অবন্তর আসক্তি পর্ব ২

0
933

#অবন্তর_আসক্তি
#২য়_পর্ব
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা
_______
বাড়ির উঠানে আম গাছ তলায় চারটা চেয়ারে চারজন বসে রয়েছে বর্ষা, রিয়া, মাহিরা, আনিতা।
আনিতা ও মাহিরা এসেছে পর থেকেই জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে বর্ষা ও রিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। ওরা এসেছে প্রায় বিশ মিনিট হতে চলল, এসেছে পর থেকে ওদের দুজনকে চুপ থাকতে দেখে তাদের মনেও কৌতূহল জাগ্রত হচ্ছে।

আহিতা: এইভাবে চুপ করে না থেকে বল কি হয়েছে?
মাহিরা: কালকের ছেলেটা তোকে খুঁজতে তোর বাড়ি পর্যন্ত চলে আসেনি তো?

‘ কি সব যা-তা বলছিস আমাদের বাড়ির এড্রেস তারা কোথায় পাবে? ‘ রিয়া বলল।

বর্ষা তিনজনের দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে কর্কশকন্ঠে বলল,

‘ কি হয়নি বল, বাড়ির সবার ফেবারিট সন বাড়িতে আসছে আর তাতেই সবার যত বারাবাড়ি আমাদের কে বলে ওই বুটকু মটকু ছেলের খাওয়া শেষে যদি কিছু বেঁচে যায় তাহলে ওইগুলো আমরা জেনো খাই। ভাবতে পারছিস ব্যাপার টা কতটা জগণ্য ‘

আহিতা উত্তেজিত হয়ে লাফিয়ে বলে উঠল, ‘ মানে কি অভ্র ভাইয়া আসছে? ‘

বর্ষা ভ্রু কুঞ্চিত করে প্রশ্ন ছুড়ল, ‘ তাতে তোর এত লাফালাফি কিসের হুহহ? ‘

আহিতা: আমি কোই লাফালাফি করলাম।

বলে আসতে আসতে চেয়ারে বসে পরল। বর্ষা জীদ্দে টেবিলের উপর নিজের হাত দিয়ে বারি মারল পরক্ষনেই ‘ আউচ ‘ বলে চিৎকার দিয়ে উঠল।

মাহিরা নিচু কন্ঠে বলল, ‘ তুই তোর অভ্র ভাইয়াকে দেখেছিস সেই ছোট্ট বেলায়, তখন সে মোটা ছিল এখন এতবছরে নিশ্চয়ই পরিবর্তন হয়েছে, এখন হয়তো আর সেই মোটা টি নেই। ‘

বর্ষা মুখ বাঁকা করে বলল, ‘ ওই মটু জীবনেও পরিবর্তন হবে না, যেই খাওয়া খায় যাইয়া দেখ বাড়িতে কতশত রান্না হচ্ছে সব তো সেই খাবে। তার খাওয়া শেষে কিছু বেঁচে গেলে ওগুলো আমরা খাবো। আর একদিন না খেলে কেউ মরে যাবে না। আজকে না হয় নাই বা খেলাম। ‘

কথাগুলো বলার পরপরই একটা পুরুষ মানুষের শক্তপোক্ত হাত বর্ষার চোখের সামনে দিয়ে নিয়ে টেবিলের উপর বারি মারল। এতটাই জোরে শব্দ হয়েছে যে চারজনেই ঘাবড়ে যায়। একটুর জন্য নরম তুলতুলে টেবিল টা ভেঙে যায়নি৷ প্রচন্ড মেজাজ গরম করে উঠে দাঁড়ায় বর্ষা থাপ্পড় টা কে মেরেছে তা দেখার জন্য গা ঘুরিয়ে পেছনে তাকাতেই স্বস্ত হয়ে গেলো। আঁড়চোখে বাকি তিনজনের দিকে তাকাচ্ছে তাদেরও ভয়ে বরফের মতো জমে যাওয়ার অবস্থা হয়েছে। নিজেকে যথাযথ শান্ত রাখার চেষ্টায় আছে বর্ষা, সামনে থাকা লোকটার রক্তচক্ষু দেখে অটোমেটিক শুকনো ঢোক গিলছে বর্ষা রাণী।

টেবিলের উপর আবারও হাতের বারি মেরে কর্কশস্বরে বলল, ‘ তোমার সাহস হয় কি করে এখানে আসার? ‘

বর্ষা ভয়কে নিজের মধ্যে দাফন করে নিয়ে মুখে সাহস রেখে বলল, ‘ মাথা মন্ডু কি ঘাস চড়তে গিয়েছে আপনার? আপনি আমাকে বলছেন আমি এখানে আসার সাহস কোথায় পেয়েছি? আমি আপনাকে প্রশ্ন করছি আপনি এখানে আসার সাহস কোথা থেকে পেয়েছেন? ‘

‘ একদম জংলীদের মতো ব্যবহার করবে না। ‘ সামনে দাঁড়িয়ে থাকা আগন্তুক বলল।

‘ খবরদার আমাকে জংলী বলবেন না। ‘ বর্ষা বলল।

‘ একশো বার বলবো হাজার বার বলবো কি করবে তুমি? আস্তো একটা জংলী মেয়ে। ‘

মেজাজ গেলে চটে, বর্ষার মাত্রারিতিক্ত রাগ উঠলে সে কি করে নিজেও বুঝতে পারে না। টেবিলে রিয়ার সাইডে ছিল পানির জগ, বর্ষা পানির জগটা হাতে নিয়ে সোজা লোকটার গায়ের উপর ঢেলে দেয়৷

বিষ্ময়কর দৃষ্টিতে তাকিয়ে অস্ফুটস্বরে বলে উঠল, ‘ What the! কি করলে তুমি এটা? কাল রাতে গন্ধ মাখা কাঁদা আর এখন পানি। তোমার মতো বজ্জাত মেয়েকে কিভাবে শিক্ষা দিতে হয় আমি তা খুব ভালো করেই জানি। ‘

বলে ছেলেটা বর্ষার দিকে এক পা বাড়াতে নিলে পেছন থেকে কারো আওয়াজ ভেসে আসে সে বলছে, ‘ কি হচ্ছে কি এখানে? ‘

বর্ষা কিছু বলার আগেই ছেলেটা বলল, ‘ তিন্নি তুই আসছিস, এই বজ্জাত মেয়েগুলো কারা বলতো আমায় এদের শায়েস্তা করতে হবে। ‘

তিন্নি আপু ছেলেটার পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার চোখ বুলালো পরক্ষণেই পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো, ‘ তার আগে এটা বল, তুই ভেজা কেন তোর শার্ট ভিজলো কেমন করে? ‘

ছেলেটা রাগী গলায় এক আঙুল বর্ষার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, ‘ এই বজ্জাত অসভ্য মেয়েটা করেছে ‘

তিন্নি আপু হা হয়ে গেলো। মুখ রসগোল্লার মতো হা করে বলল, ‘ কিহ বর্ষা করেছে? ‘

ছেলেটা আনমনে বলে ফেলল, ‘ হ্যাঁ হ্যাঁ বর্ষাই করেছে ‘

বলে থমকে গেলো একবার তিন্নি আপুর দিকে তাকালো দ্বিতীয় বার আমার দিকে তাকালো ভ্রু খানিক কুঞ্চন করে বলল, ‘ এই সেই আমাদের বর্ষা? ‘

বর্ষা ক্ষিপ্ত চোখে তাকিয়ে বলল, ‘ কিসের আমাদের বর্ষা আমি আপনাদের হলাম কবে হুহ? ‘

তিন্নি বলল, ‘ বর্ষা তুই জানিস ও কে? নাকি না জেনেই এমনটা করেছিস? ‘

‘উনি কে সেটা জানার আমার বিন্দু পরিমান ইন্টারেস্ট নেই। ‘ বলে অন্য দিকে ঘুরে গেলো।

রিয়া: তাপ্পি কে উনি?

তিন্নি: তোদের অভ্র ভাইয়াই এনি।

বর্ষা আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল তবে তিন্নির কথা কান অব্দি যেতে থমথমে রয়ে গেলো। অপলকভাবে তাকিয়ে রইল অভ্রর দিকে। আবারও শুকনো ঢোক গিলল। দুই হাত মুঠি বন্ধ করে তাকিয়ে আছে বর্ষার দিকে অভ্র। তিন্নি এবার বর্ষাকে ভয় দেখিয়ে বলল, ‘ অভ্র আসবে শুনে তোর যা অবস্থা হয়েছিল তা বাড়ির সবাই দেখেছে, এখন যদি তারা শুনে অভ্রর শার্টে পানি তুই ফেলেছিস ভাবতে পারছিস বোন্টি তোর কি অবস্থা তারা করবে? ‘

বর্ষা করুণ দৃষ্টিতে তিন্নির দিকে তাকালো। কিছুক্ষণ চুপ থেকে পরক্ষণেই বলল, ‘ কে বর্ষা? কোথায় বর্ষা? আর এনি কে তুমি কে? ‘

বলেই বর্ষা রিয়ার হাত ধরে বাড়ির গেইটের দিকে দিলো দৌঁড় পেছন পেছন আহিতা ও মাহিরাও দৌঁড় দেয়।
____________
বাড়ির কাছাকাছি আসতেই গাড়ির টায়ার পাম্চার হয়ে যায়। এক রাশ বিরক্ত নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে গাড়ির চাকায় একটা লাথি মারে। ফের বাকিদের উদ্দেশ্য বলে, ‘ বাড়ি সামনেই চল হেঁটেই যাওয়া যাবে। ‘

বাকিরাও অভ্রর সাথে হেঁটে হেঁটে রাস্তা পার হয়ে বাড়িতে আসে৷ বাড়িতে গেইটের ভেতরে ঢুকতেই অভ্রর চোখ গেলো আমগাছ তলায় যেখানে রয়েছে চারজন মেয়ে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেখল সেখানে কাল রাতের মেয়েগুলো বসে আছে। আর কি রাগ হলো নিজেকে ধমন করতে না পেরে তেড়ে এসে টেবিলের উপর হাত ছুড়ল।

বাড়ির বর্ণনা, বাড়িটা হচ্ছে তিনতলা একটা ফ্লাট বাসা। সামনে দিয়ে সরু রাস্তা দুই পাশে দিয়ে ফুলের আঙ্গিনা। বাড়ি চারদিক ঘিরে বড়বড় দেয়াল। বাড়ির বা পাশটা হচ্ছে গাড়ি ও বাইক রাখার গ্যারেজ, আর ডান পাশটায় হচ্ছে বড় ও ছোট গাছের ছড়াছড়ি বড়গাছ কমই আছে তিন থেকে চারটা। তবে ছোটো ও ফুলের গাছই অধিক। চারপাশে ফুলগাছ তার মাঝে কিছুটা বড় করে বসার জন্য চেয়ার টেবিল এর ব্যবস্থা। বিকালের দিকে বাড়ির মহিলারা কাজ কর্ম শেষ হলে বসে আড্ডা ও গল্পগুজব করে এখানে বসে। মুড ভালো বা খারাপ থাক, বর্ষা রিয়াকে এখানেই বেশি সময় পাওয়া যায়। রাতে বা দিনে বেশির ভাগ সময় এখানে বসেই আড্ডা দেয়। মাঝেমধ্যে পড়াশোনা খাওয়া দাওয়া ও এখানেই করে তারা দু’জন। যদি সম্ভব হতো মনে হয় দু’জনে এখানেই ঘুমিয়ে থাকতো। বেশি পছন্দের জায়গা এটা বর্ষার। তবে এইসব ফুল গাছ গুলো বেশির ভাগ বর্ষার হাতে লাগালো সে ফুলগাছ খুবই পছন্দ করে। আর সব গাছের দেখাশোনা সে নিজেই করে। চলুন চলে যাই গল্পে,

‘ও এমনই অনেক ফাজিল। কারো শাসনে ওর কাজে লাগে না। এখানে দাঁড়িয়ে না থেকে চল ভেতরে সবাই অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছে তোর। ‘ তিন্নি বলল।

‘এতদিন তো আমি ছিলাম না। এইবার আমি এসে গেছি এখন থেকে ওর বাঁদরামি করা ছুটাবো। ‘ অভ্র বলল। ঠোঁটের কোণে তার রাষ্ট্র জয়ের হাসি।

চলবে?

(কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here