করতে পারলে আমাদের সন্তানদের দিয়ে আশা করতে পারি। আমরা কি আমাদের সন্তানকে বাস্কেটবল প্লেয়ার বানাতে পারি না?”
“অবশ্যই পারি, কিন্তু মা বাবার কর্তব্য আগে সন্তান কি চায় তা জানা। যদি আমাদের সন্তান বাস্কেটবল না খেলতে চায় আমরা জোর করবো না। সে যা হতে চাইবে তা হবে।”
“ঠিক বললে, আচ্ছা তুমি কি সন্তান চাও?”
“এটা আমাদের প্রথম সন্তান আধু। তাই আল্লাহ তায়ালা খুশী হয়ে যে সন্তান দিবেন আমি তাতেই খুশী।”
আধুনিক্তা মুচকি হেসে মাশরাতের বুকে আশ্রয় নিলো।

পরেরদিন….
মালিহা এসে আধুনিক্তাকে ঘুম থেকে তুলেছে৷ আগামীকাল মাশরাতের জন্মদিন। তাই রাত ১২ টায় তারা সবাই মিলে মাশরাতকে সারপ্রাইজ দিবে। মালিহা ড্রইংরুম সাজানোর জন্য অনেক কিছু এনেছে। সন্ধ্যা হলেই সাজানোর কাজ শুরু করবে তারা। আধুনিক্তা আলমারি থেকে একটা বক্স বের করলো। সেখানে তিনটি ঘড়ি রয়েছে। দু’টো বড়োদের একটা ছোটোদের। আধুনিক্তা মুচকি হাসলো। যখন তাদের বাবু ৩/৪ বছরের হয়ে যাবে তখন তারা তিনজন এক রকম লুক দিয়ে ফ্যামিলি ফোটো তুলবে। অনেক ধরণের প্ল্যান করেছে আধুনিক্তা। সে জানে না ডেলিভারির দিন কি হবে। সে তো শুনেছে অনেকজন ডেলিভারির দিন মৃত্যু বরণ করে। আধুনিক্তা যদি জীবিত না ফিরে? সে ভয় পাচ্ছে না। কিন্তু তার মনে হচ্ছে মরে গেলে অনেক কিছু হারাবে৷ সে তার শ্বাশুড়ি মা, স্বামী ও সন্তান নিয়ে বাঁচতে চায়। সন্ধ্যার পর তারা ড্রইংরুম সাজাতে বসলো। নাওয়াল আর আরমান এসেছে৷ আধুনিক্তা বসে বসে দেখছে। তাকে মা কাজ করতে দিবে না। নাওয়াল বেগুন ফুলিয়ে বাঁধতে গিয়ে হাত থেকে ছেড়ে দিলো। বেগুনের গ্যাস বের হতে হতে গিয়ে পরলো মালিহার মাথায়। মালিহা কেঁচি নিয়ে নাওয়ালকে তেড়ে গেল। তা দেখে আধুনিক্তা আর আরমান হাসছে। হঠাৎ আধুনিক্তা অনুভব করলো তার গর্ভে থাকা বাবুটা লাথি মেরেছে। আধুনিক্তা অনুভব করে মুচকি হেসে পেটে আলতো করে হাত বুলালো। পেটে কিছুটা ব্যাথা অনুভবও হচ্ছে। যদিও এমনটা প্রায় হয়। তাই পাত্তা দিলো না। সাজানো শেষ হয়েছে রাত ১০ টার পর। সবাই বেশ ক্লান্ত। নাওয়াল আর আরমান বেরিয়ে পরলো কেক কিনে আনার জন্য। আধুনিক্তা মাশরাতকে কল করলো। মাশরাতের আসতে আসতে রাত ২ টা বাজবে। সে এমনিতে ১ টার মধ্যে এসে পড়ে। আধুনিক্তাকে মা খাইয়ে দিলো কারণ তার ঔষধ আছে। আর ডাক্তার বলেছে ঔষধ তারাতাড়ি খেতে।

রাত ২ টার পর মাশরাত ফিরলো। তার কাছে একস্ট্রা চাবি ছিলো। দরজা খুলে ভেতরে এসে দেখে চারপাশ অন্ধকার। স্বাভাবিক, রাত গভীর মা আর আধুনিক্তা ঘুমিয়ে পড়েছে। মাশরাতের ক্ষুধাও পেয়েছে খুব। এখন মা আর আধুনিক্তাকে সে জাগাতে চায় না। সমস্যা নেই, এক রাত না খেয়ে ঘুমালে কিছু হবে না। এগিয়ে যেতেই সে অনুভব করলো সে কিছু একটায় লাথি দিয়েছে। জিনিসটা হালকা তাই সে ব্যাথা পায় নি। হঠাৎ চারপাশে লাইট জ্বলে উঠলো তার আরমান পার্টি শ্নো স্প্রে ছিটাতে শুরু করলো। সবাই একসাথে চিৎকার দিয়ে বলল “হ্যাপি বার্থডে টু ইউ”। মাশরাত সবাইকে দেখে হাসলো। সে সারপ্রাইজ পাবে কল্পনাও করেনি৷ কারণ সে কখনো সারপ্রাইজ পায় নি। আরমান দৌড়ে এসে মাশরাতকে জড়িয়ে ধরলো। মাশরাত হাসি মুখে আরমানের গালে চুমু দিয়ে হাত ধরলো। এগিয়ে গেল তারা সামনে। আরমানের হাত ধরে মাশরাত কেক কাটলো। তার লজ্জা করে এই বয়সে কেক কাটতে। যদিও সে তার বাবার মৃত্যুর পর কখনো কেক কাটে নি। প্রথমবার তাই আন-কনফরটেবল লাগছে। মাশরাত সবাইকে কেক খাইয়ে দিয়ে শেষে আধুনিক্তার দিকে হেটে আসলো।
“প্ল্যানটা আপনার ছিলো ম্যাডাম?”
“উঁহু, মালিহা আইডিয়া দিয়েছিল। কেমন লেগেছে সারপ্রাইজ?”
“বলে বুঝাতে পারবো না। অসংখ্য ধন্যবাদ সবাই।”
মাশরাতের কথায় সবাই এসে মাশরাতকে জড়িয়ে ধরলো। রাতে একসাথে খাওয়া দাওয়া করে সবাই ঘুমাতে চলে গেল। মায়ের ঘরে এসি নেই। ড্রইংরুমে আছে, তাই আরমান ড্রইংরুমের সোফাতেই শুয়ে পরলো। মাশরাত বলেছিল তাদের সাথে ঘরে ঘুমাতে। ঘরে ঘুমালে মাশরাতের মাটিতে ঘুমাতে হতো তাই আরমান না বলেছে। আধুনিক্তা শুধু হাসে ভাই এর বুদ্ধি দেখে।

ফজরের আযানের কিছুক্ষণ আগে আধুনিক্তার মনে হলো তার পেট ব্যাথা বাড়ছে। তারাতাড়ি উঠে বসলো। এসি চলছে তবুও ঘেমে একাকার সে। আবার শুয়ে পরলো। অস্থির লাগছে খুব। কিছুক্ষণ পর আবার উঠে বসলো। পেট ব্যাথা আরও বেড়েছে৷ আধুনিক্তা আর সহ্য করতে পারলো না মাশরাতকে ডেকে তুললো। মাশরাত উঠে আধুনিক্তা অবস্থা দেখে দ্রুত গিয়ে মা, মালিহা আর নাওয়ালকে ডাকলো৷ দ্রুত আধুনিক্তাকে হসপিটাল নিয়ে যাওয়া হলো। ডাক্তার চেক-আপ করে বলেছে ডেলিভারি করতে হবে। গর্ভে থাকা বাচ্চা উল্টে গিয়েছে। মাশরাতের বুক মোচড় দিয়ে উঠলো। ভয়ে তার ঘাম ঝরছে শরীর বেয়ে। সব ফর্মালিটি পূরণ হতেই আধুনিক্তাকে ওটি’র ভেতরে নেওয়া হলো। আধুনিক্তার বাবা মা তাবাসসুমের মা বাবা দাদাই-দাদী সবাই এসে পড়েছে। সবার চেহারায় চিন্তার ছাপ৷ আজানের ধ্বনি চারপাশে ভাসতেই দাদাই, মাশরাত আধুনিক্তার আব্বু, বাবা সবাই মসজিদ চলে গিয়েছে৷

ভোর ৬ টার পর, মাশরাত হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল হঠাৎ ওট’র দরজা খুলে একজন নার্স বের হলেন। হাতে তোয়ালে পেঁচানো ছোট্ট একটা বাচ্চা। সবাই দৌড়ে গেল সেখানে। মাশরাত সেখানেই তব্দা খেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার বিশ্বাস হচ্ছে না। যখন শুনলো তার মেয়ে হয়েছে দ্রুত হেটে গেল। নিজের সন্তানের চেহারা দেখে সে অবাক হয়ে সবার দিকে তাকাল। নার্সকে জিজ্ঞেস করতে নার্স বলল আধুনিক্তা সুস্থ আছে শুধু রক্তের প্রয়োজন। ব্লাড ব্যাংকে অলরেডি আধুনিক্তার গ্রুপের রক্ত রয়েছে তাই কারো দরকার হবে না।

আধুনিক্তাকে পার্সোনাল কেবিনে শিফ্ট করা হলো। তার জ্ঞান ফিরেনি। যেহেতু আধুনিক্তা কিছুটা অসুস্থ রক্ত শরীরে কম থাকার কারণে তাই সে যত বিশ্রাম নিতে পারে তত ভালো। সবাই বেশ খুশী, মাশরাত ও তার মেয়ের জন্মদিন একই দিনে। মাশরাত আধুনিক্তার পাশের চেয়ারে বসে আছে। সকাল ৯ টা বেজেছে আধুনিক্তার জ্ঞান ফিরতে। তাদের কন্যা সন্তান জন্ম হয়েছে জানার পর কান্না করে দিলো। এত আনন্দ সে আগে কখনো অনুভব করেনি। মাশরাত আধুনিক্তার চোখের পানি মুছে গিয়ে কপালে চুমু বসালো।
“কাঁদছেন কেন?”
“জানি না”
“হা হা হা, আমিও ইমোশনাল হয়ে গিয়েছিলাম। তোমাকে ধন্যবাদ আধুনিক্তা আমি আমার জীবনের সবচেয়ে বেস্ট বার্থডে গিফ্ট পেয়েছি।”
আধুনিক্তা টানছে। জবাব কি দিবে ভেবে পাচ্ছে না। মাশরাত আধুনিক্তার গাল ধরে টেনে হাসলো৷ আধুনিক্তা তাকাল সামনের দিকে। তাবাসসুমের মা বাবা তাদের বাবুকে নিয়ে খেলছে৷ দুজনের হাসি দেখে আধুনিক্তা চোখ ভরে গেল অশ্রু দিয়ে৷ মাশরাত আধুনিক্তার চাহনি দেখে তাবাসসুমের বাবা মায়ের দিকে তাকাল। সে তো খেয়ালই করেনি এই দৃশ্য। মুচকি হেসে বলল-
“আমি অনেকদিন পর উনাদের মন থেকে হাসতে দেখছি।”
“কি বলবো ভেবে পাচ্ছি না। আমি চাই উনারা সবসময় এইভাবেই হাসি খুশী থাকুক।”
মাশরাত আধুনিক্তার দিকে তাকাল। আধুনিক্তাও তাকাল মাশরাতের দিকে। মাশরাতের চাহনি দেখে সে লজ্জা পেয়ে চোখ সরিয়ে ফেলল। মাশরাত আধুনিক্তার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিলো। আধুনিক্তা আবার তাকাল মাশরাতের দিকে। মাশরাত মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল-
“জানি না কি করে বোঝাবো তোমায়। আনন্দের অশ্রু আজ দিয়েছ উপহার আমায়। সব কঠিন বাঁধা পেরিয়ে সুখ এসেছে আমাদের দুয়ারে। এত সহজে তাকে যেতে দিব না ফিরে৷ কখনো ছাড়বো না তোমাকে মাঝপথে। এই ওয়াদা রইলো আমার নিজেই নিজেকে। এখন আমার মাথায় কিছুই আসছে না। তাই এই বোরিং সায়েরীর ইতি টানতে চাই, সবসময় তোমার পাশে থাকবো ” #তুমি_আছো_হৃদয়ে_তাই ।
আধুনিক্তা হেসে উঠলো। তার ইচ্ছে করছে খুব জোরে হাসতে সেলাইতে ব্যাথা লাগবে তাই পারছে না। মাশরাত সায়ের বলতে পারে না আধুনিক্তা জানে। হাসি থামালো, কারণ মাশরাতের কথাগুলো তার ভালো লেগেছে। আধুনিক্তার মাশরাতের হাত শক্ত করে ধরে চোখের দিকে তাকিয়ে রইলো। যেন সে তার চোখ দিয়ে শত কথা বলে দিচ্ছে৷ কিছু কিছু কথা মুখে প্রকাশ করতে হয় না৷ প্রিয়জনের চোখের দিকে তাকালেই হয়।

❤️❤️️সমাপ্ত️❤️❤️

[গত দু’দিন গল্প দেই নি তার জন্য আমি সরি। গল্পের মূল কাহানী শেষ। তাই গল্পে ইতি টানলাম। হ্যাপি এন্ডিং চেয়েছিলেন সবাই। তাই সিম্পল ভাবে হ্যাপি এন্ডিং দিলাম। আমি এখনো আনারী। গল্প লিখে কিভাবে তা এখনো ভালো মতো জানি না। তবুও আমি চেষ্টা করেছি ভালো মতো লিখার। এন্ডিং হয় তো অনেকজনের পছন্দ হবে না৷ যাই হোক, এত দূর পর্যন্ত পাশে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। নিজের ও নিজের পরিবারের খেয়াল রাখবেন। ভালোবাসা অবিরাম। আল্লাহ হাফেজ❤️]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here