তুমি_আছো_হৃদয়ে_তাই পর্ব 20

0
2175

#তুমি_আছো_হৃদয়ে_তাই
#শোভা_আক্তার(লাভলী)
#পর্ব_20

আধুনিক্তা মাথা নিচু করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। তার বরাবর রাগী দৃষ্টি বানিয়ে বসে আছে বাবা। বাবা কাজ থেকে ফিরে এসে শুনে আধুনিক্তা বাসায় নেই। মেয়ে বাসায় ফিরে বিশ্রাম না নিয়ে বাহিরে চলে গিয়েছে উনার বিষয়টা ভালো লাগে নি৷ দাদাই বললেন-
“যেহেতু ফিরে এসেছে আর কিছু বলিস না।”
“ও বাহিরে যাওয়ার আগে আমাকে জিজ্ঞেস করেছে? আর তোমরা ওকে বাঁধা দিলে না কেন?”
মা চা নিয়ে এসে টি টেবিলের উপর রেখে বললেন-
“মেয়ে কি ছোটো বাচ্চা যে বেঁধে রাখবো। ও ওর বন্ধুদের সাথে দেখা করতে গিয়েছিল।”
“বন্ধুদের সাথে না-কি সেই ছেলের সাথে আমি ভালো মতোই জানি।”
আধুনিক্তা শান্ত গলায় বলল-
“হ্যাঁ মাশরাতের সাথেই দেখা করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু তারা যে বাসায় থাকতো। সেটা এখন প্লে গ্রাউন্ডে পরিনত হয়েছে। আর আমি জানি এটা কে করেছে।”
“শুনো আমার উপর সন্দেহ করে লাভ নেই। আমি শুধু তাদের পাশের বিল্ডিং-এর কন্ট্রাক্ট পেয়েছিলাম মাশরাতের বাড়ির কি হয়েছে আমি জানি না।”
“আমি তোমার কথা বলিও নি আব্বু। এনি ওয়েজ, আমি এখন ঘরে যাচ্ছি। প্রচুর ক্লান্ত এখন আমি। আগামীকাল যাব মল্লিকার বাসায়।”
বলেই আধুনিক্তা হাঁটা ধরলো। কিন্তু বাবার কথায় থমকে দাঁড়াল।
“তুমি কোথাও যাচ্ছো না। পুরো ২ মাস তোমার রেস্ট নিতে হবে।”
আধুনিক্তা ঘুরে এসে বাবার বরাবর দাঁড়িয়ে বলল-
“আব্বু প্লিজ আমার উপর মানসিক অত্যাচার করো না। আমি একদম ঠিক আছি। টাইম মতো ঔষধও নিচ্ছি।”
“আমি আর কিছু শুনতে চাই না। তুমি দুইমাস আগে বাসা থেকে বের হবে না। দুই মাস পর ঔষধের ডোজ শেষ হবে। তখন যা খুশী করো আমাদের সমস্যা নেই।”
আধুনিক্তা আর কিছু বলল না। রাগে তার তা জ্বলছে৷ হনহন করে নিজের ঘরে চলে গেল। দাদাই বাবার দিকে তাকিয়ে বললেন-
“মাশরাতের প্রতি এত ঘৃণা কেন তোমার মনে?”
“কে বলেছে আমি মাশরাতকে ঘৃণা করি? আমার শুধু ছেলেটাকে একদমই পছন্দ না। একটা মানুষকে অপছন্দ হতেই পারে।”
“কিন্তু তোমার মেয়ে তাকে খুব ভালোবাসে।”
“ভালোবাসা দিয়ে কি হবে যদি সংসারের চুলা না জ্বলে? মাশরাতের বাড়ি এখন প্লে গ্রাউন্ড করেছে। দেখো গিয়ে তারা এখন হয়তো ফুটপাতে বসবাস করে।”
বলেই বাবা চায়ের কাপে চুমুক বসালো। দাদাই বিরক্ত চেহারা বানিয়ে বসে আছে। দাদী মন খারাপ করলেন। ছেলেটার শিক্ষায় কমতি আছে। আধুনিক্তার মা এক ভ্রু উঁচু করে উনাী স্বামীর দিকে তাকিয়ে আছেন। মনে মনে বললেন- “তোমার অহংকার মাশরাতই ভাঙবে। সেদিন তুমি নিজে মেয়েকে তার হাতে তুলে দিবে।”

রাতেরবেলা ……
মাশরাত কার্ড দেখছে। সে এমডি হতে চলেছে খুব শীগগিরই। সবাইকে ইনভাইটেশন দিতে হবে। কার্ডগুলোর ডিজাইন তার পছন্দ হচ্ছে না। মালিহা বলল-
“ভাই লাল রং এর কার্ডটা দেখার মতো। এটাই চুজ কর।”
“না, আমার আরো সুন্দর কার্ড লাগবে।”
আরো কিছুক্ষণ দেখাদেখি করে শেষমেশ মালিহার পছন্দের কার্ডই চুজ করলো তারা৷ কার্ড সিলেক্ট করা শেষে মাশরাত ভাবলো এখন মা আর মালিহাকে নাওয়ালের সম্পর্কে বলা দরকার। মাশরাত কিছুক্ষণ শান্ত থেকে প্রস্তুতি নিলো। মালিহা উঠে যেতে নিলেই মাশরাত তাকপ ডেকে পাশে বসালো। মাশরাতকে নার্ভাস দেখে মালিহা হেসে বলল-
“তুই কবে থেকে নার্ভাস হতে শুরু করলি? বল এখন ঢং না করে।”
“আমি সিরিয়াস মালিহা। চুপচাপ বসে থাক।”
“ওকে ওকে সরি।”
“আম্মু তোমার মনে আছে আমরা আমার বস এর ছোটো ভাই এর জন্মদিনে গিয়েছিলাম?”
মা মাথা নাড়াল। মাশরাত মালিহার দিকে তাকিয়ে বলল-
“তুই কি নাওয়ালকে দেখেছিলি?”
“হ্যাঁ নাওয়াল ভাইয়ারই তো জন্মদিন ছিল।”
মাশরাত আবার মায়ের দিকে তাকাল। মা মাশরাতের কাঁধে হাত রেখে বলল-
“কি হয়েছে বল তো। তোকে আমি কখনো এত নার্ভাস দেখি নি।”
“আসলে আম্মু.. নাওয়াল মালিহাকে পছন্দ করে।”
মায়ের মনে হলো উনি ঝটকা খেলেন। মালিহা তব্দা খেয়ে বসে আছে। তার মনে হচ্ছে সে কানে বেশী শুনেছে। কনফার্ম হওয়ার জন্য জিজ্ঞেস করলো-
“ভাই, আবার বল তো কি বললি।”
“নাওয়াল তোকে পছন্দ করে।”
মালিহা দাঁড়িয়ে বলল-
“অসম্ভব তুই মিথ্যে বলছিস।”
“আমার কি লাভ তোর সাথে মিথ্যে কথা বলে?”
মালিহা আবার বসে অন্যদিকে তাকিয়ে হচকচিয়ে বলল-
“এটা কি করে সম্ভব? উনার মতো ছেলে আমাকে…”
“একদম পুরো কথা বললে তোর মাথা ফাটিয়ে দিব।”
“ভাই আমি ভুল কি বলছি? আমাদের পরিস্থিতির ব্যাপারে উনারা তো জানেনই। আর উনি কত স্টাইলিশ একজন মানুষ। গাড়ি দিয়ে চলাফেরা করে। শত শত মেয়ের ক্রাশ আমাকে পছন্দ করবে? আমি বিশ্বাস করি না।”
“তোকে বলেছে শত শত মেয়ের ক্রাশ৷ ফালতু কথা বলা বন্ধ কর।”
“সত্যি বলছি, উনার বার্থডে এর দিন আমি দেখেছিলাম উনার মেয়ে বান্ধবীর অভাব নেই।”
“সেটা থাকা স্বাভাবিক। সবটা না জেনে কাওকে জাজ করবি না।”
মাশরাত মায়ের দিকে তাকাল। মা গভীর চিন্তায় আছেন। মাশরাত মায়ের হাত ধরে বলল-
“বস আমাকে নিজের ছোটো ভাই এর দেখেন। উনি নিজে আমাকে প্রস্তাব দিয়েছে। আমি আপাতত কিছু বলি নি। তোমার আর মালিহার মতামত জেনে আমি বসকে বলবো।”
“এমন এক পরিবার থেকে প্রস্তাব এসেছে আমি চিন্তা করতে পারছি না। আমি যতটুকু দেখেছি সেদিন নাওয়াল আর ভাই ভাবী সবাই খুব ভালো। আমি চাই মালিহা তার মতামত জানাক আমাদের।”
মাশরাত আর মা মালিহার দিকে তাকালো। মালিহা লজ্জায় মা ভাই এর দিকে তাকাতে পারছে না। কেও তাকে পছন্দ করে ভাবতেই তার লজ্জা পাচ্ছে। মাশরাত জিজ্ঞেস করলো-
“তোর মতামত বল৷ তুই যদি হ্যাঁ বলিস আমি বসকে বলবো। বস তার পরিবার নিয়ে আসবে তোকে দেখতে৷ আর তুই চিন্তা করিস না তোর ভাই সব জেনেশুনে তোকে বিয়ে দিবে। নাওয়ালের সম্পর্কে একটা ব্যাড রেকর্ড পেলেই না করে দিব। আমার একটা মাত্র বোন তুই।”
মালিহা কিছুক্ষণ মাথা নিচু করে ভাবলো। কিছু একটা ভেবে মাথা তুলে বলল-
“আমি রাজি না।”
“কিন্তু কেন? অন্য কাওকে পছন্দ করিস?”
“না ভাই, আমি নাওয়াল ভাইয়া বাদে যে কারো সাথে বিয়ে করতে রাজি।”
“কেন তুই কি সেদিন নাওয়ালের কোনো বাজে ব্যবহার দেখেছিস।”
“তেমন কিছু না। আমার উনাকে পছন্দ না। যে সম্পর্কে মন টানে না সে সম্পর্কে আমি জড়াতে চাই না।”
“হুটহাট কোনো ডিসিশন নেওয়া ভালো না। তুই ২ দিন সময় নে তারপর আমাদের মতামত জানা।”
“লাগবে না সময় আমার মতামত পরিবর্তন হবে না।”
“ভেবে চিন্তে বলছিস?”
“একদম”
মাশরাত আর কথা বাড়াল না। সে জানতো তার বোন না করে দিবে। মা-ও জোর করলো না। মেয়ে বড়ো হয়েছে তাকে এখন জোর করে বিয়ে দেওয়া ঠিক হবে না। মালিহা কিছুক্ষণ মাথা নিচু করে বসে থেকে চলে গেল তার ঘরে। মাশরাত লম্বা নিশ্বাস ফেলল। আগামীকাল বস-কে বলতে হবে।

পরেরদিন…..
মাশরাত বস-কে সব খুলে বলল। বস চুপচাপ শুনে লম্বা নিশ্বাস ফেলল। মাশরাত ভীতু কন্ঠে বলল-
“বস আমার বোনকে ভুল ভাববেন না। মানে সে অহংকার করেছে তেমন কিন্তু না।”
“ছি মাশরাত আমি মালিহার সম্পর্কে এমনটা ভাবতে পারি না। ও তোমার বোন। নিশ্চয়ই ভেবে চিন্তে ডিসিশন নিয়েছে। আচ্ছা শুনো মালিহার বিয়ে অন্য কারো সাথে ঠিক করলে আমাদের নিশ্চয়ই দাওয়াত দিও। নাওয়াল আসবে না জানি কিন্তু আমরা নিশ্চয়ই আসবো।”
বস হাসি মুখে কথাটা বললেও উনার মন খারাপ হয়েছে মাশরাত বুঝতে পারলো। বস টপিক চেঞ্জ করার জন্য বলল-
“আচ্ছা শুনো আমি গতকাল ইনভেস্টরের সাথে কথা বলেছি বাহিরে দেখা করে। উনি খুব শীগগিরই প্রজেক্ট আমাদের দিতে চান। আমি বলেছি আমার অফিস এর এমডির প্রমোশনের পর আমরা প্রজেক্ট নিব। উনি রাজি হয়েছেন। আর মাশরাত একটা কথা বলতে চাই তোমায়।”
“জি বস বলুন”
“যদি তোমার পার্টিতে উনাকে ইনভাইট করি কেমন হবে? তোমার সাথে উনার দেখাও হবে না। আগে থেকে পরিচয় হয়ে গেলে ভালো হবে। তারপর নাহয় আমরা মিটিং করবো প্রজেক্ট নিয়ে।”
“আইডিয়া বেশ ভালো স্যার। আমি উনার জন্য স্পেশাল কার্ড বানাবো।”
“সেটার টেনশন তুমি নিও না। আমি নিজে উনাকে ইনভাইট করবো। তুমি আমার ছোটো ভাই এর মতো তাই তুমি সব আমার উপর ছেড়ে দাও।”
“আপনাকে না দেখলে আমি কখনো জানতাম না দুনিয়ায় আজও ভালো মানুষের অভাব নেই।”
“মানুষ ভালো খারাপ হয় না। সব নিজের চরিত্রের উপর নির্ভর করে।”
“ঠিক বললেন না বস। আচ্ছা এখন গিয়ে দেখি সবাই কি করছে। বাকি প্রজেক্ট গুলো কমপ্লিট হলে আমি দিয়ে যাচ্ছি আপনাকে।”
“নিশ্চয়ই”
মাশরাত হাসিমুখে বের হলো বস এর কেবিন থেকে। বের হতেই দেখে নাওয়াল এগিয়ে আসছে। মাশরাত ঠোঁটের কোণায় হাসি ফুটালো। নাওয়াল মাশরাতকে দেখে লাফাতে এগিয়ে আসলো।
“আসসালামুআলাইকুম ভাইয়া”
“ওয়ালাইকুম আসসালাম নাওয়াল। কেমন আছো?”
“আলহামদুলিল্লাহ ভাইয়া, বড়ো ভাই আছে ভেতরে?”
“হ্যাঁ বস আছেন ভেতরে।”
“ভাইয়া, আন্টি কেমন আছেন?”
“আম্মু ভালো আছে।”
“আর..”
নাওয়ালের চেহারায় লজ্জা লজ্জা ভাব খুঁজে পেল মাশরাত। মাশরাত হেসে বলল-
“আমার মা বোন দু’জনই ভালো আছে।”
নাওয়াল হেসে মাথা চুল্কালো। তারপর মাশরাতকে বলে কেবিনে ঢুকে পরলো। মাশরাত গিয়ে তার টেবিলের চেয়ার টেনে বসলো। তার জন্য পার্সোনাল কেবিন তৈরী করা হচ্ছে। মাশরাতের বিশ্বাস হচ্ছে না তার জীবন এইভাবে পাল্টে যাবে। প্রথম যখন অফিসে কাজ নিয়েছিল ১৫ হাজার টাকা বেতন ছিল। ধীরে ধীরে বাড়ডে থাকে। এখন তার বেতন ৪০ হাজার। আবার প্রমোশন পেয়ে এমডি হচ্ছে। মাশরাত হাসলো, ভাগ্য কাকে কোথায় নিয়ে দাঁড় করায় কেও জানে না। কিছুক্ষণ পর মাশরাত দেখল নাওয়াল আসছে। তাকে দেখে হঠাৎ মনমরা লাগছে। মাশরাত বুঝতে পারলো নাওয়ালের মনের অবস্থা। হয় তো সে সবটা জেনেছে তার ভাই এর কাছ থেকে। নাওয়াল চুপচাপ অফিস থেকে বেরিয়ে গেল। মাশরাত লম্বা নিশ্বাস ফেলল। সে চেয়েও কিছু করতে পারবে না৷

মালিহা দাঁড়িয়ে স্কেচ করা শেখাচ্ছে বাচ্চাদের। আর্ট করা তার শখ। ধীরে ধীরে সেটা নেশায় পরিবর্তন হয়েছে৷ আগে যে আর্ট স্কুলে সে আর্ট শিখতে আসতো। আজ সেই স্কুলের টিচার সে৷ ছোটো বড়ো সবাই আসে আর্ট শিখতে৷ হঠাৎ মালিহার মোবাইল বেজে উঠল। মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে আননোন নাম্বার। রিসিভ করে কানে ধরলো। অনেক বার হ্যালো হ্যালো বলল কিন্তু কেও জবাব দিচ্ছে না। মালিহা কল কেটে রেখে দিলো। বিরক্ত লাগে কেও এমন করলে। সব ক্লাস শেষ হতেই মালিহা তার ব্যাগ গুছিয়ে ক্লাস থেকে বের হলো। কিছুদিন যাবত তার হাত ব্যাথা। হয় তো ইদানীং আর্ট বেশী করার কারণে এমন হয়েছে। বাহিরে বের হয়ে সে যেন আকাশ থেকে পরলো৷ নাওয়াল স্কুলের বাহিরে বাইকের উপর বসে আছে। মালিহা ঢোক গিলল। গতকাল যা শুনেছে এরপর নাওয়ালের সামনে যেতে তার লজ্জা লাগবে। মালিহা এক সময় ভাবলো হয় তো নাওয়ালের চেনা পরিচিত আছে এই স্কুলে। চুপচাপ পাশ কাটিয়ে যেতে নিলো। তখনই নাওয়াল তাকে ডাকলো। মালিহা দাঁড়িয়ে পরলো। কপাল বেয়ে ঘাম ঝরছে তার। নাওয়াল এসে মালিহার সামনে দাঁড়াল।
“আমার পুরো শুনে তারপর জবাব দিও। মাশরাত ভাইয়া তোমাকে যা বলেছে সব সত্যি। আমি তোমাকে পছন্দ করি। চাইলে প্রেমের প্রস্তাব দিতে পারতাম। কিন্তু আমার প্রেম করার ইচ্ছে নেই। তাই আমি নিজের ভাই ভাবীকে তোমার সম্পর্কে বলেছি৷ আমার সম্পর্কে খারাপ কিছু শুনেছো কারো মুখে?”
মালিহা না বোধক মাথা নাড়াল। নাওয়াল আবার বলল-
“এমন না যে আমি কখনো প্রেম করি নি৷ আমি একটা মেয়েকে কলেজ লাইফে অনেক ভালোবাসতাম। কিন্তু সে আমার ভাগ্যে ছিল না তাই আমাদের পথ এখন আলাদা। এই নিয়ে কখনো মন খারাপ করি নি। কিন্তু এইবার সত্যি আমার মন ভীষণ খারাপ। আমি কি জানতে পারি তোমার না করার কারণ কি।”
মালিহা নাওয়ালের দিকে শান্ত ভঙ্গিতে তাকাল। ডান বাম দেখে বলল-
“আমাদের দিকে সবাই তাকিয়ে আছে। এখানে আমি চাকরি করি। এখানে এসব কথা না বললে হয় না?”
“এখানে কোথাও লিখা আছে এখানে দাঁড়িয়ে কথা বলা নিষেধ।”
“দেখুন আপনি হাই সোসাইটির মানুষ৷ উপর দিয়ে আপনি ছেলে মানুষ। আমি তে মেয়ে, চরিত্রে একবার দাগ লাগলে মুছতে পারবো না।”
“এই তোমার মাথায় কি সমস্যা আছে? আমি কি তোমাকে জড়িয়ে ধরেছি না নোংরামি করছি যে সবাই আমাদের খারাপ ভাববে?”
“কার মনে কি আছে আমরা তা তো জানি না।”
নাওয়াল বিরক্ত হয়ে বলল-
“তোমার সাথে এসব কথা বলার জন্য আসি নি। আমার প্রশ্নের সঠিক জবাব দাও। আমি চলে যাব আর আসবো না।”
“আসলে, আমার বড়ো ভাই আপনাদের অফিসে কাজ করে। আমার আপনার সাথে বিয়ে হলে আমি আপনার বাড়ির বউ হবো। আমাদেরই অফিসে আমার ভাই কাজ করবে। এমনটা আমি ভাবতেও পারবো না। আমার জন্য এটা অস্বস্তিকর হবে।”
“তুমি কেন এমনটা ভাবছো? ভাইয়া নিজে বলেছেন মাশরাত ভাইয়াকে বিজনেসে পার্টনারশিপ দিবে।”
“পার্টনারশিপ বললেই হয়ে যায় না। যখন হবে তখন ভাবা যাবে। কিন্তু এখন আমার পক্ষে এই প্রস্তাবে হ্যাঁ বলা সম্ভব না। ভাববেন না আমি ভাব ধরছি আপনাকে রিজেক্ট করে। আমি আপনাকে রিজেক্ট করি নি। আমার পরিস্থিতিটাই এমন এখন। আমার জন্য ভাইয়ার সম্মান আগে। মাফ করবেন, আসি।”
মালিহা চুপচাপ পাশ কাটিয়ে চলে গেল। নাওয়াল রাগে নিজের বাইকে সজোরে লাথি মারলো। পা ইঞ্জিনে লাগায় ভীষণ ব্যাথা পেয়েছে। পা লাফাতপ শুরু করলো। মালিহা পেছনে ফিরে নাওয়ালকে লাফাতে দেখে হেসে দিলো। নাওয়াল মালিহার হাসি দেখে পা ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়াল। মেয়েটার হাসি দেখেই তার রাগ হাওয়ায় উড়ে গিয়েছে। নাওয়াল মুচকি হাসলো। মালিহা ঘুরে আবার হাঁটা ধরলো।

রাতেরবেলা….
আধুনিক্তা চুপচাপ বসে আছে। তার সতেরবেলাামনে আরমান বসে খাতায় ড্রইং করছে। আধুনিক্তা তাকিয়ে আছে মাটির দিকে। মাথা কাজ করছে না তার। অপারেশনের পর সে একটা জিনিস খেয়াল করেছে। সে প্রায়ই সব ভুলে যায়। সহজে কিছু মনে করতে পারে না। এমনটা কেন হয় আধুনিক্তা বুঝতে পারে না। আরমানের ডাকে আধুনিক্তার হুঁশ ফিরলো।
“ডেকেছো ছোটু?”
“দেখো মাশরাত ভাইয়াকে আর্ট করেছি আমি।”
আধুনিক্তা আরমানের ড্রইং দেখে হাসলো। আরমান এটা দেখলে নির্ঘাত জ্ঞান হারাবে।
“কেমন হয়েছে মাম্মাম?”
“খুব সুন্দর এখন আমাকে আর্ট করো তো।”
“ওকে”
“তোমার আর্ট করতে ভালো লাগে?”
“অনেক বেশী ভালো লাগে।”
“আর্ট স্কুলে যাবে তুমি?”
“আর্ট স্কুল? হ্যাঁ যাব।”
“আচ্ছা আমি আব্বুর সাথে কথা বলে তোমাকে ভর্তি করিয়ে দিব।”
“ওকে মাম্মাম আই লাভ ইউ”
আধুনিক্তা মুচকি হাসলো। সে এমন কিছু তো আছে যেটা মনে করতে পারছে না। মনে করার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না কিছুতেই। তখনই মা আসলেন।
“কি করছে আমার বাচ্চারা?”
“আমি আর্ট করছি মাম্মাম বসে আছে।”
“ঘুমাবে কখন?”
“একটু পর”
“না এখন যাও। পাপা এসে পরেছে। বকা দিবে দেরি করে ঘুমালে।”
আরমান ভয় পেয়ে গেল। বাবার বকাকে বাঘের মতো ভয় পায় সে। তারাতাড়ি সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে তার ঘরে চলে গেল। আধুনিক্তাকে মনমরা লাগছে। মা তার পাশে বসে চোখের ইশারায় জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে। আধুনিক্তা মুখ লটকিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরলো। মা মুচকি হেসে বলল-
“প্রেমে ব্যর্থ হওয়া প্রেমিকাদের মতো অবস্থা কেন তোমার?”
“কি করবো আর? সফলতাও তো পাই নি প্রেমে।”
“পেয়ে যাবে, হার মেনো না কখনো।”
“আমি মাশরাতকে খুঁজে পাচ্ছি না কেন আম্মু।”
“হয় তো আরো কিছুদিন পর পাবে তার দেখা।”
“সে কি আমার অপেক্ষায় আছে? যদি দেখি সে বিবাহিত, তখন?”
“ভেবে নিও সে তোমার ভাগ্যে নেই।”
আধুনিক্তা আরো শক্ত করে মাকে জড়িয়ে ধরলো। মা মুচকি হেসে আধুনিক্তার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল-
“মন খারাপ করে না আম্মু৷ তোমার ভাগ্যে মাশরাত লিখা থাকলে তোমাদের এক হতে কেও থামাতে পারবে না। আর তুমি তোমার বাবার কথা এক কান দিয়ে শুনে আর এক কান দিয়ে বের করে দাও। উনি তো এমনই।”
আধুনিক্তা কিছু বলল না। বাবার কথা শুনে তার মন খারাপ হয় না কখনো। বাবা রাগের মাথায় যা তা বলে আবার ভুলে যায়। আধুনিক্তা ভাবছে মাশরাতের কথা। কখন দেখা হবে মাশরাতের সাথে কে জানে।

কিছুদিন পর…..
মাশরাত তার বাসাতেই পার্ট দিয়েছে। তার বাসা বেশী বড়ো না হলেও ছোটো খাটো পার্টর জন্য যথেষ্ট ভালো। মাশরাতের বস ও বসের পরিবার আর তার কলিগদের নিয়ে পার্টির ব্যবস্থা করেছে। বস সকালে কল দিয়ে বলেছে উনি একেবারে ইনভেস্টরকে নিয়ে আসবে। ইনভেস্টর আসবেন তার পরিবারকে নিয়ে। মাশরাতের মা খাবারে কোনো কমতি করেনি। ঘরের টুকটাক ডেকোরেশন মালিহা নিজের হাতে করেছে। বাসার ড্রইংরুম থেকে সোফা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে যার কারণে ড্রইংরুম বেশ বড়ো লাগছে। তার অফিসের কিছু কিছু কলিগরা এসেছে মাত্র। মাশরাত তাদের অপেক্ষা করতে বলে তার ঘরে চলে আসলো তৈরী হওয়ার জন্য। খাটে বসে কবিরকে কল করলো। তার আর মল্লিকার আসতে আরো আধা ঘন্টা লাগবে। মল্লিকা মাত্র তৈরী হচ্ছে কবির মল্লিকার বাড়িতেই আছে এখন। মাশরাত বুঝলো আধা ঘন্টা মানে দুই ঘন্টা। মাশরাত রিয়াজকে কল করলো। মেহরিনের না-কি জামার অভাব। তাদের বিয়ের পরের দিনই রিয়াজের মা তাকে নিয়ে শপিং করে এক গাদা কাপড় কিনে দিয়েছে। সে ডিসাইড করতে পারছে না কোনটা পড়বে। মাশরাত বিরক্ত হয়ে কল কাটলো। তারাতাড়ি তৈরী হয়ে নিলো। তখনই কল আসলো। মোবাইল নিয়ে দেখে বস কল করেছে। তারাতাড়ি রিসিভ করে কানে ধরলো-
“ইয়েস বস”
“১০ মিনিটের মধ্যে আমরা এসে পরবো। ইনভেস্টর আসছে তাই আমি চাই তুমি তাদের ওয়েলকাম করো।”
“জি স্যার আমি দরজার সামনেই আছি আপনি আসুন।”
মাশরাত কল কেটে তারাহুরো করে তৈরী হলো। টাই পড়তে তার ভালো লাগে না। তাই টাই বাদে শার্টের উপরের একটা বাটন খুলে ব্লেজার পড়ে নিলো। মাশরাত নিজেকে ভালো মতো দেখে নিলো আয়নায়। তাবাসসুম আজ তাকে দেখলে কি বলতো? প্রশংসা করতো না কিন্তু সবার সামনে তার হাত ধরে রাখতো। এমনভাবে ট্রিট করতো যেন মাশরাতকে কেও চুরি করে নিয়ে চলে যাবে। মাশরাত হাসলো, অতীত জুড়ে থাকা মানুষটার কথা ভেবে মুচকি হাসাকেও বলে ভালোবাসা। মাশরাত তৈরী হয়ে তারাতাড়ি ড্রইংরুমে এসে পরলো। মা আর মালিহাকে বলল বস আসছে কিছুক্ষণের মধ্যে। মাশরাতের হঠাৎ নার্ভাস লাগছে। বুকের বা পাশে বিস্ফোরণ হওয়ার মতো অবস্থা। কিছুক্ষণ পর বস আসলেন। মাশরাত সালাম দিয়ে হাত মেলালো। বস বলল ইনভেস্টর আসছে। মাশরাত হাসি মুখে দাঁড়িয়ে রইল। হঠাৎ ধীরে ধীরে তার হাসি মিলিয়ে গেল। আধুনিক্তার বাবা এগিয়ে আসছে। মাশরাতের মনে হচ্ছে তার মাথা শূন্য হয়ে গিয়েছে। প্রচুর মাথা ঘুরছে তার। আধুনিক্তার বাবা দাঁড়িয়ে পরলো মাশরাতকে দেখে। উনার মনে হচ্ছে উনি স্বপ্ন দেখছে। আধুনিক্তা আরমানকে নিয়ে গাড়ি থেকে বের হলো। আরমান দৌড়ে গিয়ে বাবার পাশে দাঁড়িয়ে বলল-
“আব্বু দাঁড়িয়ে আছো কেন?”
বাবা জবাব দিলো না। আরমান সামনে দাঁড়িয়ে অবাক হলো। তারপর হাসি মুখে উঁচু গলায় “মাশরাত ভাইয়া” বলেই দৌড়ে গেল মাশরাতের দিকে। মা আর আধুনিক্তা এগিয়ে আসছিল আধুনিক্তা মাশরাতের নাম শুনে থমকে গেল। দ্রুত হেটে এসে বাবার পাশে দাঁড়াল। ঠিক বরাবর মাশরাত দাঁড়িয়ে আছে। আধুনিক্তার চোখের কোনায় ধীরে ধীরে পানি জমে গেল। তার বিশ্বাস হচ্ছে না মাশরাত তার সামনে। মাশরাতও থমকে দাঁড়িয়ে আছে। আরমান মাশরাতের হাত ধরে বার বার ডাকছে কিন্তু মাশরাতের কোনো হুশ নেই। সে পলকহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আধুনিক্তার দিকে।

চলবে…….

[গল্প দেরিতে দেওয়ার জন্য আমি দুঃখিত। আর আপনাদের অপেক্ষা করানোর জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী। অপেক্ষা করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনাদের রোমিও জুলিয়েটকে মিলিয়ে দিলাম এইবার ঠিক আছে?? ভুল ক্রুটি ধরিয়ে দিবেন প্লিজ❤️]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here