অবন্তর আসক্তি পর্ব ৩

0
800

#অবন্তর_আসক্তি
#৩য়_পর্ব
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা
________
যা ভয় দেখিয়ে ছিল তিন্নি তখন বর্ষাকে তার পরে বেচারি বাড়ি ফিরতেই ভয় পাচ্ছে। বাহিরে আর কতই বা থাকা যায়। নিজের বাড়ি নিজের রুমে তো ফিরতেই হবে। সে ভেবেই মন খারাপ হয়ে যায় বর্ষার। বর্ষা রিয়া বাকি আহিতা মাহিরা চারজনেই দিঘীর পাড় বসে আছে, মাটি থেকে ইটের বিন্দু বিন্দু কোণা গুলো কুড়িয়ে নিয়ে দিঘীর জলে ঢিল মারছে। এক ঠোঁটের উপর আরেক ঠোঁট ভাজ করে রেখে হঠাৎ করেই উঠে দাঁড়ালো বর্ষা। বাকি রাও বিমর্ষ হয়ে উঠে দাঁড়ালো।
বর্ষা কাঠকন্ঠে বলল, ‘ কোন না কোন খ্যাতের মুলার জন্য আমি কেন রাস্তায় থাকবো আমি বাসায় যাবো৷ ‘

আহিতা: কিভাবে যাবি?

‘খ্যাতের মুলা অন্তত বলিস না। তোর ভাই টা যে এত কিউট জানতাম না রে। আমার ভাবনার চেয়েও অনেক কিউট আল্লাহ প্রথম দেখেই ক্রাশ খাইছি কাল রাতে তো দেখতেই পারিনি। শোন না তোদের ভাই টার সাথে আমার সেটিং করিয়ে দে না। ‘ মাহিরা ন্যাকামি কন্ঠে বলল।

বর্ষা চোখ জোড়া ছোটছোট করে নিয়ে কর্কশকন্ঠে বলল, ‘ কি বললি তুই? ওই আমার জাত শত্রু আর তুই ওর সাথে সেটিং করিয়ে দিতে বলতাছিস? ‘

রিয়া গালে হাত দিয়ে প্রশ্ন ছুড়ল, ‘ অভ্র ভাইয়া তোর শত্রু বুঝলাম কিন্তু জাত শত্রু কিভাবে হলো? ‘

‘ মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে ‘ বর্ষা মাথা ঘুরিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল।

আহিতা: বাড়ি যাবি কিভাবে ভাবছিস?

বর্ষা: হু!

মাহিরা: কিভাবে যাবি?

বর্ষা বলল,’ বাড়ির পেছনে গিয়ে পাইপ বেয়ে আমার রুমের বেলকনিতে উঠে যাবো। ‘

রিয়া জেনো আসমান থেকে পরল বর্ষার কথা শুনে মুখ থেকে অস্ফুটস্বরে বেরিয়ে আসে, ‘ হোয়াট? ‘

আহিতা: পাগল হয়ে গেছিস তুই?
রিয়া: পাগল হয়ে গেছে, নিশ্চয়ই পাগল হয়ে গেছে।
মাহিরা: বায় চান্স একবার পরে গেলে হাত ও পা’য়ের সাথে মাজা ও ভাঙবে।

বর্ষা ডেভিল হাসি দিয়ে বলল, ‘ কিচ্ছু হবে না আমার, চল আমার অভ্যেস আছে। ‘

পাশ থেকে ফট করে রিয়া বলল, ‘ কিন্তু আমার নেই, আমি উঠতে পারবো না তোর সাথে ওই পাইপ বেয়ে ‘

বর্ষা রাগী কন্ঠে বলল, ‘ তোর তো সব কিছুতেই শুধু না না৷ আমার কথার হ্যাঁ তে হ্যাঁ মিলায় একমাত্র রিয়া আর বৃষ্টি ‘

আহিতা প্রশ্ন ছুড়ল, ‘ বৃষ্টি আর রিমা কলেজ হোস্টেল থেকে কবে আসবে রে? ওদের অনেক মিস করি ‘

মাহিরা আহিতার তালেতাল মিলিয়ে বলল, ‘ হয় আমিও মিস করি অনেক ‘

বর্ষা: হইছে আমি বুঝবার পারছি।

তারপর আর কি বর্ষা আর রিয়া ওদের দুজনকে বাড়িতে পৌঁছিয়ে দিয়ে নিজেরা নিজেদের বাড়িতে আসে। চুপিচুপি বর্ষার রুমের নিচে আসে। বর্ষার রুমের ডানপাশে রিয়ার রুম। বর্ষার রুম দুই তলায় আর অভ্রর রুম তিনতলায়। বেলকনিতে কোনো গ্রিল না থাকায় অনায়াশে উঠা নামা করা যায়। তার সাথে কিছুটা নিচু তে ঝুকলেই সবটা দেখা যায়।

বাড়ির ভেতরের বর্ণনা, বাড়িটা অনেকটা জায়গায় বড় করে করা হয়েছে। বাসা চারতলা তবে বাড়ির মধ্যে উঠানের মতো জায়গা অনেকটা। বৃষ্টির দিনে বৃষ্টি, আর রোদের দিনে কড়া রোদ এই উঠানেই পাওয়া যায়। কষ্ট করে বাহিরে যেতে হয় না। এই বাড়ি বাহির থেকে দেখতে যতটা আকর্ষণিয় ততটাই ভেতর থেকেও দেখতে আকর্ষণিয়। বাড়ির ভেতরের সব নামিদাবি আসবাবপত্র খুব সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে তাই বাড়িটা ভেতর থেকেও অনেক সুন্দর লাগে। এই বাড়ি তৈরি করার আগে বর্ষার দাদা নিজে ডিজাইন করেছিলেন। উনি যেভাবে বলেছিলেন ঠিক সেই ভাবেই বাড়িটা তৈরি করা হয়। তাই হয়তো বাড়িটা এত সুন্দর।

বর্ষা এক হাত দেয়ালে আরেকহাত দিয়ে পাইপ ধরে আছে। উপরে উঠার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। পাশেই দাঁড়িয়ে আছে রিয়া ভয়ে হাত পা কাঁপছে তার, উপরের তলার বেলকনিতে মাত্র এসে দাঁড়িয়েছে অভ্র আর সাহিল।
পাঁচ মিনিট হয় রুমে এসেছে, এতক্ষণ হল রুমে সবার সাথেই ছিল। দরজার সামনে যখন অভ্রকে সবাই দেখতে পেলো কাজ কারবার সব ফেলে ছুটে গিয়ে তার উপরে উপচে পরে। সবার আদরের ছেলে এতবছর পর এসেছে বলে কথা, ভালোবাসা তো উপচে পরবেই। বড় আম্মুর চোখে পানি ছেলের গালে হাত ছুঁয়ে কপালে চুমু একে দিয়ে বুক জড়িয়ে কেঁদে ফেলে। সাথে নানান কথা জুড়ে দেয়, এত বছরে কি তাদের কথা একটুও মনে পরেনি ইত্যাদি ইত্যাদি।

দূরে দেয়ালে একপা উঠিয়ে ফ্যামিলি ড্রামা দেখছে, কাব্য, নাহিদ, অপূর্ব আরও বাদ বাকি ছোট ভাইবোন যারা আছে। তাদের চোখে মুখে এক রাশ রাগ ও অভিমানের ছাপ।

অভ্র সবার সাথে টুকটাক কথা বলে ভাইদের কাছে যায় রাগ ভাঙানোর জন্য তারাও বেশিক্ষণ রাগ করে থাকতে পারে না। তাই অভিমান দূরে সরিয়ে চারজনে চারজনের গলা জড়িয়ে ধরে।

দুই ঘন্টা সবার সাথে আলাপ করে, রুমে এসেছিল একটু রেস্ট ও ফ্রেশ হওয়ার জন্য, বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বিছানার উপর বসে। বাহিরের কড়া রোদে রুমে থাকা মুশকিল। এসি তে কাজ হচ্ছিল না। তাই প্রকৃতির বাতাস গায়ে মাখতে বারান্দায় এসে দাঁড়ায়। তখনই নজরে পরে বর্ষা আর রিয়া। সাহিল গালে হাত রেখে অভ্রর উদ্দেশ্য টিটকারি মেরে বলে, ‘ ভাই তোর বোন এগুলা তো দেখি এক একটা বান্দর রে ‘

বলে অভ্রর দিকে তাকিয়ে হাসতে যাবে তখনই মুখের হাসি মলিন হয়ে যায়। অভ্রর চোখের ভঙ্গি দেখে চুপ হয়ে যায়। তারপরেও বিড়বিড় করে বলল, ‘ একটু ভুল হয়ে গেছে ওগুলা বান্দর না বান্দরনী হবে। ‘

অভ্র সাহিলের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে কাঠকন্ঠে বলল, ‘ আবার ‘

‘ সরি ‘ বলে মাথা নিচু করে নেয়।

ভ্রু খানিক কুঞ্চিত করে বর্ষা আর রিয়ার কীর্তি দেখছে। অভ্র অনেক স্মার্ট হওয়ার পাশাপাশি ও অনেক চালাক তাই ওর বুঝতে অসুবিধা হয়নি। বর্ষা আর রিয়া এদিক দিয়ে পাইপ বেয়ে কেনো তাদের রুমে উঠছে।

দুপুরে লাঞ্চ করার জন্য সবাই খাবার টেবিলে জড় হয়েছে৷ নূর ইসলাম বাড়ির কর্তা বর্ষার দাদার আদরের নাতনী হচ্ছে বর্ষা।

বর্ষার দাদা নাতনীদের পাশে বসিয়ে তিনবেলা খান এখন দুজনকে দেখতে না পেয়ে প্রশ্ন করলে, তিন্নি প্রত্যত্তর করে, ‘ দাদু বর্ষা আর রিমা বাড়ির বাহিরে গেছে এখনও ফিরে আসেনি ‘

তখন অবশ্য অভ্র চুপ করে ছিল, তারপরে যখন ওর প্লেটে খাবার বেড়ে দিতে যাবে ওর আম্মু তখনই হলো ঝামেলা। অভ্র শর্ত দিয়ে বসল। আর সে শর্ত শুনে সবাই হতবাক নিরাশ হয়ে একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে, সবাইকে অবাক করে দিয়ে অভ্র আবারও বলল….

চলবে?

(কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ)

(বিঃদ্রঃ কি এমন বলল অভ্র যার জন্য প্রথমে নিরাশ হয় সবাই, তারপরেই বা কি বলল যা শুনে অবাক হয়? সেটা জানার জন্য অপেক্ষা করুক নেক্সট পর্ব পর্যন্ত হিহিহি, গল্পটা পড়ে কেমন লাগছে তা কমেন্ট করে জানান। ধন্যবাদ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here