তুমি_আছো_হৃদয়ে_তাই পর্ব 19

0
2377

#তুমি_আছো_হৃদয়ে_তাই
#শোভা_আক্তার(লাভলী)
#পর্ব_২৩

মাশরাত কপালে হাত দিয়ে বসে আছে তার ডেস্কে। আজ তার কাজ নেই। অফিস এ নতুন কোনো প্রজেক্টও শুরু হয় নি৷ বেশ বোরিং লাগছে তার৷ নতুন অফিস বলে পরিশ্রম কম করতে হয়। কারণ ইনভেস্টার পাওয়া খুব কষ্টকর। তখনই বস এর পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট এসে মাশরাতকে বলল বস ডাকছে। মাশরাত একটা লম্বা নিশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়াল৷ বস এর কেবিনে গিয়ে দেখে বস হাসি মুখে বসে আছে।
“ইয়েস বস”
“আই হ্যাভ এ গুড নিউজ”
“তাই?”
“হ্যাঁ, কিছুদিন আগে একটা কোম্পানির থেকে আমাকে মেইল এসেছিল যে তারা আমাদের অফিস-এ ইনভেস্ট করতে চায়। আমি সেই অফিস-এর ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করি। বেশ সাকসেসফুল কোম্পানি৷ আজ সেই অফিস-এর মালিক দেশে ফিরে এসেছে। আমরা খুব শীগগিরই নতুন প্রজেক্ট পেতে চলেছি।”
“ইটস এ গ্রেট নিউজ বস। কবে আসবে তারা মিটিং এর জন্য?”
“তারা তো দ্রুত প্রজেক্ট শুরু করতে চাচ্ছে। কিন্তু আমি ভাবছি ২ সপ্তাহর পর আসতে বলি৷ এর আগে তোমার পজিশন তো ঠিক করতে হবে।”
“বস সেটার টেনশন করতে হবে না। আপনি তাদের আসতে বলুন।”
“আমি আগে বাহিরে কোথাও তাদের সাথে দেখা করবো৷ তারপর বলবো অফিস-এ এসে মিটিং করতে৷ কারণ আমার অফিস-এ এখন এমডি নেই। তোমার প্রমোশনের পর প্রজেক্ট শুরু করবো।”
“ওকে বস”
“হুমম, এনি ওয়ে মাশরাত আন্টির সাথে কথা বলো নি?”
“বস গতকাল একটা ঝামেলায় ফেসেছিলাম। আমি আজ কথা বলে নিব।”
“গতকাল নাওয়াল আমাকে বার বার জিজ্ঞেস করছিল আমাকে আমি তোমাকে বলেছি কি-না। তুমি আমাদের উপর ভরসা রাখতে পারো৷ মালিহাকে আমরা কখনো কষ্ট দিব না।”
“বস আমি মালিহার মতামত জেনে তারপর ডিসিশন নিব।”
“নিশ্চয়ই, আচ্ছা আজ কাজ নেই তেমন। ভাবছি বাসায় চলে যাই। তোমার ভাবির ইচ্ছে আজ ঘুরতে যাবে। মোহতারমার ইচ্ছে পূরণ না করলে আমাকে জীবিত কবর দিয়ে দিবে।”
“আচ্ছা বস আপনি যান বাকিটা আমি সামলে নিচ্ছি।”
“সামলাতে হবে না। আমি সবাইকে বলে যাচ্ছি ৫ টার মধ্যে বাসায় চলে যেতে। আজ কাজ নেই বসে থেকে লাভ নেই।”
মাশরাত জবাবে মাথা নাড়াল। কেবিন থেকে বের হয়ে ডেস্কে গিয়ে বসলো। মোবাইল হাতে নিয়ে আধুনিক্তার প্রোফাইলে ঢুকলো৷ ১ বছর ধরে কোনো পোস্ট বা স্ট্যাটাস নেই। মাশরাত তো সেটাও জানে না মেয়েটা বেঁচে আছে কি-না। বস এসে সবাইকে বলল বাসায় চলে যেতে। মাশরাত উঠে তার অফিস ব্যাগ গুছিয়ে কাঁধে ঝুলিয়ে নিলো। বাসা থেকে অফিস বেশ দূর। রিকশা দিয়ে যাওয়া আসা করলে প্রতিদিন ৩০০ টাকা খরচ হয়ে যায়। মাশরাত টাকা জমাচ্ছে বাইক কিনবে৷ হয় তো ২ মাসের মধ্যে কিনে ফেলতে পারবে৷ মাশরাত পকেটে হাত দিয়ে হাঁটছে। রোদ ছিল খুব এখন আকাশ মেঘলা। ঠান্ডা বাতাস চারপাশে। ভালোই লাগছে তার হাঁটতে। মাশরাত দাঁড়িয়ে পরলো। সামনেই একজন ভদ্রলোক বসে রুমাল বিক্রি করছে। মাশরাত কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে মুচকি হাসলো। পকেট থেকে একটা গোলাপি রং এর রুমাল বের করে তাকিয়ে রইল। হঠাৎ করেই তার অতীতের পৃষ্ঠা উল্টে গেল।

অতীতের কিছু অংশ….
রিকশা না পেয়ে মাশরাত দৌড়াচ্ছে। গতকাল হরতাল ছিল কিন্তু আজ রাস্তা ঘাট খালি। রিকশা পর্যন্ত পাচ্ছে না। প্রায় ৩০ মিনিট পর সে পৌঁছালো তার প্রিয়তমার কাছে। মাশরাত হাঁটুতে দু’হাত রেখে ঘনঘন নিশ্বাস ফেলছে। হঠাৎ নুপুর পড়া দু’টো পা এগিয়ে আসলো তার দিকে। মাশরাত মাথা তুলে দেখে তাবাসসুম হাত আড়াআড়ি ভাবে ভাজ করে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। মাশরাত সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে জোরপূর্বক হাসি দিয়ে বলল-
“হ্যা..হ্যাপি বার্থডে”
“রাখো তোমার হ্যাপি বার্থডে কোথায় ছিলে এতক্ষণ জনতে পারি?”
“রিকশা পাচ্ছিলাম না৷ দৌড়াতে দৌড়াতে আসতে হয়েছে। দেখো আমার অবস্থা। ঘেমে কি হয়েছে?”
“আহারে, এখন কি মুভির নায়িকাদের মতো আমার ওড়না দিয়ে তোমার ঘাম মুছে দিব।”
“হ্যাঁ দিতেই পারো, কিন্তু আমি জানি তুমি দিবে না। কারণ তুমি বেশ আনরোমান্টিক।”
“ইশশ কি ঢং, দাঁড়াও তুমি আমি আসছি।”
“কোথায়..এই কোথায় যাচ্ছো?”
তাবাসসুম হেটে গিয়ে পার্ক থেকে বের হয়ে একজন রুমাল বিক্রেতা থেকে রুমাল কিনে নিলো। মাশরাত হাসলো তার কান্ড দেখে। মেয়েটা মুখে না বললেও মাশরাতের বেশ যত্ন নেয়। তাবাসসুম ফিরে এসে মাশরাতের দিকে রুমাল এগিয়ে দিয়ে বলল চেহারা মুছে নিতে। মাশরাত তাবাসসুমের কাছাকাছি এসে ঝুঁকলো। তাবাসসুম চোখ ছোটো ছোটো করে বলল-
“আমি পারবো না৷ তুমি ভালো মতো জানো আমি জীবানু থেকে দশ হাত দূর থাকি।”
“মিস হার্ট সার্জন, প্লিজ।”
“রোমান্টিক ব্ল্যাকমেইল করছো।”
“এমনটাই ভাবতে পারো।”
তাবাসসুম লজ্জা মাখা হাসি দিয়ে যত্ন করে মাশরাতের চেহারা মুছে দিলো। মাশরাত হঠাৎ তাবাসসুমের হাত ধরে ফেলল। তাবাসসুম অবাক, জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মাশরাতের দিকে। মাশরাত তাবাসসুমের হাত নিজের হাতের মুঠোয় বন্দী করে আলতো করে চুমু দিয়ে বলল-
“তোমাকে ধন্যবাদ আমার জীবনে আসার জন্য। তোমাকে ধন্যবাদ আমাকে এত ভালোবাসার জন্য। তোমাকে ধন্যবাদ আমার যত্ন নেওয়ার জন্য। তোমাকে ধন্যবাদ আমাকে সবসময় আগলে রাখার জন্য। অবশেষে, উপর ওয়ালাকে হাজার হাজার ধন্যবাদ তোমাকে আমার করে দেওয়ার জন্য। ওয়াদা করছি কখনো তোমাকে কষ্ট দিব৷ সারাজীবন হৃদয়ের ভেতর বন্দী করে রাখব। ভালোবাসি প্রিয়, জন্মদিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা।”
তাবাসসুম ইমোশনাল হয়ে গেল। চোখের কোণায় পানি জমে গেল ধীরে ধীরে। ঠোঁট উল্টে রেখেছে। মাশরাত ভ্রু কুঁচকালো। সে কি ভুল কিছু বলেছে? মাশরাত আবার কিছু বলতে যাবে তার আগেই তাবাসসুম মাশরাতকে জাপ্টে ধরলো। মাশরাতের বুকে শব্দহীন কাঁদছে সে। মাশরাত কিছুক্ষণ থতমত খেয়ে দাঁড়িয়ে রইল। পরে মুচকি হেসে তাবাসসুমকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরলো। মেয়েটা তার জীবন রঙিন করে দিয়েছে। তাবাসসুম ফুপাতে ফুপাতে বলল-
“তোমাকেও অনেক অনেক ধন্যবাদ আমাকে এত ভালোবাসার জন্য।”
“ভালোবাসছি কোথায়? তোমার বাবার সম্পত্তির লোভে তোমাকে জালে ফাসিয়েছি। সবকিছু আমার নামে করেই তোমাকে ছেড়ে দিব।”
তাবাসসুম মাশরাতকে ছেড়ে ভ্রু কুঁচকে বলল-
“তুমি কি আব্বুর রাগ আমার উপর তুলছো?”
“না তো, আমার হিটলার শ্বশুর মশাই জানলেন কিভাবে আমার সত্যিটা সেটা ভাবছি।”
“মাশরাত এইবার চুপ থাকো প্লিজ। আমার আর ভালো লাগে না এসব শুনতে। বাসায় এসব শুনতে শুনতে কান পেকে গেছে। এখন আবার তুমি শুরু করলে।”
“আমি সত্যি কথা বললাম। আচ্ছা তোমরা তো নতুন বাসায় শিফট হয়েছো। আগের বাসাটা আমার নামে লিখে দিলে ভালো হয় না?”
তাবাসসুম রেগে আগুন হয়ে গেল। রুমাল মাশরাতের গলায় পেঁচিয়ে চেপে ধরলো। মেয়েটার রাগ করে না সহজে কিন্তু যখন রাগে দিন দুনিয়া ভুলে যা তা করে বসে। মাশরাতের গলায় বেশ লাগছে। মাশরাত তারাতাড়ি তাবাসসুমকে কাছে টেনে নিয়ে কপাল গভীরভাবে চুমু বসালো। তাবাসসুম থমকে গেল। মাশরাতের হাসি পাচ্ছে। কিন্তু হাসবে না, তাবাসসুমের লজ্জা মাখা চেহারা দেখতে তার ভালো লাগছে। তাবাসসুম তারাতাড়ি নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াল। আশে পাশে তাকাল। ভাগ্যিস কেও নেই এখন পার্কে। তাবাসসুম লম্বা নিশ্বাস ফেলে মাশরাতের দিকে তাকাল। মাশরাত দুষ্টুমি হাসি দিয়ে বলল-
“আমাকে মারার প্ল্যান করছিলে?”
“তুমি দূর থাকো আমার থেকে। বেয়াদব, বদমাইশ, লুচ্চার হাড্ডি।”
“আমি বেয়াদব? আমি বদমাইশ? আমি লুচ্চার হাড্ডি? তো আমাকে এত ভালোবাসো কেন?”
“কোথায় ভালোবাসি তোমায়? টাইমপাস করছি আমি।”
মাশরাত তাবাসসুমের হাত ধরে টেনে বরাবর দাঁড় করালো।
“তাহলে সেদিন তোমার মানে বাবার সামনেই আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলে কেন?”
তাবাসসুম মুখ বাঁকা করে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। মাশরাত হেসে তাবাসসুমের গালে হাত রেখে তাবাসসুমের চোখে তাকাল। তাবাসসুম ঢোক গিলল। ছেলেটার চোখের দিকে তাকালে সে হারিয়ে যায়। তাই তো দূরত্ব বজায় রাখে সবসময়। মাশরাত ধীরে ধীরে তাবাসসুমের ঠোঁটের দিকে এগিয়ে যেতে নিলো। তাবাসসুম ভ্রু কুঁচকে রুমাল মাশরাতের চেহারায় রেখে বলল-
“চড় মেরে তোর দাঁত ফেলে দিব চুমু দেওয়ার চেষ্টা করলে। বলেছি না বিয়ের আগে নো কিসিং?”
মাশরাত চেহারা থেকে রুমাল সরিয়ে বলল-
“তুই আমাকে চড় মারবি? আজ তুই শেষ।”
“কি বললি? তুই মারবি আমাকে? একদম নারী নির্যাতন কেস করে দিব।”
“তোর হুমকিকে আমি ভয় পাই না।”
মাশরাত রুমালের দু কোণা দু হাতে ধরে ঘুরাতে লাগলো। তাবাসসুম বুঝেছে মাশরাত কি করতে চাচ্ছে। তাবাসসুম জোরপূর্বক হাসি দিয়ে বলল-
“তুমি মজা করছো তাই না? আমি জানি তুমি মজা করছো। তুমি আমাকে মারবে না। আফটার অল মাই এম পার্ট অফ ইওর লাইফ।”
মাশরাত হেসে তাবাসসুমের পায়ের দিকে রুমাল মারলো। তাবাসসুম লাফিয়ে উঠলো-
“মাশরাত আমি তোমাকে ভালোবাসি। আজ আমার জন্মদিন। তুমি আমার সাথে এমনটা করতে পারো না।”
“আজ রুমালের আঘাত তোর গায়ে পরবেই পরবে। এটা হচ্ছে স্পেশাল বার্থডে গিফট।”
তাবাসসুম দৌড়ে পালালো। মাশরাত হাসতে হাসতে শেষ। সেও দৌড়ে গেল তাবাসসুমের পেছনে। পুরো পার্ক জুড়ে দুজন দৌড়াচ্ছে। তাবাসসুম পারলো না মাশরাতের সাথে। মাশরাত তার হাত খোপ করে ধরে টান দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে ফেলল। তাবাসসুম মুখ লটকিয়ে তাকিয়ে আছে। মাশরাত হেসে বলল-
“তুমি কি আমাকে পাগল ভাবো? যাকে নিজের জীবন ভাবি তাকে আঘাত করবো? আরে পাগলী আমি দুষ্টামি করছিলাম। তোমার গায়ে হাত তুলার আগে যেন উপর আমার হাত আমার গা থেকে আলাদা করে ফেলে।”
তাবাসসুম আবার ইমোশনাল হয়ে গেল। মাশরাত অবাক হলো। এই মেয়ে না-কি হার্ট সার্জন হবে। এত ইমোশনাল হলে চলবে একজন ডাক্তারকে? যদিও এখন সে ছোটো। ধীরে ধীরে সব শিখে যাবে। মাশরাত হাসতে হাসতে তাকে জড়িয়ে ধরলো।

বর্তমান…..
বৃষ্টির ফোটা গায়ে পরতেই মাশরাতের হুশ ফিরলো। সে রুমালের দিকে তাকিয়ে ছিল। তারাতাড়ি রুমাল পকেটে ভরে দৌড়াতে শুরু করলো। একটা টং দোকানের দেখা পেয়ে সেটার নিচে গিয়ে দাঁড়াল। বৃষ্টি দেখে মনে হচ্ছে ১ ঘন্টার আগে শেষ হবে না। মাশরাত বেঞ্চে বসে চা দিতে বলল। মাশরাত মাঝে মধ্যে নিজের অনুভূতি অনুভব করে অবাক হয়। সে তাবাসসুমকে আজও ভুলে নি। আজও মন কাঁদে মেয়েটার কথা ভাবলে। মনে হয় সেদিন সে আসলে কত ভালো হতো। আবার আধুনিক্তার জন্য অপেক্ষা করছে। মাশরাতের মনে হয় সে আধুনিক্তার একবার দেখা পেলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে জড়িয়ে ধরবে৷ মেয়েটাকে একবার দেখার জন্য তার মন ছটফট করছে। মাশরাত এখন পুরোপুরি কনফিউজ। হঠাৎ কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পেলো। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে ৫৫/৬০ বছর হবে, একজন ভদ্র পুরুষ। মাশরাত উনাকে বসার সময়ই খেয়াল করেছিল। উনি বললেন-
“তোমার শার্ট কাঁধের কাছে একটুখানি ছিঁড়ে গিয়েছে বাবা।”
মাশরাত কাঁধের দিকে তাকাল। সে খেয়াল করেনি আগে। মুচকি হেসে উনার দিকে তাকিয়ে বলল-
“পড়ার সময় খেয়াল ছিলো না। ধন্যবাদ আপনাকে।”
“না, এটা এখন হয়েছে। তুমি যখন বসছিলে তখন সেলাই খুলে গিয়েছে।”
“বাহ আপনি খেয়াল করেছেন।”
“হতে পারি আমি বুড়ো মানুষ। কিন্তু চোখে আজও কম দেখি না।”
মাশরাত হাসলো, মানুষের সময় হয়ে গেলে না-কি বাচ্চামি স্বভাব এসে পড়ে। উনার কথাগুলো বাচ্চাদের মতো লাগছে মাশরাতের কাছে। মাশরাত হঠাৎ হাসি থামিয়ে সামনের দিকে তাকাল৷ প্রতিদিন চেনা অচেনা হাজার হাজার মানুষের দেখা মেলে। কিন্তু মাশরাত যাদের দেখতে চায় তাদের দেখা পাচ্ছে না। যদি তাবাসসুমের সাথে দেখা হয় তার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে জীবনে আগে বেড়ে যাবে। যদি এর আগে আধুনিক্তার দেখা মেলে সব ছেড়ে তাকে আগলে নিবে। তাবাসসুম মাশরাতের ভালোবাসা হলেও আধুনিক্তা মাশরাতের মায়া। হঠাৎ সেই ভদ্রলোক বললেন-
“তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তোমার মন খারাপ।”
“না আঙ্কেল, আমি এমনই মুখ গোমড়া করে রাখি। সবাই ভাবে আমার মন খারাপ।”
“ওওও, কিন্তু আমি শিওর তুমি খুব চিন্তায় আছো।”
“তা ঠিক বললেন, আচ্ছা আঙ্কেল আমি শুনেছি বড়োদের কাছ থেকে সাজেশন পাওয়া যায়।”
“হ্যাঁ তা তো যায়।”
“আপনি দুনিয়া আমার থেকে বেশী দেখেছেন। আমার থেকে বেশী জীবন উপভোগ করেছেন। আচ্ছা আঙ্কেল কখনো কি নিজের অনুভূতি নিয়ে কনফিউজ হয়েছে। ধরুন আপনি একটা মেয়েকে অনেক ভালোবাসেন। হঠাৎ করে মেয়েটা আপনাকে না বলে দূর চলে গেল। আপনি কারণটাও জানেন না। আপনার মনে হাজারো প্রশ্ন। আপনি অপেক্ষায় আছেন তার জবাবের। এরই মাঝে কেও একজন আসলো আপনার জীবনে। ধীরে ধীরে আপনি তার মায়ায় পড়ে গেলেন। সেও কোনো এক কারণে আপনার কাছ থেকে দূর চলে গেল। আপনি তাকেও ভুলতে পারছেন না।।এখন আঙ্কেল আপনার কি মনে হয় আপনি কাকে ভালোবাসেন?”
আঙ্কেল কিছুক্ষণ ভাবলো। তারপর হাসিমুখে বলল-
“দুজনকেই, কনফিউজ হওয়ার দরকার নেই এখন বলছি কিভাবে। প্রথম যে মেয়েটা ছিল সে হঠাৎ করেই জীবন থেকে চলে গেল না বলে। মেয়েটা কেন গেল সেটা এখনো অজানা। হয় তো কোনো কারণ ছিল। যদি মেয়েটা ধোকা দিয়ে গেত। তুমি তাকে সহজেই ভুলে যেতে পারতে। এখন তুমি তাকে ভুলতে পারছো না কারণ সে প্রতারণা করেনি। হঠাৎ করেই চলে গিয়েছে। আর দ্বিতীয় মেয়ে যে তোমার মায়া হয়ে উঠেছে। সেও কোনো এক কারণে দূর চলে গিয়েছে। মনে রেখো ভালোবাসা এমন এক অনুভূতি যা আমাদের মনে বার বার জন্মায়। যে বলে ভালোবাসা মাত্র একবার হয় সেটা সম্পূর্ণ ভুল। প্রথম ভালবাসা বা দ্বিতীয় ভালোবাসা বলতে কিছু নেই। যে সম্পর্ক শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত টিকে থাকে সেটাই সত্যিকারের ভালোবাসা। জীবনের শেষ পর্যায়ে যে মেয়েকে তুমি পাশে পাবে ভেবে নিও সেই তোমার সত্যিকারের ভালোবাসা।”
মাশরাত মুগ্ধ হলো। জবাব দেওয়ার মতো সে আর শব্দ খুঁজে পেল না।

অন্যদিকে…..
আধুনিক্তার চোখের কোণায় পানি জমে আছে। কারণ সামনেই একটা প্লে গ্রাউন্ড দেখা যাচ্ছে। আগে এখানে মাশরাতদের বাসা ছিল। এই এক বছরে এত পরিবর্তন দেখে আধুনিক্তা অবাকের থেকে বেশী কষ্ট পেল। চুপচাপ গাড়িতে বসে ছাতা বন্ধ করলো। এখন কোথায় যাবে ভাবছে। হঠাৎ মেহরিনের কথা মাথায় আসতেই হেসে দিলো। সে মেহরিনকে ভুলে গিয়েছিল? নিজের বেস্টফ্রেন্ডকে? ছি এটা সত্যি বেশ লজ্জার বিষয়। আধুনিক্তা গাড়ি স্টার্ট দিলো। মেহরিন যদি জানে আধুনিক্তা তাকে ভুলে গিয়েছে মেয়েটা তাকে আস্ত গিলে খাবে। মেহরিনের বাড়ির সামনে গাড়ি থামালো আধুনিক্তা। এই মেয়েটার কাছেই সে মাশরাতের খবর পাবে৷ গাড়ি থেকে নেমে হাসিমুখে এগিয়ে গেল। কলিংবেল বাজিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মেহরিনের রিয়্যাকশন কেমন হবে তাকে দেখে? কেও একজন এসে দরজা খুলল। একজন ভদ্রমহিলা, আধুনিক্তার মনে হলো উনি মেহরিনের মা। হাসি মুখে সালাম দিয়ে বলল-
“আন্টি আমার নাম আধুনিক্তা৷ আমি মেহরিনের বান্ধবী। মেহরিন আছে বাসায় আন্টি?”
মেহরিনের নাম শুনে তার মা মুখ কুঁচকে ফেলল। আধুনিক্তা থতমত খেয়ে গেল উনার চেহারা দেখে।
“ও কি নেই আন্টি?”
“না নেই গতকাল মরে গিয়েছে।”
আধুনিক্তা ভ্রু কুঁচকালো। সে কি ঠিক শুনছে? হঠাৎ ভেতর থেকে একজন পুরুষের কন্ঠ ভেসে আসলো।
“তুমি কার উপর রাগ তুলছো?”
মানুষ হেটে আসতেই আধুনিক্তা সালাম দিলো।
“আপনি মেহরিনের ভাই তাই না? ভাইয়া মেহরিন কোথায়?”
মেহরিনের ভাই একটা লম্বা নিশ্বাস ফেলে মাকে বলল ভেতরে যেতে। মা হনহন করে ভেতরে চলে গেল।
“ভাইয় আন্টি কি রাগ করেছে?”
“না আপনি ভেতরে আসুন।”
“না থাক আমি এইখানেই ঠিক আছি। হয় তো মেহরিনের সাথে আন্টির ঝগড়া হয়েছে। আপনি ওকে প্লিজ ডেকে দিবেন। বলবেন আধুনিক্তা এসেছে।”
“মেহরিন নেই, গতকাল পারিবারিক ভাবে তার বিয়ে ছিল। কিন্তু সে পালিয়েছে।”
“কিইই?”
আধুনিক্তা অবাক হলো।
“হ্যাঁ, সে এখন মরে গিয়েছে আমাদের জন্য।”
“ভাইয়া কার সাথে? মানে কোথায় ও এখন?”
“রিয়াজ নামের এক ছেলের সাথে পালিয়েছে। তার দু’টো বন্ধু সাহায্য করেছিল।”
“দুটো বন্ধু? এক মিনিট ভাইয়া।”
আধুনিক্তা তার মোবাইল বের করে কবির আর নাজমুলের ছবি দেখিয়ে জিজ্ঞেস করলো এই ছেলেরা কি-না৷ মেহরিনের ভাই কবিরের নাম নিলো আর বলল নাজমুল ছিল না। আধুনিক্তা কিছু একটা ভেবে মাশরাতের ছবি দেখিয়ে বলল-
“এই ছেলেটাও কি ছিল ভাইয়া?”
“হ্যাঁ, এক নাম্বারের হারামি সবগুলো। জানো এই ছেলে অসুস্থতার এক্টিং করে আমাদের বোকা বানিয়েছে। এই দুজন আমরা সামনে পেয়ে নেই। জান টেনে বের করে দিব।”
আধুনিক্তা ঢোক গিলল। মাশরাত নিজেই নিজেকে জালে ফাসিয়েছে। ভাই ভ্রু কুঁচকে বলল-
“তুমি জানো ওরা কোথায় থাকে?”
“না ভাইয়া আমি নিজেই তাদের খুজছি। আমি কাজ আসলাম বাংলাদেশে।”
“ঠিক আছে তুমি খুঁজে আমাকে বলতে ভুলো না।”
আধুনিক্তা জোরপূর্বক হাসি দিয়ে মাথা নাড়ালো। আপাতত এখান থেকে পালানোই শ্রেয়। আধুনিক্তা বিদায় জানিয়ে তারাতাড়ি মেহরিনের বাসা থেকে বেরিয়ে গেল। গাড়িতে বসে ভাবলো মল্লিকার বাসায় যাবে। গাড়ি স্টার্ট দেওয়ার সাথে সাথে মোবাইল বেজে উঠলো। হাতে নিয়ে দেখে বাবা। আধুনিক্তা রিসিভ করে কানে ধরলো।
“হুম আব্বু”
“তুমি কোথায়? বলেছিলাম না বাসা থেকে বের হতে না? এখনই বাসায় আসো।”
“আসছি”
আধুনিক্তা কল কেটে দিলো। আজ তার ক্লান্ত লাগছে খুব। আগামীকাল নাহয় মল্লিকার বাসায় যাবে। আকাশের দিকে তাকাল। বৃষ্টি থেমে গিয়েছে। কিন্তু আকাশ থেকে মেঘ সরে নিলো। আধুনিক্তা সিটে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করলো। মাশরাতকে বলার মতো তার কাছে অনেক কথা আছে। কিন্তু মানুষটার দেখা মিলছে না। কখন মিলবে তাও জানে না। আধুনিক্তা চোখ খুলল। একটা লম্বা নিশ্বাস ফেলে গাড়ি স্টার্ট দিলো। গাড়ি রাস্তার মাঝ দিয়ে যাচ্ছে। আধুনিক্তা সব মনোযোগ ড্রাইভিং-এ।

হঠাৎ মাশরাত আবার চেনা অনুভূতি অনুভব করলো। বুকের ভেতর কম্পন অনুভব করছে। রোডের দিকে তাকাল। দু পাশ দিয়ে গাড়ি আসছে আর যাচ্ছে। মনে হচ্ছে সবার বেশ তাড়া।
“কি হলো তোমার চা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।”
“জানি না আঙ্কেল, ইদানীং মনে হচ্ছে আমার অনেক আপন কেও আমার আশে পাশে আছে।”
“হয় এমনটা হয়। অনেক সময় আমাদের অতি কাছের মানুষ আমাদের সামনে থাকে কিন্তু আমরা বুঝতে পারি না। কিন্তু তুমি চিন্তা করো না। যে আসার সে আসবেই। তাকে থামানোর ক্ষমতা উপর ওয়ালা ছাড়া আর কারো নেই।”

চলবে…..

[অনেকজন জানতে চেয়েছিলেন আমি কেমন আছি। আমি একদম সুস্থ আছি আলহামদুলিল্লাহ। জ্বর হালকা আছে এখন। আর হ্যাঁ আলহামদুলিল্লাহ আমার ডেঙ্গু হয় নি?‍♀️ অকারণে ভয় পাই শুধু?। আচ্ছা একটা প্রশ্ন, মাশরাতের মিল কার সাথে চান? আধুনিক্তা না-কি তাবাসসুম? আপনাদের ইচ্ছে জানতে চাই। ভুল ক্রুটি ধরিয়ে দিবেন❤️❤️❤]

আগের পর্বের লিংক ?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here