অবন্তর আসক্তি পর্ব ১৬

0
435

#অবন্তর_আসক্তি
#পর্ব_১৬
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা
________
এক্ষুনি সূর্য অস্ত যাবে যাবে সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়েছে। সকলে কাজ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে টেবিল জুড়ে বসে পরেছি। স্যার বলেছিলেন আজ থেকেই আমাদেরকে কাজ শুরু করতে দুইদিন পরই অনুষ্ঠান হাতে গুনা আর এক দিন রয়েছে এরই মধ্যে এত বড় অডিটোরিয়াম সাজাতে হবে, সাদা ও নীল বেলুন মুখ দিয়ে হাওয়া দিয়ে ফুলিয়ে গাল ব্যাথা করে ফেলেছে আমার বিচ্ছু বাহিনি। এদিকে আমি আর আদ্রিক একসাথে হাতে হাতে অন্য দিক টা সাজাতে ব্যস্ত এর মধ্যে আমাদের কারো সাথে তেমন কথা হয়নি। তখন লজ্জায় টেবিলের নিচ থেকে বের হয়ে চলে যাই। অডিটোরিয়াম এর উল্টো পিঠে সেথায় গিয়ে বেলুনে হাত রাখি আমার পেছনে আমার সেনা বাহিনি হাজির হয়। তখন থেকেই কাজ শুরু করে দেই। কাজের মধ্যে এতটাই মগ্ন হয়ে পরি সময়ের একদমই খেয়াল ছিল না। যখন হাঁপিয়ে গেলাম তখন একে একে এসে টেবিল ঘিরে চেয়ার টেনে বসে পরি।

মাহিরা আমতা আমতা করে বলল,’ ভাইয়া আপনাকে তো ঠিক চিনলাম না। এর আগে কলেজে আগে কখনো দেখেনি। যদি পরিচয় টা দেন তাহলে ভালো হয়। তাছাড়া আপনি আমাদের কাজে এত সাহায্য করেছেন। ‘

বর্ষা বিরসমুখে বলল,’ জাহাঙ্গীর স্যারের ছেলে। ‘

রিয়া ঝাঁঝের সাথে বলে,’ গোপাল দাদুর ছেলে? এত হ্যান্ডসা..সা ‘

বলতে গিয়ে থতমত খেয়ে যায়। সামনে বসে থাকা ছেলেটার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দেখে। মনে মনে শুকনো ঢোক গিলে কথা ঘুরিয়ে বলল,’ বলতে চাচ্ছিলাম আর কি? ওই স্যা স্যার স্যার কি জেনো নাম। কিরে বলনা? ‘

বলে মাহিরার পিঠে ঘুষি মারে, মাহিরা পিঠ বাঁকা করে নেয়। পিঠে এক হাত দিয়ে মুখ দিয়ে অস্ফুটস্বর বের করছে। তা দেখে মুখ টিপে টিপে হাসছে নিঝুম ও মুরাদ। তারা কেন বাকি থাকবে? তাদের ও পিঠে বসিয়ে দিল দুই ঘাঁ। তারাও এখন পিঠ বাকা করে বসে আছে। মুরাদ কান্না জড়িত কন্ঠে বলল,’ আমার লগে এইডি তোলা ঠিক কলোস না। সব সময় আমারেই পাস বলির পাঁঠা। ‘

এবার নিঝুম মুরাদের পিঠে কিল বসিয়ে দিয়ে বলল, ‘ সালা ঠিক করে কথা বল। এইসব কেমন ভাষা? ‘

মুরাদ ইনোসেন্ট ফেস বানিয়ে ন্যাকা কন্ঠে বলল,’ তোদের লগে থাকমুই না। তোরা ছেড়ি জাতই ভালা না। ‘

ওদের জগড়া দেখে সশব্দে হেঁসে উঠে আদ্রিক। হাসির শব্দে তারা ভদ্র হয়ে যে যার মতো বসে পরে।

আদ্রিক মৃদু হেঁসে বলল,’ বর্ষা তো বললোই আমি তোমাদের স্যারের ছেলে। তা বাদেও আমার আরও একটা পরিচয় আছে। সেটা না হয় এখন না বলাই থাক। আর যদি জানতে চাও আমার নাম, সেটা এখন বলা যাবে, আমার নাম হচ্ছে ‘ নিদ্রিক অভয়ব আদ্রিক ‘ ফ্যামিলি তে সকলে অভয়ব বলে, ফ্রেন্ড সার্কেলে সকলে আদ্রিক বলে। একমাত্র আব্বু মানে তোমাদের স্যার শুধু নিদ্রিক বলে ডাকে।

নিঝুম ফোঁস করে বলে উঠল,’ এতগুলো নাম আপনার একার দুনিয়ার সকল নাম আপনি একাই নিয়ে নিলেন? ‘

নিঝুমের টিটকারি মারা কথা শুনে সশব্দে হেঁসে উঠল বর্ষা। এবার সকলে তার দিকে সরু দৃষ্টিতে তাকালো। চোখ জোড়া ছোটো-ছোটো করে উঠে দাঁড়িয়ে বর্ষা বলল,’ সন্ধ্যা হয়ে আসছে আমাকে আর রিয়াকে বাড়ি পৌঁছাতে হবে আমরা এখন আসছি। তাছাড়া জানিস ই তো আমাদের লেট করে গেলে হাজার টা প্রশ্নের সম্মুখিন হতে হয়। তাই আমরা উঠছি কাল দেখা হবে সাথে বাকি অডিটোরিয়াম সাজাতে হবে। কালকেই শেষ করতে হবে। ‘

যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম। তখন মাথায় এলো ছেলেটার বলা একটা কি জেনো নাম আদ্রিক না নিদ্রিক নাহহ অভয়ব উফফ ছাতার মাথা একটা হলেই হবে। তার দিকে ঘুরে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম। তিনি মুচকি হেঁসে বললেন, ‘ কাল তোমাকে বাইকে করে একটা ছেলে তোমার বাড়িতে নামিয়ে দিয়েছিল। মনে আছে? ওওওহ, থাকার তো কথা। ‘

‘ হ্যাঁ মনে আছে কেনো? ‘ বর্ষা ভ্রু কুঁচকে বলল

‘ চেহারা মনে আছে তার? ‘

‘ আমি তো তার মুখের দিকে তাকাইনি তো চেহারা মনে থাকার কথা প্রশ্নই আসে না। ‘

ছেলেটার মুখ টা সাথে সাথে মলিন হয়ে গেলো। সে বলল, ‘ সেই ছেলেটা আমিই ছিলাম। ‘

বর্ষা হা হয়ে তাকিয়ে রইল। তাইতো চেনা চেনা লাগছিল। আমি দাড়িয়ে থেকেই পেছনে পা বাড়ালাম। আর এক মিনিট ও দাঁড়ানো যাবে না। তাহলে আরও নিজেকে অপদস্ত হতে হবে। কি ভাবছে আমার সম্মন্ধে নিশ্চয়ই ভাবছে আমার ভুলে যাওয়ার রোগ আছে ইয়াক।

দুই বোন হাঁটতে হাঁটতে চলে আসলাম বাড়ি। দাদু ও আম্মু জিজ্ঞেস করে ছিল এত লেইট হয়েছে কেন আজ? আমরাও তাকে অনুষ্ঠান সম্পর্কে বলি আর আমাদের দায়িত্বের কথাও বলি। তারপর তারা আর কিছু বলে না। আমরা রুমে চলে আসি। দু’জনে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দেই। তিন্নি আপু এসে বলে উঠে, ‘ তোদের কে বলে যেতে পারেনি। বৃষ্টি আর রিমা ওদের হোস্টেলে ফেরত চলে গেছে। কিছু দিন পর আবার আসবে। কল দিতে বারণ করেছে ওরা ফ্রী হলে তোদের কে কল দিবে। ‘

বলে আপু চলে গেলো। মুড টাই অফ হয়ে গেলো। তারই মধ্যে আমার হঠাৎ মনে পরল অভ্র ভাইয়ার কথা আমি বিছানা থেকে লাফ দিয়ে উঠে বসে পরলাম। কিছু একটা ভেবে গায়ে ওড়না জড়িয়ে ছুটতে লাগলাম।

হঠাৎ ছুটে এসে দরজার সামনে দরজা ঝাপটে ধরে দাঁড়াই, সে বিছানার উপর ল্যাপটপ নিয়ে বসে আছে৷ আমার উপস্থিতি সে আমার দিকে না তাকিয়েই পেয়েছে। কিন্তু কিভাবে?

সে ল্যাপটপের উপরে দৃষ্টি রেখেই আমার উদ্দেশ্য প্রশ্ন ছুঁড়ল, ‘ তুই এখানে কেন আসছিস? ‘

আমি জড়ানো কন্ঠে বললাম, ‘ কেন আসতে পারি না? ‘

‘ আসতে পারিস তবে দরকার ছাড়া না। ‘

‘ আমি দরকারেই আসছি ‘ দাঁত চেপে ধরে বললাম।

‘ গুড। তা বল কি দরকারে আসছিস? ‘

‘ তুমি আমার কলেজে কেন গিয়েছিলে? ‘

‘ মন চেয়েছিল তাই গিয়েছিলাম। ‘

‘ এটা কেমন কথা? ‘

‘ এটা অভ্রর কথা। এখন বাজে না বকে যা ফোট। বাই দ্য ওয়ে থাপ্পড়ের জন্য সরি। ‘

এখনও তার দৃষ্টি ল্যাপটপের উপরে। আমাকে এভাবে ইগনোর করছে দেখে প্রচুর রাগ হচ্ছে তখনই আমার মাথায় দুষ্ট মিষ্টি একটা বুদ্ধি উদয় হলো।

আমি যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম সাথে সাথে পায়ে পা লেগে সত্যি সত্যি পরে যাওয়ার ভান করে ফ্লোরে পরে গেলাম। জোরে চিৎকার দিয়ে উঠি মুখ দিয়ে অস্ফুটস্বরে বলে ফেলি,’ আল্লাহ গো আমার মাজা বুঝি ভেঙে গেলো গো। ‘

আমার চিৎকার শুনে সে বিস্মিত হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে হন্তদন্ত হয়ে যায়। বিছানা থেকে পা নামাতে নামাতে শাণিতকন্ঠে বলল, ‘ বর্ষা আর ইউ অলরাইট? পরে গেলি কিভাবে? ‘

বিছানা থেকে নেমে কয়েক কদম আসতেই আমি উঠে দাঁড়িয়ে। বলে উঠি, ‘ ওটা ডোপ ছিল৷ ‘

বলেই দিলাম দৌঁড়, সে আমার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল। ঠোঁট জোড়া বাঁকা করে বলল,’ হাল্কা করে ছ্যাঁকা দিয়ে গেলো। ‘

চলবে?

(কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here