#অবন্তর_আসক্তি
#পর্ব_১৩
#Sharmin_Akter_Borsha
_________
তার পুরুষালী শক্তপোক্ত হাতে এমন ভাবে চেপে ধরেছে৷ এই বুঝি আমার হাতের হাড় কট করে ভেঙে যাবে। দাঁত কিলবিল করে কঠোর গলায় বলল,
‘ ছেলেটা কে ছিলো? ‘
আমি মিনমিন কন্ঠে বললাম, ‘ আমি চিনি না। ‘
‘ চিনিস না তো বাইকের পেছনে কেন উঠেছিলি? ‘ চেঁচিয়ে ধমকের স্বরে বলল।
ধমকের স্বর এতটাই তীক্ষ্ণ ছিল যে, চোখ জোড়া বন্ধ করে ফেলি। হাত আমার আরও শক্ত করে চেপে ধরল যার জন্য আমি ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠলাম, ‘ উহহ, লাগছে আমার। ‘
‘ আমারো লেগেছিল যখন তোকে ওই ছেলের বাইকের পেছনে দেখেছিলাম। কোন সাহসে তুই অন্য একটা ছেলের বাইকে উঠলি? আমি যখন গিয়েছিলাম তখন আমার বাইকের পেছনে কেন তেজ দেখিয়ে উঠিসনি? ‘
‘ আমার ইচ্ছা হয়েছিল তাই উঠেছি তার কৈফিয়ত তোমাকে দিতে যাবো না হাত ছাড়ো আমার নাহলে। ‘
‘ নাহলে কি করবি তুই আমার? ‘
বলে কিছুটা টান মারল। আমি তাল সামলাতে না পেরে উপচে পরলাম তার বুকে। চোখ জোড়া খিঁচে বন্ধ করে নিয়েছিলাম। মাথার সাথে বুকের ছোঁয়া লাগতেই আমি নিজ থেকে সরে যেতে চাইলাম। অভ্র ভাইয়া সে আমার হাত ছেড়ে দিয়ে আমার দুই বাহু তার দুই হাত দিয়ে শক্ত করে চেপে ধরল। আমাকে কিছুটা ঝাঁকিয়ে বলল,
‘ কি হয় ছেলেটা তোর বয়ফ্রেন্ড? ‘
আমার বুদ্ধি শুদ্ধি লোভ পেয়েছিল হয়তো তাই প্রতিত্তোরে আমি তেড়া কথা বলি। জানি না কেনো উনি হঠাৎ এমন বিহেভ করছে? আমার বুঝার বাহিরে,
‘ হ্যাঁ আমার বয়ফ্রেন্ড তাতে আপনার কি? ‘
‘ বর্ষা’হহহহহহ ‘
বলে হাত ছেড়ে ছুঁড়ে ফেলে দেয় আমাকে মেঝেতে। আমার রুম থেকে চলে যাওয়ার সময় দরজা বিকট শব্দ তুলে বন্ধ করে যায়। ইচ্ছে তো করছিল চুল গুলো টেনে টেনে ছিঁড়ে দিতে গরু কোনহান কার। আহহ পায়ের ব্যাথা এখনও রয়েছে, তার সাথে এখন হাতও ব্যাথা করছে মরন।
__________
এক ঘন্টা ধরে একটা ম্যাথ নিয়ে বসে রয়েছি আন্ডা ঘোড়ার ডিমও পারছি না কিছুতেই স্লভ করতে, ইচ্ছা করতাছে বই খাতা দু’টো কেই ছিঁড়ে জানালা দিয়ে ফেলে দিতে কিন্তু বই ছিঁড়লে স্যার আমাকে গরম পানিতে সিদ্ধ করবেন। অনেকক্ষণ চুলের মধ্যে হাত গুঁজে বসে থাকতে দেখে রুমে আসল তিন্নি আপু আমার কাঁধের উপর হাত রেখে বলল,
‘ আবারও ম্যাথে সমস্যা? ‘
আমি তারদিকে মুখ তুলে তাকিয়ে উপর নিচ মাথা নাড়ালাম। তিন্নি আপু আমার সামনে একটা চেয়ার টেনে বসল। আমার হাত থেকে বই ও খাতা টা সে নিয়ে নেয়। বেশ কিছুক্ষণ বই ও খাতায় চোখ বুলিয়ে স্বাভাবিক কন্ঠে বলল, ‘ বর্ষ্যু তুই বরং অভ্র ভাইয়ার কাছে যা সে তোকে সবটা ক্লিয়ার করে বুঝিয়ে দিবে। আমার একটা ইমপোর্টেন্ট কল করতে হবে আসছি আমি। ‘
বলে খাতাটা টেবিলের উপর রেখে চলে গেলো। কি ভাবছেন সত্যি সত্যি কল করতে গেছে। ডাহা মিছা কথা, পারছিল না তাই ডপ মেরে পালিয়েছে। কিন্তু যাওয়ার আগে ভালো বুদ্ধি দিয়ে গেছে। কিন্তু আমি এখন অভ্র ভাইয়ার রুমে যাবো কিভাবে সে তখন আমার সাথে কি বাজে ব্যবহার টাই না করেছিল। ‘
বলে চুপটি মেরে কিছুক্ষণ মুরগির বাচ্চার মতোন ঝিমোচ্ছিলাম। কলমের উল্টো দিক দিয়ে মাথা চুলকাতে চুলকাতে ভাবলাম,
‘ আমি তো তার কাছে দরকারে যাবো আর সে তো বলেই দিয়েছিল দরকার ছাড়া তার রুমে না যেতে, এখন তো আমার দরকার তাই যেতেই পারি। কিন্তু দুপুরের মতো লাগামছাড়া বিহেভ করলে তখন আবারও যদি ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়? আরে ধূর দিলে দিবে, রুমে বসে বসে এত চিন্তা করতে পারবো না গিয়ে তো দেখি কি করে। যদি বকে চাচি আম্মুর কাছে বিচার দিমু। ‘
বলেই বই খাতা কলম হাতে নিয়ে বের হয়ে পরলাম।
মনের মধ্যে চড়ুইপাখির বাসার মতো ছোট্ট ভয় বাসা বেঁধেছে না জানি এখন কি হয়?
রুমের সামনে এসে বিপদ তারানি ফু দিলাম চিবুকে। শুকনো ঢোক গিলে রুমের দরজায় নক করলাম সে ভেতর থেকে বলল,, ‘ দরজা খোলা আছে ‘
দরজা আলতো হাতে খুললাম। ভেতরে উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করছি উনি করছে টা কি? এমন সময় সে না দেখেই ফসফস করে বলে উঠল,
‘ কোনো প্রয়োজন থাকলে ভেতরে আসতে পারিস আর নয়তো আমার রুমে উঁকি ঝুঁকি পারার জন্য চড় লাগাবো। ‘
দরজা ঠাস করে খুলে দাঁড়িয়ে ভেজা বিড়ালের মতো বললাম,
‘ ওই আম, আমা, আমার ম্যা ম্যাথ ‘ আমতা আমতা করে বলছি মুখ দিয়ে জেনো কথাই বের হচ্ছে না।
‘ বই আর খাতা টেবিলের উপর রেখে দুই হাত দূরে দাঁড়া মোটেও আমার গা ঘেঁষে দাঁড়াবি না। ‘
ইচ্ছে করছে বইগুলো টেবিলের উপর না রেখে তার মাথায় রাখি অসভ্য, যেভাবে বলছে মনে হচ্ছে জীবনেও কোনো মেয়ের সঙ্গে চিপকা চিপকি করেনি। আজকেও তো নিঝুমকে বাইকের পেছনে। (মনে মনে)
‘ তোর ভাবনার বিচ্ছেদ ঘটিয়ে বাস্তবে ফিরে আয়। ‘
তার কথা শুনলে কেনো জানি শরীর জ্বলে আমার রাগে দাঁত কটমট করছি। বই খাতা টেবিলের উপর রেখে আমি কিছু টা দূরে সরে দাঁড়ালাম।
শুরুতে ভালোই ছিল, সে যে আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে ছিল। তার সেইদিনে কোনো ভাবান্তর নেই। সে একদম নরমাল বসে রয়েছে।
বিপত্তি তো তখন ঘঠে যখন সে আমার বইয়ের কয়েক পৃষ্ঠা উল্টিয়ে দেখতে লাগে। পৃষ্ঠা উল্টিয়ে পাল্টিয়ে দেখছে আর বলছে, ‘ আর কোনো জায়গায় প্রবলেম হলে বলতে পারিস। ‘
আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই অভ্র ভাইয়ার ফর্সা মুখ রাগে লাল হয়ে গেলো। সে রক্তচক্ষু নিক্ষেপ করে তাকিয়ে বলল, ‘ এইটা কি? ‘
আমি তার দৃষ্টি নিক্ষেপ দেখে ভয় পেয়ে দুকদম পিছিয়ে যাই। সে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে আমার সামনে এসে আমার হাত আবারও শক্ত করে চেপে ধরল। ব্যাথায় আমি আবারও কুঁকড়ে উঠলাম। কান্না পাচ্ছে আমার ভীষণ এখানে আসা আমার উচিতই হয়নি। ব্যাথার উপরে আবারও ব্যাথা এক জায়গা তেই আবারও চেপে ধরেছে। আমি চোখ জোড়া পিটপিট করে তার দিকে তাকালাম। সে রাগী গলায় বলল,
‘ এই চিরকুট কিসের কে দিয়েছে তোকে এই চিরকুট? ‘
আমি তার কথার আগা মাথা কিছুই বুঝতে পারছি না। নিস্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বই সহ চিরকুট আমার দিকে ছুঁড়ে মারল,
আমার উপর বইটা পরল, গা ছুঁয়ে মেঝেতে পরে যায়। মেঝে থেকে বই ও চিরকুট টা হাতে নিলাম। খুলে দেখলাম তাতে কি লিখা রয়েছে ।
খুবই সুন্দর হাতের লেখা, হাতের লেখা দেখে জেনো আমি ক্রাশ খেয়েছি, চিরকুটে লেখা :-
‘ যখন তুমি আমার কাছাকাছি থাকোনা তখন তোমাকে স্মরণ করেই আমি পরম সুখ অনুভব করি প্রিয়তমা। আমার সময় গুলো তোমাকে ছাড়া সুখে কাটানো যায় না। আমার হৃদয়ের অনুভূতি এবং সুখের কল্পনার আশেপাশে রয়েছো কেবল তুমি। আমি চিরকালের জন্য তোমার মিষ্টি এবং প্রেমময় স্পর্শ পেতে চাই।
তোমার প্রেমিক পুরুষ ‘
লেখা পড়ে আমি মুগ্ধ যেই দিক না কেনো বেটা জন্মের রোমান্টিক। নিজের মনের মধ্যে লাড্ডু ফুটছে, ভুল বসত মুখ দিয়ে বের হয়ে আসল।
‘ ওয়াও, টোটাল ফিদা। ‘
বলে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটার দিকে তাকাতেই ভয়ে স্বস্ত হয়ে গেলাম। এতটা নিস্তব্ধতা আমাকে জানান দিচ্ছে ঝড়ের পূর্বাভাস। আমি কিছু বলার আগেই সে আমার হাত শক্ত করে চেপে ধরে বলল, ‘ টোটাল ফিদা না কে দিয়েছে লাভ লেটার তোকে নিশ্চয়ই ওই বাইকের ছেলেটা দিয়েছে সে তো আবার তোর বয়ফ্রেন্ড। নাম কি ওর? ‘
শেষের টুকু ধমকের স্বরে চেচিয়ে বলল। আমি তার হাত থেকে নিজের হাত অতি কষ্টে ছাড়িয়ে নিলাম। উনার চোখের দিকে চোখ জোড়া ছোটছোট করে তাকিয়ে রয়েছি। উনার দৃষ্টি আমার চোখের মধ্যে সীমাবদ্ধ। একহাত দিয়ে টেবিলের উপর থেকে খাতাটা হাতে নিয়ে বুকে সাহস সঞ্চয় করে বললাম,
‘ নাম জিজ্ঞেস করা হয়নি। আবার দেখা হলে জিজ্ঞেস করবো তখন না হয় তোমাকে জানিয়ে দিবো। ‘
বলে রুম থেকে ছুটে পালালাম। সে সেখানে দাঁড়িয়ে থেকেই ভ্রু কুঞ্চিত করে তাকিয়ে রইল৷ পেছনে হয়তো বা আসতো কিন্তু তার আগেই উনার ফোনের রিংটোন বেজে উঠে। দাঁত কটমট করে ফোন নিয়ে বেলকনিতে চলে যায়।
যেভাবে ছুটে এসেছি আমার হাত পা শরীর কাঁপছে। বিছানার উপর বসে রয়েছি এদিকে হাঁপাচ্ছি। রুমের মধ্যে বৃষ্টি রিয়া রিমা প্রবেশ করল আমাকে এভাবে হাঁপাতে দেখে প্রশ্ন ছুঁড়ল, ‘ কি হয়েছে? ‘
আমি কিছু বলার আগেই রিমার দৃষ্টি আকর্ষণ করল আমার হাতের নীল চিরকুট টা। কালার পেপার, পেপারের কালার টা নীল তার মধ্যে লেখা শব্দ গুলো। যা যে পড়বে তারই লেখকের প্রেমে পরতে ইচ্ছা হবে। হাত থেকে ‘ছ’ মেরে কাগজ টা নিয়ে নিলো। মুখ দিয়ে বলতে বলতে কাগজ টা খুলছে, ‘ কিসের কাগজ এটা? ‘
আমি বললাম, ‘ নিজেই খুলে দেখে নে ‘
কাগজের ভাজ খুলে তা পরক্ষণ করতেই রিমা হা হয়ে গেলো। বাকিরা রিমার অবস্থান পর্যবেক্ষণ করে তারাও ভ্রু কুঞ্চিত করে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো,
‘ কি হয়েছে কি এমন পড়লি যার ফলে এমন ‘থ’ মেরে দাঁড়িয়ে রয়েছিস? ‘
রিমা কোনো কথাই বলল না শুধু কাগজটা বাকি দু’জনের দিকে বাড়িয়ে দিলো। ওদের ও লেখাটা পড়ে একই অবস্থা তিনজনে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে আমার দিকে আমি লজ্জা পেয়ে বিছানার ঠাস করে শুয়ে পরি। ওরা তিনজন আমার পাশ কেটে শুয়ে বলল,
‘ কে রে তোর প্রেমিক পুরুষ? ‘
আমি ওদের দিকে তাকিয়ে হাসার চেষ্টা করে বললাম। ‘ আরে আমি যদি জানতাম কে ধরে বেঁধে বিয়ে না করে নিতাম ‘
রিয়া, ‘ ও হো হো, জল গড়িয়ে এত দূর আর আমরা কিছুই জানি না। ‘
‘ তেমন কিছুই না, আমিও জানি না কে সে? আমার বইয়ের পৃষ্ঠার মধ্য থেকে হুট করে বের হয়ে আসছে জানি না কে রেখেছে আর কোণ্থেকা আসলো বা কে দিয়েছে? ‘
‘ লাইক সিরিয়াসলি ‘ বৃষ্টি ভ্রু কুঞ্চিত করে প্রশ্ন ছুড়ল।
‘ ইয়াহ ‘
‘ তোর প্রেমিক পুরুষ কে খুঁজে বের করতে হবে। ‘ রিমা বলল।
‘ তা তো বের করতেই হবে। ‘
তখনই দরজা ঠেলে রুমে প্রবেশ করল।
চলবে?
(কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ)