আলেমের বউ পর্ব ৩+৪

0
638

#আলেমের_বউ (পর্ব-৩+৪)

মাকে হারিয়ে নাজিফা আনমনা হয়ে যায়!
নাজিফা এমনিতে ও তেমন কারো সাথে কথা বলতো না!
ছোট্ট কলিজার টুকরো মিষ্টি ভাইটাকে যন্রের ভেতর গ্লাচ দিয়ে দেখে নিয়ে নিজাফা একটু শান্তি পায়!চোখের কোণে অশ্রু ভেসে যায় নাজিফার!ভাইটা আজো জানেনা যে তাকে পৃথিবীতে আলো দেখাতে গিয়ে মা আর বেঁচে নেই!একা একা গ্লাচের দিকে তাকিয়ে ছোট্ট ভাইটাকে দেখে আর নিজের সাথে কথা বলে নাজিফা।
একমাস ৩ দিন কেটে যায় মেডিকেল নাজিফার আর ছোট্ট ভাইটার!বাবা যতটুকু পারছেন খরচ চালিয়ে যাচ্ছে!মামা ও কিছু দিয়েছেন।
একমাস ৪ দিন হলে ডাক্তার ফারহানা কবির বলেন,আপনারা বাবুটাকে নিয়ে যেতে পারেন!

ছোট্ট ভাইকে নিয়ে বাড়িতে আসে!কিন্তু এখন বড় সমস্যা ভাইকে কী খাওয়াবে?কী করে তাকে মাকে ছাড়া রাখবে!এতদিন তো মেডিকেল এ যন্রের মাঝে ছিলো!এখন তাকে বাড়ির পরিবেশে মা কে ছাড়াই রাখতে হবে কিন্তু কী খাওয়াবে এই দুধের মাছুম বাচ্চাটাকে!


শুরু হয় ছোট্ট ভাইকে নিয়ে নাজিফার নতুন জীবন!
আদর করে নাম রাখে নুসাইর।নুসাইর অর্থ সফল বা বিজয়ী!
এক কথায় বোনের নয়নের মনি হলো নুসাইর।
নাজিফার পরিবার যেহেতু যৌথ পরিবার।মা বেঁচে থাকলে তিনি সাংসারিক কাজ করতেন।কিন্তু এখন বড়মা,মেঝোমা আর সেঝোমা নাজিফাকে দিয়েই কাজ গুলো করিয়ে নেয়!নাজিফা ছোট্ট ভাইয়ের দেখাশুনা পাশা পাশি ঘরের সব কাজ করে।নাজিফা এখন আর নিয়মিত ক্লাস করতে পারে না,এক দিকে ছোট ভাই নুসাইর আর অন্যদিকে কাজ!
তবুও ফাইনাল পরীক্ষা দেওয়ার জন্য স্যাদের বলে,স্যারেরা না বলে দেয়!অনেক রিকুয়েস্ট করে,তারপর প্রধান শিক্ষক অনুমতি দেয় পরীক্ষা দেয়ার জন্য।এখন নাজিফা ক্লাস সেভেনে পড়ছে!নুসাইর একটু একটু হাটতে শিখেছে!হালকা কথা বলা ও শিখেছে!


মাসখানেক পর ১ দিন নাজিফা দেখলো তার কামিজে অনেকটা রক্ত লেগে আছে!ভাল করে দেখে নাজিফা!না সত্যি অনেক রক্তক্ষরণ হচ্ছে!কিন্তু কেনো এত রক্তক্ষরণ সাথে ক্যামন যেনো পেটে প্রচুর ব্যথা মনে হলো!
কিছুই নাজিফা বুঝতে পারছেনা!নাজিফা খুব ভয় পেয়ে যায়!নাজিফার মা নেই যে তাকে বুঝিয়ে বলবে যে এটা কীসের রক্ত?নাজিফা তার পাশের ঘরের একটা কাজিনকে সবটা বলে!আপুর নাম নূরে জান্নাত!


জান্নাত আপু নাজিফাকে সুন্দর ভাবে বুঝিয়ে বলেন!
আল্লাহ্ তা’লা নারীদের মা হবার তৌফিক দেন!যে রক্তটা বের হলো এটা হলো হায়েজ।নারীর নারীত্ব শুরু হয় হায়েজ এর মধ্য দিয়ে!নারীর জীবনের চারটা ধাপ!
প্রথম ধাপ হলো,
নারীর শৈশবকাল,দ্বিতীয় হলো যৌবনকাল,তৃতীয় হলো সাংসার কাল এবং চতুর্থ হলো মায়ের আসনের আসন।
শৈশবকাল কাটে বাবা,মায়ের এবং অন্য সবার আদরের মধ্য দিয়ে!শৈশবকালের পরেই আসে নারীর যৌবনকাল!
শৈশব কাটিয়ে সব মেয়েরাই পা রাখে যৌবনকালে!
হায়েজ শুরু হয়,শরীরের বিভিন্ন গঠনের দিকে পরিবর্তন শুরু হয় এই সময়ে!আচার-আচরনের পরিবর্তন হয়!
প্রথমে হায়েজ সম্পর্কে বলি,বয়ঃপ্রাপ্ত (বালেগা) হলে তার জরায়ু হতে রোগ ও গর্ভাবস্থা ছাড়া যে রক্ত হয় তাকে হায়েজ বা ঋতুস্রাব বা পিরিয়ড বলা হয়!

১.হায়েজ বা পিরিয়ডের সর্বনিম্ন সময়সীমা ৩দিন ৩রাত।সর্বোচ্চ ১০দিন ১০রাত।৩দিনের কম বা ১০দিনের বেশী হলে তা হবে ইস্তিহাযা।
২.৩দিনের কম সময় হলে যে নামায গুলো বাদ যাবে,ঐ তিন দিনের নামায কাযা আদায় করতে হবে।
৩.১০দিনের বেশী সময় হায়েজ হলে ১০দিন ১০রাতের পর থেকে নামায আদায় করতে হবে।
৪.কোন মাসে ৫দিন হায়েজ হয়ে বন্ধ হয়ে গেল।
আবার দুদিন পর শুরু হল।
তাহলে সেটাও পিরিয়ড বা হায়েজ বলে ধরে নিতে হবে।
কারণ পিরিয়ডের সর্বোচ্চ সময়সীমা ১০দিন ১০রাত।
৫. কারও টানা ১৫/২০দিন রক্ত যাচ্ছে। এক্ষেত্রে ১০দিন ১০রাতকে পিরিয়ড হিসেবে ধরে বাকিদিনগুলো নামায আদায় করতে হবে।.
৬. দুই মাসের পিরিয়ডের মধ্যে মিনিমাম ১৫দিন গ্যাপ থাকতে হবে।
যেমন, কারও রক্ত বন্ধ হল মাসের ১ তারিখে।
মাসের ১৫ তারিখের আগে যদি আবার
শুরু হয় তাহলে সেটা পিরিয়ড বা হায়েজ নয়,বরং ইস্তিহাযা।
৭.হায়েয ও নিফাস অবস্থায় স্ত্রী সহবাস সম্পূর্ণ হারাম।
ইস্তিহাযা অবস্থায় জায়েজ তবে অনুত্তম।
৮.হায়েয নিফাস অবস্থায় নামায রোযা কুরআন তিলাওয়াত নিষিদ্ধ।
তবে হায়েয-নিফাস অবস্থায় নামায পুরোপুরি মাফ,এগুলো কাজা আদায় করতে হবে না।
কিন্তু রোযা মাফ হবে না।রোযা পরে অন্য যে কোনো সময় আদায় করতে পারবে!
হায়েয-নিফাস অবস্থায় কাযা হওয়া রোযা অবশ্যই আদায় করতে হবে।
এ অবস্থায় যিকির, দুরূদ, দুআ ও কুরআনে যে দুআ গুলো আছে সেগুলো পড়া যাবে।
৯. ইস্তিহাযা অবস্থায় নামায-রোযা ত্যাগ করা যাবে না।
১০. ইস্তিহাযা অবস্থায় এক ওজু দিয়ে দুই ওয়াক্ত নামায পড়া যাবে না।
এক ওজু দিয়ে এক ওয়াক্তই পড়তে হবে।
১১. হায়েয-নিফাস শেষ হওয়ার পর গোসল ফরজ হয়।
ফরজ গোসল করে নামায আদায় করতে হবে।.
১২. পিরিয়ড বা হায়েজ শেষ হওয়ার পর ফরজ গোসল দেরিতে করার কারণে কোন ওয়াক্তের নামায যদি কাযা হয় তবে গুনাহ হবে,এবং সে ওয়াক্তের নামায কাযা আদায় করতে হবে।.
১৩. সাদাস্রাবের জন্য গোসল ফরজ হয় না।
কিন্তু ওজু ভেঙে যায়।
এক্ষেত্রে প্রতি ওয়াক্তের নামাযের আগে ওজু করে নিতে হবে!
১৪.ফরজ বা বিতর নামায পড়াকালীন অবস্থায় হায়েজ শুরু হলে সাথে সাথে নামায ছেড়ে দিতে হবে।তা আর পরে কাযা করতে হবে না!
১৫.হায়েজ বা ঋতুস্রাব বা পিরিয়ড এর রং ছয়টি হয়ে থাকে;লাল,কালো,সবুজ,ধুসর,মেটে এবং হলদে।

নাজিফা বুঝতে পারছো?
-হুম আপু!
-নাজিফা এই মাসয়ালাগুলো সঠিক ভাবে পালন করতে করতে হবে।যদি সঠিক ভাবে পালন না করা হয় তাহলে গুনাহগার হতে হবে!এই জন্য অবশ্যই প্রতিবারের হাজেয় এর দিন তারিখ শুরু ও শেষ হবার দিন তারিখ সঠিক ভাবে হিসাব রাখতে হবে!এতে করে মাসয়ালাগুলো সঠিক ভাবে পালন করা সম্ভব হবে।
-আপু একটা প্রশ্ন ছিলো!
-হ্যা,বল!
-খুব ব্যথা হয় পেটে, এতে কী করনী?
-ব্যথা এমন হয়ে থাকেই এই সময়ে!ভয় পাওয়ার কিছু নেই!সহ্য করে নিতে হবে!আল্লাহু তা’আলা কিন্তু এই ক্ষমতা একজন নারীকেই দিয়েছে নাজিফা!কিছু আমল আছে,করতে পারলে ইনশাআল্লাহ ভাল হবে!
-কী আমল আপু?
-বেশি ব্যথা হলে তখন হিং(পাশারী দোকানে পাওয়া যায়)সেবন করলে হায়েজ স্বাভাবিক ভাবে প্রবাহিত হবে,ইনশাআল্লাহ্।
আবার কাঁচা পিঁয়াজ খেলে ও হায়েজ স্বাভাবিক ভাবে প্রবাহিত হয় এবং ব্যথা অনুভূত হয় না।স্মরণ রাখবি কাঁচা পিঁয়াজ রোগের ঔষধ হিসাবে খেতে পারে অন্য সময় খাওয়া থেকে বিরত থাকবি!কেননা,রাসূল কারীম সল্লাল্লাহু তা’আলা’আলায়াহি ওয়া আ-লিহী ওয়াসাল্লাম কাঁচা রসুন,কাঁচা পিঁয়াজ ও গিনদন(এক প্রকার দূর্গন্ধযুক্ত সবজী ) খেতেন না!
প্রয়োজনে খেলে তারপর ভালভাবে কুলি করে মুখ পরিষ্কার করে নিবি!বিশেষ করে নামাযের সময়।কারণ এতে ফিরিশতাদের কষ্ট হয়।
-আচ্ছা আপু বেশি রক্তস্রাব হলে কী করতে হবে?
-অতিরিক্ত রক্তস্রাব হলে, তাহলে ৭ দিন সূরা দাহর ১ বার পাঠ করে অথবা সূরা কাউসার ৩১৩ বার পাঠ করে পানিতে ফুঁক দিয়ে খাবে!দেখবে রক্ত বন্ধ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ্।
-আপু মাথাটা যেনো কেমন চক্কর দিয়ে ওঠে তখন?
-হ্যাঁ এটা ও অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ এর জন্য হয়ে থাকে,তখন সামান্য তুলসী পাতার রসের সাথে এক চা চামচ মধু মিশিয়ে পান করলে ভাল হবে ইনশাআল্লাহ্।
-আচ্ছা আপু ধরো কোনো কারণে হায়েজ বন্ধ হয়ে রইলো তখন কী করতে হবে?
-গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন!প্রচন্ড গরম বা
শীত এর প্রকটে ও কিন্তু হায়েজ বন্ধ হয়ে থাকে!তখন ১ কাপ মিষ্টি জিরার রসের মধ্য এক চা চামচে ১ চামচ তরমুজের বীজের মজ্জা(ভেতরের সাদা অংশ)এবং মধু মিশিয়ে সকালে ১ বার সন্ধ্যায় ১ বার খাবে!আর হ্যাঁ তখন বেশি পরিমানে পানি পান করতে হবে।কমপক্ষে ১২ গ্লাস এক দিনে।
-কী খাওয়া তখন খারাপ বেশি?
-আলু,মশুরের ডাল ও শুকনো খাবার এই সময়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে,তাই এই সময়ে এগুলো খাবেনা!
-কী ক্ষতি হতে পারে?
-হায়েজ শুরু হলো কিন্তু বন্ধ হবে না।জরায়ুতে রক্ত জমাট বেঁধে যাবে এতে করে পরবর্তীতে মা হবার সম্ভব না হারিয়ে যায় এবং অনেকের ক্যান্সার ও হয় আবার অনেকের টিউমার ও হয়!ফলে জরায়ু কেটে ফেলতে হয় অপারেশ করে!
-আল্লাহ্ গো সবাই কে রক্ষা করুক!আপু যদি কারো হায়েজ এর রক্ত কম যায় তখন কী করণীয় আছে?
-হ্যাঁ আছে,হায়েজ এর দিন আসার পূর্বে ১ সপ্তাহ আগের থেকে প্রতিদিন পরিমান মত দুধের সাথে ২৫ গ্রাম মিষ্টি জিরা সহকারে সেবন করলে ইনশাআল্লাহ হায়েজ এর রক্ত বৃদ্ধি পাবে!



নাজিফা কোথায় তুই?দেখে যা তোর ভাই কী করেছে!আজ তোদের দুইজনের কী হাল করি আমি দেখিস!(বড়মা)

-নাজিফা মনে হয় নুসাইর কিছু করেছে!তাড়াতাড়ি যা বোন!(জান্নাত আপু)
-আচ্ছা আপু যাচ্ছি,আর তোমাকে অনেক কষ্ট দিলাম!
-দূর পাগলী,বোনের জন্য এটা কোনো কষ্ট নয়রে!তুই তাড়াতাড়ি যা!পরে কথা হবে!



আমি রুমে এসে যা দেখলাম তাতে আমি মোটে ও প্রস্তুত ছিলাম না!


চলবে!
লিখা:শারমিন সুলতানা সালমা।

#আলেমের_বউ (পর্ব-৪)


নাজিফা রুমে এসে দেখলো,নুসাইর এক পাতিল ভাত মাটিতে ফেলে দিয়েছে!আর একটা একটা করে মুখে তুলে নিচ্ছে মাটি থেকে,সারা শরীরের মাঝে কালিতে মাখা!মুখটা ও কালিতে মেখে নিয়েছে!নাজিফা একগাল হেসে নুসাইরকে কোলে তুলে নিয়ে!সারা রুমে ঘুরতে থাকে আর বলতে থাকে ভাই তুই ভাত খেতে পারিস নিজের হাতে,কই আমাকে তো বললিনা,আমাকে তো একবাও খাইয়ে দিলিনা,নুসাইর বুঝে বোনের আদর কিন্তু কিছু বলতে পারেনা কারণ সে এখন তেমন কথা বলতে পারেনা!শুধু খিল খিল হাসির শব্দ করছে বোনের কথায় সাড়া দিচ্ছে!
বেশিক্ষণ এই আনন্দ রইলো না!কেউ একজন এক মগ ঠান্ডা পানি নাজিফা আর নুসাইর এর উপর ফেলেছে!ঠান্ডায় নাজিফা আর নুসাইর চিৎকার করে উঠে আর ঘাড় ফিরিয়ে দেখে বড়মা দাঁড়িয় আছে!তিনিই এমন কাজ করলেন!
-মজা করা হচ্ছে ভাইকে নিয়ে?ভাত যে সব ফেলে রেখেছে এই অলুক্ষনে ছেলে টা!আমার মেয়েটা(আনিকা) এখন স্কুল থেকে এসে কী খাবে?নাকি তোদের নেক্যামু দেখবে?
-নাজিফা বুঝতে পারছে ভাইকে নিয়া আনন্দ করা ঠিক হয়নি!নিজেকে সামলে নেয় নাজিফা!ঠান্ডা পানির ছুঁয়াতে নুসাইরের অবস্থা খারাপ হয়ে পড়ে!বাবাকে বলে নাজিফা ঔষধ আনিয়ে নেয় নুসাইরের জন্য!
.
.
.
ছয়দিন পর!

জান্নাত আপু কেমন আছো?
-আলহামদুলিল্লাহ!তুই কেমন আছিসরে নাজিফা?
-ভাল!
-ফরজ গোসল করেছিস?
-ফরজ গোসল আবার কী আপু?
-ফরজ গোসল ঐ গোসলকে বলা হয়,যা করা অপরিহার্য। বালেগ বয়সে নাপাক হলে!তুই তো এই কয়েক দিন হায়েজ অবস্থায় ছিলি!তোর জন্য এখন গোসল ফরজ!বুঝলি?
-না!আপু বুঝিয়ে বলো!
-শুন,যদি কারো স্বপ্নদোষ হলে বা স্বামী-স্ত্রীর মিলনে গোসল ফরজ হয়। আর তা থেকে পবিত্রতা অর্জনের তাগীদ দিয়ে আল্লাহ বলেন:যদি তোমরা নাপাক হয়ে থাক, তবে গোসল কর। [সূরা মায়েদাহ: ৬]
-আপু আমার তো বিয়ে হয়নি!
-দূর বোকা বিয়ে ছাড়া ও গোসল এর ফরজ নিয়ন আছে!
আমাদের মধ্যে অনেকেই এই ফরজ গোসলের সঠিক নিয়ম জানেন না; আবার সংকোচে কাউকে জিজ্ঞেস ও করতে পারে না।ফরজ গোসলের সঠিক নিয়ম না জানার কারণে অসংখ্য মুসলিম ভাই- বোনের নামায সহ নানা আমল কবুল হয় না।
অথচ নামাযের জন্য পবিত্রতা অর্জন করা ফরজ।
আল্লাহ বলেন- হে ঈমানদার গণ!নামাযের ধারে-কাছে যেয়ো না যখন তোমরা নেশা অবস্থায় মাতাল হয়ে থাকো, যে পর্যন্ত না তোমরা বুঝো কি তোমরা বলছো, অথবা যৌন-সম্ভোগ করার পরবর্তী অবস্থায়, যতক্ষণ না গোসল করেছ। [সূরা আন’নিসা : ৪৩ ]
নামায শুদ্ধ হওয়ার জন্য নামাযের বাহিরে যে রুকুনগুলো আছে তন্মধ্যে শরীর পাক, কাপড় পাক ও জায়গা পাক হওয়ার কথাও আছে। হাদীসে আছে যে অপবিত্র শরীরে, কাপড়ে ও বিছানাপত্রে নামায হয় না। [মিশকাত : ২৬২]
-আচ্ছা আপু তুমি আমাকে বলো কী কী কারণে গোসল ফরজ হয়?
-হ্যাঁ বলছি,
যে সব কারণে গোসল ফরজ হয় তা হলো;
১. স্বপ্নদোষ বা উত্তেজনাবশত বীর্যপাত হলে।
২. স্বপ্নের কথা স্মরণ থাকুক বা না থাকুক শরীরে, কাপড়ে বা বিছানায় বীর্যের চিহ্ন দেখতে পেলে।
৩. নারী-পুরুষ মিলনে সহবাসে বীর্যপাত হোক আর নাই হোক।
৪. মহিলাদের মাসিক ঋতুস্রাব (হায়িয) বন্ধ হলে।
৫. নিফাস (সন্তান প্রসবের পর যে রক্তস্রাবহয় তা) শেষ হলে।
৬. ইসলাম গ্রহণ করলে (নব-মুসলিম হলে)।
৭. স্ত্রী-পুরুষ কারও উত্তেজনার সাথে বীর্য বের হলে ফরজ গোসল ছাড়া নামায হবে না।


-আচ্ছা গোসলের ফরজ কয়টি আর কী কী?
-গোসলের ফরজ তিনটি।তা হলো,
১. একবার কুলি করা ফরজ।
১. একবার নাকের নরম জায়গা পর্যন্ত পানি পৌঁছিয়ে পরিষ্কার করা ফরজ।
৩.সমস্ত শরীরে পানি পৌঁছানো ফরজ।
-ওহ আচ্ছা আর কী আছে?
-হ্যাঁ শুন,
গোসলের সুন্নত
* তিনবার কুলি করা সুন্নাত।
* তিনবার নাকের নরম জায়গা পর্যন্ত পানি পৌঁছিয়ে পরিষ্কার করা সুন্নাত।
* সমস্ত শরীরে তিনবার পানি ঢেলে ভাল করে ঘষে পরিষ্কার করা সুন্নাত।
গোসলের আরও সুন্নাত
* গোসলের নিয়ত করা।
* গোসলের শুরুতে দুই হাতের কব্জি পর্যন্ত ধোয়া।
* পেশাব পায়খানার রাস্তা পরিষ্কার করা।
* শরীরের কোন স্থানে নাপাকী থাকলে তা ধোয়া।
* অজু করা।
* পানি জমে থাকে এমন স্থানে গোসল করলে, গোসলের পর সেই স্থান থেকে সরে গিয়ে পা ধোয়া।
যার উপর গোসল ফরজ হয়েছে,সে যদি গোসলের একটা ফরজ বাদ দিয়ে শতবার গোসল করে, তবু তার শরীর নাপাক থেকে যাবে।
তথ্যসূত্র : বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী


বুঝলি নাজিফা? তুই তো এখন হায়েজ বন্ধ হয়েছিস তাইনা?
-হ্যাঁ আপু!
-তাহলে আজ এখনি ফরজ গোসল করে নেয়!
-আচ্ছা আপু,এখন আসি তাহলে?
-আচ্ছা!




নাজিফার দিনে সব কাজকর্ম নিয়ে ব্যস্ত থাকে নুসাইর গলা পাটিয়ে কাঁন্না করলে ও কোলে তুলে নিতে দেয় না বড়মা!কাজে আটকে রাখে মেঝোমা ও সেঝোমা মিলে! নাজিফা কাজ করলে ও মনটা থাকে নুসাইরের কাছে!রাতে যখন ফ্রী থাকে নুসাইর শুধু তখন কাঁন্না করে!নাজিফা অনেক রাতে ও নুসাইরকে নিয়ে বসে থাকে!চোখের নিচে কালচে দাগ পড়ে যায় নাজিফার।



ধীরে ধীরে নুসাইর বেড়ে উঠে!তিন বছর শেষ প্রায় নুসাইরের,নুসাইর এখন আর তেমন কষ্ট দেয় না নাজিফাকে,আগের মত রাত জাগতে হয় না!
নুসাইরকে নূরানি মাদ্রাসায় দেওয়া হয়!মাদ্রাসা গেট না থাকায় নুসাইর চুপি চুপি বাসায় চলে আসে নাজিফার কাছে!নুসাইর যেমন নাজিফাকে ছাড়া ঘুমাতে পারেনা তেমনি নাজিফা ও পারেনা!


বাড়িতে নাজিফার ও কাজের জন্য পড়া হয় না,তাই বাবা যেখানে কাজ করে কুমিল্লা।নুসাইরকে কাছের একটা হাফেজিয়া মাদ্রাসায় দেয় আর নাজিফাকে কাছের একটা মাধ্যমিকে ভর্তি করিয়ে দেন নবম শ্রেণিতে!


বাড়ি থেকে যাওয়ার সময় মায়ের কবরের কাছে আসলে নাজিফার আবার চোখের কোণে অশ্রু চলে আসে!দোয়া পড়ে,তারপর নুসাইরকে দেখিয়ে বলে,”দেখো মা!নুসাইর কত বড় হয়ে গেছে!নুসাইরকে আলেম বানাবো,ইনশাআল্লাহ!তুমি দোয়া করো শুধু,,,,,

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here